আবছায়া পর্ব ৩৩+৩৪

আবছায়া
Writer::প্রিয়া
৩৩
সন্ধ্যে হয়ে গেছে দুধের বাচ্চাকে নিয়ে এবার কোথায় যাবে ইনায়া।
হন্নে হয়ে চারপাশে হাটছে পরিচিত কেউ নেই যার কাছে সাহায্য চাইবে। তবুও হাটছে কি করবে কোথায় যাবে কিচ্ছু জানেনা।

রাত যতো ঘনিয়ে আসছে ইনায়ার ভয় বেড়ে যাচ্ছে।এদিকে মারজান কিছুক্ষণ পর পর কান্না করছে।
কোথাও বসে ছেলেকে খাওয়াবে সেরকম জায়গা ও খুঁজে পাচ্ছে না।

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে বিপদ আসলে চারিদিক থেকেই আসে।
ছোট ছাউনির ভিতর ছেলেকে নিয়ে বসে আছে ইনায়া। ছেলে শান্ত বাচ্চার মতো দুধ খেয়ে নিচ্ছে।

*কয়েকটা বাজে ছেলে হুট করে ছাউনির ভিতর চলে আসে। ইনায়া অপ্রস্তুত হয়ে যায় কি করবে ওরা খুব বাজে ইঙ্গিত করছে।

-আজকাল কি বাচ্চা কোলে নিয়ে ও ব্যবসা করছো না।

‘দেখতে কিন্তু বহুত হেব্বি।

‘এক রাতের জন্য রেট কতো।

ইনায়া উঠে দাঁড়াতেই ছেলেগুলো পিছন থেকে ওড়না টেনে ধরলো।
ওহে সুন্দরী চলো না আমাদের সাথে।

ইনায়া নিজের ইজ্জত সন্তান বাঁচাতে প্রাণপণে দৌড় শুরু করলো।
পিছনে ছুটে চললো বখাটে গুলো।ওড়না ফেলে দিয়ে এবার দৌড়ালো।

কিছক্ষণ পর একটা বাসার গেইটে ঢুকে গেলো।ছেলেগুলো আর খুঁজে না পেয়ে চলে গেলো।
ইনায়া গেইটের পাশে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর একটা গাড়ি বের হতে চাচ্ছিলো তখনি ইনায়া গাড়ির সামনে চলে যায়।

-প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করুন।আজকের রাতটা শুধু আমাকে এই বাসায় থাকতে দিন।
গাড়ির দরজা খুলে আবেগ বেড়িয়ে আসলো।দুজনেই এরকম অবস্থা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।

আবেগ শকড খেলো কিন্তু ইনায়া ছুটে বাইরে আসতে চাইলো।তখনি আবেগ পিছন থেকে ওর হাত টেনে ধরে।

-তুই এই অবস্থায় কেনো এটা তোর বাচ্চা। কি হয়েছে ইনায়া আমাকে বল।

‘কি বলবো তোকে তুই ও তো সবার মতোই স্বার্থপর।

-আমি তোকে সব বলবো প্লিজ আগে তুই বল আইজান কোথায় আর এই রাত-বিরেতে বাচ্চা কোলে নিয়ে তুই আশ্রয় খুঁজছিলি কেনো।

‘যাওয়ার জায়গা নেই আমার সব হারিয়ে ফেলেছি মরেই যেতাম এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে।কিন্তু আমার ছেলের জন্য বেঁচে আছি।

-প্রলাপ বকছিস কেনো সব খুলে বল।আয় ভিতরে আয়।

‘তোর বাসায় আমি যাবো না আবেগ। আমি রাস্তায় থাকবো দরকার হলে।

-প্লিজ ইনায়া চল এইটা আমার বাসা না এইটা আমাদের বাংলো আজ পার্টি ছিলো তাই সবাই এসেছে।ওরা চলে গেছে আমি সব গুছিয়ে এখন যাচ্ছিলাম।

