আবছায়া পর্ব ৩১+৩২

আবছায়া
writer::প্রিয়া
৩১
আপনার শরীরে বেল্টের দাগগুলো কি আপনার স্বামীর আঘাতের চিহ্ন।
আপনার স্বামীকে আমার কেমন জানি শয়তান শয়তান মনে হয়।

-শয়তানকে তো শয়তান মনে হবে তাই না নার্স।
কথাটা বলেই দরজার দিকে তাকাতে দেখে আইজান দাঁড়িয়ে আছে।

নার্স আইজানকে দেখা মাত্রই বললো।
আপনার ওয়াইফকে নিয়ে কেবিনে যান।ডাক্তার এসে চেক করবেন।

আইজান ওয়ার্ডবয় ট্রলিতে করে ইনায়াকে রুমে নিয়ে আসলো।
কেবিনে ডুকে ইনায়া চারিদিকে খুঁজছে ওর ছেলেকে।
আইজানকে জিজ্ঞাসা করছে না কেবল ছটফট করছে।
ওয়ার্ডবয় চলে যেতেই আইজান এসে ইনায়ার বেডের পাশে বসলো।

-তোমার ছেলেকে খুঁজছো না কি।বিকেলে তোমার মা-বাবা আসছে উনাদের যদি কিছু বলো তাহলে জীবনে ও বাচ্চার মুখ দেখবে না।

‘আমার ছেলে কোথায় আমি ওকে দেখবো প্লিজ একবার দাও আমার ছেলেকে।

-চিন্তা নেই ছেলে ভালো আছে ২সপ্তাহ পর ওকে দেখতে পাবে।

অনায়াসে ইনায়া শ্বশুর শাশুড়ি আইজানের সবার নামে হাজারটা মিথ্যে বলে গেলো।
ইনায়ার মা-বাবা অনেক খুশি যাওয়ার সময় আইজানকে খুঁজতে করিডোরে গেলেন।
আইজান তখন ফোনে কথা বলছিলো কারো সাথে।

-আরে দোস্ত আমি বাবা হয়েছি বুঝতে পারছিস পৃথিবীর সবচাইতে খুশী আজ আমি। কিন্তু জানিস খুব প্রবলেমে পরে গেছিরে৷ ইমিডিয়েটলি ৫০হাজার টাকা লাগবে। জানিস তো আমার কাছে সব ফুফির টাকা।
ফুফি দেশে নেই না জানিয়ে উনার ১টাকা ও খরচা করতে পারি না। তুই আমায় কিছুদিনের জন্য ধার দে আমি কিছুদিন পর দিয়ে দিবো।
কাঁদো কাঁদো গলায় আইজান বলছে।
-আমার ছেলেটা এখনো পুরোপুরি শঙ্কা মুক্ত না প্রতিদিন করে হসপিটাল বিল বাড়ছে।
আজ বুঝতে পারছি অন্যের টাকা কিছু না নিজেকেই কিছু করতে হবে।আমার সন্তান আমার ইনায়ার জন্য দোয়া করিস।আর টাকার ব্যবস্থা হলে জানাস।

চোখ মুছছে বসে বসে।

ইনায়ার বাবা ওর মাকে বলছেন আজ আমার আগের অবস্থা থাকতো তাহলে জামাই বাবার এই অবস্থায় পাশে দাঁড়াতে পারতাম।

-আমার কাছে যা আছে তাই না হয় দিলাম।

আইজান চোখ মুছে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখে ইনায়ার মা-বাবা দাঁড়িয়ে আছে।

-বাবা মা এখানে আপনারা।

“চলে যাচ্ছি তাই তোমাকে বলতে আসলাম।বাবা তোমার এই দূর দিনে কিভাবে যে তোমাকে সাহায্য করবো।মেয়েটা তো আমার কিন্তু।

-না না বাবা লজ্জা দিবেন না আসলে ফুফিমা কে ফোনে পাচ্ছিনা তাই টাকা ম্যানেজ হচ্ছেনা। উনি ফোন করলে টাকা পেয়ে যাবো।
উনার নাতনীর বিয়ে তাই হয়তো ঝামেলায় আছেন।

ইনায়ার মা গলা থেকে চেইন খুলে আইজানের হাতে দিলেন।
-বাবা এই চেইন বিক্রি করলে ৫০হাজারের মতো পাবে আপাতত এই বিপদ থেকে তো রক্ষা পাবে।

