আমার সংসার পর্ব ৯

# আমার_সংসার
.
Part:09
.
Writer :Mollika Moly
.
.
রাতে
সিনহা এশার নামাজ আদায় করে বসে আছে বিছানায়।তার একপাশে সিফাত আধা শোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
.
–একটা কথা বলবো,,?
.
সিনহা সিফাত কে বললো।
.
–হুম বলো,,,,?
.
–বলছিলাম যে,,,
.
কথাটি বলা শেষ না হতেই সিফাতের ফোন টা বেজে উঠলো।সিফাত ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেলো।অনেকটা সময় কথা বলার পর রুমে এসে কোনো কথা না বলেই রেডী হয়ে বেরিয়ে গেলো।
সিনহা হা হয়ে বসে রইলো।বুঝলো না কিছু।কি এমন হলো সে সিফাত সিনহা কে না বলে চলে গেলো।কোথায় গেলো কেনো গেলো রাতে ফিরবে কি না কিছুই বললো না। বাবা মা যদি কিছু জানতে চায় তাহলে কি বলবে সে।এইসব ভাবছে সিনহা।ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১২ টা বাজে।সিনহার মনে প্রশ্ন ঘুড়ছে এতো রাতে উনি কোথায় গেলো।কারো কোনো বিপদ হলো না তো।
.
এদিকে সিফাত খুব দ্রুত ড্রাইভ করে জারার কাছে চলে গেলো।ফোন টা জারা বাড়ি থেকেই এসেছিলো।ফোনে সিফাত কে বলা হয়েছিলো যে জারা সুসাইট করার চেষ্টা করেছিলো,এটা শুনে সিফাত দেরী না করে জারার কাছে চলে যায়।গিয়ে দেখে জারার হাত কেটেছে ওটাতে ব্যান্ডেজ করা।এটা দেখে সিফাত ছুটে গিয়ে জারা কে জড়িয়ে ধরে।হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আর কান্না করে।
.
–এগুলো কি পাগলামি করলে তুমি জারা,কেনো এমন করলে আজ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচতাম?
.
–তোমার জন্যইতো এইসব করেছি।
.
–মানে আমার জন্য,কেনো,আমি কি করেছি?
.
–তুমি আমায় আর ভালবাসো না, তোমার বউ কে ভালবাসো।
.
–জারা আমার বউ তুমি,আর আমি তোমাকেই ভালবাসি।
.
–ছিলাম সিফাত,আমি তোমার বউ ছিলাম,কিন্তু এখন আর নেই আমাদের ডিভোর্স হয়েছে আর তুমি আটেকটা মেয়ে কে বিয়ে করেছো,সে এখন তোমার স্ত্রী, আমি জানি তুমি আমাকে নয় ওকেই ভালোবাসো।
.
–জারা কিসব বাজে কথা বলছো,আমি ওকে কেন ভালোবাসতে যাবো, আমি তোমাকে ভালবাসি,তোমাকে স্ত্রী মানি আর কাউকে না।
.
–মিথ্যে বলো না সিফাত?
.
–আমি মিথ্যে বলছি,তুমি আমায় বিশ্বাস করো না?
.
–ভালোবাসো তো এই দুদিন আসেনি কেন,রাতে ক্লাবেও আসোনি,আমার সাথে দেখাও করোনি।
.
সিফাত চুপ করে আছে,কি বলবে সে, সে যে সিনহার কথা অমান্য করতে পারেনি।সিনহা কে সে ভালো না বাসলেও ওর প্রতি মায়া পরে গেছে ও কিছু বললে ফেলতে পারে না সে কথা সিফাত।তাই সে আসেনি জারার কাছে।
.
–কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?
আমি জানি তুমি তোমার বউয়ের প্রেমে পড়েছো।
.
–জারা সেট আপ,অযথা একটা কথা বলবে না।
.
–সত্যি বললে দোষ হয়।
.
–আচ্ছা কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে আমি ওকে না তোনাকেই ভালবাসি?
.
–ডিভোর্স।
.
–মানে?
.
–ওকে ডিভোর্স দাও,আমাকে বিয়ে করো তাহলেই হবে।
.
