#অশ্রুমালা
Part–9
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
ভাতের মাড় গালতে রান্নাঘরে ঢুকল মেঘ। সে একটা চামচে করে ভাতের হাড়ি থেকে কয়েকদানা ভাত উঠিয়ে হাত দিয়ে দেখে নিল ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা। না হয় নি। এখনো কিছুটা শক্ত আছে। সে মুখটা বিকৃত করল। আজকে ভাত আর ডিম ভাজি খেতে হবে তাকে। আর ভালো লাগে না। বাইরেও তো খাওয়া সম্ভব না রোজ রোজ। কিন্তু এই একই খাবার খেতে খেতে ডিম ভাজির উপর বিরক্ত ধরে গেছে তার!
কিন্তু কিছু করার নাই। সে ডিম ভাজি ছাড়া আর কিছু ই পারে না৷
মেঘ দ্রুত ভাতের মাড় ফেলল। মেঘ মনে মনে ঠিক করল কালকে থেকে বসা ভাত খাবে। তাইলে আর এই মাড় গালা নিয়ে ঝামেলা থাকবে না।
কোথায় এই বয়সে বউ মজার মজার রান্না করবে আর সে আয়েস করে খাবে তা না হয়ে,।
তাকে বাধ্য হয়ে টানা পনের দিন ধরে ডিম ভাজি আর ভাত খেয়ে যেতে হচ্ছে। এটাই বুঝি ‘তার’ দেওয়া অভিশাপ ।
‘তার’ কথা মনে পড়তেই মেঘের ঠোঁটের ডগায় হাসির রেখা ফুটে উঠল।
“কন্যা তোমার দেওয়া কালো যাদুর তাবিজ ও আমার জন্য শুভ!”বিরবির করে বলে উঠে মেঘ।
মেঘ খাওয়া শেষ করে ফোন হাতে নিল। তারপর আবেগকে কল লাগালো। আবেগের সাথে কথা বলা দরকার। পড়শু বিয়ে হয়েছে। আবেগের বিয়েতে গেস্ট হিসেবে বুঝি সে একাই ছিল। মেঘ আবেগের জন্য খুব খুশি। কারন রোদেলা আবেগকে খুব ভালোবাসে এটা তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। আর তাছাড়া মেঘের কেন জানি রোদেলার উপর একটা মায়া কাজ করে। উহু! ভালোবাসার মায়া নয়, স্নেহের মায়া কাজ করে। যেটা নেহার জন্য একটু কম কাজ করে। মানুষ অনেক স্বার্থপর!
এই যে আবেগের সাথে রোদেলার বিয়ে হওয়ায় সে সবচেয়ে খুশি! অথচ নেহার জন্য সে খুব একটা কষ্ট পাচ্ছে না।
ফোনটা কেটে গেল। মেঘ কিছুটা অবাক হলো। আবেগ কোন দিন তার কল ইগনোর করে না। আজ কি হলো তবে?
মেঘ হেসে দিয়ে ভাবলো সংসার নিয়ে ব্যস্ত বুঝি আমার বন্ধু !
★★★
এদিকে আবেগ রুমে ঢুকতেই দেখল রোদেলা কাদছে। আবেগের মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো না। আবেগ বুঝে পাচ্ছে না —হুট করে সে এতো কঠোর কেন হয়ে গেল?
কালকে নেহাকে কান্না করতে দেখেও তার খুব যে কষ্ট হয়েছে এটা বললে তা ডাহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই না। তার মধ্যে কোন কিছুর অনুভূতি জাগছে। কারো কথাই কানে যাচ্ছে না।
আবেগ এক পলক রোদেলাকে দেখে নিয়ে বাথরুমে গেল।
বাথরুমের গেট লাগানোর শব্দে রোদেলা টের পেল আবেগ রুমে এসেছে। সে দ্রুত তার চোখ মুছে নিল। আবেগ কে কি বলবে রিশাদ কল করেছে? নাকি ব্যাপার টা চেপে যাবে? এম্নিতেই আবেগ তার জন্য খুব টেনশনে আছে। আর এক্সট্রা ভাবে তার টেনশন বাড়ানো কি ঠিক হবে?
ঠিক সেই সময় রোদেলার ফোন বাজতে লাগলো। ফোনের রিংয়ে সে কেপে উঠে। ভয় পেয়ে যায়। যদি আবার রিশাদ হয়?
রোদেলা ফোনের স্ক্রিন দেখে স্বস্তি পেল। মেঘ ভাইয়ার কল। সে দ্রুত ফোন রিসিভ করল।
ওপাশ থেকে মেঘ বলে উঠে, আবেগ কোথায়?
রোদেলা হালকা আওয়াজে বলে, বাথরুমে গেছে।
–ও আচ্ছা।
–আপনি আসলেন না কেন?
