“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_৬

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৬

🍁
🍁

প্রকাশ গাড়ির বোনাটের উপর শুয়ে আছে আর উপর দিকে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছেচোখ বন্ধ করে,,,কিছু একটা মনে করতেই প্রকাশ মুচকি হাসলো চোখ বন্ধ করে আর হুট করে উঠে বসলো,,প্রকাশ এক পা ভাঁজ করে হাঁটুর ওপর নিজের হাত ভর করে সিগারেটে টান দিলো আর ধোঁয়া টা ছেড়ে বাঁকা হেসে বললো,,

প্রকাশ: ইউ আর ইন লাভ প্রকাশ,,ইয়েস ইউ আর ফল ইন লাভ,,মাই গড আমি তো নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না আমার মনে একজন বাসা বেঁধেছে শুধু আমার মন না,,আমার মস্তিষ্ক জুড়ে সে বিচরণ করছে,,,আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি কেনো আমি চোখ বুজলেই তোমাকে দেখতে পাচ্ছি কেনো সারাক্ষণ শুধু তোমার কথা ভাবছি কারণ আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি ইশারা,,,আজ পর্যন্ত আমি কোনো মেয়ের দিকে ঘুরেই তাকায়নি সেখানে তোমাকে একবার দেখাতেই আমার ভালো লেগে গেছে,,,যেখানে সব ছেলেরা মেয়েদের মিষ্টি কথার প্রেমে পড়ে সেখানে আমি তোমার ইশারায় প্রেমে পড়েছি,,,আমার যে তোমাকে চাই ইশারা সেটা যেকোনো মূল্যে কারণ তুমি হবে আমার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য তোমাকে আকড়ে ধরেই এই প্রকাশ বাঁচবে,,

প্রকাশ লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামল আর গাড়ি তে গিয়ে বসে পরলো,,,গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পরলো ইশারার কলেজের উদ্দেশ্যে,,এতক্ষণ প্রকাশ একটা নির্জন জায়গায় গাড়ির বোনাটের উপর শুয়ে ছিলো আর নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল যা প্রকাশ পেয়ে গেছে,,,

ইশারা রাস্তার সাইড দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে মনে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে না জানি মামি আর নেহা কি বলবে কি শাস্তি দেবে,,,ইশারার হাতে কোনো বই খাতা বা ব্যাগ নেই কারণ প্রকাশের সাথে বেরযে আসার সময় কিছুই নিতে পারেনি আর এখন তো এমনিতেও ওর কোনো বই নেই,,,বিকেল হয়ে এসেছে আর রাস্তায় কেউ নেই আসলে রাস্তা টা একটু ফাঁকা ফাঁকা,,খুব কম লোকজন চলা ফেরা করে এখান দিয়ে বেশিরভাগ সময় বখাটে ছেলেরা বসে আড্ডা দেয় রাস্তার ধারে বসে,,ইশারা আনমনে হাঁটতে হাঁটতে এই রাস্তা দিয়ে চলে এসেছে আর এখন ওর খেয়াল হয়েছে এটা কোন রাস্তা

ইশারা: এটা তো ঐ রাস্তাটা যেখানে পাড়ার বখাটে ছেলেরা বসে আড্ডা দেয়,,এইখান দিয়ে আসাটা আমার ঠিক হলো না অনেকটা তো চলে এসেছি এখন আবার ব্যাক করতে গেলে দেরী হয়ে যাবে,,থাক এখান দিয়েই চলে যাই (মনে মনে)

ইশারা এক-দু কদম এগোতেই দেখলো ছেলেগুলো বসে আড্ডা দিচ্ছে মদ খাচ্ছে তাস খেলছে,,,ইশারা একটু ভয় পেয়ে গেলো আর চুপচাপ পিছন ফিরে গেলো

ইশারা: নাহ এখান দিয়ে যাওয়া টা ঠিক হবে না,,আমি একা যদি এরা কিছু করে বসে আমি বরং ফিরে যাই (মনে মনে)

এই বলে ইশারা যেই না পিছন দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলো তখনই একটা ছেলে ডাকলো

১ম জন: কি বেইবি আমাদের দেখে উল্টো পথে চলে যাচ্ছো কেনো??

২য় জন: আমাদের কাছে এসো ভয় পেয়ো না (মাতাল কণ্ঠে)

ইশারা এগিয়ে যেতে নিলেই একটা ছেলে এসে দৌঁড়ে ইশারার হাত ধরে আর ইশারা কে আটকে দেয়,,,অন্য ছেলে গুলো ইশারা কে গোল করে ঘিরে ফেলে,,

১ম জন: কি হলো বেইবি কথা বলছো না কেনো?? এভাবে কাঁদলে কেউ তোমায় বাঁচাতে পারবে না হা হা হা

ইশারা শুধু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,,

২য় জন: আমার মনে হয় কথা বলতে পারে না তাই তো ব্যর্থ চেষ্টা করছে হাত ছাড়ানোর

১ম জন: কি বেইবি তুমি কথা বলতে পারোনা??

