“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_৪

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৪
.
🌸
.
ইশারা প্রকাশের চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো আর প্রকাশ মুচকি হাসলো আর বলতে শুরু করলো…

প্রকাশ: জানো আমি আমার মা কে ভীষণ ভালোবাসি,,,ছোট বেলায় আমি সব সময় মায়ের আগে পিছে ঘুর ঘুর করতাম,,মা কে ঠিক করে কাজ ও করতে দিতাম না সব সময় মা কে বিরক্ত করা ছিলো আমার কাজ,,,কিন্তু হঠাৎ সব পালটে গেলো আমার মা আমায় ছেড়ে চলে গেলো তাও সারাজীবনের মতো না ফেরার দেশে,,,খুব রাগ হয়েছিল বাবার ওপর সেদিন কেনো আমার মা কে ফিরিয়ে দিলো না আমায়?? কি দোষ ছিলো আমার মায়ের?? কথা বলতাম না বাবার সাথে ভাবতাম বাবা ইচ্ছে করে মাকে দুরে সরিয়ে দিয়েছে আমার থেকে কারণ আমি বাবা কে আদর করতাম না কাছে যেতাম না তাই,,,পরে যখন বড়ো হলাম তখন বুঝলাম যে আমার মায়ের ক্যান্সার ছিলো লাস্ট স্টেজ বাঁচানো সম্ভব ছিলো না,,তখন আর কিছু বলতাম না বাবা কে,,,আমার বয়স যখন ৬ তখন মা চলে যায় আর যখন জানতে পারলাম মা কেনো চলে গেছে তখন আমার বয়স ১২,,,মা কে হারিয়ে ছিলাম তাই বাবা কে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইতাম কিন্তু সেটাও আমার ভাগ্যে ছিলো না,,,বাবার কোনো সময় ছিলো না আমার জন্য আমি যে তার ছেলে তা হয়তো উনি ভুলেই গেছিলেন সেই নিয়ে কোনদিন অভিযোগ ও করিনি বাবা বাবার মতো থাকতেন ব্যবসা নিয়ে আর আমি থাকতাম আমার মতো পড়াশোনা নিয়ে,,,বাড়ির কাজের লোকরাই আমায় মানুষ করেছে ধরতে গেলে কারণ আমার যে কেউ নিজের ছিলই না,,,পিসির বিয়ে হয়ে গেছিল আর কাকা আলাদা হয়ে গেছিলো বাবার সাথে ঝগড়া করে তাই আর ও একা হয়ে যাই আমি,,,জানো তোমার মতো আমাকে ও আমার বাড়িতে অবহেলা করা হতো,,,এই ভাবেই অবহেলা পেয়ে বড়ো হতে থাকি যখন কলেজে উঠলাম তখন জানো মাথায় সবসময় রাগ চড়ে থাকতো খুব অ্যারোগ্যাংট ছিলাম বুঝলাম অনেক গরীব মানুষ বড়লোকদের হাতে নিপীড়িত হচ্ছে তাই হয়ে গেলাম মাফিয়া,,,এটা করে অন্তত একটু ভালোবাসা পেয়েছিলাম সব বয়স্ক মানুষেরা যখন আমাকে নিজের ছেলে বলতো তখন আর নিজেকে একা মনে হতো না,,এভাবেই দিন টা কাটত কিন্তু রাত! রাতে জানো সব কষ্ট আমার মনে আবার ও উঁকি দিতো মনে করিয়ে দিতো আমার কেউ নেই! তাই আলাদা হয়ে গেলাম আমি,,,নিজের বাড়ি কিনে নিলাম এটা আমার ২ নম্বর বাড়ি আর আরেকটা ফ্ল্যাট আছে যেটা আমি প্রথম কিনেছিলাম,,,এরপর আমার বাবার আমাকে দরকার পড়ে তার বিসনেস এর জন্য আমি না করলে আমার সাথে আবার বিরোধিতা শুরু হয় আর আমি তো আমিই তাই সেইদিনের পর থেকে বাবার সাথে কোনো কথা নেই আমার,,,

প্রকাশ থেমে গেলো এতটুকু বলে ইশারা প্রকাশের চুলে বিলি কাটতে কাটতে মন দিয়ে কথা গুলো শুনছিলো বিছানায় হেলান দিয়ে হঠাৎ করে থেমে যাওয়ায় উঠে বসলো,,,দেখলো প্রকাশ নিজের চোখের জল টা মুছে নিলো আর আবার বলতে শুরু করলো,,

