#আলো_আঁধারের_লুকোচুরি
#Last_Part
#Writer_NOVA
ইয়াসফি ফিরলো চারদিন পর। দরজা খুলে ইয়াসফির বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে রুহানি চমকে উঠলো। তাকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়েই জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। ইয়াসফি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে দূর্বল ঠোঁটে বললো,
‘ধূর, পাগলী! কাঁদছো কেনো? আমি ফিরে এসেছি তো। এভাবে কাঁদলে কিন্তু আবার চলে যাবো।’
রুহানি কান্নার দমকা কমিয়ে ইয়াসফির বুক বরাবর মৃদু ঘুষি বসিয়ে দিলো। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। চোখের পানি, নাকের সর্দি ইচ্ছে করে ইয়াসফির পাঞ্জাবিতে মুছে ফেললো। ইয়াসফি এমতাবস্থায়ও হেসে ফেললো।
‘আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম মন্ত্রী সাহেব। মনে হয়েছিলো এবার আর তোমাকে খুঁজে পাবো না। এরকম হুটহাট করে গায়েব হয়ে যাও কেন?’
‘সারাজীবনের জন্য মাহমুদের চাপ্টার ক্লোজ করে ফেললাম। খুব বাজে পরিস্থিতিতে পরে গিয়েছিলাম বুঝলে। মোবাইলেও চার্জ ছিলো না। তাই তোমাকে জানাতে পারিনি।’
‘মাহমুদ এখন কোথায়?’
ইয়াসফি ঠোঁট প্রসস্থ করে হাসলো। উত্তর না পেয়ে রুহানি মাথা উঠালো। ইয়াসফি রুহানির কপালে চুমু একে বললো,
‘সময় হলে বলবো। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। আগে একটু গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেই?’
রুহানি মাথা হেলালো। দরজা আটকে স্বামীর বাহু ধরে লাফাতে লাফাতে উপরে উঠলো। রুহানির কান্ড দেখে ইয়াসফি আরেক দফা হাসলো। মেয়েটা সবার কাছে রাগী, মেজাজী, শক্তিশালী হলেও তার কাছে একাবারে ভিন্নরূপ। কেমন শান্তশিষ্ট, পাগলী আর নরম হয়ে যায়। এর জন্য হয়তো বলে, নারী তার প্রিয় পুরুষের কাছে ছোট বাচ্চা সেজে যায়। প্রয়োজনে নিজেকে নরম করে ফেলে প্রয়োজনে শক্ত।
ওয়ারড্রব থেকে টি-শার্ট, টাউজার বের করলো ইয়াসফি। রুহানি খাটে বসে পা ঝোলাচ্ছে। ইয়াসফি বউয়ের দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি হঠাৎ আমার বাড়িতে? কি করে জানলে আমি এখানে আসবো?’
রুহানি প্রথমে কপট রাগ দেখালো৷ এরপর জোর গলায় বললো,
‘এটা কি শুধু তোমার বাড়ি? আমার স্বামীর বাড়ি। সাথে আমারও বাড়ি। যখন খুশি তখন আসবো। তোমার কি?’