‘না মা ছিঃ ছিঃ আপনার চেইন আমি বিক্রি করে দিবো।তা হয় না মা আমার সন্তান বউয়ের জন্য নিজের কিডনি বিক্রি করে দিবো দরকার হলে।

-মায়ের কথা শুনতে হয় বাবা এটা রাখো। পরে না হয় ফেরত দিয়ে দিও।

‘লজ্জায় পেলে দিলেন। যদি ইনায়া জানে কি ভাববে বলুন তো।

*কিসের লজ্জা বাবা ইনায়া যেমন আমাদের সন্তান তুমি ও আমাদের সন্তান।আর আমরা কেউ এসব ইনায়াকে বলবো না।

ইনায়ার মা -বাবা চলে যেতেই আইজান শয়তানের মতো হাসি দিলো।
-মেয়ে যেমন বোকা তেমনি মা-বাবা হা হা হা।
ইনায়া জানতে ও পারলো না আইজান ওর মা বাবাকে বোকা বানিয়ে চেইন ছিনিয়ে নিলো।

দু-সপ্তাহ পর ইনায়া আর বাচ্চাকে নিয়ে বাসায় যাওয়া হলো।
আকিকা করে ওর নাম রাখা হয়েছে মারজান।

আইজানের ফুফি ফোন দিয়ে বাচ্চা হওয়ার খবর জেনে অনেক খুশি হয়েছেন।
ইনায়ার সাথে কথা বলছেন পাশে ওর শাশুড়ি আর আইজান বসা।
এমনভাবে বসে আছে যেনো ভুল কিছু বললেই ওর গলা কেটে দিবে।

আমতাআমতা করে ফুফির কথার উত্তর দিলো ইনায়া।

আজকাল আইজান বাসায় থাকছে সারাদিন বারান্দায় বসে থাকে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে।
ইনায়া পুরো বেড রেস্টে আছে ওর শাশুড়ি খাবার রুমে দিয়ে যান।

দেখতে দেখতে আইজানের ১মাস পূর্ণ হলো।ইনায়া এখন অনেকটা সুস্থ ঘরের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
শাশুড়ী আর পারবেন না অনেক সেবাযত্ন করেছেন বউয়ের।

দুপুরের রান্না শেষ করে রুমে যেতেই নিলে ইনায়া দেখে তাড়াহুড়ো করে আইজান রুমে ঢুকছে।আইজান এসেছে দেখে ইনায়া কফি বসালো এই সময় আইজান কফি খেতে পছন্দ করে।

কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে গেলো ইনায়া।
আইজান ওয়াসরুমে নেই দেখে বারান্দায় গেলো।
আইজান অপরপ্রান্তে থাকা বাসার বারান্দার মেয়েটার সাথে ইশারায় কথা বলছে।
ইনায়া ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই চমকে উঠলো।

-এখানে কি ডাকতে তো পারতে।

‘তোমার কফি।

-আমি কি বলেছি কফি দিতে যাও রুমে যাও।

ইনায়া তাকিয়ে দেখে ওইপাশের বারান্দার মেয়েটা আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ইনায়া হুট করেই আইজানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
আইজান ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ইনায়া ছাড়ছে না।বরং আরো বেশি করে আকঁড়ে ধরছে।
আইজান বারবার ওই বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে ইনায়া লক্ষ্য করে দেখলো ওই মেয়েটা রাগে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ইনায়া আইজানকে ছেড়ে রুমে চলে আসলো।আইজান পাগলের মতো রুমে এসে ভাঙচুর করছে বাচ্চাটা কান্না শুরু করে দেয় শব্দ পেয়ে।
ইনায়া মারজানকে কোলে নিতে চাইলে আইজান ইনায়াকে খাটে পেলে দেয়।

-খুব শখ আদর পাওয়ার ইচ্ছে করছে তাই না।চল তোকে আদর করি।

‘এমন করো না আইজান আমার সেলাই এখনো শুকায়নি প্লিজ ছেড়ে দাও।

-তুই এমন করলি কেনো আমি ওই মেয়েটার সাথে কথা বলছি তা দেখে তোর এতো পুড়ে কেনো।

‘তুমি আমার স্বামী আমার বাচ্চার বাবা তোমাকে সঠিক পথে আনা আমার দায়িত্ব।

-তোর দায়িত্বে আমি লাথি মারি।মনে রাখিস পরের বার আমি কোনো বিষয়ে নাক গলাবি না।

‘তুমি যতোবার খারাপ কাজ করবে আমি ততোবার তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো তোমাকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনবোই।

