অপেক্ষার প্রহর পর্ব ১১+১২

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১১

“”তোর খুব জেদ হয়েছে না!তুই কেমন করে বাসর ঘরে না এসে থাকিস আমিও দেখবো!প্রয়োজন পড়লে তোকে তুলে নিয়ে আসবো,ওয়েট কর””

তুলিকে এভাবে হাসতে দেখে ইভা বেড থেকে নেমে তুলির কাঁধে হাত রেখে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি!এমনটা করিসনা,ভাইয়া রেগে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে,তোর মনকে আঘাত করতেও দুবার ভাববেনা,তোর ভালোর জন্যই বলছি!চুপচাপ রুমে চলে যা””

তুলি ইভার কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”ইভা!কিছু হবেনা আমাল,সুজন ভাইয়েল এই লাগ,কর্কশ কন্ঠে কথা বলা,এসব আমাল খুব ভালো লাগে,নিলব সুজন ভাইকে একদম ভালো লাগেনা””

রিয়া এদের কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে কপাল কুঁচকে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”সেটা না হয় বুঝলাম,কিন্তু তুই আর কত দিন সুজন ভাই বলে ডাকবি!সুজন ভাই এখন তো আর তোর ভাই নেই,তোর স্বামী হয়ে গেছে,তাই সুজন ভাই বলাটা ছাড় এবার””

কথাগুলো বলে রিয়া খিলখিল করে হাসতে লাগলো,,,তুলি রিয়ার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে স্মিত হাসলো,,,দরজায় টোকা পরার শব্দে সবাই কপাল কুঁচকে দরজার দিকে একপলক চেয়ে সবাই সবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো,,,

তুলি দরজায় টোকা পরতে দেখে স্মিত হাসলো,,,দরজার ওপাশে যে সুজন দাঁড়িয়ে আছে সেটা বুঝতে তুলির একটুও ভূল হলোনা,,,তুলি দ্রুত ইশারায় বেড থেকে সবাইকে নামিয়ে দিয়ে ব্ল্যাংকেট গায়ে জড়িয়ে বেডে শুয়ে পড়লো,,,

তুলির কান্ড দেখে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,ইভা চুপচাপ সোফায় বসে ফোন ঘাটতে লাগলো,,,রিয়া কপাল কুঁচকে দরজা খুলে দিতেই সুজন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো,,,রুমে এতো লোকজন দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,

এতো মেয়েদের ভিতর তুলিকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”তোরা সবাই এখানে!তুলি কোথায় তাহলে!””

রিয়া মুচকি হেঁসে শাহাদাৎ আঙুল উঁচিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!ওই যে তুলি!ঘুমিয়ে পড়েছে দেখো””

সুজন রাগী লুক নিয়ে তুলির পাশে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!আমি জানি তুই জেগে আছিস,ভালোই ভালোই বলছি রুমে চল””

তুলি ব্ল্যাংকেটের মধ্যে থেকে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে অভিনয় করে ঘুম জড়ানো স্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমাল খুব ঘুম পেয়েছে,এতো বিলক্ত কেনো কলছেন আমায়,লুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন””

এদের কথপোকথন শুনে সকলে নিঃশব্দে মুখ টিপে হাসতে লাগলো,,,সুজন এমনিতেই তুলির উপর রেগে ছিলো,,,কিন্তু তুলির কথা শুনে রাগটা যেনো আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার আকার ধারণ করলো,,,রাগী লুক নিয়ে তুলির গায়ের উপর থেকে ব্ল্যাংকেট টা সরিয়ে দিতেই সুজনের রাগ যেনো মুহুর্তেই পানি হয়ে গেলো,,,

তুলিকে বউ সাজে দেখে সুজনের চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো,,,তুলি তড়িঘড়ি করে উঠে বেডে বসে সুজনকে বর বেশে দেখে হা করে চেয়ে রইলো,,,সুজন তুলির দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!আমিতো ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি,এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমি নিশ্চিত!আমার হার্টবিট লাফালাফি শুরু করে দিবে””