ইশারা না বোধক মাথা নাড়লো আর ছেলেটা ওর হাত ছাড়তেই ও ওদের কাছে হাত জোড় করে ইশারায় ওকে ছেড়ে দিতে বললো,,

১ম জন: ওহ হো তাহলে তো ভীষণ ভালো চিৎকার ও করতে পারবে না

৩য় জন: মজাই মজা হবে আজকে হা হা হা

১ম: প্রথমে আমি মজা লুটি তারপর নাহয় তোরা দুজন নিস

এই বলে যেই না ইশারার ওড়নায় টান মারতে যাবে তখনই ইশারার পিছন থেকে কেউ একজন ছেলেটা কে সজোরে লাথি মারলো আর ছেলেটা ছিটকে পরলো,,

২য় জন: এই কে রে তুই?? (মাতাল অবস্থায় চোখ ছোট করে দেখার চেষ্টা করছে)

প্রকাশ: তোদের যম!

ছেলেটি আর কেউ নয় প্রকাশ,,ইশারা কে কলেজ থেকে আনতে যাবে বলে কলেজে গিয়ে দেখে ইশারা নেই তাই ইশারা যেই রাস্তা দিয়ে ফেরে সেই রাস্তা দিয়ে যেতে লাগে আর সেই সময় চায়ের দোকানের কাকা কে জিজ্ঞেস করে এদিক দিয়ে ইশারা গেছে নাকি,,কাকা না বলায় প্রকাশ এই রাস্তা টা দিয়ে আসে কারণ এই দুটো রাস্তা দিয়েই ইশারার বাড়ি যাওয়া যায়,,

৩য় জন: প..প্র..প্রকাশ ভাই (ছেলেটা আর কিছু না বলে উল্টো দিকে দৌঁড় দিলো)

১ম জন: এই ও আমাদের জিনিস ছেড়ে দে ওকে,,তুই কে বে??

প্রকাশ: ঐ যে বললাম তোদের যম,,তোদের মধ্যে একজন আমাকে চিনতে পেরে উল্টো পথে দৌঁড় মেরেছে কিন্তু তোরা সেটা পারবি না,,

বলেই দুটো ছেলে কে মারতে শুরু করল প্রকাশ,,,ইশারা এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো কারন ওরা শুধু কথা বলছিল এখন প্রকাশ কে মারতে দেখে ইশারা ভয় পেয়ে গেলো আর প্রকাশের কাছে গিয়ে প্রকাশ কে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে কিন্তু প্রকাশ থামার নামই করছে না,,ইশারা কে হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো

প্রকাশ: জানিস তোরা কার দিকে বাজে নজর দিয়েছিস?? জানিস???? আমার জান হয় ও,,তোর ঐ চোখ আমি তুলে ফেলবো আর এই হাত দিয়ে ওকে ছুঁয়েছিস তাই না(ছেলেটার হাত তুলে) এই হাত আর থাকবে না তোর (মুচড়ে দিলো)

ছেলেটি: আআআআআআ (চিৎকার করে উঠলো)

ছেলেটির আর্তনাদ শুনে ইশারা ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো আর কানে হাত দিয়ে দিলো,,,ইশারা ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো ছেলে দুটো নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে আর ওদের নাক মুখ পুরো ফেটে গেছে আর রক্ত বের হচ্ছে,,ইশারা ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে প্রকাশের দিকে তাকালো আর দেখলো প্রকাশের চোখ দুটো ভয়ংকর লাল হয়ে রয়েছে ভীষণ হিংস্র লাগছে প্রকাশ কে,,,ইশারা দু-কদম পিছিয়ে গেলো আর আস্তে আস্তে পিছোতে পিছোতে দৌঁড়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে,,প্রকাশ ইশারার যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে ছেলেগুলোর দিকে তাকালো,,আর একটা লাথি মেরে ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো,,

🍁🍁

ইশারা বাড়ি ফিরে কাওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো আর দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশরূমে ঢুকে গেলো,,,শাওয়ারের ট্যাপ খুলে ইশারা ধপ করে বসে পরলো আর কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভাবতে লাগলো,,,বরাবর ইশারা এসব মারপিট গুন্ডাগিরি গোলাগুলি তে ভয় পায়,,,রক্ত টাকে ভীষণ ভয় পায় ইশারা আর আজ সেই রক্তাক্ত মানুষ ওকে দেখতে এলো,,ঘৃণা আসছে এখন প্রকাশের প্রতি ইশারার,,

এদিকে প্রকাশ বাড়িতে এসে ঘরের প্রত্যেক টা জিনিস ভাঙচুর করছে আর চিৎকার করে বলছে,,

প্রকাশ: কেনো আমি নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল করতে পারি না,,কেনো???? ঐ ছেলেগুলো ইশারার যদি আজ কোনো ক্ষতি করে দিতো তাহলে কি হতো এটা কি ইশারা একবার ও ভাবছে?? আমি জানি ও আমাকে ভুল বুঝছে,,এবার ইশারা ও আমাকে ভুল বুঝে চলে যাবে,,নাআআআআ

