#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৫+৬
সাদাফ চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে সাবিহা মাথা নিচু করে বেডে বসে আছে।সাদাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাবিহার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে।
“এই যে মহারানী এবার দয়াকরে ঘর থেকে বের হয়ে নাস্তার টেবিলে আসুন আর আমাকে উদ্ধার করুন।”
কারো গলার আওয়াজে মাথা তুলে চোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়ে দেখি সাদাফ দাঁড়িয়ে আছে।
আর সাদাফ সাবিহার মাথা তুলে তাকানোর পরেই সাবিহার চোখের পানিটা দেখতে পায়।সাদাফ সাবিহার উপর থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে।
“এইসব ন্যাকা কান্না আমার সামনে করবে না,আমার এসব বিরক্ত লাগে।এখন এই নাটক বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসো।সবাই খুঁজে চলেছে তোমাকে নাস্তা করার জন্য।”
উনার কথায় আমার খুব কষ্ট+রাগ হল।কিন্তু আমি এখন উনার সাথে এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।তাই চোখের পানিটা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে উনাকে সাইড কেটে ঘর থেকে বের হয়ে যাই।
সাবিহা ঘর থেকে বের হতেই সাদাফও ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়।ঘরের বাইরে বের হতেই সাদাফ মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে যায়।সাদাফ হালকা চেঁচিয়ে উঠে,কীভাবে পড়ল তা দেখার জন্য মাথা তুলে।আর তাকিয়ে দেখতে পায় সাবিহা বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে হাসছে।সাদাফের আর বুঝতে বাকি রইল না যে সাবিহাই তাকে ফেলেছে।সাদাফ রাগে কটমট করে সাবিহাকে কিছু বলতে নিবে তখন সাবিহা সাদাফের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে মুচকি হেসে হাতের ইশারায় বুঝায়।
“আমাকে এত বেলা অবধি ঘরে আটকে রাখার শাস্তি এটা।”
কথাটা বলেই সাবিহা স্থান ত্যাগ করে,আর সাদাফ সাবিহার ইশারার মানে বুঝতে না পারলেও।এটা বুঝতে পেরেছে যে প্রতিশোধ নিয়েছে,তাই রাগে গজগজ করতে করতে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায়।আর সাবিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
“দেখে নেব তোমাকে আমি,আমাকে হেনস্তা করার মজা বুঝাব তোমাকে।”
______________________________________
সকালের নাস্তা সেরে আনোয়ার হোসেন ড্রয়িং রুমে বসে জুতা পড়ছিল অফিসে যাবে তাই।তখন সাবিহা হাতে টিফিন বক্স নিয়ে আসে।কারো উপস্থিত টের পেয়ে আনোয়ার হোসেন মাথা তুলে তাকায়।দেখে সাবিহা এক গাল হেঁসে দাঁড়িয়ে আছে টিফিন বক্স নিয়ে।আনোয়ার হোসেন তাকানোর পরপরই সাবিহা টিফিন বক্সটা উনার দিকে এগিয়ে দেয়।আনোয়ার হোসেন হেঁসে জিজ্ঞেস করে,,,
“আমার আম্মাজান আমার জন্য টিফিন বক্সে কী নিয়ে এসেছে হুম?”
আব্বুর মুখে আম্মাজান শুনে আমি খুব খুশি হই।মুখের হাসি চওড়া হয়,মুখে হাসি রেখেই টিফিন বক্সটা আবারও আব্বুর দিকে এগিয়ে দেই আর চোখে ইশারা করি নিতে।আব্বুও টিফিন বক্সটা হাতে নেয় তখন আমি হাতের ইশারায় বলে উঠি।
“এখানে আমার আব্বুর জন্য তার পছন্দের ইলিশ মাছের বড়া আছে।আর সাথে গরুর মাংস,করলা বাজি,আর খাট্টাই আছে।”
আনোয়ার হোসেন অবাক হন খুব,সাথে খুশিও হন।ইলিশ মাছের বড়া খুব পছন্দ করেন উনি।কিন্তু উনার মা মারা যাওয়ার পর আর খাওয়া হয় নি।ইলিশ মাছের বড়ার জন্য মরিচ বাটতে হয় ঝামেলা মনে করে কেউ করে খাওয়ায় নি তাকে।তিনি অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেন।
“এসব কে আর কখন করল,মরিচ বাটল কে?আর নাস্তা করার সময় ত ইলিশ মাছের বড়াটা দেখলাম না!”
