অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই পর্ব ৪

#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই

#পর্ব-০৪
#লেখনী-সুরাইয়া ইসলাম সানজি

,
,

বর্তমান,,,,

আলাইনা একটু নড়েচড়ে উঠতেই আয়াত পাশ থেকে তাড়াতাড়ি চলে যায়। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আলাইনার মুখের উপর ঠেলে দেয়।
,
যাই হোক এ মেয়ের মায়ায় আর পড়া যাবেনা। এ মায়া যে সব ভালোদিক গুলো কেড়ে নেয়।
,
,
হঠাৎ মুখের উপর পানি পড়ায় আলাইনাকে ভয়ে চুপসে যেতে দেখে আয়াত একটু খারাপ লাগলেও মনে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।

—“দুঃখিত স্যার কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই। স্যার চা খাবেন।”

আলাইনা ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলছিলো, ভাবছিলো হয়তো ঘুমিয়ে পড়ায় স্যার রেগে গেছে।

______________________________

আয়াইনা অফিস শেষে বাসায় এসেই ক্লান্ত শরীরে বেডের উপর গা এলিয়ে দেয়। তখনই রোহানের আগমন হাতে কফির মগ।
,
রোহান কে দেখেই রেগে যায় আলাইনা, রাগে চোখমুখ শক্ত করে বলে-

—“রোহান আর কতোবার বলব যখন তখন আমার রুমে আসবে না। আমার কি নিজের মতো করে একটু থাকেও দিবে না।”

আলাইনার বেডের এক পাশে বসে রোহান,

—“রেগে যাচ্ছো কেনো ডিয়ার? ভাবলাম সারা দিন অফিসে ছিলে ক্লান্ত তাই কফি নিয়ে আসলাম। আর কতো নিজেকে কষ্ট দিবে আমার যা আছে তা দিয়ে তুমি আমি বসে বসে খেতে পারবো।”

—“কতোবার আর তোমাকে বলব, আমাকে নিয়ে এসব ভাববে না। আমার তোমাকে ভালো লাগে না। রাহি এখনো কিছু জানে না জানলে কষ্ট পাবে তাই এ বাসা ছাড়ার আর কোনো অজুহাত ও পাচ্ছি না।”
,
,

আলাইনা এক মুহূর্তে আর জগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। বেড থেকে ওঠে ওয়াসরুমে চলে যায়। মাথায় চিনচিন ব্যাথাটা আজ বড্ড বেড়েছে।
তবে বেশ বুঝতে পারছে আলাইনা এ বাসায় থাকার শেষ সময় চলে এসেছে।

______________________________

ঘুমের ঘোরে আলাইনা অনুভব করছে তার দিকে কেউ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা দরজা তো লাগানো রোহানের আসার তো কথা নয়। নাকি অন্যকেউ। তবে যেই হোক এই মুহুর্তে চোখ খুলে দেখার মতো পরিস্থিতি আলাইনার নেই গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।
,
,

এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস, অফিসের কয়েক জনের সাথে আলাইনা বেশ ভালোই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে। তার ভীতরে সাদ নামে ছেলেটাকে বেশ ভালো মনে হচ্ছে আলাইনার, অফিসের কাজে বেশ কয়েক বার সাহায্য করেছে।
এর মাঝে আয়াত আলাইনাকে বিভিন্ন ভাবে তাড়ানোর জন্য অত্যাচার করছে, কিন্তু তা তে খুব একটা লাভ হয় নাই।

অফিসে লান্স টাইমে সাদ আর রাহির সাথে আলাইনা ক্যান্টিনের বসে খাচ্ছিলো।
এই দিকে কেউ একজন আলাইনার দিকে তাকিয়ে রক্ত বর্ন চোখে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ আয়াত ফোন করে, আলাইনাকে তার কেবিনে ডাকে।

—“মিস আলাইনা এই ফাইল গুলো এই মুহুর্তে ঠিক করে দিন। কিছুখন পর একটা আরজেন্ট মিটিং আছে।”

—“ঠিকআছে, কিন্তু স্যার এখন তো লান্স টাইম পরে করে দিচ্ছি।”

—“আপনার জন্য কি মিটিং বসে থাকবে? কাজ করতে পারলে করুন নয়তো চলে যাচ্ছেন না কেনো। আমরা কাজ করিয়ে মাইনে দেয় ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়ে না।”

আলাইনা চুপচাপ ফাইল নিয়ে বসে পরে। কিছুখন পর আয়াত কিছু ফাইল দেখতে দেখতে বলে-

“সামনের সপ্তাহে আমাদের অফিসের কাজে দেশের বাহিরে যেতে হবে। আপনি আপনার সব পেকিং করে নিবেন মিস আলাইনা।”

