অনুভূতির অন্বেষণ পর্ব -শেষ

#অনুভূতির_অন্বেষণ
#চন্দ্রিকা_চক্রবর্তী
#পর্বঃ২১

(৬৭)

সাদমান আর ইশরাত চলে গিয়েছে মিনিট দুয়েক আগে। সন্ধ্যে হতে চলেছে। এখন মিশরাত বাসায় ফেরার তাগদা অনুভব করছে। অথচ তার সামনে বসে থাকা মানুষটার মধ্যে কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো দেখতে পাচ্ছে না সে। অগত্যা তাকেই বলতে হলো

—-আপনি কিছু একটা বলবেন বলছিলেন?

—-জি, আসলে কীভাবে শুরু করবো জানি না। তবে আমার মনে হয়েছে আপনার বাবা-মা থেকে আপনার সাথে কথা বলে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো। তাছাড়া আপনি আপনার মা-বাবা কে ভালো বোঝাতে পারবেন যেটা হয়তো আমার দ্বারা সম্ভব হবে না।

—-কিন্তু কী বলতে হবে সেটা তো বলবেন?

—-আমি আমাদের নিজেদের কিছুটা সময় দিতে চাই মিশরাত। তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করতে চাইছি না। আমি চাই আমরা একে অপরকে একটু ভালো করে বুঝি। এরপর না হয় বিয়ের চিন্তা করা যাবে।

—-আপনি কী বিয়ে পেছাতে বলছেন?

—-একদমই তাই। আমি সেদিন আপনার বাসায় যাওয়ার পর যেটা বুঝলাম তা হলো যে আপনার আব্বুর পাত্র খোঁজার তাড়া আছে। সম্ভবত ভালো পাত্র পেলে এখনই বিয়ে দিয়ে দেবেন। আমাকে উনার মনঃপুত হয়েছে সেটাও বুঝেছি। উনি খুব দ্রুতই বিয়ের কথা তুলতে পারেন। তাই আগেভাগেই আপনাকে বলে রাখা।

—-সময় তো আমরা এমনিতেও পাবো। ইশুর বিয়ের আগে তো আর আমি বিয়ে করছি না। তবুও আপনি সময় চাচ্ছেন?

—-জি, আরেকটু সময় চাই আমার।

—-বাই এনি চান্স, আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো? থাকলে এখনই বলতে পারেন। আমি কিছু মনে করবো না।

—–আপনাদের মেয়েদের এটাই সমস্যা বুঝলেন? সবসময় বেশি বুঝে ফেলেন। আপনাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।

হুট করে শেষের কথাটা শুনে কেন যেন মিশরাতের অস্বস্তি হতে লাগলো। অথচ কথাটা খুবই স্বাভাবিকভাবেই বলেছে নিশান।

—-বেশ তো বলুন? আপনি কয়দিন সময় চান?

—-আপনার ছোট বোনের বিয়ের মাস পাঁচেক পরে।

—-তবে সেটা তো আপনি সেদিনই বলতে পারতেন যেদিন আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন?

—-আসলে আমি একটু লাজুক প্রকৃতির। তাই সকলের সামনে কথাটা বলতে পারিনি।

হালকা ভ্রু কুঁচকে গেল মিশরাতের। এখানে লজ্জা পাওয়ার কী হলো সে ঠিক বুঝতে পারলো না।

—-ঠিক আছে। আর কিছু বলবেন?

—-আমরা একে অপরকে তুমি করে বলতে পারি কী? আপনি সম্বোধনটা কেমন জানি বেমানান লাগছে।

—-আচ্ছা, যেটা আপনার ইচ্ছে। আজ তাহলে চলি হ্যাঁ?

—-এই যে ভুল করে ফেললে। আবারও আপনি?

মিশরাত কিছু না বলে স্মিত হেসে চেয়ার থেকে উঠতে নিয়েছিলো এরমধ্যেই নিশান তার বাম হাত ধরে আটকে দিলো তাকে।

আকস্মিক ঘটনায় মিশরাত খানিকটা ভড়কে গেল। মিশরাতের হাতে ধরেই নিশান চেয়ার থেকে উঠলো। হাত ধরে রাখা অবস্থায়ই গিয়ে দাঁড়ালো মিশরাতের সামনে। এরপর মুচকি হেসে পকেট থেকে একটা ছোট্ট রিং বক্স বের করলো। মিশরাতের বাম হাতের আঙুলে পরিয়ে দিলো সেই আংটি।

—-আপনি মানে… তুমি কী করছো এসব?