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আম্মু শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে আর বলে।
“কে আর করবে এই পাগলীটা করেছে।সকালে নাস্তার সাথে তোমার টিফিন দেয়ার জন্য গরুর মাংস,খাট্টাই আর বাজি করেছিলাম।তোমার টিফিন রেডি করছিলাম তখন গিয়ে জিজ্ঞেস করে ইলিশ মাছ আছে কী না!আমি জানাই আছে তখন বলে ইলিশ মাছের বড়া করবে আর সেটা এখনই।আমি অনেক মানা করেছি তারপরও পাটায় মরিচ বেটে বড়া বানিয়েছে তোমার জন্য।এখন হাতটা জ্বললে কী একটা অবস্থা হবে বুঝতে পারছো তুমি?”
শেষের কথাটা আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলে। আমি সেটা দেখে হাতে ইশারায় বলি।
“আমি ঠিক আছি,আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না আম্মু।একটুও জ্বলছে না হাত।”
হাত জ্বলছে না বলেছি ঠিকই কিন্তু আমার হাত খুব জ্বলছে।এসবের অভ্যাস নেই একদমই কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেয়া চলবে না।তবে আব্বুর খাওয়ার আনন্দ নষ্ট হবে আর আম্মুও বকবে অনেক।এ দুইদিনে মানুষ গুলো যে খুব বেশি আপন করে নিয়েছে আমায়।
আমার কথা শেষ হওয়ার পরই আব্বু আমার মাথায় হাত রেখে নরম স্বরে বলে।
“তুই কী করে জানলি ইলিশ মাছের বড়া আমার পছন্দের!”
আমি মুচকি হেঁসে আবারও ইশারায় বলে উঠি।
“কেন আম্মুর থেকে জেনেছি,আম্মু গতকাল কথায় কথায় বলেছিল তুমি ইলিশ মাছের বড়া খুব পছন্দ করো।কিন্তু অনেকদিন ধরে খাওয়া হয় না তোমার,তাই করে ফেললাম।খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে!”
আব্বু আমার কথা বুঝতে পেরে আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলে।
“জানাব রে মা,তুই এত কষ্ট করে করেছিস আমি নিশ্চয়ই জানাব।”
আব্বুর গলা যেন ধরে আসছে,আমি মাথা তুলে আব্বুর দিকে তাকাতে নিলেই পিছন থেকে সাদাফ বলে উঠে।
“আব্বু চলো দেরি হয়ে যা,,,
আর কিছু বলার আগেই উনার চোখ পড়ে আমাদের দিকে।উনি ভ্রু কুঁচকে ফেলে,আরেকটু সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
“কিছু কী হয়েছে?”
আব্বু আমাকে ছেড়ে বলে উঠেন।
“কিছু হয় নি,চলো যাওয়া যাক।”
কথাটা বলেই আব্বু আমার মাথায় হাত দিয়ে বলে।
“আসি রে মা।কিছু লাগলে ভিডিও কল দিয়ে বলিস আমাকে।”
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাই,বাবা চলে যায় বাইরে।আর আম্মুও তার কাজে চলে যায়।আর সাদাফ সে ও অফিসের জন্য বের হয় বাড়ি থেকে।আমিও দৌড়ে সেখান থেকে রান্নাঘরে চলে আসি।ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে তাতে হাত ডুবাই।
অন্যদিকে সাদাফ বাড়ি থেকে বের হতে নিলে আবারও কী মনে করে পিছনে তাকায়।ড্রয়িং রুম থেকে রান্নাঘরের একপাশ দেখা যায়।আর সাদাফ রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে সাবিহা হাত ডুবিয়ে রেখে চোখমুখ খিঁচে রয়েছে।সাদাফ কৌতুহলী হয়ে সেদিকে পা বাড়ায় আর গিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কী হয়েছে হাতে?পানিতে ডুবিয়ে রেখেছো কেন?”
