অদ্ভুত মুগ্ধতা -২ শেষ পর্ব

অদ্ভুত মুগ্ধতা -২
শেষ পর্ব
মিশু মনি
.
মিশুর ডাকে ঘুম ভাংলো মৈত্রীর।
ও চোখ মেলে দেখলো জানালার পর্দা সরিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে মিশু। আকাশী রঙের শাড়িতে,ভেজা চুলে, সকালের এই স্নিগ্ধ আলোয় কি যে অপূর্ব লাগছে মিশুকে! মৈত্রী মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ওর দিকে!
মিশু বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করলো। তারপর এগিয়ে এসে বিছানার পাশে বসলো।
মৈত্রী ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল, সুপ্রভাত মিশু।
মিশু মিষ্টি করে হাসলো। মৈত্রী যতই দেখছে,ততই অবাক হয়ে যাচ্ছে। মিশুকে যেন আজ একটু বেশিই রূপবতী লাগছে! একদিনেই মেয়েটার চেহারার একি পরিবর্তন! এত মিষ্টি আর অপরূপা কবে হয়ে উঠলো মিশু? নাকি আজ বউ বউ লাগছে বলে একটু বাড়তি সৌন্দর্য যোগ হয়েছে?
মিশু একটু এগিয়ে এসে মৈত্রীর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, উঠবে না?
মৈত্রী মিশুর হাতটা বুকের উপর চেপে ধরে বললো, তুমি একদিনেই একদম বড় হয়ে গেছো মিশু! পাক্কা বউ বউ লাগছে!
– আর তুমি একদিনেই একদম বুড়া হয়ে গেছো মৈত্রী। পাক্কা বাবুর আব্বুর মত লাগছে।
মৈত্রী মিশুকে একটু কাছে টেনে নিয়ে বললো, তাই বুঝি! এবার তাহলে একটা বাবুর আব্বু হতেই হবে।
– একটা নয়,দুইটা। দুইটা টুইন বেবি হবে আমাদের,কাব্য আর কাব্যি।
মৈত্রী হেসে বলল,কাব্য আর কাব্যি? সুন্দর নাম কিন্তু।
– হ্যা, নাদুসনুদুস টাইপের গাল্টুস গুল্টুস দুইটা পিউ পিউ বাচ্চা হবে। একদম তোমার মতন।
– না, আগে তুমি ট্রাভেলার হও,তারপর।
মিশু মুখ বাঁকিয়ে বলল,ট্রাভেলার পরেও হওয়া যাবে।
– না, যাবেনা।আগে তুমি ট্রাভেলিং শুরু করে দাও পাগলী মেয়েটা। তবে এখন হয়ত এ কথা বলছো,কিন্তু আমার বিশ্বাস, একবার ঘুরে এলে ঘুরাঘুরি ছাড়া আর থাকতেই পারবে না। একদম পাক্কা।
মিশু একটু এগিয়ে এসে বলল,তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো?
– না, সেটাও পারবা না আমি জানি।
– তাহলে? তুমি আমাকে সাথে নিয়ে ঘুরবে?
– আমার অত সময় যে হবেনা পাগলী টা। আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো, তুমি যাবা।
– আমি কিচ্ছু বুঝবো না। আমি যেখানেই যাবো তুমি আমার সাথে যাবা ব্যস।
মিশুর জেদী কন্ঠ শুনে বাধ্য হয়ে মৈত্রী বলল,ঠিক আছে। তাই হবে। আমি তাহলে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একটা ট্রিপ দেই কি বলো?
মিশু খুশি হয়ে বলল,একদম ঠিক বলেছো। তাড়াতাড়ি সব কাজ গুছিয়ে নাও,একসাথে ঘুরতে যাবো।
– তাহলে তো প্রতিমাসে একবার করে হানিমুন হবে আমাদের। হা হা হা।
মিশু হেসে বলল,ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো। হানিমুনে যাবো, দার্জিলিং। নিয়ে যাবা?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


– আচ্ছা পাগলী মেয়েটা, নিয়ে যাবো। আমি তাহলে ব্যবস্থা করে ফেলি?
– আচ্ছা। আমার তো পাসপোর্ট করতে হবে।
– সমস্যা নেই,সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
মিশুর মুখটা খুশিতে ঝলমল করছে। দেখলেই প্রশান্তি লাগছে মনে। মেয়েটাকে সবসময় এভাবে খুশি খুশি দেখতে চায় মৈত্রী। তার বিনিময়ে সবকিছু জলে গেলে যাক,তবুও মিশমিশের মুখের হাসিটা থাকতে হবে!
