“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_১৩

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_১৩
.
🌸
.
ইশারা চুপ করে প্রকাশের বুকে মুখ গুঁজে রয়েছে আর প্রকাশ ইশারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর প্রকাশ ইশারাকে বললো

প্রকাশ: ইশারা! একটু একা থাকতে চাই আমি!

ইশারা প্রকাশের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে করুন চোখে প্রকাশের দিকে তাকালো প্রকাশ ইশারার দু-গালে হাত রেখে বললো

প্রকাশ: চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি শুধু নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন

প্রকাশ কথাটা বলেই পিছন ফিরে গেলো আর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো কিন্তু প্রকাশ বুঝতে পারলো ইশারা যায়নি ও এখনো এখানেই আছে ইশারার উপস্থিতি টের পাচ্ছে প্রকাশ তাই সামনের দিকে ফিরলো দেখলো ইশারা অভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে একটু ও নড়েনি

প্রকাশ: তোমাকে তো বললাম আমি একা থাকতে চাই!

ইশারা: আমি তো কথা বলতে পারিনা যে আপনাকে কথা বলে ডিস্টার্ব করবো! আমি এমনি দাঁড়িয়ে আছি আপনার কোনো অসুবিধা হবে না (ইশারায়)

প্রকাশ বুঝলো ইশারা খানিকটা অভিমান করে কথা টা বোঝাল কারণ কথাটা বোঝানোর সময় ও একবার ও প্রকাশের দিকে তাকায়নি প্রকাশ নিজের দু-হাত বাড়িয়ে ইশারার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে দাঁড়ালো আর ইশারার কপালে একটা আলতো চুমু দিলো তারপর আস্তে আস্তে ইশারা কে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখলো

প্রকাশ: জানো ইশারা আজ আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে আমার নিজের বাবা যে এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনি ওই যে বলে না কেউ পিছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ততটা কষ্ট হয় না যতটা কষ্ট হয় যখন জানা যায় যে আঘাত টা নিজের কাছের মানুষ করেছে। কি করে পারলো উনি এভাবে আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসা কে দুরে সরানোর কথা ভাবতে?? আমার কি হবে এটা একবার ও ভাবলো না কোনদিন ভাবেওনি সেটা সবসময় নিজে যেটা মনে করেছে সেটাই করেছে আমার ভালো-লাগা মন্দ-লাগার কোনো দাম নেই তার কাছে…!!

ইশারা প্রকাশের থেকে নিজেকে ছাড়াতেই প্রকাশ মাথা নীচু করে নিলো ইশারা প্রকাশের দু-গালে হাত দিয়ে মাথাটা উঁচু করতেই দেখলো প্রকাশ কাঁদছে,,প্রকাশের চোখের জল টা মুছিয়ে দিয়ে প্রকাশ কে ছাদে থাকা দোলনায় বসালো,,,ইশারা প্রকাশের পাশে বসতেই প্রকাশ ইশারার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো আর ইশারা প্রকাশের চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো প্রকাশ নিজের হাতের ভাঁজে ইশারার বাম হাত টা নিয়ে রেখেছে আর মাঝে মাঝেই তাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে,,আস্তে আস্তে প্রকাশ ওখানেই ঘুমিয়ে পরলো আর ইশারা তা বুঝতে পেরে প্রকাশের মাথাটা নিজের কোল থেকে নামিয়ে ছাদের দরজার দিকে তাকালো সেইখানে রাতুল দাঁড়িয়ে ছিলো,,ইশারা ধীর পায়ে চলে এলো ছাদ থেকে নীচে নিজের ঘরে আর এদিকে প্রকাশ তো ঘুমিয়ে পড়েছে

ইশারা নিজের ঘরে বসে রয়েছে রাতুলের সাথে,, রাতুল খাটের এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইশারা আস্তে করে উঠে রাতুলের কাছে গেলো আর রাতুলের কাঁধে হাত রাখলো রাতুল ইশারার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সেই মুহুর্তেই প্রকাশ ঘরে ঢুকল আর জিজ্ঞেস করলো

প্রকাশ: রাতুল তুই এখানে এত রাতে??