‘তুই চলে যা আমি চলে যাচ্ছি।

-এক থাপ্পরে আমি তোর দাঁত ফেলে দিবো চল বাসায় চল।

আবেগের রাগ দেখে ইনায়া চুপচাপ বাসার ভিতর চলে যায়।
-নিশ্চয় কিছু খাসনি তুই বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।

‘আমি কিছু খাবো না। তুই শুধু আমার ছেলের জন্য দুধ নিয়ে আয়।
ইনায়াকে রেখে আবেগ বাইরে যায় সেখান থেকে খাবার নিয়ে আসে।

মারজানকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।এতোদিনে ছেলেটা পেট ভরে খাইছে।

-তুই খেয়ে নে।

‘খিদে নেই।

-ইনায়া জেদ করিস না তোর জন্য বিফ বিরিয়ানি এনেছি প্লিজ খা।তোর না ফেভারিট খেয়ে নে।

‘ইনায়া হাত-মুখ ধুইয়ে খেতে বসে।
খাবার যেনো গলা দিয়ে নামছে না জীবন এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে কল্পনা করেনি।
চোখের জল মুছে খেয়ে নিলো।

রুমে এসে বসে আছে আবেগ দু কাপ কফি বানিয়ে ওর রুমে আসে।

-নে কফিটা খেয়ে নে মাথা ফ্রেশ হবে।

ইনায়া উঠে বসে কফির মগ হাতে নিলো।কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো।
-তুই বাসায় যাবি না।

‘না বাসায় ফোন করে বলে দিয়েছি ওরা টেনশন করবে না।

-তোর বাসায় যাওয়া উচিত এভাবে এখানে থাকলে অরিত্রি রাগ করবে।

‘আরে ধুর রাগ করবে না।
ইনায়া এবার বল তোর সাথে কি হয়েছে।

‘এসব জেনে আর কি করবি সব ভাগ্য আমার কপালের দোষ।

-ইনায়া বলনা কি হয়েছে প্লিজ বল।

ইনায়া আবেগ আনায়ার শুরু থেকে আইজান ওর সাথে যা যা করেছে সব বলছে এক এক করে।

আবেগ নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করছে।

ইনায়া সবকিছু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

-তোর পুলিশে যাওয়া উচিত ছিলো।

‘কিভাবে যেতাম বাসা থেকে বের হলেই ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলতো।

‘তুই যেভাবে মেরেছিস বললে ও কি বেঁচে আছে।

-মরেনি আসার সময় শ্বাস চলছে দেখি আসছি।

‘ওরা কেস করলে পুলিশ তোকে খুঁজে বের করবে।

-কিছুদিন কোথাও লুকিয়ে থাকবো।

‘তুই লুকাবি কেনো পুলিশের কাছে গিয়ে সব বলে দিবি।

-আমার ছেলের ক্ষতি করবে ওরা আমি পারবো না।

-তাহলে তুই এখানেই থাক আমি সব ব্যবস্থা করবো।

‘এখানে থাকা ঠিক হবে না।

-বেশী বুঝিস না তো।কিছুদিন পর আংকেল আন্টিকে সব খুলে বললে ওরা বুঝবে।
এরমধ্যে আমি তোর চাকরির ব্যবস্থা করে দিবো।মারজান কে নিয়ে তোর কারো ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে হবে না।

-এতো কিছু কেনো করবি।

‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত। জানিস ইনায়া আমি আনায়াকে ভালোবাসতাম না।ও যা করেছে সব নিজের প্লান অনুযায়ী।