—-আসলে সেদিনই আমার এটা তোমাকে পরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু ওই যে বললাম, আমি কিছুটা লাজুক প্রকৃতির। তাই আসলে আমাদের মা-বাবার সামনে দিতে পারিনি।

—-কিন্তু এটা আজকে এখন কেন? আমাদের তো বাগদান সম্পন্ন হতে দেরী আছে।

—-যখন হবে তখন তো পরিবারের সবার সামনে আংটি পরিয়ে দিবোই। তবো এটা আমার পক্ষ থেকে স্পেশাল।

একটা ঢোক গিললো মিশরাত। নিশানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে চাইলো। ঠিক এই মুহুর্তে নিশান যা বায়না করলো সেটা কোনোভাবেই আশা করেনি মিশরাত।

—-আমি কী তোমার হাতে একটা চুমু খেতে পারি?

আমতা আমতা শুরু করলো মিশরাত। বর্তমান পরিস্থিতি তাকে ভীষণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সে না করতে চাইছে প্রবলভাবে। কিন্তু কেন যেন এই মুহূর্তে তার মুখ দিয়ে কিছু আসছে না।

—-আমিও কী বোকা! মেয়েরা লাজুক হয় এটা তো আমার আগেই মনে রাখা উচিত ছিলো। তো এই নীরবতাকেই আমি সম্মতি ধরে নিলাম?

মিশরাত এবার কিছু বলার সুযোগ আর পেলো না। এর আগেই নিশান তার মনের ইচ্ছে পূরণ করে ফেললো। দ্রুত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো মিশরাত। এরপর আর কোনো দিকে তাকালো না সে। সোজা বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।

(৬৮)

—-তোমার জন্য এখন গাড়ি রেখে আমার রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। এটা কোনো কথা?

—-এই চুপ করুন তো? খুব না বলেন আপনি প্রেমিক হয়ে দেখাবেন বিয়ের পর? এই আপনার প্রেমিক হওয়ার নমুনা? বিয়ের আগেই এতো রসকষহীন। আর বিয়ের পরে যে আপনার মতো ঢেঁড়স নিয়ে আমি কী করবো!

—-এই, এই? কী বললে? আমি ঢেঁড়স?

—-তা নয়তো কী? সেদিন আপনি রাস্তায় ঠিক এরকম একটা রিকশায় বসে আমাকে বকাবকি করেছিলেন। তো আজ আপনার নিজে থেকে উচিত ছিলো না আমার সাথে একটু ভালো ভালো কথা বলার? আপনি নিজে তো উঠলেনই না, ভাবলাম আমি উঠতে বললে আপনার পূর্বের কথা মনে হয়ে স্যরি বলবেন। একটু ভালোবাসাময় কথাবার্তা বলবেন। তা না। আপনি আছেন গাড়ি নিয়ে।

ইশরাতের কথা শুনে বাঁকা হেসে সাদমান কিছু বলতে যাবে, তার আগেই কানে এলো এক মহিলার কন্ঠস্বর। তাদের রিকশার সাথেই যে রিকশা চলছে, তাতে যে মহিলা বসে আছে, তিনিই সেদিন পার্কে ইশরাতকে বারেবারে সাদমানের স্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করছিলেন। আজকে আবার দেখা হয়ে যাওয়ায় বলে বসলেন

—-এই যে মেয়ে, আবার কিন্তু দেখা হয়ে গেল। তোমাদের দেখলে ভীষণ ভালো লাগে বুঝলে? স্বামী স্ত্রী হিসেবে আসলেই বেশ মানিয়েছে তোমাদের। তোমার স্বামীর তো তোমাকে নিয়ে আবার চিন্তার অভাব থাকে না। এইতো সেদিনও বলছিলো আমাকে ডেকে “আমার স্ত্রী একটু সমস্যায় পড়েছে। তাকে সাহায্য করুন একটু দয়া করে”। সামান্য সাহায্য অথচ কতো আকুতি ছিলো চোখে। বেশ ভাগ্যবতী তুমি মেয়ে, এমন স্বামী পেয়েছো। ভালো থেকো তোমরা।

মহিলাটি যে রিকশায় বসেছিলো সেটা সামনে চলে গেল। তবে ইশরাতের মুখভঙ্গি এখনো অপরিবর্তনীয়। সেই মুখভঙ্গি যা তার মহিলাটির কথা শুনে গঠিত হয়েছে। ছোটছোট চোখ করে সাদমানের দিকে তাকালো ইশরাত। চোখে তার অভিমান এবং চাপা রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। এদিকে সাদমান পুরো কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। এই মহিলার এখনই এসব বলতে হলো?