প্রকাশ: আমার জীবন তো এভাবেই চলছিল তারপর তুমি এলে আমার জীবনে,,,যেইদিন তোমায় বাজে কথা বলেছিলাম রাস্তায় [সূচনা পর্ব] সেইদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম আমি,,,কিন্তু তোমার দিকে কিছু বখাটে ছেলে বাজে নজরে তাকিয়ে ছিলো তাই আমার সহ্য হয়নি আর এতটা রিয়াক্ট করেছিলাম,,,আর তার পরে দ্বিতীয় বার দেখেছিলাম মেইন রোডে,,আমি না দেখলে সেদিন একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতো তোমার,,সেদিন ও তোমাকে অনেক বকে ছিলাম আর তারপরেই চায়ের দোকানের কাকা আমাকে তোমার কথা বলে,,,ব্যাস তারপর আর কি আমি বাড়ি ফিরে যাই কিন্তু আমার রাতের ঘুম উড়ে যায়,,,চোখ বুজলেই শুধু তোমার মুখ টা চোখে ভাসছিল,,,,

🥀🥀 ইন পাস্ট 🥀🥀

ইশারা বোবা! কথাটা শোনার পর প্রকাশ ইশারার যাওয়ার পথে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর তারপর চলে যায় কোনো কথা না বলে,,,বাড়ি ফিরে শাওয়ার নিয়ে নেয় আর চুপ করে শুয়ে পরে,,,সময়টা ছিলো বিকেল ৪টে আর প্রকাশ খালি এপাশ ওপাশ করছে শুয়ে শুয়ে শেষমেশ উঠে বসলো আর বিরক্তির স্বরে বলে উঠলো,,,

প্রকাশ: উফফফফ কেনো বার বার ঐ মেয়েটার মুখ চোখের সামনে ভাসছে,,,কেনো?? কি এমন আছে ঐ মেয়েটার মধ্যে যা নিমিষে আমার শান্তি কেড়ে নিলো,,,ধ্যাত চোখ বুজলেই শুধু ওর ঐ কান্না ভরা মুখটা ভেসে উঠছে আই থিঙ্ক না জেনে ওর সাথে মিসবিহেভ করেছি বলে এমন হচ্ছে,,,

এই বলে প্রকাশ গ্লাসে রাখা জল খেয়ে নিলো ঢকঢক করে আর একটা লম্বা নিশ্বাস নিলো আর সিগারেট হাতে নিয়ে ব্যালকনি তে চলে গেলো,,,

পরেরদিন …………….

প্রকাশ কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,ইশারার কলেজের সামনে,,সব মেয়েরা হা করে প্রকাশ কে দেখছে সেদিকে প্রকাশের কোনো খেয়াল নেই ও নিজের মনে ফোন ঘাটছে আর মাঝে মাঝে মাথা তুলে কলেজ গেটের সামনে তাকাচ্ছে,,,

প্রকাশ আজকে একটা টাইট ফিটিং কালো জিন্স তার সাথে ধুসর রঙের শার্ট পরেছে,,শার্টের একটা প্রান্ত গুঁজে রেখেছে আর একটা প্রান্ত ছাড়া,,আর হাত গুলো কুনুই অবধি গোটানো,,,চোখে অ্যাভিগেটর সানগ্লাস চুল গুলো ব্রাশ করে রেখেছে,,,চুলগুলো লম্বা আর সিল্কি হওয়ায় কয়েক টা চুল কপালে পরে রয়েছে,,,ডান হাতে ব্ল্যাক ব্রান্ডেড ওয়াচ আর বাম হাতে কালো মোটা ব্যান্ড আর পায়ে ওয়াইট লোফার,,,এটাই প্রকাশের স্টাইল ও সবসময় এভাবেই ড্রেস আপ করে,,,

প্রকাশ প্রায় অনেক্ষন ধরে ওয়েট করছে ইশারার জন্য বাট ইশারার কোনো দেখা নেই,,,বাধ্য হয়ে প্রকাশ একটা মেয়েকে ডাকলো আর জিজ্ঞেস করলো,,,

প্রকাশ: এক্সকিউজ মি!

মেয়েটি: ইয়েস (অবাক হয়ে)

প্রকাশ: আ’ম প্রকাশ,,প্রকাশ বোস

মেয়েটি: ইয়াহ আপনাকে কে না চেনে,,আ’ম রূপসা দাস,,,

প্রকাশ: অ্যাকচুয়লী আই নীড আ ফেভার,,তুমি কি বলতে পারবে ইশারা আজ কলেজে এসেছে কি না??