-আমি সব জানি।আচ্ছা তুই যা আমি একটু ঘুমাবো।

ইনায়া পুরোনো কথা মনে করাতে চায়নি।তাই কৌশলে ঘুমানোর কথা বলে এড়িয়ে গেলো।

আবেগ উঠে ড্রইংরুমে চলে গেলো।দারোয়ান কাছ থেকে সিগারেট আনলো।
সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ভাবলো আজ যদি অরিত্রি ওর জীবনে না থাকতো তাহলে ইনায়াকে নিজের করে নিতো যেভাবে হোক।
ইনায়া সুখে থাকবে এজন্যই তো বিদেশে চলে গেছিলো নিজেকে ইনায়ার কাছ থেকে আড়াল করে।
সেই ইনায়ার এরকম পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছে না আবেগ।
একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে নিলো আবেগ।
ইনায়ার দরজার কাছে দেখছে মেয়েটা কত শান্তভাবে ঘুমিয়ে আছে।
খুব ইচ্ছে করছিলো ওর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়ার।

নিজের মনকে বুঝিয়ে রুমে চলে গেলো। সকালে ইনায়া বেডে থাকতেই আবেগ কফি আর দুধ বানিয়ে রুমে নিয়ে গেলো।
-হেই গুড মর্নিং উঠো উঠো কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।

ইনায়া উঠে ওয়াসরুমে গেলো আবেগ মারজানকে কোলে নিয়ে মুখ মুছিয়ে ফিডার মুখে দিলো।
মারজান দুধ খেয়ে নিচ্ছে।ইনায়া বাইরে এসে দেখে মারজান কি সুন্দর খেলা করছে আবেগের সাথে।ঠোঁট মুখ উল্টিয়ে কি যেনো বলতে চাইছে।
আবেগ আদর করছে ওর গালে ঠোঁটে।

ইনায়া একমিনিটের জন্য আবেগের জায়গায় আইজানের মুখ কল্পনা করলো।

আইজান চাইলে এরকম হতে পারতো কিন্তু আইজান সব শেষ করে দিলো।

-কি রে ফ্রেশ হয়ে এসেছিস আয় আয় কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

ইনায়া চুপচাপ কফি খেয়ে নিলো।

-দারোয়ান নাস্তা নিয়ে আসবে তুই খেয়ে নিস।আমাকে অফিসে যেতে হবে আমি তাড়াতাড়িই চলে আসবো।মারজানের খেয়াল রাখিস।
আবেগ অফিসে চলে গেলো।

এদিকে সকাল হতেই শশুর শ্বাশুড়িকে নাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো অরিত্রি।
কাল রাতে আবেগ ওকে ফোন দিয়ে ইনায়ার সব কথা বলেছে।পুরোরাত ঘুমায়নি অরিত্রি অজানা ভয় ঘিরে ধরেছে ওকে।
গাড়ি থেকে নেমে ছুটে যায় রুমের ভিতর ইনায়া তখন নাস্তা শেষ করে বসে ছিলো।

-অরিত্রি তুই এসেছিস।

ইনায়া অরিত্রিকে ধরতে এগিয়ে আসতে চাইলে অরিত্রি হাত দিয়ে আটকে দেয়।

-ইনায়া তুই কি চাইছিস।

‘আমি কি চাইছি আরু।

-তুই জানিস আবেগের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তা ও তুই আবেগের সাথে এক বাসায় রাত কাটালে।

‘তুই নেগেটিভ ভাবে ভাবছিস ও বন্ধু হয়ে শুধু বন্ধুকে সাহায্য করছে।

-তুই বন্ধু হয়ে আমার সংসার নষ্ট করতে চাইছিস।

‘কি বলতে চাস অরিত্রি।

অরিত্রি ধুপ করে ইনায়ার পায়ের কাছে বসে পড়লো।

-প্লিজ ইনায়া তুই চলে যা আমার অনাগত সন্তানের জন্য আমার সংসার ভাঙিস না।

‘তোর বাচ্চা হবে আরু।

-হ্যাঁ।

-খুব ভালো।

‘ইনায়া তোর পায়ে ধরি আমার আবেগের জীবন থেকে চলে যা।আমাদের সুখের সংসার নষ্ট করিস না।

