একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ৪২+৪৩

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৪২
রোকসানা আক্তার

মানুষ মাত্রই ভুল। সর্ব পরিশুদ্ধি মানুষগুলোর মাঝেও কিছু না কিছু খুঁত অবশ্যই থাকে।কিছু ভুল ধরিয়ে দিয়ে তুমি চটাক করে আঙ্গুল তুলে বলতে পারবা না এই মানুষটা খুব খারাপ। দিনশেষে দেখা যায়,সেই মানুষটিই কারো চোখের জ্বল মুছে দিয়েছে।কারো সম্মান রক্ষা করেছে।কারো বিপদের খুঁটি হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ তার এত অবদানগুলো সে সংগোপনে সাধিত করে।কাউকে জানাতে,দেখাতে ইচ্ছে হয়না।মানুষের জন্যে উপকার করা তা জনগণকে দেখাতে গেলেই লোক দেখানো ভালোবাসা।তাই অতি উদার মানুষগুলো এ কাজটি এড়িয়ে চলে।
অরুন নিজেকে উদার হৃদয়বান ভেবে কখনো মানুষের বিপদে দাঁড়ায় নি।বরঞ্চ যার যত সমস্যা হয়েছে চুপিসারে তাকে ততটুকু সহায়তা করতে চেষ্টা করেছে।তাইতো কখনোই তার কৃতিত্ব কাজগুলো মিডিয়ায় আসেনি।তবে আজ তা ফাঁস হতে বাধ্য হলো থানার আনাচে-কানাচে।সকাল থেকেই কিছু শীর্ণ দেহের জীর্ণ মুখের মানুষ,কাঁধে গামছা,পায়ে জুতা ছাড়া দাঁড়িয়ে থেকে থেকে অরুনের মুক্তির শ্লেষা দিচ্ছে।তাদের প্রতিবাদের ধ্বনিতে ফুটে উঠেছে-অরুন স্যারের মুক্তি চাই।মানি না তার অন্যায়।এই থানা ভেঙ্গে দিব।অনশন করে আজ এখানেই কাটাবো।
থানার পুলিশ তাদের থামাতে চেষ্টা করে তারপরও কেউ কোনো বাঁধা-বিপত্তি মানে না।একজনতো প্রায় কেঁদে দিয়েই বলতে লাগলো,
” অন্তর পুইড়া যায়।স্যার আমার মাইয়ার বিয়ার মজলিসে আমার মান রক্ষা করছে।আমারে দেড়েক লাখ টাকা দিয়া…..!
বলেই বৃদ্ধ লোকটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।তার চোখের পানি দেখে অশ্রুর চোখ বেয়ে গড়গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে।অন্তরের ভেতর থেকে দগ্ধে ভরে খা খা করতে থাকে ।জানাই ছিল নাএই সাধারণ মানুষগুলোর অন্তরেও অরুন জায়গা করে নিয়েছে।কতটা ভালোবাসলে মানুষ এভাবে বুকফাটা কান্না করতে পারে তা অশ্রুর ধারণার বাইরে ছিল।
অশ্রু আর দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে এসপি স্যারের অফিসে ঢুকে।মিস্টার অরূপ কুমার রুমের এপাশ থেকে ওপাশে ঘন পায়ে পায়চারী করছেন।অশ্রু খেঁকারি টেনে বলল,
“ভেতরে আসবো,স্যার?”
অরূপ কুমার পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখেন এক তরুনী দরজার কার্নিশে দাড়িয়ে।আসার কারণ বুঝে উঠতে না পেরে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকান।বলেন,
“আসো।”
বলেই সামনের চেয়ারে গিয়ে তিনি বসেন।আবার বলেন,
“প্লিজজ সিট?”
অশ্রু বসল।উনি বলেন,
“এ্যানি নিড?”
