অদ্ভুত সুখানুভুতি পর্ব ২+৩

#অদ্ভুত_সুখানুভূতি
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০২_০৩

সকালে ঘুম ভাঙতেই রোজ টের পেলো ওকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। তার গরম নিঃশ্বাস রোজের কাধে পড়ছে। রোজ উপরে চোখ তুলে মেঘকে দেখে ভয়ে দুরে সড়ে যেতে লাগলো। মেঘ ঘুমের ঘোরেই ওকে টেনে বুকের শাথে মিশিয়ে ওর পা নিজের পায়ের ভাজে ঢুকিয়ে নিলো। রোজের মাথাটা ঠিক মেঘের বুক বরাবর। মেঘের রোমশ বুকে মাথা রাখতেই রোজের হার্টবিট ফাস্ট হতে লাগলো। চেনা মিষ্টি মেঘের গন্ধটা নাকে যেতেই শিউরে উঠলো রোজ। হাত থরথর করে কাঁপতে লাগলো। মেঘ রোজকে আরো কাছে টেনে রোজের গলায় মুখ গুজে দিলো। মেঘের দাড়ির খোচায় ” উহহ ” করে উঠলো রোজ। মেঘের কানে রোজের এই অস্পষ্ট শব্দটাও চেচানোর সমান আওয়াজে রূপ নিলো। মেঘ মাথা উচু করে দেখলো রোজ কি করছে।

মেঘের আচমকা তাকানোতে রোজ চোখ বুজে ফেলে। মেঘ বুঝতে পারে রোজ গেছে আছে কারন রোজের চোখের পাতা পিটপিট করছে। মেঘ রোজের গালে ডিপলি কিস করতে লাগলো। রোজের গালে মেঘের জিভ স্পর্শ করতেই রোজ বলে উঠলো,,

রোজ : খালি এমন করেন কেন,, ভালো লাগে না আমার।

মেঘ : তোমার ভালো না লাগলেও চলবে। আমার ভালো লাগে। আর এখন তুমি আমার বউ আমি তোমার সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। নাউ কিস মি।

রোজ : পারবো না।
মেঘ : কি বললে.? ( অনেকটা রেগে ধমকের সুরে বললো )

রোজ : না মানে ব্রাশ করিনি মুখে গন্ধ। আমি গোসল করবো। ( ভয়ে ভয়ে বললো )

মেঘ : থাক আমার কিস আমিই নিয়ে নিচ্ছি। রাতের মতো হলে কিন্তু আমার দোষ না।

রোজ : না না আমি দিচ্ছি। ( ইনি এতো জ্বালায় কেন আমাকে.? আমার ভালো লাগে না এসব। বোঝে না কেন.? )

মেঘ : দাও।
রোজ : আমাকে আগে ছাড়ুন।

মেঘ : নাহহ।
রোজ : চোখ বুজুন তাহলে।

মেঘ : নাহহ।
রোজ : তাহলে পারবো না।

মেঘ : কি.?
রোজ : না না দিচ্ছি।

রোজ কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে মেঘের গালে ঠোট ছোঁয়ালো,, মেঘ ভ্রু কুচকে রোজের দিকে তাকিয়ে রোজের ঠোটে আলতো করে চুঁমু খেলো।

মেঘ : চলো বাথরুমে নিয়ে যাই।
রোজ : নাহহহহহ।

মেঘ : এভাবে চিল্লালে কিন্তু গোসলটাও আমার সাথে করতে হবে। আমি শুধু সব ঠিক করে দিবো। পায়ের অবস্থা দেখেছো.?

