“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_১৫

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_১৫
.
🌸
.
এটা বলতে না বলতেই গুলির আওয়াজ হলো আর ইশারার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরতে লাগলো,,ইশারা চোখ বুজে রয়েছে ইশারার মনে হচ্ছে প্রকাশ গুলি টা ওকে করেছে,,ইশারার কষ্ট হচ্ছে না আর যাই হোক যাকে ভালোবাসে তার হাতে মরতে হচ্ছে ওকে,,

ইশারা: আমার কোনো যন্ত্রণা হচ্ছে না কেনো?? গুলি লাগলে তো যন্ত্রণা হওয়ার কথা কই তেমন কিছুই তো হচ্ছে না আমার?? (মনে মনে)

ইশারা এবার আস্তে আস্তে চোখ খুললো চোখ খুলতে না খুলতেই আতকে উঠলো ইশারা গুলি টা ওর লাগেনি গুলি টা প্রকাশের লেগেছে,,প্রকাশের হাত দিয়ে দরদর করে রক্ত ঝরছে আর বন্দুক টা মেয়েটার হাতে,,মেয়েটা আর কেউ নয় ওর নিজের মামির মেয়ে নেহা!

নেহা: প..প..প্রকাশ এটা ত..ত..তুই কি ক..ক..করলি?? আমি তো ত..তোকে গুলি করিনি ত..তা..তাহলে??

ইশারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে নেহা বলছে নেহা প্রকাশ কে গুলি করেনি তাহলে প্রকাশের হাত দিয়ে রক্ত পরছে কেনো,,ইশারা দৌঁড়ে প্রকাশের কাছে চলে গেলো,,প্রকাশ এক হাত দিয়ে নিজের হাত দিয়ে চেপে রেখেছে যে জায়গা টা গুলি লেগেছে,,

__নাআআআআ!!

প্রকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার দিক থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসলো,,প্রকাশ আর ইশারা সেদিকে তাকিয়ে দেখলো ইশারার মামা আর মামি দাঁড়িয়ে আছে,,ইশারার মামি দৌঁড়ে নেহার কাছে চলে এলো আর নেহার হাত থেকে বন্দুক টা ফেলে দিলো তারপর প্রকাশ কে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো,,

মামি: আমার মেয়ে তোমায় গুলি করেনি তুমি নিজেকে নিজে গুলি করেছো,,মিথ্যে অভিযোগে ফাসাতে চাইছো তুমি আমার মেয়ে কে,,

প্রকাশ: তার কি প্রমাণ আছে?? স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার হাত থেকে রক্ত পরছে গুলি লেগে আর আপনার মেয়ের হাতে এতক্ষণ সেই বন্দুক টা ছিলো,,এর মানে আপনার মেয়ে আমাকে মারতে চেয়েছে ইটস আ কেস অফ এটেম্প টু মার্ডার,,

মামা: নাহ আমার মেয়ে এমন কাজ কেনো করবে?? তুমি কেনো এভাবে ফাঁসাতে চাইছে আমার মেয়েকে,,

প্রকাশ: আমি কেনো শুধু শুধু আপনার মেয়েকে ফাঁসাবো বলুন,,আমি তো আপনার মেয়েকে ভালোবাসি,,তাই তো ওর কথায় আজ এখানে ছুটে এসেছি এমন কি ইশারা কে মারতেও যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনার মেয়েই তো আমায় গুলি করে দিলো,,আহ! (হাত টা ধরে)

ইশারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে প্রকাশের দিকে,,ইশারা ভাবছে যেই প্রকাশ কি না এতো কষ্ট করেছে ইশারার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সেই প্রকাশ কি না আজ ইশারা কে মারতে চায়..?? কিন্তু ইশারা তো স্পষ্ট দেখেছে বন্দুক টা প্রকাশের হাতে ছিলো আর গুলির আওয়াজ হতেই ইশারা চোখ বন্ধ করে নেয় তাহলে,,?? কিচ্ছু মাথায় আসছে না ইশারার,,

মামি: ত,,তুমি আমার ম,,মেয়েকে ভালোবাসো??