“ইয়েস, স্যার।আই ওয়ান্ট টু গিভ সাম ইনফরমেশন এ্যাবাউট কেইস অব অরুন।”
“অফকোর্স। বলো।”
তারপর অশ্রু সবগুলো ঘটনা একে একে খুলে বলতে লাগলো।কি থেকে কিভাবে এতদূর গড়ালো এবং স্মৃতি,অন্যান্য মেয়েদেরও দোষগুলো তুলে ধরলো।অরূপ কুমার সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনেন।কাশি দিয়ে গলা ঝাঁড়েন।তারপর বলেন,
“বুঝলাম সব।দ্যাট মিনস আলম আলাউদ্দিন শহীদুল সাহেবকে প্রমাণগুলো পাঠিয়েছে।তবে আমার জানা ছিলনা তুমি যে আলাউদ্দিনের মেয়ে।এখন জানলাম।”
বলেই হাসার চেষ্টা করেন।অশ্রু বলল,
“স্যার,আমার বাবার কোনো দোষ নেই।সবটা আমিই করেছি।”
“তা বুঝলাম।তাছাড়া,এখানে তোমার দোষও দেখছি না।তোমার জন্যেই এতগুলো সত্য একে একে বেরুলো।তারজন্যে তোমাকে ম্যানি থ্যাংকস।যাইহোক,যে মেয়েগুলোর কথা বলছো ওদের সবার প্রতিটি রিপোর্ট লিখে দাও।তোমার ভাষ্যমতে দোষটা উভয়েরই দ্যাট আই থিংক সো।তাই ওদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।তাছাড়া,এখানে অরুনও তার প্রাপ্য সাঁঝা পাবে।ফরেনের সংস্কৃতিকে লালন করে তা বাংলাদেশে প্রয়োগ করবে এটা তার মোটেও উচিত হয়নি।দেশকে নিয়ে এধরনের বাজিমাত দেশের ছেলেমেয়েদের উপর কুপ্রভাব পড়বে এটা তার মাথায় রাখা উচিত ছিল।”
ক্ষিপ্র মনে বলে একটু থামেন।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর দৃঢ় দু’ফোঁড় দম ছেড়ে আবার আক্ষেপ গলায় বলেন,
“লোকে বলে আমরা ঘুষ খেয়ে খেয়ে অন্যের পা চাটি।তাদের বলতে চাই আপনারা আমাদের পোষাক পড়ে আমাদের অবস্থানে এসে যাচাই করুন কতটা অনিচ্ছুকতা সত্ত্বেও অন্যের কঠোর আদেশ পালন করতে হয়।এক দুজন ঘুষ খেলে সবাই অন্যান্যদেরও ঘুষখোর খেতাব পেতে হয়।আফসোস, বড়ই অদ্ভুত মানুষ পৃথিবীর।”
কথা শেষ করে টেবিলে রাখা ক্যালকুলেটরের প্রেস বোতাম আনমনে চাপতে থাকেন।অশ্রু সেদিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে।বড়ই অন্তঃবেদনা।কতটা কষ্ট পেলে মানুষ এভাবে অপরিচিতের সামনে নিজের কষ্টের গ্লানি তুলে ধরে। ভেবেই অশ্রু অন্তঃগোপনে ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।
এসপি নিজ কাজে ব্যস্ত থাকার মাঝেই বাইরে থেকে আসা মানুষের গুঞ্জন কানে গটগট করে বাজছে। সেদিকটায় একদন্ড কান খাঁড়া রেখে অশ্রুকে উদ্দেশ্য করে আবার বলেন,
“ওরা দাপাদাপি করছে অরুনকে ছাড়তে।আমরা নির্দোষীকে ইচ্ছে করে জেলে নিয়ে এসেছি।ওদের এটাই বুঝাতে পারলাম না অরুন নিজে এসে সারেন্ডার্ড করছে।হায়রে ভালোবাসা!”
অশ্রু এই প্রসঙ্গে কথা না বাড়িয়ে স্ট্রেট বলল,
“স্যার,আমাকে ফাইলটা দিন।আমি রিপোর্টগুলো লিখে যাচ্ছি।”
“সিউর। নাও।”
এসপি অশ্রুর দিকে ফাইলটা এগিয়ে দেয়।অশ্রু ফাইলটা হাতে নিয়ে স্মৃতি থেকে শুরু করে একে একে সবার রিপোর্ট গুলো লিখে।তারপর ফাইলটা হাতে দেয়।
“স্যার তাহলে আমি যাচ্ছি।”
“কিছুইতো খেলে না।কফি/চা?”
“নো স্যার,থ্যাংকস।”
বলেই অশ্রু টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা হাতে নিয়ে পথ চলতে থাকে।কাল বিকেল থেকে আজ দু’দিন হলো অরুন জেলে অবস্থান করছে।কাল রাত কল রাখার পর আর কথা হয়নি।শেষ মেসেজটা ছিল এক অন্যরকম ভালোবাসা,ভালোলাগা!আর আজ কোথায়..!