তুলি নিজের চাহনি কন্ট্রোল করে গলাটা খ্যাক করে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি আমাকে ডিস্টার্ব কেনো কলছেন,আমায় ঘুমাতে দিন প্লিজ””

কথাগুলো বলতে যেতেই সুজন শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে তুলির ঠোঁট চেপে ধরলো,,,তুলি চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে চেয়ে রইলো,,,সুজন দাঁড়িয়ে হ্যাচকা টেনে তুলিকে কোলে তুলে নিলো,,,তুলি দু’হাতে সুজনের গলা জড়িয়ে ধরে শুকনো ঢোক গিললো,,,

রিয়া এই দৃশ্য দেখে শিটি বাজালো,,,বাকিদের হাত তালির শব্দে রুমটা ঝুনঝুনির মতো শব্দ করে উঠলো,,,সুজন সবার দিকে একপলক চেয়ে মুচকি হেঁসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,রিয়া ধপ করে বেডে বসে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”কি লোমান্টিক সিন হলো লে!আমাল তো এক্ষুনি বিয়ে কলতে ইচ্ছে কলছে,ইচ্ছে কলছে দৌড়ে গিয়ে বলি!বাবা আমায় এক্ষুনি বিয়ে দাও!নয়তো আমি সুইসাইড কলতে বাধ্য হবো!””

তুলির বলা কথাগুলো বলে রিয়া খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,সকলে রিয়ার সাথে হাসিতে যোগ দিলো,,,সুজন তুলিকে নিয়ে রুমে ঢুকে তুলিকে কোলে রেখেই দরজা লাগিয়ে দিলো,,,তুলি অপলকভাবে সুজনের মুখের দিকে চেয়ে রইলো,,,

সুজন তুলির চাহনি দেখে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমি কি প্লাস্টিক সার্জারি করে এসেছি নাকি!আগে কখনো দেখিসনি আমায়!এভাবে চেয়ে আছিস কেনো!গলা ছাড় আমার””

তুলি সুজনের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে সুজনের বুকে মুখ লুকালো,,,তুলির লজ্জা মাখা মুখ দেখে সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”গলাটা ছাড় নয়তো!এবার কিন্তু আমি সত্যি তোকে কোল থেকে ফেলে দিবো””

সুজনের কথা শুনে তুলি সুজনের গলা ছেড়ে কোল থেকে নেমে পড়লো,,,সুজনকে বিশ্বাস নেই,,,যা বলে তাই করে বসে,,,সুজন শেরওয়ানির কলার ঠিক করতে করতে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে চাপা স্বরে বললো,,,

“”এতো সময় মনে হয় আটার বস্তার নিচে চাপা পরে ছিলাম,আমার তো দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো,ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়,সারাদিন জার্নি করে আমারো খুব ঘুম পেয়েছে””

তুলি সুজনের কথার কোনো তোয়াক্কা না করে শীতল চাহনি নিয়ে সুজনের দিকে এক পা দু পা করে এগোতে লাগলো,,,সুজন তুলির শীতল চাহনি দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে পিছাতে লাগলো,,,সুজন দেয়ালে পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে রইলো,,,

তুলি ধীরে ধীরে সুজনের কাছে গিয়ে স্মিত হেঁসে আলতো করে সুজনের বুকে ডান হাত রাখলো,,,তুলির আলতো স্পর্শে সুজনের মনের মধ্যে উতালপাতাল ঢেউ বয়ে গেলো,,,তুলি সুজনের পায়ের পাতায় ভর করে দাঁড়িয়ে বাম হাতে সুজনের গলা জড়িয়ে ধরলো,,,

তুলির এমন কান্ডে সুজনের হৃৎপিণ্ড ঝরের গতিতে ওঠানামা করতে লাগলো,,,সুজন আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো,,,সুজনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো,,,সুজনের এমন ফেস দেখে তুলি মুখ টিপে হাসতে লাগলো,,,