প্রকাশ: হ্যাঁ,,তাই তো আজকে এখানে এসেছি,,আপনার মেয়েই তো বললো এখানে ইশারা কে নিয়ে আসতে মারার জন্য,,

নেহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশারার মামা বলে উঠলো

মামা: তাহলে শুভ কাজে দেরী কিসের?? এই মেয়েকেও ঠিক সেভাবে সরিয়ে দাও যেভাবে আমরা ওর বাবা-মা কে অনেক বছর আগে সরিয়ে ছিলাম,,

প্রকাশ: মানে,,??

মামি: তুমি তো ইশারা কে ভালোবাসো না তাই না?? কিন্তু এতদিন কেনো নাটক করলে??

প্রকাশ: আসলে যেদিন আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আমার নেহার সাথে দেখা হয় তারপরেই নেহা কে আমি প্রপোস করি আর নেহা আমাকে এক্সেপ্ট করে কিন্তু তারপর বলে যে আমাকে ইশারার সাথে ভালোবাসার নাটক করে এই বাড়ির সম্পত্তির কাগজে সাইন করাতে হবে যাতে এই সব সম্পত্তির মালিক আপনারা হন,,কি তাই তো নেহা,,??

নেহা: হ্যাঁ,,কিন্তু তার আগেই ইশারার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল দেখে প্রকাশ ইশারা কে বিয়ে করে নেয় আর ইশারা কে বিশ্বাস করায় যে ও ইশারা কে ভালোবাসে,,,আজ ইশারা কে এখানে ডেকেছি সম্পত্তির কাগজে সাইন করাবো বলে আর তারপর ওকে শেষ করে দেবো,,ঠিক যেভাবে তুমি আর বাবা ইশারার বাবা মার থেকে সম্পত্তির কাগজ নিয়ে ওদেরকে ইচ্ছে করে অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলেছো,,

মামা: কিন্তু তখন আমরা কি আর জানতাম ওই সম্পত্তির কাগজে সব কিছু ইশারার নামে করা আছে,,

মামি: কতো চেষ্টা করেছি এ মেয়েকে দিয়ে সাইন করানোর কিন্তু কিছুতেই সাইন করেনি,,মেরেও ফেলতে পারবো না ওকে আবার,,মেরে ফেললে তো এইসব সম্পত্তি সরকারের কাছে চলে যাবে,,ওকে নিজের ইচ্ছায় এই সম্পত্তি দিতে হবে আমাদের,,

নেহা: আর আজ এতো দিন পর সেটা হবে,,এই আপদ টা সাইন করে সব সম্পত্তি আমাদের নামে করে দেবে,,কিন্তু প্রকাশ!! (প্রকাশ কে উদ্দেশ্য করে) তুই এমন করলি কেনো?? তোর তো ইশারা কে মারার কথা তা না করে তুই নিজের হাতে গুলি চালিয়ে আমার হাতে দিয়ে দিলি বন্দুক টা,,কেনো??

__তোদের সব কটাকে জেলে ভরার জন্য!!

কথাটা শুনে সবাই পিছন ফিরে তাকালো আর দেখলো রাতুল দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গে পুলিশ,,নেহা আর ওর বাবা-মা ঘাবড়ে গেলো এই দেখে,,

প্রকাশ: হ্যাঁ কি জানো বলছিলেন আপনারা?? ইশারা কে ঠিক সেভাবে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে যেভাবে ওর বাবা-মা কে সরিয়ে দিয়েছেন,,

মামা: ওহ তো তার মানে তুমি এসব ইচ্ছে করে করলে??

মামি: নাটক ইশারার সাথে না আমাদের সাথে,,আমার মেয়ের সাথে করছিলে তুমি??