–সর্যি। আজকে ব্যস্ত ছিলাম। কালকে আসব। আমার জন্য গরুর মাংস রেখে দাও আর কালকে এসে বাবুকে দেখে যাব। আর উপহার ও দিব।
–লাগবে না ভাইয়া। শুধু দোয়া করবেন আর কিছু লাগবে না।
মেঘ ওপাশ থেকে বলে উঠে, তোমার ভয়েস এমন শুনাচ্ছে কেন? কাদছিলে কি?
–নাহ।
–ডোন্ট লাই। কেউ কিছু বলেছে? আবেগ নিশ্চয়ই কিছু বলছে তাই না?
–উহু৷
–তাহলে?
রোদেলা হুট করে বলে ফেলে, রিশাদ কল দিয়েছিল।
এটা শোনার সাথে সাথে মেঘ রেগে ফেটে পড়ল আর দাতে দাত চেপে বলে৷ ওই হারামি কেন কল দিবে তোমাকে? আর তুমি কেন ওর কল রিসিভ করেছো?
–আননোন নাম্বার থেকে কল দিয়েছিল।
–নাম্বার টা আমাকে পাঠাও। আমি দেখছি কি করা যায়। আবেগকে এবিষয়ে কিছু বলেছো?
–না৷
–আচ্ছা। পরে বলিও। আমি দেখছি ব্যাপারটা। তুমি চিন্তা করবে না।
–আচ্ছা৷
মেঘ বলে উঠে, তোমার বান্ধবীরা কেমন আছে জানো কিছু?
–না।কারো সাথে আমার কথা হয় নি। মনে হয় না ওরা দুজন কেউ আমার সাথে কথা বলবে।
–না বলার ই কথা। মাঝে মাঝে একটু সেলফিস হতে হয় রোদেলা। সবসময় সবার কথা ভাবলে চলবে না! আবেগকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত একদম ঠিক নিয়েছো। কেউ জানুক বা জানুক আমি তো সব জানি। আই এম ওলওয়েস উইথ ইউ।
–থ্যাংক্সস।
–রাখি তাহলে।
রোদেলা ফোন রাখতেই আবেগ পেছন থেকে বলে উঠে, কার সাথে কথা বলছিলে?
রোদেলা আবেগের দিকে ঘুরে বলে, মেঘ ভাইয়া কল দিয়েছিল।
–ওহ।
–উনি কালকে আসবেন।
আবেগ রোদেলা দিকে তাকালো। রোদেলার পরনে একটা সুতি শাড়ি। আজকে কি আকিকা উপলক্ষ সে শাড়ি পড়েছে? ব্যাপার টা আগে লক্ষ্য কেন করে নি সে?
আবেগ আবারো রোদেলার দিকে তাকালো। পরনে সুতির কাজ করা নীল শাড়ি। শাড়িটার ভেতরে সাদা সুতির কাজ। রোদেলার গায়ে বেশ মানিয়েছে শাড়িটা। রোদেলা চুল গুলো খোপা করে রেখেছে। তারপর ও মুখের উপর কিছু ছোট চুল এসে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। বারান্দা খোলা থাকার ফলে রোদ এসে রোদেলার গায়ে পড়ছে। রোদের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠছে রোদেলার মুখখানা। কেমন যেন একটা আকর্ষণ অনুভব করছে আবেগ রোদেলার উপর। ঠিক যেমনটা দক্ষিন মেরু উত্তর মেরুর উপর একটা অজানা আকর্ষণ অনুভব করে। এই টান বা আকর্ষণের কোন নাম নেই। নামহীন, গন্তব্যহীন এক অবান্তর মায়া এটি!
রোদেলা আবেগকে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু হুট করে শাড়ির সাথে পা লেগে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে আবেগের বুকে গিয়ে আছাড় খেল রোদেলা।
হুট করে বুকে রোদেলা এসে পড়ায় আবেগ নিজেই কেপে উঠে এবং রোদেলা কে ধরে শক্ত করে ধরে ফেলে।
আবেগের স্পর্শ পেতেই রোদেলা চোখ বুজে ফেলে। ফলে দুফোটা মোটা মোটা টাটকা অশ্রুমালা রোদেলা আবেগকে উপহার দিল।
রোদেলার চোখের পানিতে আবেগের শার্টের সামান্য অংশ ভিজে উঠতে লাগে।
রোদেলা আবেগের বুকে মাথা ঠেকিয়ে আছে। আবেগের গায়ের গন্ধ তার নাকে এসে লাগছে। সে স্পষ্ট আবেগের হৃদস্পন্দন শুনতে পেল। আবেগের বুকের ধুকপুক আওয়াজ শুনে রোদেলার নিজের মনের মধ্যে উথাল-পাতাল বয়ে।
আবেগ রোদেলার বাহু ধরে তাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিয়ে রুম ছেড়ে যায়।
আবেগ রুম ত্যাগ করলেই রোদেলা আরেক দফা হুহু করে কেদে দেয়। ইদানীং কি হয়েছে জানে না সে। আবেগকে দেখলেই তার কান্না পায়! কেন পায় জানে না সে?
