#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-০২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
কাদায় লেপ্টে পড়নের সাদা ফ্রকটা চকলেট কালারের বর্ণ ধারণ করেছে নূহার। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে মাঠে পাশের লম্বা আমগাছটির একটি ডালে। আর তার এই অবস্থা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে মাঠের একদল ছেলে। যা তাদের ভেঙানো হাসির শব্দে স্পষ্ট!
বেশ কিছুক্ষণ আগেই স্কুল ছুটি হয় নূহার। তার আম্মু স্কুলের আসার সময় কড়া গলায় আদেশ হিসেবে বলেছিলো “নিজে নিজে মাতব্বরি করে আসতে যাস না, ভাইয়া নিয়ে আসবে!” সেই কথাটাই বার কয়েক নিজের মনে আওড়ে নিয়ে ঠোঁট উল্টায় সে। তখন আকাশে আবারও মেঘেরা এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে। স্কুলের ছেলেপেলেরা স্কুল ছুটি হওয়া মাত্রই খেলার জন্য ব্যাগ ঘাড়ে করেই ছুট লাগায় স্কুলের পাশের বড় মাঠটিতে। একে একে বেড়িয়ে যায় সকলেই। শুধু থেকে যায় নূহা। ভাইয়ের অপেক্ষায় পাড় করে দেয় আরোও দশ দশটা মিনিট। তারপরও যখন ভাইয়া আসে না তখন হতাশ হয়ে ছোট্ট ছোট্ট পায়ের কদম ফেলে বেড়িয়ে আসে সেও স্কুল থেকে। আজ ভাইয়া আসবে বলে বান্ধবীদেরও নিজের জন্য অপেক্ষা করতে না বলে চলে যেতে বলেছিলো সে কিন্তু যখন দেখলো ভাইয়া আসছেই না তখন তার মনে হতে লাগলো বান্ধবীদের সাথে বাসায় চলে যাওয়াই বোধহয় উচিত ছিলো তার।
যখন নূহা দেখলো ১৫ মিনিট পেড়িয়ে যাবার পরও ভাইয়ার কোনো হদিস নেই তখন মুখ ফুলিয়ে মাঠের দিকে পা বাড়ায় সে। উদ্দেশ্য মাঠের বটগাছটার নিচে বসে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করা৷ এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর কতোক্ষণ। সেই ভেবেই মাঠের বটগাছটার নিচে গিয়ে বসে পড়ে নূহা। বসে বসে ছেলেদের ক্রিকেট খেলা পর্যবেক্ষণ করছিলো ঠিক সেই সময়েই একটি ছোট্ট বিড়াল ছানাকে ছুটে আসতে আবিষ্কার করে সে। হঠাৎ এতো জোড়ে দৌড়ানোর কারণ খুঁজতে পেছনে তাকাতেই একটা কুকুরকে ছানাটির পেছনে দৌড়োতে দেখে সে। বিড়ালছানাটি দিশ-কূল খুঁজে না পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে সামনে থাকা আম গাছটায় উঠে পড়ে। কুকুরটি আর তাকে ধরতে না পেরে “ভাউ ভাউ” করে চেঁচাতে চেঁচাতে স্থান ত্যাগ করে অগত্যাই।
সেই মুহুর্তেই আকাশে মেঘ ডেকে উঠে, শুরু হয় মেঘের কান্না। ভারী বর্ষণে ভিজে চিপচিপে হয়ে যার নূহার পুরো শরীর। ছেলেপেলেরা বৃষ্টিতে লুকোয় না, বরং ক্রিকেট ছেড়ে বৃষ্টিতে ফুটবল নিয়ে মেতে ওঠে তারা। এদিকে নূহা ছুটে গা ভেজার থেকে বাঁচানোর জন্য যেতে চেয়েও যায় না। তার মনে পড়ে ছোট্ট বিড়ালছানাটির কথা। সে তো কুকুরের ভয়ে গাছে উঠে গিয়েছে কোনোভাবে কিন্তু নামতে তো আর পারছে না। এই বৃষ্টিতে ছানাটিও তো ভিজে যাবে। সেই ভাবনা পোষণ করেই গাছ থেকে বিড়ালছানাটিকে নামানোর জন্য চেষ্টা চালাতে লেগে পড়ে সে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত গাছে চড়তেই তো আজো শিখে নি সে, তারওপর বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে গাছে শক্ত দেহ। নূহা বুঝে নেয় সে একা পারবে না তাই ছুটে যায় ছেলেগুলোর কাছে সাহায্যের মিনতি করে। কিন্তু বাজে ছেলেগুলো তার কথায় কোনো পাত্তাই দেয় না। আবারও মত্ত হয় তারা নিজেদের মধ্যে ফুটবল খেলায়।
নূহা আবারও হতাশ হয়, শেষমেশ আর কোনো পথ খোলা না পেয়ে একা একাই গাছ বেয়ে উঠার জন্য উদ্দ্যত হয় সে। তবে এবারও ভাগ্য সহায় হয় না তার। দু-তিন বার একই ভাবে চেষ্টা করতে করতে একটু উঠতে নিলেই পিছলে কাদায় পড়ে যায় সে।
.
মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব এনে করুন চোখে চেয়ে ভিজে চিপচিপে হয়ে যাওয়া ছোট্ট বিড়ালছানাটির “মিউউ মিউউ” করে করা আর্তনাদ শুনছিলো নূহা। এমন সময় ছাতা হাতে অর্ধভেজা শরীরে হাল্কা নীল শাড়ি পরিহিত একটি মেয়ে এসে তাকে দেখে চমকে উঠে বলে উঠলো,
—- একি বাবু, তুমি কাঁদায় বসে আছো কেনো? উঠো!
বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো অন্বিতা। কয়েক সেকেন্ড অপলক দৃষ্টিতে অন্বিতার স্নিগ্ধ মুখপানে চেয়ে থেকে নিজের ছোট্ট হাতটা এগিয়ে দিলো নূহাও। অন্বিতা তৎক্ষণাৎ হেঁচকা টান মেরে নূ্হাকে নিজের ছাতার আচ্ছাদনে
দাঁড় করিয়ে দিয়ে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো,
—- বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো? তোমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে। বাসা কোথায় তোমার বাবু?
নূহা অন্বিতার কথায় এবার ঠোঁট উল্টে শব্দ করে কান্না জুড়ে দিলো। নিজের ছোট্ট হাতে আমগাছটির সেই ডালটিতে অসহায় বিড়ালছানাটিকে দেখিয়ে সে বলে উঠলো,
—- দেখো ওই বিল্লুটা গাছ থেকে নামতে পারছে না, আমি একা একা ওকে নামাতেও পারছিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে বিল্লুটার তুমি একটু হেল্প করবা?
অন্বিতা বিড়ালছানাটির থেকে চোখ সরিয়ে পরম স্নেহে এক হাতে নূহার চোখ মুছে দিলো। মিষ্টি হেসে তাকে ছাতাটা ধরতে দিয়ে বলে উঠলো,
—- তুমি একদম কান্না করো না। আপু আছে তো, এক্ষুনি নামিয়ে দিচ্ছি ওকে। তুমি ছাতাটা মাথায় ধরে রাখো শুধু।
বলেই ছাতার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো অন্বিতা। এতোক্ষণে বৃষ্টির বেগ অনেকটা কমে এলেও পুরোপুরি থেমে যায় নি, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আকাশের বুক চিরে নেমে যাচ্ছে অবলীলায়। অন্বিতা নিজের ভিজে যাওয়া শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে গুঁজে চোখের ওপর হাত দিয়ে বৃষ্টির পানিগুলোকে চোখে পড়ার থেকে আটকিয়ে গলা উঁচু করে তাকালো।
শাড়ি পড়ে গাছে চড়া যে ঠিক কতোটা কষ্টকর তা এতোদিন টের না পেলেও আজ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে সে৷ পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া গাছটিতে খুবই সাবধানে নিচের একটি ডালে পা রেখে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো অন্বিতা। বিড়ালছানাটি ভয় পেলেও গুটিগুটি পায়ে নিজের ছোট্ট শরীরটা এসে রেখে দিলো অন্বিতার হাতে। অন্বিতা চটজলদি বিড়লটিকে এক হাতে আগলে নিয়ে খুবই সাবধানে এগিয়ে দিলো নূহার দিকে। নূহা নিজের কোলে বিড়লটিকে নিতেই স্লিপ কেটে গাছ থেকে পরে যেতে নিলেও অবশেষে নিজেকে সামলে নিয়ে ঘাসে জমা পানিতে উবু হয়ে নেমে পড়লো