#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৫১.(অন্তিম পাতা)
___________________
ভালোবাসি, ভালোবাসি,ভালোবাসি।নিভ্র সাফার সাদা ব্যান্ডেজ কালো কালিতে ভড়িয়ে দিয়েছে।শুধু এই কথাটা লিখে।সাফা দারুন অবাক।সাথে বিরক্ত। বিরক্ত নিয়েই সাফা বললো,
—” এসব কি করছেন??কালই এগুলো খুলে ফেলা হবে আর আপনি এসব লিখছেন কেনো??”
নিভ্র মার্কারের ঢাকনা লাগাতে লাগাতে বললো,
—” ইচ্ছে হলো তাই।দেখো কত সুন্দর লাগছে!!”
সাফা হাসলো।লোকটা পাগল।এতটা ভালোবাসা হয়??এটাই সে ভেবে পায় না।ঢাকা আসার পর থেকেই নিভ্র খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।ডাক্তারিটা আবার শুরু করেছে সম্পূর্ন দমে।মডেলিং ছেড়ে দিয়েছে।সে এখন সময় বাঁচাতে চায়।পরিবারের সাথে থাকতে চায়। গল্প, আড্ডায় মেতে থাকে তাদের বাড়ি।মানুষের প্রকৃত সুখ মনের সুখ।আর পরিবারের সাথে থাকলেই সেই মনের সুখ পাওয়া যায়।নিভ্র প্রতিদিন কয়েকবার করে সাফাকে দেখতে আসে।সময় পেলেই ছুটে আসে।গল্প খুনশুটিতে কয়েক মাস পার হয়েগেছে। সাফার পায়ের প্লাস্টার কাল খুলবে।আর তার পরেই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।আজও প্রতিদিনের মত বিকেলে নিভ্র সাফাদের ঘরে হাজির।সাফা তখন ঘুমাচ্ছিল।তাই নিভ্র টেবিলের মার্কার দিয়ে এসব লিখেছে বসে বসে।নিভ্র চেয়ার ছেড়ে বিছানায় বসে।সাফার পিছনের চুলগুলো খুলে আছে।নিভ্র নিজের হাতে চুল সরিয়ে হাত খোঁপা করে।নিভ্র খোঁপা করে পিছন থেকে সাফার কোমড় জড়িয়ে ধরে।কাঁধের উপড় থুঁতনি রাখে।সাফা নড়ে উঠে।পিছনে ঘুড়তে চায় কিন্তু পারেনা।নিভ্র জাপ্টে ধরে আছে শক্ত করে।মনে হচ্ছে নিজের মাঝে সাফাকে নিয়ে নিচ্ছে।নিভ্র ফিসফিস করে সাফার কানে বললো,
—” সব শপিং শেষ।কাল নিয়ে আসবে।পরের দিন হলুদ আর এর পরে বিয়ে।আচ্ছা বিয়ে আর হলুদ একদিনে হলে কি হয়??”
নিভ্রর ভারী নিঃশ্বাস সাফার কাঁধময় ধাক্কা খায়।সাফা শিউড়ে উঠে।লাজুক হেঁসে বলে,
—” জানি না।”
নিভ্র আর একটু গভীর ভাবে জড়িয়ে বলে,
—” আমি সব একদিনেই করবো।”
সাফা ঘাড় ঘুড়াতে চায়।নিভ্রর গালে বাড়ি খায় সাফার গাল।নিভ্র হালকা চাপা দাড়ি ঘঁষে দেয়।সাফা নড়েচড়ে বললো,
—” আরে এমন হয় নাকি??একদিন হলুদ আর একদিন বিয়ে। এটাই নিয়ম!!”
—” এসব নিয়ম টিয়ম নিভ্র কোনো কালেই মানে নি আজও মানবে না।আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো।বাসার সবার সাথে কথা হয়েগেছে।”
—” মানে কি??”
—” তোমাকে এত বুঝতে হবে না।”
বলেই সাফার গালে গাল ঘঁষে। সাফার গাল লাল হয়ে উঠে। ধমকের সুরে সে বলে,
—” ছাঁড়ুন।”
নিভ্র দু’হাতে সাফার কোমড় আরো জড়িয়ে বললো,
—” ছাঁড়বো বলে তো ধরিনি বাবু।”
সাফা রাগে কটমট করে বলে,
—” আবার বাবু??কত বার বলবো বাবু ডাকবেন না!”
নিভ্র হাসে।বলে,
—” বাবুই ডাকবো।যত নিষেধ করবে তত বেশি ডাকবো।”
সাফা ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়।নিভ্রও তাকায়।হঠাৎ দুজনে এক সাথে ফিরতেই ঠোঁটে বাড়ি খায়।সাফা চমকে মাথা সরিয়ে ফেলে।নিভ্র নিজেও শক্ট হয়ে বসে থাকে।স্তব্ধ সে।সাফা চোখবুজে মুখ কুঁচকায়।লজ্জায় তার দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে।নিভ্র হা হয়ে এখনো আগের মত থেকে বললো,
—” তোমার ঠোঁট এত তুলতুলে!!”
সাফা লজ্জায় লাল হয়।কোম্পিত হয়ে সাফা সরে বসে।নিভ্রর হাত আলগা হয়ে আছে।সে এখনো থ।
—” কি তুলতুলে গো নিভ্রজিজু।”
সাফা চমকে তাকায়।ঝুমাকে দেখে আরো দুরে ছিঁটকে যায়।লজ্জায় কুঁকড়ে যায় সাফা।নিভ্র অনমনেই বলে উঠে,
—” সাফারানীর ঠোঁট।”
সাফা বিস্ফরিত চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।ঝুমা ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” কি????”