ড্রেসিং টেবিলের কাঁচের উপর ঘুসি মারলো প্রকাশ আর কাঁচ টা চূর্ণ বিচুর্ন হয়ে গেলো এদিকে প্রকাশের হাত থেকে ও রক্ত ঝরছে দরদর করে,,,সেদিকে প্রকাশের কোনো খেয়াল নেই প্রকাশ বাম হাত দিয়ে নিজের ঘাড়ে হাত বোলাচ্ছে মুখ ডলছে রাগ কমানোর জন্য,,

প্রকাশ: ইশারা তোমাকে বুঝতে হবে তুমি শুধু আমার,,তোমাকে আমি ব্যতীত অন্য কেউ দেখবে না তোমার উপর বাজে নজর বলো আর ভালো নজর সব আমার পরবে,,,তোমার উপর অধিকার শুধুমাত্র আমার এই প্রকাশ বোসের,,

একটা ফুলদানি আছড়ে ভেঙে ফেললো আর ব্যালকনি তে চলে গেলো,,,ওখানে বসে প্রকাশ মদের বোতলে চুমুক দিচ্ছে আর হাত থেকে এখনো রক্ত বের হচ্ছে,,এক সময় প্রকাশ সেন্সলেস হয়ে যায় ওখানে বসেই

ইশারা পরের দিন নীচে নেমে আসতেই দেখে মামি রান্নাঘরে কাজ করছে সেখানে যেতেই ইশারার মামি ধমক মেরে বলে

মামি: আর এইখানে আসতে হবে না ঢঙ করে,,যা কলকাঠি তুই নেরেছিস না মেয়ে বোবা হয়ে তা আমি বা আমাদের মতো মেয়েরা পারবে না

ইশারা: কি করেছি আমি?? [ইশারায়]

মামি: ন্যাকাষস্টি জানো কিছু জানে না,,ঐ প্রকাশের ছেলেরা এসে আমাদের হুমকি দিয়ে গেছে জানো তোকে প্রতিদিন কলেজে পাঠাই,,,নাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে না,,নে এবার যা কলেজে গিয়ে আমাকে উদ্ধার কর,,,

ইশারা আর কিছু বললো না কারণ গতরাতে প্রকাশের যে রুপ দেখেছে তার পরে ইশারার সাহস নেই ওর মুখের উপর কোনো কাজ করার কিন্তু প্রকাশের সাথে দুরত্ব বজায় রাখবে ইশারা এটা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে ইশারা,,

🍁🍁

ইশারা কলেজে ঢুকবে ঠিক সেই সময় দেখতে পেলো দুরে পার্কিং লটে একটা সাদা বড়ো গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে প্রকাশ একদৃষ্টে ইশারার দিকে চেয়ে রয়েছে,,,প্রকাশের চাহুনী তে বোঝা যাচ্ছে ও কতটা অনুতপ্ত,,,চোখ গুলো লাল হয়ে রয়েছে চুলগুলো এলোমেলো উস্ক খুস্কো হয়ে রয়েছে,,একটা জিন্স আর নেভি ব্লু টি শার্ট পড়া ডান হাত পকেটে গোঁজা আর বাম হাতে সিগারেট,,,মাঝে মাঝেই তাতে টান দিচ্ছে আর ধোঁয়া টা নাক দিয়ে বের করছে,,প্রকাশের এমন লুকেও ওর এটিটিউড ধরা পড়ছে ইশারা তা এড়িয়ে গেলো আর কলেজে ঢুকে পরলো,,,প্রকাশ নিজের হাতের সিগারেট টা ফী দিলো ইশারার কলেজে ঢোকার সাথে সাথেই,,

ইশারা ক্লাসে যায়নি চুপ করে গাছের নীচে বসে আছে আর বাদ বাকি সব কলেজ স্টুডেন্টরা ওর আশে পাশে বসে গল্প করছে,,,ইশারা ভাবনায় মগ্ন সেই সময় ইশারার হাতে টান পরলো,,ইশারা উপরে দিকে তাকাতেই দেখলো প্রকাশ ওর দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রয়েছে,,ইশারা তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে বলাবলি করছে,,,ইশারা প্রকাশের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই প্রকাশ এক টান মেরে ইশারা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আর…………………………..
.
🍁
.
[ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🥀]

{ ইচ্ছে আছে গল্পটাকে একটু বড়ো করার কিন্তু আপনাদের রেসপন্স দেখে আর ইচ্ছে করছে না,,আপনাদের তো কমন গল্পের থিম ভালো লাগে যেখানে রোম্যান্স থাকবে ভিলেনগিরি থাকবে,,,আমার আনকমন গল্প হয়তো আপনাদের ভালো লাগছে না তবুও আমি চেষ্টা করছি আপনাদের মন মতো করার,,,তাও ভালো না লাগলে অল্পে শেষ করে দেবো কারণ এতো কষ্ট করে ভেবে লেখার পর রেসপন্স না এলে মন খারাপ হয়ে যায়,,ধন্যবাদ 🍁 }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here