অন্বিতা। যার দরুন ঘাসে জমা কাদা-পানি ছিটকে পড়লো চারিদিকে। অন্বিতে নিজের হাটু চেপে ধরে শরীরের ভার ছেড়ে দিলো ঘাসের বুকেই। আজ বাইকে ধাক্কা লেগে এক্সিডেন্টে তারওপর বৃষ্টিতে ভিজে গাছে উঠা, সব মিলিয়ে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। তখন কার হাটুর ব্যাথাটা খুব বেশি অনুভূত না হলেও সময়ের সাথে ব্যাথাটা তীব্র আকার ধারণ করছে তার। সাথে হাতের ছিলে যাওয়া জায়গায় পানি লাগায় চিনচিনে জ্বালা করে উঠছে বারংবার।
অন্বিতাকে ঘাসের ওপরে গা ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়তে দেখে দৌড়ে এগিয়ে এলো নূহা। টুপ করে তার পাশে বসে পড়ে ব্যস্ত স্বরে সে বললো,
—- মিষ্টি আপু, তুমি ঠিক আছো? কোথায় ব্যথা পেয়েছো আপু?
নূহার কন্ঠ শ্রবণগোচর হওয়ায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অন্বিতা। ব্যথায় ঝিম ধরা শরীরটাকে টেনে তুলে মিষ্টি করে মলিন হেসে সে বললো,
—- আমি ঠিক আছি, এখন বলো স্কুল ড্রেস পড়ে বাইরে কি করছো তুমি বাবু? বাসায় যাওনি যে? কেউ নিতে আসে নি তোমায়?
নূহা নিমিষেই মুখটা ফ্যাকাসে বানিয়ে ফেললো। ঠোঁট উল্টে সে বললো,
—- আম্মু বলেছে ভাইয়া আসবে নিতে। কিন্তু ভাইয়া তো এলো না!
অন্বিতার মনে মনে নূহার ভাইয়ের প্রতি বেশ রাগ হতে লাগলো। কেমন ভাই! যে বোনকে ফেলে রেখে হয়তো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে। মনে মনে বার কয়েক গালি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো অন্বিতা। নূহার কোলে গুটিশুটি মেরে থাকা বিড়ালছানাটির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ছাতটা উঁচু করে ধরলো সে। নূহাকে আস্বস্ত করে সে বললো,
—- চলো আমি তোমায় দিয়ে আসি, বাসার ঠিকানা আমায় বলো। আর এই পুচকুটার কি করবে? ওর মাকেও তো দেখছি না কোথাও,
ওর গা মুছে দিতে হবে, এমনিতেই বেড়ালদের গায়ে অাবার পানি সহ্য হয় না।
নূহা ঠোঁট উল্টে থরথর করে কাঁপতে থাকা বিড়ালটিকে দু হাতে আগলে নিলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সে বললো,
—- বিল্লুর মাম্মা নেই বোধহয়, আমি তাহলে ওকে বাড়ি নিয়ে যাই!
অন্বিতা ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো। চিন্তিত গলায় সে প্রশ্ন করলো,
—- তোমার বাসায় ওকে এলাউ করবে তো?
নূহা গালে হাত দিয়ে খানিক ভেবে নিয়ে মাথা ঝাঁকালো যার অর্থ “হুম, এলাউ করবে!” অন্বিতা হাসলো। মাঠ পেড়িয়ে রিক্সা স্ট্যান্ড থেকে একটা হুড তোলা রিক্সা ডেকে নিয়ে উঠে পড়লো দুজনেই। নূহার থেকে তাদের বাড়ির ডিরেকশন জেনে নিয়ে রিক্সাওয়ালা কে সেই দিকেই রিক্সা ঘোরাতে বললো অন্বিতা। যেতে যেতে সে নূহাকে প্রশ্ন করলো,
—- এই যা এতোক্ষণ ধরে তোমার সাথে কথা বললাম তবুও নামটাই জানা হলো না। তোমার নাম কি বাবু?