নিভ্র চোখ ঝাঁকায়। ঝুমার দিকে তাকিয়ে হাত পিছনে দিয়ে মাথা চুলকায়।জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,
—” আরে না তেমন কিছু না।কখন এলে বলো??”
ঝুমার এখনো সব মিলাতে ব্যস্ত।নিভ্র কাশি দেয়।ঝুমা ফিড়ে তাকিয়ে বলে,
—” জিজু আমি মনে হয় অন্য কিছু শুনেছি??না রে সাফা??”
সাফা হা করে বলে,
—” জানি না।”
—” আরে জিজু ঠ।”
ঝুমা থামে।দাঁত বের করে হেসে ফেলে। তারপর বললো,
—” বুঝে গেছি।বুঝে গেছি।আর বলা লাগবে না।”
সাফা অবাক হয়ে বললো,
—” কি বুঝলি??”
—” ঠোঁটের মামলা বুঝে গেছি।”
সাফা লজ্জায় আবার মাথা নত করে।অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।লজ্জায় গলায় কথা আঁটকে যায় তার।ঝুমা হেসে ফেলে।পাশে বসে বলে,
—” জিজু বিয়ে কবে করবেন??”
—” একদিন পরেই।মানে কালকের দিন বাদে।”
ঝুমা মহা অবাক।সে বললো,
—” মানে।কাল বাদেই বিয়ে??”
—” হুম।এমনেই অনেক দেরি হয়েগেছে।”
—” আর কাল কি হলুদ?”
—” কাল সাফার প্লাস্টার খোলা হবে তাই হলুদও বিয়ের দিন হবে।”
ঝুমা অবাক হয়ে একবার নিভ্রর দিকে আর একবার সাফার দিকে তাকায়।তারপর হেসে বলে,
—” অবশেষে বিয়ে!!!”
নিভ্র সাফাও হেসে একে অপরের দিকে তাকায়।
______________________
সাফাদের বাড়ির সামনে খোলা জায়গা।সেখানেই এস্টেজ করা হয়েছে।সাফার গায়ে হলুদ হবে এখানে।নিভ্র হলুদ করবে না।তার এসব ভালো লাগে না।সাফার হলুদে নিভ্র আর আরিফ বাদে সবাই এসেছে।সাফার ব্যান্ডেজ খোলার পরে সে হাঁটতে পাড়ছে কিন্তু সম্পূর্ন না।ধরে ধরে হাটে এখনো সে।সাজ বলতে তেমন কিছু না।হলুদ শাড়ি পড়েছে সাফা।গায়ে কাচাঁ ফুলের মালা।হাতেও কাচাঁ ফুলের চুড়ি।মাথায় টিকলি।খোঁপা করা চুল।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর চোখে গাঢ় কাজল বাদে আর কিছুই লাগানো হয় নি। সাফার মনে হচ্ছে সে একটা ফুলে ভর্তি বাগান।ফুলে ফুলে তার শরীর মিশে আছে।নিভ্রর কড়া নিষেধ মেকাপ করানো যাবে না।রাফা পার্লার থেকে মেয়ে এনিও ফিরিয়ে দিয়েছে।এতক্ষোণে মেহমানেরা চলে এসেছে।সাফাদের আত্নিয়রা কালই এসেছে।তাদের তেমন কেউ নেই।অল্প কিছু মানুষ।ঝুমাকেও দারুন লাগছে।অভি হা করে আছে।যদি একটা সুযোগ হতো এখনই বিয়ে করে নিতো।মেয়েরা সবুজ শাড়ি ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছে।সাফাকে এস্টেজে নেওয়া হয়েছে।চারপাশ দেখে সে বেশ অবাক।এত কম সময়ে এত সুন্দর করে সাজিয়েছে। এটা সাফা ভাবতে পারছেনা।মুগ্ধ হয়ে সে সব দেখছে।অভ্র এসেছে।হলুদ পাঞ্জাবীর উপড় সবুজ কটি পড়েছে।পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা।কিছুক্ষণ পর পর চশমা ঠিক করছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।নীলা এসেছে। সাফার সাথেই তারা।কিন্তু নিভ্র কই??সাফা চারদিকে চোখ বলিয়ে চলেছে কিন্তু নিভ্রর খবর নাই।সাফা বেশ নিরাশ হয়েছে।তাহলে নিভ্র আজ আসবে না??কথাটা ভেবেই তার মন খারাপ হয়।
______________
—” স্যার আপনি সত্যি যাবেন??”