★★★
নেহা বাসায় ঢুকতেই তার মা জহির শেখ, নেহার সামনে এসে বললেন,কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
–কোথাও না। (কঠিন সুরে)
–তোমার সাথে কথা বলাই মিনিংলেস। আসলে তোমার সাথে না বোকাদের সাথে কথা বলাই ইউস লেস।
নেহা মাথা নিচু করে ফেলে। বাবার সাথে কোন ধরনের আর্গিউমেন্টে যাওয়ার কোন ইচ্ছা বা এনার্জি তার বর্তমানে নেই। এই পাঁচ বছরে বহুবার বাবার সাথে দ্বন্দে গিয়েছে। আজকে আর না! ক্লান্ত সে। বড্ড! বড্ড বেশি ক্লান্ত!
নেহা তার রুমে গিয়ে একটা হট শওয়ার নিল।
★★★
ফেসবুক গ্রুপ ফুডব্যাংকে একজনের পোস্ট দেখে খুশিতে লাফ দিল প্রাচুর্য। এই মাসের প্রতি রবিবার “লে মেরিডিয়ান” এ নাকি মাত্র ১ ইউ এস ডলার অর্থাৎ ৮৫ টাকায় আইসক্রিম বুফে চলছে। প্রাচুর্য বিছানায় লাফালাফি শুরু করে দিল। আজকের দিনটা তার জন্য খুব ই লাকি বলা চলে! পর পর বেশ ক’টা খুশির নিউস শুনেছে। এখন আবার এই অফারটার কথা জানতে পারল। প্রাচুর্য এমনি সব ধরনের রেস্টুরেন্টের অফার খেতে যেতে পছন্দ করে আর সেটা যদি লে মেরিডিয়ান হয়! তাইলে তো ভাই কথাই নাই! তাও নাকি মাত্র ৮৫ টাকায়!
প্রাচুর্য ফোন রেখে নিল। আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে খবর পেয়েছে আবেগের নাকি বিয়ে হয়েছে তার কাজিন রোদেলার সাথে। এই সুসুসুসুসু-সংবাদ শুনে সে সত্যি পাগল হতে বসেছিল। এতোবার সু বলার কারন হলো আবেগের বিয়ে হওয়াটা তার কাছে খুব খুশির খবর তাই তো সংবাদ টা এতো সুখের যে একটা সু দিয়ে হচ্ছে না তাই তো সে নিজেই একটা বাংলা ওয়াড বানিয়ে নিল। মোটামুটি সুখের সংবাদ হলে সুসংবাদ আর অনেক অনেক খুশির সংবাদ হলে তা হবে “সুসুসুসুসু-সংবাদ”
প্রাচুর্যের মনে হয় আবেগের বিয়েতে তার চেয়ে বেশি খুশি এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই।
এই খবর শুনে কোন রকম ব্রাশ করে গোসল করে তারপর ওযু করে বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়েছে সে। সত্যি আল্লাহ যদি চায় অসম্ভব ও সম্ভব হবে।পাহাড় ও ডুবে যাবে, সাগর ও শুকিয়ে যাবে যদি আল্লাহ পাক চান।
নফল নামাজ পড়া শেষ করতেই তার আম্মু খবর দিয়ে গেল তার সবচেয়ে ফেভারিট কাজিন মিতু আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামী শুক্রবার আকদ৷
প্রাচুর্য আবার ফোন অন করে আজকে কি বার তা দেখে নিল। আজকেই তো রবিবার। সে মনে মনে বলে উঠে, তাহলে আজকে ১২-৪ টা পর্যন্ত পেটে পড়ুক লে মেরিডিয়ানের চকলেট আইসক্রিম!
★★★
রুম ছেড়ে আর কোথায় যাবে আবেগ? বাড়ির বাইরে যেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার চেয়ে সে ছাদে গেল। আবেগ জানে না তার মনের মধ্যে কি চলছে?
মন আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা বড় দায়! কখন যে কি হয়ে যায় নেই তার খবর!
কিছু দিন আগেও সে নেহাকে ভালোবাসত। অথচ আজকে নেহার জন্য কোন কিছু অনুভূতি আসছে না।এমনকি নেহার কথাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে না। আবেগের মনে হচ্ছে কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে নেহা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেন?