-মুখে মুখে কথা বলিস মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিবো।

‘দাও একদম মেরে দাও মরে যাই এই নরক যন্ত্রণা থেকে।

-নরক যন্ত্রণায় আছিস তাই না এবার বুঝবি নরক যন্ত্রণা কাকে বলে।
আইজান ইনায়াকে ছেড়ে উঠে গিয়ে মারজানকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
– আমার ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।

রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরের দিকে লক করে দরজা বন্ধ করে আইজান। ইনায়া ঘরের ভিতর থেকে চিৎকার করছে।
-আমার ছেলেকে দিয়ে যাও প্লিজ।

কারো সাড়াশব্দ নেই।কিছুক্ষণ পর থেকেই মারজান কান্না করছে ওর খিদে পেয়েছে।
রুমে কাছে ওকে নিয়ে বসে আছে আইজান। ছেলের কান্না শুনে ইনায়ার ভিতর ফেটে যাচ্ছে।

রুমের দরজা খুলে দিতেই ইনায়া মারজান কে
কোলে নিয়ে হাজারটা চুমু দেয়।রুমে গিয়ে ছেলেকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
ছেলের পাশে নিজে ও ঘুমিয়ে থাকলো।

**আইজানের হাজারটা দোষ মুখ বুঝে সহ্য করে নেই ছেলের দিকে তাকিয়ে।
এ বাড়িতে এখন কাজের লোক নেই সবার জামা-কাপড় কেচে দেয়া রান্নাবান্না ঘর মোছা সবগুলোই একা হাতে সামলাতে হয় ইনায়াকে।
নিজের কাছে একটা ফোন পর্যন্ত নেই।এদিকে আইজানের ফুফি মাসে মাসে ইনায়াকে ওর বাচ্চাকে টাকা পাঠাচ্ছেন।

*তিনমাস পর থেকে মারজান বুকের দুধ খেতে চায় না।ডক্টর দেখিয়ে দুধ নিয়ে আসা হয়ছে।আজ তিনদিন হলো দুধ শেষ হয়ে গেছে।
অনেক বলার পর ও আইজান নিয়ে আসে না।ওর না কি মনে থাকে না।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
৩২
ঘরে বাচ্চার দুধ নেই এদিকে সেলাইয়ে প্রচুর ব্যথা করছে ইনায়ার।
কাপড় ধুইতে গিয়ে কোমরে ও ব্যথা করছে। এই সিজার যেনো ওকে অর্ধেক মৃত বানিয়ে রেখেছে।

রুমে এসে মারজান কে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। মারজান ও বড্ড জেদি খাবে না তো খাবেই না।
ইনায়া রাগে এইটুকু ছেলেকে থাপ্পর দিয়ে বসে।ছেলের কান্না দেখে আবার নিজে ও কাঁদে।

হঠাৎ মনে হলো ওদের কাজের মেয়ে গল্প করতো বাচ্চাকে ভাতের মার খাওয়ানোর।এই কথা মনে হতেই ইনায়া চুলায় গিয়ে ভাত বসায়।
ভাতের মার ঢেলে রুমে নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা করে।
চামচ দিয়ে অল্প অল্প করে মুখে দিচ্ছে দু বার মুখে নেয়ার পর ঠোঁট গুলো চেপে ধরে আছে আর খাবেনা।

ইনায়ার এবার বেশ রাগ হলো ধপাস ধপাস করে কয়েকটি থাপ্পর দিলো।
-তোর মায়ের সামর্থ্য নেই তোকে দুধ কিনে খাওয়ানোর।
তুই বুঝিস না কেনো বাপ।

বাচ্চাটা কান্না বন্ধ করে একসময় ঘুমিয়ে যায়।
ইনায়া ওয়ারড্রব খুলে টাকা খুঁজতে থাকে আর না অনেক হয়েছে এবার নিজেকে কিছু করতে হবে।

আইজানের ওয়ালেট দেখতে পেলো হাতে নিতেই চোখে পড়লো ওয়ালেটের নিচে একটা গিফট বক্স। রেখে দিতে গিয়ে খুলে দেখার ইচ্ছা হলো।বক্স খুলে চোখে পড়লো কাগজে মোড়ানো কি যেনো।

কাগজ খুলেই দেখতে পেলো চেইন চিনতে বেশি সময় লাগেনি ওর মায়ের চেইন।
হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলো হ্যাঁ মায়ের চেইন তো।