সুজন তুলির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ মেলে তাকাতেই তুলি খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,সুজন তুলির হাসি দেখে নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,তুলি সুজনের কাছ থেকে সরে যেতে গেলে সুজন রাগী লুক নিয়ে তুলিকে হ্যাচকা টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো,,,

তুলি সুজনের এমন কান্ড দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো,,,দেয়ালে দুহাত রেখে তুলিকে হাতের মধ্যে বন্দি করে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”কি ভেবেছিলিস তুই!আমি বাসর ঘরে তোর সাথে রোমাঞ্চ করার জন্য তোকে রুমে আসতে বলেছি!””

তুলি কপাল কুঁচকে সুজনের দিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমার কি মাথা খারাপ নাকি!তোর সাথে রোমাঞ্চ করতে যাবো!আর তাছাড়া!তোর জন্য আমার মনে কোনো ফিলিংসই নেই,তাহলে রোমাঞ্চটা আসবে কোথা থেকে শুনি!””

সুজনের কথা শুনে তুলির হাসিখুশি মুখটা মূহুর্তের মধ্যেই কালো হয়ে গেলো,,,সুজন কথাগুলো বলে হাতের বাঁধন থেকে তুলিকে মুক্ত করে দিয়ে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কথা দিয়েছিলাম!তুই ভালো রেজাল্ট করলে আমি নিজেই তোর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো,সেই কথা রাখতেই এসেছি,আর আমি তো তোকে বলেইছি!আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে খুব ভালোবাসি””

সুজনের কথা বার্তা শুনে তুলির খুব রাগ হলো,,,রাগী লুক নিয়ে দুহাতে সুজনের শেরওয়ানির কলার ধরে অশ্রু সিক্ত নয়নে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”গার্লফ্রেন্ডকে ভালোবাসেন!তাহলে আমার সাথে বাসর করতে কেনো এসেছেন!””

সুজন তুলির রাগ দেখে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে তুলির দুহাত ধরে কলার ছাড়াতে গিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমি বাসায় থাকা সত্বেও যদি তুই আর আমি আলাদা থাকি তাহলে সবাই কষ্ট পাবে,সেই জন্যই তো বাসর ঘরে ঢুকতে হলো আমায়,আমি বাসর ঘরে ঢুকেছি বলে ভাবিস না!আমি বাসর করতে ঢুকেছি,আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে ঠকাতে চাই না””

সুজনের কথা শুনে তুলির চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে পড়লো,,,হাতের বাঁধন আলগা করে কলার ছেড়ে দিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো,,,তুলির কান্নমাখা মুখটা দেখে সুজনের খুব খারাপ লাগলো,,,উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে চেয়ে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি,কিন্তু!এখন তোমার কাছে ধরা দিলে তোমার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে,আমি সেটা চাই না””

সুজন ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো তুলি ওর দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে চেয়ে আছে,,,সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফ্লোরে তুলির পাশে হাঁটু ভেঙে বসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি!আমার ভালোবাসা পাবার একটা চান্স তোকে দেওয়ায় যায়!কিন্তু!তুই কি পারবি চান্সটা একসেপ্ট করতে!””

তুলি সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে সুজনের দিকে চেয়ে দু’হাতে চোখের পানি মুছে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমি আপনাল ভালোবাসা পাবাল জন্য সব কলতে পালি,আপনি বলুন না কি বলতে চান””

সুজন তুলির কথা শুনে ফ্লোরে দেবে বসে পড়লো,,,তারপর তুলির দিকে চেয়ে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”তুই যদি মেডিকেলে চান্স পাস,তাহলে আমি কথা দিচ্ছি!আমার গার্লফ্রেন্ডের ছায়া আমার জীবনে থাকবে না,শুধু তোকেই ভালোবাসবো,এখন বল!শর্তটা পূরন করতে পারবি তো!””