প্রকাশের গলা শুনে ইশারা আর রাতুল দুজনেই প্রকাশের দিকে একবার তাকালো তারপর একে অপরের দিকে তাকালো ইশারা রাতুল কে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই রাতুল প্রকাশের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো

রাতুল: প্রকাশ দা আসলে…

প্রকাশ: আসলে কি?? তুই কি কিছু বলতে চাস??

রাতুল: হমম,,আজ আমি যে তোমাকে বৌদির খবর দিয়েছি তা আমাদের কোনো লোক আমাকে দেয়নি,,

প্রকাশ: তাহলে কার থেকে খবর পেয়েছিস??

রাতুল: তোমার বাবার কাছ থেকে!

প্রকাশ: কিহহহহ..??

রাতুল: হমম আসলে তুমি যেই দু-দিন ঘরে বন্দী ছিলে সেই দু-দিন আঙ্কেল এসেছিল আমাদের এখানে তোমার খোঁজ খবর নিতো আর হতাশ হয়ে ফিরে যেতো,,আমি যখন বলি তোমার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে সেইদিন আর কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় আর তার কিছুক্ষণ পরেই আমায় ফোন করে আর বলে আমি জানো এই ঠিকানায় তোমাকে নিয়ে চলে যাই ওখানেই নাকি বৌদি আর ইশান কে পাবো,,,

রাতুল এটুকু বলেই বেরিয়ে গেলো আর ইশারা এসে প্রকাশের সামনে দাঁড়ালো প্রকাশ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রকাশ ইশারা কে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই ইশারা প্রকাশের হাত টেনে ধরে আর বিছানায় বসায় প্রকাশ উঠে যেতে নিলে ইশারা প্রকাশের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয়

ইশারা: প্রকাশ আপনার বাবা আপনাকে খুব ভালোবাসে আপনার ভালো চায় অনেকসময় বড়োরা ছোটদের ভালো চাইতে গিয়ে একটু-আধটু ভুল করে ফেলে এগুলো মনে রাখতে নেই আজ যদি উনি খবর না দিতো তাহলে হয়তো আমরা এক হতে পারতাম না,,উনি যেমন দুরে সরিয়ে ছিলেন তেমন উনিই তো কাছে এনে দিলেন আমাদের,,ছোট থেকে আপনি যেমন বাবার অভাব ভোগ করেছেন তেমন উনিও তো ছেলের অভাব ভোগ করেছেন এখন আপনি আপনার মতো ভালো থাকলেও উনি কি ভালো আছেন?? উনি তো এইসময় টা আপনার সাথে থাকতে চায় কোনো বাবা-মা ই তার সন্তান কে ছাড়া ভালো থাকে না তেমন উনিও নেই,,এখন যখন উনি আপনাকে পাশে চাইছেন তখন আপনার উচিত সব ভুলে ওনার পাশে থাকা শত হোক আপনি ওনার ছেলে আর আপনি ও যে ওনাকে ছাড়া ভালো আছেন তা তো নয় তাই না?? তাহলে কেনো ফিরে যাচ্ছেন না??

প্রকাশ মাথা নীচু করে চোখের জল ফেলছে ইশারা প্রকাশের কাঁধে হাত রাখতেই প্রকাশ ইশারা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো কিছুক্ষণ বাদে ইশারা প্রকাশ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো

ইশারা: আমি আমার শ্বশুরবাড়ি যেতে চাই নিয়ে যাবেন?? (ইশারায়)

প্রকাশ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়তেই ইশারা প্রকাশের চুলগুল এলোমেলো করে হেসে দিলো আর একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো

সকালে………………………….☀️🌇

প্রকাশ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ইশারা পাশে বসে আছে ইশান কে স্কুলে দিয়ে প্রকাশ আর ইশারা প্রকাশের নিজের বাড়িতে যাচ্ছে,,প্রকাশ ড্রাইভ করছে আর বার বার আড় চোখে ইশারার দিকে তাকাচ্ছে ইশারা সেটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান ধরে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে,,ইশারা এবার দেখলো গাড়ি টা একটা বিশাল বাড়ির ভিতর ঢুকছে সিকিউরিটি গার্ড এসে দরজা টা খুলে দিলো,,গাড়ি টা ভিতরে প্রবেশ করতেই ইশারা দেখলো চারিপাশে নানান রকম গাছ লাগানো বাগান আছে আর বাড়িতে ঢুকতেই রাস্তাটাকে দু-ভাগে ভাগ করছে একটা কৃত্তিম ফোয়ারা তার একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি টা গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো এক বিশাল দরজার সামনে,,গাড়ি থামতেই ইশারা প্রকাশের দিকে তাকালো আর প্রকাশ চোখ দিয়ে সম্মতি জানালো নামার জন্য

প্রকাশ আর ইশারা গাড়ি থেকে নেমে দরজার সামনে দাঁড়াতেই একটা গার্ড প্রকাশের সামনে এলো আর প্রকাশ তাকে গাড়ির চাবি টা দিয়ে দিতেই চলে গেলো তা নিয়ে,,ইশারা দেখলো প্রকাশ মাথা নীচু করে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে আজ নিজের বাড়িতে হয়তো অনেকদিন পর সে পা রাখতে চলেছে ইশারা আস্তে করে প্রকাশের বাহু জড়িয়ে ধরলো আর প্রকাশ নীচের দিকে তাকিয়েই হাসলো তারপর মাথা উঠিয়ে এগিয়ে গেলো ইশারা হাতের উপর হাত রেখে,,দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে প্রকাশ কলিং বেল বাজালো কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পরে কেউ একজন দরজা খুলে দিলো দরজা খুলতে দেরী হলো কিন্তু দরজা খুলে দেওয়া ব্যক্তির প্রকাশ কে জড়িয়ে ধরতে দেরী হলো না প্রায় ঝড়ের গতিতে সে প্রকাশ কে জড়িয়ে ধরলো,,

ছেলেটি: ব্রো এত্তদিন পর তোর আমার কথা মনে পরলো?? এতদিন কেনো আসিসনি?? সাচ আ লায়ার ইউ আর অলয়েস বলেছিস আসবি বাট আসিসনি আই ডোন্ট ওয়ান্না টক উইথ ইউ

প্রকাশ: আবে তুই এখানে দাঁড়িয়ে এতগুলো কথা বলে ফেললি আর কি বাকি রেখেছিস কথা বলার মতো?? ভিতরে ঢুকতে দিবি না আমি চলে যাবো

ছেলেটি: নো নেভার কাভি নাহি তোকে এখান থেকে কেউ নিয়েই যেতে পারবেনা,,এই সত্যি বল তো তুই আমার থেকে ভালো ভাই পেয়ে গেছিস তাই না?? ঐ তো ঐ তো ঐ রাতুল তাই না??(কাঁদো কাঁদো ফেস করে 🥺)

প্রকাশ: থাম! তোর গিফ্ট আমি এনেছি ভিতরে ঢুকতে দিলে পাবি না হলে রাতুল কে দিয়ে দেবো

ছেলেটি: এই না না না না আমি তো মজা কর রাহা থা হিহিহি চল চল ভিতরে চল লাপ ইউ ভাই (ঝাপ্পি দিয়ে)

প্রকাশ: বড়ো কবে হবি তুই আর তোর এই ঝাপ্পি পাপ্পি দেওয়া কবে বন্ধ হবে,,ভুলে যাস না ছেলে আমি মেয়ে না পেয়ে কি অবস্থা হয়েছে 😂