প্রকাশ: একদম ঠিক! আপনারা চালাক হলেও আপনাদের মেয়েটা বড্ড বোকা জানেন তো?? এর জন্যই তো ওকে নিজের ঘুটি বানিয়ে আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারলাম,,আমি অনেক আগেই জানতাম ইশারার বাবা-মা অ্যাক্সিডেন্ট এ মারা গেছে কিন্তু এর পিছনে তো কোনো রহস্য ও থাকতে পারে কারণ ইশারার বাবা-মায়ের অনেক সম্পত্তি ছিলো,,কেউ ইচ্ছে করে মেরেও ফেলতে পারে তাদের,,এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই আমি ইশারার বাড়ি যাই আর সেখানে যখন ইশারা কে অত্যাচারীত হতে দেখি তখন বুঝতে পারি আপনারা সম্পত্তির জন্য এমন করছেন তারপর আমি দেখি নেহা কে ব্যাস ঠিক করেনি যে কীভাবে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে,,নেহার সাথে এতদিন প্রেমের নাটক করলাম ওকে বিশ্বাস করালাম আমি ওকে ভালোবাসি ইশারা কে না আর কালকে রাতে বললাম আমি ইশারা কে মেরে ফেলবো সম্পত্তির কাগজে সাইন করিয়ে এই শুনে আপনাদের মেয়ে আপনাদের কে জানিয়ে নাচতে নাচতে চলে এলো এখানে,,,

রাতুল: একে চিনতে পারছেন?? (একটা ছেলে এগিয়ে এলো)

মামা: ত,,তু,,তুমি এখানে ক,,কি,,কিভাবে??

ইশারা: এটা তো সেই ছেলেটা যাকে প্রকাশ সেইদিন গোডাউনে টর্চার করছিল (মনে মনে)

প্রকাশ: ওহ চিনতে পেরেছেন তাহলে,,ইশারা! (ইশারা কে উদ্দেশ্য করে) এটা সেই ছেলে টা যার সাথে তুমি আমাকে গোডাউনে দেখেছিলে,,মনে পরছে??

ইশারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো,,

প্রকাশ: অনেক কষ্টে আমি ওর খোঁজ পাই,,ও হচ্ছে সে যাকে তোমার মামা ভাড়া করেছিল তোমার বাবা-মায়ের গাড়ি ব্রেক ফেল করানোর জন্য,,

ছেলেটি: ইশারার বাবা মা আমাকে অনেক হেল্প করেছিল টাকা পয়সা দিয়ে এক সময় কিন্তু আমি জানতাম না আমি যাদের গাড়ি ব্রেক ফেল করছি সেটা ওনাদের মারার জন্য,,ওনারা যখন গাড়ি তে উঠে যান তখন আমি দুর থেকে দাঁড়িয়ে ওনাদের দেখি আর চিনতে পেরে যাই,,তাই সঙ্গে সঙ্গে ওনাকে ফোন করে বলেদি যে গাড়ির ব্রেক ফেল,,যেকোনো সময় অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে,,

প্রকাশ: ওর কথা শুনে ইশারার বাবা-মা বাঁচার জন্য চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দেয়,,প্রাণে বেঁচে গেলেও ইশারার বাবা প্যারালাইসড হয়ে যান আর মা মাথায় চোট পান গভীর ভাবে তাই অনেকদিন জ্ঞান ছিলো না

ছেলেটি: আমি ওনাদের গাড়ির পিছনে বাইক নিয়ে ফলো করছিলাম ওদের ওভাবে গাড়ি থেকে ছিটকে পরতে দেখে হসপিটাল নিয়ে যাই আর সেখান থেকে সবার আড়ালে আমার বাড়ি,,গাড়ি টা খুব বাজে ভাবে উল্টে গিয়ে ব্লাস্ট করে যাওয়ায় কেউ লাশ খুঁজে পায়নি আর চেষ্টা ও করেনি তাই আমার সুবিধা হয়েছিল,,আমি অনেক বার চেষ্টা করেছিলাম ইশারা কে জানানোর কিন্তু!!

