অপেক্ষার প্রহর পর্ব ৯+১০

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ৯

“”সুজন ভাই!আমাল ভালোবাসাল পাগলামি গুলো দেখেছেন,এবাল আমাল তীব্র অভিমানটা দেখবেন,আমাল অভিমানটা আমাল ভালোবাসাল মতোই তীব্র সুজন ভাই,আমি আল কখনো আপনাকে বিলক্ত কলবোনা””

তুলি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফোনটা সুইটস অফ করে দিলো,,,হাতে থাকা ফোনের দিকে চেয়ে কষ্ট লুকিয়ে ম্লান হাসি দিলো,,,ফোনটা মিররের ড্রয়ারে লক করে রেখে চুপচাপ বেডে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,সুজন নিজের কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লো,,,

এভাবে কেটে গেলো দুদিন,,,তুলি সুজনকে কল দেয় না,,,যখনই সুজনের কথা মনে হয় তখনি নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে,,,দুটো দিন পার হয়ে গেলো অথচ তুলি সুজনকে কল দিলো না ভাবতেই সুজন কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,

“”আজ দুটো দিন পার হয়ে গেলো কিন্তু তুলি আমায় কল দিলোনা কেনো!কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি!আমি বরং তুলিকে একবার কল করে দেখি””

সুজন বেডে শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে তুলির নাম্বার ডায়াল করতে গিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”না থাক!আমি কল দিলে আমায় একগাদা কথা শোনাবে,প্রেম আলাপ শুরু করে দিবে,তুলি কল দিলেই কথা বলবো””

সুজন ফোনটা রেখে চুপচাপ শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লো,,,সকালে এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙতেই তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে ফোনটা নিয়ে অফিসে চলে গেলো,,,কিছুসময় পর ফ্রী হয়ে চেয়ারে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো তুলি গতরাতেও কল দেইনি,,,

তিনদিন ধরে তুলি সুজনকে কল দেইনি ভাবতেই সুজনের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,,,শুকনো ঢোক গিলে তড়িঘড়ি করে তুলির নাম্বারে ডায়াল করলো,,,তুলির ফোন সুইটস অফ বলতেই সুজনের হার্টবিট বেড়ে গেলো,,,

সুজন বারবার তুলির নাম্বার ডায়ল করতে লাগলো,,,কিন্তু যতবার ডায়াল করছে ততোবারই নাম্বার সুইটস অফ বলছে দেখে অজানা আশংকা মনের ভিতর এসে ধাক্কা দিলো,,,সুজনের অস্থিরতা যেনো বেড়েই চলেছে,,,

সুজন ফোনটা পকেটে রেখে বৃদ্ধা আর শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে সেদিন রাতের কথা মনে করলো,,,সেদিনের কথায় তুলি খুব কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই সুজনের মন খারাপ হয়ে গেলো,,,সুজনের ইচ্ছে করছে একছুটে গিয়ে তুলির রাগ ভাঙিয়ে আসতে,,,

কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব নয়,,,বেসরকারি চাকরি হলে হয়তো এতোক্ষণে রিজাইন লেটার ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতো,,,কিন্তু সরকারি চাকরিতে সেটা কখনোই সম্ভব নয়,,,আর্মিতে ঢুকলে হয়তো নিজেদের ইচ্ছে টাকে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হয়,,,

হাজার ইচ্ছে থাকা সত্বেও সুজন তুলির রাগ ভাঙাতে যেতে পারবেনা,,,আর্মিতে জয়েন করার পর থেকেই সুজনের হাত পা বাঁধা হয়ে আছে,,,সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে শাহানাজ বেগমের ফোনে কল দিলো,,,

শাহানাজ বেগম ফোন রিসিভ করলে সুজন কিছু সময় কথা বললো,,,তুলির পরীক্ষার খোঁজ খবর নেওয়ার পর মৃদুস্বরে বললো,,,

“”ছোট মামী!তুলি কোথায়!ওর ফোন সুইটস অফ কেনো!””

