#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই
#পর্ব-০৩
#লেখনী- সুরাইয়া ইসলাম সানজি
আস্তে আস্তে অচেনা মেয়েটির উপর আরো বেশি দুর্বল হয়ে পরে আয়াত। আসে পাশের মানুষের কাছ থেকে জানতে পারে মেয়েটার নাম “আলাইনা” মেয়েটা এই তো বেশ কিছু দিন আগে গ্রামে এসেছে ফুপির সাথে দেখা করতে, মাঝে মাঝেই নাকি আসে গ্রামে।
,
,
এর মাঝে হঠাৎই আদ্রিল কোনো এক কারনে শহরে নিজের বাসায় চলে যায়, যদিও শুভ্র আর আবিরও যেতে চাইছিলো কিন্তু আয়াত যাচ্ছে না বলে তাদেও যাওয়া হলো না।
,
তার বেশ কিছুদিন পর আদ্রিল নিজের বাবা-মা সাথে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। কারন জিঙ্গেস করলে আদ্রিল বলে এ গ্রামেরই একটা মেয়েকে নাকি ভালোবেসে ফেলেছে তাই বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছে।
—আচ্ছা আয়াত, ভাবা যায় যে আদ্রিল মেয়েদের সাথে ফাজলামি করে কাটিয়ে দিতো, সেই কিনা আজ একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আচ্ছা আদ্রিল বল তো মেয়েটাকে কোথায় দেখছিস আর আমাদের বলিস নাই কেনো।
আদ্রিল আবিরের কথা শুনে বাকা হাসে
— তোদের সারপ্রাইজ দিবো বলেই বলানি, তাই তো মাম্মাম, পাপাকে নিয়ে আসলাম। এবার বল তো সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো?
—সারপ্রাইজ যেমনই হোক না কেনো এটা কিন্তু খুব অন্যায় হইছে আমাদের বলিস নাই কেনো। আচ্ছা মেয়েটা কি খুব সুন্দরী, নাম কি মেয়েটার?
আদ্রিল মুচকি হেসে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“আলাইনা” ওর নাম আলাইনা। আমাদের পিছনের বাড়িটায় থাকে। ও যতটা না সুন্দরী তার থেকেও বেশি মায়াবী। আচ্ছা তোরা হুরপরী দেখেছিস? ওকে দেখলে হুরপরী আর দেখতে ইচ্ছা হবে না। ভয়ংকর রকমের সুন্দর ও। ওকে পাওয়ার জন্য যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো,না পেলে মরে যাবো দোস্ত।
,
,
আয়াত এতোক্ষন মোবাইলে গেমস খেলছিলো আর সবার কথা শুনছিল। কিন্তু আদ্রিলের শেষ কথাগুলোই যেনো আয়াতের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আয়াত কিছু বলতে চাই কিন্তু এই মুহূর্তে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। কি করে বলবে সে, বন্ধুর যে মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তার মায়ায় পরে গেছে।
আয়াত দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে পরে এই মুহূর্তে সবার সামনে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
,
,
,
______________________________
আজ শুক্রবার, আদ্রিলরা আজই আলাইনাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। যদিও আগে থেকেই আলাইনার ফুপিদের সব জানানো হইছে আর তারাও আদ্রিলদের সম্পর্কে সব জেনে গেছে আর ছেলেকে পছন্দ করে গেছে। এখন আদ্রিলের বাবা-মায়ের পছন্দ হলেই আজ আংটি পরিয়ে আসবে।
আলাইনা সবার সামনে বসে আছে আর বাসার সবাই আলাইনাল দিকে তাকিয়ে আছে। মূলত এখন শুধু আলাইনা সম্মতি দিলেই অর্ধেক বিয়ে মানে আংটি পড়িয়ে যাবে।
,
আলাইনা এক দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো আয়াত কিছু একটা বলবে সেই আশায়। আয়াতে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে বুকের উপর কঠিন কোনো পাথর চাপা পরছে দম বন্ধ হয়ে যাবে।
______________________________
আলাইনাকে জোর করলেও আলাইনার মুখ থেকে হ্যাঁ বলাতে পারেনি। আলাইনা সময় চেয়েছে তাই তখন আদ্রিলের মা বাবা চলে আসে।
পরে কোনো কারনে আদ্রিলের মা-বাবাকে আলাইনার ফুপি ফোন করে বিয়ের কথা না করে দেয়।
,
,
সেই থেকেই আদ্রিল একটা পর একটা ভাংচুর করে যাচ্ছে। একটা রুমে নিজেকে বন্ধ করে সুইসাইডের হুমকি দিচ্ছে। আদ্রিলের মা-বাবা দরজা ধাক্কাছে আর কাঁদছে। শুভ্র আর আবির দরজা খোলার বিভিন্ন অনুরোধ করছে।