–এটা এখন সম্ভব নয়।
.
–তাহলে কখন সম্ভব?
.
–একবছর পর।
.
–কেনো এই একবছর কি বেবি নেওয়ার জন্য ওয়েট করবে?
.
–জারা সেট আপ,তুমি কি সব আবল-তাবল বলছো,তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কেমন?
.
–হুম জানি কিন্তু তুমি বলতে চাচ্ছো তুমি তোমার বউয়ের সংস্পর্শে একবারো যাওনি।
.
জারা ভ্রু কুচকে কথাগুলো বললো সিফাত কে।
সিফাত।
.
সিফাত চুপ করে থাকলো, কেনোনা এর উত্তর নেই তার কাছে,কারন সে নেশার ঘোড়ে সিনহার একদম কাছে চলে গিয়েছিলো,স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সেদিন পুর্ণতা পেয়েছিলো,যদিও ভালোবাসা ছিলো না তারপরো।
.
–জানি এর উত্তর তোমার কাছে নেই,সব বুঝে গেছি আমি।
.
জারা আবারো বললো কথাগুলো।
.
–জারা এতো তারাতারি ওকে ডিভোর্স দেওয়া আর তোমায় বিয়ে করা সম্ভব না,কারন এটাতে আইনী বিষয় আছে,আইনি কিছু ফর্মালিটি মানতে হবে,একবছর না হলে ডিভোর্স বা অন্যকাউকে বিয়ে করা সম্ভব না,আর বাবা,মা এটা চায় না।
.
–তোমার বাবা,মা তো কিছুই চায় না,উনারা তো আমাকেও মেনে নেয় না।
.
সিফাত আবারো চুপ করে আছে।
.
–ওনারা ঐ থার্ড ক্লাস গাইয়া মেয়েটাকেই চায়,যার যেমন রুচি,কুকুরের পেটে তো আর ঘি সয় না।
.
–জারা তুমি লিমিট ক্রস করছো,তোমার সাহস হয় কি করে আমার বাবা,মা কে এইসব বলার।তুমি ভুলে গেছো তোমার গুনকীর্তন গুলো,তুমি কি করেছিলে আমার পরিবারের সাথে, তারপরো আমি তোমায় মেনে নিয়েছি কারন আমি তোমায় ভালবাসি,বাবা মায়ের আত্মসম্মানে লেগেছিলো বিষয়টা তাই তারা মেনে নিতে পারছে না।
.
সিফাতের ধমকে জারা ভয়ে চুপসে গেলো।মনে মনে ভাবতে লাগলো এখনো সে সিফাত কে পুরো নিজের আয়ত্তে আনতে পারেনি,কিন্তু সিফাত কে যদি পুরো আয়ত্তে আনতে না পারে তাহলে ওর সব প্ল্যান ভেসতে যাবে।আজ আত্মহত্যার নাটক টাও ভেসতে যাবে,এটা হতে দেওয়া যাবে না,যে করেই হোক সিফাত কে ওর বশে আনতেই হবে, তা না হলে রাজ্য হাতছাড়া,সেই সাথে রাজপুত্রও।খানিক টা সময় ভেবে ন্যাকি সুরে জারা সিফাত কে বললো,
.
–সরি সিফাত,আমি এভাবে ওনাদের বলতে চাইনি, আসলে আমার খুব কষ্ট হয়,কষ্ট থেকেই বলেছি,জানো তো আমার মা,বাবা,নেই,ওনাদের আমি মা বাবা,ভাবি,ওনাদের ভালবাসা পেতে ইচ্ছে করে বাট আমি পাইনা,আমার ভাগ্য এমন কেন বলো কেউ আপন হয় না আমার,তুমি ছারা আর কেউ নেই আমার।
.
কথাগুলো বলছে আর সিফাতের বুকে মুখ লুকিয়ে অভিনয়ের কান্না করতে লাগলো।
.
–প্লিজ কেদো না দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে,আমি আছিতো সব ঠিক হয়ে যাবে,সব পাবে তুমি,তোমার জায়গা আমি তোমায় ফিরিয়ে দেবো।দেখো নিয়ো।
.
–সত্যি তো?
.