সুজনের কথা শুনে তুলির চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো,,,সুজনের দিকে চেয়ে হাসি মুখে মাথাটা উপর নিচ করে ছোট্ট করে বললো,,,

“”হুম!কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে””

সুজন কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তোর আবার কি শর্ত!আচ্ছা বল শুনি!””

তুলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”এখন থেকে যেদিন আপনি আমাল পাশে থাকবেন!সেদিন আমি আপনাল বুকে মাথা লেখে ঘুমাবো,আপনি কিন্তু কিছু বলতে পালবেন না আমায়””

সুজন তুলির কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মুখটা গম্ভীর করে মাথা উপর নিচ করে ছোট করে বললো,,,

“”ওকে””

সুজনের উত্তর হ্যাঁ শুনে তুলির ঠোঁটের হাসিটা প্রসারিত হলো,,,সুজন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললো,,,

“”পাগলি একটা!তোমাকে মেডিকেলে চান্স পাওয়ানোর জন্যই আমাকে এই অভিনয় টুকু করতে হচ্ছে,আমি জানি!এখন তুমি খুব জোর দিয়ে পড়াশোনা করবে,কিন্তু সেটা শুধু আমার ভালোবাসা পাবার জন্য””

তুলি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফ্রেশ হতে গিয়ে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!এটাতো সামান্য শর্ত!আমি আপনাল ভালোবাসা পাবাল জন্য নিজেল জীবনটাও বাজি লাখতে পালি,আপনি নিজেও জানেন না!আপনি আমাল জীবনে কি!আমাল বেঁচে থাকাল একমাত্র অবলম্বন আপনি,আমাল সমস্ত খুশিল একমাত্র কালন আপনি””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১২

“”সুজন ভাই!এটাতো সামান্য শর্ত!আমি আপনাল ভালোবাসা পাবাল জন্য নিজেল জীবনটাও বাজি লাখতে পালি,আপনি নিজেও জানেন না!আপনি আমাল জীবনে কি!আমাল বেঁচে থাকাল একমাত্র অবলম্বন আপনি,আমাল সমস্ত খুশিল একমাত্র কালন আপনি””

সুজন কথাগুলো মনে মনে ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে চেয়ে তুলিকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে কয়েকবার তুলি বলে ডাকলো,,,তুলির সাড়াশব্দ না পেয়ে ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে তুলি বলে ডাকতেই তুলির ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটলো,,,তুলি তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কি হয়েছে সুজন ভাই!ডাকছেন কেনো আমায়!””

সুজন ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে তুলির হাত ধরে হ্যাঁচকা টেনে তুলিকে কাছে টেনে নিলো,,,আচমকা হ্যাঁচকা টান দেওয়ায় তুলি টাল সামলাতে না পেরে সুজনের শেরওয়ানি খামচে ধরলো,,,সুজন মুচকি হেঁসে বাম হাতে তুলির কোমর ধরে আরো কাছে টেনে নিয়ে ডান হাতে তুলির কাটা ছেড়া অবাধ্য চুল গুলো কানে গুঁজে দিলো,,,

তুলি সুজনের এমন কান্ডে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,সুজনের স্পর্শে তুলির সমস্ত শরীর হালকা কেঁপে উঠলো,,,বুকের ভিতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হতে লাগলো,,,তুলির মনে হলো বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে,,,সুজন ডান হাতের শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে আলতো করে তুলির মুখে স্লাইড করতে লাগলো,,,

সুজনের আলতো স্পর্শে তুলি আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো,,,সুজন তুলির দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে তুলির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,,,

“”তোতলা রানী!বাসর রাত তো জীবনে একবারই আসে!চলো না দু’জনে এই রাতটা উপভোগ করি””

তুলি সুজনের কথা শুনে ফ্রিজড হয়ে গেলো,,,তুলির মনে হতে লাগলো তার জীবনের সব না পাওয়া গুলো পূরন হতে চলেছে,,,খুশিতে তুলির ঠোঁটের হাসিটা প্রসারিত হলো,,,সুজন তুলির বন্ধ চোখের পাতায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে মুচকি হাসলো,,,

