“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_৩

0
461

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৩
.
🌸
.
প্রকাশ বাইরে বেরিয়ে এসে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিলো অপারেশনের ব্যাপারে আর ইশারা গিয়ে বসার জায়গায় বসে পরলো,,,আর ইশারার পাশে গিয়ে ওর মামি বসলো আর ইশারা কে কিছু কথা বললো,,,এটা প্রকাশের চোখে পরতেই প্রকাশ ইশারার কাছে এগিয়ে গেলো,,,ইশারার মামি প্রকাশ কে এগিয়ে আসতে দেখেই উঠে গেলো,,,

প্রকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশারার মামি হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন আর প্রকাশ ইশারার পাশে বসে পরলো,,,ইশারার তাতে কোনো হেলদোল নেই ও এক মনে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে,,,প্রকাশ ইশারা কে ওভাবে দেখে ওর হাতের উপর হাত রেখে বললো

প্রকাশ: গতরাত থেকে তুমি না চেঞ্জ করেছো আর না কিছু খেয়েছো?? চলো কিছু খেয়ে নেবে,,

ইশারা: নাহ আমি খাবো না [ইশারায়]

প্রকাশ: কেনো খাবে না??

ইশারা ওর ভাইয়ের কেবিনের দিকে তাকাতেই প্রকাশ বুঝতে পারলো,,

প্রকাশ: আগামীকাল অপারেশন হবে আর আজকে ওকে এডমিট থাকতে হবে আমি কথা বলে নিয়েছি ডক্টরের সাথে,,,এখন চলো ইশান ঘুমাচ্ছে,,

ইশারা কে নিয়ে উঠে গেলো প্রকাশ আর ইশারা ও চলে গেলো প্রকাশের সাথে,,,প্রকাশ বাড়িতে এসে ইশারা কে রুমে পাঠিয়ে দিলো আর নিজে গার্ডদের সাথে কিছু কথা বলতে লাগলো,,,এদিকে ইশারা তো রুমে গিয়ে ঠায় বসে আছে আর ভাবছে,,,

ইশারা: আমি কি করে ড্রেস চেঞ্জ করবো আমার তো এখানে কোনো জামাকাপড় নেই,,,ওনাকে কি একবার বলবো নাকি?? না থাক,,

প্রকাশ ঘরে এসে দেখলো ইশারা ড্রেস চেঞ্জ করেনি বসে বসে কিছু একটা ভাবছে,,,প্রকাশ ইশারার সামনে দাঁড়াতেই ইশারা ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো,,,

প্রকাশ: ড্রেস চেঞ্জ করতে বলেছিলাম?? (শান্ত ভাবে)

ইশারা কাচুমাচু করছে,,

প্রকাশ: আমি কিছু বলেছি??

ইশারা: (হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল)

প্রকাশ: করোনি কেনো??

ইশারা আবার চুপ করে রয়েছে প্রকাশ কিছু একটা ভেবে আলমারির কাছে গেলো,,,আর আলমারি থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে এসে ইশারার হাতে দিলো আর বললো

প্রকাশ: ওখানে তোমার যা যা জিনিস লাগবে সব আছে,,,আমি আমার মেইড কে দিয়ে অনেক আগেই আনিয়ে রেখেছি,,,আর যদি তোমার কোনো হেল্প লাগে তাহলে আমাদের মেইড সীমা কে ডেকে নিয়ো

ইশারা প্রকাশের হাত থেকে প্যাকেট টা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো চুপচাপ,,,প্রকাশের কিছু একটা খটকা লাগলেও কিছু বললো না চলে গেলো ফ্রেশ হতে,,,

ইশারা প্রায় এক ঘন্টা যাবত শাওয়ার নিচ্ছে আর এদিকে প্রকাশ ইশারার জন্য অপেক্ষা করছে,,,যেই না প্রকাশ ডাকতে যাবে ইশারা কে তখনই ইশারা বেরিয়ে এলো হাতে একটা টাওয়াল নিয়ে চুল মুছতে মুছতে,,,প্রকাশ থেকে ইশারা কে দেখে পুরো হা হয়ে রয়েছে,,,এখন ইশারার মুখে সামান্য মেক আপ টাও নেই,,ইশারা কে দেখে প্রকাশের সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে যেদিন প্রথম ইশারা কে দেখেছিল প্রকাশ,,,এখন আরো বেশি স্নিগ্ধ লাগছে ইশারা কে,,,এদিকে ইশারা বেরিয়েই প্রকাশ কে দেখতে পায়,,প্রকাশ সোফায় বসে রয়েছে সামনের টেবিলে খাবার সাজিয়ে,,প্রকাশের এমন চাহুনী দেখে ইশারা কিছুটা লজ্জা পায় আর প্রকাশ এক ভাবেই চেয়ে রয়েছে,,,প্রকাশ উঠে গিয়ে ইশারার হাত ধরে সোফায় বসালো আর প্লেটে রাখা খাবার হাতে নিয়ে ইশারার মুখের সামনে ধরলো,,ইশারা প্রকাশের মুখের দিকে তাকাতেই প্রকাশ চোখ দিয়ে ইশারা করলো জানো প্রকাশের হাতের থেকে গ্রাস টা মুখে নেয়,,,ইশারা ও চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতই খাবার টা খেয়ে নেয়,,

