আমার সংসার পর্ব ২১

#আমার_সংসার
.
.
Part:21
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
সিফাত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ছাদ থেকে অনেক রাতে রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে।সে গভীর ঘুমে মগ্ন। এই ফাকে জান্নাত ওর দুষ্টু বুদ্ধি গুলো প্রয়োগ করছে।
.
সকাল বেলা সিফাত ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় আয়নাতে নিজের মুখ দেখে নিজেই শকড।আয়নায় মুখ থেকে দু পা পিছিয়ে এলো।কে এটা।ভুত নাকি।তার চেহেরা এমন কেন দেখাচ্ছে আয়নাতে ভাবছে।মুখে হাত দিয়ে দেখে লিপস্টিক,কাজল।এগুলো দেখে সে ভাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।এগুলো কিভাবে এলো তার মুখে।ভাবছে।আর এদিকে জান্নাত জেগে আছে চোখ মিটি মিটি করে দেখছে আর হাসছে।আয়নাতে সিফাতের চোখ এড়ালো না। সে বুঝে গেলো জান্নাত এরকম করছে। সিফাত পিছু ফিরে তাকাতেই জান্নাত চোখ বন্ধ করে মিট মিট করে হাসতে লাগলো।মেয়ের হাসি মুখ দেখে নিমেষেই সব ভুলে হেঁসে দিলো সিফাত।
– “মামুনি,,,?
সিফাত জান্নাত কে ডাকলো।আর জান্নাত চোখ টিপ টিপ করছে আর হেসেই যাচ্ছে। কথা বলছে না।সিফাত আবারো জান্নাত কে ডাকলো।
– “মামুনি পাপ্পাকে জোকার বানাতে ভালো লাগে?
– ” পাপ্পা তোমায় এগুলো দিয়ে সাজালে আরো সুন্দর লাগবে তাই সাজিয়ে দিয়েছি।আয়নায় দেখো খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।
– “হুম লাগছে তো সুন্দর, অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু এগুলো তো আমার সাজগোজের সামগ্রী না।ছেলেরা এগুলো দিয়ে সাজে না মামুনি এগুলো মেয়েদের উপকরন । এই সামগ্রী গুলো দিয়ে বড় হলে তুমি সাজুগুজু করবে।
– ” পাপ্পা তাহলে এইগুলো দিয়ে আগে কে সাজুগুজু করতে,তোমার রুমে কেন এগুলো।মাম্মাম সাজুগুজু করতো এগুলো দিয়ে তাই না?
.
কথাটি শোনা মাত্রই সিফাতের বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো।নির্বাক হয়ে গেলো সে।সিনহাই তো ব্যবহার করতো এইসব সামগ্রী। সে চলে যাওয়ার পরও আগেই জায়গাতেই রেখে দিয়েছে।সবকিছু।সিনহা যেভাবে রেখে দিয়ে গেছে সেভাবেই রেখে দিয়েছে।জান্নাত আবারো প্রশ্ন করলো।
– “বলোনা পাপ্পা এগুলো আমার মাম্মামের ছিলো তাই না?
– ” হুম এগুলো তোমার মাম্মামের ছিলো।
– “পাপ্পা মাম্মাম এখনো আসছে না কেনো,তুমি তো বলেছিলে মাম্মাম আসবে,কবে আসবে পাপ্পা?
জান্নাতের কথায় সিফাত কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।সেই ছোটবেলা থেকে মেয়েকে আশা দিয়ে আসছে সিনহা ফিরে আসার।কিন্তু সে তো জানেই না সিনহা আদৌ ফিরবে কি না।তার এক মন বলে সিনহা ফিরবে আবার আরেক মন বলে সিনহা ফিরবে না।কারন সে তো তার ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে সংসার পেতেছে। তার সন্তানের কথা মনেই নেই তার।কথাগুলো ভেবে সিনহার প্রতি রাগ হয় সিফাতের।চোঝদুটো লাল হয়ে যায়।
– “পাপ্পা বলো না মা কবে আসবে?
– ” আসবে মা সময় হলেই আসবে,তুৃমি চলোতো ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করবো চলো চলো।
বলে জান্নাত কে সিফাত ফ্রেশ হতে নিয়ে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বাবা,দাদী আর জান্নাত ব্রেকফাস্ট শেষ করে,জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজালো।
.
সন্ধ্যাবেলা আমন্ত্রিত সবাই এলো জান্নাতের জন্মদিনে। এবং সেই সাথে এলো সিফাতের মায়ের কথা মতে সিফাতের বিয়ের জন্য মেয়ের পরিবার।
চারদিকে আলোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে বাড়িটা।আর জান্নাত কে তো সাদা ড্রেসে একদম প্রিন্সেস লাগছে।
.
আর এদিকে সিনহা তার ছেলে স্বপ্নের জন্মদিন পালন করছে খুব ছোট্ট করে ঘরোয়াভাআবে।সিফাতের মতো জাকজমক পুর্নভাবে না।শুধু স্বপ্নের বন্ধু আর পথশিশুদের নিয়ে।
.
পাঠিকারা ঠিকই ধরেছেন সেদিন সিনহার টুইন বেবি হয়েছিলো।একটা ছেলে একটা মেয়ে। ছেলেটি স্বপ্ন, আর মেয়েটি জান্নাত।
.
