একগুচ্ছ_রক্তজবা পর্ব১৫

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৫

একদিন পর,,,

হাত পা বাঁধা অবস্থায় গাড়িতে বসে আছি আমি,আর আমার সামনেই সাদাফ বসে আছে।উনাকে দেখে এখন আমার বড্ড বেশি ঘৃনা হচ্ছে।আমি উনার দিকে ঘৃনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছি।আর উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।আমি ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করছি কিন্তু উনার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।উনি উনার মত তাকিয়েই আছে,বুঝলাম না কী ছাতার মাথা দেখছে এভাবে।বড্ড অস্বস্তি লাগছে আমার,কেন যে কথা বলতে পারি না!কথা বলতে পারলে এখন নির্ঘাত চিৎকার করে এই বেটার কানের পোকা বের করে ফেলতাম।

বেশ অনেকক্ষণ পর উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।আর আমাকে কিছু না বলে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ শুরু করে।এতক্ষণ একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু এখন চলছে।এতে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই,উনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে!আর কেন নিয়ে যাচ্ছে!এমন হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আমার।
আমার ভাবনার মাঝেই গাড়ি থামিয়ে উনি বেরিয়ে যায় গাড়ি থেকে।আমি উনার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি।উনি এবার আমার পাশের দরজা খুলে উনার শার্টের হাতা ঘুটাতে থাকে।সেটা দেখে আমি শুকনো ঢোক গিলি,মারবে নাকি!
আমি একটু পিছিয়ে যাই,কিন্তু তাতেও কোন কজা হয় না।উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নেয়।আমি উনার থেকে ছাড়া পাবার জন্য নড়াচড়া করলে উনি এবার ধমকে বলে উঠে।

“একদম নড়বে না,নড়লে ফেলে দিব আর তোমার কোমড় ভাঙ্গবে আর তখন সারাক্ষণ আমার কোলে কোলেই ঘুরতে হবে।সেটা কী ভালো লাগবে?”

আমি উনার কোন কথা কানে না নিয়ে আমি ছাড়া পাওয়ার জন্যই ছটফট করতে থাকি।একটা সময় উনি রেগে গিয়ে আমাকে নিচে ফেলে দেয়।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি,এই বুঝি আমার কোমড়টা গেলো।
কিন্তু কোমড়ে কোন ব্যাথা অনুভব করতে না পেরে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি একটা খাটে বসে আছি।এবার আমি আশেপাশে ভালো করে তাকাই,একটা ছোট্ট রুমে আছি আমরা।একটা খাট ছাড়া আর কিছু নেই ঘরটায়।এতক্ষণ ছাড়া পাওয়ার জন্য আশেপাশে ভালো করে দেখিই নি।
আমাকে উনি কোথায় নিয়ে এলো এটা!
আমি আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যাস্ত আর ততক্ষণে উনি রুমের দরজা লাগিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।উনার উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমি তাকাই উনার দিকে।উনি আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আর আমার দুই পায়ের উপর উনার হাত রাখতে গেলে আমি পিছিয়ে যাই।
উনি এবার আমার দিকে তাকায়,আমিও তাকাই আর দেখি উনার চোখে পানি টলমল করছে।আমি দ্রুত চোখ সরিয়ে নেই,ঐ চোখে তাকাব না আমি।তাকালেই আমি দুর্বল হয়ে পড়ব,উনি এবার আমাকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।

“দেখো সাবিহা আমি জানি আমি অন্যায় করেছি।আর তার জন্য আমি অনুতপ্ত,তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি আর এই অপরাধ বোধের বোঝা সইতে পারছি না।প্রতিনিয়ত আমাকে কটু কথা শুনতে হচ্ছে।বাড়িতে কেউ আমার সাথে ঠিক করে কথা বলছে না শুধু সুজন ছাড়া।আর আমিও বুঝতে পেরেছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি।তোমাকে কষ্ট দিয়েছি,ভুল বুঝেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত সাবিহা।তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও,কথা দিচ্ছি আর কখনও এমন করব না।”

উনার কথাগুলো বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু উনাকে বিশ্বাস করে আমি ঠকেছি।আমি আর ঠকতে চাই না,তাই উনার কথার কোন উওর না দিয়ে আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকি।উনি সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“জানি এত সহজে ক্ষমা পাব না,আর না এত সহজে তোমার বিশ্বাস ফিরে পাব।তাই আমি ভেবেছি যতদিন না তুমি আমাকে ক্ষমা করবে ততদিন আমি তোমাকে আমার কাছে এখানেই রাখব।”

উনার কথাশুনে আমি অবাক চোখে তাকাই।মানে কী!কী বলছে এই বেটায়!এখানে রাখবে মানে?এটা কার বাড়ি!কোথায় এটা!
রাস্তা দিয়ে আসার সময় এমন ছটফট না করে আশপাশটা ভালো করে দেখার উচিত ছিল।তবে ত পালাতে সহজ হত,কিন্তু এখন ত আরো পেঁচে পড়লাম।ছটফট করে ত ছুটতে পারলামই না আরো ফেঁসে গেলাম।
নিজ মনে এসব বিড়বিড় করছি তখন উনি আমার পায়ের বাঁধন খুলে দিতে দিতে বলে উঠে।

“পায়ের বাঁধন আর হাতের বাঁধন খুলে দিচ্ছি।ভুলেও পালানোর চেষ্টা করো না,আর পালাবার চেষ্টা করলেও যে সহজে পালাতে পারবে সেটাও কিন্তু নয়।এখানে চুপ করে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলে উনি হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে চলে যায়।আর আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখে চলেছি আর ভেবে চলেছি।

