অনুভূতির অন্বেষণ পর্ব -২০

#অনুভূতির_অন্বেষণ
#চন্দ্রিকা_চক্রবর্তী
#পর্বঃ২০

(৬৪)

বিছানায় বসে ফোন কানে লাগিয়ে মাথা নিচু করে বাম হাতের নখ খুঁটছে ইশরাত। চোখে তার হালকা পানি। নাক টানছে ক্রমাগত। বিগত দেড় ঘন্টা যাবত সাদমান তাকে অনেকভাবে অনেক কিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু সে সবকিছু মানতে নারাজ। বোঝাতে বোঝাতে সাদমান নিজেও কেমন হাঁপিয়ে উঠেছে। এবার সাদমানের দূর্বল কন্ঠ কানে এলো তার

—-বুঝতে পেরেছো আমার কথা? একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবো সোনা। আমি যদি তখন তোমাকে আস্কারা দিয়ে ফেলতাম, তাহলে আজকের এই দিনটা তোমার জীবনে কখনোই আসতো না। কারণ তখন তোমার পড়াশোনার প্রতি সবটুকু ফোকাস আমি নিজে কেঁড়ে নিতাম। আমি তোমার জন্য আছি, আজীবন থাকবো। কিন্তু পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এই সময়টুকু কী তোমার আজীবনের জন্য বলো আমাকে? এই সময়টাকে যাতে তুমি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারো তাই তোমার থেকে আমি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতাম। তুমি জানতে আমার নিজের কতোটা কষ্ট হতো এমনটা করতে? কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতাম। পরমুহূর্তেই নিজেকে শুধরে নিতাম। তোমাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন ভেবে গুটিয়ে নিতাম নিজেকে। তুমি তো তোমার মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পেরেছিলে অন্তত। অথচ আমার দিকটা একবার ভাবো? আমি নিজের অনুভূতি টুকুন প্রকাশ করতে পারিনি। নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে অনুভূতি অপ্রকাশিত রেখে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখা কতোটা কষ্টের জানো তুমি? তোমার ভবিষ্যতের কথাটাই যে ভেবেছিলাম আমি!

—-কিন্তু আপনি আমাকে কতোবার কতো ভাবে অপমানিত করেছেন জানেন?

—-জানবো না কেন সোনা? অপমান তো আমিই করেছি। কিন্তু কী করতাম বলো? তোমাকে আমি তো স্বাভাবিকভাবেও মানা করেছিলাম। শুনেছিলে আমার কথা? আমার কাছে কোনো অপশন ছিলো না যে! তবে আজ আমার সব পাওনা মিটে গিয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আমার বউ একজন ডক্টর হতে চলেছে। আমি যে কতোটা খুশি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।

—-ঝগড়াঝাঁটি তো কম করতেন না আমার সাথে। এখনো কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে আসেন। হুহ্!

হেসে উঠলো সাদমান।

—-বউয়ের সাথে ঝগড়া করবো না তো কী পাশের বাসার ভাবীর সাথে করবো? ঝগড়া তো আমি করবোই। সত্যি বলছি, তোমার সাথে ঝগড়া করতে আমার বেশ লাগে!

ইশরাত এবার মৃদু হাসলো কিন্তু কিছু বললো না। চুপ করে রইলো।

—-ইশু, আই এম স্যরি। এরকমটা আর কখনো হবে না।

—-মানে? আর কখনো ঝগড়া করবেন না?

—-ঝগড়া ভালোবাসার একটা অংশ ইশু। খোঁচাখুঁচি কিংবা ঝগড়াঝাঁটি ছাড়া একতরফা ভালোবাসা বড্ড বিস্বাদ লাগবে। ঝগড়া চলছে এবং চলবেও। কিন্তু আমি প্রমিজ করছি, আর কোনোদিন তোমার গায়ে হাত তুলবো না। সেদিনের ঘটনার জন্য আমার মনে তৎক্ষনাৎ কোনো অনুশোচনা না জাগলেও পরবর্তীতে সেটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমার খারাপ লেগেছে ইশু। খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু কী করতাম বলো? নিজের রাগ যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। যার জন্য আমি নিজের আবেগকে এতোটা নিয়ন্ত্রণে রাখতাম, সে যদি বলে অন্য একটা ছেলের সাথে গিয়ে বসবে তাহলে আমার রাগ হবে না বলো? আমার বউ কেন অন্য কারোর পাশে গিয়ে বসবে? আমার বউ শুধু আমার সাথে আমার পাশে থাকবে।

মুখে খানিকটা লজ্জার আভা ফুটে উঠলো ইশরাতের।

—-তোমাকে বিয়ের তারিখ জানানো হয়েছে?