রূপসা: ইশারা??

প্রকাশ: ইয়াহ! ইউ নো হার??

রূপসা: আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড হয় ও,,

প্রকাশ: দেট’স গ্রেট,,ও কি আজ কলেজ আসেনি??

রূপসা: ও তো মাসে পাঁচ-ছয় দিন কলেজ আসে,,আজ আসেনি আগের দিন এসেছিল বলে,,

প্রকাশ: কেনো??

রূপসা: ওর মামি ওকে কলেজ আসতে দেয়না আমার থেকেই সব নোটস নেয়,,,আপনি কি জানেন ও কথা বলতে পারে না??

প্রকাশ: হ্যাঁ! আসলে আমি আগে জানতাম না আগেরদিন ইশারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল আর একটা গাড়ি ওর দিকে এগিয়ে আসছিল যেকোনো মুহুর্তে অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারতো বাট আমি বাঁচিয়েনি ওকে তারপর একটু মিসবিহেভ করে ফেলি তাই চায়ের দোকানের কাকা আমায় বলে ইশারা কথা বলতে পারে না,,,বাট ও তো কানে শুনতে পায় তাহলে কেনো ওভাবে হেঁটে যাচ্ছিল?

রূপসা: ও সবসময় অন্যমনুস্ক হয়ে থাকে,,,তাই হয়তো বুঝতে পারেনি,,,ইশারার মামি ওকে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছে তাই কাজ খোজার বাহানায় কলেজ আসে আর মেইন ক্লাস গুলো করে কাজ খুজতে বেরিয়ে যায়,,কথা বলতে পারে না দেখে বেচারি কোনো কাজ ও পাচ্ছে না,,,ওর একটা ভাই আছে খুব মিশুকে কিন্তু বেচারার হার্টে একটা ফুটো ধরা পরেছে তাই ইশারা কে ডক্টর বলেছে অপারেশন করাতে হবে যার জন্য টাকার প্রয়োজন এইজন্য ওর মামি ওকে কাজ খুজতে বলেছে ওরা নাকি এক পয়সা দেবে না,,,ইশারা কোনো কাজ পাচ্ছে না দেখে বাধ্য হয়ে বলেছে লোকের বাড়ি কাজ করবে এখন হয়তো সেটাই করছে,,,ওর মামি ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে একদিন তো মাঝ রাতে বাড়ি থেকে বাড় করে দিয়েছিল শীতের মধ্যে,,,অভাবেই বসে ছিল দরজার সামনে পরেরদিন জ্বর আসলেও ওর মামি সারা ঘরের কাজ করিয়েছে,,,ঐ শরীর খারাপ নিয়ে রান্না করেছে রান্নায় ভুল হওয়ায় গরম জলে হাত পুড়িয়ে দিয়েছে খেতে পর্যন্ত দেয়নি মেয়েটাকে,,,এইসব খবর আমি ওর ভাইয়ের কাছ থেকে পাই অনেক বার বলেছি ইশা তুই চলে আয় আমার বাড়ি আমি আর তুই একসাথে থাকবো এভাবে আর কয়দিন কোনদিন না তোর মামি তোকে মেরে….

প্রকাশ: নাহ!! ইশারার কিছু হবে না,,,তুমি আমাকে ওর বাড়ির এড্রেস দিতে পারবে??

রূপসা: হমম কিন্তু…

প্রকাশ: প্লিজ এড্রেস টা দাও

রূপসার থেকে এড্রেস নিয়ে প্রকাশ ওখানে থেকে বেরিয়ে সিধে ইশারার বাড়ি চলে যায়,,,আর বাড়ির দরজার সামনে যেতেই চিল্লামিল্লির আওয়াজ শোনে আর ভিতরে যেতেই ওর পায়ের সামনে ইশারা হুমড়ি খেয়ে পরে,,,প্রকাশ একবার ইশারার দিকে তাকায় আর একবার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার দিকে যার হাতে খুন্তি,,,প্রকাশ বুঝতে পারছে এটা ইশারার মামি আর মামির পিছনেই দাঁড়িয়ে কাঁদছে একটা বাচ্চা ছেলে,,,এটা যে ইশারার ভাই তা রূপসার কথা মনে করতেই প্রকাশ বুঝতে পারলো…………………..
.

.
[ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here