আর না চাইতেও বারবার রোদেলার চেহারা টা ভেসে উঠছে। বিশেষ করে সেদিনকার অবস্থায় দেখা রোদেলার নিস্তেজ চেহারা তার চোখ বরাবর ভাসতে থাকে।
ফ্লাশব্যাকঃ
আবেগ সেদিন কি মনে করে রোদেলাদের বাসায় গিয়েছিল। মূলত রোদেলাকে দেখতে। আর সাতদিন পর ডেলিভারি। একবার দেখতে যাওয়া উচিত। দায়িত্ববোধ থেকেই গিয়েছিল দেখা করতে। বাসায় গিয়ে বেল বাজাবে তার আগেই আবেগ লক্ষ্য করে মেইন গেট খোলা। তার মনে কু ডাকতে লাগে। সে কোন কিছু না ভেবে বাসার ভেতরে ঢুকে যায় এবং ড্রয়িং রুমেই রোদেলা কে পড়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ায়। এক মূহুর্তের জন্য সব কিছু অন্ধকার দেখতে লাগে আবেগ। চারপাশ রক্ত দিয়ে বয়ে গেছে। সাদা ফ্লোর লাল হয়ে গেছে। রোদেলার মুখটাও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আবেগের হাত-পা কাপতে লাগে। তার মনে হতে লাগলো, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নয়তো তার দুনিয়াই শেষ হওয়ার পথে!
সেদিন আবেগ ক্লিয়ারলি বুঝতে পেরেছিল রোদেলার প্রতি এমন একটা অনুভূতি আছে তার যেটার জোর নেহার প্রতি ভালোবাসার চেয়েও বেশি। কিন্তু রোদেলার প্রতি অনুভূতি টা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। কেন যেন সেদিনের পর থেকে বারংবার নেহার প্রতি নিজের ভালোবাসায় সন্দেহ জাগছে!
আবেগ নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত! সে চোখ বুজে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে রোদেলার চেহারা ভেসে উঠলো। সেজন্য আবেগ আবারো চোখ খুলে ফেলে।
বাসা থেকে শব্দ পেতে লাগল আবেগ। তাই তড়িঘড়ি করে নিচে নামতেই তার চোখ প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম। রিশাদ তার বাসায় এসেছে৷
রিশাদকে দেখে আবেগের গা থরথর করে কাপতে লাগল। মনে চাচ্ছে রিশাদের গলা চেপে মেরে ফেলতে।
আবেগ নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে রিশাদের কাছে গিয়ে বলে, কি চাই?
রিশাদ খুব সাবলীল ভাবে বলে, আমার বউকে নিতে আসছি। আমার বাচ্চাটাকে কতদিন ধরে দেখি না।
একথা শোনামাত্র আবেগ রিশাদের কলার চেপে ধরে।
তা দেখে রিশাদ শয়তানি হাসি হেসে বলে, আস্তে ডাক্তার সাহেব! মাস্তানদের মতো কলার টেনে ধরলেন কেন? ছাড়ুন।
আবেগ কড়া চোখে রিশাদের দিকে তাকাতেই রিশাদ হোহো করে হেসে বলে, রোদেলাকে নিতে এসেছি। আমার বউ আমার ঘরে থাকবে। আমি কোন ঝামেলা চাই না। আমাকে আমার বউ বুঝিয়ে দাও আমি চলে যাব।।
একথা শুনে আবেগেত রক্ত মাথায় উঠে গেল। সে এলোপাতাড়ি ভাবে রিশাদকে মারতে শুরু করে। কোন দিকে হুশ নেই তার। রিশাদ ও মার খেতে লাগলো আবেগের হাতে। এক পযায়ে গিয়ে রিশাদ ও আবেগকে মারতে লাগে। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। হুট করে রিশাদ আবেগের মাথায় একটা ফুলদানি ছুড়ে মারে
এবং আবেগ মেঝেতে বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে।
#অশ্রুমালা
Part–10
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
আবেগ মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করল। সে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে এবং মাথার যে অংশে লেগেছে সে জায়গাটায় দুহাত দিয়ে চেপে ধরল। মূহুর্তের মধ্যে তার হাত ভিজে উঠতে লাগে। আবেগ বড় বড় করে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা চালায়।চোখ দিয়ে পানি গড়াতে লাগল। সে আবছা চোখে দেখলে রোদেলা তার কাছে আসছে।সে চোখ বন্ধ করে নেয়।
এদিকে রোদেলা শোরগোল শুনে বাইরে বের হতেই আবেগকে মেঝেতে এভাবে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সে দিশাহারা হয়ে যায়। রোদেলার চোখ তখনো কেবল আবেগের দিকেই ছিল তাই তো রিশাদকে সে দেখে নি!
রোদেলা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে আবেগকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিয়ে বলে, কি হয়েছে তোমার?
তারপর পরখ করে আবেগকে দেখতেই রোদেলার বুকটা ছ্যাত করে উঠে।
সে আরো জোরে কেদে দিয়ে বলে, আল্লাহ! ও আল্লাহ! তোমার মাথা থেকে রক্ত কেন বের হচ্ছে?