বিনিময়ে এক গাল হেসে নূহা জবাব দিলো,
—- আমার নাম রাহিয়া আহমেদ নূহা। আমি ক্লাস টু তে পড়ি। আমরা দুই ভাই-বোন। আমি আমার আম্মু-আব্বুর ছোট্ট একটা পরী। আর ভাইয়ার কাছে আস্ত একটা পেত্নি!
এতো ছোট্ট একটা মেয়ের মুখে এতো পাকা পাকা কথা শুনে বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে ফেলে অন্বিতা। নূহার গালদুটো টেনে দিয়ে একহাতে আগলে রাখলো তাকে যাতে রিক্সায় ধাক্কা লাগে ভুলক্রমেও পড়ে না যায়।
.
বৃষ্টিতে আটকা পড়ে এতোক্ষণ একটা দোকানের নিচে দাড়িয়ে ছিলো নিশান্ত-সানি। বৃষ্টি থামতেই আবারও লাইব্রেরীর উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা।
লাইব্রেরীর কাছাকাছি পৌঁছোতেই জোরেশোরে ব্রেক কষলো নিশান্ত। সানি টাল সামলাতে না পেরে টাইডলি গলা জড়িয়ে ধরলো তার। নিশান্ত সানিকে নামতে ইশারা করে বাইক থেকে নামবে তার আগেই রেগেমেগে বোম্ব হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো রিভান। ঝাঁঝালো গলায় সে বললো,
—- ওই ব্যাটা ফোন বন্ধ কেন তোর? আন্টি কতোবার কল করছে হিসাব আছে? তোকে না পেয়ে আমাকে কল করে বললো যাতে তোকে নূহাকে স্কুল থেকে আনতে বলে দেই।
নিশান্তের মনে পড়লো তখন ফোনটা পকেট থেকে পড়ে যাওয়ায় সুইচড অফ হয়ে গিয়েছিলো। অন না করেই আবারও পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছিলো সে।
নূহার কথা মনে পড়তেই চটজলদি হ্যান্ড ওয়াচে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নিশান্ত। এখন সময় ১ টা বেজে ২৯ মিনিট। তার মানে স্কুল ছুটি হয়েছে আরোও আধঘন্টা আগে। সাথেসাথেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো তার। সানিকে রিভানের সাথে বাড়ি যেতে বলে বাইক ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ ছুট লাগালো সে। না জানি বোনটা তার আদৌ বাড়ি গিয়েছে নাকি ভাইয়ের অপেক্ষায় বসেই রয়েছে স্কুলের বারান্দায়! এসব ভেবেই মনে এক অজানা ভয় উঁকি মারতে শুরু করলো নিশান্তের।
ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে মাত্র ৫ মিনিটেই স্কুলের সামনে পৌছালো নিশান্ত। স্কুলের গেইট বন্ধ। তার মানে নূহা বেড়িয়ে গিয়েছে। নিশান্ত আশেপাশে সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খঁুজেও নূহা কে না পেয়ে চরমভাবে হতাশ হলো। চটজলদি পকেট থেকে ফোন বের করলো মাকে কল করার উদ্দেশ্যে।
.
—- মিষ্টি আপুই, এখানেই থামাতে বলো কাকুকে। এইটাই আমাদের বাসা।
অন্বিতা নূহার কথায় ব্যস্তস্বরে রিক্সাওয়ালা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- ব্যাস ব্যাস মামা এখানেই থামান।
বলেই চোখ তুলে তাকালো সে নূহাদের বাড়িতে। কিন্তু অবাক করা বিষয় এতো তাদেরই ভাড়া বাসা। যেই ফ্লাটে আজই মালামাল সিফট করিয়ে উঠেছে তারা। যার দরুন অন্বিতা চমকে উঠে নূহাকে বললো,
—- এটা তোমাদের বাসা? এই ফ্লাটের দুতলায় তো আমরা ভাড়া নিয়ে উঠেছি আজই।
অন্বিতার কথায় চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো নূহার। সে তার বিল্লুটাকে কোলে রেখেই দাঁত বের করে হেসে বললো,
—- ওম্মা! তোমরাই তাহলে আমাদের বাসায় আজকে উঠছো? কি মজা! আজ থেকে আমরা তাহলে একসাথে থাকবো, এই আপুই তুমি আমার সাথে খেলবা? জানো আমার ভাইয়াটা না খুব পঁচা! সারাদিন খালি পড়া পড়া আর পড়া। আমার সাথে ইকটু খেলেও না।
অন্বিতা বিস্মিত হলো। নূহার নাক টেনে দিয়ে বললো,
—- ওয়াও, হোয়াট আ কো-ইন্সিডেন্ট!
