একগুচ্ছ_রক্তজবা পর্ব১৬

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৬

গালে হাত দিয়ে পাথরের মত বিছানায় বসে আছি,আর সাদাফ বাঁকা হেঁসে দেয়ালে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার এমন অবস্থা দেখে উনি এবার বলে উঠে।

“একটা চুমুতেই পাখির হাত,মুখ সব বন্ধ।উফফ সাদাফ কী ঔষধটাই না দিলি রে।”

কথাটা বলেই উনি শব্দ করে হাসতে থাকে,উনার হাসিতে আমার গা জ্বলছে।

“শালা বজ্জাত,লুচু পোলা তোর সব চুল সাদা হয়ে যাইব,অকালে বুড়া হইবি তুই।”

“মনে মনে বকা দিতাছো নিশ্চয়ই!”

উনার কথায় চমকে উনার দিকে তাকাই,উনি কীভাবে বুঝল।উনি আমার হঠাৎ এভাবে চমকে তাকানোতে উনি হেঁসে বলে উঠে।

“বকলে আল্লাহ পাপ দিব বুঝছো,ত একদম বকবা না।”

আমি এবার রেগে হাতের ইশারায় উনাকে বলি।

“আর আমার মত পিচ্ছিকে যে চুমু দিছেন তাতে পাপ হবে না?”

“উুহু একদমই পাপ হবে না,কারন আমি তোমার স্বামী।আর একজন স্বামীর তার স্ত্রীর উপর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে বুঝছো।আর আমি চাইলে কিন্তু সব রকম অধিকার খাটাতে পারি।”

শেষের কথাটা একটু এগিয়ে এসে বলেন উনি।উনার কথার মানে বুঝতে আমার বাকি নেই।আমি কিছু বলব তার আগেই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দেয়।আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,উনি মুচকি হেঁসে আমার পাশে শুয়ে পড়ে।

“ঘুমাও এখন বিকালে তোমাকে নিয়ে এখান থেকে আরেক জায়গায় যাব।”

কথাটা বলে উনি পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে,আর আমার মাথায় চলতে থাকে উনি ঘুমালেই পালাতে হবে আমাকে এখান থেকে।
আমার ভাবনার মাঝেই উনি আমার দিকে ফিরে আমার হাত উনার হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে বলে উঠে।

“এই যে হাত ধরে ঘুমাইলাম,তুমি একটু নড়লেও আমি সজাগ হয়ে যাব।কারন আমার ঘুম খুব পাতলা,ত একদম পালাবার চেষ্টা করবা না।পালানোর চেষ্টা করলে গাছে উল্টো ঝুলিয়ে রাখব।
এখন কোন ঝামেলা না করে নিজে ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।গতরাতে এমনিও ঘুম হয় নি আমার,ত ঝামেলা করলে তোমার কপালেই দুঃখ আছে।”

কথাটা বলেই উনি আমার হাত আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে।আর আমি উনার দিকেই তাকিয়ে ভাবছি।

“এই মানুষটা ক্ষমা পাওয়ার জন্য কত কী করছে,আদও কী তা শুধু ক্ষমা পাওয়ার জন্য নাকি এর পিছনেও কোন স্বার্থ আছে?
এসবের কোন উওর নেই আমার কাছে,কিন্তু উনার এমন কাছে আসা,কেয়ার করা এসবে যে আমার মন শক্ত থাকতে পারছে না।যত চাইছি উনার থেকে দূরে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করব।তত উনি কাছে এসে পড়ছে,উনার এমন কাছে আসাতে কী শেষ অবধিও আমি নিজেকে শক্ত রাখতে পারব?পারব কী উনাকে ক্ষমা না করে থাকতে?”

কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

“আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে,নয়ত আমি উনার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়ব।কিন্তু আমাকে দুর্বল হলে চলবে না শক্ত থাকতে হবে।উনি আমাকে কম কষ্ট দেন নি সেসব ভুলে যেতে পারব না আমি।তাই আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে কিন্তু কীভাবে বের হব এখান থেকে আমি?উঠতেও ত পারব না,নড়লেই ত উঠে যাইব নে।আর উঠে আবার কী অঘটন ঘটাবে কে জানে?
ভাব সাবিহা ভাব কীভাবে তুই এখান থেকে বের হবি?”

নিজ মনে কথাগুলো বলে ভাবতে থাকি কীভাবে এখান থেকে বের হব আমি।এভাবে অনেকক্ষণ ভাবার পর আমার ফোনের কথা মনে আসে।আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখি উনি ঘুমে আচ্ছন্ন।আমি এবার আস্তে করে উনার পকেটে হাত দেই উনার ফোনের খোঁজে।কিন্তু পকেটে হাত দেয়ার পরই উনি নড়ে উঠে,এই বুঝি সজাগ হল!আমি হাত সরিয়ে আনি,একটু পর দেখি উনি আবারও ঘুমিয়ে গেছে।তখন আবারও পকেটে হাত দেই,আর সাথে সাথে একটা হাত আমার হাত আটকে দেয়।আমি ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে নিতে গেলে উনি আমার হাত টেনে উনার উপরে ফেলে।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি,আর উনি আমার হাত থেকে হাত সরিয়ে বালিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে বলে।

“এটাই খুঁজছিলে তাই না!”