ছেলেটি: মাজাক মাত উরাও মেরা মেয়ন্ বহাত ফেমাস হুন তুমহে পাতা হায় নাহি হেইন 😎

প্রকাশ: হ্যাঁ এবার ভিতরে যাই,,পায়ে ব্যথা করছে আমার আর আমার বউয়ের

ছেলেটি: ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দে

প্রকাশ: দুরে থাক! আর ভিতরে চল

__কেউ ভিতরে আসবে না!

প্রকাশ আর ইশারা ভিতরে আসবে সেসময় ভিতর থেকে একজনের কণ্ঠর স্বর শোনা গেলো,,ইশারা এতক্ষণ বেশ মজা পাচ্ছিল কিন্তু এখন একটু ভয় লাগছে প্রকাশ ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে,,পাশের ছেলেটি হুট করে প্রকাশের পাশ থেকে সরে ভিতরে চলে গেলো আর প্রকাশ ইশারার হাত টা ধরে পিছন ফিরে যেতেই আবার কণ্ঠর স্বর শোনা গেলো,,

__ঘরের নতুন বউমা কে বরণ না করেই ভিতরে আসতে দেবো নাকি??

প্রকাশ আর ইশারা অবাক হয়ে পিছন ফিরলো কথাটা শুনে আর দেখলো একটি মাঝ বয়সি মহিলা সুন্দর করে শাড়ি পরা আর হাতে বরণ ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,আস্তে আস্তে উনি এগিয়ে এলেন আর বরণ শুরু করলেন বরণ শেষে তাদের কাজের লোক কে বললেন চালের ঘটি রাখতে চৌকাটে যা ফেলে ইশারা ঘরে আসবে,,যেমন কথা তেমন কাজ প্রকাশ তো শুধু অবাক হচ্ছে এসব দেখে ভিতরে আসতেই প্রকাশের বোন ইশারা কে এসে জড়িয়ে ধরলো আর বললো

মেয়েটি: ওয়েলকাম হোম বউমনি

প্রকাশ: ইশারা ও দিয়া আমার বোন (মেয়েটি কে উদ্দেশ্য করে) আর ও দীপ আমার ভাই (ছেলেটির দিকে উদ্দেশ্য করে) ওরা যমজ,,আমার কাকিমণি (মহিলাটি কে উদ্দেশ্য করে) আর উনি আমার কাকা (সদ্য ঘর থেকে বেরিয়ে আসা লোকটিকে উদ্দেশ্য করে)

কাকিমণি: দিয়া তোর বউমনি কে ঘরে নিয়ে যা,,

দিয়া: হ্যাঁ বউমনি চলো

প্রকাশ: আব,,এক মিনিট তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলার ছিলো,,আসলে ইশারা কথা ব…

কাকিমণি: আমরা সব জানি তোকে বলতে হবে না বুঝলি,,

প্রকাশ বুঝলো ওর বাবা বলেছে সবাই কে তাই আর কথা বাড়ালো না,,

কাকা: আর কতদিন এভাবে আমাদের উপর রাগ করে দুরে সরে থাকবি??

প্রকাশ: (নিশ্চুপ)

কাকিমণি: মানছি ছোটবেলায় আমরা অনেক ভুল করেছি তোর খেয়াল না রেখে,,কিন্তু তুই তো জানিস আমরা কতটা ব্যস্ত ছিলাম,,দীপ আর দিয়া কেও ঠিক করে সময় দিতে পারিনি,,আর ওদের সময় দিতে দিয়ে তোকে,,

কাকা: ব্যস্ততার মাঝে আমার এই ছেলেটার কথা আমি ভুলে গেছিলাম,,তোর দায়িত্ব যেখানে বউদি আমায় দিয়ে গেছিল সেখানে আমি..(চোখের জল মুছছেন)

কাকিমণি: আমাদের কি ক্ষমা করা যায়না বাবাই??

“বাবাই” ডাকটা শুনে প্রকাশ নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না ঝাপটে ধরলো ওর কাকিমণি কে আর বললো

প্রকাশ: আ’ম সরি মণিমা আর কখনো তোমাদের ছেড়ে যাবো না,,

কাকা: তোর বাবা উপরের ঘরে আছে,,তোর মায়ের ঘরে জানে না তোরা এসেছিস এই কয়েকটা বছর অনেক কষ্টে কাটিয়েছে,,যা বাবার কাছে যা

প্রকাশ একবার ইশারার দিকে তাকালো ইশারা চোখ দিয়ে সম্মতি জানাতেই প্রকাশ দৌঁড়ে উপরে চলে গেলো………………….
.

.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here