আবেগ চোখ পিটপিট করে খুলে। সে রোদেলাকে দেখতে পেল। রোদেলা কে দেখার সাথে সাথে তার কেন যেন ব্যথাটা একটু কমতে লাগে। রোদেলা তার ওড়না দিয়ে আবেগের মাথায় চেপে ধরে আর কাদতে কাদতে বলে, কি হয়েছে তোমার? আর কিভাবে এতো জোরে আঘাত পেলে কিভাবে ?
আবেগ অনেক কষ্টে বলে উঠে, আব্বা কই?
–বাসায় নেই তো আম্মাকে নিয়ে বাইরে গেছে আর ইভানা তো সমুদ্র কে একটু বাইরে গেল মাত্র। (বিচলিত হয়ে)
পেছন থেকে এসব কথা শুনে নিল রিশাদ। সে শয়তানি হাসি হাসল। বাসায় কেউ নেই। কেবল তারা তিনজন বাদে! আর আবেগের অবস্থা তো নাজেহাল! রইল বাকি রোদেলা। রোদেলা কে একটা ফু দিলেই উড়ে যাবে।
সে বাকা হেসে আবেগ আর রোদেলার দিকে আগাতে লাগে। আজকেই সময়! উঠিয়ে নিয়ে যাবে তার বউ কে আবেগের চোখের সামনে৷
রোদেলা আবেগের মাথা খুব শক্ত করে ওড়না দিয়ে চেপে রাখায় রক্তপাত কিছু টা কমে আসল৷
রিশাদ রোদেলার পেছন দাড়িয়ে তাকে হ্যাচকা টান দিল। এতে রোদেলার পেটে গিয়ে কিছুটা চাপ পড়ল এবং সে ব্যথায় আহ বলে চেচিয়ে উঠে।
রিশাদ রোদেলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দাতে দাত চেপে বলে, কিরে? নতুন ভাতারের জন্য মোহাব্বত উতলে পড়ছে আর আমার জন্য কোন সোহাগ নাই। বলি, আমাকেও একটু সোহাগ দাও সখী! কথাটা শেষ করেই হোহো করে হাসতে লাগলো রিশাদ।
আচমকা রিশাদকে দেখে ঘাবড়ে গেছে রোদেলা৷ সে ভীত গলায় বলে উঠে, তুমিই আবেগের মাথায় আঘাত করেছো তাই না?
–ইয়েস জানেমন।
এইটুকু বলে রিশাদ রোদেলার আরো কাছে আসতে লাগলো। রোদেলা তড়িঘড়ি করে রিশাদকে ধাক্কা মারল।
ফলে রিশাদ কিছু টা দূরে সরে গেলেও রোদেলার দুই হাত ধরে রাখায় সে আবারো রোদেলা কে টান মারল ফলে রোদেলা আবারো ব্যথা পেয়ে কেদে দিল এবং পেছন ঘুরে আবেগের দিকে তাকালো।
আবেগকে দেখেই তার বুকটা হুহু করে উঠে। আবেগ মাথায় হাত চেপে উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ফ্লোরে রক্ত পড়ে আছে। আবেগের কষ্ট হচ্ছে দেখে রোদেলার বুক দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। সে রিশাদের বাধন ছিন্ন করে আবেগের কাছে ছুটে যেতে চাইলেও পারল না। রিশাদ তার হাতজোড়া খুব শক্ত করে ধরে আছে।সে রিশাদের সাথে পেরে উঠতে পারছে না। রোদেলা কেদে দিল এবং রিশাদের কাছে মিনতি করে বলে, ছাড়ো আমাকে। আমি আবেগের কাছে যাব৷ ওর কষ্ট হচ্ছে— বলেই সে ঘাড় ঘুরালো।
আবেগ তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রোদেলা একাধারে কেদেই যাচ্ছে। তার বুকের ভেতর খুব জ্বালা হচ্ছে। বহু আগে থেকেই সে আবেগকে যন্ত্রণায় দেখতে পারে না। আবেগের কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না। অথচ আজ চোখের সামনে না চাওয়া সত্ত্বেও আবেগকে কাতরাতে দেখছে।
রোদেলা আবারো আবেগের কাছে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করলে রিশাদ স্বজোড়ে একটা থাপ্পড় বসায় রোদেলার গালে।
রোদেলা গালে হাত দিল। অনেক জোড়ে লেগেছে তার গালে। মনে হচ্ছে গাল ফেটে রক্ত বেরিয়ে যাবে।
রোদেলাকে থাপ্পড় মারতে দেখে আবেগ আরো খেপে গেল। সে রোদেলার প্রতি অত্যাচার সহ্য করতে পারল না। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে রিশাদের সামনে গিয়ে রোদেলার হাত জোড়পূর্বক ছাড়িয়ে নেয় এবং রোদেলা কে বলে, রুমে গিয়ে মেঘকে কল দাও।
রোদেলা আবেগের কথা মতো রুমে যেতে চাইলে রিশাদ রোদেলাকে আবারো ধরে ফেলে এবং রোদেলা কে একটা বাজে গালি দিয়ে হুংকার দিয়ে বলল, খবরদার কাউকে কল দিবি না। আজকে তোর স্বামীকে জিন্দা পুতে ফেলব৷