আয়াত এতোখন কিছু না বললেও এবার বেশ চিৎকার চেচামেচি শুনে কাছে এসে দরজা জোড়ে ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। দরজায় ছিটকানি দেওয়া ছিলো না টেবিল দিয়ে আটকানো ছিলো তাই জোরে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়।
দরজা খুলতেই দেখতে পায় আদ্রিল বিছানার উপর এলোমেলো ভাবে পরে আছে। তখনই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে জানতে পারে অল্প কিছু ঘুমের ঔষুধ খেয়েছে, বেশি সমস্যা হবে না একদিন রেস্টে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে।
,
,
এদিকে আদ্রিলের মা, আদ্রিলের অবস্থা দেখে কয়েক বার জ্ঞান হারিয়েছেন। যতই যা হোক মায়ের মন কি আর কিছু মানে।
আয়াতের এতোক্ষন পাথরের মতো বসে ছিলো কিন্তু এবার আদ্রিলের মায়ের অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে। কানাডায় মা বাবা থাকলেও আদ্রিলের মা বাবা কখনো তার অভাব বুঝতে দেয়নি। সেই আজ তার জন্য তাদের এই অবস্থা। আয়াত মনে মনে নিজেকে দোষ দিচ্ছে আর ভাবছে হয়তো সে এই গ্রামে নিয়ে না আসলে আজ আদ্রিলের এ অবস্থা হতো না।
—আন্টি আপনি এতো টেনশন করে শরীর খারাপ কেনো, আমাদের সকল সমস্যার সলিওশন তো আছেই। আয়াত গিয়ে আলাইনাকে বুঝালে আলাইনা নিশ্চয়ই বুঝবে।
,
,
_____________________________
আয়ার আলাইনার সামনে বসে আছে। পিনপিন নিরবতা তাদের মাঝে কেউই কারো সাথে কথা বলছেনা। আদ্রিলের বাবা মা, আর শুভ্র আবিরের অনুরোধেই নিজের মনের লুকানো ভালোবাসাকে মাটি দিয়ে আজ আলাইনার সামনে বসে আছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস যাকে ভালোবাসে যার মায়ায় পরে আছে তাকে আজ বন্ধুর বিয়েতে রাজি হওয়ার অনুরোধ করছে।
—আপনি কি বলছেন আয়াত সাহেব, যাকে ভালো লাগে না তার সাথে কি জোর করে জীবন কাটানো যাই।
—প্লিজ অনুরোধ করে বলছি রাজি হয়ে যান। তাছাড়া আদ্রিল আপনাকে খুব সুখী রাখবে। ও খুব ভালোবাসে আপনাকে। আমার উপর আস্থা থাকলে আসা করি আমার কথা রাখবেন।
আজ পর্যন্ত যে কোনো সমস্যাই সমাধান করেছি তবে আজকে আপনি শেষবারের মতো এই কথাটা শেষ প্রমাণ করে দেন। আপনার কাছে অনুরোধ করছি।
,
,
আলাইনার এই মুহূর্তে সামনে বসে থাকা এই লোকটার উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। যাকে নিয়ে ছোট্ট থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছে সেই কিনা তাকে অন্যের বিয়েতে জোর করছে এর থেকে বড় অন্যায় আর কি হতে পারে। আচ্ছা আলাইনা তো ছোট থেকে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো তাহলে স্বপ্ন কেনো বাস্তবে কেনো আসলো। আর যদি বাস্তবে আসতেই হতো তাহলে তার নিজের হয়ে কেনো আসলো না।
আলাইনা নিজের ভালোবাসাকে এই মুহুর্তে চোখের পানি দ্বারা প্রকাশ করতে চায়। তারাতাড়ি চেয়ার থেকে ওঠে মুচকি হাসি দিয়ে বলে
—আপনি চিন্তা করবেন না আয়াত সাহেব। আপনার সম্মান আজ নাহয় আমার ভালোবাসার কাছেই বিক্রি করলাম।
আয়াত আলাইনার শেষ কথাটা বুঝতে পারলনা। কথাটার মানে জিঙ্গেস করবে তার আগে আলাইনা দ্রুত পায়ে তার সামনে থেকে চলে যায়।
,
,
______________________________
আয়াত সেই দিনই কাজের অজুহাতে শহরে চলে আসে। সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে কানাডা চলে যায়। দুই বছর বাবার সাথে কানাডায় ব্যবসা সাহায্য করে তারপর নিজেদের পুরোনো একটা ব্যবসা বাংলাদেশে আছে তাই সেটাকে দাড় করাতেই এক বছর আগে বাংলাদেশে আসা।
এখন তাদের পুরোনো ব্যবসাটাই দেশের নাম্বার ওয়ান।
সবার সাথে আর যোগাযোগ করে নেই। আর না কাউকে যোগাযোগ করার রাস্তা রাখছে। পুরোনো ভালোবাসা মনের মাঝে পুসতে পুসতে আজ সেই ভালোবাসা রুপ নিয়েছে ভয়ংকর রাগের।
বর্তমান,,,
,
,
চলবে,,,,,,,,,