ইয়াসফি এগিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বসলো। রুহানির দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
‘আরে রাগ করো না। আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম। আমি ভেবেছিলাম বাসায় এসে এক দুপুর বিশ্রাম নিয়ে তোমাদের বাসায় চলে যাবো তোমাকে দেখতে। এখানে এসে তোমাকে পেয়ে আমি নিজেও খুশি হয়েছি। এবার ধুমধাম করে সবাইকে জানিয়ে তোমাকে সসম্মানে ঘরে তুলবো। যাতে কেউ আমার বউয়ের চরিত্র নিয়ে কথা তুলতে না পারে।’
রুহানি মুখটা খুশিতে ঝলকে উঠলো।
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ, তিন সত্যি।’
‘ঠিক আছে। তুমি গোসলে যাও। আমি দেখি ঝটপট কোন নাস্তা বানাতে পারি কিনা।’
তিশা, তুষ্টি কোমড় বেঁধে তাদের মা নাসিমা বেগমকে রান্নায় সাহায্য করছেন। আজিম সারোয়ার ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বড় মেয়ের জামাই জাহিদের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। নানা প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক আলাপ। জাহিদ ছেলেটা ভালো। নম্র-ভদ্র, শান্তশিষ্ট স্বভাবের। এতেই তিশার সাথে ভালো মিলেছে। যদিও তিশা বিপরীত স্বভাবের। মানুষ তার বিপরীত মনমানসিকতার মানুষকেই বেশি পছন্দ করে৷ এই নিয়মের বহির্ভূত হয়নি তিশা-জাহিদ।
‘বুঝলে জাহিদ, দেশটা রসাতলে যাচ্ছে। দিনকে দিন রাজনীতিতে মেধাশূন্য হচ্ছে। আগে রাজনীতি করতো ভালো মনমানসিকতা, টপার ছেলেমেয়েরা। এখন রাজনীতি করে ব্যাক বেঞ্চে বসে হৈহল্লা, মারামারি করা ছেলেরা। দেশ এখন ভালো নেতা পাবে কি করে? পলিটিক্সের ভেতরে পলিটিক্স ঢুকে গেছে। নোংরা করে দিচ্ছে রাজনীতিটাকে।’
জাহিদ মাথা দুলালো। রাজনীতি সে ভালো বুঝে না। এসব নিয়ে কখনও মাথা ঘামায়নি। কিন্তু শ্বশুরের সাথে বসলে মনোযোগ দিয়ে তার সব কথা শুনে। বিষয়টা আজিম সারোয়ারেরও ভালো লাগে। কথা শোনার মনোযোগী শ্রোতাকে কার না পছন্দ হবে?
‘চা খাবে জাহিদ? এই যা ভুল বলে ফেললাম। কথাটা হওয়া উচিত ছিলো চা পান করবে জাহিদ?’
বলেই নিজেই হেসে উঠলেন। জাহিদ মুচকি হেসে উত্তর দিলো।
‘আপনি পান করতে চাইলে আমার জন্যও বলুন। অন্যথায় দরকার নেই।’
আজিম সারোয়ার গলা খাকরি দিয়ে চেচিয়ে উঠলেন।
‘তিশার মা আমাদের জামাই-শ্বশুরকে দু কাপ চা দিও।’
নাসিমা বেগম আলুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে একবার বিরক্তি চোখে সামনে তাকালো। রান্নাঘরের দরজা থেকে ড্রয়িং রুমের পুরোটা দেখা যায়। ছোট মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘দু কাপ চায়ের পানি বসা তুষ্টি। তোর বাপকে নিয়ে আমার যত জ্বালা। দেখছে রাজ্যের কাজ বাকি। এর মধ্যে নতুন ফরমায়েশ জারি করে দিলো। একটা মানুষদের আসবে তার জন্য কি কম রান্না করা যায়?’
তুষ্টি একটা ছোট পাতিলে পানি নিয়ে চুলোয় বসিয়ে দিলো। তিশা পেঁয়াজ কুচি করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,
‘তোমার কাজের মেয়ে মিতু কোথায়?’
‘আর বলিস না। আমার যত জ্বালা কথাটা কি শুধু শুধু বলি? মেয়েটা দুদিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেলো। বললো দুদিন পর ফিরে আসবে। এক সপ্তাহ হয়ে যায় আসে না। পরে খবর নিয়ে জানি ওর বাবা-মা ওকে বিয়ে দিয়ে দিছে। আমাদের একটু জানালোও না। জানালে যতটুকু পারতাম আর্থিক সহায়তা তো করতে পারতাম।’
নাসিমা বেগমের গলা অভিমানী শুনালো। তিশা হাতের কাজ থামিয়ে বললো,
‘থাক না মা, মন খারাপ করো না।’
তুষ্টি কিছুখন ধরে উসখুস করছে একটা প্রশ্ন করার জন্য। মায়ের মতিগতি ভালো ঠেকছে না দেখে বলার সাহস পাচ্ছিলো না। সুযোগ বুঝে জিজ্ঞেস করে ফেললো।
‘মা, দাভাই আর ভাবী কখন আসবে?’
