#তুমি_আমি_আমরা💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৪[সমাপ্ত]
বলে না প্রিয় মানুষটি যতোই অবহেলা করুক না কেন?আমি রাগ করে তার থেকে দূরে সরে যেতে পারি না।হয়তো একটু অভিমান হয়।কিন্তু তা বেশিক্ষন স্থায়ী হয় না।মানুষ ভুল করলে তা শুধরানোর একটা সুযোগ সে অবশ্যই ডিজার্ব করে।আর সে যদি মন থেকে সেসবে অনুতপ্ত হয় তবে তো কোন কথাই নেই।যদি আমরা ভালোবেসে থাকি তাহলে কোনদিন ভালোবাসার মানুষটি কাছে আসলে আমরা তাদের দূরে ঠেলে দিতে পারি না।আর এখানে তো স্বামি স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন এর কথা।এখানে তো সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত থাকে। সংসারে হাসি,দুঃখ, বিপদ-আপদ আসবেই।সেখানে কি আলাদা হয়ে যাওয়াটাই কি এক মাত্র উপায়?উহু! কিছুতেই না।যদি পরিস্থিতি হিসেবে একে অন্যকে ভালোভাবে বুজেশুনে তা একসাথে সামলে উঠা যায় তাহলেই তো সংসার যুদ্ধে আমরা বিজয়ই হবো।
ইসলামের দৃষ্টিতে মনে রাখা জরুরিসুন্দর ও উত্তম দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা সম্পর্কে কুরআন-সুন্নায় নির্দেশ ও নসিহত রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সুন্দর ও উত্তম সংসার জীবন যাপন করাকে আল্লাহ তাআলা আবশ্যক করেছেন। এ সুসম্পর্ক যার দ্বারা ব্যাহত হবে, তাকে কঠিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
স্বামী-স্ত্রী কীভাবে সুন্দর ও উত্তমভাবে জীবনযাপন করবে, সে সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা উঠে এসেছে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘নারীদের সাঙ্গে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতপর যদি তাদের অপছন্দ কর, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত১৯)
হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। কেননা তোমাদের বাম পাঁজরের হাড় থেকে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড় সবচেয়ে বাঁকা হয়। যদি তুমি তা সোজা করতে চেষ্টা কর তাহলে তা ভেঙে যাবে। আর যদি সেভাবেই ছেড়ে দাও তাহলে সর্বদা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে থাক।’ (বুখারি)
অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীকে ঘৃণা ও অপছন্দ করবে না। যদি সে তার কোনো স্বভাবকে অপছন্দও করে তবে সে তার অন্য একটি স্বভাবকে পছন্দ করবে।’ (মুসলিম)
সুতরাং কোনো স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তার হক নষ্ট করে, ভরণ-পোষণ না দেয় বা স্ত্রী-সন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় বা পালিয়ে বেড়ায় তাহলে অবশ্যই ওই স্বামী আল্লাহর কাছে যেমন গোনাহগার হবে। রাষ্ট্রীয় আইনেও সে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্ত্রীর ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। স্বামীর যথাযথ হক আদায় না করে, সন্তানের প্রতি কর্তব্য পালন না করে পালিয়ে বেড়ানোয় যেমন গোনাহ রয়েছে আবার রাষ্ট্রীয় আইনেও সে অপরাধী। তাই দীর্ঘ সময় কাউকে কষ্ট দিতে এ আচরণ কারো থেকেই গ্রহণযোগ্য ও শোভনীয় নয়।
সুতরাং স্বামী কিংবা স্ত্রী যে কেউ দীর্ঘদিন আলাদা থাকার পর তালাক না দিলে এমনিতে যেমন বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে না আবার একসঙ্গে ঘর সংসার করতে গেলেও নতুন করে কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই।
একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, স্বামী যদি স্ত্রীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তবে প্রথমে তার (স্ত্রীর) কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে নেবে।