—-তাই না? হুম? নিজে ওই মহিলাকে বলেছিলেন সেদিন যে আমি আপনার স্ত্রী। তাই তো উনি বারেবারে একই কথা বলছিলো আমাকে। অথচ আমি যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম তখন কী বলেছিলেন? হুম? এই মামা, রিকশা থামান। আমি নামবো।

—-এই, এই না। মামা, আপনি রিকশা চালান। সোনা বউ, শোনো না?

—-ওই খবরদার! এখন ঢং করবেন না। এতো বড় পল্টিবাজ আমি জীবনেও দেখিনি বাবা। আর এই পল্টিবাজ কীনা আমার হবু স্বামী! থাকুন আপনি আপনার মতো। আমি গেলাম।

সাদমানের কোনো কথাই শুনেনি ইশরাত। তার কথাই উপরে রেখেছে। রিকশা থামিয়ে সে অন্য আরেকটা রিকশা নিয়ে চলে গিয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লো সাদমান। ইশরাত তার সাথে রাগ করে থাকতে পারবে না ঠিকই। তবে আবার এক গাদা কথা বলে মেয়েটাকে বোঝাতে হবে। ইদানীং মেয়েটা যেন কেমন একরোখা হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে মেয়েটাকে সামলাতেও সাদমানের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও সে খুশি, কারণ এই মেয়েটির সান্নিধ্যে থাকলেই তার সুখপাখি তার নিকটে থাকে।

(৬৯)

—-ঘুমিয়ে গেছো সাদমান?

—-এইতো কেবল বালিশে মাথা রাখলাম। তোমাকে এমনিতেও আমি ফোন করতাম। আজকে আমরা চলে আসার পর কী কী হলো তা জানার জন্য। মূলত নিশান তোমাকে দেখা করতে বলেছিলো কেন সেজন্য।

—-আমিও তো তোমাকে একারণেই ফোন করেছি। আসলে কীভাবে বলবো জানি না। কিন্তু না বলেও থাকতে পারবো না। কেমন যেন ভেতর ভেতর একটা অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে আমার। কার সাথে কথাটা শেয়ার করবো বুঝতে পারছি না। আব্বু বা আম্মুকে এই ব্যাপারে আমি সংকোচের কারণে কিছু বলতে পারবো না। আর ইশু নিজেই এখনো ছোট। সে কী বললে কী বুঝবে কে জানে! তাই তোমাকে ছাড়া আমি আর কাউকে দেখছি না।

—-তোমার কী মনে হয় না যে তুমি ইদানীং আমার সাথে খুব ফর্মালিটি মেইনটেইন করছো?

—-এমা! কী বলছো এসব? একদমই তা নয়।

—-একদমই তাই মিশরাত। আমার কাছে কিছু বলার আগে তুমি এতো ভাবতে না। একটা কথা বলার জন্য আমাকে অপশনাল হিসেবে ধরতে না। অথচ এখন বলছো কাকে বলবে বুঝতে পারছো না তাই আমাকে বলছো? এতোটা পরিবর্তন কেন আসছে তোমার মধ্যে?

—-আরে বাবা এমন কিছুই না। সত্যি বলছি। তুমি একটু বেশিই ভাবছো।

—-একটা কথা পরিষ্কার বলে রাখছি মিশরাত। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক অন্য কোনো সম্পর্কের প্রভাবে কখনোই প্রভাবিত হবে না। আমার জীবনে বন্ধুর সংখ্যা খুব কম মিশরাত। তার মধ্যে তুমি একজন। বলবো যে অন্যতম। তোমার অবস্থান আমার কাছে আমার জীবনে অনেক স্পেশাল। আর তোমার এই অবস্থানে যে আজীবন তুমিই থাকবে আমার জীবনে সেটা জেনে রেখো। আর নতুন সম্পর্ক গড়া মানে পুরোনো সম্পর্কে ছেদ পড়া এমনটাও নয়। হ্যাঁ, তোমার বন্ধু হওয়ার পাশাপাশি হয়তো কয়েকদিন পর তোমার বোনের হাসবেন্ডও হবে। তবে তাই বলে আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে কিন্তু কোনো পরিবর্তন আমি আসতে দেবো না!

—-হয়েছে বলা? রাগ জাহির করা শেষ? এবার আমি বলি কিছু?