নাসিমা বেগম ঝাঁঝিয়ে উঠলেন,
‘আমি কি জানি তাদের ফোন করে জিজ্ঞেস কর। এক বছর আগে বিয়ে করেছে আমাকে বলেছে দুদিন আগে। আমি জানলে কি অমত করতাম? তোদের বাপ আমাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করে না। তার ভাগ্নের ব্যাপারে সে একাই সব। একজন তো সমুদ্রে হারিয়ে গেলো। আরেকজন এতো ব্যস্ত আমার কথা মনেই পরে না।’
মাহমুদ সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার নাটক ছাড়া নাসিমা বেগম আর কিছু জানেন না, তুষ্টিও না। শুধু ইয়াসফি, আজিম সারোয়ার আর তিশা সবটা জানে।
তুষ্টি মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো। মায়ের মন ভীষণ খারাপ। তার প্রশ্নটা করাই উচিত হয়নি। নাসিমা বেগম বড় মেয়ের দিকে ঘুরে জেরা করার ভঙ্গিতে বললেন,
‘সত্যি করে বলতো তিশা, তুই আগে থাকতে ইয়াসফির বিয়ের খবর জানতি?’
তিশা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো। যার মানে হ্যাঁ। ব্যাস, নাসিমা বেগম ঢেঢ় চটলেন। তুষ্টি বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
‘আপু তুই জানতি?’
গাড়িতে সফট মিউজিক বাজছে। আঁকাবাঁকা রাস্তা। সন্ধ্যা নেমেছে বহু আগে। একটু পর এশার আজান দিয়ে দিবে। ধীর গতিতে চলছে ইয়াসফির গাড়ি। ইয়াসফি এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে রেখেছে। আরেক হাতে শক্ত করে রুহানির একটা হাত। মাঝে মধ্যে গানের সাথে ঠোঁট মিলাচ্ছে৷ আবার হুটহাট রুহানিের হাতে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে। রুহানি কখন থেকে জিজ্ঞেস করছে, ‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’ ইয়াসফির একটাই উত্তর গেলে দেখতে পারবে। বাইরের ঘন কালো আঁধারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুহানির মনে হঠাৎ একটা প্রশ্ন জাগলো। ইয়াসফির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
‘তোমাকে আর মাহমুদকে আমি সেদিন যখন প্রশ্ন করলাম পরীক্ষা করার জন্য, তখন মাহমুদ সঠিক উত্তর কি করে দিলো? আমাদের প্রথম দেখার কথা ও কি করে জানলো? তুমি কি ওকে কখনো বলেছিলে?’
‘না, ওর সাথে আমার কখনো ভালো সম্পর্ক ছিলো না। বলতে পারো সাপেনেউলে সম্পর্ক।’
‘তাহলে জানলো কি করে?’
‘আমার পিএ সালমানের থেকে হয়তো। আমি সালমানকে অনেক কিছু বলতাম। আমার সাথে ও বিশ্বাসঘাতকতা করবে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’
শেষের দিকে ইয়াসফির কথাগুলো জড়িয়ে এলো। তা বুঝতে পেরে রুহানি বললো,
‘ওর শাস্তি আমি দিয়েছি। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি সালমান পেয়েছে। প্রতিনিয়ত নিজের মৃত্যু কামনা করবে আল্লাহর কাছে।’
ইয়াসফি রুহানির হাত নিজের মুখের সামনে নিয়ে শব্দ করে চুমু খেয়ে বললো,
‘এর জন্য তো তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি।’
‘ইশ!’
রুহানি লাজুক হাসলো। ইয়াসফি একটু থেমে ফের বললো,
‘আমার রুহ।’
রুহ মিটমিট করে হেসে বললো,
‘হ্যাঁ, তোমারই মন্ত্রী সাহেব। অন্য কারো না।’
‘অন্য কারো হওয়ার সাহস আছে নাকি? তাহলে আগে তোমাকে মারবো তারপর নিজেকে শেষ করবো।’
মারার কথা শুনে রুহানির মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো। চমকে উঠে বললো,
‘জানো, মাহমুদ না ফ্লোরাকে মেরে ফেলেছে।’
ইয়াসফি গাড়ি থামিয়ে দিলো। অবিশ্বাস্য চোখে রুহানির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কি?’