মর্ম এগিয়ে গিয়ে একটা পুকুরের পাড়ে বসে পড়ল। আজ সকাল থেকেই কেন যেন খুব একাকীত্ব এসে ভর করেছে। এত ব্যস্ততা ময় জীবনটাকেও আজ খুবই নিঃসঙ্গ লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন পাশে বসে থাকলে,একটু কাঁধে মাথা রেখে কানের কাছে মৃদু স্বরে কিছু বললে, হাতে হাত রেখে একটু ভরসা দিলে, জীবন টা খুব যে খারাপ হয়ে যেতো তা তো নয়। বরং একটু অন্যরকম হতে পারতো। এরকম তো কখনো হয়নি। তাহলে মিশুর বিয়ের কথা শুনেই কি এরকম মনে হচ্ছে? নাকি মুগ্ধতা’র মুখে সেই মানুষ টার কথা শুনে এরকম অনুভূতি হচ্ছে?
মুগ্ধতার কথা মনে হতেই বুকটা কেমন করে উঠলো। মেয়েটা উড়ে এসে জুরে বসেছে মনের ভিতর। হঠাৎ করেই এভাবে ও মর্ম’র প্রেমে পড়ে গেলো যে একবার ভাবতেই হয় ওর কথা।
এমন সময় মুগ্ধতা এসে পাশে বসে পড়লো। মর্ম একবার চমকে উঠে তাকালো ওর দিকে। ওর কথা ভাবলেই ও এসে হাজির হয় কেন?
মুগ্ধতা পাশে বসতে বসতে বলল, আমার কথাই ভাবছিলেন তাইনা?
– কই না তো।
– আমিতো জানি আমাকে নিয়েই ভাবছেন।
– হ্যা ভাবছি। আপনি এরকম হঠাৎ করেই আমার প্রেমে পড়ে গেলেন কেন?
– আজব প্রশ্ন তো! আপনাকে তো পড়তে বলিনি। আমি পড়েছি সেটা আমার ব্যাপার।
– সেটা যে আমার উপরেও প্রভাব ফেলছে তার কি হবে?
মুগ্ধতা হেসে আঙুল দিয়ে তানিন ও ইফতি কে দেখিয়ে দিয়ে বলল,তাহলে ওদের মত করে আপনার কাঁধে মাথা রাখতে দিলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
মর্ম একবার অবাক হয়ে মুগ্ধতা’র দিকে তাকালো। তারপর কিছু না বলেই পানির দিকে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। এভাবে নিরবে কেটে গেলো অনেকটা সময়। নীরবতার ও ভাষা আছে একরকম। হয়ত সে ভাষাতেই কথা বলতে বলতে এখন দুজনে এই স্নিগ্ধ সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করছে!

এক মাস পর..
মিশু ছুটাছুটি করে এটা ওটা এনে বিছানার উপর রাখছে। মৈত্রী ব্যাগ গুছাচ্ছে। আজ ওদের হানিমুন ট্রিপ। মৈত্রী প্লেনে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মিশুর আবার লম্বা জার্নি পছন্দ। তাই বাসেই যাওয়া হবে। ঢাকা থেকে বুড়িমাড়ি সীমান্ত, সেখান থেকে শিলিগুড়ি তারপর দার্জিলিং এর পথে। যদিও জার্নিটা একটু লম্বা হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু মিশু এটাই চাইছে।
ব্যাগ গুছানো হয়ে গেলে মৈত্রী মিশুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মিশু কোমরে আঁচল গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। বাহ! দারুণ গৃহিনী গৃহিনী লাগছে তো। একবার হেসে কিছু বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় মাত্রা এসে দরজায় দাঁড়ালো।
এসেই বলল,ভাইয়া কাউন্টার থেকে ফোন করেছিলো। আজ একটু তাড়াতাড়ি বাস ছাড়বে। আমাদের এক্ষুনি খেয়েদেয়ে বেড়িয়ে পড়া দরকার।
– তোরা রেডি হয়ে নে। মিশুর রেডি হতে বেশি সময় লাগেনা।
মাত্রা চলে যেতেই মিশু এসে মৈত্রীর পায়ের উপর পা তুলে দাঁড়ালো। তারপর গলা ধরে আদুরে গলায় বলল, বাসে কিন্তু আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে যাবো আচ্ছা?
– আচ্ছা। আর?
– আমার হাত কিন্তু তোমার হাতের মুঠোয় থাকবে, আচ্ছা?
– আচ্ছা। আর?
– আমি কিন্তু একবার ঘুমে ঢলে পড়ে তোমার কোলের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো। তখন তুমি নিচু হয়ে আমার ঠোঁটে একটা চুমু দিবা, আচ্ছা?