—-বিয়ের তারিখও ঠিক করে ফেলেছেন আপনারা?

—-এখনো ফাইনাল করিনি। সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে। তোমার মেডিক্যাল কলেজে এডমিট হওয়ার জন্য তো এখনো দুই মাসের মতো বাকী। এই সময়টাতেই আমাদের পরিবার বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছে।

—-কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম যাকে বিয়ে করবো তার সাথে আগে চুটিয়ে প্রেম করবো।

—-প্রেম তো করবো আমরা। অবশ্যই করবো। আগে বিয়েটা করে নেই?

—-বিয়ের পরে আবার প্রেম কীভাবে করে?

—-প্রেম করার জন্য কোনো শর্ত লাগে না রে পাগলী। বৈবাহিক অবস্থান প্রেমের ক্ষেত্রে কখনো নির্ধারক হতে পারে না। তাছাড়া বিয়ের পর প্রেমটা হালাল প্রেম হবে। তাহলে সমস্যা কোথায়?

—-আমার বান্ধবীদের তো কাউকে বিয়ের পরে প্রেম করতে দেখলাম না। তাহলে আমি করবো কেন?

—-বান্ধবীর কথা ছাড়ো তো! প্রেম কী করে করতে হয় সেটা বিয়ের পর আমি তোমাকে শেখাবো। তখন দেখে নিও আমি কতো ভালো প্রেমিক।

ইশরাত আর সাদমানের কথোপকথন কিছুটা শুনেছে মিশরাত। নিজের ছোট বোনের জন্য বেশ খুশি সে। নিজের পছন্দের মানুষকে অবশেষে বিয়ে করতে পারছে তারা দু’জন। এতেই সে খুশি। আজকে রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার পর শোয়েব রহমান কিছু করার আগে সাদমানই পুরো বিল্ডিংয়ের সব্বাইকে মিষ্টি খাইয়েছে। মিষ্টি কিনে রাস্তায় যাকে পাচ্ছিলো তাকেই দিচ্ছিলো। মিশরাতের ব্যাপারটা বেশ ভালো লেগেছে। কারণ তার বোনের বৈবাহিক জীবনের জন্য আর কোনো চিন্তা নেই তার। সাদমান যে তার বোনকে নিজের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে ভালোবাসবে, ভালো রাখবে এটা নিয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। ইশরাত রুমে বসে কথা বলছে বিধায় সেই রুমে আর মিশরাত ঢুকলো না। সেই রুম পার করে ড্রয়িং রুমে যেতে না যেতেই তার ফোন বেজে উঠলো। ফোন নাম্বারটা সমেত মানুষটাও তার পরিচিত। ফোন রিসিভ করে কানে লাগানোর সাথে সাথে তার কানে ভেসে এলো এক চমৎকার পুরুষালী কন্ঠ

—-হ্যালো মিশরাত? আমি নিশান বলছিলাম। ফ্রী আছেন আপনি?

—-জি, বলুন।

—-আসলে আপনার বাবা মায়ের সাথে কথা বলার আগে আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাইছি। আপনার সময় হবে কখন?

—-আমি তো অফ ডে ছাড়া সময় পাই না। এইতো শুক্রবার বা শনিবার?

—-তার মানে তো পরশুদিন আসতে পারবেন। শুক্রবার যেহেতু। আসতে পারবেন? কোনো সমস্যা নেই তো আপনার?

—-না, সমস্যা নেই। কোথায় আসতে হবে বলুন, আমি চলে আসবো।

(৬৫)

ইশরাত আর সাদমানের বিয়ের শপিং করতে আজকে বের হওয়ার কথা। ইশরাত মিশরাতকে ছাড়া কোনো শপিং করবে না সেটাও আগেভাগে বলে রেখেছে। এরমধ্যে আবার নিশান বলেছে তার সাথে যাতে মিশরাত দেখা করে। সব মিলিয়ে মিশরাত ভেবে উঠতে পারছিলো না কী করবে। যখন সাদমানকে এই ব্যাপারে বললো তখন সাদমান পরামর্শ দিলো যাতে শপিং শেষ করে মিশরাত নিশানের সাথে দেখা করতে যায়। বাইরে তারা চারজন একসাথে লাঞ্চ সারবে। এরপর সাদমান আর ইশরাত চলে আসবে তাদের মতো করে আর মিশরাত নিশানের সাথে কথা বলা শেষ করে বাসায় ফিরবে। সাদমানের পরামর্শ বরাবরের মতোই মিশরাতের পছন্দ হলো। তাই আজকে সকাল সকাল নাস্তা সেরে বিয়ের শপিং করতে বেরিয়ে পড়েছে তিনজন।