প্রকাশ: কিন্তু পারেনি! কারণ ইশারার মামি ইশারা কে কলেজ যেতে দিতো না আর এখানে কেউ ওকে দেখে ফেললে সমস্যা হতে পরে তাই ওকে লুকিয়ে দেখা করতে হতো ইশারার সাত্গে যার সুযোগ ও পায়নি এছাড়া ইশারা সব জেনে গিয়ে যদি পুলিশ এ খবর দেয় সেটার ও ভয় ছিলো ওর মধ্যে,,আমি ওর খোঁজ পাই নেহার দ্বারা অনেক কষ্টে নেহার কাছ থেজে ওর কথা আমি বার করেছিলাম,,

ছেলেটি: প্রকাশ যখন আমাকে ধরে নিয়ে আসে তখন আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো ইশারার মামা-মামির লোক ওরা হয়তো জেনে গেছে ইশারার বাবা-মা বেঁচে আছেন! কিন্তু ইশারা কে যখন ওনার বাড়িতে দেখলাম আর ওদের বেরিয়ে যাওয়ার পর রাতুল যখন আমায় সবটা বললো ওদের ব্যাপারে তখন আমি প্রকাশ কে সব খুলে বলি,,

প্রকাশ: রাতুল!! (রাতুল কে ইশারা করলো)

ইশারা ভাবছে শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য আজ ওর বাবা মা কে মরতে হচ্ছিল ভাগ্যের খাতিরে আজ তারা বেঁচে গেছেন,,ছেলেটি যদি না জানাতো ব্রেক ফেলের কথা তাহলে তো মরেই যেতো তারা,,আজ ভীষণ চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ইশারার,,ইশারা কতো টা ভুল বুঝেছিল প্রকাশ কে কি করে ভাবলো প্রকাশ ওকে মেরে ফেলবে,,একটু ও বিশ্বাস করলো না প্রকাশ কে সে,,এসব ভাবতেই ইশারার কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে,,আশেপাশের কোনো খেয়াল নেই অঝোরে কাঁদছে ইশারা,,

__ইশারা মা!!

ইশারার কান্নার মাঝেই ইশারা নিজের মায়ের গলার স্বর শুনতে পেলো,,অনেকদিন পর হলেও নিজের মায়ের গলার স্বর চিনতে ভুল হতে পারে না,,ইশারা পিছন ফিরে দেখলো ইশারার মা ইশারার বাবার হুইলচেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আর ইশারার বাবা হুইলচেয়ারে বসে আছেন,,

ইশারা দৌঁড়ে ওর বাবা মায়ের কাছে চলে গেলো আর মা কে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জল ফেলতে লাগলো,,চিৎকার করে কাঁদার ক্ষমতা টাও যে আজ নেই ইশারার,,

প্রকাশ: আসলে আমি আপনাদের মতো অতো খারাপ না যে সন্তান কে তার বাবা মায়ের থেকে আলাদা করে দেবো,,আপনারা যেমন ইশারার বাবা-মা কে মারার চেষ্টা করেছেন তেমন আপনার মেয়েও আমাকে মারার চেষ্টা করেছে (নিজের হাতে ক্ষত স্থানের দিকে ইশারা করে) থ্যাংক গড বাহু তে লেগেছে তাই তো এতক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি,,আসলে গুন্ডাগিরি করতাম তো তাই অভ্যেস আছে গুলি খাওয়ার (বাঁকা হেসে)

এবার নেহা বুঝতে পারলো হঠাৎ করে কেনো প্রকাশ নিজের হাতে নিজে গুলি করে ওর হাতে বন্দুক টা ধরিয়ে দিয়ে ছিলো,,নেহার কাছে একজন মহিলা পুলিশ এলো আর বললো

পুলিশ: চলুন!

ইশারা ওর মা কে ছেড়ে প্রকাশের দিকে ঘুরে তাকালো দেখলো প্রকাশ ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে,,ইশারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর প্রকাশের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে,,প্রকাশের অনেকটা কাছে চলে যেতেই প্রকাশ ইশারা কে হেঁচকা টান মেরে সরিয়ে দিলো দুরে আর নিজে সামনে এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই গুলি লেগে গেলো প্রকাশের,,ইশারা সহ সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো আর প্রকাশ আস্তে করে হাঁটু ভেঙে নীচে পরে গেলো ………………………..
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

বি:দ্র: যারা যারা প্রকাশ কে বদনাম করছিলে তারা এবার কি করবে 🤔 লেখিকা জানতে চায় 😐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here