প্রকাশ যখন আবার ইশারা কে খাওয়াতে যায় তখন দেখে ইশারা আবারও আগের মতন মাথা নীচু করে চোখের জল ফেলছে,,,প্রকাশ সঙ্গে সঙ্গে ইশারা কে জিজ্ঞেস করে হাতের প্লেট টা রেখে

প্রকাশ: কি হয়েছে ইশারা?? খাবার টা ভালো লাগেনি?? ঝাল লাগছে তোমার?? কাঁদছ কেন তুমি??

ইশারা: (নিশ্চুপ)

প্রকাশ: ওহ! আমি খাইয়ে দিচ্ছি বলে ভালো লাগছেনা?? আচ্ছা আমি তোমায় জোর করে খাওয়াবো না,,তুমি খেয়ে নাও তাহলে,,আমি তোমাকে জোর করতে চাই না বিয়েটা হয়তো জোর করেই করেছি কিন্তু ভালোবাসার জন্য কখনো জোর করবো না,,,

এই বলে প্রকাশ উঠে যেতে নিলেই ইশারা প্রকাশের হাত টেনে ধরে,,প্রকাশ ইশারার দিকে তাকাতেই ইশারা বিছানায় থাকা খাতা পেনের দিকে ইশারা করে,,প্রকাশ সেটা এনে দিয়ে ইশারার সামনে বসে আর ইশারা প্রকাশ কে কাগজে লিখে দেয়,,,

ইশারা: আমি কখনো এতো ভালো খাবার খায়নি আর না কেউ আমায় কোনদিন খাইয়ে দিয়েছে,,,মামি রবিবার বাদে রোজ সকালে আর রাতে দুটো রুটি দিতো আর বাসি তরকারি দিতো,,দুপুরে ডাল-ভাত ছাড়া কিছুই দিতো না শুধু রবিবার মাছ দিতো,,,আবার অনেক সময় কলেজে গেলে ঘরের কাজ বাকি থাকলে খেতে দিতো না,,,প্রথমবার এতো ভালো খাবার খেলাম হয়তো তার জন্য ধন্যবাদ,,আপনি আমায় খাইয়ে দিলে আমি কিছু মনে করবো না,,দেবেন আমাকে খাইয়ে??

প্রকাশের চোখে জল টলমল করছে ইশারার কথা শুনে,,,প্রকাশ ভাবছে মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারে,,প্রকাশ সঙ্গে সঙ্গে ইশারা কে আবার খাইয়ে দিতে লাগলো,,,এরই মাঝে ইশারা আবার কিছু একটা লিখে প্রকাশের সামনে ধরলো,,

ইশারা: আচ্ছা আপনি আমায় আর আমার ভাই কে এতো সাহায্য কেনো করছেন?? আমি তো আপনার কেউ হই হই তাই না??

প্রকাশ: তুমি কবে বুঝবে বলো তো আমি তোমাকে ভালোবাসি?? এখনো বিশ্বাস হয় না আমায়??

ইশারা: আমি কথা বলতে পারি না,,অতি সামান্য একটা মেয়ে নিজের বাড়িতেই কাজ করে খাই আর কাজ না করলে খাই না,,,দেখতেও তো আহামরি সুন্দর নই সেই তুলনায় আপনি কতো সুন্দর কতো বড়লোক,,,আপনি আমায় কেনো ভালোবাসতে যাবেন বলুন তো শুধু শুধু?? আপনি যেটা ভালবাসা ভাবছেন সেটা হয়তো কিছুদিনের মোহ মাত্র,,,কয়েক দিন যেতে না যেতেই আমি আপনার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠব,,,আমার এই অক্ষমতা আপনার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠবে যেটা স্বাভাবিক!

প্রকাশ ইশারার এই লেখাটা দেখে মারাত্মক রেগে গেলো খাতা টা পাশে রেখে ইশারা কে বাম হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো আর ইশারা ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো,,,আকস্মিক এমন ঘটনায় ইশারা পুরো জমে গেছে,,,আজ পর্যন্ত ইশারা কোনো ছেলের ধারে কাছেও ঘেষেনি বরাবরই একটু লাজুক ইশারা,,আর আজ প্রকাশ ওকে এভাবে কাছে টেনে কিস করছে,,,ইশারা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলেই প্রকাশ ইশারার ঘাড় পিছন দিক দিয়ে আরো শক্ত করে ধরে,,,ইশারা পেরে ওঠে না প্রকাশের সাথে এদিকে প্রকাশ রাগের কারণে এমনটা করে ফেললো,,,কিন্তু কিছুতেই প্রকাশের রাগ যাচ্ছে না কি করে পারলো ইশারা এভাবে ওর ভালোবাসা কে অপমান করতে?