আরিফের এমন প্রশ্নে নিভ্র বেশ বিরক্ত।সেই এক ঘন্টা থেকে সে এই প্রশ্নই করে চলেছে।তবে আরিফও বিরক্ত। কারন প্রতিবার নিভ্র কটমট করে তাকাচ্ছে।কিন্তু কিছু বলছে না।আর এদিকে তাকেও যেতে দিচ্ছে না।তার বউটা না জানি কেমন সেজেছে??এই চিন্তা করতে করতেই তার কপালে ঘাম জমছে।নিভ্র কটিটা পরতে পরতে বলে,
—” চলো।”
—” আপনি যখন যাবেনই তখন ওদের কেনো বলেছেন যাবেন না??”আরিফের কঠিন গলার প্রশ্ন।
—” তা তুমি না যানলেও চলবে।”
আরিফ মুখ বাঁকায়। লোকটা পাগল তাকেও পাগল বানাতে চায়।হুহ।
দরজার সামনে আসতেই হিরনের সাথে নিভ্রর ধাক্কা লাগে।হিরন কোনো একটা কাজের কারনে এসেছে।নিভ্র একটু দূরে গিয়ে ছিটঁকে পড়ে।হিরন কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে নিভ্রকে পর্যবেক্ষণ করে।নিভ্রও ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে।আর আরিফ একবার হিরনকে আর একবার নিভ্রকে দেখে।আবার বিড়বিড় করে বলে,
—” আমার বউ…..এই স্যারের জন্য তাড়াতাড়ি যাইতেও পারছিনা।ধ্যাৎ।”
হিরন হেসে বলে,
—” হাই বিউটিফুল। তোমাকে আজ যা লাগছে না??আমারই বিয়ে করে নিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তুমি তো করবে না।”
মন খারাপ করে বলে হিরন।আরিফের চোখ কপালে।চোখ বড় বড় করে বলে,
—” পাগল না কি এ।ছেলে হয়ে ছেলেকে বিয়ে করবে মানে কি??”
হিরন হাত দিয়ে আরিফকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
—” এখনো আদি যুগে পড়ে আছো তুমি।এটা ডিজিটাল যুগ বুঝলা।সব হয় এখন।”
আরিফ হা।হিরন বললো,
—” যানি বিয়ে করবে না।থাক আমিও কম সুন্দর না।আরো হেন্ডস্যাম ছেলে স্যরি সুন্দর মেয়ে পাবো।দেখে নিও।এবার একটু জড়িয়ে ধরি আজ তো তোমার বিয়ে না।তাই।”
আরিফ নিভ্রর সামনে দাড়িয়ে পড়ে।কঠিন গলায় বলে,
—” না এ হতে পারে না।কিছুতেই না।স্যার তোমার মত একটা মেয়ে মানে ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে পারে না।কিছুতেই না।”
নিভ্র অনেক্ষন এসব দেখছে।এবার আরিফকে সরিয়ে হিরনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—” ছেলেকে না মেয়েকে বিয়ে করিস।তা না হলে তোর কপালে ঝাটার বারি আছে।”
হিরন হেসে দেয়।
নিভ্র ড্রাইভ করছে।আরিফ বলে,
—” স্যার আপনি কি ওই হিরনের প্রেমে পড়েছেন??এখন কি সাফার সাথে বিয়ে ভাঙ্গতে যাচ্ছেন??”
—” মানে??”
—” স্যার আপনার জীবনে তো সব সময় অস্বাভাবিক জিনিস ঘটে!!তাই বললাম।”
—” আরিফ তুমি দিন দিন ডিজগাস্টিং হয়ে যাচ্ছ।যাস্ট বিরক্তিকর।”
—” আমি আবার কি করলাম।আপনি জড়িয়ে ধরেছেন তাই বললাম।”
—” ফালতু কথা রাখো।আজ জীবনের বেস্ট দিন তাই জড়িয়ে ধরেছি।এবার ননস্টপ বকা বন্ধ করো।”
আরিফ মুখ টিপে হাসে।নিভ্রকে রাগাতে পারলে তার দারুন লাগে।
_______________________
সাফা মন খারাপ করে বারবার গেটের দিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। নিভ্র এখনো এলো না।তার মানে আর আসবে না??সাফা চোখ সরাতে যাবে ঠিক তখনই চোখে পরলো সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির মুখ।সাফার দিকেই তাকিয়ে আছে নিভ্র।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি।গায়ে সাদা পাঞ্জাবী,তার উপর সবুজ আর হলুদ সুতার কাজ করা কটি।সামনে পড়ে আছে সেই সিল্কি চুলগুলো। হাতা ভাজঁ করা।তাকিয়ে আছে সেই গভীর চাহনি দিয়ে।নিভ্রকে কেমন সতেজ সতেজ লাগছে।সবুজ চোখ জ্বল জ্বল করছে।স্নিগ্ধ মুখে অমায়িক ভঙ্গি তার।এতটা দূর থেকেও সাফার নিভ্রকে সতেজ মনোমুগ্ধকর লাগছে।মনে হচ্ছে সাফা নতুন প্রেমে পড়ছে।নিভ্র হাতা উঠাতে উঠাতে কিছুটা এগিয়ে আসে।মাথার সামনের লম্বাটে চুলগুলো পিছনে ঠেলে দেয়।চোখেমুখে দুষ্টু হাসি রেখে সাফার পাশে এসে দাঁড়ায়। সবাই অবাক।রাফা তেড়ে এসে বলে,
—-” ভাই তুমি না বলেছো আসবে না।”
নিভ্র হাসে।হাসির চোটে তার সামনের দাঁতগুলো দৃশ্যমান হয়।সাফাকে একটু চিন্তিত চিন্তিত দেখার জন্যেই তার আসবে না বলা।সাফা তাকে দেখতে চাইবে। চোখে মুখে চিন্তা থাকবে।নীলাভ চোখ মরিয়া হবে।দু’পাশের গাল লাল হবে মন খারাপে।এটাই দেখতে চেয়েছে সে।নিভ্র কথা বললো না।সবার তাকিয়ে থাকা উপেক্ষা করে সেই আগে হলুদ লাগিয়ে দিলো সাফার গালে।তারপর একটু পিছিয়ে সাফার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
—” তোমার রূপে হাজার বার মরন হয় আমার।কিন্তু এই রূপ দেখে কোটিবার মরন ও কম মনে হয়।”
সাফা চট করে তাকায়।নিভ্র হেসে এস্টেজ থেকে নেমে যায়।যেতে যেতে সবার চক্ষুর অগোচরে ডান চোখটা টিপ দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে ভিতরে চলেগেলো।সাফা লাজুল হাসলো।লোকটার পাগলামি গুলোই তার নেশা হয়েগেছে। না করলেই কেমন দম বন্ধ মনে হয়।এটাই তো ভালোবাসা।নিভ্রর ভয়ংকর ভালোবাসায় সে আসক্ত।
______________________
হলুদ শেষ করে সাফাকে রুমে দিয়ে গেলো ঝুমা।ওয়াসরুমে ডুকতে যাবে এমন সময় মনে হচ্ছে কেউ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাফা ভীতূ হয়ে ঘুড়ে তাকালো।নিভ্রকে দেখেই তার ভ্রু কুচঁকে এলো।তাকিয়ে থাকে আগ্রহের সাথে।নিভ্র কি বলবে তাই শুনতে চাচ্ছে সে।নিভ্র এক’পা দু’পা করে এগিয়ে এসে সাফার সামনে দাঁড়ায়।হুট করেই জড়িয়ে ধরে সাফাকে।সাফা বিস্ময়ে হতবাক।কিছুক্ষণ পরেই সাফাকে ছেড়ে কোমড় জড়িয়ে বললো,
—” তোমাকে হলুদ লাগালাম।কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পেলাম??”