রোদেলা ভয় পেয়ে গেল। যদি রিশাদ আবেগের কিছু করে ফেলে?।
আবেগ আবারো রিশাদের হাত রোদেলার বাহু থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এবং রোদেলা কে কল লাগাতে বলে।
রোদেলা জানে এখানা যদি সে থাকে তাহলে কোন কিছু ই ভালো হবে না।বরং মেঘ ভাইয়া কে কল দিলে সে যদি সময়ের মধ্যে চলে আসতে পারে তাইলে উত্তম হবে।
রোদেলা ছুট লাগায় তার রুমে।
এদিকে রিশাদ রোদেলাকে থামাতে চাইলে আবেগ আটকে দেয়।
দুইজনের মাঝে আবারো ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এবার ও আবেগ রিশাদের সাথে পেরে উঠতে পারছে না। তবুও তাকে আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
রোদেলা রুমে ঢুকে ফোন খুজতে লাগলো। কিন্তু ফোন খুজে পাচ্ছে না। সে মনেই করতে পারছে না ফোনটা কোথায় রেখেছে৷ অনেক খোঁজার পর বালিশের নিচ থেকে ফোন পেল। সে দ্রুত মেঘকে কল লাগায়৷ একবার রিং হতেই ধরে ফেলে মেঘ।
ওপাশ থেকে মেঘ বলে উঠে, কি হয়েছে রোদেলা? ইস এভ্রিথিং ওকে?
রোদেলা কাদতে কাদতে বলে, ভাইয়া! আবেগ!
–কি হয়েছে আবেগের?
–বাসায় রিশাদ এসে আবেগকে মারধর করছে । কেউ নেই বাসায়৷ আপনি আসুন প্লিজ৷।
এইটুকু বলতে বাইরে থেকে আবেগের গোঙানোর শব্দ রোদেলার কানে ভেসে উঠে। সে দৌড়ে রুমের বাইরে আসতেই দেখল রিশাদ আবেগের পেটে কিল-ঘুষি, লাথি মারছে।
এই দৃশ্য দেখে রোদেলার মাথা ভোভো করতে লাগলো। আতকে উঠে সে আবেগকে এভাবে মার খেতে দেখে। সে প্রচন্ড জোরে কান্না করতে লাগলো সেই সাথে চিৎকার দিয়ে আবেগের কাছে গেল৷
রিশাদ এবার থামলো। সে বুঝি ক্লান্ত হয়ে গেছে৷ রোদেলা রিশাদের দিকে তাকালো। তাকে দেখে বোঝার কোন উপায় নাই যে সে একটা মানুষ। এই অবস্থায় রিশাদকে দেখলে যে কেউ তাকে জন্তু ভেবে নির্দ্বিধায় ভুল করতে পারবে৷
আবেগ পেটে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে। রোদেলা তাকে সর্বোশক্তি দিয়ে ধরে আছে আর কান্না করছে।
রিশাদ তা দেখে বাকা হাসি হেসে বলে, বাহ! কি মোহাব্বত!
তারপর আবারো রোদেলা কে একটা গালি দিয়ে বলে, তোকে কতবার মানা করছিলাম বাচ্চাটা নিস না৷ মেরে ফেল। কেন শুনিস নি আমার কথা?
রিশাদের মুখ মূহুর্তের মধ্যে শক্ত হয়ে এলো। আবেগ রিশাদের কোন কথাই বুঝতে পারছে না। তাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল।
রিশাদ রোদেলার কাছে আসতে আসতে বলে, খুব দেমাগ না তোর? দাড়া আজকেতোর সব দ্ম
দেমাগ সব বের করব। তোর পেট থেকে বের হওয়া এই বাচ্চার জন্য আমার এমপি হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। আজকে তোকেই আমি শেষ করে দিব ! একবার তোর পেটে লাথি মারে তো মরলি না। আজকে আবার মারব। আজকে মেরেই ফেলব তোকে। তুই মরলে তোর বাচ্চাও মরবে।
বলে রোদেলার কাছে গিয়ে রোদেলাকে আবেগের সামন থেকে টেনে হিচড়ে নিজের সামনে এনে আবারো রোদেলার পেটে লাথি মারতে এগিয়ে গেল রিশাদ।
রোদেলা চোখ বন্ধ করে ফেলে। সে বুঝে যায় আজকে আর রেহাই পাবে না সে।রিশাদ আজ তাকে মেরেই ফেলবে! রোদেলা চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে আর মৃত্যুযন্ত্রনা সহ্য করার প্রতিক্ষা করতে শুরু করে৷ কিন্তু না পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর ও কিছু হয় নি। সে চোখ বন্ধ অবস্থায় বুঝতে পারছে কারো ছায়া তার মুখে এসে পড়ছে। কেউ তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
রোদেলা চোখ খুলতেই দেখে আবেগ তার সামনে দাড়িয়ে আছে এবং রিশাদকে আটকে রেখেছে।
আবেগ এবার রিশাদের নাক বরাবর ঘুষি দিল। সে নিজেও বুঝতে পারছে না হুট করে তার মধ্যে এতো শক্তি কোথা থেকে এলো?