কবে আবার দেখা হবে?কবে আবার কথা হবে?ভালোবাসি,ভালোলাগা কিছুইতো বলা হলো না।কত অব্যক্ত কথা রয়ে গেল।বলেও বলা হলোনা।অন্তরালে পড়ে রইল শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস। ভালোবাসাগুলো কি এরকমই?অনুভূতিগুলো জেগেও আবার ঘুমিয়ে যায়!ঘুমিয়ে গেলে নিস্তেজ পড়ে থাকে আর জাগার নামগন্ধ থাকে না।তাহলে আর কি হবে না ভালোবাসার গন্ধ নেওয়া?এই নিষ্ঠুর পৃথিবীটা কিভাবে পারলো তা মেনে নিতে!
ভাবতে ভাবতে অশ্রু করিডর ধরে হাঁটতে থাকে।চোখদুটো লাল হয়ে আসে।কোনোমতে চোখের পানি ঠেকায়।

করিডরের শেষ সীমান্তে এসে দাড়ালে থানার কয়েদী বলেন,
“ম্যাম,অরুনের সাথে দেখা হয়েছে?”
অশ্রু মাথা নেড়ে না-বোধক উত্তর করে।
“স্যার দেয়নি দেখা করতে?”
“সেরকম নয়।”
“তাহলে?”
অশ্রুর এখন এ প্রশ্নের জবাব দিতে বিরক্ত লাগছে।তাই কয়েদীকে পাশ কেটে চলে আসে।কয়েদী সেদিকে তাকিয়ে,
“হায়রে কষ্ট।কষ্টের রেশে দেখাও করতে ইচ্ছে হয়না।তোরা ভাই ক্যান যে অপরাধ করে করে আত্মীয়-স্বজনগুলারে কষ্ট দেস!”
বলেই বিড়বিড় করে অন্যত্রে চলে যায়।

অশ্রু আজ চাইলে পারতো অরুনের সাথে দেখা করতে,কিন্তু করেনি।অরুনকে ওই অবস্থায় দেখলে নিজের আবেগ গুলোকে সামলাতে কষ্ট হতো।অরুন দেখে ফেলতো তার চোখের পানি।তখন খুব ঘৃণা করতো সে। তারজন্যেইতো সে আজ জেলে।আর এখন আসছে মায়া দেখাতে।মিথ্যা কান্নায় ছলনা।এধনের হাজারো ভাবনার মুখরে নিজেকে রেখে রেখে বাসার সামনে এসে রিক্সা থামে!
চলবে…..
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৪৩
রোকসানা আক্তার

“মেয়ে কোথায় গেছে তুমি জানো না!?”
“আরেহ,বাসা থেকে বেরুনোর আগে আমাকে বলল স্মৃতি নিচে দাড়িয়ে। ওর সাথে একটু কথা বলেই চলে আসবে,ব্যস।আমি ভাবলাম হয়তো দরকারি কি কথা বলবে সেজন্যে গেছে।”
“তো এখন নিচে নাই কেন?স্মৃতির ছায়া ওতো দেখতে পাচ্ছি না!হু?”
“আমিওতো বুঝছি না।”
” তখন তোমায় বেলকনিতে গিয়ে চেক করা দরকার ছিল স্মৃতি নিচে দাড়িয়ে কিনা।মেয়েটা এখন কত্তবড় রিস্কিতে আছে বুঝতে পারছো তুমি!কাল ভুট্টো পোদ্দারের ছেলে জেলে গিয়েছে।এখনতো আর বসে বসে আঙ্গুল চুষছেন না।আমাদের আনাচে-কানাচেই পলাতক ঘেরঘের করছে হয়তো।সুযোগ পেলেই কামড়ে ধরবে।আর সে অবস্থায় মেয়ে..!”
রাগে-জেদে আলম আলাউদ্দিনের চোখ লাল হয়ে যায়।মনের আতঙ্কটা এখন দশগুণ বেড়ে দিয়েছে মেয়েটা।পারুল বেগম আঁচলে মুখগুঁজে টলটল চোখের পানি ফেলছেন আর বিপুল পাশে দাড়িয়ে চিন্তিত মগ্নে নখ খুঁড়ছে।
অশ্রু একে একে সিড়ির সবগুলো ধাপ ক্রস করে নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাড়ায়।দৃঢ় একটা নিঃশ্বাস টেনে বাসার কলিংবেল চাপে।দরজা খুলেই পারুল বেগম হেসে দেন।আলাউদ্দিনের দিকে একফাঁক তাকিয়ে মেয়ের দিকে মাথা এগিয়ে ফিসফিস করে বলেন,
“কোথায় গিয়েছিলি?তোর বাবা সারা বাসা উজাগার করে ফেলল।আমায় বকেটকে একপাশ করেছে।”
“ম-মা,তোমাকে তো বললাম স্মৃতির সাথে দেখা করতে!”
