অপেক্ষার প্রহর পর্ব ৭+৮

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ৭

“”পাত্র যদি সুজন ভাই না হয়ে অন্য কেউ হয়!তাহলে তো আমাল সব শেষ,এতো ওভাল এক্টিং কলে কি লাভ হলো আমাল,ওহ্ গড!লক্ষা কলো আমায়””

তুলি গুটিগুটি পায়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁচু স্বরে বললো,,,

“”ইভা!ইয়ার্কি হচ্ছে আমাল সাথে হ্যাঁ!এতো অল্প সময়ে পাত্র কোথা থেকে আসবে শুনি!আমি দলজা খুলবোনা,তোলা সবাই মিথ্যা বলছিস””

তুলির কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,রিয়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঁচু স্বরে বললো,,,

“”তুলি!দরজা খোল বলছি!বাবা সুজন ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে দেবে,এখন যদি দরজা না খুলিস!তাহলে সুজন ভাই বিয়ে না করেই চলে যাবে,এতো জেদ করিস না তুলি,দরজাটা খোল প্লিজ””

সুজনের সাথে বিয়ে হবে শুনে তুলি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো,,,মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে উঁচু গলায় বললো,,,

“”পাগল নাকি তোমলা!আমি জেনে বুঝে ওই লাক্ষসটাকে বিয়ে কলতে পালবোনা,যাল থেকে বাঁচতে চাইছি তোমলা তাল ঘালেই আমাকে ঝুলিয়ে দিতে চাইছো!আমাল জন্য অন্য কাউকে খুঁজে দেখো””

সবাই তুলির কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে রইলো,,,ইভা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঁচু স্বরে বললো,,,

“”তুলি!আমার ভাইয়া মোটেও রাক্ষস নয়,আমার ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসবে দেখিস,তুই প্লিজ রাজি হয়ে যা””

তুলি ইভার কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”ইভা!আমি যখন বলেছি সুজন ভাইকে বিয়ে কলবো না তখন কলবো না,তবে!সুজন ভাই এসে যদি আমায় বিয়েতে লাজি হতে বলে!তাহলে আমি একবাল ভেবে দেখতে পালি””

সবাই তুলির কথা শুনে হতাশ হয়ে তুলির রুমের সামনে থেকে চলে গেলো,,,বাসার মেয়েগুলো ড্রয়িং রুমে এসে ধপ করে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়লো,,,এদেরকে এমন মুখ করে বসে পড়তে দেখে বড়রা একে অপরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,,,

সুজন কপাল কুঁচকে ইভার দিকে তাকালে ইভা সবার দিকে একপলক চেয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি ভাইয়াকে বিয়ে করবেনা,অন্য কোনো ছেলে দেখতে বললো””

ইভার কথায় সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো,,,সুজনের তো রাগে গা ঘিনঘিন করছে,,,ইভা সুজনের দিকে চেয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,

“”তবে!ভাইয়া যদি নিজে গিয়ে তুলিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়!তাহলে তুলি একবার ভেবে দেখবে বলেছে””

ইভার কথায় সবাই হতাশ হয়ে আশার আলো নিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন রাগী লুক নিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে তুলির রুমের দিকে পা বাড়ালো,,,তুলি দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো,,,সুজন দরজা ধাক্কা দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি দরজা খোল!””

তুলি সুজনের কর্কশ কন্ঠ শুনে মুচকি হাসলো,,,অনেক বার বলার পর অবশেষে তুলি দরজা খুলে দিলো,,,সুজন ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রাগী লুক নিয়ে তুলির হাত মুচড়ে ধরে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তোর সাহস হয় কি করে আমাকে রিফিউজ করার!তোর যেটা মন চাইছে তুই সেটাই করছিস,এতো বড় স্পর্ধা তোর হয় কি করে!আ্যানসার মি!””