হঠাৎ কারো গলার আওয়াজে ভয়ে কেঁপে উঠি,তাকিয়ে দেখি সাদাফ দাঁড়িয়ে।আমার কোন সারা শব্দ না পেয়ে উনি এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে।
“কী হয়েছে হাতে দেখি।”
উনার কথায় আমি চমকে উঠি।পানি থেকে হাত উঠিয়ে সাইড কেটে চলে আসতে নিলে উনি হাত ধরে আটকে ফেলে।গরম হাতের স্পর্শ লাগায় হাত যেনো আরো জ্বলছে।চোখ বন্ধ করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকি।
“হাত ত কাটেও নি,আর না পুড়েছে।তবে এমন ডং করে পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখার কী আছে?”
কথাটা তাচ্ছিল্য স্বরে বলেই হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দেয় উনি।আমার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।আমার সব কিছুতেই উনি নাটক,ডং বলে তাচ্ছিল্য করে।এসবে বড্ড বেশি খারাপ লাগে,উনি কী আমাকে বুঝবে না!
আমার ভাবনার মাঝেই আম্মু আসে সেখানে,আমি উর্নার আচল দিয়ে চোখ মুছে নেই।হাত লাগলে আবার চোখও জ্বলবে।আম্মু এসেই সাদাফকে জিজ্ঞেস করে।
“কী রে তোর আব্বু না বেরিয়ে গেলো,দেরি হচ্ছে না তোর?”
“আমিও চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু চোখ পড়ে রান্নাঘরে দেখি সাবিহা পানিতে হাত ডুবিয়ে রেখেছে।আমি ভাবলাম হয়ত কিছুতে লেগে হাত পুড়েছে নয়ত কেটেছে।কিন্তু হাত দেখে দেখি কিছুই হয় নি ডং করছে।”
আম্মু উনার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে আমার কাছে আসে।আমি নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।
“বলেছিলাম না তোমাকে মরিচ বেটো না হাত জ্বলবে,এখন হল ত।হাত নিশ্চয়ই জ্বলছে তার জন্য পানিতে হাত ডুবিয়েছো?”
আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই,উনি আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।
“মিথ্যা বললে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসাব গালে।চুপ করে সোফায় বসো আমি মলম নিয়ে আসছি।”
শাসনের স্বরে কথাটা বলেই আম্মু চলে যায় মলম আনতে।আর আমার চোখের সামনে আমার নিজের আম্মুর মুখটা ভেসে উঠে।আমার আম্মুও ত আমাকে এভাবে শাসন করে কেয়ার করত।কথাটা ভাবতেই চোখ দিয়ে আবারও জল গড়িয়ে পড়ে।
সাদাফ সেটা লক্ষ্য করে আর ফ্রিজ থেকে মিঠাই বের করে সাবিহার হাতে দেয়।আর গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,,,
“এটা হাতে ভালো করে ঘষো,১০ মিনিটে ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটা বলেই সাদাফ বেরিয়ে যায়।আর আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।লোকটা বড্ড অদ্ভুত,একেক সময় একেক রূপে দেখি উনাকে।এই রাগ দেখিয়ে কটু কথা বলল ত আবার কেয়ারও করল।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই পুরো হাতে মিঠাই ঘসতে থাকি।
#চলবে,,,
(Sorry for late🙂)
#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৬
বিকাল বেলা ছাঁদে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন নিচে তাকিয়ে দেখি একটা লোক ভ্যানে করে অনেক ফুলের চারা নিয়ে যাচ্ছে।সেখানে নানা ধরনের ফুলও রয়েছে কিন্তু এতগুলো ফুলের মধ্যে আমার নজর আটকায় একটা রক্তজবা ফুল গাছে।রক্তজবা ফুল গাছ আমার খুব পছন্দ,আমার বাড়িতে আমার রুমের বারান্দায় অনেক রক্তজবা ফুলের গাছ আছে কিন্তু এখানে এই বাড়িতে একটাও রক্তজবা ফুলের গাছ নেই।