শাহানাজ বেগম কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভেবে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি পরীক্ষা দিতে গিয়েছে,তাই হয়তো ফোন সুইটস অফ করে রেখে গেছে,তুলি আসলে আমি বলবো তোমায় কল দিতে””

সুজন কিছু সময় কথা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো,,,ফোনটা পকেটে রাখতে গিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”আমি শুধু শুধু টেনশন করছিলাম,পরীক্ষার জন্যই ফোন সুইটস অফ করে গেছে””

তুলি পরীক্ষা শেষে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বেডে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে,,,শাহানাজ বেগম তুলির রুমে এসে তুলিকে শুয়ে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বললো,,,

“”সুজন কল দিয়েছিলো আমায়,তোর ফোন নাকি সুইটস অফ করা,সুজনকে কল দিয়ে কথা বলিস””

তুলি চুপচাপ শুয়ে থেকে শাহানাজ বেগমের কথা শুনলো,,,শাহানাজ বেগম কথাগুলো বলে গটগট করে হেঁটে তুলির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,তুলি শাহানাজ বেগমের যাবার পথে চেয়ে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমি আল আপনাকে বিলক্ত কলবোনা,আপনাল সাথে কথাও বলবোনা,শুধু শুধু কথা বলে আঘাত পাওয়াল কি দলকাল,তাল চেয়ে কথা না বলাই ভালো””

সুজন সারাদিন অপেক্ষা করলো তবুও তুলির কোনো কল আসলোনা সুজনের ফোনে,,,রাতেও যখন তুলি সুজনকে কল দিলোনা তখন সুজনের খুব রাগ হলো,,,নিজের রাগ কন্ট্রোল করে তুলির নাম্বারে ডায়াল করলো,,,কয়েকবার চেষ্টা করলো কিন্তু বারবার সুইটস অফ বললো,,,

কোনো উপায় না পেয়ে শেষমেষ শাহানাজ বেগমের ফোনে কল দিলো,,,শাহানাজ বেগম কল রিসিভ করলে কিছু সময় কথা বলে ফোনটা তুলির কাছে দিতে বললো,,,শাহানাজ বেগম তুলির রুমে এসে দেখে তুলি বেডে বসে বই পড়ছে,,,

শাহানাজ বেগম ফোনটা তুলির দিকে বাড়িয়ে ধরে ব্যাস্ত স্বরে বললো,,,

“”তুলি!সুজন কল করেছে,ধর কথা বল””

সুজন কল করেছে শুনে তুলি মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”মা!আমাল কাল পলীক্ষা আছে,আমি কথা বলতে পালবোনা,তুমি ফোন নিয়ে যাও এখান থেকে””

সুজন তুলির বলা কথা গুলো শুনে ফোনের ওপাশ থেকে রাগে ফুঁসতে লাগলো,,,শাহানাজ বেগম তুলির কথা শুনে কপাল কুঁচকে ব্যাস্তস্বরে বললো,,,

“”কথা বলবিনা মানে কি!দুই মিনিট কথা বললে তোর পড়ার খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবেনা,ফোনটা ধর আর কথা বল,আমি আসছি””

শাহানাজ বেগম ফোনটা তুলির হাতে ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে হেঁটে তুলির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,তুলিা ফোনটা হাতে নিয়ে সুজনের কল কেটে দিলো,,,তুলি কল কেটে দেওয়ায় সুজনের রাগ আরো বেশি বেড়ে গেলো,,,

নিজের রাগ কন্ট্রোল করে আবার কল দিলো,,,তুলি ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে সুজনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”কেনো বিলক্ত কলছেন আমায়!আমি তো আপনাকে নিজেল মতোই থাকতে দিয়েছি,থাকুন না নিজেল মতো,অযথা আমায় কেনো বিলক্ত কলছেন!””

