আমার সংসার পর্ব ২০

আমার_সংসার
.
.
Part:20
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
সিফাত জান্নাত কে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ছুটে গেলো মেয়ের কাছে।জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু দিতে লাগলো।চোখের কোনে জল জমেছে সিফাতের।মেয়েকে হারানোর। সে যে বরাবরই হাড়িয়ে ফেলছে সবাইকে।খুব ভয় পেয়েছে সিফাত।যদি সিনহার মতো জান্নাতও হারিয়ে যায় তবে সে কি নিয়ে বাঁচবে। তার একমাত্র অবলম্বন হলো জান্নাত।অনেকটা সময় জড়িয়ে ধরে থাকার পর সিফাত জান্নাত কে নিজের থেকে সামনে নিয়ে এলো।
– “কোথায় গিয়ে ছিলে তুমি আমাকে না বলে?
– ” কোথাও যায়নি তো পাপ্পা আমিতো এখানেই ছিলাম।
– “এখানে ছিলে তো আমি পেলাম না কেন তোমায়,জানো কতো খুজেছি আমি তোমায়?
– ” আমার স্কুলের আন্টির কাছে গিয়েছিলাম তো আমি।
– “কে সে,কোন আন্টির কথা বলছো,অযথা কার পিছু গিয়েছিলে আর কেনো গিয়ে ছিলে?
– ” আমার বার্থডে তে ইনভাইট করতে,দেখো সে আমায় চকলেট দিয়েছে।
বলে জান্নাত চকলেট গুলো দেখাতে লাগলো সিফাত কে।
– “কোথায় সে তোমার আন্টি?
– ” ঐ তো ঐখানে বলে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো জান্নাত।
সিফাত তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে চলে যাচ্ছে।কে দেখার জন্য এগিয়ে গেলেও সিফাত আর পেলো না মেয়েটিকে।মেয়েটি তার নাগালের বাহিরে চলে গেছে।
.
সিফাত আর জান্নাত কেনা কেটার পর বাড়ি ফিরে চলে আসে।বাবা,মেয়ে,আর দাদী মিলে নানা রকম গল্প খুনশুটিতে মেতে উঠে। ওদের সংসার টা বেশ ভালোই চলে।তবুও সিফাত একটা শুন্যতা অনুভব করে।সেটা আর কিছু নয় সিনহার শুন্যতা। কতোদিন সে সিনহা কে ছাড়া আছে।কতো কষ্ট জমানো ব্যাথা তাকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তার এই নিঃশব্দ আর্তনাদ কেউ শুনতে পায় না। শুধু ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।নিকোটিনের ধোয়াই কষ্টগুলো উড়ানোর বৃথা চেষ্টায় মেতে উঠে সে।নিকোটিনের ধোয়ায় কি সত্যই কষ্টগুলো উড়ানো যায়।কখনোই না হয়তো সাময়িক প্রশান্তি পাওয়া যায় এর বেশি কিছু নয়।নিকোটিনের ধোয়া সাময়িক ভাবে মানুষের মন থেকে কষ্ট টা ভুলিয়ে দিতে পারে কিন্তু মুছে দিতে পারে না।নেশা কেটে গেলে কষ্ট পুনরায় ফিরে যেমন তার অবস্থান ছিলো হয়তো তার থেকেও বিকট আকার ধারন করে।
.
ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে সিফাত একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে।আজ সিনহার কথা বেশিই মনে পড়ছে তার কারন কাল জান্নাতের বার্থডে।৫ টা বছর হয়ে যাচ্ছে জান্নাত আর সে একা সিনহা নেই ওদের সাথে। ৫ বছর আগেও আজকের তারিখে সিনহা ছিলো অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তার কাছে।জান্নাতকে জন্ম দেওয়ার পরই চলে গেলো।ভালোবাসার টানে।প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিলো সে।একবারো সন্তানের কথা চিন্তা করলো না কেনো সিনহা তুমি কি মা নও।মায়ের মন তো এমন হয় না।সন্তানের প্রতি কি তোমার কোনো মায়া নেই।নাহ কার কথা ভাবছি আমি একটা ঠক প্রতারকের কথা আমি ভাববো না বলেই দেয়ালের সাথে হাত একটা বারি দিলো।কাধে কারো ছোয়া অনুভব করলো।তাকিয়ে দেখে ওর মা।
– “আর কতো বাবা?
– ” কি আর কতো মা?
– “আর কতো নিজেকে এভাবে কষ্ট দিবি ওকে মনে রেখে।ভুলে যা ওকে।
– ” তোমায় কে বলেছে মা আমি কষ্ট পাচ্ছি, আর ওকে মনে রেখেছি।আমিতো সেদিনই ওকে মন থেকে বের করে দিয়েছি।
– “তাহলে তুই আমার কথা শুনিস না কেনো?
