“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_৫

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৫
.
🌸
.
প্রকাশ ইশারা কে মেঝে থেকে তুলে দাঁড় করাতেই ইশারা প্রকাশের দিকে তাকালো,,,ইশারা একটু ভয় পেয়ে গেলো প্রকাশ কে দেখে আর প্রকাশ আবারও ইশারার সেই মায়াবি মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এর মাঝেই পিছন থেকে ইশারার মামি বলে উঠলো,,

মামি: আরেহ বাবা প্রকাশ! তুমি এখানে??

প্রকাশ ইশারা কে ভিতরে নিয়ে এনে সাইডে দাঁড় করাতেই ইশারার ভাই ইশান ছুটে এলো ইশারার কাছে,,আর প্রকাশ ইশানের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো

প্রকাশ: আপনি আমায় চেনেন?

মামি: তোমাকে না চিনলে চলে? এই এলাকার কতো গরীব মানুষের হয়ে লড়েছো তুমি কতো গুন্ডা বদমাইশদের শাস্তি দিয়েছো,,,মেয়েদের কে সেভ করেছো,,,বসো বসো

প্রকাশ: তাহ আপনার হাতে খুন্তি কেনো?? এটা রান্নাঘর বলে তো মনে হচ্ছে না আমার (সোফায় বসতে বসতে)

মামি: না না এটা কেনো রান্নাঘর হতে যাবে ঐ এই মেয়েটাকে শিক্ষা দিতে এসেছিলাম

প্রকাশ: খুন্তি দিয়েও শিক্ষা দেওয়া যায়?? ওয়াও!!

মামি: আর বলনা বাবা! এই যে এই মেয়েটা আমাদের বাড়িতেই থাকে আমাদের বাড়িতেই খায় আবার আমাদের নামেই নিন্দা করে,,,এমন বেইমান আমার মেয়েটা ওকে কতো ভালোবাসে কতো কথা শোনে ওর আর ও! আমার মেয়েটাকে সবসময় অপমান করে,,,কাজের লোক হিসেবে নয় নিজের মেয়ের মতো মনে করি আর ও এই ব্যবহার করে তাই আজকে অর রাগ টাকে ধরে রাখতে পারিনি (শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে ন্যাকা কান্না করে)

প্রকাশ: ও কাজের লোকের মেয়ে??

ইশান: মিথ্যে কথা বলছেন উনি এটা আমাদের বাড়ি আর ওরা আমার দিদিয়া কে ক…

মামি: চুপ! বড্ড বড়ো বড়ো কথা হয়েছে,,আদর দিয়ে বাঁদর তৈরী করেছি,,,ওর কথা কিছু মনে করো না বাবা!

প্রকাশ: সবই বুঝলাম কিন্তু যে কথা বলতে পারে না সে নিন্দে কি করে করবে??

ইশারা অবাক হয়ে তাকালো প্রকাশের দিকে,,,ইশারা ভাবছে

ইশারা: উনি জানেন আমি কথা বলতে পারিনা তারপরেও ওমন ব্যবহার করেছেন আমার সাথে কিছুদিন আগে?? করবে নাই বা কেনো ওনার মতো বড়লোক মানুষ আমার মতো মেয়ের সাথে কি বা ভালো ব্যবহার করবে??

মামি: হ্যাঁ মানে না!

___মা আমি একটু বের হচ্ছি বুঝ… (প্রকাশ কে দেখে পুরো শক)

মামি: আরে ঐ তো নেহা,,,আমার মেয়ে ভালই হলো দেখা হয়ে গেলো,,

নেহা: হেই! প্রকাশ

প্রকাশ: নেহা তুই এখানে?

নেহা: আরে আমার বাড়িতে আমি থাকবো না??

প্রকাশ: ওহ এটা তোর বাড়ি?? বাট আমি তো জানি এটা ঐ মেয়েটা (ইশারার দিকে উদ্দেশ্য করে) আই মিন ইশারার বাড়ি,,আ’ম আই রং??

মামি: হ..হ্যাঁ মানে এটা ওর বাবার বাড়ি কিন্তু ওর বাবা মা মরে যাওয়ার পর আমরাই থাকি,,

প্রকাশ: কিছুক্ষণ আগেই তো বললেন এটা আপনাদের বাড়ি,,,কথাটা কেমন দু-রকম হয়ে গেলো না?? (বাঁকা হেসে)

মামি: আব…

নেহা: আরে তুই বাদ দে তো এসব এতদিন পর দেখা হলো আমাদের চল একটু আড্ডা দি,,,তুই তো জানিস আমি ছিলাম না এখানে আমেরিকা ছিলাম,,,

ইশান: হ্যাঁ সেটাও আমাদের টাকায়,,

ইশারা: ইশান চুপ কর তুই! [ইশারায়]

প্রকাশ: হাহ! সত্যি কখনো চেপে থাকে না বায় দ্য ওয়ে অন্যদিন কথা হবে এই আড্ডা টা আমি অতো পছন্দ করি না সেটা তো তুই জানিসই সো আজ একটু কাজ আছে আমার,,,বায়!