কথাগুলো বলে তুলি ফোনটা কেটে দিলো,,,সুজন তুলির কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,তুলি ফোন কেটে দিছে দেখে ফোনের স্কিনে চেয়ে মনে মনে বললো,,,

“”ওহ্ গড!তুলি আমার উপর এতো অভিমান করে আছে আর আমি কিছু বুঝতেই পারলাম না””

তুলির কথাগুলো শুনে সুজনের খুব খারাপ লাগলো,,,তড়িঘড়ি করে আবার শাহানাজ বেগমের ফোনে কল দিলে তুলি রিসিভ করলো,,,তুলি কিছু বলার আগেই সুজন কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার,দিন দিন তোর স্পর্ধা বেরেই চলেছে,আমি আসলে কিন্তু তোর হাল খুব খারাপ করে দিবো বলে দিলাম””

তুলি সুজনের কথা শুনে হালকা হেঁসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আপনি কি হাল কলতে পালেন আমাল ভালো কলে জানা আছে,যে বিয়েল লাতে ভয়ে বউকে ছেড়ে পালিয়ে যায়,তাল মুখে বড় বড় কথা শোভা পায় না,আপনি আমাল কিছু কলতে পালবেনা””

তুলির কথা শুনে সুজনের রাগ যেনো চরম আকার ধারন করলো,,,সুজন ডান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমি কি করতে পারি আর কি করতে পারিনা তা সময় বলে দেবে,শুধু তোর পরীক্ষা শেষ হবার অপেক্ষা””

তুলি সুজনের কথা শুনে স্মিত হেঁসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এই লেকচাল বন্ধ কলে ফোনটা লাখুন তো,আমাল অনেক পড়া জমে আছে,বিলক্ত কলেন না আমায়””

কথাগুলো বলে তুলি নিজেই ফোনটা কেটে দিলো,,,সুজন তুলির কথাবার্তা শুনে ডান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগে স্বজোরে দেয়ালে পান্ঞ্চ করলো,,,হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখে রাগী লুক নিয়ে বললো,,,

“”তুলি!আমার দিকে আঙুল তুলে তুই মোটেও ঠিক করিস নি,এর ফল তো তোকে ভোগ করতেই হবে””

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

দেখতে দেখতে তুলির পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো,,,সুজন সেদিনের পর থেকে তুলির সাথে আর কথা বলেনা,,,পরীক্ষা শেষ হয়েছে একসপ্তাহ হয়ে গেলো,,,পড়াশোনা না থাকায় তুলি বাসায় বরিং ফিল করছে,,,

একাকি সময় কাটাতে গিয়ে সুজনকে এখন খুব বেশিই মিস করছে,,,সুজনের সাথে কথা না বলে থাকা তুলির সম্ভব নয়,,,সুজনকে একনজর দেখার আশায় তুলির মনটা ছটফট করতে লাগলো,,,কোনো কিছু না ভেবে শাহানাজ বেগমের কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”মা!ইভাকে খুব দেখতে ইচ্ছে কলছে,তুমি প্লিজ লিদান ভাইয়াকে বলে আমাল সিলেট যাবাল ব্যাবস্থা কলে দাও””

শাহানাজ বেগম তুলির কথা শুনে কপাল কুঁচকে স্মিত হাসলো,,,তুলি মায়ের হাসিমুখ দেখে রুমে গিয়ে ইভার সাথে কিছু সময় কথা বললো,,,দেখতে দেখতে তুলির রেজাল্টের দিন ঘনিয়ে এলো,,,তুলির আর সিলেট যাওয়া হলো না,,,

শাহানাজ বেগম রোকসানা বেগমের সাথে কথা বলে সুজন আর তুলির আনুষ্ঠানিক বিয়ের ব্যাপারে কথা বললেন,,,তুলির রেজাল্টের দিন সকাল বেলা সুজনের পরিবারের সবাই তুলির বাসায় আসলো,,,সুজনের আত্মবিশ্বাস ছিলো তুলি ভালো রেজাল্ট করবে,,,

তুলির রেজাল্ট আউট হলে সুজন নিজে চেক করে দেখলো তুলি খুব ভালো রেজাল্ট করেছে,,,সুজন আগেই ছুটি নিয়ে রেখেছিলো,,,রেজাল্ট দেখে কথা অনুযায়ী তুলির সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বেরিয়ে পড়লো,,,