তুলি হাত মুচড়া মুচড়ি করতে লাগলো,,,সুজনের রক্তিম চোখের চাহনি দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমাল লাগছে তো!প্লিজ আমাল হাতটা ছেড়ে দিন””

সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে তুলির হাতটা ছেড়ে দিলো,,,তুলি হাতের দিকে চেয়ে দেখলো হাতটা লাল হয়ে গেছে,,,সুজন তুলির দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”তুলি!আমাকে রিফিউজ করে খুব উপকার করেছিস আমার,আমার পাশে কি তোকে মানায় নাকি বল,আমার সাথে তো আলেয়া ভার্টকে মানায়””

সুজনের কথা শুনে তুলি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,তুলি যে চাল দিয়েছে সুজন তো তার উল্টো চাল দিচ্ছে,,,সুজন পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের ওয়ালপেপারে চুমো খেয়ে মৃদু হেঁসে বললো,,,

“”আমি তো আমার আলেয়া ভার্টকেই বিয়ে করবো,তুলি!বড় মামা জোর করলেও তুই আমাকে বিয়ে করতে চাইবি না ওকে,আমি তোকে বিয়ে করলে আমার গার্লফ্রেন্ডের কি হবে বল!আমি যে আমার গার্লফ্রেন্ডকে খুব ভালোবাসি””

তুলি সুজনের দিকে চেয়ে রাগী লুক নিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”নিকুচি কলেছি আপনাল গার্লফ্রেন্ডকে!বিয়ে তো আমি আপনাকেই কলবো সুজন ভাই””

সুজন ফোনটা পকেটে রেখে তুলির হাত ধরে মৃদু হেঁসে বললো,,,

“”চল আমার সাথে,ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে,তুই গিয়ে বলবি তুই আমায় বিয়ে করবিনা,বিয়ের ভূত তোর মাথা থেকে নেমে গেছে””

তুলি সুজনের কথায় কপাল কুঁচকে চেয়ে হাতটা ঝারি মেরে সরিয়ে গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,সুজন তুলির যাবার পথে চেয়ে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”আমি জানি তোতলা রানী,তুমি আমাকে ভালোবাসো!আমি কাল রাতেই তোমার বিহেভ দেখে বুঝেছিলাম,আর আমি এটাও জানি!আমি এখন যেটা বলেছি তুমি তার উল্টো কথা বলবে””

কথাগুলো ভেবে স্মিত হেঁসে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তুলির কথা শোনার অপেক্ষায় রইলো,,,তুলি ড্রয়িং রুমে এসে সুজনের দিকে রাগী লুক নিয়ে চেয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমি সুজন ভাইকে বিয়ে কলতে লাজি,তোমলা এখনি বিয়েল ব্যবস্থা কলো””

তুলির কথা শুনে শাহানাজ বেগমের বুক থেকে ভারী পাথরটা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো,,,তুলি গটগট করে হেঁটে সুজনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিলো,,,সুজন একরাশ বিরক্তি নিয়ে তুলির উপর চোখ কটমট করলো,,,

রিয়া ইভা সব মেয়েরা মিলে তুলিকে সাজাতে রিয়ার রুমে নিয়ে গেলো,,,সুজনের প্রেমের বারোটা বাজাতে পেরে তুলি মনে মনে অট্টহাসি দিলো,,,তুলিকে নিয়ে যেতেই সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”তোতলা রানী!তুমি শুধু তোতলায় নও,মাথামোটাও বটে””

সবাই বিয়ের তোরজোর শুরু করে দিলো,,,তুলি রিয়ার রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চুল শুকাতে লাগলো,,,সুজন তুলির রুম ফাঁকা পেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে,,,তুলি ফোনটা রুমে রেখে আসছে মনে হতেই সবার উদ্দেশ্য বললো,,,

“”এই আমি একটু আসছি হ্যাঁ!ফোনটা নিয়েই চলে আসবো””

তুলি চলে যেতেই সবাই শাড়ি গয়না দেখতে লাগলো,,,সুজন ফ্রেশ হয়ে শুধু একটা সাদা তাওয়াল জড়িয়ে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুলের পানি ঝারতে লাগলো,,,তুলি রুমে ঢুকে সুজনকে এই অবস্থায় দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে রইলো,,,

সুজন মিররের ভিতর থেকে তুলিকে দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে ফিরলো,,,সুজন শরীরটা ভালো করে না মুছাই শরীরে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা রয়ে গেছে,,,ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি দেখে মনে হচ্ছে যেনো ছোট ছোট মুক্তোর দানা ভেসে উঠেছে,,,অসম্ভব সুন্দর লাগছে সুজনকে,,,

তুলি এই অবস্থায় সুজনকে আগে কখনো দেখেনি বিধায় হা করে চেয়ে রইলো,,,সুজনের পা থেকে মাথা অবদ্ধি চোখ বুলাতে লাগলো,,,সুজন তুলির চাহনি দেখে অবাক হয়ে গেলো,,,মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে রাগী লুক নিয়ে তুলির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললো,,,