রোজ : আপনি লাঠি দিয়ে মেরেছেন।

রোজের কথা শুনে,, মেঘ রোজকে বাথরুমে ঢুকিয়ে বেড়িয়ে আসলো। রোজ গোসল করে বাইরে এসে দেখে মেঘ ছুরি দিয়ে নিজের দুহাতে আঁচড় দিচ্ছে।

রোজ : একি কি করছেন। ছাড়ুন এটা।
মেঘ : এই হাত দিয়ে তোমাকে মেরেছি,, একেও একটু শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন। চিন্তা করো না বেশি না হলেও তোমার থেকে একটু কম শাস্তি পেয়েছে পরে আরো পাবে।

রোজ : সাইকো। দেখি আসুন আপনার হাতে ব্যন্ডেজ করে দেই। ( যতই খারাপ ভাবি না কেন ওনাকে,, ওনার কষ্টেও আমার কষ্ট হয়। কেন.? কেন কান্না আসছে আমার.? আমি তো ওনাকে পছন্দই করি না। তবুও কেন এতো খারাপ লাগছে আমার। )

মেঘ : কাঁদতে ইচ্ছা করলে কাঁদতে পারো। মন হালকা হবে।
মেঘের কথা কানে যেতেই রোজের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। মেঘ এটা দেখে মুচকি হেসে রোজের সামনে বাধ্য ছেলের মতো বসলো। রোজ ব্যান্ডেজ করছে আর কাঁদতে কাঁদতে কথা বলছে।

রোজ : আমি আপনাকে পছন্দ করি না। আমার এমনি কান্না আসছে তাই কেঁদে ফেলেছি। আমি মোটেই আপনার জন্য কাঁদছি না।

মেঘ : আচ্ছা। আহহ ব্যাথা লাগছে।
রোজ : আমি ব্যাথা দেইনি। কোথায় ব্যাথা লাগছে.? ব্যান্ডেজ তো করা শেষ। খুলে আবার ঠিক করে দিবো.?

মেঘ : উহু ব্যান্ডেজের ওপর যে একটা মেডিসিন লাগবে। সেটা দাও।
রোজ : ব্যান্ডেজের ওপর আবার কি দিতে হয়.? আমি তো জানিই না।

মেঘ হাত জোড়া রোজের ঠোটের সামনে দিয়ে রোজকে ইশারা করলো,,রোজ এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘের হাতে ঠোট ছোঁয়ালো।

মেঘ : এবার চলো নিচে। খেতে হবে তো কিছু।
মেঘ রোজকে কোলে তুলে নিতেই রোজ নামিয়ে দিতে বলে,, মেঘ করিডোরে এসে রোজকে উচু করে ধরে,,

মেঘ : দিবো ফেলে.?
রোজ : না না,, পড়ে যাবো।

রোজ মেঘের শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরে। মেঘ হেসে ওকে নিয়ে নিচে নামে। আরাভ,মৃন্ময় মোহনা আর আয়েশা ( আরাভের মা ) বসে ওদের দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে। মেঘ রোজকে চেয়ারে বসিয়ে নিজেও চেয়ার টেনে বসলো।

আরাভ : কি খবর রোজ.?
রোজ : আর খবর!! মরতে মরতে বেঁচে গেছি। কোন ফ্যামিলিতে এসে পড়লাম.? কিছু বললেই বাঘের মতো তেড়ে আসে।

মেঘ : কি বললে.?
মৃন্ময় : মামনি কি খাবে বলো,, সেটা বানিয়ে আনতে বলছি।

রোজ : তোমরা কি খাচ্ছো.?
মৃন্ময় : ব্রেড, জেলি, অমলেট, জুস।

রোজ : আমি এসব খেতে পারি না। আমাকে খিচুড়ি আর আঁচার দিতে বলো। আমি আচার খাবো।

মেঘ : নাহ। সুপ আনো। ও সুপ খাবে… কোনো খিচুড়ি বানানো হবে না।
রোজ : শশুড় আব্বু আমি খিচুড়ি খাবো।

মেঘ : সুপ খাবে তুমি।
রোজ : শশুড় আব্বু….

মৃন্ময় : আচ্ছা সুপ আনো। আমি খিচুড়ি খাবো তাই খিচুড়িও বানাও। আচারও আনবে।

রোজ : আপনি রাক্ষসের সাথে পেটুকও। আমার খাওয়াটাও সহ্য করতে পারেন না। আপনি খেতে চাইলে কি আমি না করতাম.?