প্রকাশ সানগ্লাস টা পড়ে নিলো আর বাঁকা হেসে ইশারার দিকে এগিয়ে গেলো,,,প্রকাশ কে এগোতে দেখে ইশারা চোখ নামিয়ে নিলো আর প্রকাশ ওর সামনে দাঁড়িয়ে সবাই কে অবাক করে দিয়ে বলল

প্রকাশ: চলো আমার সাথে!!

ইশান: আমার দিদিয়া কে কোথায় নিয়ে যাবে তুমি?

প্রকাশ হাঁটু গেড়ে বসলো ইশানের সামনে আর ইশানের হাত দুটো ধরে বললো,,

প্রকাশ: কলেজে! তুমি তো কলেজে পরো না নাহলে তোমায় ও নিয়ে যেতাম

ইশান: হিহিহি কলেজে পরি না তো কি হয়েছে স্কুলে তো পরি

প্রকাশ: আরেহ তাই তো! তাহলে স্কুলে যাওনি কেনো??

ইশান: মামি যেতে দেয়নি,,স্কুলে গেলে টিফিন দিতে হয় বলে যেতে দেয় না বই ও কিনে দেয় না ঠিক করে,,,আমার খুব খিদে পেয়েছে তাই খাবার চেয়েছিলাম (ইশানের কথার মাঝে ইশারা কিছু বলতে গেলে প্রকাশ রেগে তাকায় আর ইশারা চুপ করে যায় এইদেখে নেহা আর মামি ও কিছু বলার সাহস পায় না) দিদিয়া আমাকে খাওয়ার দেওয়ার কথা বলতেই মামি রেগে গিয়ে গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়ে দেয় আর দিদিয়া কে মেরে বাড় করে দিচ্ছিল কাজ করার জন্য,,,টাকা না দিলে খেতে দেবে না বলেছে (ইশান কাঁদতে কাঁদতে বললো)

প্রকাশ ইশানের চোখের জল মুছিয়ে নেহার মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,,

প্রকাশ: শাস্তি পেতে হবে একদিন না একদিন আপনাদের,,তৈরী থাকবেন

প্রকাশ বাম হাতে ইশানের হাত ধরলো আর ডান হাতে ইশারার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো ও বাড়ি থেকে,,,কিছুদূর এসে নিজের বাইকে বসলো প্রকাশ আর ইশান কে ধরে নিজের সামনে বসালো বাইকের,,,ইশারার দিকে তাকাতেই দেখলো ইশারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,,

প্রকাশ: তাকিয়ে থেকে লাভ নেই তারাতাড়ি বসো দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার

ইশারা: আমি যাবো না আপনার সাথে,,,কেনো যাবো আমি?? কে আপনি আমি তো আপনাকে চিনি ও না?? [ইশারায়]

ইশান ইশারার কথাটা বলে দিলো প্রকাশ কে আর প্রকাশ বললো,,,

প্রকাশ: আমাকে চিনে যাবে এখন চলো ইশানের সাথে সাথে আমার ও খুব খিদে পেয়েছে,,,সকাল থেকে তোমার কলেজের সামনে তোমার অপেক্ষায় না খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তোমার দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না সো চলো,,,

ইশান: হিহি দিদিয়া চল না,,,আমি কোনদিন বাইক চড়িনি আর তুই ও তো চড়িসনি চল না,,

প্রকাশ: তোমার দিদি এতদিন যেমন বাইক চড়েনি তেমন এখন আমার বাইক ছাড়া অন্য কাওর বাইকে চড়বে না

ইশারা আর ইশান দুজনেই প্রকাশের কথার মনে না বুঝে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আর প্রকাশ বললো

প্রকাশ: এবার তো বসুন ম্যাডাম

ইশারা আর কিছু না বলে বসে পরলো বাইকে কিন্তু প্রকাশ কে ধরলো না সেই দেখে প্রকাশ বললো

প্রকাশ: আমি টিকটকের ভিডিও করছি না এখানে যে তুমি ধরে বসবে না আমি কিছুদূর গিয়ে একটা ব্রেক মারব আর তুমি আমাকে ধরে বসবে,,,ব্রেক মারলে ছিটকে রাস্তায় পরবে যা চেহারা তাতে এর চেয়ে বেশি আর কিছু হবে না সো চুপচাপ ধরে বসো,,,

ইশারা: খরুস একটা আমি কি বলেছি নাকি টিকটক ভিডিও হচ্ছে এখানে যত্তসব,,(মনে মনে)