হঠাৎ করেই মনে হল ভ্যানের ঐ রক্তজবা ফুল গাছটা আমার চাই।যেভাবেই হোক চাই ই চাই।কথাটা মনে হওয়ার পরই আমি ছাঁদ থেকে দৌড়ে নিচে চলে আসি।আর এসে চারদিকে আম্মুকে খুঁজে চলেছি কিন্তু আম্মুকে দেখতেই পাচ্ছি না।আম্মুকে সাথে নিয়ে যাব নয়ত ভ্যান ওয়ালা যদি আমার কথা বুঝতে না পারে।তাই আম্মুকে খুঁজছি আম্মু যাতে বুঝিয়ে বলতে পারে।বাড়িতে আর কেউ নেইও যে নিয়ে যাব।
অনেক খুজেও যখন আম্মুকে পাই না তখন আমিই বাইরে যাওয়ার জন্য দৌড় লাগাই।ভ্যানওয়ালা না দূরে চলে যায়,কথাটা ভেবেই দৌড়ের স্পিড বাড়িয়ে দেই।আর গেটের কাছে আসতেই হঠাৎ করে একটা বাইক ডুকে বাড়ির ভিতরে।আমি চোখ মুখ খিচে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যাই ভয়ে।এই বুঝি আমি ধাক্কা খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।
“আরে কানা নাকি!এভাবে পাগলের মত দৌড়ে কই যাচ্ছো!এখনই ত একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেত।ভাগ্য ভালো সময় মত থামিয়েছি নয়ত কী হত তুমি ভাবতে পারছো?সবসময় একটা না একটা ঝামেলা করলে তোমার ভালো লাগে না!”
কারো কর্কশ গলার আওয়াজে আমি চোখ খুলে তাকাই আর দেখি সাদাফ বাইকে বসে কথাটা বলেছে।আমি উনাকে কিছু বলব তার আগেই আমার ফুলটার কথা মনে হল।ভ্যানওয়ালা বুঝি চলেই গেলো,কথাটা ভাবতেই উনাকে কিছু না বলেই আবারও বাইরে দৌড় দেই।
“আরে এই মেয়ে কই যাচ্ছো তুমি?”
কিন্তু সাবিহা সাদাফের কথার কোন কথা পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে চলেছে।সাদাফ এবার বিরক্ত নিয়ে বাইকটা ঘুরিয়ে সাবিহার পিছনে যায়।একটু পরই সাবিহার সামনে এসে বাইক থামায়,সাবিহা সাদাফকে উপেক্ষা করে দৌড় লাগাতে নিলে সাদাফ হাত ধরে ফেলে।আর রেগে বলে উঠে,,,
“কানের নিচে দিব এক থাপ্পড় সব পাগলামি ছুটে যাবে।এভাবে পাগলের মত দৌড়াচ্ছো কেন?কী সমস্যা?”
আমি শুধু হাফাচ্ছি,অনেকদিন ধরে দৌঁড়ানো হয় না তাই এতটুকু দৌড় দিয়েই হাফিয়ে গেছি।সাদাফ আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সামনের একটা দোকান থেকে এক বোতল পানি এনে বলে উঠে।
“এই তুমি শান্ত হও,আর পানিটা খেয়ে নাও নয়ত আবার শ্বাস নিতে সমস্যা হবে।এখানে ইনহেলারও নেই যে এনেই পুস করবে ঠিক হয়ে যাবে।বাড়িতে যেতেও টাইম লাগবে ত শান্ত হও।”
আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকাই আর উনি চোখে ইশারা করে পানিটা খেতে।আমিও বাধ্য মেয়ের মত রাস্তার এক পাশে বসে পানিটা খেয়ে নেই।আর উনার দিকে তাকাই,উনি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।চোখমুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি বড্ড ক্লান্ত,বাড়িতে গিয়ে ত এখন ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিত।কিন্তু আমার জন্য উল্টো ঝামেলায় পড়ল,কিন্তু যাই বলি না কেন সময়টা আমার বড্ড বেশি ভালো লাগছে।উনার এমন কেয়ার গুলো আমাকে বড্ড বেশি দুর্বল করে ফেলছে উনার প্রতি।ইস্ এমনটা যদি সবসময় থাকত তবে কী এমন ক্ষতি হত!
উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কথাগুলো ভেবে চলেছি আমি।হঠাৎ উনার কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসি।
“ঠিক আছো?”
আমি মাথা নেড়ে বুঝাই যে ঠিক আছি।উনি এবার আশেপাশে একবার তাকিয়ে আমার দিকে তাকায়।আর চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠে।
“এবার বলো এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন?মাথার তার কী কোন একটা ছিড়ে গেছে যে এভাবে দৌড়াচ্ছিলে!”
উনার কথাশুনে আমার ঐ ফুলের কথা মনে হল।আমি আবারও উঠে দৌড় দেই,কিন্তু বেশি দূরে যেতে পারি নি।উনি আমার হাত ধরে ফেলে আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি উনি খুব রেগে তাকিয়ে আছে।আমি এবার দমে যাই,উনি আমার সামনে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
“এভাবে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে মানুষকে দেখানোর খুব শখ জাগছে যে তুমি দৌড়াতে পারো!নাকি বাপের বাড়ি যাওয়ার শখ হয়েছে কোনটা!”
আমি মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়েই মাথা দুই পাশে নাড়িয়ে বুঝাই কোনটাই না।উনি আবারও ধমকে বলে উঠে,,,
“তবে এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন?”
আমি এবার উনার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করি ইশারায় বুঝাব বলে কিন্তু উনি আরো শক্ত করে চেপে ধরে আর ধমকে বলে।
“আবার দৌড়ানোর শখ হয়েছে হ্যাঁ?এবার সত্যি সত্যি এক থাপ্পড় বসিয়ে দিব গালে।চুপচাপ বাইকে উঠো বাড়িতে যাবে,নয়ত সত্যি রাস্তায় থাপ্পড় বসাব গালে।”
আমি উনার কথাশুনে দমে যাই,কিন্তু আমি ফুলটার কথা ভুলতে পারছি না।ঐ ফুলটা এখনও চোখে ভাসছে,কিন্তু এখন ফুল গাছটার কথা ভাবলে গালে থাপ্পড় পড়বে নিশ্চিত।তাই আমি আর কিছু না বলে উনার কথা মেনে নেই।উনি আমাকে টেনে বাইকে বসায় আর উনিও বাইকে বসে স্টার্ট দেয়।
উনার পিছনে বসার পর মনের মধ্যে যেন হাজারও অনুভূতি গুলো জেগে উঠল।উনার এত কাছে আছি ভাবতেই ভিতরটা কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে।হঠাৎ করে সুখী মানুষের তালিকায় নিজেকে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
একটু পরই বাইক থেমেছে বুঝতে পেরে উনাকে কিছু বলতে না দিয়ে বাইক থেকে নেমে এক দৌড় দেই।আর সোজা বাড়ির ভিতরে চলে আসি।উনার সামনে যত থাকব তত উনি রাগ দেখাবে,ত তার থেকে ভালো চলে এসেছি।
অন্যদিকে সাদাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
“এই মেয়ের দৌড় আমি বের করব আজ।”
কথাটা বলেই সাদাফ তার মাকে চেচিয়ে ডাকতে ডাকতে বাড়ির ভিতরে আসে।ড্রয়িং রুম,রান্না ঘর খুঁজেও যখন উনাকে পায় না তখন উনার ঘরে যায়।গিয়ে দেখে উনি বই পড়ছে খুব মনোযোগ দিয়ে চোখে চশমা।সাদাফ হাতের এক আঙুল দিয়ে কপাল ঘষে তার মাকে বলে উঠে।
“তুমি এখানে বসে বই পড়ছো আর ঐদিকে তোমাদের গুণধর বড় বউ রাস্তায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে।”
কারো গলার আওয়াজে মিসেস রোজা বইটা বন্ধ করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সাদাফ দাঁড়িয়ে আছে।সাদাফকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খুব রেগে আছে,উনি চোখের চশমাটা খুলে সাদাফের সামনে এসে দাঁড়ায়।
“কী হয়েছে তোর?এমন রেগে আছিস কেন?”
সাদাফ এবার রেগে হালকা চিৎকার করে বলে উঠে।
“রাগব না ত কী নাচব!অফিস থেকে এসেছি কই ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিব তা না তোমাদের বউয়ের পিছনে ছুটতে হয়।”
“তুই কী সাবিহার কথা বলছিস?”