–হুম সত্যি,এবার ঘুমোও তো তুমি।
.
বলে জারার কপালে আলতো ঠোঁট ছোয়ালো সিফাত।
.
–হুম কিন্তু তুমি কোথায় যাবে তুমিও ঘুমাও আমার সাথে?
.
–নাহ জারা আমি ফিরবো এখন, বাড়িতে না বলে আসছি,সিনহা অপেক্ষা করছে,আর বাবা মা রাগ করবে,আমি আবার আসবো তুমি ঘুমোও।
.
বলে ওকে শুইয়ে দিয়ে সিফাত বেরিয়ে আসলো।
আর জারা মুখ কালো করে রইলো,রাগে ফুসতে লাগলো।সিনহার ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়লো।
.
আর এদিকে সিনহা বসে থাকতে থাকতে বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।হঠাৎ ওর ফোন টা বেজে উঠে ধরফড়িয়ে উঠে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে।
.
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,কে বলছেন?
.
সিনহার এই ঘুম জড়ানো কন্ঠ অসম্ভব সুন্দর লাগছে,ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটার,ওপাশ থেকে কোনো কথা আসছে না, সিনহা আবারো বলতে লাগলো।
.
–হ্যালো কে বলছেন কথা বলুন।
.
এবার ওপাশের ব্যক্তি টা বললো
.
–আমি বলছি দরজা খোলো?
.
–আপনি,,,,?
.
.
–হ্যাঁ,কলিং বেল বাজাইলে বাবা,মা জেগে যেতে পারে তাই ফোন করলাম।
.
–আচ্ছা আসছি।
.
বলে সিনহা ফোন কেটে দিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।
দরজা খুলতেই সিফাত ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। সিনহা কিছু প্রশ্ন করার আগেই সিনহার মুখে হাত দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে গেলো।ঘটনার আকস্মিকতায় সিনহা থ বনে গেলো।
.
আর এদিকে সিফাতের মা পানি নিতে এসে ওদের এভাবে দেখে তার ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা টেনে গেলো।এটা যে তার ছেলে হয়তো এখন সিনহা কে ভালবাসে।
.
রুমে এসেই সিনহা কে সিফাত নামিয়ে দিলো।
.
–সরি এভাবে নিয়ে আসার জন্য,আসলে তুমি ওখানে প্রশ্ন করতে সব আর পিছনে খানিক টা দুরে হয়তো মা ছিলো তখন তুমি প্রশ্ন করলে মা ও প্রশ্ন করতো তাই আমি তোমায় এভাবে নিয়ে এলাম কিছু মনে করো না।
.
সিনহা অপলক তাকিয়ে আছে সিফাতের দিকে,আরো মনে মনে ভাবছে কিছু মনে করবো কেনো আমি,আপনাকে তো আমি ভালবাসি আপনিই যাই করেন না কেনো আমার কিছুই মনে হবে না।
.
–আমি জারার কাছে গিয়েছিলাম, আসলে ও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলো তাই তোমায় কিছু না বলে তারাতারি করে গুয়িছিলাম।
.
–ওহ তো কেমন আছে এখন সে,আর চলে আসলেন যে,কোন হসপিটালে আছে?
.
–এখন সুস্থ, বাড়িতেই আছে,চলে আসলাম কারন তোমায় বলে যায় নি তুমি চিন্তা করবে তাই।
.
কথাটা শুনে মনের অজান্তেই সিনহা খুশি হলো,এতোকিছু মধ্যেও উনি আমাকে মনে রেখেছে এটা ভেবে।
.
–তুমি ঘুমাও নি?
.
–হ্যা ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
.
–এখন তো রাত ৪ টা বাজে আরেকটু পর ভোর হবে আর তুমি তো নামাজ পড়তে উঠবে?
.
–হ্যাঁ শুধু আমি না আপনিও?
.
–হুম,তো ততক্ষণে আমরা না ঘুমিয়ে জেগে গল্প করি চলো।
.
–হুম বলুন।
.
সিনহা খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছে, সিফাত ওকে নিজের ইচ্ছেই গল্প বলতে চেয়েছে,সে বিশ্বাস করতে পারছে না।
.
to be continue……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here