চোখে সুজনের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে তুলি মুচকি হেঁসে শক্ত করে চোখ দুটো বন্ধ করে রইলো,,,সুজন মুচকি হেঁসে শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে তুলির ঠোঁটে স্পর্শ করতে লাগলো,,,তুলি সুজনের আলতো স্পর্শ পেয়ে মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!সব কিছু কেমন যেনো স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে,সত্যি কি স্বপ্ন দেখছি আমি!নাকি সত্যি সত্যি এগুলো আমাল সাথে হচ্ছে””

সুজন তখনো শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে তুলির ঠোঁটে স্পর্শ করতে লাগলো,,,তুলি কথা গুলো মনে মনে ভেবে সুজনের আঙুলটা শক্ত করে কামড়ে ধরে রাখলো,,,সুজন তুলির বোকামি বুঝতে পেরে মুচকি হেঁসে তুলির কামড়ের ব্যাথা নিরবে সহ্য করলো,,,সুজন কোনো শব্দ করলো না দেখে তুলি আঙুলটা ছেড়ে দিলো,,,

সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে শব্দহীন পায়ে তুলির পাশ থেকে সরে গিয়ে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!চোখ বন্ধ করে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো!কি ভাবছিস কি!যা চেঞ্জ কর গিয়ে””

তুলি সুজনের কর্কশ কন্ঠ শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ মেলে চেয়ে দেখলো সুজন বেডে বসে ফোন ঘাটছে,,,তুলি বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘ কয়েকটি শ্বাস নিয়ে গম্ভীর মুখ করে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই তো বেডে বসে আছে!তাহলে স্পর্শ গুলো কে কললো!তালমানে আমি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম!””

সুজন আঁড়চোখে তুলির গম্ভীর মুখটা দেখে ফোনের স্কিনে চেয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো,,,তুলি মুখটা গম্ভীর করে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,,,

“”ইস!আমাল স্বপ্ন গুলো যদি সত্যি হতো!তাহলে কতো ভালো হতো,স্বপ্নেল স্পর্শ গুলো যদি এতো ভালো লাগে!না জানি সত্যি স্পর্শ গুলো কতো ভালো লাগবে!””

তুলির সুজনের দিকে অপলকভাবে চেয়ে থেকে বিরবির করে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমাল স্বপ্নেল স্পর্শ গুলো সত্যি কলাল অপেক্ষায় থাকবো আমি!আমি জানি!আমাল #অপেক্ষার_প্রহর খুব শীগ্রই শেষ হবে””

সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!কি হয়েছে রে তোর!তখন থেকে দেখছি! চোখ বন্ধ করে মুচকি মুচকি হাসছিস!””

তুলি সুজনের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে জোর করে হাসার চেষ্টা করলো,,,সুজন তুলির হাসি দেখে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”তুলি!তুই পাগল টাগল হয়ে যাসনি তো!কিসের অপেক্ষায় থাকবি!কিসের অপেক্ষা শেষ হবে!কিসব বলছিস তুই!””

তুলি সুজনের কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে বললো,,,

“”এই লে!আমি তো কথাগুলো মনে মনে বললাম,তাহলে সুজন ভাই আমাল মনেল কথা শুনলো কি কলে!সুজন ভাই কি মন পড়তে জানে নাকি!””

সুজন তুলির দিকে কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে দেখে তুলি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বললো,,,

“”তালমানে!আমি এতোক্ষণ যা কিছু মনে মনে বলেছি সব সুজন ভাই শুনে নিয়েছে!””