সুজন ঢাকায় আসছে শুনে রিদান রিয়া সবাই মিলে আবার তুলির ঘরে বাসর সাজানোর ব্যাবস্থা করলো,,,সুজন বাসায় আসলে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো,,,কিন্তু তুলিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগলো,,,

খাওয়া দাওয়া শেষে তুলির সাথে দেখা হলো কিন্তু কথা হলোনা,,,ড্রয়িং রুমে বসে শাহানাজ বেগম রিয়া রিভা সব মেয়েদের কে বললো তুলিকে শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দিতে,,,সুজন শাহানাজ বেগমের কথা শুনে আড়চোখে তুলির দিকে চেয়ে স্মিত হাসলো,,,

রিয়া তুলিকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে সাজাতে লাগলো,,,রিদান সুজনকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে হাতে শেরওয়ানি ধরিয়ে দিলো,,,সুজন স্মিত হেঁসে শেরওয়ানি পড়ে রেডি হয়ে আসলো,,,রিদান কিছুসময় সুজনের সাথে দুষ্টুমি করে সুজনকে তুলির রুমে দিয়ে গেলো,,,

সুজন রুমে ঢুকে তুলিকে দেখতে পেলোনা,,,বাসর ঘর সাজানো দেখে মৃদু হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!অবশেষে আমাদের #অপেক্ষার_প্রহর আজ শেষ হতে চলেছে””

ফুলের সুভাষ নিয়ে স্মিত হেঁসে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে তুলির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো,,,অনেক সময় হয়ে গেলো তবুও তুলি রুমে আসছেনা দেখে সুজন মিররের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে মৃদু হেঁসে বললো,,,

“”তোতলা রানী!এই যে আমি নবাব সিরাজুদ্দৌলার মতো সেজে বসে আছি,তুমি কি দেখবেনা আমায়!কোথায় তুমি!””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১০

“”তোতলা রানী!এই যে আমি নবাব সিরাজুদ্দৌলার মতো সেজে বসে আছি,তুমি কি দেখবেনা আমায়!কোথায় তুমি””

সুজন মিররের দিকে চেয়ে নিজেকে দেখে নিজেই মুচকি হাসলো,,,বেডে পা ঝুলিয়ে বসে তুলির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো,,,প্রকৃতির নিয়মে রাত গভীর থেকে গভীর হতে লাগলো,,,সবাই মিলে তুলিকে বউ সাজাচ্ছে তুলি চুপচাপ স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে,,,

সুজনের প্রতি তুলির ভীষণ রাগ হচ্ছে,,,তবুও নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে চুপচাপ সেজে যাচ্ছে,,,তুলির জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেলো,,,সুজন ঘড়ির দিকে চেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,

“”তুলি এখনো বাসর ঘরে আসছেনা কেনো!আমি সেই কখন থেকে নবাব সিরাজুদ্দৌলা সেজে বসে আছি,অথচ দেখো!আমার বেগমের বাসর ঘরে আসার নাম ই নেই””

বাসর ঘরে অপেক্ষার সময় যে কতটা কষ্টের সেটা সুজন হারে হারে টের পাচ্ছে,,,মনে মনে তুলির উপর রাগ হচ্ছে,,,কিন্তু এতো দিনের #অপেক্ষার_প্রহর শেষ হতে চলেছে ভেবে মুচকি হাসলো,,,ঘড়ির দিকে চেয়ে এগারোটা পার হয়ে যাচ্ছে দেখে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বিরবির করে বললো,,,

“”কেউ কখনো শুনেছো!বাসর ঘরে বর বউয়ের জন্য অপেক্ষা করে!আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যাক্তি!যে কিনা বাসর ঘরে বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছি!ধ্যাত!এই তুলিটা যে কি চায়!মাঝেমাঝে বুঝে উঠতে পারিনা আমি””

কথাগুলো ভেবে একপলক দরজার দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিলো,,,রিদান রিয়ার রুমে গিয়ে তুলির উদ্দেশ্য মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”তুলি!সুজন ভাইকে শেরওয়ানি পরিয়ে বর সাজিয়ে দিয়েছি,তাড়াতাড়ি বাসর ঘরে যা,বেচারি মনে হয় আর অপেক্ষা করতে পারছেনা””