সাফা আবাক হয়ে বললো,
—” কি পাবেন মানে??”
নিভ্র সাফার আরো সামনে এসে দু’হাতে কোমড় পেঁচিয়ে বললো,
—” হুম কি পাবো??তোমাকে লাগিয়েছি তাই তোমারও কর্তব্য আছে নাকি??”
সাফা আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছে।কিছুই মাথায় ডুকছে না।নিভ্রর ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় সে কেঁপে কেঁপে উঠছে।চোখ আগের মতই নিভ্রর চোখে স্থির।নিভ্রর চোখে মুখে দুষ্টুমি।লোকটা চুপচাপ আর গম্ভীর থেকে দিন দিন দুষ্টুমি ভরা মানবে রূপ নিচ্ছে। সাফা অনেক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,
—” ছাঁড়েন তো।আপনি আবার নিশ্চুই আজেবাজে কিছু উদ্যেশে এসেছেন??সরেন।লজ্জা করে না অন্যের বউয়ের রুমে ডুকে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে??আমার উনাকে আপনি চিনেন না।মিস্টার ভিলেন কিন্তু আপনাকে মেরে ফেলবে।তার একমাত্র জানের বউ সাফারানীকে টাচ করার অভিযোগে।হুহ…”
সাফা মাথা নামিয়ে দূষ্টু হাসি দেয়।নিভ্র কিছুক্ষণ ভেবে সেও হাসে।সাফার মত ভঙ্গিতে বলে,
—” তাই নাকি??আপনার উনার চাইতেও আমি বেশি শক্তিশালি।উনাকে উল্টা আমি মেরে দিবো।তারপর ভিলেনের মত আপনাকে জোড় করে বিয়ে করবো।ব্যস কাজ শেষ।”
—” এ্যা বললেই হলো!!নাম করা ভিলেন সে।আপনি পারবেন না।”
—” পারতে হবে না।তার বউকে পেলেই হবে।”
—” এই সাফারানী শুধু তার ডাক্তার সাহেবের হবে আর কারো না।তাই আপনি ভাগেন।”
নিভ্র হেসে ফেলে।একটু দুরে গিয়ে বলে,
—” আমি ভেবেছি তুমি বলবে “যা শয়তান তুই আমার দেহ পাবি মন পাবি না।” কিন্তু তুমি তো জায়গা মত বুলেট ঠুকে দিয়েছো সাফারানী।”
—” আমি ভালো শুটার।”
সাফাও হাসে।নিভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে সাফার হলুদে ডাকা মুখের হাসি দেখে।আবার এগিয়ে এসে সাফার কোমড় জড়িয়ে ধরে। নেশাতর কন্ঠে স্বর তুলে বলে,
—” ভালোবাসি। এটা শুধু একটা শব্দ না সাফা।এটা মনের একনিষ্ঠ একটা বার্তা।যা তোমাকে আমার করেছে।আজ আবার তোমাকে চাই।আমি তোমার সুখ দুঃখের ভার নিতে চাই।দিবে কি আমায় সেই সুযোগ??আমি তোমার প্রতিটা উষ্ণতার কারন হতে চাই,আমার প্রতি সকালে শান্তি চাই,আমার সকল ক্লান্তির শেষ চাই তোমাতে।তোমার মাঝে ডুবে নিজেকে বিলিন করতে চাই।চাই অজস্র ভালোবাসায় আমার শূন্য হৃদয় ভরিয়ে রাখতে।আমি চাই নিজেকে তোমার খোঁপার সেই সাদা গোলাপ বানাতে।যা তোমাকে করে তুলবে মোহনিয় অতুলনীয়। আমি তোমাকে চাই।আবার একবার আমার হওয়ার প্রতিশ্রুতি চাই।তোমার দায়িত্ব নিজের হৃদয়ে বহন করতে চাই।দিবে কি সেই সুযোগ??দিবে কি তোমার লজ্জার কারন হতে??দিবে কি তোমার ভেঁজা চুলের ঘ্রাণ নিতে??দিবে কি তোমার সকল স্বপ্নে নিজেকে ভাসাতে??আমি আবার একবার শূন্য হৃদয় নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে নিজের, একান্ত নিজের করে চাইতে এসেছি।হবে কি তুমি নিভ্রনীলের সাফারানী??বিয়ে করবে আমায়??”