“”আর তো মাত্র কিছুক্ষণ!তারপর যতো পারিস দেখে নিস,এখন অন্তত আমার লজ্জা হরন করিস না,কিছুসময়ের জন্য মুক্তি দে আমায়””

কথাগুলো শুনে তুলি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,লজ্জায় মাথা নিচু করে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,,,সুজন তুলির যাবার পথে চেয়ে মৃদু হাসলো,,,তুলি রুম থেকে বেরিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রিয়ার রুমে ঢুকলো,,,

সুজন রেডি হয়ে নিজের ব্যাগ প্যাক করে রাখলো,,,ভারী শাড়ি গহনা দিয়ে তুলিকে বউ সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে আনা হলো,,,ঘরোয়া ভাবে বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে,,,বিয়ের সময় কেউ কারো দিকে একটি বারের জন্যও তাকালো না,,,

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলে বিয়ে পড়ানো শেষ হলো,,,সবাই রিয়ার রুমে তুলির সাথে গল্পে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো,,,রিদান আর ইভা মিলে তুলির ঘরে ফুলসজ্জার খাট সাজাতে লাগলো,,,সুজন অল্প কিছু খাবার খেয়ে ব্যাগ নিয়ে সবার চোখের আড়ালে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো,,,

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো,,,তুলি আজ লজ্জায় ডাইনিং এ খেতে আসেনি,,,নিজের রুমে বসেই খাবার খেয়েছে,,,শাহানাজ বেগম স্মিত হেঁসে তুলির কপালে চুমো দিয়ে খাবার প্লেট নিয়ে বেড়িয়ে গেলো,,,

রাত এগারোটা বাজে তবুও সুজন রুমে আসছেনা দেখে তুলি বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো,,,মিররের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো,,,দু’হাতে নিজের মুখটা ঢেকে লাজুক ভঙ্গিতে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আজকে আমি আপনাল আলেয়া ভার্টেল মতো সেজেছি,আপনি কি দেখবেন না আমায়!কোথায় আপনি সুজন ভাই!””

অপেক্ষা করতে করতে রাত বারোটা পার হয়ে গেলো,,,সুজন রুমে আসছেনা দেখে তুলির বুকের ভিতর ধক্ করে উঠলো,,,ফোনটা হাতে নিয়ে সমানে সুজনের নাম্বারে ডায়াল করতে লাগলো কিন্তু সুজন কল রিসিভ করছেনা,,,তুলি কল দিয়েছে দেখে সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিলো,,,

তুলি বেডে পা ঝুলিয়ে বসে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বারবার সুজনের নাম্বারে কল দিতে লাগলো,,,কল দিতে দিতে প্রায় একটা বেজে গেলো,,,সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করলে তুলি অসহায় ভঙ্গিতে বললো,,,

“”সুজন ভাই!কোথায় আপনি!আমি আপনাল জন্য বাসল ঘলে অপেক্ষা কলছি,অথচ আপনাল বাসল ঘলে আসাল নামই নেই””

তুলির কথা শুনে সুজনের খুব খারাপ লাগলো,,,তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!আমি সিলেট যাচ্ছি,পৌঁছাতে আর হয়তো কিছুসময় লাগতে পারে,তুই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়””

সুজন সিলেট যাচ্ছে শুনে তুলি মাথার উপর মনে হলো আকাশ ভেঙে পড়লো,,,তুলি কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আজ আমাদেল ফুলসজ্জা,আপনি ফুলসজ্জা না কলে সিলেট কি কলে যেতে পালেন!””

সুজন তুলির কথা শুনে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!তুই বিয়ে করতে চেয়েছিলিস,আমি বিয়ে করেছি তোকে,কিন্তু তুই ফুলসজ্জা করতে চাস সেটাতো বলিসনি আমায়!তাই তোর ফুলসজ্জা তুই একাই কর””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ৮

“”তুলি!তুই বিয়ে করতে চেয়েছিলিস,আমি বিয়ে করেছি তোকে,কিন্তু তুই ফুলসজ্জা করতে চাস সেটাতো বলিসনি আমায়,তাই তোর ফুলসজ্জা তুই একাই কর””

কথাগুলো বলে সুজন ঠাস করে কল কেটে দিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,,,তুলি সুজনের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,ফোনের স্কিনে চেয়ে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই বাসল না কলে পালিয়ে গেলো!বাসল ঘলে বউ পালাতে শুনেছি,কিন্তু বল পালিয়ে যায়,এটাতো কখনো শুনিনি!””