কথাগুলো বলে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,সবাই রিদানের কথায় খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,সকলকে এতো হাসতে দেখে তুলি অসহায় দৃষ্টিতে রিদানের দিকে চেয়ে করুন কন্ঠে বললো,,,

“”লিদান ভাইয়া!ঠিক হচ্ছে না বলে দিলাম,আমি তোমাল ছোট বোন!আল তুমি আমাল সাথে মজা কলছো!আমি কিন্তু সাজ নষ্ট কলে দিবো বলে দিলাম””

তুলি রেগে গেলে যা বলছে তাই করবে ভেবে রিদান মুচকি হেঁসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,দরজার দিকে চেয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে সুজনের মুখটা চুপসে গেলো,,,চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বললো

“”বাসর ঘরে না আসার মতলব নাকি তুলির!তুলি সেদিনের প্রতিশোধ নিতেই কি ইচ্ছে করে বাসর ঘরে আসছেনা!””

সুজন তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে ফোনটা বের করে তুলির নাম্বারে ডায়াল করলো,,,রিয়ার রুমে মিররের উপরে তুলির ফোনটা বাজতেই তুলি কপাল কুঁচকে মিররের দিকে তাকালো,,,রিয়া মুচকি হেঁসে মিররের উপর থেকে তুলির ফোনটা হাতে নিলো,,,

ফোনের স্কিনে চেয়ে দেখলো লাক্ষস নাম্বার থেকে কল আসছে,,,রিয়া মুচকি হেঁসে তুলির দিকে চেয়ে দুষ্টুমি করে বললো,,,

“”তুলি!তোর লাক্ষস কল দিয়েছে,সুজন ভাই দেখছি তোকে চোখে হারাচ্ছে,সুজন ভাইয়ের আর অপেক্ষা সইছেনা,তাড়াতাড়ি যা বাসর ঘরে””

তুলি সবার দিকে একপলক চেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো,,,রিয়া ফোনটা তুলির হাতে দিয়ে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে সবার উদ্দেশ্য বললো,,,

“”তোরা একটা জিনিস খেয়াল করেছিস!আমি কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি””

উপস্থিত সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে রিয়ার কথা শোনার অপেক্ষায় রইলো,,,ফোনটা ততক্ষণে বেজে বন্ধ হয়ে গেলো,,,তুলি ফোন সাইলেন্ট করে রিয়ার কথা শোনার অপেক্ষায় রইলো,,,রিয়া তুলির পাশে বসে চিন্তিত অবস্থায় বললো,,,

“”যে সুজন ভাই তুলিকে সহ্য করতে পারতোনা,সেই সুজন ভাই হঠাৎ করে তুলিকে চোখে হারাচ্ছে!এতো অল্প দিনে সুজন ভাই কি করে চেঞ্জ হলো!বিষয়টা কেমন যেনো লাগছে না!””

উপস্থিত সকলে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো,,,তুলি রিয়ার কথা শুনে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মনে মনে বললো,,,

“”সত্যি তো!সুজন ভাই তো আমাকে ভালোবাসে না,তাহলে সুজন ভাইয়েল মতলবটা কি!আমাল ফোনে আবাল কল দিচ্ছে,সত্যি কি আমাল জন্য অপেক্ষা কলছে!””

তুলির ফোনে সুজন সমানে কল দিয়ে যাচ্ছে,,,তুলি ফোন রিসিভ করছেনা দেখে রাগে সুজনের গা ঘিনঘিন করছে,,,রিয়া কিছু একটা ভেবে সকলের উদ্দেশ্য মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”আমার কি মনে হয় জানিস তো!আমার মনে হয়!সুজন ভাই আগে থেকেই তুলিকে ভালোবাসতো,শুধু শুধু আমাদের সামনে নাটক করতো তুলিকে সহ্য করতে পারেনা,কি অভিনয় করতো সুজন ভাই!এই অভিনয়ের জন্য সুজন ভাইকে এওয়ার্ড দিতে হয়””

কথাগুলো বলে রিয়া খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,উপস্থিত সকলে রিয়ার কথা শুনে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,সুজন সমানে কল দিয়ে যাচ্ছে দেখে তুলি সবাই কে থামিয়ে দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো,,,

“”কি হয়েছে সুজন ভাই!এতোবাল কলে কল দিচ্ছেন কেনো!””