-চলে যাবো রে চিন্তা করিস না।

‘আজকেই চলে যা আবেগ আসার আগেই চলে যা।

অরিত্রি কথাগুলো বলেই চলে যাচ্ছিলো তখনি ইনায়া পিছন থেকে ডাক দিলো।

-আরু।

অরিত্রি পিছন ফিরে তাকালো।

-তুই কি সুখী।

‘হ্যাঁ অনেক আবেগ অনেক ভালোবাসে আমায়।

-আবেগ কি সেদিন ও ভালোবাসবে যেদিন তোর প্রতারণার কথা জানতে পারবে।

‘ক ক কিসের প্রতারণা।

-আমি সব জানি।কিন্তু আমি তোর মতো না কাউকে ঠকানো আমার স্বভাব না।

অরিত্রি কিছু না বলে ছুটে বাইরে চলে গেলো।অরিত্রির পিছন পিছন ইনায়া ও বেড়িয়ে গেলো।এই একটা রাত ওর কাছে স্বপ্নের মতোই ছিলো।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
৩৪
অরিত্রি বেড়িয়ে যাওয়ার পর ইনায়া চলে গেলো।আবার অরিত্রি এসে গেইটের দারোয়ান কে কিছু টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বললো।যাতে আবেগ জানতেই না পারে ও এখানে এসেছিলো।

আইজান দু দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থা খুব একটা ভালো না।পা ভেঙ্গে গেছে মাথার ব্রেনে আঘাত লাগছে।
এই অবস্থায় হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানায় যে পুলিশ কেইস করার জন্য।
আইজানের মা পুলিশ কেইস করতে চাইলে ওর বাবা বাঁধা দেন।

ইনায়া শহরের ফুটপাত ধরে হাটছে কোলে মারজান ঘুমিয়ে।

আবেগ আজ সকাল অফিসের কাজ শেষ করে নিয়েছে।শপিংমলে গিয়ে নানা ধরনের খেলনা মারজানের জন্য অনেকগুলো নতুন কাপড় কিনে আনে।
সবকিছু নিয়ে অরিত্রিকে ফোন দিলো।

-তুমি আসছো।

‘না একটু দেরি হবে।তুমি অফিস থেকে বেড়িয়ে গেছো।

-মাত্র অফিস শেষ করেছি গাড়ি নিয়ে বের হবো তুমি চলো আসো ইনায়া তোমাকে দেখলে খুশি হবে।

‘হ্যা হ্যা আসছি।

আবেগ ফোন রেখে গাড়ি স্টার্ট করলো। মিনিট ১৫পরে বাসায় চলে আসে।
সারা বাড়ি খুঁজে ইনায়াকে পাচ্ছেনা তখনি অরিত্রি আসে।

-আবেগ ইনায়া কোথায় ডাকো ওকে কতদিন ওকে দেখিনি।

“আরু আমি ওকে খুঁজে পাচ্ছিনা।দাঁড়াও দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করে আসি।

আবেগ ছুটে বেড়িয়ে যেতেই অরিত্রি রিলাক্স হয়ে সোফায় বসে পরে।

-দারোয়ান চাচা কাল যে মেয়েটা রাতে ছিলো ও কোথায়।

”বাপজান মাইয়া তো তুমি বের হওয়ার পর চইলা গেছে।

-চলে গেছে মানে কোথায় গেছে ও।

”সেইটা তো জানিনা আমি অনেকবার জিজ্ঞাসা করছি বলে না।বাচ্চা কোলে নিয়ে চলে গেলো।

-ওহ মাই গড কোথায় গেলো।

আবেগ ছুটে আবার বাসার ভিতর গেলো।অরিত্রি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