সকাল দশটা নাগাদ তারা বাসা থেকে শপিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। অথচ দুপুর তিনটে বাজতে চললো এখনো তাদের শপিং চলছে। এতোটা সময়ের মধ্যে শুধু ইশরাতের বিয়ের শাড়ি আর রিসিপশনের লেহেঙ্গা কিনে টুকটাক কিছু জুয়েলারি কেনা হয়েছে। সাদমানের জন্য এখনো কোনো শপিং করা হয়নি। তাছাড়া ইশরাত বলেছে তার আরও কেনাকাটা করার আছে। তাই একদিনে তাদের শপিং শেষ হলো না। সিদ্ধান্ত নিলো আগামীকাল তারা আবার শপিং করতে যাবে। তবে নিশানকে যেহেতু মিশরাত বলে রেখেছে তার সাথে দেখা করবে, তাই নিশানকে ফোন দিয়ে জানিয়ে তার বলা ঠিকানায় ইশরাত আর সাদমানকে নিয়ে চলে গেল মিশরাত।

মিনিট চল্লিশের মধ্যে নিশানের বলা ঠিকানায় চলে এলো তারা। একটা রেস্টুরেন্টেই নিশান দেখা করতে বলেছিলো মিশরাতকে। মিশরাত সমেত সাদমান আর ইশরাত গিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করছে নিশানের জন্য। কিন্তু এখনো সে আসেনি।

মিনিট পাঁচেক বাদে শোনা গেল একটা পুরুষালী কন্ঠ

—-আই এম এক্সট্র্যামলি স্যরি মিশরাত। আসলে কাজে একটু ব্যস্ত..

নিশান তার কথা শেষ করলো না। কারণ তার কন্ঠ শুনে একটা নয়, বরং তিনটে মুখ তার দিকে তাকিয়েছে। সাদমান আর ইশরাতকে এখানে হুট করে দেখে বোধহয় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল নিশান। সে কিছু বলার আগেই সাদমান বললো

—-আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আর হুট করে কথায় থেমে গেলেন যে? আমাদের আশা করেননি বুঝি ভাই?

সাদমানের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে খানিকটা হাসলো নিশান। এরপর বসে পড়লো তার জন্য রাখা চেয়ারে।

—-আসলে আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম যে ইশু আর সাদমানকে নিয়ে আসবো। কিন্তু ইশু মানা করলো। সে নাকী আপনাকে সারপ্রাইজ দিবে তাই।

মিশরাতের কথা শেষ হতে না হতেই ইশরাত বলে উঠলো

—-সারপ্রাইজ তো দিতেই হতো। আরে একমাত্র দুলাভাই বলে কথা। আর আমিও একমাত্র শালী। আধি ঘারওয়ালী! হি হি! তো ভাইয়া, সারপ্রাইজ কেমন লাগলো বলুন?

—-হুম? ওহ হ্যাঁ, সারপ্রাইজ। হ্যাঁ, ভালো লেগেছে। দারুণ লেগেছে।

—-তবে আপনাদের দু’জনের কথার মাঝে কিন্তু আমি বা ইশু কেউ থাকবো না ভাই। আসলে শপিং করতে বের হয়েছিলাম আমরা। দুপুর হয়ে গেল৷ এখন তো প্রায় চারটে বাজছে। কারোর খাওয়া দাওয়া হয়নি। তাই ভাবলাম একসাথে আজকের খাবার খাই। এরপরেই চলে যাবো আমরা দু’জন। আপনি আর মিশরাত আরামসে কথা বলতে পারবেন। সমস্যা নেই।

সাদমানের কথায় মৃদু হাসলো নিশান।

(৬৬)