“নিচে তোকে দেখেনি তোর বাবা!”
“স্মৃতির সাথে কথা বলতে বলতে অন্য একটা গলিতে ঢুকে যাই।তারপর দুজন সেখানেই বসে বসে কথা বলি।”
পারুল বেগম চোখমুখ কুঁচকে বলেন,
“বুঝলাম আমি।এবার তোর বাবাকে বুঝিয়ে বল।জানিসতো তোর বাবা পেটোর নাড়িভুঁড়ি বের করা ছাড়া কথা শেষ দেয় না।”
“হু।”
অশ্রু সন্তপর্ণে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে।আলাউদ্দিন মেয়েকে দেখে অগ্নিশর্মা।দমক সুরে বলেন,
“কোথায় ছিলি এতক্ষণ?”
অশ্রুর ভেতরে ভেতরে চৌচির হয়ে ফেটে পড়লেও সে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখে।মুখে স্মিতভাব বজায় রেখে বলল,
“স্মৃতির সাথে দেখা করতে বাবা।মাও জানেন।”
“শুনেছি।তোর মোবাইলটা দে তো!”
অশ্রুর ভেতরটায় কালো মেঘ জমে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে উঠে।বাবা হঠাৎ করে ফোন চাইলেন কেন!কি কারণ থাকতে পারে ফোন চাওয়ার পেছনে!বাবাতো কখনো এরকমটি করেন নি।তাহলে থানায় যাওয়ার কথা বাবা কোনোভাবে জেনে যাননিতো নাকি স্মৃতিকে সরাসরি কল করে সত্যি/মিথ্যাটা জেনে নিবেন!ইয়া মাবুদ রক্ষা করো এই অভাগীকে!মনে মনে ভেবেই অশ্রু অতি সন্তপর্ণে ঢোক গিলে।
“কি হলো?মোবাইল দে?”
বাবার ঝংকার কথার আওয়াজে অশ্রু চমকে উঠে।তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে আলাউদ্দিনের দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দেয়।আলাউদ্দিন মেয়ের থেকে ঝটাং করে মোবাইলটা নিজ হাতে নিয়ে স্মৃতির নাম্বারে কল করে।রিং হওয়া মাত্রই স্মৃতি রিসিভ করে।
“হ্যালো?”
আলাউদ্দিন গলার স্বর পরিবর্তন করে নমনীয়তায় আনেন।বলপন
” আমি অশ্রুর বাবা।”
“আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।তোমাকে একটা কথা বলতে কল দিয়েছি।”
“জ্বী,আঙ্কেল বলুন?”
“তুমি নাকি আজ আমাদের বাসার নিচে এসছো।তো আমাদের বাসায় আসো নি কেনো?”খুবই কৌশলতা অবলম্বন করে বলেন আলাউদ্দিন।যাতে স্মৃতি মনে কোনোরকম সন্দিহান ব্যাপারটা না আসে।
” স্যরি,আঙ্কেল।আমিতো আজ বাসা থেকেই বের হইনি।হুম, অশ্রুকে একবার কল দিয়েছিলাম কিন্তু তাকে কলে পাইনি। এ্যানি প্রবলেম আঙ্কেল?”
“না,না। সবকিছু ঠিকঠাক।তাহলে রাখলাম।”
“জ্বী আঙ্কেল,আসসালামু আলাইকুম।”
আলাউদ্দিন সালামের জবাব নিয়ে কল কাটেন।ফোনটা
সোফার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে রাগে ফসফস করে মুখটা অন্যদিক করে ফেলেন।পারুল বেগম ছানাবড়া চোখে মেয়ের মুখের দিকে তাকান।বিপুল,নুজিফা আকাশ থেকে পড়ার মতো ভান করে হা হয়ে তাকিয়ে।অশ্রু এভাবে মিথ্যে বলবে তা কারোই তা বিশ্বাস হয়নি।তাহলে আসল সত্যটা কি তা আলাউদ্দিনকে জানতে হবে।নিজেকে কঠিনভাবে দণ্ডায়মান রেখে অশ্রুর দিকে তাকাম।ইতোমধ্যে অশ্রুর হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে।বাবাকে কি বলবে ভেবে পায় না।বাবাতো জেনেই গেলেন স্মৃতির সাথে দেখা করতে যায় নি তাহলে কোথায় গিয়েছে বা কার সাথে দেখা করতে গিয়েছে এধরনের হাজারো প্রশ্নের সামিল হতে যাচ্ছে সে।নিজেকে যথাসম্ভব দমিয়ে রাখার চেষ্টায় অশ্রু।আলাউদ্দিন তার কাঠিন্য গলায় বলে উঠেন,
“অশ্রু,তাহলে তুমি স্মৃতির সাথে দেখা করতে যাও নি,রাইট?”
