একই সুতোয় বাধা পর্ব ৩

#একই_সুতোয়_বাঁধা

পর্ব-৩

সপ্ত শীখা

সায়ন বিরক্ত মুখে পুষ্পর জানালার নিচে দাঁড়িয়ে জানালায় ঠক ঠক করছে। আঙ্গুলের গাঁটে ব্যথা হয়ে গেল তাও এই পাজি মেয়ে জানালা খুলছে না। এদিকে অন্য হাত ও বন্ধ। কারন হাত ভর্তি তেতুঁল আর আমসত্ত্ব।

ধুর… দরজা দিয়েই ঢুকে পড়বে নাকি ! না… দরজা দিয়ে ঢুকলে পিচ্চির রাগ কমে না। আসলে তো মতলব খারাপ। জানালায় থাকলে যতক্ষন ইচ্ছা সায়ন কে দাঁড় করিয়ে রেখে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে সে। কথায় আছে না… ধানি মরিচের ঝাল বেশি ! এই মেয়ের ঝাল আগুনের চেয়েও বেশি। এখন এই ভর সন্ধ্যায় বাড়ির পিছে ঝোপঝাড়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছে সায়ন।

জানালা একটুখানি ফাঁকা করে উকিঁ দিচ্ছে পুষ্প। সায়ন হাত বাড়াতেই মুখ ঝামটে উঠল।

— কি চাও ?

— পুষ্পি বাইরে আয়। তাত্তাড়ি। তর জইন্য আমসত্ত্ব আর তেতুঁল আনছি।

— তোমার তেতুঁল আমসত্ত্ব নিজেই খাও গিয়া। আমি আসমু না।

— পুষ্পি তোর লিগা আমি এতক্ষন দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে মশার কামড় খাইতেছি। আয় কইলাম !

— কইছি না আমুনা ! তুমি আর কোনদিন আমার লগে কথা কইবা না। যাও বাড়িত যাও।

— তুই না আসা পর্যন্ত আমি এম্নেই খাড়াই থাকুম।

— আসমু না আমি। থাক গা খাড়ায়া।

পুষ্প ঠাস করে জানালা লাগিয়ে দিলো। হোমওয়ার্ক গুলা শেষ করে তুলে রেখেছে। মনের ভিতর উশখুশ করছে ওর। সত্যি যদি মশার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে!

পাঁচ মিনিট পরেই বাতি নিভিয়ে আবার জানালার পাশের একটা ফুটা থেকে কাগজ সরিয়ে উকিঁ দিল পুষ্প। সায়ন সত্যিই বসে আছে। গাছের ডালের উপর বসে আছে আর দুই হাতে মশা তাড়াচ্ছে। বিরক্ত হয়ে বের হল পুষ্প পিছনের দরজা দিয়ে। পারা যায়না ছেলেটাকে নিয়ে… এত বড় হয়েও পুষ্পর মত পিচ্চি মেয়ের কাছে বকা খায়!

— তুমি অখনো যাওনাই ক্যান ?

— তুই আসছ নাই তাই। নে তোর তেতুঁল নিয়া আমারে উদ্ধার কর।

— মিষ্টি না টক ?

— মিষ্টি রে বাপ। আমতলির হাট থিকা আনছি।

— আইচ্ছা। যাও বাড়িত যাও।

— অই পুষ্প। কালকা ইস্কুলে একসাথে যামু।

— যামুনা তোমার সাথে। ঘুম থিক্কা ঊঠতে তিনদিন… মাথাত সাজ করতে আরো তিনদিন লাগে তোমার।

— যা যা ঢং করিস না। আমারে থুইয়া যাবি তো ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু।

— হ হ দিও। তারপর নিজেই আসবা ডাকতার নিয়া।

— গেলাম আমি আব্বায় আইসা না পাইলে মাইরা ফেলব। আর শুন… কাল্কে আমরা ইস্কুল থিক্কা হাটে যামু। তোরে একটা কিছু কিন্না দিমু। আব্বা টাকা দিছে। খোদা হাফেজ।

পুষ্প ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই একপাতা আমসত্ত্ব শেষ করে দিল। ঘর থেকে পুষ্পের মা আছিয়া সব ঘটনাটাই দেখেছেন। আল্লাহর কাছে দুয়া করলেন যেন এই ছেলেমেয়ে দুটির মনের এই টান আজীবন থাকে।

💙💙💙💙💙

পুষ্প অতি দ্রুত তৈরি হয়ে খেয়ে নিলো। আছিয়া অবাক হয়ে আছেন।

— এত তাড়া কিসের তোর ? মোটে বাজে সাড়ে আটটা… কেলাস ত সেই দশ টায় !