সাদমান কিছুই বললো না মিশরাতের কথার পরিপ্রেক্ষিতে।

—-আচ্ছা, এতো রাগ করার এখানে কী হলো বলো তো? আচ্ছা যাও, স্যরি। এবার কী আমরা আমাদের স্বাভাবিক কথোপকথন শুরু করতে পারি? যদি সাহেবের মর্জি হয়? প্লিজ?

—-বলো।

—-শোনো, আমি নিশানকে নিয়েই কথা বলবো তোমার সাথে। প্রথম কথা আগে বলি নেই, যেটা তুমি নিজেই একটু আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে। আজকে নিশান আমাকে ডেকেছিলো মূলত বিয়ে পেছানোর জন্য।

—-তোমাদের বিয়ে তো এমনিতেও এখন হচ্ছে না। তো?

—-এটাই আমি তাকে বলেছিলাম। কিন্তু সে বললো তোমার আর ইশুর বিয়ের পাঁচ ছয় মাস পর নাকী বিয়ে করতে চায়। একটু সময় দিতে বললো তাকে।

—-ওহ। হ্যাঁ, সময় তোমরা নিতেই পারো। যেহেতু এরেঞ্জ ম্যারেজই হচ্ছে, তাই একজন অপরজনকে চেনো, জানো। তাতেই ভালো। তবে সেটা তো সে সেদিনই বলতে পারতো যেদিন তোমাকে দেখতে গিয়েছিলো।

—-ঠিক এটাই বলেছিলাম আমি। এরপর সে নিজেকে লাজুক হিসেবে দাবি করলো। তাই নাকী সবার সামনে বলতে পারেনি। এখন চাইছে যাতে আমি আব্বু আম্মুকে বলি। কিন্তু ঘটনা এদিকেই শেষ হলে পারতো৷

—-কেন? আবার কী হয়েছে?

—-সে আজকে হুট করে আমাকে আংটি পরিয়ে দিলো৷ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এখন কেন। বললো এটা তার তরফ থেকে স্পেশাল। আচ্ছা, এতোটুকু পর্যন্ত হলেও মানা যেত। কিন্তু…

—-কিন্তু?

—-সে হুট করে আংটি পরিয়ে দিয়ে আমার হাতে…আমার হাতে কিস করে বসলো।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো সাদমান। এরপর বললো

—-ওয়েল, হুট করে করাটা তার হয়তো ঠিক হয়নি। কিন্তু হাতে চুমু খাওয়া তো এখন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের মধ্যেই কমন। আর সে জায়গায় নিশান তো তোমার হবু স্বামী।

—-কিন্তু তোমার ব্যাপারটা বুঝতে হবে সাদমান। সে নিজেকে প্রথমে লাজুক বললো। এতোটাই লাজুক যে বিয়ে পেছানোর কথাও বলতে পারেনি। আর আজকে তার লজ্জার বেষ্টনী একেবারে ভেঙে গেল নাকী যে সরাসরি কিস?

—-আরে বাবা হতেই তো পারে আজকে তোমাকে দেখে বেচারার মনে লাড্ডু ফুটছিলো। চোখে লাল-নীল বাতি দেখছিলো। এতো সুন্দরী বউ পাওয়ার খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে উত্তেজনার বশে চুমু খেয়ে ফেলেছে একটা। এটাকে নিয়ে এতো রহস্য তৈরি করার তো কিছু হয়নি। তুমিও না! ওই আরিয়ানের পাল্লায় পড়ে এখন সবকিছুতে রহস্য খোঁজো। ঠিক যেমন করে সে তোমার আর আমার সম্পর্ক নিয়ে কী জানি কী উল্টোপাল্টা ভাবছিলো!

হুট করে আরিয়ানের কথা তোলার পর চুপ হয়ে গেল মিশরাত। সাদমানও বুঝতে পারলো এখন আরিয়ানের কথাটা তোলা ঠিক হয়নি তার। তাই কথা পাল্টানোর উদ্দেশ্যে মজা করে বললো

—-অবশ্য ওই আরিয়ানের এখন কী খবর কে জানে! সাত আট মাস তো পার হয়ে গিয়েছে তোমার কসম কাটার। কবেই মনে হয় শহর ছেড়ে দিয়েছে। গিয়ে দেখো, এখন হয়তো তোমার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান পেয়ে মোনার সাথে সাথে ঠোনা পোনা তাদের সাথেও গিয়ে মেতে আছে!