ওক্কে নুহা বেবি! আজ থেকে তবে আমিই তোমার সাথে খেলবো।
.
নিশান্ত মা’র ঝাড়ি খেতে খেতে কানের ঝালাপালা করে মুখ কালো করে ফোনটা কেটে দিলো। নূহাকে বাসায় না নিয়ে গিয়ে উল্টে নূহা বাসায় গিয়েছে কিনা ফোন করে জিজ্ঞেস করায় পুরো জোয়ালামুখির রূপ ধারণ করেছে তার মা আফসানা বেগম! মার হাইভল্টেজ ওয়ালা ধমক খেয়ে পেট ফুলিয়ে মুখে আবারও চিন্তার ছাপ ফেললো নিশান্ত। বোন স্কুলেও নেই, আশেপাশেও নেই আবার বাসায়ও যায় নি তবে কোথায় গেলো নূহা? কোনো বিপদ হলো না তো?
নিশান্তের ভাবনার মাঝেই আবারও ফোনটা বেজে উঠলো। আবারও মা কল করেছে। এতো গুলো গালি দেবার পরও কি ক্ষান্ত হয় নি আম্মু? ভেবেই চোখ মুখ খিঁচে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো নিশান্ত। ওপাশ থেকে তার মা আফসানা বেগম গম্ভীর গলায় বললেন,
—- বাড়ি আয়। নূহা চলে এসেছে।
এতোক্ষণে বোধহয় নিশান্তের জানে জান ফিরে এলো। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নূহা কিভাবে একা একা গেলো প্রশ্ন করবে তার আগেই আফসানা বেগম ফোনটা কেটে দিলেন। নিশান্ত বুঝলো আম্মাজানের টেম্পারেচার আজ বেজায় বেড়ে গিয়েছে। বাসায় গেলে যে তার উত্তম-মধ্যম সাধিত হবে তা বেশ বুঝতে পারছে সে। আজ সকালে যে কার মুখ দেখে উঠেছে কে জানে, শুধু গালি খেয়েই পাড় করে দিতে হচ্ছে দিনটা। কার মুখ দেখে উঠেছে কথাটা মনে পড়তেই ঠোঁট উল্টালো নিশান্ত। কারণ আজ সকালে উঠে আয়নায় নিজেই নিজের মুখ দেখেছে প্রথম। তাই নিজের কাঁধ থেকে দোষটা ঝেড়ে ফেলতে আর কার মুখ দেখেছে মনে করতেই ভেসে উঠলো সেই হাল্কা নীল রঙের শাড়িতে মোড়ানো তরুণীর স্নিগ্ধ মুখখানা! উজ্জ্বল শ্যামলা মুখটায় পাতলা একজোড়া ডার্ক রেড ঠোঁট, তার নিচেই বাম দিকে বাদামী বর্ণের ছোট্ট একটা তিল। ভ্রু যুগল ঘন পাতলা, টানাটানা ঘন পল্লব বিশিষ্ট একজোড়া চোখ সাথে রয়েছে খাড়া নাক। লম্বা-পাতলা গড়নের মেয়েটার চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত ছড়ানো! কোনো সাজ ছাড়াই একদম ঘায়েল করে দেবার মতো মুখশ্রী তার।
অন্বিতার চেহারা কল্পানার জগতে ফুটিয়ে তুলে পর্যবেক্ষণ করছিলো এমন সময় মনে পড়লো তার বলা অকথ্য ভাষার গালিগুলোন! সাথেসাথেই মুগ্ধতার বদলে কপালে ভাজ ফেলে হংকার ছাড়লো নিশান্ত। এক হাতে নিজের ব্রাউন চুলগুলো টানতে টানতে সে বললো,
—- ইয়েস! এই মেয়েটার জন্যই আজ আমার দিন খারাপ যাচ্ছে। ফুল অফ ননসেন্স! ওহ গড! জিন্দেগীতেও যেনো আর দেখা না হয় ওই মেন্টাল মেয়েটার সাথে প্লিজ!