কিছুক্ষণ পর প্রকাশ ইশারা কে ছাড়তেই দেখতে পেলো ইশারার চোখে জল,,,প্রকাশ ইশারা কে নিজের কাছে রেখেই বললো,,

প্রকাশ: তুমি ভাবতেও পারবে না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি,,,না জেনে তুমি কি ভাবে আমার ভালোবাসা কে এতটা অপমান করলে?? ভালো না বাসো আমার কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু আমার ভালোবাসা কে অপমান করো না,,,আর কোনদিন যদি নিজেকে অক্ষম বলেছো তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না,,,তুমি যেমন আমি তোমাকে সেভাবেই ভালবেসেছি ভালোবাসি আর আজীবন ভালবাসব,,,তুমি আমার জীবনে থাকলেই আমি বড়লোক হতে পারবো তুমি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্ব নেই,,

বলেই ইশারা কে ছেড়ে উঠে গেলো প্রকাশ আর হাত ধুয়ে ব্যালকনি তে চলে গেলো,,,এদিকে ইশারা বসে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ইশারার কাছে প্রকাশের এই ছোঁয়া কোনো মোহ মনে হচ্ছে না খারাপ লাগছে না বরং ভালো লাগছে,,,ইশারা মনে মনে ভাবছে তাহলে কি সত্যি প্রকাশ ওকে ভালোবাসে?? এসব ভাবতে ভাবতেই ইশারা কাশতে লাগলো,,,ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে,,,ইশারা সেদিকে এগিয়ে গেলো আর দেখলো ইতিমধ্যে প্রকাশ দু-তিনটে সিগারেট শেষ করে ফেলেছে আর হাতে একটা রয়েছে সেটাও শেষের পথে,,,ইশারা বুঝতে পারলো প্রকাশ রেগে রয়েছে আর ইশারার কথায় হয়তো কষ্ট ও পেয়েছে তাই এমন করছে,,,ইশারা গিয়ে প্রকাশের হাত থেকে সিগারেট টা টান দিয়ে ফেলে দিলো আর প্রকাশ ইশারার দিকে তাকাতেই ইশারা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো কারণ প্রকাশের চোখ টা ভয়ংকর লাল হতে গেছে,,,

প্রকাশ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ইশারা কে বললো

প্রকাশ: তুমি গিয়ে শুয়ে পরো,,,আমাকে একা থাকতে দাও,,

ইশারা: আপনি খাবেন না??[ইশারায়]

প্রকাশ: নাহ খিদে মিটে গেছে আমার,,তুমি যাও আমার চিন্তা তোমায় করতে হবে না,,,

ইশারা প্রকাশের কাঁধে হাত রাখতেই প্রকাশ ইশারার দিকে তাকালো আর ইশারা আবার ও ইশারা করে বললো

ইশারা: খেয়ে নিন না প্লিজ!

প্রকাশ: বললাম তো খাবো না আমি যাও তুমি!(কিছুটা ধমক দিয়ে)

ইশারা কিছুটা ফুঁপিয়ে উঠলো আর ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো,,,প্রকাশ আর কিছু না বলে চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলো,,,ইশারা চোখ মুছে চলে যেতে নিলেই হুট করে ইশারার হাত প্রকাশ পিছন থেকে হেঁচকা টান মেরে নিজের দিকে ফিরিয়ে ইশারা কে জড়িয়ে ধরলো,,,আর ইশারার কাঁধে মুখ গুঁজে রইলো,,,ইশারা নিজের কাঁধ টা ভেজা অনুভব করলো তাই আলতো করে প্রকাশের পিঠে হাত দিতেই প্রকাশ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,,,

প্রকাশ: আমি তোমাকে ভালোবাসি ইশারা ভীষণ ভালোবাসি! আমাকে ভালোবাসার কেউ নেই জানো?? আমার সব থেকেও আমি নিঃস্ব কিচ্ছু নেই আমার,,কেউ নেই আমার কেউ ভালোবাসে না আমায়,,

ইশারা শুধু শুনছে প্রকাশের কথা,,প্রকাশের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে প্রকাশের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট আছে যেটা কোনো সময় কাওর চোখে পরে না,,,ইশারা আস্তে করে প্রকাশ কে সোজা করে দাঁড় করিয়ে প্রকাশের চোখের জল মুছিয়ে প্রকাশের হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো আর সোফায় বসিয়ে নিজের হাতে খাওয়াতে শুরু করলো,,,প্রকাশ ও বাঁধা দেয়নি কারন আজ প্রকাশ ও অনেক দিন পর কাওর হাতে খাচ্ছে,,,নিজের ভালোবাসার হাতে খাচ্ছে,,

খাওয়ার পর ইশারা বিছানায় বসতেই প্রকাশ গিয়ে ইশারার কোলে শুয়ে পরলো আর বললো,,,

প্রকাশ: আমার আজ তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে ইশারা! আজকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে একটু! আমি একটু শান্তি চাই (করুন কণ্ঠে)

ইশারা প্রকাশের চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো আর প্রকাশ মুচকি হাসলো আর বলতে শুরু করলো……………..
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here