প্রকাশকে ধরে বসলো ইশারা আর প্রকাশ এক গালে হেসে বাইক নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের চলে গেলো সেখানে গিয়ে চাউমিন অর্ডার করে দিলো,,,সেই শুনে তো ইশান নাচানাচি করছে আর প্রকাশ ইশানের হাসি দেখছে আর মজা করছে ওর সাথে,,,ইতিমধ্যে প্রকাশ আর ইশানের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে কিন্তু ইশারা প্রকাশের সাথে কথা বলছে না,,,প্রকাশ ইশান কে বসিয়ে রেখে ইশারার কাছে এলো ইশারা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো তাই,,,ইশারার কাছে এসে ইশারার হাত ধরতেই ইশারা হাত সরিয়ে নিলো আর মুখ টা কাঁদো কাঁদো করে ফেললো এই দেখে প্রকাশ প্রথমে অবাক হলেও পরে দেখলো ইশারার হাত টা পুড়ে গেছে,,,প্রকাশ বললো

প্রকাশ: সরি! আমি জানতাম না তুমি কথা বলতে পারো না আগের দিন তুমি যখন চলে গেলে তখন চায়ের দোকানের কাকা আমায় তোমার কথা বলে,,,আই আম সরি আমার ওভাবে বিহেভ করা উচিত হয়নি তোমার সাথে

ইশারা: লোক টা তো সরি বলতেই এসেছে আর আমি কি না কি ভাবলাম (মনে মনে)

প্রকাশ: তা আমায় কি ক্ষমা করা যাবে??

ইশারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো আর প্রকাশ বললো

প্রকাশ: চলো কিছু খেয়ে নেবে তারপর তোমাকে কলেজে ছেড়ে দিয়ে আসবো

ইশারা কে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে দিয়ে প্রকাশ ওদের বলে কোথাও একটা বেরিয়ে গেলো আর বলে গেলো আসছে,,,ইশারা চামচ দিয়ে খাচ্ছিল তাই অসুবিধা হয়নি কিন্তু জায়গা টা ভীষণ জ্বলছে,,,তবুও কিছু বলছে না ইশারা হঠাৎ করে কোথা থেকে প্রকাশ এসে ইশারার পাশে বসে পরলো আর ওর হাত টা নিজের কাছে নিয়ে এলো আর ওষুধ লাগাতে শুরু করলো আর তারপর ব্যান্ডেজ করে দিলো,,ইশারা একটু অবাক হয়ে গেলো ব্যাপার টায় সবাই প্রায় ওদের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু প্রকাশের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ও নিজের কাজ করে চলেছে,,,

প্রকাশ ইশারার হাত ছেড়ে নিজের ভাগের খাবার টা খেতে শুরু করলো এমন ভাবে খাচ্ছে জানো কোনো যায় আসে না ফুল অ্যাটিটিউড নিয়ে,,খাবার খেতে খেতেই প্রকাশ বললো

প্রকাশ: প্রথম বার এই প্রকাশ বোসের সাথে কোনো মেয়েকে দেখছে লোকজন তাই এভাবে তাকিয়ে রয়েছে,,,তাই লজ্জা না পেয়ে খাও আর এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কিছু হয়নি আই নো আই আম লূকিং সো হ্যান্ডসাম

ইশারা এবার ভীষণ লজ্জা পেলো প্রকাশের কথায় আর চুপচাপ মাথা নীচু করে খেতে শুরু করলো আর মনে মনে প্রকাশের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো,,

খাওয়া শেষে প্রকাশ ইশান আর ইশারা কে নিয়ে ইশারার কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো,,কলেজ পৌঁছাতেই সবাই ইশারা আর প্রকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে রইছে সেই দেখে ইশারা লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ মজা পাচ্ছে আর ওদের দেখে রূপসা এগিয়ে এলো

রূপসা: ইশারা! এখন আসার সময় হল?

প্রকাশ: আসতো না আমি না নিয়ে এলে বায় দ্য ওয়ে তুমি আজ একটু ম্যানেজ করে দিয়ো ওর বইগুলো নেক্সট ডে থেকে ও বই নিয়েই আসবে,,আর থ্যাংক ইউ

রূপসা: থ্যাংক ইউ তো আমার আপনাকে দেওয়া উচিত,,

প্রকাশ: ইটস ওকে শা…আই মিন রূপসা

রূপসা আর ইশারা চলে যেতেই ইশান প্রকাশ কে বললো,,

ইশান: ভাইয়া দিদিয়ার বই খাতা নেই

প্রকাশ: কিইইইই!!

ইশান: হম লুকিয়ে কলেজে গেছিল বলে সব খাতা বই পুড়িয়ে দিয়েছে

প্রকাশ: চলো আইসক্রিম খাবে?

ইশান: হ্যাঁ

প্রকাশ যে রেগে গেছে সেটা ইশান কে বুঝতে দিলো না চুপচাপ ওখান থেকে চলে গেলো,,,এদিকে ইশারা ক্লাস করে নিলো কিন্তু ভীষণ ভয় করছে ওর বাড়ি কি ভাবে ফিরবে আর ফিরলে মামি কি অবস্থা করবে ওর??
.

.
[ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here