-আরু ইনায়াকে পাওয়া যাচ্ছে না।

”হোয়াট কি বলছো আবেগ ইনায়া এই অবস্থায় কোথায় যাবে।

-বুঝতে পারছি না কাল রাতে তো সব ঠিক আছে।আজ সকালে কি এমন হলো যে না বলেই চলে গেলো।

অরিত্রি বিলাপ করে কান্না শুরু করে দেয়।আবেগ ওকে স্বান্তনা দিচ্ছে।
কি করবে বুঝতে পারছেনা অরিত্রিকে নিয়ে বাইরে আসে।

-অরিত্রি তুমি তোমার গাড়ি নিয়ে বাসায় যাও।আমি দেখছি কোথাও ইনায়াকে পাওয়া যায় কি না।

‘আমি তোমার সাথে যাবো আবেগ।

-প্লিজ আরু জেদ করো না।তোমার এই শরীরে জার্নি করা ঠিক করা হবেনা।

‘তুমি কথা দাও আমার ইনায়াকে ফিরিয়ে দিবে।

-আমি যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে বের করবো।তুমি প্লিজ এভাবে কান্না করে শরীরের ক্ষতি করো না।

-ঠিক আছে আমি বাসায় যাচ্ছি।

অরিত্রি গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে।আবেগ শহরের অলিগলি চারপাশে ইনায়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর পর অরিত্রি ফোন দেয় তাই আবেগ ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দেয়।

ইনায়া একটা কনভারসেশন সেন্টারে গিয়ে দেখে বিয়ে হচ্ছে।বাচ্চাটা প্রচুর কান্না করছে এদিকে দুপুর হয়ে গেছে ইনায়ার ও খিদে লাগছে।
সেন্টারের একপাশে গরীব মিসকিন দের খাবার দেয়া হচ্ছে ইনায়া মাথায় কাপড় দিয়ে সেখানে বসে রইলো।

মারজানকে দুধ খাইয়ে উঠে যেতে চাইলে তাকিয়ে দেখে প্লেটে ওকে খাবার দিয়েছি।
প্লেটের জ্বালা বড় জ্বালা মান ইজ্জত সব ভুলিয়ে দেয় ইনায়া ও খাবার খাচ্ছে।
তখনি খেয়াল করলো ওর বোন আনায়া গাড়ি থেকে নামছে বড়লোকি সাজসজ্জা।
গোল্ডেন গর্জিয়াস স্টোনের শাড়ি হাতে গলায় সোনার গহনা।ওর পাশে হাতে হাত রেখে পাবেল আর ও দুইজনেই সেন্টারের ভিতরে চলে গেলো।
ইনায়ার বেশ খুশি লাগছে নিজের বোনের এতো সুখ দেখে।

খাবার শেষ করে উঠে বাইরে চলে যায় আবার সেই ফুটপাত ধরে হাটা।রোদের মধ্যে হাটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এক নাগালে তুলো হাতে ধরে রাখলে কষ্ট হয় আর এতো একটা বাচ্চা ছেলে কোলে কোলে রাখতে ইনায়ার হাত ব্যথা হয়ে যায়।

বাজারের এক পাশে নিরিবিলি রাস্তার দেয়ালের উপর ছেলেকে শুইয়ে ওর পাশে বসে রইলো ইনায়া।
তখনি প্লাস্টিক খুঁজতে আসা বৃদ্ধকে চিনতে অসুবিধে হলো না ইনায়ার এ তো ওরই ফুফি পাবেলের মা।

-ফুফুজান তোমার এই অবস্থা কেনো।

‘কে তোর ফুফু আমি তোদের কেউ না।

-ফুফুজান ও ফুফুজান এখানে বসে কথা বলো।

‘তোদের সাথে কিসের কথা তোরা হচ্ছিস কাল নাগের বংশধর। তোর বোন আমার বাড়িতে আসার পরই আমার সুখের সংসারে আগুন লাগায়।