অশ্রু নিচের দিকে মাথা তাকিয়ে থাকে।অশ্রুর চুপ থাকা দেখে আলাউদ্দিন এবার জোরে চেঁচিয়ে বলেন,
“কথা বলছিস না কেন?!”
অশ্রু মনের সাথে মনের বিষম খায়।কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলল,
“ব-বাবা আ-স-লে…!”
“নে অজুহাত।সত্যিটা বলবি।”
অশ্রু ভেবে কূল পায় না কি বলবে কি এর উত্তর।থানার কথা বলতে গেলেতো অনেক বড় বিপাকে পড়বে সে।অরুনকে বাঁচাতে তার মেয়ে তারই বিরোধিতা করতে যেচে এটা কোনো বাবারই সহ্য হবে না।অকূল পাথারে অশ্রু এবার সবার সামনে নাক টেনে টেনে কেঁদেই দেয়।মেয়ের ঝরঝরে চোখের পানি পারুল বেগমের অন্তরে গিয়ে টান লাগে।স্বামীকে বলে উঠে,
“মেয়েকে কেন শুধু শুধু এরকম করছো!বাসায় হয়তো একা একা ভালো লাগেনি তাই বাইরে গেছে।”
“পারু,তুমি কথা বলবা না একদম।ইদানীং এরমাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে।তোমার হয়তো তা চোখে পড়েনি।আমার ঠিকই চোখে পড়েছে।একে কলাই চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিওও!”
“বাবা এটা বলো না।প্লিজজ বাবা আমি চট্টগ্রাম যাবো না।বাবা আমার কিছুদিন পর ফাইনাল এক্সাম!”
“পড়ালেখা করা মেয়ে বাবাকে এভাবে মিথ্যে বলতে লজ্জা হয় না!? আবার পরিক্ষার কথা তুলিস!সত্যি করে বলতো কোথায় গিয়েছিলি?কারো সাথে সম্পর্ক আছে তোর তাই এত বাঁধা-বিপত্তি এড়িয়ে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিস!?সত্যি করে বল!”
“বাবা এ তুমি কি বলছো।মা, বাবা এসব কি বলছে।”
“প্লিজজ ফুঁপা ওকে হার্ট করবেন না।হয়তো বাসা থেকে বেরুতে দিবেন না বিধায় তাই এমনটি বলেছে।মানুষ ক’দিন বদ্ধ ঘরে থাকতে পছন্দ করে বলুনতো?আমারওতো পছন্দ না।ভবঘুরে অনেক আরাম।তাই মিথ্যে বলার তারও একটা কারণ থাকতে পারে।”
“বিপুল, তুমি ঠিক বলেছো!দয়া করে মেয়েটাকে আর নার্ভাস করো না।দেখলেইতো কিভাবে কাঁদছে।”
“এই না তোমাদের জন্যে ও এরকম পারিয়ে যাচ্ছে ।ওর সাহসটা হয় কিভাবে এসময় এভাবে বেরুবার!ঘুরতে যদি এতই ইচ্ছে তাহলে ছাদে যেতে পারতো।পাশের ফ্ল্যাটের রশ্নির মায়ের সাথে কথা বলে সময় কাটাতে পারতো।এসব ওর ন্যাঁকা!তোমরা কিছুই বুঝছো না।একে আমার কিছুতেই সুবিধের মনে হচ্ছে না!”
