#ইস্ক_সাহেবান
#হীর_এহতেশাম
||পর্ব-৫||
★নাহিদা বেগম আর জাফর এহতেশাম এর পাশে গিয়ে ইফতি বসে পড়ে। জাফর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো কপালে। দিদার মাহসান ডেকেছেন বলেই দু’জন এসেছেন।
—–কেমন আছিস আম্মা?
——ভালো আছি আব্বু। তুমি কেমন আছো?
—–ভালো আছি। জাফরের কথা শেষ হতেই দিদার মাহসান বলে উঠলো,
——আরে ভাই কেউ আমাকেও জিজ্ঞেস করো কেমন আছি?
জাফর হেঁসে দিলো।
—–কেমন আছেন মামাজান?
—–থাক ভাই আর ফর্মালিটি পূরণ করতে হবে না। আমি ভালো আছি। কথাটি বলেই হেঁসে দিলো দিদার মাহসান। জাফর আর নাহিদাও হেঁসে দিলো।
মারিয়াম সবাইকে চা এনে দিলো। ইবাদ আর ইরফান ও এসে বসেছে। সবাইকে চা দিয়ে ইফতিকে চা দিতেই ইফতির হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেল। নাহিদা বেগম তাড়াতাড়ি আঁচল দিয়ে মেয়ের জামা থেকে গরম চা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
—-কি হলো তুই ঠিক আছিস? উপস্থিত সবাই ইফতির দিকে তাকিয়ে রইলো।
—–বুঝলাম না হাত টা এভাবে কাপঁলো কেন? বলেই এক দিয়ে কপাল চেপে ধরে ইফতি।
—-আচ্ছা সমস্যা নেই। তুমি যাও জামা বদলে এসো। দিদার মাহসানের কথায় সবাই সম্মতি জানালো। ইফতি উঠে দাঁড়ালো। সামনে এক পা বাড়াতেই ইফতির মাথা ঘুরে যায়। ইফতি দিদার মাহসানের সোফার হাতে ভর দিয়ে নিজেকে সামলে নিলো ইফতি। অন্যহাতে মাথার এক পাশ চেপে ধরলো। নাহিদা বেগম উঠে এসে ইফতিকে আগলে নেয়।
—–কি হলো? ঠিক আছিস তুই?
—-ঠিকই তো আছি। মাথাটা ঘুরে গেল বুঝলাম না। বলেই মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেয় ইফতি। ইবাদ ইফতির দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ইরফান একবারও ইফতির দিকে তাকালো না। সবাই ইফতিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মুহুর্তেই ইফতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। ইফতির গা থেকে দরদর করে ঘাম ছুটে গেল। মারিয়াম ইফতি কে ঘর পর্যন্ত দিয়ে আসে।
সারাদিন পর ইফতি একটু সুস্থতাবোধ করে। চলে গেলো অনেক্ষণ আগেই। ইবাদ হাটতে থাকে বাগানে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই ইবাদ ফোনের দিকে তাকালো। স্ক্রিনে ভাসছে তার প্রিয় নাম ‘সাহেবান’। মৃদু হেঁসে ফোন রিসিভ করলো ইবাদ।
——-আসসালামু আলাইকুম।
—–ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
——সারাদিন কোথায় ছিলেন জনাব?
—–বাড়িতেই ছিলাম।
——আমি ভাবলাম মি. ডাক্তার প্রচুর ব্যস্ত তাই ফোন করার সময় পেলো না।
—-আমি করি নি বলে আপনি করেন নি?
—–নাহ্ তেমন না। আমি ও একটু ব্যস্ত ছিলাম।
—-হুম ঘর সংসারের কাজ করছিলেন যে।
—–এইভাবে বলার কি আছে? আজ নাহোক কাল অবশ্যই করবো।
—–হুম। বিয়ের পর করতেই হবে নিজের সংসারের কাজ।
খানিকটা অবাক হলো অপরপাশে থাকা রমণী । যে লোক বিয়ের কথা বললেই কথা বন্ধ করে দেয় সেই লোক বিয়ের কথা বলছে। অবিশ্বাস্য!
ইবাদ কে চুপ করে থাকতে দেখে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো,
——আপনি ঠিক আছেন?
—–আমি ঠিক নেই সাহেবান।
——কি হয়েছে ডাক্তার বাবু?
——কিছু হয় নি। কিন্তু?
—-কিন্তু কি?
—–আমি আপনাকে হারাতে চাইনা সাহেবান। আমার একটি মাত্র ইচ্ছে আপনি। যেটা আমি পূরণ করতে চাই যে-কোনো ভাবেই।
—–আপনার কেন মনে হলো আপনার এই একটি মাত্র ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যাবে?
—–জানি না ভাগ্যে কি আছে। তবে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমি আপনাকে আজীবন….
—–আজীবন?
—কিছু না!
—–একটা কথা বলি ডাক্তারবাবু?
—-একটা কেন? হাজারটা বলুন সাহেবান।
—–আমি আপনাকে ভালোবাসি!
ইবাদের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। এক ঠান্ডা বাতাস ইবাদকে এসে ছুঁয়ে দিলো। পরম আবেশে ইবাদ চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। মৃদুস্বরে বলল,
—–আবার বলুন!