সাফা স্তব্ধ হয়েগেছে।হা করে তাকিয়ে থাকে সে।কিছু বলার ভাষা নেই।চোখে তার অজস্র পানি।গালের হলুদের সাথে মিলে একাকার হয়েগেছে সব।নিভ্র হাতের মুষ্টি খুলে একটা ছোট ডায়মন্ডের রিং সাফার আঙ্গুলে পরাতে পরাতে বলে,
—” এখন বলবেনা বিয়ের দিনই বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছি। আমি কিন্তু আগেই অনুমতি প্রাপ্ত।তবে হ্যা সেন্সলেস হয়ে যেওনা বউ।পরে দেখা যাবে আজকের বিয়েই ক্যান্সেল করা হবে।এটা হলে আমার আরো একটা রাতের ঘুম গায়েব হবে।জানি এবারো উত্তর দিবে না।লোকে আমাকে কি বলবে জানো??আমি তোমাকে ভিলেনের মত বিয়ে করছি।একটা প্রপোজালেরও উত্তর নাই।আহ্ নিভ্র আহ্।এবার আমাকে হলুদ লাগাবে না??”
সাফা কথা বললো না।জাপ্টে উড়িয়ে বললো,
—” আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসি ডাক্তার।আর আমার শেষ নিঃশ্বাসও আপনার দায়িত্বে ছেড়ে দিলাম।”
নিভ্র সাফার কোমড় জড়িয়ে ঘাড়ে চুমু দেয়।তারপর হেসে বলে,
—” তাহলে হবে তো আমার আকাশের জোনাকি??ভড়িয়ে দিবে তো #একঝাঁক~জোনাকির~আলো আমার আলোবিহীন জীবনে??”
—” হুম আমি আপনার জোনাকি আর আপনার জীবনই আলোময় করে দিবো ইনশাআল্লাহ্।”
নিভ্র সাফাকে ছেড়ে দাড়ায়।সাফা ও দাড়ায়।নিভ্র বলে,
—” যাক বিয়ে তো এবার হবে।কিন্তু হলুদ লাগাবো না আমি??”
সাফা নাক টানতে টানতে বলে,
—” আপনিইত বলেছেন হলুদ করবেন না।”
নিভ্র সাফার মাথার পিছনে হাত দিয়ে বললো,
—” হলুদ করবো না বলেছি বউয়ের গালের হলুদ নিজের গালে লাগাবো না এটা তো বলিনি।”
কথাটা বলেই নিভ্র সাফার দু’গালের সাথে নিজের গাল ঘঁষে। কপালে চুমু আঁকে।তারপর বলে,
—” হলুদ শেষ।এবার কবুলটা তাড়াতাড়ি বলেদিও রাতে। এখন আশি বউ।”
সাফা ক্যাবলাকান্তের মত তাকিয়ে থাকে নিভ্রর যাওয়ার দিকে।নিভ্র চোখ মেরে বেরিয়ে যায়।সাফা নিজের ডান হাত আর বাম হাত মুখের সামনে ধরে।দু’হাতে দুটো রিং দেখে সে নিজেই হাসে।সবই তার ভালোবাসা।তবে ডান হাতেরটাই বেশি প্রিয়।প্রথম ভালোবাসা সেটাই।আর পায়েলটা।
___________________________
সাফার মনে হচ্ছে বিয়ে মানে ভয়ংকর একটা রিমান্ড। জেলে যেমন ধরে বেধে শাস্তি দেয় ঠিক একুই ভাবে বিয়ে মানে ধরে বেধে একপ্রকার অত্যাচার করা।হলুদ শেষ হতে না হতে সাফাকে গা ভর্তি গহনা আর বেনারসীতে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।লাল টকটকে বেনারসী।হাত ভর্তি চুড়ি।গলা ভর্তি গহনা।সব নিভ্র কিনেছে নিজে পছন্দ করে।সাফাকে সামনের রুমে বসানো হয়েছে।দুজনের মাঝে বিশাল ফুলের পর্দা দেওয়া।তবুও কালো শেরওয়ানী আর বিশাল পাগড়ী পড়া নিভ্রকে দেখা যাচ্ছে। এক হাতে ভাজঁ করা লাল উড়নাটা পাশেই পরে আছে।কাজি সাহেব তাদের মাঝে।কবুল বলতে বলা হতেই সাফার হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে তার ভিতরে খুব কষ্ট জমছে।বাবাকে সে ছেড়ে যাবে কিভাবে??বাবা তো তার একদম একা।কেউ নেই তার সাফা ছাড়া।সাফা কি করবে?মায়ের কথাও খুব মনে পড়ছে।মাকে তার খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।বলতে ইচ্ছে করছে দেখো মা তোমার মেয়ে বড় হয়েগেছে।কিন্তু মা কোথায়??মা তো নেই।সাফার হঠাৎই খুব কান্না পায়।কবুল নামের এই ছোট শব্দটাও ভয়ংকর কিছু মনে হতে থাকে।সাফা কান্নায় ভেঙে পড়ে।সবাই অবাক।সাফাকে থামানোর প্রানপনে চেষ্টা সবার কিন্তু নিভ্র নির্বিকার হয়ে বসে আছে।সে জানতো এমন হবে।কিন্তু তার মনে বড্ড ভয় হচ্ছে সাফা যদি বিয়ে করবো না বলে দেয়??সত্যি তাই হলো।কান্নার এক পর্যায়ে সাফা বলে উঠে,