বলেই কটামুখে অশ্রুর দিকে একফোঁড় তাকিয়ে হর্নপায়ে নিজ রুমে চলে যান।আলাউদ্দিন চলে যাওয়ার পর পারুল বেগম মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“অশ্রু,নার্ভাস হোস না।জানিসইতো তোর বাবা এরকম।বাসা থেকে বেরুতে ইচ্ছে হলে আমাদের বলতি।পরিস্থিতি হালকা স্বাভাবিক হলে হয়তো বিপু আছে ও-ই তোকে ঘুরে নিয়ে আসতো।আচ্ছা যা হয়েছে মাথা থেকে ঝেঁড়ে পেল।যা এবার নিজের রুমে যা।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে।আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

অশ্রু নিজের রুমে এসে বিছানার উপর বসে।বুকের ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে খান খান।বাবার ভয়াল ক্রোধ আজ সে নিজ চোখে অনুভব করেছে।বাবার মাথার রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে যেকোনো পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করতে অন্য পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাবোধ করেনা।তাহলে বাবার সন্দেহের দানা সামনের পথগুলোতে কি কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে?সেটা যদি হয় বিয়ের মতো অনেক বড় ফাঁদের ঝাল।ভাবতেই ঢুকরে ঢুকরে কান্না করে দেয় অশ্রু।দরজার ওপাশ থেকে করাঘাতের আওয়াজ আসে।তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দেখে বিপুল ভাতের প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে।অশ্রুকে পাশ কেটে ভেতরে ঢুকে।ভাতের প্লেট টেবিলের উপর রেখে পেছন ঘুরে দ্রুতপায়ে দরজার কাছে এসে অশ্রুর সামনে দরজা ঠাস ঠাস করে চাপিয়ে দেয়।অশ্রু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“দরজা চাপালেন কেন?”
“কথা আছে।আগে গিয়ে চেয়ারে বসে ভাতটা খেয়ে নে।তারপর অনেকগুলো কথা বলবো তোর সাথে।”
“আমি খাবনা!”
“বললেই হলো?”
“বলছিতো খাবো না।”
“খেতে হবে তোকে।”
“খাব না মানে খাবো না!”
“জেদ দেখাস না অশ্রু।নাহলে এখানে এখন ফুঁপাকে ডেকে এনে দু’গালে চারটা চড় বসিয়ে দিব!”
“ডাকো তাহলে?”
বিপুল সত্যি সত্যিই দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে গলা উঁচিয়ে ফুঁপা বলে ডেকে উঠে।দ্বিতীয়বার ডাকতে যাবে ওমনি অশ্রু ভয়ে কুঁকড়ে যায়।তারপর হাত-পা ছেড়ে বাধ্য মেয়ের মতো বলল,
“আচ্ছা খাচ্ছি,খাচ্ছি।”
বিপুল ঠোঁট ছড়িয়ে হেসে দেয়।তারপর দরজাটা আবার ঠেসে দিয়ে অশ্রুর সামনে এসে দাড়ায়।বলল,
“আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি।খাবার শেষ হলে বলিস।ওকে?”
অশ্রু কিছু না বলে খাবারে হাত রাখে।বিপুলও অশ্রুর জবাবের অপেক্ষা না করে দৃঢ়পায়ে বেলকনির দিকে হেঁটে যায়।অশ্রুর খাওয়া শেষ হলে প্লেট নিয়ে উঠে দাড়াতেই বিপুল টের পায়।পেছনে তাকিয়ে বলল,
“য়ু-হু প্লেট নিয়ে তোর কিচেনে রাখতে হবে না।কথা শেষ করে আমি নিজেই বেরুনোর সময় কিচেনে প্লেট রেখে আসবো।
অশ্রু মনে মনে কিঞ্চিৎ রাগ হয়ে যায়। মনে মনে বলে,আসছে আলগা পিরীত দেখাতে।যাইহোক রাগটা এমুহূর্তে বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল,
“প্রয়োজন নেই।আমার নিজের হাত এবং পা আছে।আমি নিজেই পারবো।”
বিপুল এদিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“তুই না বেশি কথা বলিস।”
বলেই হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে যায়।টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে।পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল,
“অশ্রু বিছানায় বস।কিছু কথা বলবো তোর সাথে।”
“কি কথা?”
“পাল্টা প্রশ্ন না করে যেটা বলছি সেটা কর।”
তারপর অশ্রু মাথায় একক্লেশ বিরক্তি নিয়েও অনিচ্ছা বসত বিছানার উপর গিয়ে বসে।মুখে গুমোর ভাব এনে বলল,
“কি বলবে তাড়াতাড়ি বলেন।”

চলবে…
(কি ভাবছেন?বিপুল কি বলতে পারে? তার মনের কথা নাকি অশ্রুর বাবার বলা সেই কথা(কারো সাথে অশ্রুর রিলেশন আছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here