.
বাসায় এসে নূহাকে টাইডলি হাগ করে তার রাগ ভাঙানোর জন্য চকলেট এগিয়ে দিতেই নূহা চকলেট গুলোর দিকে এক পলক তাকিয়ে মাথা ডানে-বামে নাড়িয়ে বললো,
—- আমার চকলেট লাগবে না, কারণ আমি তো তোমার ওপর রাগ করেই নেই ভাইয়া। ভাজ্ঞিস তুমি আজকে যাও নি। নয়তো এত্তো সুন্দর একটা বিল্লু আর এত্তো সুন্দর একটা মিষ্টিপু পেতামই না।
বলেই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে গা শুকিয়ে বিড়ালছানাটিকে একটা তোয়ালাতে মুড়িয়ে কোলে নিলো নূহা। নিশান্তের দিকে তোয়ালায় পেছানো বিড়াল ছানাটিকে এগিয়ে দিতেই নিশান্ত চোখ বড়বড় করে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো,
—- ইয়াক! বেড়াল? কই থেকে তুলে এনেছিস এটাকে?, জানিস কতো রোগ-জীবাণু ছড়াবে বেড়ালটা? এটাকে যেখান থেকে পেয়েছিস সেখানেই রেখে আসবি চল!
নিশান্তের কথায় মুখ কালো করে ঠোঁট উল্টালো নূহা।কাঁদো কাঁদো মুখ করে সে বললো,
—- আম্মু আব্বুর যেখানে কোনো প্রবলেম নেই, তুমি কেনো না করছো ভাইয়া, রাখি না প্লিজ! ওর মাম্মাম নেই তো! একা একা কিভাবে থাকবে বিল্লুটা?
বিনিময়ে মুখটা আগের থেকে কঠিন বানালো নিশান্ত। কড়া গলায় সে বললো,
—- নো ওয়েস! যেখানেই থাকুক! একে এই বাড়িতে রাখা যাবে না মানে যাবে না। যেখান থেকে পেয়েছিস সেখানেই রেখে আসবি।
এবার চোখ মুছে চোখ মুখ শক্ত করলো নূহা। সে জানে তার পঁচা ভাইয়াকে কোনো ভাবেই মানানো যাবে না তাই অন্বিতার কথা মাথায় আসতেই মুখে অভিমানে ভরা হাসি ফুটিয়ে তুললো সে। নিশান্ত কে ভেঙিয়ে সে বললো,
—- ঠিক আছে, বিল্লু যেখানে ভালো থাকবে সেখানেই রেখে আসছি ওকে।
বলেই বড়বড় পায়ে দরজা খুলে বেঁড়িয়ে পড়লো নূহা। নূহা যেতেই তাকে থামাবার জন্য চেঁচাতে চেঁচাতে ছুট লাগালো নিশান্তও।
—- নূহা…দাড়া একা একা কোথায় যাচ্ছিস? বোনু, দাঁড়া আমিও আসছি।
.
শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছছিলো অন্বিতা। কলিং বেলের আওয়াজ কানে ভেসে আসায় চমকে উঠলো সে। দরজার থেকে কাছের সোফায় বসে খুব মনোযোগ দিয়ে গেমস খেলছে আনন্দ। অন্বিতা দূরে থাকায় আনন্দকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- এই আনন্দ, দেখতো দরজায় কে!
আনন্দ অন্বিতার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এক দৃষ্টিতে ভিডিও গেমস খেলতে খেলতেই জবাব দিলো,
—- নো ওয়ে এখন পারবোনা, হেরে যাবো অামি! তুমিই দেখো। আই এম বিজি নাও!
আনন্দের কথায় বিরক্ত হয়ে মুখ বাঁকালো অন্বিতা! “ছেলেটা যদি একটা কথাও শুনে…..! সারাদিন শুধু গেমস আর গেমস!” কথাগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতেই দরজার দিকে এগোতে লাগলো সে। একহাতে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওপর হাতে দরজা খুলতেই থমকে গেলো সে। বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে অন্বিতা চিৎকার করে বলে উঠলো,
—- আপনিইইইইই………!
.
.
.
চলবে………………💕