—” আমি বিয়ে করবো না বাবা।”
উপস্থিত সবাই অবাক।হা করে আছে সবাই।নিভ্রও অবাক। ভাবতে ভাবতে সাফা এটাই বলবে সে জানতো না।ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসে।কি করবে ভাবে।সাফার বাবা তার পাশে বসে।আদুরে গলায় তিনি বললেন,
—” সাফা আমার মামুনি।এটা বলো না।নিভ্র অধীর আগ্রহে আছে তোমার জন্য।এটাই বাস্তবতা।কবুল বলে দেও।”
সাফা কান্নায় ভেঙে পড়ে।বাবাকে জড়িয়ে বাচ্চাদের মত করে আঁটকে আশা গলায় বলে,
—” বাবা আমি সারা জীবন উনার হয়ে থালবো তবুও বিয়ে করবো না।তোমাকে একা রেখে যাবো না আমি।কিছুতেই না।”
সারিকের চোখে পানি।কিন্তু তা গাল বেয়ে নামছে না।কিভাবে মেয়েকে নিজের কষ্ট বুঝাবে।এটা বড্ড কষ্টের।মেয়ে বিদায় যে বড্ড যন্ত্রনার।মেয়ে বিদায়ের নীতি যে করেছে সাফার বাবার তার প্রতি একরাশ অভিযোগ আর অভিমান জমা হয়েছে।যেখানে মানুষ নিজের লাগানো এটা গাছের ভাগ ছাড়তে চায় না।সেখানে বাবা হয়ে এতটা কষ্টে, এতটা ভালোবাসে, একটা পুতুলকে নিজের কোলে পিঠে করে বড় করে অন্যের অধীনে দিয়ে দিতে হয়।এটা কোনো বাবার কাছেই সুখকর নয়।সারিক নিজেকে সামলাতে পারছে না।তারও মেয়ের মত এভাবে কাদঁতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কিছুই করার নেই সে তো বাবা।বিশাল তার ভার।তার দায়িত্ব ভয়ংকর। মারাত্মক এর যন্ত্রনা।তবুও বুকে পাথর রেখে তিনি মেয়েকে রাজি করায়।সাফা কাদঁতে কাদঁতে সেই ভারী ভয়ংকর দায়িত্ব বোধ সম্পূর্ন বাক্য নিজের মুখে তিনবার উচ্চারণ করে ফেলে।
বিদায় বেলায় ভিন্ন চিত্র।এই প্রথম কেনো মেয়ের সাথে তার বাবাও শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। নিভ্র নিজে জোড় করে সাফার বাবাকে তাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমাজের নীতি নিভ্র হঠাৎ করেই বোদলে দিয়েছে নিজের জীবনে।সাফা প্রচুর কান্না করেছে।নিভ্র আর সয্য করতে পারলো না।তাই সাফার বাবার হাতে ধরে শুধু সাফার সাথে এবেলায় যেতে বলেছে।কিছুক্ষণ পরেই না হয় ফিরে আসবে কিন্তু এখন সাফার সাথে যেতে হবেই।সারিক পরেছে মহা বিপদে।সমাজের সবাই কি ভাববে তা ভেবেই তার চিন্তা হয়।কিছু ব্যাপারে সমাজকে মানতেই হয় এটা সত্য।কিন্তু নিভ্র কাছে হার মানতে হয়েছে।সাফা এক হাতে বাবাকে আর এক হাতে নিজের নতুন জীবন সঙ্গীকে নিয়ে গৃহপ্রবেশ করে।ব্যাপরা অদ্ভুত লাগলেও বাড়ির প্রতিটা ব্যক্তির ভালো লাগছে।কত অদ্ভুত আর সুন্দর একটা সময়। সব মিলিয়ে মুগ্ধকর।
আরিফের খুব ইচ্ছা নিভ্রর বাসর ঘরে উঁকিঝুঁকি দিবে।কিন্তু এটা করা আর বাঘের মুখে পড়া স্যম কথা।তাই চেয়েও সে এই ভয়ংকর অসাধারন কাজ করতে পারবে না।ভেবেই তার কান্না পাচ্ছে।নীলা আরিফের এমন মন খারাপ আর ভয়ংকর চিন্তাভাবনা দেখে চেঁচিয়ে বললো,
—” আহাম্মক কি আর সাদে বলি।আসলেই একটা আহাম্মক তুমি।”
আরিফ ঠোঁট উল্টে বললো,
—” কেনো গো??”