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে সিফাতকে পরিচয় করিয়ে দিলো সিফাতের না তার পছন্দ করা মেয়ের সাথে।সিফাত তাকে দেখা মাত্রই অবাক হয়ে গেলো।রাগও করলো সেই সাথে। কোনো কথা না বলে চলে গেলো সেখান থেকে। সিফাতের মা মেয়ের পরিবার কে মানিয়ে বিদায় জানিয়ে সিফাতের কাছে গেলো।
– “এটা তুই কি করলি সিফাত,কথা না বলে ওভাবে চলে এলি কেনো,উনারা অসম্মান হলো না?
– “না এসে আমি ওখানে কি করতাম মা।ওদের কেনো ডেকেছো,জানো না ওদের দেখলে আমার রাগ হয়।
– ” ওদের কেনো ডেকেছি জানিস না।
– “কেনো মা, আমি নিজেকে কোনো কিছুতে আর জড়াতে চাই না মা।আর ঐ পরিবারের সাথে জড়াবো আমি আবারো অসম্ভব। আমি পারবো না মা।ওদের দেখলেই আমার মনে হয় ওরা প্রতারক। সবকটা প্রতারক।
– ” সবাই কে এক পাল্লায় ওজন করিস না সিফাত।একজন তোকে ছেড়ে গেছে জন্য ভাবিস না সবাই এমন করবে,বা ওদের পুরো পরিবার এমন।
– “মা তুমি কেনো বোঝো না ওদের দেখলেই আমার সামনে সব ভেষে উঠে।
– ” দেখ বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে। আর সাইরি জান্নাত কে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসবে।তোকেও ভালবাসবে সাইরি অনেক ভালো মেয়ে বাবা।ওর মাঝে সিনহা কে খুজে নিস।
– “মা সিনহাও অনেক ভালো মেয়ে ছিলো তোমাদের চোখে।কি করলো পরে বিশ্বাসের ঘরে চুরি করলো তো?
– ” ওটা আমাদের ভুল ছিলো বাবা।জারা কে ভালবেসে তুই ভুল করেছিলি তারথেকেও বড় ভুল করেছিলাম আমি আর তোর বাবা সিনহার সাথে তোর সংসার বেধে দিয়ে।কিন্তু এবার আর কোনো ভুল হবে না। সাইরীর বিষয়ে সব খোঁজ খবর নিয়েছে।সিনহার মতো সে না।সাইরির কোনো সম্পর্ক নেই সবাই ওর সম্পর্কে ভালো বলেছে।যদিও সিনহার সম্পর্কে ও সবাই অনেক ভালো কথা বলেছিলো । তাই সিনহা কে কিছু জিঞ্জেস করিনি ওর কাউকে ভালো লাগে কি না।কিন্তু সাইরি কে বলেছি সব জেনেছি।ওর কোনো সম্পর্ক নেই কারো সাথে।আর সে জান্নাত কে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসবে।কারন বড় বোনের মেয়েকে ছোট বোনও আগলাতে পারে।তুই দেখিসনি তাই।সিনহা চলে যাওয়ার পর প্রায়শই সাইরি আসতো জান্নাত কে দেখতে। তুই ওদের সহ্য করতে পারতি না সেজন্য তুই অফিস যাওয়ার পর আসতো আর তুই অফিস থেকে ফেরার আগেই চলে যেতো।যাতে করে তোর সামনে পড়তে না হয়।দেখ বাবা সাইরি অনেক ভালো মেয়ে প্লিজ তুই না করিস না।সে জান্নাতের জন্য উপযুক্ত। তুই সুখী হবি বাবা।আমি জানি সাইরি তোকে সুখি করতে পারবে।সে পুরো সিনহার মতো চালচালন কথা বার্তা।সিনহাও কিন্তু খারাপ ছিলো না সিফাত।বউ হিসেবে মেয়ে হিসেবে সে অনেক ভালো ছিলো।কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।তুই সাইরি কে মেনে নে মন থেকে কারন ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে।কথাগুলো বলেই সিফাতের মা চলে গেলো।
.
আর সিফাত মন কে বুঝাতে লাগলো।সাইরি কে বিয়ে করবে কি না।জান্নাতের জন্যও যদি করে তাহলেও কখনো মন থেকে মেনে নিতে পারবে না সাইরি কে।কেনো না সিনহা তার মনে গেথে আছে যতটা গেথে থাকলে তাকে উপড়ানো সহজ হয় না ঠিক ততটা।সে চাইছে না সিনহার সাথে যা যা করেছিলো সাইরির সাথে সেটা করতে।সিনহা কে সে অনেক কষ্ট দিয়েছিলো জান্নাতের জন্য।যখন ভালেবাসলো তখন সিনহা ছেড়ে হাত ধরলো প্রেমিকের।জারার পর সিফাত কাউকে ভালবাসতে পেড়েছে,অনেক বেশি ভালোবেসেছে সিনহা কে।সিনহার পর সে আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। সাইরি কে সে কষ্ট দিতে পারবে না।তার এই কষ্ট জড়ানো জিবনে কাউকে জড়িয়ে তার জিবন টা নষ্ট করতে চায় না সিফাত।
.
সাইরি কে হয়তো অনেকে বুঝতে পেরেছেন এবং অনেকে কনফিউজড হয়ে আছেন।মাথা ঘুরাচ্ছে না হয় মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আসুন কনফিউশন দুর করি।সাইরি হলো সিনহার ছোট বোন। আর সিফাতের মা সাইরির সাথে সিফাত কে বিয়ে দিতে চায়।
.
to be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here