কাগজের ভাজ খুলে পড়তে লাগলো সেই একি চিঠি যা আইজান ওকে লিখেছিলো।

জানো প্রিয় রূপসা
তোমাকে দেখার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটা রাত ঘুমাতে পারিনি।
তোমার কাজল কালো টানা দুটো চোখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে।
আমার খুব ইচ্ছে জানো বর্ষার বিকেলে একগুচ্ছ কদম হাতে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, তোমার পড়নে থাকবে হলুদ শাড়ি। কদম গুলো এগিয়ে দিয়ে আমি বলবো তুমি কি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে।
লজ্জা রাঙ্গা মুখে আঙ্গুলে আঙ্গুল চেপে ধরে গোলাপি ঠোঁটে লজ্জার আভা ফুটিয়ে তুমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলবে।
মেয়ে আমার কল্পনার আকাশে তোমার বিচরণ,
হবে কি আমার প্রিয়তমা আগলে রাখবো সারাজীবন।
আমার পক্ষ থেকে এই সামান্য উপহার তোমার জন্য।জানি তুমি স্বর্ণের চাইতে ও দামি তবুও এই অধমের এই সামান্য ভালোবাসার উপহার গ্রহণ করো।
ইতি তোমার পাগল।

চিঠি পড়ে রাগে ইনায়ার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে।চিঠি ছিড়ে কুচি কুচি করলো তবুও শান্তি পেলো না এবার টুকরো গুলো নিয়ে চুলায় জ্বালিয়ে দিলো।

রুমে এসে পায়চারি করছে আইজানের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে এভাবে আর চলা সম্ভব না।
আল্লাহর এতো বড় দুনিয়ায় ইনায়ার আশ্রয়ের জায়গার অভাব হবে না। প্রয়োজন হলে বাবার কাছে গ্রামে চলে যাবে।

বাবার কথা ভাবতে ভাবতেই বাবা ফোন করলেন।

-জানিস মা আজ কি হয়েছে।

‘কি হয়েছে বাবা।

-তোর ভাই ইসহাক এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে।

-কি বলছো বাবা।

-হ্যাঁ রে ও ছোট্র একটা বাসা নিয়েছে।ওখানে আমাদের নিয়ে থাকবে।

‘যাক তাহলে ভালোই হলো।

-একটা ছেলে তো মানুষ হয়েছে রে।
তোর মায়ের সাথে কথা বল।

‘ইনায়া তোর বাবা খুব খুশি আজ উনার ছোট ছেলে উনাকে নিতে এসেছে।

-আমি খুব খুশি হয়েছি মা গ্রামে তোমাদের কষ্ট হচ্ছিলো এবার কিছু শান্তি পাবে।

ফোন রেখে ইনায়া ভাবছে ভাইয়ের কাঁধে বাবা-মা তার উপর যদি ও গিয়ে উঠে না ভাই সামলাতে পারবে না।

ভেঙে পড়লে চলবে না আজ আইজানের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবেই।

দুপুরের খাওয়া শেষ করেই আইজানের মা-বাবা বেড়িয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে।
উনারা চলে যাওয়ায় ইনায়া ভয় পাচ্ছে যদি আইজান ওর বাচ্চার ক্ষতি করে।

বিকেল পেরিয়ে যাচ্ছে আইজান ফেরার খবর নেই।

**অরিত্রি বারবার বমি করছে অরিত্রির এমন অবস্থা দেখে আবেগ পাগলপারা ।
তাড়াহুড়ো করে অরিত্রি কে নিয়ে হাসপাতালে যায়।চেকাপ করে জানতে পারে ওদের পরিবারে নতুন সদস্য আসতে যাচ্ছে।
দুজনেই মহাখুশি। সারা বিকেল ঘুরে ফেরার পর ওরা বাসায় ফিরে মিষ্টি নিয়ে। মা-বাবা অনেক খুশি বংশের প্রথম সন্তান আসতে চলেছে।

”আইজানের অপেক্ষা করতে করতে ইনায়া ঘুমিয়ে যায়।কলিংবেলের শব্দে ওর ঘুম ভাঙ্গে উঠে দরজা খুলে দেখে আইজান দাঁড়িয়ে।

-টেবিলে খাবার দাও ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ইনায়া কিছু না বলে খাবার বেড়ে দেয়।ফ্রেশ হয়ে আইজান খেতে বসে।
ইনায়া চুপচাপ উঠে গিয়ে মারজানকে কোলে করে অন্যরুমে রেখে আসে।