—” তা আর তোমার জানা লাগবে না।কয়েকদিন পরে বাচ্চার বাপ হবে সে নাকি বাসর ঘরে উঁকিঝুঁকি দিবে।আমি হলে তাও কথা।নিভ্রর বান্ধুবি আমি আর তুমি তো ওর বড় না তারপরে ও এগুলো মাথায় আসে কিভাবে।”
—” বড় হয়েছি তো কি হয়েছে।সখ তো থাকতেই পারে।”
—” চুপ করো আহাম্মক।”
আরিফ চুপ।নীলা উঠে ওয়াসরুম থেকে এক মগ পানি আরিফের মাথায় ঢেলে দিলো।আরিফ বেচারা।কাঁদোকাঁদো হয়ে মনে মনে ভাবে আসলেই সে আহাম্মক তা না হলে সেদিন ভালোবাসার ঠেলায় পানি ঢালাতে রাজি হতো না।এখন তো দিনে কয়বার যে ভিজঁতে হয়,আল্লাহ মালুম। মাঝে মাঝে তার পড়ার জামাই থাকে না।সবই কপাল।দুঃখ। নারীতে ফাঁসিয়া এবার বুঝিয়াছে ঠেলা।সব তার আহাম্মকির ফল।আহ্ আরিফ আহ্।
__________________
অভ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আজ সে বড্ড খুশি।সত্যি খুশি।ভালোবাসায় ত্যাগের পৃষ্ঠাটাও অনেক আনন্দের।সাফার বলা শেষ কথা গুলো আজও তার কানে বাজে।হুম হয় তো তার জন্য তৈরি কেউ আছে।যে তার জীবনে নোটিশ বিহিন এসে পরবে হুট করে।হঠাৎ বসন্তের দমকা হওয়ার মত।
_________________________
সাফা নিভ্রর রুমটা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখে।সারা রুমে তার ছবি।এত ছবি কোথায় পেয়েছে নিভ্র তাই ভাবছে সে।সম্পূর্ন রুম সাদা গোলাপের গন্ধে মো মো করছে।সাফা এগিয়ে যায় সামনে থাকা সাদা পর্দায় ডাকা ইজলের দিকে।এটা সে অনেক আগে দেখেছে।কিন্তু সেদিন উল্টাতে পারেনি।তার আগেই নিভ্র চলে এসেছে।এত বছর পরেও এটা এখানে আছে মানে খুবই স্পেশাল কিছু হবে।সাফার আগ্রহ প্রকট হয়।এটা যখন ছিলো নিভ্র তাকে তখন ভালোবাসত না।তাহলে এটা কি আর কার??সাফা কাঁপা পায়ে ইজলের সামনে দাড়ায়।ডান হাত এখনো হালকা ব্যথা।তাই বাম হাতে পর্দা ঠেলে তুলতেই সাফা হতভম্ভ। এটা তো তার ছবি।সেই বহু বছর আগে এক পড়ন্ত বিকেলের ছবি।সেই জবা, নীল শাড়ি।সেই চোখ, সেই টোল, সেই কুঁচকানো মুখ।নিভ্র মাত্র রুমে ডুকেই সাফাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
—” এটা কি হচ্ছে?? আমার বউয়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেনো??নজর লাগবে তো??”
সাফা ঘুড়ে তাকায়।সাদা পাঞ্জাবী পড়ে নিভ্র দাঁড়িয়ে। ভ্রুজোড়া বাঁকিয়ে সাফা বলে,
—” আপনি আমাকে কখন থেকে ভালোবাসেন??মানে সঠিক সময়টা বলবেন??”
নিভ্র এগিয়ে আসে ধাপে ধাপে।খুব কাছে এসে চোখের গভীরে চোখ ফেলে।সাফাও তাকায়।নিভ্র সাফার হাতে একটা কালো শাড়ি দিয়ে বলে এটা পড়ে এসো তারপর বলছি।সাফা ভারী অবাক।বিয়ের দিন তাকে কালো শাড়ি কেনো পড়তে বলছে??নিভ্র আবার বলে,
—” যাও তাড়াতাড়ি। তা না হলে আমি নিজেই পরিয়ে দিবো।”
সাফার পায়ে ব্যথা হালকা।হাতও ঘুড়াতে পারে না।তাই সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে নিভ্রর দিকে।নিভ্র এগিয়ে আসে।গায়ের শাড়িটা যত্নে খোলে।সাফার দিকে তাকিয়ে থেকেই কালো শাড়িটা পড়িয়ে দেয়।সাফা হা করে নিভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।শাড়ি পড়ানোর সময় সাফার উমুক্ত কোমড়ে নিভ্রর নরম হাতের ছোঁয়া লাগে।সাফা ভয়ংকর ভাবে কাঁপে।চোখবুজে নেয় মুহূর্তেই।নিভ্র হাসে।শাড়ি পড়িয়ে কাঁধে গভীর কিছু চুমু দেয়।সাফার নিঃশ্বাসের মাত্রা বাড়ে হাজারো গুনে।নিভ্র সাফার পায়ের কাছে বসে। একটা ছোট সবুজ পাথরের পায়েল পরিয়ে দেয় পায়ে।পায়ের পাতায় চুমু খায়।সাফা কেঁপেকেঁপে উঠে।চোখ দিয়ে শুধু তাকিয়ে নিভ্রর কান্ড দেখে।নিভ্র দুহাটু গেড়ে বসে। সাফার কোমড়ে জড়িয়ে দেয় চিকন ডায়মন্ডের বিছা।হাতে পরিয়ে দেয় চিকন দুই জোড়া চুড়ি।বাকি সব গহনা খেলে ফেলে নিভ্র।লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দেয় পিঠময়।লেপ্টে যাওয়া কাজল ঠিক করে দেয়। সাফা মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।নিভ্র যত্নের সাথে সাফার টোল পড়া গালে গভীর ভাবে চুমু আঁকে।ঠোঁটজোড়ায় হালকা ঠোঁট ছুঁয়েই সরে আসে।কোলে তুলে নেয় সাফাকে।সাফা অবাক হয়ে বলে,
—” কোথায় নিচ্ছেন??”
—” গেলেই দেখবে।”
নিভ্র সাফাকে ছাদে নামিয়ে দেয়।সুইমিংপুলে সাদা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ভড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।সাফা আগ্রহের সাথে বলে,
—” আমরা কি সুইমিংপুলে নামবো এখন??”