‘হ্যাঁ, সেদিন আমায় কল করে বলছে। মেয়েটা ওকে ছেড়ে যেতে চেয়েছিলো বলে মেরে নিজের কাছে রেখে দিতে চেয়েছে।’
ইয়াসফি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘একজন সাইকোর দ্বারা অসম্ভব কিছু নেই। এরা এতোটা স্বাভাবিক থাকে যে কেউ তাদের সন্দেহ করতে পারবে না। অথচ নিজেদের স্বার্থে এরা হয়ে উঠে ভয়ংকরী।’
‘আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে মন্ত্রী সাহেব।’
ইয়াসফি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো,
‘বলে ফেলুন আমার রুহরাণী।’
‘তুমি তো বোরহান রূপে ছিলে।’
‘হ্যাঁ, কোন সন্দেহ নেই।’
‘তাহলে বোরহান কিভাবে ইয়াসফির জায়গায় আসলো সেটা কেন মাহমুদ এর প্রশ্ন জাগলো না? ইয়াসফি আর নেই কিন্তু এইটা কবে কিভাবে ঘটলো সেইটা কেন মাহমুদ ঘাটালো না?আর তানিম না হয় ইয়াসফির চরিত্রে পারদর্শী। কিন্তু ওর মনে একবারও প্রশ্ন জাগলো না যে বোরহান কিভাবে এতটা পারদর্শী হল ইয়াসফির চরিত্রে অভিনয় করায়?’
‘একটা করতে গিয়ে তো তিনটা প্রশ্ন করলে। কোনটা রেখে কোনটা উত্তর দিবো?’
‘একটা একটা করে সবগুলো উত্তর দাও।’
‘আসলে সত্যি বলতে মাহমুদের মনে প্রশ্ন জেগেছিলো৷ মামা সেগুলো হ্যান্ডল করেছে। ইয়াসফি যে নেই সেটা নিয়েও আড়ালে ঘেটেছে৷ তবে আমি এমন ভাবে সব প্রমাণ নিযুক্ত করে রেখেছিলাম যে মাহমুদ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে ইয়াসফি নেই। আর রইলো বোরহান কিভাবে পারদর্শী হলো ইয়াসফির চরিত্রে। এটা নিয়েও গবেষণা শুরু করেছিলো। কিন্তু আমি ওর খবরা-খবর নেওয়া ডান হাত অপুকেই গুম করে দিয়েছি। ও ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তো আমি সব বলে ওকে হাসপাতালে দিয়ে এলাম। আর কোন প্রশ্ন?’
রুহানি মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। কথা বলতে বলতে তারা গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। হর্ণ বাজাতেই দারোয়ান বড় লোহার গেইট খুলে দিলো। লাইটের আলোয় রুহানি দেয়ালের নেমপ্লেট দেখে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ইয়াসফির দিকে তাকালো। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘সারোয়ার নিবাস’। গাড়ি থেকে নেমে ইয়াসফিকে ধরলো।
‘তুমি আমাকে আগে কেনো বললে না মামার বাসায় আসছো?’
‘সারপ্রাইজ!’
‘রাখো তোমার সারপ্রাইজ। আগে জানলে আমি শাড়ি পরে আসতাম। এভাবে কুর্তি, জিন্স পরে আসতাম নাকি। শ্বশুর বাড়ি কেউ এভাবে আসে?’
রুহানি ঠোঁট উল্টে চোখ টলমলে করে ফেললো। ইয়াসফি এগিয়ে এসে স্ত্রীকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘কোন সমস্যা নেই।’
‘আছে, মামী আমাকে এভাবে দেখে নিশ্চয়ই অপছন্দ করবে।’
ততক্ষণে সদর দরজা খুলে গেছে। তুষ্টি দাভাই বলে ইয়াসফিকে জড়িয়ে ধরেছে। ভাইকে রেখে ভাবীর দিকে নজর দিলো। থুঁতনি উঠিয়ে বললো,
‘কি মিষ্টি দেখতে ভাবী তুমি!’
রুহানি লজ্জা পেলো। নাসিমা বেগম এগিয়ে এলেন। সে ভেবেছিলেন ভাগ্নের বউকে কড়া করে আগে কতগুলো কথা শুনাবেন। কিন্তু রুহানিকে দেখে তার মন পাল্টে গেলো। কত মায়াবী দেখতে মেয়েটা! ইয়াসফির সাথে বেশ মানিয়েছে। ছেলেটার পছন্দ আছে বলতে হবে৷ আপনাআপনি মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো,
‘মা শা আল্লাহ!’