আমি উনার কথাশুনে ভয়ে ভয়ে তাকাই,আর দেখি উনি ফোনটা আমার সামনে ধরে আছে।কিন্তু হঠাৎ আমার খেয়াল হয় আমি উনার উপরে তাই উঠতে যাব তখন উনি আমার কোমড় আঁকড়ে ধরে।আমি শিউরে উঠি,উনি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

“ফোনটাই ত খুঁজছিলে পালানোর জন্য তাই না?”

আমি কিছু বলছি না,শুধু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।উনি সেটা দেখে আমাকে ধাক্কা দিয়ে উনার উপর থেকে ফেলে দেয়।আর উঠে বসে ফোনটা আমার দিকে ছুরে মেরে হালকা চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“নাও ফোন,কী করবা করো?দেখি তুমি কী করতে পারো এখান থেকে পালানোর জন্য।”

আমি ঠিক করে বসে একবার উনার দিকে তাকাই ত একবার আমার সামনে থাকা ফোনের দিকে তাকাই।উনি সেটা দেখে চোখের ইশারায় বলে ফোনটা নিতে।আমি ফোনটা নেই না ওভাবেই অনেকক্ষণ বসে রই,উনি এবার ফোনটা নিয়ে ফ্লোরে ছুরে মারে আর রেগে বলে উঠে।

“আমি যখন বলেছি তুমি আমার সাথে থাকবে মানে আমার সাথেই থাকবে।যতদিন তুমি আমাকে ক্ষমা না করছো ততদিন আমার সাথে থাকবে।তারপর আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে,তার আগে কোথাও যেতে পারবে না তুমি।পালানোর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো,আরেকবার পালাতে চাইলে ঠাস করে গালে,,,”

আর কিছু বলার আগেই আমি উনার কপালে থাপ্পড় মেরে দেই।উনি কপালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।রেগে কিছু বলবে তার আগেই আমি হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“মশা,মশা ছিল,ওটা মারলাম আপনাকে মারি নি আমি।”

উনি আমার কথা বুঝল কী না সেটা বুঝার জন্য ছোট ছোট চোখে ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।এই বুঝি থাপ্পড়ের পরিবর্তে আমার গালেও পড়ল থাপ্পড়।কিন্তু উনি তেমন কিছু না করে রেগে বলে উঠে।

“মশা মারছো সিরিয়াসলি?এভাবে কেউ মশা মারে,এত জোরে মারছো যে কপাল এখনও জ্বলছে।পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে হয়ত!”

আমি জোড় পূর্বক হাসার চেষ্টা করে হাতের ইশারায় আবারও বলে উঠি।

“সরি,একটু জোড়েই মেরে ফেলেছি।তবে মশাকে বাঁচতে দেই নি,মশাকে মেরে আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছি।”

উনি আমার কথা বুঝতে পেরে এবার দাঁতে দাঁত চেপে বিরক্তির স্বরে বলে উঠে।

“অতটুকু একটা মশা মেরে নিজেকে সাহসী ভাবছে।আর মশা মেরে নাকি মশা থেকে আমাকে বাচাঁইছে।আল্লাহ দরি ফালাও আমি উঠে যাই,এইসব শোনারও বাকি ছিল আমার।”

উনার কথাশুনে আমি আর কিছু বললাম না।হঠাৎ করে শরীরটা কেমন যেন খারাপ লাগছে আমার।তাই আমি আর উনাকে কিছু না বলে খাটে শুয়ে পড়ি।
আমাকে কিছু না বলে এভাবে শুয়ে পড়তে দেখে উনি কিছুটা অবাক হয়।কিন্তু উনিও আর কিছু না বলে বাইরে চলে যায় দরজা লক করে।

🍁

কিছুক্ষন পর সাদাফ রুমে এসে দেখে সাবিহা শুয়ে আছে।সাদাফ এবার সাবিহাকে গিয়ে ডাক দেয়।

“সাবিহা,এই সাবিহা উঠো আমাদের এখান থেকে যেতে হবে এখন।”

সাদাফ এবার সাবিহার কাছে গিয়ে গালে হালকা থাপ্পড় মারে আর ডাকে।

“সাবিহা,এই কী হয়েছে তোমার?কথা বলো।”

তাতেও সাবিহার কোন সারা শব্দ নেই,সাদাফ এবার গাবড়ে যায় আর দৌড়ে বাইরে চলে যায় পানি আনতে।
একটু পর সাদাফ পানি নিয়ে এসে যা দেখে তাতে সাদাফ অবাকের শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যায়।

#চলবে,,,

“বিঃদ্রঃ গত পর্বে এক ভাইয়া বলেছিল যে বোবা মেয়ের এত ভাব আসে কোথা থেকে!
সে ভাইয়ার উদ্দেশ্য আমার একটা প্রশ্ন।
বোবা বলে কী সে মানুষ নয়?বোবা বলে কী তাকে সবসময় মাথা নত করে থাকতে হবে?”

(এবার থেকে সকালেই গল্প দিব সকাল ৯-১০ টার মধ্যে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here