আইজান খাওয়া শেষ করে উঠে যায়।ইনায়া সব গুছিয়ে রুমে গিয়ে দেখে আইজান ওয়ারড্রবে পাগলের মতো কি জানি খুঁজছে।
ইনায়া বিদ্রুপের কন্ঠে বললো কি খুঁজছো এই চেইন।

আইজান তাকিয়ে দেখে ইনায়ার গলায় সেই চেইন।

-এটা তুমি পড়েছো কেনো।

‘আমার মায়ের চেইন আমি পড়বো না কে পড়বে তোমার রূপসা।

-হোয়াট ননসেন্স তোমার মায়ের চেইন মানে এটা আমার চেইন চুপচাপ খুলে দাও।

‘চোরের মায়ের বড় গলা। আমার মায়ের চেইন চুরি করে আবার বড় বড় কথা বলা হচ্ছে।

-আমি চুরি করবো কেনো তোমার মা আমাকে দিয়েছেন।

‘বাহ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি। তা আমার মা কে ভুলভাল বুঝিয়ে নিশ্চয় চেইন হাতিয়ে নিয়েছো।

-উনি মারজান কে দিয়েছেন।

‘মারাজান কে দিয়েছেন তোমার প্রেমিকা রূপসাকে না।

-আমার জরুরি কাজ আছে চেইন আর ওই চিঠি দাও।

‘চিঠি তো পুড়িয়ে দিয়েছে এই সেই চিঠি না যেটা আবেগ আমাকে লিখেছিলো যা তুমি ছিনিয়ে নিয়েছিলে।

-আমাকে অরিত্রি বলেছিলো চিঠিটার কথা এই চিঠি পড়লে তুমি প্রেমে পরে যাবে।আর অরিত্রি চায়নি তুমি আবেগের প্রেমে পড়ো। তাই আমাকে হেল্প করেছে তোমাকে পটানোর কাজে।

‘বাহ অরিত্রি ও আছে।আমার জীবন নিয়ে খেলার পিছনে কত মানুষের হাত।আফসোস ওরা সবাই আমার খুব কাছের।
ইনায়ার চোখ থেকে জলগুলো গড়িয়ে পরছে।

-চেইন দাও ন্যাকা কান্না বন্ধ করো।তোমার ছেলের না দুধ নেই যদি ছেলের জন্য দুধ আনাতে চাও তাহলে চেইনটা দাও।

‘জীবনে ও না আমার মায়ের পবিত্র গলার চেইন তোর মতো নষ্ট ছেলের হাতে তুলে দিবো না।

-বাড়াবাড়ি হচ্ছে আমি কি করতে পারি তুই জানিস।

‘কি করবি মারবি মার।

আইজান ইনায়ার চুলের মুটি টেনে ধরে।ইনায়া ও থেমে নেই পা দিয়ে আইজানের পায়ে জোরে লাথি মারে।
আইজান ইনায়াকে থাপ্পর দিয়ে খাটে ফেলে দেয়।
বেডের নিচে আগে থেকেই লুকিয়ে রাখা লাঠি বের করে আইজানের মাথায় আঘাত করে ইনায়া।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে আইজান।
বেড়ধক মারতে থাকে ইনায়া। আইজান লুটিয়ে ফ্লোরে পরে যায়।
আইজানের পায়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে ইনায়া। একসময় হাঁপিয়ে উঠে
লাঠি ফেলে দিয়ে আইজানের পাশে বসে পরে ইনায়া।
আইজানের মুখের দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে।
-তোকে খুব ভালোবেসে ছিলাম কত শত স্বপ্ন সাজিয়ে তোর বউ হয়ে এসেছিলাম।আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলি।
তোকে ভালো পথে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম।
দেখ সেই আমি নিজেই কত খারাপ হয়ে গেছি স্ত্রী হয়ে স্বামীকে আঘাত করেছি।
স্বামী চরিত্রের আড়ালে তুই একটা লম্পট তোর মতো ছেলেরা সমাজের অভিশাপ । তোকে খুন করলে হয়তো বেঁচে যেত হাজারো মেয়ে।
কিন্তু তোকে খুন করে আমি খুনি হয়ে আমার সন্তানকে খুনির সন্তান বানাতে চাই না।
আইজানের ফোন হাতে নিয়ে ভেঙ্গে অনেক টুকরো করে সিম কার্ড বের করে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে পেলে রেখে যায় ইনায়া।

আইজানের মুখের উপর থুঁ থুঁ ছিটিয়ে বেড়িয়ে যায় ইনায়া।
পাশের ঘর থেকে ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমায় অজানা পথে।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here