—” পাগল নাকি??পরে ঠান্ডা লাগবে তোমার।রাত গভীর এখন নামা যাবে না।তবে পা ভিজাতে পারি।যদি রানী চায়।”
সাফা দ্রুত বসে পা ভিজায়।শাড়ি সহ বসে পরে সে।নিভ্র সাফার কোমড়া জড়িয়ে কোলে মাথা রাখে। পেটে মুখ গুঁজে। সাফার সারা শরীর শিরশির করে উঠে।রঞ্জে রঞ্জে অনুভুতিরা মিশে যাচ্ছে।সব উজাড় হয়ে যাচ্ছে তার।বুকের পাশের হৃৎপিন্ডটা কাঁপে ধকধক করে।নিভ্র মুখ তুলে তাকায়।মাতাল করা তার চাহনি।শীতল কন্ঠে সে বলে,
—” দেখো এই ঘন বর্ষায়ও চাদঁ মামা তার আলো দিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে আমাদের।সেদিন যেমন সূর্য মামা আলো ফিরিয়ে নিয়ে রাঙিয়েছিলো তোমাকে গোধূলির বেসে।ভাসিয়ে ছিলো আমার হৃদয়কে।হারিয়ে ছিলো আমিকে।ঠিক তেমন ভাবে।”
—” আপনি তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না??”
—” বলছি তো।সেদিই প্রেমে পড়েছিলাম। জবা ফুলের সাফারানীর প্রেমে পড়েছিলাম সেদিন।গোধূলি লগ্নে এই হৃৎপিন্ড তোমাকে দিয়েছিলাম।সেটাই প্রথম প্রেমে পড়া।সেই থেকেই টুকরো টুকরো ভালোবাসা এ মনে জমা পড়েছে তোমার জন্য।ভালোবাসি সাফারানী।খুব ভালোবাসি।”
সাফা ঝুঁকে নিভ্রর সামনের চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে গভীর চুমু দেয়।তারপর বলে,
—” আমিও ভালোবাসি।”
দুটি মন এক হয়।ভালোবাসায় মাখামাখির ভবিষ্যৎতের পথে পা রাখে তারা।মিলমেই শেষ নয়।এটা তো শুরু।ভালোবাসার সাথে দায়িত্ব রক্ষার কর্তব্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে দুটি জীবন। একি সুতোয় বাঁধা তাদের মন।ভালোবাসায় ভরা হৃদয়।দুটি হাত পাশা পাশি। এভাবে পথ চলার নতুন সংগ্রাম। ভালোবাসকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম।
নিভ্র সাফার পিছন থেকে কোমড় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ছাদের একপাশ থেকে নিচের বাগান দেখা যায়।বাগানের চারপাশে জোনাকি পোকায় ভরে উঠেছে।পাশের গাছেও ভর করেছে জোনাকি পোকা।জোনাকির আলোতে চারপাশ আলোকিত হয়ে আছে।ঠিক নিভ্রর জীবনের মত।সাফা যেমন তার জীবনের কানায় কানায় আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।ঠিক একুই ভাবে জোনাকি পোকারা আলো ছড়াচ্ছে।নিভ্র সামনে ঘুড়ে।সাফার চোখে চোখ করে বলে,
—” কালো রং আমার প্রিয় তাই আজ তোমাকে কালোতে রাঙিয়েছি।আর সাদা তোমার প্রিয় তাই নিজেকে সাদা রংয়ে সাজিয়েছি।”
সাফা মুচকি আসে।নিভ্র সাফার দু’গালে হাত রেখে সাফার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাই।টিপ টিপ বৃষ্টি পরে।নিভ্র একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার চুমুতে মন দেয়।কিছুসময় পরে সাফাকে ছেড়ে কোমড় জড়িয়ে বলে,
—“ভালোবাসি।ভালোবাসি।ভালোবাসি।
নিভ্র সাফার গলায় মুখ ডুবিয়ে মাতাল করা শীতল কন্ঠে বলে,
—–” 🍁
তুমি আমার অস্তিত্বে বহমান
আমার রঞ্জে রঞ্জে তোমার নাম
তোমার গভীরে আমার বাস
মেঘ বৃষ্টির আড়ালে তোমার শ্বাস
তুমি আমি পাশাপাশি
দুজনের দুনিয়ায় দুজন হাসি
আমি শুধু তোমায় ভালোবাসী
প্রতিটি সকাল আমার অন্ধকার ভুবন
তোমার আলোয় রাঙায় এক নতুন কিরনে
তুমি আমার সেই বৃষ্টি
যাতে ভিঁজিয়ে করেছ প্রেমের সৃষ্টি
জ্যোৎস্না রাতে চাঁদকে সাক্ষী রেখে
থাকতে চাই তোমার পাশে পাশে
তোমার হাতটি ধরে
ভিঁজতে চাই বৃষ্টিকে ছুঁয়ে
তোমার সাদা গোলাপ সঙ্গে নিয়ে
আমার সবটুকু প্রেম
ঢেলে দিয়েছি তোমার চরণে।
কুড়িয়ে নিয়ো সব সযত্নে
তোমার মনের সুপ্ত কোটারে।
ভালোবাসার রং তুলিতে
সাজাই আমি তোমাকে
তুমি সাজিয়ো আমার ভুবন
তোমার একঝাঁক জোনাকির আলোতে।🍁
.
.
#সমাপ্তি____________
শ
Just Wow…… Ato sundor golpota bolar bahire… safar character ta darun funny……. Nivronil er character ta osadharon…… So so so so sweet story…….. Thanks for beautiful Story.
Just opurbo. onek onek onek sundor storyta❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
Oneek shundor ekta golpo. Monta vore gelo.
Awesome
অনেকদিন পর এতো মনোযোগ সহকারে কোনো গল্প পড়লাম🌼🌷🍂