______________________________

আজ আলাইনা আয়াতের সাথে কানাডায় যাচ্ছে মিটিংয়ে, কানাডায় কোন একটা বড় কোম্পানির সাথে বিশেষ একটা কারনে এই ডিলের ১০% সেয়ার আছে, তাই মিটিং টা কানাডায় বসেই হবে। বেশ কয়েক সপ্তাহ থাকতে হবে এই মিটিংয়ে।

আলাইনা আড়চোখে আয়াতকে বেশ কয়েক বার দেখছে, কাপালের মাঝ বরাবর কয়কটা চুল পরে আছে মাঝে মাঝে হাত দিয়ে উপরে তুলে দিচ্ছে,অবাধ্য চুল গুলো আবার কপালের উপর পরছে।
আজ ফরমাল লুকে ড্যাশিং লাগছে আয়াত কে।
,
,
ফ্লাইট থেকে নামতেই একটা সুন্দরী মেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসলো, গায়ে হাটু অব্দি ড্রেস।
যে কোম্পানির সাথে ১০% সেয়ার আছে মূতল মেয়েটা সেই কোম্পানির বস।
একটা ফুলের তোড়া আয়াতের সামনে এগিয়ে দেয় মেয়েটি।

—Welcome dear, to come here from bangladesh with difficulty.

—থাংস, মিস ন্যান্সি।
,
,

আয়াত আর ন্যান্সি একটা ক্যাফে বসে মিটিংয়ের ব্যাপারে কথা বলছে আর আলাইনা আয়াতের পাশে দাড়িয়ে রাগে ফুলছে। কতোখন থেকে দাড়িয়ে আছে একটু বসতেও বলছেনা আর তার উপর এই ন্যান্সি না ব্যান্সির সাথে কতো কথা। আর এই ন্যান্সিওও কতো ডং ইচ্ছে করছে সব চুল ছিড়ে ফেলি।

আয়াত এতোখন আলাইনার দিকে খেয়াল করেনি মাএ চোখ যেতেই দেখে আলাইনা রাগী দৃষ্টিতে ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে আছে। আলাইনার জেলাসি আয়াত বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিয়ে ন্যান্সির সাথে আরো ক্লোজ ভাবে কথা বলে।

ক্যাফের একটা ছেলে তিনটা কফি নিয়ে এসে, টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে একটা কফির মগ আলাইনার পায়ের উপর পরে।

হঠাৎ গরম কফি পায়ের উপর পরতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে আলাইনা, আয়াত পাশ ফিরে আলাইনার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ফর্সা পা ফুলে লাল হয়ে আছে।
আয়াত রাগে সমস্ত কফির মগ ছেলেটির দিকে ছুড়ে মারে, ছেলেটি সরে যাওয়ায় তার গায়ে পরেনা।

আয়াত তাড়াতাড়ি করে আলাইনাকে কোলে তুলে পাশের টেবিলে বসিয়ে দেয়। ন্যান্সিকে ক্যাফ থেকে কিছু বরফ নিয়ে আসতে বলে আলাইনার পায়ে লাগিয়ে দেয়।
তবুও থামছেনা আয়াত ছেলেটিকে ইচ্ছামতো বকতে থাকে। একদৃষ্টি আলাইনা আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখলে মনে হচ্ছে ব্যাথাটা আলাইনার না আয়াতের লাগছে।
,
,

পাশে বসে ন্যান্সি মনে মনে ভাবছে কে এই মেয়ে? সামন্য পি.এ এর জন্য এতো মায়া থাকার তো কথা না।
প্রতিবার তো আয়াতের সাথে তার পি.এ কাবির চাচা আসতো তাহলে এইবার এই মেয়ে কেনো? আর কাবির চাচাকে চেইন্জ করারও তো কথা নয়।
তবে যেইহোক আমার আগুনের উপর হাত দিলে হাত পুরে যাবে আর যদি পা দেয় তাহলে নিজেই জ্বলে যাবে।
আর মাএ কিছুমাস পর আয়ার শুধুই আমার ততদিন আয়াতের জীবনে যতমেয়ে আসবে তাদের একটায় শান্তি আর তা হলো মৃত্যু। মিস আলাইনা আপনি আপনার শাস্তির জন্য প্রস্তুত তো?
,
,
,
চলবে,,,,,,

[এটা আমার প্রথম গল্প, এমনিতে ছোট গল্প অনেক লিখলেও পর্ব আকারে এটা প্রথম। নাইস, নেইক্স কমেন্ট না করে বর্ণনা আকারে কমেন্ট করে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন, আমাকে উৎসাহীত করবেন অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক।💚💚]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here