—-আমি আমার ডাক্তারবাবুকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আমি আজীবন তার সাহেবান হয়েই থাকতে চাই। কথাটি বলেই রমণী ফোন কেটে দিলো। ইবাদ এখনো ফোন কানে ধরে রেখেছে। চোখ খুলতেই ইবাদের চোখ পড়লো ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতির দিকে। ইবাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—–আমি আমার সাহেবান কে কিছুতেই হারাতে পারবো না। ইরফান কে আমি সুস্থ করে তুলবোই। না ইরফান তার ভালোবাসা হারাবে না আমি আমার সাহেবান কে।
★———-আমাকে না জানিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত কি করে নিলে তোমরা? একটি বার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না? আমার ইচ্ছের কি কোনো মূল্য নেই? করবো না আমি এই বিয়ে… আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো না।
ইফতি মুহুর্তের মাঝেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। নাহিদা বেগম আর জাফর এহতেশাম ইফতির আচরণ দেখে বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেল। আজ পর্যন্ত যে মেয়ে রাগের সময়ও চিৎকার করেনি সে আজ কথা শুরু করার আগেই চিৎকার করছে। নাহিদা বেগমের ঘোর ভাঙ্গলো তীব্র আওয়াজে। সামনে তাকিয়ে দেখলো ইফতি ফুলের ভাস ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় ছুড়ে মেরেছে। প্রচন্ড আঘাতে ড্রেসিংটেবিলের আয়না ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। ইফতির এমন ভয়ানক আচরণ দেখে জাফর এহতেশাম মুহুর্তেই অবাক হয়ে গেল। বড়সড় ধাক্কা খেল দুজনেই। তাদের শান্ত মেয়েটির এ কোন রুপ তাদের সামনে এলো। চিৎকার করতে করতে ইফতি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে কাচের উপর লুটিয়ে পড়ার আগেই ইবাদ ইফতিকে ধরে নেয়। আগলে নেয় নিজের বুকের সাথে। রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ইফতির সমস্ত কথা শুনছিলো ইবাদ। ইফতির এমন আচরণ দেখে ইবাদ নিজেও খানিকটা বিচলিত হলো। সেন্সলেস ইফতির মুখের দিকে তাকিয়ে ইবাদ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জাফর আর নাহিদা বেগমের দিকে তাকালো। ইফতিকে বেডে শুইয়ে দিয়ে ইবাদ বলল,
——-কেন জোর করছেন? উনি যখন চাইছে না তখন যেতে দিন না।
নাহিদা বেগম আর জাফর এহতেশাম চুপ করে রইলো। দুজনকে চুপ থাকতে দেখে ইবাদ বলল,
—–উনি কি আগে থেকেই এমন?
——না না আমার মেয়ে তো শান্ত। আমার মেয়ে বাড়িতে থাকলে আছে কি নেই সেই আভাস ও পাওয়া যায় না। আতঙ্কিত কন্ঠে জবাব দিলো নাহিদা বেগম।
——তাহলে আজ..?
——-জানি না আমার মেয়ের কি হলো। ইফতির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে নাহিদা বেগম।
★নাহিদা বেগম দিদার মাহসানের সামনে বসে আছে। দিদার মাহসান নাহিদা বেগম কে বলল,
—–আমি ইফতি কে চাই। ইফতি আমার বাড়ির বউই হবে। আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর আমি ইফতিকে তোর হাতে তুলে দিয়েছিলাম যাতে ইফতি একটি পরিবার পায়। আর আমি ওকে বড় হলে আমারই ইবাদের বউ করে নিয়ে আসতে পারি। আজ যদি সেই কথা বরখেলাপ হয় তাহলে আমি ভাববো তুই আমার সাথে বেইমানি করেছিস।
দিদার মাহসানের কথা শুনে নাহিদা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো।
—–মামা আমি তো চাইছি। কিন্তু আমার মেয়ে…..
—–ও তোর মেয়ে না। ও আমার নাতনী। ওকে বোঝানোর দায়িত্ব তোর। কিভাবে বোঝাবি আমি জানি না।
নাহিদা বেগম চুপচাপ সব কথা শুনে নেয়। কি করবে? ইফতিকে কিভাবে মানাবে?
★দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ইবাদ দিদার মাহসানের সমস্ত কথা শুনে ফেলে। ভাবতেই ইবাদের দম আটকে এলো যে ইফতি ইবাদের ফুফুর মেয়ে। যে পরিবার কে ইফতি ছোট থেকে নিজের বলে জেনেছে সেই পরিবার ইফতির নিজের না। কি হবে যদি ইফতি জেনে যায় এই নির্মম সত্যি? ইবাদ চলে আসে। ইফতির রুমে এসে ইফতির বিছানায় ইফতির পাশে বসে পড়লো। ইফতির জ্ঞান এখনো ফেরেনি। ইফতির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
——আপনি জানলে আমি জানি না কি করবেন বা কেমন রিয়েকশন দেবেন কিন্তু, আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। কথা বলার মাঝে হঠাৎ ইবাদের মনে পড়লো ইবাদের ফুফু মারা গেছে কিন্তু ইফতির বাবা? ইফতির বাবা বা বাপের বাড়ির লোকেরা কোথায়? তারা কেন ইফতিকে রাখলো না। ইবাদের মাথায় প্রশ্নেরা একের পর এক প্যাঁচ সৃষ্টি করতে থাকে।
চলবে……?
||কেমন আছেন সবাই? সবাইকে জানাই শুভ সন্ধ্যা! গল্প নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে বলতে পারেন। ||