চারদিন পরের কথা। ইয়াসফি, রুহানি দুজনে এয়ারপোর্টে বসে আছে। তাদের গন্তব্য এখন ইন্দোনেশিয়ার বালি। ভীষণ সুন্দর জায়গা। সেখানে কিছু দিন থাকলে মন ভালো হতে বাধ্য। তারা পাসপোর্ট দেখিয়ে বাকি ফর্মালিটি পূরণ করে প্লেনে চড়ে বসলো। কিছু সময়ের মধ্যে প্লেনটা আকাশে উড়াল দিবে। একজন হোস্ট এসে সিট বেল্ট বাঁধতে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলো। রুহানি ভীষণ ভয় পাচ্ছে। সে এই প্রথম প্লেনে চড়েছে৷ তাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে। ইয়াসফি একহাতে রুহানিকে জড়িয়ে নিয়ে গালে চুমু খেয়ে বললো,
‘আরে পাগলী ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি তো আছি।’
‘আমার ভয় করছে মন্ত্রী সাহেব।’
‘যতক্ষণ আমার দেহে প্রাণ আছে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।’
রুহানি একটু সাহস পেলো। ইয়াসফি নিজেই রুহানির সিট বেল্ট বেঁধে দিলো। যখন প্লেন ঝাঁকি খেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলো তখন রুহানি দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে ইয়াসফির বাহু খামচে ধরলো। ইয়াসফি রুহানির মাথা নিজের কাঁধে রেখে শক্ত করে হাত ধরলো। রুহানি চোখ খিঁচে নিজের মাথাটা ইয়াসফির কাঁধে হেলিয়ে দিয়ে বাহু ধরে রাখলো। চোখ খুললো না। প্লেনের জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে ইয়াসফি রহস্য ভঙ্গিতে হাসলো। ধীরে ধীরে রহস্যময় হাসিটা আরো প্রসারিত হলো।
অন্ধকার রুম। উপরের ছোট ঘুলঘুলি দিয়ে ক্ষীণ আলো আসছে। যতটুকু অক্সিজেন আসছে তাতে শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ঠোঁট দুটো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এক গ্লাস পানি পেলে অনেক ভালো হতো। হাত-পা শক্ত নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে জ্বালাপোড়া করছে। পিটপিট চোখে আশেপাশে তাকালো। সারা রুম ধূ ধূ মরুভূমির মতো মনে হচ্ছে তার কাছে। কোথাও এক ফোটা পানির সন্ধান নেই। তবুও সে নিজের চিন্তা করলো না। শুকনো জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, দূর্বল কন্ঠে তিনটা শব্দ উচ্চারণ করলো। যা পুরো রুমে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো।
‘রুহ, আমার রুহ!’
পরিশিষ্ট: তাহলে আসল ইয়াসফি কে? রুহানির সাথে যদি আসল ইয়াসফি থাকে তাহলে মাহমুদ কেন উচ্চারণ করবে, “রুহ আমার রুহ”। আর যদি রুহানির সাথে মাহমুদ থাকে তাহলে সে কি করে ইয়াসফির এত খবর জানে? যা কখনও তার জানার কথা নয়। সেও তো উচ্চারণ করেছিলো “আমার রুহ” শব্দটা। সে কিন্তু জানে না ইয়াসফি রুহানিকে এভাবে সম্বোধন করে। আপনারা ভাবলেন কি করে আলো আঁধারের লুকোচুরি এতো সহজে শেষ হয়ে যাবে?
#সমাপ্ত
(কিছু কথা: রহস্যময়, আন-এক্সপেক্টেড এন্ডিং অনেকের পছন্দ হবে না তা আমি জানি। আমি গল্প শুরু আগের থেকে এমন এন্ডিং ভেবে রেখেছিলাম। যাতে আমার পাঠকরা কনফিউশানে পরে যায়। মনে হয় শেষ হয়েও হইলো না শেষ। কিছু রহস্য অমীমাংসিত রেখে দিছি। মানুষের জীবনে সব রহস্য মীমাংসা হয় না। এন্ডিং পছন্দ না হলে আমার কিছু করার নেই। যার বকার ইচ্ছে হয় বকতে পারেন৷ খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো। এবারের গল্প কিন্তু থাকবে ফ্যান্টাসির। অবাস্তব কিছু জিনিস নিয়ে। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকবেন সবাই।)