— সায়ন ভাইরে তুলতে যাই আম্মা। হ্যের সাথে নাকি যাইতে হইব ইস্কুলে। না ডাকলে উঠব না। যাই আম্মা…

পুষ্প ছুটতে ছুটতে সায়নের বাসায় এসে পড়েছে। উঠোনের পাশে ঝি মাছ কুটছে আর লাইলি বেগম তাকে তদারকি করছেন। এই সকালে পুষ্প কে দেখে অবাক হলেন তিনিও।

— কিরে মা ? এত সকাল বেলা !

— খালাম্মা… সায়ন ভাই উঠছে ?

— কই রে মা… তিন বার ডাকছি অখনো ঘুমে।

— আর আমারে বলে ওর সাথে ইস্কুলে না গেলে… আচ্ছা আমি তুলতেছি।

পুষ্প আবার দৌড়ে সায়নের ঘরে এল। চিত হয়ে ঘুমাচ্ছে সায়ন। পুষ্প ঘরে ঢুকেই ওর কম্বল টেনে সরিয়ে নিলো। সায়ন ঘুমের মাঝেই দুই তিন বার কম্বল খুঁজে শেষে আবার ঘুম। পুষ্প যেয়ে ডাকছে কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নেই। শেষে পুষ্প মগ নিয়ে গিয়ে মাথায় কনকনে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে লাফিয়ে উঠল সায়ন।

— পুষ্পিইইইইইইইইইই !

— হিহিহি 😂

— তোরে আজকা খাইছি… অই দৌড়াবি না দাঁড়া

দুজনে বাড়িময় ছুটাছুটি করে উঠানে এসে পড়ল। লাইলি বেগম হা করে ওদের কাজ দেখছেন। পুষ্প ছুটে এসে তার পিছনে লুকিয়ে পড়তে তিনি ওকে জড়িয়ে ধরে সায়ন কে আটকালেন…

— অই তোর কতবড় সাহস আমার বউমারে দৌড়ানি দেস ?

— কেডা বউমা ?

— পূষ্প।

— কবে হইল !

— কাল… মানে হইব। অরেই বাড়ির বউ করমু। এখন যা তইয়ার হইয়া আয় খাবার দিতেছি।

— সব আদর তো পুষ্পির জন্যই। আমার লিগ্যা খালি তলানি… হুহ…

💙💙💙💙💙

স্কুল শেষে সায়ন দের বাসাতেই দুপুরের খাবার খেয়ে আবার দুজনে বের হয়ে পড়ল হাটের দিকে। সায়নের হাতে টাকা। পুষ্পর হাতে সে আরো দিয়েছে। দুজন মিলে শখের জিনিস কিনবে।

— এই চুড়িগুলা আমার খুব ভালা লাগতেছে। কিন্যা দিবা ?

— দিমু কি রে, টাকা তো তোর কাছেই দেয়া আছে। কিন না !

— না তুমি পছন্দ কইরা দেও।

রং বেরং এর প্রচুর রেশমি চুড়ি কিনে তবেই ক্ষান্ত দিল পুষ্প। বাকি টাকা থেকে বাতাসা, মিঠাই কিনল। সায়ন এখনো পছন্দসই কিছু পাচ্ছে না। এদিকে ফেরার সময় হয়ে এসেছে। ওর মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই।

— সায়ন ভাই ! এই সায়ন ভাই !

— কি হইছে কি

— এই জুতা টা কিনবা ? তোমারে খুব মানাইব।

— যাহ। জামাই জামাই লাগে।

— কই ! নেও না… খুব মানাইব।

— সত্যি ? পায়েও হইতেছে… আচ্ছা… নিয়াই নেই।

নাগরার মত দেখতে লাল টকটকে কাপড়ের জুতা। পুষ্পর উস্কানি তে কিনেই ফেলল সায়ন। ব্যাগে ভরে দুজন হাঁটা দিল বাড়ির দিকে। রাস্তায় মাগরেবের আজান পড়লে খবর আছে।

— খালা ! অ খালা দেইক্ষা যাও !

— কিরে পুষ্প চিল্লাছ ক্যান ?

— আমরা কি কিন্সি দেখবা না ?

— অমা কি সুন্দর রং হইসে চুড়ি গুলার !

— আর সায়ন ভাই-

— অই পুষ্প ভাই কইস না। নাম ধইরা ডাকবি এখন থিকা। ঠিকাসে ?

— হু। দেখ কি কিন্সে।

— ওমাগো আমি কই যাই… পুষ্পরে বউ বানামু বলছি তাই এক্কেবারে জামাই গর জুতা কিন্না ফেলছে আমার বাপ ! 😂😂

— আম্মা ! এইডা তো পুষ্পি কিনাইসে আমারে… অই পুষ্পি দৌড় দিবি না বল্লাম এক্কেরে দৌড়াবি না-

পুষ্প তখন দৌড়ে একেবারে নিজের বাড়িতে। রুমে বসে বসে হাসছে। শিক্ষা হয়েছে সায়নের। রাগ না থাকলে কি হয়েছে… সায়ন যে ওকে মেরেছিল তার শাস্তি দিতে হবে না ? 😜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here