আর যদি স্ত্রী তার স্বামীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, কষ্ট দেয়। তবে স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে পরস্পরের মনোমালিন্য দূর করা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। তাতেই দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসবে আল্লাহর রহমত ও শান্তি।(সংগ্রহিত)
তাই স্বামি যদি স্ত্রীর কাছে এসে মন থেকে তার কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তাকে প্রাণপনে মেনে নেও।
পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম সম্পর্ক স্বামী স্ত্রী। এ সম্পর্কের চেয়ে মিষ্টি ও মধুর কোনো সম্পর্ক নেই। এ সম্পর্ক মধুর হলেই একটি সংসার ও একটি পরিবার সব দিক থেকে সুখী হয়ে উঠে। আর এ সম্পর্কে মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হলেই যতো অশান্তি
দু’জন দুজনার প্রতি একান্ত ভালোবাসাই এ সম্পর্ককে মধুর ও মজবুত করতে পারে। একে অপরকে প্রাধান্য দেয়া ও ছাড়ের মানসিকতা থাকলেই এ সম্পর্কগুলো খুব মধুময় হয়। এ ক্ষেত্রে দু’জন দু’জনকেই গুরুত্ব দিতে হবে। স্বামীর ওপর যেমন দায়িত্ব স্ত্রীর সব অধিকার আদায় করা তেমনি স্ত্রীর ওপরও দায়িত্ব স্বামীর পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। স্বামীর আনুগত্য না করলে পরকালের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
উপরিউক্ত সবকিছু বিবেচনা করেই ইসমাত বৃত্তকে ক্ষমা করে দিয়েছে।দুজনে নামাজ আদায় করে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে ক্ষমা চেয়েছে।আর দোয়া করেছে যেন তাদের সম্পর্কে আর কোন বাধা বিপত্তি না আসে।
বেশ সুখেই কাটছে এখন ইসমাত আর বৃত্তের সংসার। সেদিনের পর থেকে আর বৃত্ত ইসমাতকে অবহেলা করেনি।সবসময় ছায়ার মতো ওর সাথে সাথে থেকেছে।ইসমাতের সকল চাওয়া পাওয়া ইসমাতের বলার আগেই সামনে এনে হাজির করে।অবশ্য আগেও করতো কিন্তু এখন যা করে তাতে মিশে থাকে বৃত্তের একরাশ ভালোবাসা।
বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে বৃত্ত আর সে ইসমাতকে বুকে নিয়ে বসে আছে।ইসমাতের আট মাস চলছে প্রেগ্ন্যান্সির।মেয়েটা না ঠিকভাবে খেতে পারে না বসতে পারে আর না ঘুমোতে পারে।বৃত্ত ইসমাতের পাঁচ মাস শুরু থেকেই বাড়িতেই থাকে।সব অফিসের কাজ বাড়িতেই করে।
মেয়েটা বড্ড খিটখিটে মেজাজের হয়ে গিয়েছে যে।এই যে বৃত্ত কি সুন্দর ইসমাতকে বুকে নিয়ে এটা সেটা শোনাচ্ছে যেন ইসমাত একটু খাবার মুখে নেয়।কিন্তু ইসমাত তো ইসমাতই তার একটাই কথা সে খাবে না।বৃত্ত এইবার বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বলে,
” একটু খেয়ে নেও না! একটু খেলে কি হয়?আমাদের বাচ্চারা তো কষ্ট পাবে তুমি না খেলে! পরে দেখো ওরা অনেক রোগা পাতলা হবে জন্মের পর।”
ইসমাত আঁড়চোখে তাকালো বৃত্তের দিকে।সত্যিই কি তার বাচ্চারা রোগা পাতলা হবে?নাহ! ইসমাত তো রোগা পাতলা বেবি চায় না।সে তো গুলোমুলো বেবি চায়।একদম বৃত্তের মতো।ইসমাতকে মিসেস শেখ বৃত্তের ছোটবেলার ছবি দেখিয়েছে।কি যে সুন্দর ছিলো বৃত্ত দেখতে।অবশ্য এখনো বৃত্ত অনেক সুন্দর।শুধু তফাৎ আগে বৃত্ত গুলোমুলো কিউট লিটল বেবি ছিলো আর এখন হ্যান্ডসাম বৃত্ত হয়ে গিয়েছে।ইসমাত বললো,
” আমি খেলে কি আমার বাচ্চা আপনার মতো হবে?”
বৃত্তর খুশিতে চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো।উচ্ছাস্বিত কন্ঠে বলে,
” হ্যা অনেক সুন্দর হবে একদম তোমার মতো কিউট হবে।”
ইসমাত মুখ ফুলিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলে,
” আমার মতো না।তারা আপনার মতো হবে।গুলোমুলো কিউট। ”
ইসমাত দাঁত বের করে হাসছে।বৃত্ত জিজ্ঞেস করলো,
” বার বার আমার কথা কেন বলছো?আর আমার আমি গুলোমুলো কিউট ছিলাম কে বলেছে তোমাকে?”