মোহনা : একি মেঘ তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেন.?
রোজ : উনি ছুরি দিয়ে হাত কেটেছে। আমার জন্য। দুইদিন পর পা কাটবে পেট কাটবে গলা কাটবে,, আমি ওনাকে মেরে তারপর যাবো। ( এবার আমাকে নিশ্চই ওরা বের করে দেবে। কি মজা আমি আবার আশ্রমে ফিরে যাবা )

মোহনা : মামনি তুমি দুপুরে কি খাবা.?
রোজ : ( এদের কি নিজেদের ছেলের ওপর মায়া দয়া নেই.? কেমন ছাড়া ছাড়া ভাব। পাগল নাকি সব। ) আমি বিরিয়ানি,, রোস্ট,, কোক,, আর আইসক্রিম খাবো।

মেঘ : চিকেন স্টু আর বাটার রাইস খাবে।
রোজ : ওসব রোগিদের খাবার। আমি খাবো না। আমি তো যা যা বলেছি তাই খাবো। মেয়েদের মতো কুটনামি স্বভাব বাদ দেন।

মৃন্ময় : ওভাবে বলতে হয় না মামনি,, ও তো তোমার ভালোর জন্য বলেছে। তোমার ভালো চায় বলেই লাইট খাবার সাজেস্ট করছে।

রোজ : মোটেই ভালো চায় না। সব সময় তকে তকে থাকে আমাকে মারার। কষ্ট দেওয়ার। আচ্ছা আরেকটা আপু ছিলো না বড় পেট ওয়ালা। ও কই.?

আয়েশা : আলিজা বড় পেটওয়ালা না.? ও প্রেগনেন্ট। ও উপরে ঘুমাচ্ছে। সকালে পেটে ব্যাথা করছিলো বলে আর ওঠেনি।

হঠাৎ উপরে আলিজার চিৎকার শোনা গেলো। সেই সাথে কিছু ভাঙার শব্দও আসলো। রোজের বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো চিৎকার শুনে। রোজ সবকিছু ফেলে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। আরাভ হাত ধুয়ে উপরে যাচ্ছে।

আলিজা বিছানার ওপর ছটফট করে কাঁদছে। নিচে কাঁচের জগ ভেঙে পড়ে আছে। রোজ ছুটে আলিজার কাছে গেলো।

রোজ : কি হয়েছে তোমার.? কোথায় কষ্ট হচ্ছে.? আমাকে বলো।
আলিজা : বোন তুই,, ব্যাথা করছে পেটে।

আরাভ : আলিজা কি হয়েছে তোমার.? মা চাচ্চু বড়আম্মু। তোমরা তাড়াতাড়ি আসো। মেঘ গাড়ি বের কর।

হসপিটালে,,,
ডক্টর : পেসেন্টের ব্লিডিং হচ্ছে ব্লাড লাগবে ইমিডিয়েটলি। খুব রেয়ার ব্লাড। AB- আমাদের এবং আশেপাশের কোনো ব্লাড ব্যাংকে এখন এই রক্ত নেই।

রোজ : আমার AB-। আমি রক্ত দিবো। আমাকে নিয়ে চলুন। কোনদিকে যাবো.?

রোজ কারোর অপেক্ষায় না থেকে নার্সের সাথে চলে গেলো। মেঘ ফোনে কারোর সাথে কথা বলে বাইরে চলে গেলো।

মেঘ : হ্যালো দাভাই,, এখানে আলিজা আছে,, আররর

রোজ সবে রক্ত দিয়ে বাইরে এসেছে। দম আটকে আসছে ওর তাই জানালার কাছে এসে দাড়ালো। কিছুক্ষনের মধ্যে খবর আসলো আলিজার ছেলে হয়েছে আর ওরা দুজনই ভালো আছে। খবরটা পেয়ে রোজ বাবু দেখার জন্য ওটির সামনে ছুটে গেলো।

রোজ : বাবুকে দেয়নি.? কখন দেবে.?
আরাভ : কিছুক্ষনের মধ্যেই। তোমাকে অসংখ্য

কথাটা শেষ করতে পারে না আরাভ,, একটা বুলেট এসে আরাভের হাত বরাবর লাগে। রোজ পেছনে তাকিয়ে দেখে মাস্ক পড়া একজন ছুটে যাচ্ছে। চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে আসে রোজের। আর ও একটা মেয়েকে দেখতে পায় যে দুহাতে গান নিয়ে একের পর এক শুট করছে।