সবাই তুলির বিরক্তিকর কন্ঠ শুনে কপাল কুঁচকে তুলির দিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন তুলির কথা শুনে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”কি হয়েছে মানে!তুলি আমি তোর জন্য বাসর ঘরে অপেক্ষা করছি,আর তুই এখনো আসছিস না,আবার বলছিস কি হয়েছে!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”সুজন ভাই!হুমকি দিচ্ছেন কেনো আমায়!এমন হুমকি দিলে আমি কেনো!কোনো মেয়েই বাসল ঘলে যাবেনা,কিন্তু আপনি বাসল ঘলে অপেক্ষা কলছেন কেনো!আমাল কি বাসল ঘলে যাবাল কথা ছিলো নাকি!””

তুলির কথা শুনে সুজন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,হাসবে না কাঁদবে বিষয়টা বুঝে উঠতে সময় লাগলো,,,দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি!আজ আমাদের বাসর রাত,আর তুই কি ভূলভাল বলছিস,তাড়াতাড়ি রুমে আয় বলছি””

তুলি সুজনের কথা শুনে চাঁপা হাসি দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আজ আমাদেল বাসল লাত!সুজন ভাই!আপনি বাসল লাত কলতে চান আমাকে একবালও বলেছেন!আমাকে আগে থেকে না বললে আমি বুঝবো কি কলে আপনি বাসল লাত কলতে চান!””

সুজন তুলির কথা শুনে হতাশ হয়ে গেলো,,,সেদিন যে তুলি কতটা কষ্ট পেয়েছিলো আজ তা সুজন ঠিক বুঝতে পারছে,,,সুজনের নিরবতা বুঝতে পেরে তুলি গলাটা খ্যাক করে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি নাকি শেলোওয়ানি পলে বসে আছেন!পোশাক চেঞ্জ কলে ঘুমিয়ে পড়ুন,আমি আজকে লিয়াল লুমে ঘুমাবো””

তুলির কথা শুনে সুজনের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে,,,তবুও নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমার কি মাথা খারাপ নাকি!তোর জন্য শেরওয়ানি পরে বসে থাকবো!আর স্বামী স্ত্রী প্রথম একসাথে থাকলে সেটা বাসর রাত হয় তুই জানিস না বুঝি!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”আমাল মাথায় কি জটা আছে!যে আমি আগে থেকে জানবো আপনি কি কলতে চান!চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন,আমি ফোন লাখছি এখন””

সুজন তুলির কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে রাগী লুক নিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!ভালোই ভালোই বলছি রুমে আয়,আমি যদি রিয়ার রুমে যায়,তোর অবস্থা খুব একটা ভালো হবেনা বলে দিলাম””

তুলি সুজনের কথা শুনে মুচকি হেঁসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”সুজন ভাই!এতো কথা কেনো বলছেন!আপনাল যা ইচ্ছে হয় আপনি কলুন না!আমি কি নিষেধ কলেছি নাকি!এখন ফোনটা লাখুন তো!আমাল খুব ঘুম পেয়েছে””

সুজনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তুলি ফোন কেটে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,উপস্থিত সকলে তুলির ফোন আলাপ শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,তুলি ফোন কেটে দিতেই সুজনের রাগটা যেনো চড়াও হয়ে গেলো,,,সুজন ফোনটা পকেটে রেখে রাগী লুক নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মনে মনে বললো,,,

“”তোর খুব জেদ হয়েছে না!তুই কেমন করে বাসর ঘরে না এসে থাকিস আমিও দেখবো!প্রয়োজন পড়লে তোকে তুলে নিয়ে আসবো,ওয়েট কর!””

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here