সকাল পার হয়ে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। অথচ আরিয়ান এখনো ঘুমোচ্ছে। আজকে আরাভ ভেবেছিলো আরিয়ানকে নিয়ে এই শহর ছাড়বে। দু’দিন ধরেই শহর ছাড়ার পায়তারা করছে আরাভ। কিন্তু কোনোমতেই আরিয়ানকে রাজি করাতে পারছে না। রাজি আরিয়ান এখনো হয়নি। তবে গতকাল রাতে আরাভ জোর করে আরিয়ানের মায়ের সাথে তার কথা বলিয়ে দিয়েছিলো। আরিয়ানের বর্তমান পরিস্থিতি তার মায়ের সাথে আলোচনা করেছে আরাভ। এরপর উনাকে বুঝিয়ে বলেছে যাতে জোর করে হলেও আরিয়ানকে এই শহর ছাড়া করায়। কারণ যতোদিন না পর্যন্ত আরিয়ান মিশরাতকে না ভুলতে পারছে ততোদিন পর্যন্ত সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। আর মিশরাতকে ভুলতে হলে তার এই শহর ছাড়া খুব জরুরী। কারণ মিশরাতের কাছাকাছি থাকলে তার পাগলামি বাড়বে বই আর কমবে না। গতকাল রাতে তাই আরিয়ানের আম্মু নিজে কথা বলেছেন আরিয়ানের সাথে। অনেকক্ষণ যাবত ছেলেকে বুঝিয়েছেন। আরিয়ান কতোটুকু রাজি হয়েছে সেটা আরাভ জানে না। তবে সে চুপ ছিলো পুরোটা সময়। আরাভের সাথে তর্ক করে কিংবা মুখের উপর না করে দেয় এই শহর ছাড়ার কথা বললে। কিন্তু নিজের মায়ের সাথে কিছুই বলেনি। আরাভ ধরে নিয়েছিলো যে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। মনে মনে বেশ খুশি হয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলো সে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পর থেকে এখনো পর্যন্ত দেখছে আরিয়ান ঘুমিয়েই যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার তাকে ডাকলেও উঠেনি সে।

আরাভ আশেপাশে তাকিয়ে খানিকটা হলেও আন্দাজ করতে পারলো কেন আরিয়ানের এই অবস্থা। কারণ ফ্লোরে প্রায় পাঁচ ছয়টা খালি বোতল গড়াগড়ি খাচ্ছে। কীসের বোতল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আরাভ। বোতলগুলো কুড়িয়ে নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো। আরিয়ানের পাশে গিয়ে বসলো। অনেকক্ষণ যাবত তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখের নিচে কেমন জানি কালি পড়ে গিয়েছে আরিয়ানের। ঠোঁট দু’টো কালো হওয়ার পথে। মুখ এবং শারীরিক গঠন অনেকটা ভেঙে গিয়েছে। দাড়ি গোঁফ না কামানোর কারণে মুখের বেহাল দশা। কেমন জানি বিদঘুটে লাগে দেখতে এখন ছেলেটাকে। ঘুমের মধ্যে আবার কেশে উঠলো আরিয়ান৷ ছেলেটার কাশি ইদানীং খুব বেড়েছে। নিজের সুস্থ সবল শরীরটাকে যে তিলে তিলে নষ্ট করে ফেলছে নিজের হাতে সেই খেয়াল ছেলেটার নেই। যেভাবে দিন-রাত একাকার করে নেশায় বুদ হয়ে থাকে, তাতে শরীরে বড়সড় কোনো সমস্যা তৈরি হতে খুব বেশি একটা সময় লাগবে না। একসাথে এতোকিছু ছেলেটার শরীর নিতেও পারছে না। পারবে কী করে? যেই ছেলে কোনোদিন একটা সিগারেট অবধি ছুঁয়ে দেখেনি, সে যদি একসাথে এতোগুলো নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে, তাহলে তার শরীর তো খারাপ করবেই।

—-আরিয়ান, ওই ভাই? উঠ না রে? উঠে বস? তোর পাগলামি দেখতে দেখতে নিজেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি আমি। তোর ক্লান্তি আসে না এরকম পাগলামি করতে? উঠে বস এবার? পেটে দু’টো ভাতের দানা অন্তত যেতে দে? খালিপেট থাকিস, রাতদিন এসব আজেবাজে জিনিস নিয়ে পড়ে থাকিস। কেন করছিস এমনটা বল? ও দোস্ত, উঠে বস না রে? ওই পাষাণ মেয়েটার জন্য কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছিস বল? ওই মেয়ের বিবেক নেই রে। ওই মেয়ে নির্দয়। তোর শত কান্নাও ওই মেয়ের মন গলাতে পারবে না। কেন বুঝতে চাইছিস না বল তো?