– ” আমি পারবো না মা।
– “কেন পারবি না তোর জিবনটা এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। নিজের ছেলের জিবন ে কষ্ট দেখলে কোনো বাবা মা ঠিক থাকতে পারে না।দেখ সিফাত তোর বাবা থাকলেও এই ডিসিশন নিতো।আজ ৫ বছর তোকে আমি একটা কথা বলে যাচ্ছি আর তুই কি না তোর কথাই স্থির আছিস।
– ” মা আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আমাকে দিয়ে হবে না।
– “কেনো হবে না বল,তুই নতুন করে জিবন শুরু কর বাবা সব অতীত ভুলে গিয়ে।
– ” আমি পারবো না মা,প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো । আমি চাই না আমার আর আমার মেয়ের মাঝে কেউ এসে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করে দিক।আমাকে আমার মেয়ের কাছে থেকে কেড়ে নিক।আমার মেয়ের ভালবাসা কমে যাক।
– “যাবে না বাবা কিছু কমে যাবে না।তুই তো ওকে অনেক ভালবাসিস, তোকে ওর কাছে থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আর আমি আছি না।এমন কোনো মেয়েকে বউ করে আনবো না যে আমাদের জান্নাত কে ভালবাসবে না।তাকেই বউ করে আনবো যে আমাদের জান্নাতকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসবে।
– ” সম্ভব না মা।আমি পারবো না।
– “এবার আর কোনো কথা শুনছি না কাল জান্নাতের বার্থডে তে তাদের ইনভাইট করেছি তারা আসবে।তাদের মেয়ে কে তুই দেখে নিস, তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।
-“মা শুনো আমি বিয়েটা করবো না ওদের আসতে বারন করে,,,,,পুরো কথাটা বলার আগেই সিফাতের মা চলে গেলো। এবার সিফাত কান্নায় ভেংগে পড়লো।সিনহার কথা আবারো ভাবতে লাগলো। সিনহার জায়গা সে অন্যকাউকে কিভাবে দিবে।পারবেনা সে।
.
আর এদিকে সিনহা বসে বসে ভাবছে সেইসব পুরোনো দিনের কথা।৫ বছর হয়ে গেছে সে সিফাতের কাছে থেকে দুরে চলে এসেছে নিজের সন্তানের কাছে থেকে দুরে সরে আছে।নিজের জন্ম দেওয়া সন্তান কে ছেড়ে থাকা যে কতোটা কষ্টের সেটা শুধু সেই মা বোঝে আর কেউ না।সিনহায় মনে হয় পৃথিবীর প্রথম মা যে সন্তান জন্ম দিয়েই যাকে সন্তান পরিত্যাগ করতে হয়েছে । সিনহা এই ৫ বছরে একটুও ভালো নেই। সিফাতের স্মৃতি গুলো বারবার ওর সামনে ভেসে উঠে।সেই নিষ্পাপ শিশুটার কান্নার আওয়াজ বাজতো তার কানে।মায়ের জন্য কাদছে জান্নাত,সিফাত কি করে সামলাবে ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে এটা ভেবে সিনহার ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে সিফাতের কাছে।কিন্তু পরক্ষনেই মনে করেছে সিফাত তো তাকে চায় না।আর বাচ্চা তো একা সামলাবে না ওর সাথে জারা থাকবে।নিজের সন্তানকে আজ সে অন্যের কোলে দিয়েছে।নিজের সংসার টা কে সে অন্যকে দিয়ে দিয়েছে।আমার বলতে আর কিছুই নেই এই দেহ আর প্রান টা ছাড়া।সিনহা ডুকরে কেঁদে উঠলো।একটা হাত সিনহার চোখের পানি মুছে সিনহার গলা জড়িয়ে ধরলো।
– “কাঁদছো কেনো মামুনি?
-” কই কাঁদছি না তো বাবাই,চোখে কি যেনো পড়লো।বলেই সিনহা চোখ মুছে ছেলেটিকে জড়িয়ে নিলো।
.
আমার একটা সন্তান দুরে আছে তো কি হয়েছে আরেকটা সন্তান তো কাছেই আছে।আমি বঞ্চিত হয়নি মা ডাক থেকে।আমার এক সন্তান কে ওদের কাছে দিয়েছি আরেক সন্তান আমার।আমার দুটো সন্তানই ভালো আছে হয়তো সুখে আছে।জান্নাত নামটাই কি রেখেছে সিফাত ওর। নাকি আমি নাম রেখেছি জন্য ঘৃনায় নামটাই রাখেনি।জানিনা কেমন আছে সিফাত আর আমার মেয়েটা।এইসব ভেবে চোখের জল মুছে ছেলেটাকে সামনে এনে বললো,
– “এখনো ঘুমাওনি কেন বাবাই?
– ” ঘুমিয়ে ছিলাম তো।
– “তাহলে এখানে আসলে যে?
– ” ঘুম থেকে জেগে দেখি তুমি পাশে নেই তাই আমি তোমার কাছে চলে আসলাম।
– “চলো ঘুমাবে।
-” না মামুনি আমার ঘুম আসছে না।ঘুমাবো না।
– “ও মা ছেলে বলে কি এখনো অনেক রাত বাকি।না ঘুমালে রাত কাটবে কি করে শরীর খারাপ করবে তো।
– ” করবে না শরীর খারাপ তুমি আমায় রাজকন্যার গল্প শোনাও।
– “শুনাবো একটা কথা শুনলে?
– ” কি কথা?
– “গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতে হবে,চলো শুবে চলো।
– ” হুম মামুনি।
অতঃপর সিনহা স্বপ্ন কে গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুম পাড়াতে লাগলো।
.
আর এদিকে জান্নাত মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে বাবাকে জোকার সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।সিনহা রুমটা যেভাবে সাজিয়ে রেখে গেছে ৫ বছরে সেরকমটাই আছে।এখনো ড্রেসিংটেবিলে ওর সাজুগুজুর সামগ্রী আলমারী তে জামাকাপড়,শাড়ী সবাটাই একই আছে।জান্নাত অত্যন্ত দুষ্টু হয়েছে।সবসময় দুষ্টুমি করে।সে সিনহার সাজুগুজুর জিনিষ গুলো দিয়ে সিফাত কে সাজিয়ে দিলো।লিপষ্টিক, কাজল টিপ।আর সিফাত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ছাদ থেকে অনেক রাতে রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।সে গভীর ঘুমে মগ্ন। এই ফাকে জান্নাত ওর দুষ্টু বুদ্ধি গুলো প্রয়োগ করছে।
.
to be continue……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here