– আচ্ছা, আর?
– জানালার বাতাসে আমার চুলগুলো উড়ে এসে যখন মুখের উপর পড়বে, তুমি কিন্তু আলতো করে সরিয়ে দিবা। আচ্ছা?
– আচ্ছা আচ্ছা। আরো আছে?
– আছে, আমি বেশিক্ষণ বসে থাকার পর পা ফুলে গেলে তুমি আমাকে কোলে নিয়ে হাটবা।
– সেকি! আব্বু আম্মুর সামনে?
– হ্যা।
মৈত্রী একবার মিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,আচ্ছা। যদিও সেরকম পরিস্থিতি তে পড়লে ওর খুবই লজ্জা লাগবে। কারণ, সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ও ওনার স্ত্রী, মাত্রা ও খুজিন্তা, ইফতি, তানিন, ওরাও সবাই যাচ্ছে। সবাই সবার মত আলাদা ঘুরবে,কিন্তু ট্রিপ তো একইসাথে! তাই একটু আধটু লজ্জা লাগাটাই স্বাভাবিক!
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে,মিশুর বাস জার্নি ভালো লাগে বলে সকলেই বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে,মর্ম ও মুগ্ধতাও ওদের সাথে যাচ্ছে। এই এক মাসেই যশোরে ওদের ফিল্মের শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি শুট গুলো নেয়া হবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। তাই ওরা ঢাকায় চলে এসেছে। বাসার সকলে যাচ্ছে শুনে মর্ম ও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজে একটু ব্রেক দিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মুগ্ধতাকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছে ও। সবাই দোকলা, সে আবার একলা থাকবে কেন? গল্প করার জন্য হলেও মুগ্ধতা কে সাথে নেয়া দরকার। তাছাড়া মেয়েটা যেভাবে ওর খেয়াল রাখে, ওকে সবসময় পাশে রাখতেই হয়। তাছাড়া, চাকুরীগত ভাবে মুগ্ধতা মর্ম’র এসিসট্যান্ট।
তবে ওদের মাঝে এখনো কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয়নি। কিন্তু মিশু ও মৈত্রী আশাবাদী, দার্জিলিং ট্রিপে গিয়ে কিছু একটা ঘটবেই, আর ওরাও জুটি বেঁধে ফেলবে। এখন সেটার অপেক্ষাতেই আছে সকলে!
ফিল্মের কাজ খুব সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে মর্ম ও তানিনের ক্যারিয়ার ও। সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের এখন বড্ড সুখের সময়। খুজিন্তা ও মিশু দুজনে খুব সুন্দর ভাবে বিজনেস দেখাশোনা করছে। দার্জিলিং ভ্রমণের এই কয়েকদিনের জন্য বিজনেসের কাজ ঢিলেঢালা ভাবে চলবে,সব কাজ ম্যানেজারের উপর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কয়েক দিন অফিস হাফ টাইম করে চলবে।
আর বাসার দেখাশোনা করার জন্য এই কয়েকদিনের দায়িত্ব পড়েছে হিমু ও ওর নতুন বরের উপর। মিশুর বিয়ের পরপর ই ও হিমুর সাথে ওর সেই পরিচিত ড্রাইভার ছেলেটির বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এক সপ্তাহের জন্য বরকে নিয়ে বাসায় একা থাকবে ভেবে হিমু খুবই খুশি!
গল্প তো এখানেই শেষ! আহা! জীবন টা যদি গল্পের মত হতো! তবে এর জন্য প্রতিটা পরিবারে একজন সাফায়েত উল্লাহ সাহেব থাকা দরকার। তাহলে জীবন টা গল্পের চেয়েও সুন্দর হতে পারতো!
বাস ছেড়ে দিয়েছে।
মিশু জানালায় মাথা রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে। রাত্রিবেলা প্রিয়জনের পাশে বসে এরকম একটা জার্নির চেয়ে সুখকর ব্যাপার বুঝি আর হয় ই না। মৈত্রীর এক হাতের মুঠোয় মিশুর ডান হাত। আরেক হাতে ও শক্ত করে ধরে আছে মিশুকে। মিশুর সামনের ছোট ছোট চুল গুলো উড়ে এসে মুখের উপর পড়েছে। মৈত্রী আলগোছে সেটুকু সরিয়ে দিতেই মিশু মিষ্টি করে হাসলো। মৈত্রী ভাবছে, মিশু এত সুন্দর কেন!
আর মিশু ভাবছে,”জীবন টা এত সুন্দর কেন? সময়টা এখানে থেমে গেলেই পারতো!”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here