কথাগুলো ভাবতেই তুলির রসগোল্লার মতো করা চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো,,,সুজন তুলির চাহনি বুঝতে পেরে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”আমি মন পড়তে জানিনা তুলি,তুই একা একাই অস্পষ্ট শব্দ করে কথাগুলো বলছিলিস,তাই তো আমি শুনতে পেলাম””

তুলি সুজনের কথা শুনে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে জোর করে হাসার চেষ্টা করলো,,,সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”তুলি!তুই ওভাবে কাপছিলিস কেনো!তোর কি কাঁপা কাঁপি রোগ আছে নাকি!থাকলে আমায় আগে বলিসনি কেনো!””

সুজনের কথা শুনে তুলির হাসিমাখা মুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো,,,অসহায় দৃষ্টিতে সুজনের দিকে চেয়ে হালকা শব্দ করে বললো,,,

“”না!সুজন ভাই!আমি মনে হয় ঠান্ডায় কাঁপছি,খুব শীত লাগছে আমাল””

তুলির বোকামি দেখে সুজনের খুব হাসি পেলো,,,নিজের হাসি কন্ট্রোল করে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে শুয়ে পর,নয়তো দেখা যাবে তুই কাঁপতে কাঁপতে কোমায় চলে গেছিস,তখন টিভিতে হেড লাইন দেখাবে!বাসর ঘরে বউ কাঁপতে কাঁপতে কোমায় চলে গেছে””

তুলি সুজনের কথা শুনে চোখ দুটো গোল করে সুজনের দিকে চেয়ে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,তুলির হাসির শব্দে পুরো রুমটা ঝুনঝুনির শব্দের মতো মুখরিতো হলো,,,সুজন অপলক দৃষ্টি চেয়ে তুলির হাসিটা উপভোগ করলো,,,তুলি হেঁসেই যাচ্ছে দেখে সুজন গলাটা খ্যাক করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এতো হাসছিস কেনো তুলি!আমি হাসির কিছু বলেছি নাকি!””

তুলি হাসি থামিয়ে মুখ টিপে হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!বাসল ঘলে বউ কাঁপতে কাঁপতে কোমায় চলে গেছে,এটা টিভির হেড লাইন দেখে আপনাল কেমন লাগবে ভেবে আমাল খুব হাসি পাচ্ছে””

সুজন তুলির কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে তুলির দিকে চেয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুই তো এসবই চাস,লোকে আমার মুখ দেখে হাসলে তোর তো ভালো লাগবে,বেঁচে থেকে তুই আমাকে বুঝলিনা!তুই কোমায় গেলে লোকে আমাকে কি করে বুঝবে!””

তুলি সুজনের রাগ দেখে ভয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো,,,দরজায় পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বিরবির করে বললো,,,

“”এতো সময় মনে হয় বাঘেল থাবাল মুখে ছিলাম,ওহ গড!আমাকে ধৈর্য ধালন কলাল ক্ষমতা দাও,আল নয়তো!সুজন ভাইয়েল লাক্ষস মনটাকে কোমল হৃদয় কলে দাও””

তুলি ওয়াশরুমে ঢুকলে সুজন তুলির যাবার পথে চেয়ে মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!তুমি স্বপ্ন দেখনি,যা হয়েছে সব সত্যিই হয়েছে,তোমাকে এই বেশে আর তো কখনো কাছে পাবোনা,রাতটাও আর কখনো ফিরে পাবোনা,তাই অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও মূহুর্তটা দুজনে উপভোগ করলাম””

সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মৃদু হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”কিন্তু!তুমি তো মুহুর্তটাকে স্বপ্ন ভেবে নিয়েছো!তোতলা রানী!আমার শর্ত যখন শেষ হবে,তখন আমি তোমার এই স্বপ্নটা সত্যি করে দিবো””

কথাগুলো মনে মনে ভেবে রুমে দাঁড়িয়েই পোশাক চেঞ্জ করে বেডে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো,,,তুলি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে তাওয়াল দিয়ে আলতো স্পর্শে হাত মুখ মুছতে লাগলো,,,সুজন সামনে ফিরে শুতেই তুলিকে দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো,,,