-আনায়া কি করেছে ফুফু।

‘তোর বইন আমার মাদকাসক্ত ছেলের সাথে পালাইয়া আসার পর আমার ছেলেটা পাল্টে যায় ও ভালো হয়ে যায়।আমি কত খুশি হয়ছিলাম তোর বোনের উপর।এই দুনিয়ায় তো আমার একটাই ছেলে তাই না।

-সেটা তো ভালো খবর ফুফু।

‘সেটা তো ভালো ছিলো রে।তারপর তোর বোন আমারে বললে পাবেল কে ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিতে।তোরা ফুফাজানের টাকা তুলে ওর ব্যবসা খুলে দেয়।
সব ভালোই চলছিলো একটার জায়গায় আমার ছেলে তিনটি দোকান খুলে আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়।
তারপর ব্যবসায় লোকসান হয়ছে বলে আমার ব্যাংকের জমা টাকা সব নিয়ে যায়।
বাড়ি নিজের নামে করে নেয় তোর বইন আমারে চাকরানী বানিয়ে রাখে।
আমার ছেলেটা আমারে দেখতে পারেনা।এতোকিছু সইতে পারিনা চলে আসছি বাড়ি ছেড়ে বস্তির পাশে একটা ছোট টিনের ঘরে থাকি প্লাস্টিক বিক্রি করে যা টাকা পাই সেই টাকা দিয়া দু বেলা খাই আর মরণের অপেক্ষা করি।

ইনায়া ওর ফুফুর কথা শুনে কান্না করে উনাকে জড়িয়ে ধরে।
ফুফু পাপ নিজের বাপকে ছাড়েনা আনায়ার পাপের শাস্তি আমার মা-বাবা পাচ্ছেন বড় ভাইয়া সব নিজের নামে করে বাবাকে পথে বসিয়ে দিয়েছেন।আর এই দেখো আমার স্বামী সংসার সব থাকার পরে ও এখন আর কিচ্ছু নাই।

-কি বলছিস ইনায়া।

ইনায়া ওর ফুফুকে সব খুলে বলে।দুজনেই কান্না করে নিজেদের কষ্টের কথা শুনে।

-তুই আমার চল এভাবে তোরে রাস্তায় ঘুরে ফিরতে হবে না।আমি প্লাস্টিক কুড়িয়ে যা পাবো তাই দিয়া ফুফু ভাইঝির চলে যাবে।

‘না ফুফু তা কি করে হয় এই বয়সে তুমি এসব কাজ করবে আর আমি তোমার ঘাড়ে বসে খাবো।

-তুই শিক্ষিত মেয়ে চাকরি পেয়ে যাবি তখন আমি নানাভাইরে সামলাবো তুই চাকরি করবি ঠিক আছে।

-কিন্তু ফুফু।

‘আর কিন্তু বলিস না মাইয়া শেয়াল শকুন রাস্তাঘাটে ঘুরেফিরে সুযোগ পেলেই কামড় বসিয়ে দিবে।তার চাইতে চল আমার সাথে।

ইনায়া ওর ফুফুর সাথে উনার টিনের প্রাসাদে গেলো দুই রুমের একটা ঘর রান্নাঘর আর শোবার ঘর।

-জানিস এই ঘরের ভাড়া দিতে হয়না মালিক খুব ভালা আমারে অনেক শ্রদ্ধা করে যেদিন উনি আসেন আমার জন্য অনেক বাজার নিয়া আসেন।

আবেগ কোথাও ইনায়াকে না পেয়ে গাড়িতে উঠে মাথায় হাত রেখে বসে রইলো।
ফোন হাতে নিয়ে দেখে অরিত্রি এবং বাড়ি থেকে অনেক কল।
বাবার নাম্বারে ফোন দিলো উনি সাথেসাথে রিসিভ করে বলে উঠলেন।
-তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় হাসপাতালে।

‘হাসপাতালে কেনো বাবা ।

-বউমার এক্সিডেন্ট হয়েছে তুই দ্রুত আয় বাবা।

আবেফ ফোন রেখে ছুটে চললো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here