“তবে কী আমার আরেকটা বিয়ে করা বউয়ের কথা বলছি নাকি তোমার ছোট ছেলে বিয়ে করেছে?”
“এভাবে কেন কথা বলছিস,ঠিক করে কথা বল সাদাফ।”
সাদাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর কিছুটা শান্ত হয়ে বলে উঠে।
“আম্মু তুমি তোমার বউমার কিছু ব্যাবস্থা করো,পাগল করে ফেলছে আমাকে।”
মিসেস রোজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কেন!কী করেছে সাবিহা?”
তারপর সাদাফ সব কিছু বলে উনাকে,সবটা শুনে উনি সাবিহাকে ডাক দেয়।সাবিহাও এসে হাজির হয়,মাথা নিচু করে দরজার সাথে লেগে দাঁড়ায়।মিসেস রোজা শক্ত গলায় বলে উঠেন,,,
“সাবিহা কী শুনছি এসব!তুমি নাকি রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছিলে?”
আম্মুর কথাশুনে বুঝতে বাকি নেই উনি আম্মুকে সবকিছু বলে দিয়েছে।তাই আমিও মাথা উপর নিচ করে বুঝাই যে দৌড়েছি আমি।আম্মু আবার একই ভঙ্গিতে বলে উঠেন।
“দৌড়াচ্ছিলে কেন ওভাবে?”
আমি কিছু বলব তার আগেই সাদাফ বলে উঠে।
“মানুষকে দেখাচ্ছিল উনি দৌড়াতে পারে।”
সাদাফের কথাশুনে আম্মু চোখ কটমট করে তাকায় উনার দিকে।সাদাফ চুপ করে যায়,আম্মু এবার আমার দিকে তাকায় উওরের আশায়।আমি এবার আমার হাতে থাকা কাগজটা আম্মুর হাতে তুলে দেই।
বাইক থেকে নেমে ভিতরে এসেই লিখেছি এটা সাদাফকে দিব বলে।কেন দৌড়েছি ওভাবে তার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্যই লেখা।কারন উনি আমার হাতের ইশারা করে বলা কিছুই বুঝে না।তাই সবকিছু কাগজে লিখে এনেছি সাদাফকে দিব বলে।এখন আম্মু জানতে চাইল তাই কাগজটা আম্মুর হাতেই দিয়েছি।আম্মু পড়ে মুচকি হাসল আর সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে।
“কাল অফিস থেকে ফেরার সময় উনিশটা রক্তজবা ফুল গাছ নিয়ে আসিস ত।”
সাদাফ চমকে তাকায় আম্মুর দিকে,অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কেন?হঠাৎ রক্তজবা ফুল কেন?আর এতগুলো দিয়েই বা কী করবে?”
“যা বলেছি সেটা করিস,বেশি প্রশ্ন করবি না।”
কথাটা বলে আম্মু আমার সামনে এসে কপালে শব্দ করে চুমু খায়।সাদাফ আরো অবাক হয়,এখন ত তার আম্মুর সাবিহাকে বকা দরকার।তা না করে চুমু খাচ্ছে,সাদাফ বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কী হচ্ছে।
“সামনে থেকে আর এমন পাগলামি করো না মা।”
আমি হেঁসে মাথা এক পাশে একটু কাত করে বুঝাই আচ্ছা।তারপর আম্মু আমার হাতে কাগজটা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আমি একবার সাদাফের দিকে তাকিয়ে চলে আসতে নিলে উনি পিছন থেকে ডেকে উঠে।
আমি জানি উনি এখন নির্ঘাত আমাকে বকবে,তাই উনার ডাকে সারা না দিয়ে দৌড় দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।আর সাদাফ রাগে গজগজ করতে করতে সাবিহার পিছনে যায়।
#চলবে,,,
“বিঃদ্রঃ আপনাদের এমন রেসপন্সে আমি হতাশ,গল্প লেখার মত এনার্জি পাচ্ছি না এমন রেসপন্সে।গল্পটা আপনাদের ভালো না লাগলে বলুন আমি কী গল্পটা শেষ করে দিব?