রোদেলা আবারো কেদে দিল।
আবেগ অনবরত পেটাতে লাগে রিশাদকে। রিশাদ ও কম না আবেগকে সে ও মারছে৷ এক কথায় কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।
রিশাদ আবারো ফুলদানি টা হাতে নিল। তা দেখে রোদেলা চেচিয়ে উঠে যার ফলে আবেগ সতর্ক হয়ে যায়। এবং দুজনের মধ্যে হাতাহাতি চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ভুল কিংবা দুর্ঘটাবশত রিশাদের মাথায় গিয়ে ফুলদানির চোখা অংশ গিয়ে লাগে।
তা দেখে আবেগ কিছু টা ঘাবড়ে যায়। ঠিক সেই সময় মেঘ বাসার ভেতরে ঢুকে।
আবেগকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে মেঘ ও বিচলিত হয়ে আবেগের কাছে ছুটে গিয়ে বলে৷ দোস! এতো ব্যথা কিভাবে পেলি? তুই ঠিক আছিস?
আবেগ ছোট করে হু বলে।
রোদেলা কেদে দিল এবং বলল, ও ঠিক নাই ভাইয়া। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চলেন। ওর অনেক লেগেছে (কান্না করতে করতে)
এবারে আবেগ রিশাদ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রোদেলার কাছে গিয়ে তাকে আস্তে করে বলে, তুমি ঠিক আছো?
রোদেলা আবারো কেদে দেয়।
আবেগ তার হাতে হাত রেখে বলে, তুমি ঠিক থাকলেই হলো।
রোদেলা আবেগের দিকে তাকায়। আবেগের মাথা থেকে এখনো ফোটা ফোটা রক্ত ঝড়ছে। কপাল বেয়ে গাল-নাকে গড়িয়ে পড়ছে। রোদেলা আতকে উঠে।
রোদেলার বুকটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। সে দ্রুত ফাস্ট এইড বক্স আনে।
আবেগ রোদেলাকে কিছু করতে না দিয়ে নিজেই বক্সটা নিয়ে রিশাদের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে রিশাদ যে জায়গায় ব্যথা পেয়েছে সেটায় ব্যান্ডেজ দিল। যেহুতু আবেগ এমবিবিএস ডাক্তার তাই এসব কাজ তার চেয়ে বেটার করার সম্ভাবনা অন্য কারো পক্ষে খুব কম। আবেগ বাসায় মাঝে মাঝে রুগী দেখে তাই মোটামুটি অনেক কিছু ই আছে বক্সে।
রিশাদকে ড্রেসিং করিয়ে নিজেও করে নেয় এবং মেঘকে বলে, রিশাদ কে বাসা থেকে বের করে দিতে।
মেঘ তো আবেগের উপর খেপা৷ কোথায় আবেগ রিশাদকে আরো মারবে তা না করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। আজব!
তাও কিছু না বলে রিশাদের কলার ধরে টেনে নিয়ে গেল বাসার বাইরে।
মেঘ বের হতেই আবেগ রোদেলার হাত ধরে তাকে রুমে আনল এবং একটা পেইন কিলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, এটা খেয়ে নাও৷ তাহলে আর ব্যথা উঠবে না।
রোদেলা কান্না করতে করতেই মেডিসিন টা খেয়ে নিল।
–কান্না থামাও রোদেলা।
রোদেলা কাদার বেগ আরো বাড়িয়ে দিল।
সে ঝাপটে এসে আবেগকে ধরে ফেলে। এতে আবেগ পেটে সামান্য ব্যথা পেলেও চুপ থাকল।
রোদেলার উষ্ণ উত্তাপ এসে আবেগের বুকে লাগছে। আবেগের মধ্যে কিছু পরিবর্তন ঘটতে শুরু করল। কেমন জানি লাগতে লাগলো। এই পরিবর্তন টা শুধু মাত্র মনের পরিবর্তন!
শারিরীক সব ব্যথা মনে হচ্ছে প্রশমিত হচ্ছে! ঠিক যেমন ঔষধ সেবনে ব্যথা প্রশমিত হয়। তাহলে কি রোদেলা তার জন্য ঔষধ নাকি???