তুলি হোয়াইট রঙের টিশার্টের সাথে থ্রী কোয়ার্টার ব্লাক জিন্স পড়ে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,,মুখে মেকাপের প্রলেপ গুলো পানি দিয়ে ধুয়াতে সেগুলো যেনো জীবন্ত হয়ে উঠেছে,,,ছোটখাটো তুলিকে একদম পুতুলের মতো দেখতে লাগছে,,,সুজন হা করে তাকিয়ে রইলো তুলির দিকে,,,

তুলি মিররের ভিতর থেকে সুজনের চাহনি দেখে মুচকি হেঁসে নিজের কাজে মন দিলো,,,সুজন তুলির মুচকি হাসি দেখে দ্রুত পাশ ফিরে শুয়ে আলতো করে চোখ দুটো বন্ধ করে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!এমন করে হেঁসো না প্লিজ!মাথায় নষ্ট করে দিচ্ছো আমার,আমায় আর কতো পাগল করবে তুমি!আমি তো এমনিতেই তোমার প্রেমে পাগল হয়ে আছি,তুমি এভাবে আমার পাশে থাকলে আমার নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে পড়বে””

তুলি স্মিত হেঁসে নিজের কাজ শেষ করে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো,,,বেডে এসে দুরত্ব বজায় রেখে নিজের বালিশে শুয়ে পড়লো,,,তুলিকে বালিশে শুতে দেখে সুজন ভ্রু কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কি হয়েছে তুলি!শর্ত রাখলি আমি তোর পাশে থাকলে তুই আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি,তাহলে দূরে আছিস কেনো!””

তুলি স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি সালাক্ষণ আমাল সাথে লাক্ষসেল মতো কলে কথা বলেন,আপনাকে দেখলেই তো আমাল ভয় কলে,তাহলে আপনাল কাছে যাবো কি কলে!আমাল ভয়টা কেটে যাক!তালপল আপনাল বুকে মাথা লেখে ঘুমাবো””

সুজন তুলির কথা শুনে কপাল কুঁচকে তুলিকে হ্যাঁচকা টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো,,,তুলি শুকনো ঢোক গিলে সুজনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছে দেখে সুজন কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!এতো নড়াচড়া করিস কেনো তুই!তোর থেকে তো আমার কোলবালিশই ভালো,তুই ভাবিস না তোকে ভালোবেসে কাছে টেনেছি,কোলবালিশ ছাড়া আমার ঘুম আসেনা,তোর বেডে তো কোলবালিশও নেই,তাই বাধ্য হয়ে তোকে কোলবালিশ বানিয়ে নিলাম””

তুলি সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে মুখটা উঁচু করে সুজনের দিকে তাকালো,,,সুজন স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আজকে রাতের জন্য আমার কোলবালিশ হয়ে থাক না!কাল না হয় বেডে কোলবালিশ রেখে দিস””

তুলি সুজনের কথায় চুপটি করে সুজনের বুকের টিশার্ট খামচে ধরে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমি আপনাল বুকে মাথা লাখাল জন্য আজকে কেনো!সালাজীবন আপনাল কোলবালিশ হয়ে থাকতে চাই””

সুজন তুলিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!অবশেষে আজ আমার #অপেক্ষার_প্রহর শেষ হলো,আমার রাগের পিছনে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা খুঁজে নিও তুমি,আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি!””

সুজন তুলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরায় তুলির সর্বাঙ্গে অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো,,,তুলি আলতো করে চোখ দুটো বন্ধ করে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”আমাল বয়ে গেছে কোলবালিশ লুমে আনতে,আপনাল বুকে মাথা লেখে ঘুমানোল জন্য প্রয়োজন পড়লে আমি বাসাল সব কোলবালিশ লুকিয়ে লাখবো,আপনাকে আমি কোলবালিশেল সাথেও শেয়াল কলতে পালবোনা,আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন,আমাকেই জলিয়ে ধলবেন””

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here