তুলি কপাল কুঁচকে তড়িঘড়ি করে আবার সুজনের নাম্বারে কল দিলো,,,কিন্ত সুজন কল রিসিভ করলোনা,,,তুলি অনেক বার কল দেয়ার পর সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কলটা রিসিভ করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এই কি হয়েছে রে!এতো বিরক্ত কেনো করছিস আমায়,বেশি বিরক্ত করলে কল বল্ক লিস্টে রেখে দিবো বলে দিলাম””

তুলি সুজনের কথা শুনে ভয়ে শুকনো ঢোক অসহায় ভঙ্গিতে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি খুব খালাপ,আপনি ফুলসজ্জায় আমায় একা লেখে পালিয়ে গেলেন কি কলে!””

সুজন তুলির করুন স্বর শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললো,,,

“”তুলি!আমি পালিয়ে কোথায় গেলাম!তুই ফুলসজ্জা করতে চাস,এটা তুই আমাকে একবারও বলেছিস বলতো!ফুলসজ্জা করতে চাইলে তুই আগে থেকে বলবি তো আমায়!না হলে আমি কি করে জানবো তুই ফুলসজ্জা করতে চাস””

তুলি সুজনের কথা শুনে মাথা চুলকানোর ভঙ্গিতে মনে মনে বললো,,,

“”সত্যি তো!আমি তো একবালও বলিনি আমি ফুলসজ্জা কলবো,তাহলে সুজন ভাই কি কলে জানবে ফুলসজ্জা কলাল কথা,আমি শুধু শুধু সুজন ভাইকে দোষালোপ কলছি””

সুজন তুলির নিরবতা বুঝতে পেরে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে ফোনটা কানে ধরে রাখলো,,,তুলি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মৃদু স্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমালই ভূল হয়েছে,আমাল আগে থেকে বলা উচিত ছিলো আমি ফুলসজ্জা কলবো””

সুজন তুলির কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”ওরে মাথামোটা!মাথাটা একটু খাটিয়ে দেখেক আমি ভূলভাল বলছি,এ নাকি আবার ডাক্তার হবে!ওহ্ গড!এরে একটু বুদ্ধি সুদ্ধি দাও””

সুজন গলাটা খ্যাক করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!এসব ফুলসজ্জার কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দে,এখন ফোনটা রাখ,আমার গার্লফ্রেন্ড কল দিচ্ছে””

তুলি সুজনের কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে করুন স্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি বিবাহিত,এখন বউ ছাড়া পলনালীল সাথে কথা বলা ঠিক না””

সুজন তুলির কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”ও আচ্ছা!এখন ঠিক ভূল তুই আমায় শেখাবি!তুলি আমি তোকে বিয়ে করতে চাইনি,তুই জোর করে আমায় বিয়ে করেছিস,তাই আমি তোর কথামতো চলবো এটা ভূলেও ভাবিস না””

তুলি সুজনের কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি এতো লুচু কেনো হ্যাঁ!আপনাল পুলোটা হৃদয় জুলে শুধু এখন আপনাল বউ থাকবে,পলনালীল দিকে ভূলেও তাকাবেন না বলে দিলাম””

সুজন তুলির কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এতো জ্ঞান না দিয়ে ফোনটা রাখতো!তুই তোর মতো চল আর আমি আমার মতো চলবো,আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করবো””

কথাগুলো বলে সুজন কলটা কেটে দিলো,,,সুজনের মুখে গার্লফ্রেন্ড কল দিয়েছে শুনে তুলির মনের ভিতর ভাঙচুর হতে লাগলো,,,তুলি ফোনটা হাতে নিয়ে বেডে বসে কাঁদতে লাগলো,,,সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!আমার পুরোটা হৃদয় জুড়ে শুধু তোমারই বাস,অন্য কারো নয়,কিন্তু আমাকে এখন শক্ত হতে হবে,না হলে তোমার স্বপ্ন পুরনে ব্যঘাত ঘটবে””

তুলি দু’হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে সুজনকে আবার কল দিলো,,,সুজন কপাল কুঁচকে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলে তুলি আগ বাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমি কখনো আপনাল কথাল অবাধ্য হবোনা,আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো,কিন্তু প্লিজ!আপনি আপনাল গার্লফ্রেন্ডেল সাথে আল কথা বলবেন না””

তুলির ভারী কন্ঠ স্বর শুনে সুজনের খুব খারাপ লাগলো,,,তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”যা বলবো তাই শুনবি!””