সাদমানের কথা বলার নমুনা দেখে হেসে ফেললো মিশরাত। তবে সে হাসি ছিলো স্বল্প সময়ের জন্য। হাসি থামার সাথে সাথেই বুক ভরা এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মিশরাতের।

—-এই মিশরাত, কথা বলো না যে? কোথায় হারিয়ে গেলে আবার?

—-হুম? না শুনছি, বলো।

—-শোনো, তোমার বোন আবার আমার উপর ক্ষেপে গেছে। তাকে মানানো লাগবে। তাই আগামীকাল তোমার প্রচ্চুর সাহায্য আমার লাগবে।

—-আবার কী হলো তোমাদের মধ্যে!

—-আরে বহুদিন আগের কাহিনি আজকে ফাঁস হয়ে গিয়েছে হুট করে। বলছি শোনো।

(৭০)

আরাভ ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ানের পাশে। কারণ যেই আরিয়ানের এখন রুমের আসবাবপত্র লন্ডভন্ড করে দেওয়ার কথা, সে এখন চুপচাপ বসে আছে ছবির দিকে তাকিয়ে। ছবিগুলো গতকাল বিকেলের দিকে মিশরাতের সাথে নিশানের রেস্টুরেন্টে থাকাকালীন সময়টাতে তোলা। এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও এখনো আরিয়ান মিশরাতের পেছনে নজরদারি বজায় রেখেছে। আর আরিয়ানের ভাড়া করা লোকই গতকাল বিকেলের তোলা ছবি দিয়ে গিয়েছিলো। আরিয়ান তখন গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিলো বিধায় তৎক্ষনাৎ দেখতে পারেনি। তবে একটু আগেই তার নজরে এসেছে সেই ছবিগুলো। ছবি অনেকগুলো অনেক ভাবে তোলা হয়েছে। তবে তার মধ্যে থেকে দু’টো ছবি আরিয়ান হাতে নিয়ে আছে। একটা হলো যখন নিশান মিশরাতের আঙুলে আংটি পরিয়ে দিচ্ছিলো সেটা। অপরটি হলো যখন আংটি পরানো শেষ করে বাম হাতের তালুতে চুমু খাচ্ছিলো সেটা। কিছুক্ষণ পর আরাভ দেখতে পেলো দু’হাত শক্ত করে মুঠ করেছে আরিয়ান। তাতে করে দু’হাতে থাকা দু’টো ছবি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। আরাভ আরিয়ানের কোনো হেলদোল না দেখে ক্ষীণ কন্ঠে বললো

—-আরিয়ান, এসব দেখে আর কষ্ট পাস না। হবু স্বামীর সাথে দেখা করতে, কিছু সময় একান্তে কাটাতে মিশরাত যেতেই পারে। তাই না? তুই বরং এখন তার পেছনে লোক লাগানো বন্ধ করে দে। যেখানে কোনোরকম কোনো ফলাফলের সম্ভাবনাই শূন্য, সেখানে আর কী আশা রাখবি! শুনছিস আমার কথা?

আরিয়ান কিছুই বললো না। আগের মতোই বসে রইলো।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আরাভ। ফোনে নিজের ছোট ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ওয়াশরুমে গেলো সে। এরপর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফোন হাতে নিয়ে আবার গেলো আরিয়ানের রুমে। তবে সেখানে আরিয়ান ছিলো না। ওয়াশরুমে গেছে ভেবে আরাভ আবার নিজের রুমে চলে গেল। প্রায় পাঁচ মিনিট পর আবার আসলো আরিয়ানের রুমে। এবার সরাসরি চলে গেল ওয়াশরুমের কাছে। দরজা তো আবজা দেওয়া!

বারান্দা, ছাদ, বাগান এবং আশেপাশে যতোটুকু খোঁজা সম্ভব তার সবটাই খুঁজলো আরাভ। কিন্তু আরিয়ান নেই। কোথাও নেই। মারাত্মক চিন্তায় পড়ে গেল আরাভ। আরিয়ান গেল কোথায়! সে তো এতোক্ষণ চুপচাপ ছিলো। হুট করে কী হলো? এটাই কী তবে ঝড়ের পূর্বাভাস ছিলো? কিন্তু আরিয়ান কোথায় যাবে? মিশরাতের কাছে? না, আরাভ যতোটুকু জানে, আরিয়ান কখনোই মিশরাতের নামে কাটা কসম নিয়ে হেরফের করবে না কোনোমতেই। তাহলে? কোথায় গেল ছেলেটা হঠাৎ করে?

সিজন ২ আসবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here