ঘুমটা হালকা হয়ে আসছিলো আরিয়ানের। এরমধ্যে আরাভের ক্রন্দনরত স্বর কানে আসায় ঘুমটা একেবারে কেটে গেল আরিয়ানের। এরপর থেকে আরাভের বলা সব কথাই শুনেছে সে। আরাভ এখন চোখে হাত দিয়ে কাঁদছে।

—-তুই কাঁদছিস কেন রে আরাভ?

আরিয়ানের কন্ঠ কানে আসায় চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো আরাভ।

—-উঠেছিস তুই ঘুম থেকে? আয়, খেতে আয়। তোর জন্য শালা আমিও খাইনি কিছু জানিস? পেটে তো দাউ দাউ করে খিদের আগুন জ্বলছে আমার। চল খেয়ে নিবি একসাথে।

আরিয়ানকে ধরে উঠিয়ে বসালো আরাভ। মিনিটের মাথায় হাতে ব্রাশ এনে পেস্ট লাগিয়ে আরিয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে ব্রাশ করতে বলে চলে গেল খাবার বাড়তে। আরিয়ান কেবল ব্রাশ সামনের দিকের দাঁতগুলোতে লাগাতে নিবে, তার আগেই ফোন বেজে উঠলো তার। তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিলো সে। একটাই কারণে, যদি মিশরাত ফোন দেয়?

তবে ফোনটা মিশরাত দিলো না। এমনকী কার নাম্বার থেকে ফোনটা আসলো সেটাও বুঝতে পারলো না আরিয়ান। কারণ আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। কল রিসিভ করলো আরিয়ান। অপর প্রান্তের মানুষটির কন্ঠ শোনার অপেক্ষায় আছে। তবে একেবারেই অপেক্ষা করতে হয়নি সেই জন্য তার।

—-কেমন আছো আরিয়ান? সেদিন আমাকে এমন করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে কেন হুম? নিজের মোনার সাথে এরকম করলে তুমি? যাই হোক, সেসব আমি ভুলেই গিয়েছি। দু’জন ভালোবাসার মানুষের মাঝে কিছু মনোমালিন্য তো থাকবেই তাই না? তাই বলে কী সম্পর্ক শেষ করবো? মোটেই না। আর তোমাকে তো আমি ছাড়ছিই না। তো বলো তো সুইটহার্ট, কোথায় দেখা করবো তোমার সাথে? এবার কিন্তু আর দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না হুম!

আরাভ খাবার নিয়ে রুমে ঢুকতে পারেনি। দূর থেকেই শুনতে পেল আরিয়ানের গলা। তার কন্ঠের অশ্রাব্য গালিগালাজ। গালিগালাজের এক পর্যায়ে অপর প্রান্তের মানুষটার নামও উচ্চারণ করতে শুনলো আরাভ। খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে সেখানেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো সে। আরাভের এই ক্লান্তি শারীরিক নয়, মানসিক। আর এই ক্লান্তি তার মনে এসে ভর করলো আরিয়ানের অবস্থা দেখে। একটা ভুলের পরিণাম ছেলেটা আর কতোদিন ধরে বয়ে বেড়াবে? একটা ভুলের শাস্তি আর কতোদিন ধরে পাবে? যাকে ভুল বুঝে একদিন অপমান করেছিলো, সে এখন কোনোভাবেই তার কথা শুনতে চাচ্ছে না। আর যার কারণে আজকে তার এই অবস্থা, সে তাকে কোনোমতে ছাড়তে চাইছে না। আর কতো সহ্য করবে ছেলেটা? টেবিলে রাখা নিজের ফোনের দিকে চোখ পড়লো আরাভের। কী ভেবে যেন ফোনটা হাতে নিয়ে মিশরাতের নাম্বার সামনে আনলো। কেবল ফোন দিতেই যাবে এরমধ্যেই তার মনে পড়লো সে নিজেই বলেছিলো, আরিয়ান মরে গেলেও মিশরাতকে ফোন করবে না সে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ফোন রেখে দিলো আরাভ। মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। কী করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। আসলেই কী আরিয়ানের মৃত্যুই এই অশান্তির সমাধান?

চলবে…
(
[নতুন চরিত্র চলে এসেছে!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here