ইসমাত সোজাসাপ্টা বলে দিলো,
” কেউ বলেনি তো! আমি দেখেছি।শাশুড়ি আম্মু আমাকে দেখিয়েছে।”
বৃত্ত অসহায়ভাবে তাকালো।তার মা’টাও না বউয়ের কাছে আর মানইজ্জত রাখলো না।বৃত্ত হতাশ নিশ্বাস ছাড়লো।যাক তার কথা ধরেও হোক।মেয়েটা তো খাবে এই বেশি।বৃত্ত নিজের ছোট বেলার নানান কথা ইসমাতকে শোনাতে লাগলো ওর যা যা মনে আছে।ইসমাতও ধ্যান দিয়ে শুনছে আর এই সুযোগে ইসমাত সবটা খেয়ে নিলো।বৃত্ত ইসমাতের মুখ মুছে দিতে দিতে বলে,
” এই তো গুড গার্ল।এইবার চুপ করে আমার বুকে ঘুমোবে।”
ইসমাত হঠাৎ শক্ত করে বৃত্তকে জড়িয়ে ধরে।বৃত্তও দুহাতে জড়িয়ে নেয় ইসমাতকে।ইসমাত বৃত্তের বুকে চুমু খেলো।মাথা উঠিয়ে বৃত্তের দিকে তাকিয়ে বলে,
” আপনি আমি এক হবো এটা কখনো ভাবিই নি আমি।আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম আমাদের বিচ্ছেদ হয়েই যাবে।সত্যি বলছি আমি বাঁচতে পারতাম না আপনাকে ছাড়া।”
বৃত্ত ঠোঁট ছোয়ালো ইসমাতের কপালে।তারপর দুচোখে গালে।বললো,
” আমি নিজেও জানি না কেন তোমাকে আমি বিয়ের দুবছর যাবত অবহেলা করেছি।আসলে জানো কি আমাকে মা জোড় করে বিয়ে দিয়েছিলো। কান্নাকাটি করেছিলো তাই তোমায় বিয়ে করেছিলাম।তাই মন থেকে সম্পর্কটা মানতে পারছিলাম না।আর তুমি যেহেতু আমার কাছেই থাকতে তাই তোমার গুরুত্বটাও বুজতে পারিনি।কিন্তু তুমি যখন আমাকে রেখে চলে যাও তখন বুজতে পারি তুমি আমার কাছে কি?জানো তোমাকে ছাড়া প্রতিটা সেকেন্ড আমার কাছে মরন যন্ত্রনা সমান মনে হয়েছে।আর জানো তোমার চলে যাওয়াটা ভালোই ছিলো।নাহলে আমি আমার ভালোবাসাটা বুজতে পারতাম না।তুমি চলে গিয়েছিলে বলেই আমি আমার মনের ভাষা বুজতে পারি।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বুজতে পারি।আর দেখো আজ আমরা সুখী পরিবার।আমি পূর্ণ ইসমাত।তুমি আমাকে পূর্ণতা দান করেছো।আমাকে সব খুশি এনে দিয়েছো।”
বৃত্তের চোখ জোড়া ছলছল করছে। সাথে ইসমাতেরও।ইসমাত বললো,
” আমাকে আর এভাবে কষ্ট দিয়েন না।আমি আর সয্য করতে পারবো না।”
বৃত্ত ইসমাতের ঠোঁটে পরম যত্নে একটা চুমু খেলো।তারপর ইসমাতের জামাটা উঠিয়ে ওর ফুলো পেটে চুমু খেয়ে সেখানে কান পাতলো।নিজের বাচ্চাদের উপস্থিতি অনুভব করার চেষ্টা করলো।বৃত্তের চোখের কার্নিশ বেয়ে সুখের জল গড়িয়ে পড়লো।বৃত্ত বললো,
” তোমাদের ছাড়া আমি আর যাবোই বা কোথায়?এখন তোমরাই আমার প্রথম ও শেষ ঠিকানা।ইনশাআল্লাহ এই বৃত্ত মরনের আগ অব্দি তোমার সাথে হাতেহাত রেখে চলবে।আর আল্লাহ্ চাইলে পরকালেও আমরা এক হবো।”
বৃত্ত উঠে বসলো।ইসমাতের কপালে কপাল ঠেকালো।দুজনের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।দুজনে একসাথেই বললো,
” #তুমি_আমি_আমরা ভালোবাসার ভেলায় ভাসবো আজীবন।যেখানে দুঃখ আমাদের ছুবে না।বিপদ আসলেও লড়বো হাতে হাত রেখে।
#তুমি_আমি_আমরা একই সুতোঁয় গাথা থাকবো সারাজীবন।”
[[[[।সমাপ্ত।]]]]