রোদেলার কান্নার শব্দে আবেগের চিন্তার অবসান ঘটল। সে রোদেলা কে তার বুক থেকে সরিয়ে নিল এবং হালকা গলায় বলে, বাসার কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলবে না। কেমন?
রোদেলা মাথা ঝাকালো। এবং মৃদ্যু স্বরে আবেগকে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি খুব ব্যথা অনুভব হচ্ছে?
আবেগ হালকা হেসে বলে, আরে না! একদম ই ব্যথা করছে না।
একথা শোনার চেয়ে রোদেলা সান্ত্বনা পাওয়ার চেয়ে আরো দ্বিগুন কষ্ট পেল। তার চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছিল।
কিছুক্ষন পর মেঘ আসল। মেঘ আসার মিনিট দুই পর আবেগের মা আর বাবা বাসায় ঢুকল৷
আবেগরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে ছিল বিধায় বাসায় ঢোকার সাথে সাথে জাবেদা খাতুন আবেগকে দেখতে পেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ আবেগের কপালে গেল। ব্যান্ডেজ করা দেখে উনি চমকে উঠে ছেলের কাছে গিয়ে বিচলিত হয়ে বলে, কি হয়েছে তোর? কিভাবে ব্যথা পেলি বাবা?
রুমের পরিবেশ থমথমে। কেউ কোন কথা বলছে না। মেঘ আবেগের দিকে তাকিয়ে আছে রোদেলা ও।
জাবেদা খাতুন আরো বলে উঠে, কেউ কিছু বল? কি হয়েছে আমার ছেলেটার?
–মা, বাথরুমের দরজার সাথে লেগে কপালে ব্যথা পেয়েছি।
জাবেদা খাতুন বলে, কিন্তু কিভাবে বাবা?
–জানি না৷ আমিও বুঝলাম না। প্রেসারটা একটু লো ছিল তাই এমন হয়ে গেছে৷
জাবেদা খাতুন আক্ষেপ করে বলে, ইশ! আমার ছেলেটার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল। বাবা তুই বসে আছিস কেন? রুমে গিয়ে রেস্ট কর৷
তারপর রোদেলাকে দেখে নিয়ে বলে, রুমে গিয়েও তো শান্তি নাই তোর। অশান্তি ই রুমে বসে থাকে৷
একথা শুনে রোদেলা বুঝল তাকেই অশান্তি বলা হচ্ছে তবুও প্রতিবাদে কিছু বললো না।
আবেগ তার রুমে চলে গেল।
মেঘ এখনো বসে ই আছে সোফায়।
মামা কিছু টা চেচিয়ে উঠে বলে, আমার ভাগ্নি মোটেও অশান্তি না৷ ও এই বাসার রহমত!,
রোদেলা এবার ও প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। মেঘ হালকা হাসল।
তার কিছু ক্ষন পর ইভানা এসে বাবুকে রোদেলার কোলে দিল এবং মেঘকে দেখে বলে, আরে! মেঘ ভাই যে! কখন আসলেন?
–বেশ কিছুক্ষন আগে।
ইভানা বলল, আপনি বসেন আমি আপনার জন্য গরুর মাংস আর পরোটা আনছি।
–আজকে না ইভানা। অন্য কোন দিন।
—কিন্তু কেন?
–ভালো লাগছে না। অন্য আরেকদিন৷
ইভানা আর জোড় করল না। সে তার রুমে চলে গেল। রোদেলা ও বাবুকে নিয়ে ড্রয়িং থেকে চলে গেল।
রোদেলা যেই না আবেগের রুমে গিয়ে ঢুকবে ওমনি জাবেদা খাতুন এসে তাকে আটকিয়ে বলে, আমার ছেলেটাকে একটু শান্তিতে আরাম করতে দাও। তুমি অন্য রুমে গিয়ে বস।
রোদেলা একথায় আহত হলো। তার এই সময় আবেগের পাশে থাকতে মন চাচ্ছে। কিন্তু মামীর অবাধ্যতা না করে সে বারান্দায় গেল।
বারান্দায় যেতেই চোখ পড়ল একটা পুলিশের জীপ এসে থেমেছে তাদের বাসায়৷ তার কিছু সময় বাদে বেল বেজে উঠল।
রোদেলা বারান্দা থেকে শুনতে পেল মেঘ ভাইয়া কে একজন বলছে, ডাক্তার ইশরাক রহমান কোথায়? ওনার বিরুদ্ধে কেস ফাইল করা হয়েছে৷
রোদেলা মনে মনে বলে, ইশরাক রহমান তো আবেগের ভালো নাম।
চলবে।
[ আজকে আমরা দশম পর্বে চলে এলাম। তাই আজকে রাতে যদি বোনাস দিই কে কে পড়বেন বা কে কে চান যে আজকে বোনাস দিই? আপনারা পড়তে চাইলে দিব। ]
চলবে।
[ এই মেঘ আর প্রাচুর্যটা আবার কে? ]