তুলি শুকনো ঢোক গিলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সত্যি বলছি!যা বলবেন তাই শুনবো,পাক্কা প্রমিজ””

সুজন তুলির কথা শুনে স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”ঠিক আছে!তুই মন দিয়ে পড়াশোনা কর,আর ডাক্তার হবার জেদটা মনের ভিতর গেঁথে রাখ,তাহলেই হবে,আর কিছু করতে হবে না তোকে,উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট ভালো হলে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকিস,তার আগে আর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিসনা,রেজাল্ট ভালো হলে আমি নিজেই তোর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো,এখন রাখছি””

তুলি সুজনের কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে ব্যাস্ত স্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!একটা কথা বলবো!””

সুজন তুলির প্রশ্ন শুনে কপাল কুঁচকে ছোট্ট করে বললো,,,

“”হুম,বল!””

তুলি শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আমি আপনাকে কখনো বিলক্ত কলবোনা,তবে প্রতিদিন লাতে!শুধু একবাল আপনাল সাথে কথা বলতে চাই,বেশি সময় না,দু এক মিনিট কথা বললেই হবে””

সুজন তুলির কথা শুনে মনে মনে খুশি হলো,,,কিন্তু মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”ঠিক আছে,এখন রাখ ফোন,আমি প্রায় চলে এসেছি””

তুলি ফোনটা কেটে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো,,,সুজন ফোনে তুলির ছবি দেখে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো,কিন্তু মেডিকেলে এডমিশনের আগ পর্যন্ত আমি তোমায় ছুঁইয়ে দেখতে পারবোনা,আমি চাইনা তোমার স্বপ্ন পুরনে বাঁধা হতে””

তুলি ফোনটা সেন্টার টেবিলে রেখে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,সুজন তার গন্তব্য স্থলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

রিদানের বিয়ের সব ঝামেলা মিটে গেলে রোকসানা বেগম ইভাকে নিয়ে সিলেট ব্যাক করলো,,,তুলি পড়াশোনা শেষ করে নিয়ম মতো রাতে একবার কল দিয়ে কথা বলে,,,সুজনের সেই কর্কশ কন্ঠই তুলিকে শুনতে হয়,,,এই কর্কশ কন্ঠ শুনেই তুলি শান্তি পায়,,,

দেখতে দেখতে দুমাস পার হয়ে গেলো,,,তুলির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেলো,,,ভালো রেজাল্টের চিন্তার সাথে সুজনের চিন্তা করতে গিয়ে তুলি অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো,,,ভালো রেজাল্ট না করলে সুজন তুলিকে একসেপ্ট করবেনা ভেবে পড়াশোনা নিয়ে সারাক্ষণ পরে থাকে,,,

তুলি কয়েকটি পরীক্ষা ভালোই দিলো,,,একদিন রাতে সুজন অফিসের জুরুরি কাজ করছিলো,,,তুলি পড়াশোনা শেষ করে সুজনকে কল দিলো,,,কিন্তু সুজন ফোন কেটে দিলো,,,তুলি কয়েকবার কল দিলো সুজন কেটে কেটে দিয়ে লাস্ট বার রিসিভ করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”সমস্যা কি তোর!দেখছিস যে কল কেটে দিচ্ছি,তারপরও কেনো কল দিচ্ছিস!বিরক্ত করিসনা,ফোন রাখ,ব্যাস্ত আছি আমি””

কথাগুলো বলে তুলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সুজন ফোনটা কেটে দিলো,,,তুলি সুজনের কথায় কষ্ট পেয়ে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমি কি আপনাকে বিলক্ত কলি!এই দুই মাসে কি আমাল প্রতি আপনাল একটুও ভালোবাসা জন্মালো না,আমি কি আপনাকে বিয়ে কলে সত্যিই কোনো ভূল কলেছি!””

কথাগুলো মনে হতেই তুলি বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো,,,চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো,,,তুলি মনে মনে জেদ চেপে নিলো সুজনকে আর বিরক্ত করবেনা,,,চোখের পানি শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে মুছে টুকা দিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমাল ভালোবাসাল পাগলামি গুলো দেখেছেন,এবাল আমাল তীব্র অভিমানটা দেখবেন,আমাল অভিমানটা আমাল ভালোবাসাল মতোই তীব্র সুজন ভাই,আমি আল কখনো আপনাকে বিলক্ত কলবোনা””

চলবে,,,
চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here