“উনাকে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না,আর আজ যা করল তাতে ত আরো আগে ক্ষমা করব না।আজ কীভাবে কলেজের গেটে পা রাখতে না রাখতেই টেনে গাড়িতে তুলে হাত,পা বেঁধে দিলো!আমারই দোষ ভাইয়ার সাথে আসলেই আজ এমনটা হত না।এখন আফসোস করি বসে বসে,কিন্তু আফসোস করলেও ত হবে না বের হতে হবে আমাকে।আর আমি ভাল করেই জানি উনি আমাকে এখানে রেখে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আটকে রাখে নি এর পিছনেও উনার কোন স্বার্থ আছে নিশ্চয়ই।”

“এই যে এখানে এসো,খাবার এনেছি খেয়ে নাও।”

সাদাফের কথায় আমার ধ্যান ফিরে,আমি পিছনে ফিরে দেখি উনি খাটে খাবার সাজিয়ে বসে আছে।আমি উনার সামনে গিয়ে হাতে ইশারায় বলি।

“আমার ভাইয়া যদি জানে তার বোনকে আপনি কিডন্যাপ করেছেন তবে আপনার হাড়গোড় একটাও আস্ত থাকবে না।ভালো করে বলছি আমাকে যেতে দিন নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“যা হবার তা আমি দেখে নিব সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।তুমি এখন চুপচাপ খাবার খাও,আর ঘুমাও।”

উনি আমার কথা বুঝতে পারল!কেমনে সম্ভব উনি ত এতদিন আমার কোন কথাই বুঝতে পারত না।আজ হঠাৎ কীভাবে বুঝল!আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই,আমার বন্ধু রকিবুল থেকে হালকা পাতলা ট্রেনিং নিয়েছি।তাই তোমার সব কথা বুঝতে না পারলেও কিছুটা বুঝতে পারছি।আর বাকিটাও বুঝতে পারব তোমার সাথে থাকতে থাকতে।ত এখন এভাবে তাকিয়ে না থেকে এসো খেয়ে নিবা।”

“আমি খাব না।”

হাতের ইশারায় বলি কথাটা।উনি সেটা বুঝতে পেরে আমার হাত ধরে টেনে উনার পাশে বসায়।আর দুই গাল চেপে ধরে মুখে খাবার পুড়ে দেয়।আমি মুখ থেকে ফেলতে গেলে উনি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।আমি উনার হাত সরানোর চেষ্টা করলে আরো শক্ত করে চেপে ধরে আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।

“চুপচাপ মুখেরটা শেষ করো,নয়ত ভালো হবে না একদম।”

আমি উনার কথা কানে না নিয়ে আবারও একই কাজ করি।তাই উনি রেগে সামনে থেকে খাবারের প্লেটটা সরিয়ে এবার আমাকে উনার সাথে চেপে ধরে শক্ত করে।আর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,

“খাবারটা না খেলে চুমু খাওয়াব,আর আমি যা বলি তাই করে ছাড়ি সেটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছো!তাই চুমু খেতে না চাইলে খাবারটা শেষ করো।”

উনি কথাটা বলে আমার থেকে দূরে সরে যায়,আর খাবারের প্লেটটা আমার সামনে এগিয়ে দেয়।তখন আমি হাতের ইশারায় আবারও বলে উঠি।

“আপনি এভাবে জোর করে আমার মনে আরো ঘৃনার সৃষ্টি করছেন।এভাবে কখনও আপনি আমার থেকে ক্ষমা পাবেন না।”

উনি এবার আমার দুই হাত চেপে ধরে উনার এক হাতে।আরেক হাতে খাবার প্লেট থেকে নিতে নিতে বলে উঠে।

“হাত দুটো বড্ড বেশি চলছে,তাই হাত দুটো বন্ধ করে দিলাম।এবার হা করো নয়ত চুমু দিব।”

আর কী করা আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উনার হাতে খেয়ে নিলাম।আর উনি মিটমিটিয়ে হাসছে,উনার এই হাসি একদম শয্য হচ্ছে না আমার।

খাওয়া শেষে উনি আমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আর খাবারের প্লেটটা নিয়ে চলে যায়।
একটু পর উনি রুমে আসে আর বলে উঠে,,,

“কাল কাব্য তোমার সাথে কী কথা বলেছে!”

আমি চমকে পিছনে তাকাই,উনি জানলেন কীভাবে যে গতকাল কাব্য ভাইয়া আমার সাথে দেখা করেছে!

“আমি জানি কাব্য তোমার সাথে দেখা করেছে, কীভাবে জেনেছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে।এখন তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছি তার উওর দাও।”

উনার এমন ভাব দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে তাই আমিও রেগে উওর দেই।

“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”

কথাটা বলার পর উনি যা করে তার জন্য আমি একটুও প্রস্তত ছিলাম না।

#চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ পারসনাল কিছু সমস্যার জন্য মন ভালো না।
লিখতেই ইচ্ছে করে না জোড় করে এতটুকু লিখা।সবাইকে বলেছিলাম ধামাকা দিব কিন্তু পারি নি তার জন্য সরি।মাফ করো সবাই,তবে মন ভালো হলে সামনে ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করব।
আবারও ক্ষমা চাইছি আমি,ক্ষমা করো সবাই।

রিচেক করা হয় নি,ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here