রোজ : শশুড়আব্বু ভাইয়াকে দেখো। ওর হিস্টরি আমি আপেন করে আসি।

রোজ পায়ের ব্যান্ডেজটা একটানে খুলে ছেলেটার দিকে ছুটতে লাগলো। পথে একটা ছেলে ছুরি দিয়ে রোজকে মারার চেষ্টা করতেই রোজ ছুরিটা ওর পেটেই ঢুকিয়ে দেয়। আরেকটা ছেলে রোজকে শুট করার চেষ্টা করছিলো,, রোজ পাশ থেকে একটা কাঁচি ছুড়ে মারে ছেলেটার চোখ বরাবর।ছেলেটার হাত থেকে গানটা উপরে উঠে যায়, রোজ লাফ দিয়ে সেটা ধরে গেটের দিকে দৌড়ে গেলো। যে শুট করেছিলো সে গাড়িতে উঠেছে। রোজ পাশে থাকা একটা বাইক নিয়ে লোকটার গাড়ি ফলো করতে লাগলো। মেঘ তখন সম্রাটকে নিয়ে হসপিটালের দিকে যাচ্ছিলো। রোজকে দেখে ও গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে।

একটা শুনশান জায়গায় লোকটা গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে আসে কিছু গার্ডস টাইপের লোক। সবার হাতে গান। সবাই রোজে দিকে ফিরে শুট করতেই রোজ পাশে থাকা গাছের আড়ালে চলে যায়।

রোজ : বুলেট ৫টা মানুষ ৭জন। ওহ হো একটা ছুরি আছে তো।

রোজ আড়াল থেকেই পরপর চারজনকে শুট করলো। বাকি তিনজন গাড়ির পেছনে। একজন উকি দিতেই রোজ ধারালো ছুরিটা ওর বুক বরাবর ছুড়ে দিলো।

রোজ : বুলেট একটা টার্গেট দুইটা। কোনো ব্যাপার না আমার বুলেট সংগ্রহ করে ওদের বুলেট কাজে লাগাই।

রোজ পেছনে ফেরার আগেই চারটা শুটের শব্দ পায়। রোজের সামনে মেঘ আর সম্রাট দাড়িয়ে আছে। রোজ নিজের হাতে গান দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়।

মেঘ : মার্ডার করলে.?
রোজ : আমি জেনেবুঝে করিনি। কিভাবে শুট করেছি জানি না। আমি তো এগুলো কখনো দেখিই নি। কিন্তু কি করলাম… আমার কি হবে এখন.? এতোগুলো মানুষকে মারলাম,,

মেঘ : কাউকে বলার দরকার নাই এসব। ঠিক আছে.?
রোজ : কিন্তু আমি মেরেছি ওদের।

মেঘ এগিয়ে এসে রোজের হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে গেলো। সম্রাট রোজকে পানি আর একটা ক্যাপসুল খেতে দিলো।

সম্রাট : কোমা থেকে বেড়িয়ে এসে সবকিছু ভুলে গেলেও নিজের আসল পরিচয় ভোলেনি ও। সাময়িকের জন্য নিজেকে চিনতে পারছে না। তবে এবার যদি ওকে সবটা জানানো যায়। তাহলে হয়তো ওর সব মনে পড়ে যেতে পারে। ওকে কলেজের প্রথম দিন থেকে ওর লক্ষ্য এক্সিডেন্ট ইরা আপু সবকিছু বলতে হবে।

মেঘ : আগে হসপিটালে চলো,, আরাভেরও গুলি লেগেছে। বাবা ফোন করেছিলো। এখন ঠিক আছে ওরা তবে ওদের একা রাখাটা সেফ না।

তিনদিন পর,,,আলিজাদের বাড়ি আনা হয়েছে। সেদিনের পর থেকে রোজ মনমরা হয়ে গেছে।কোনো কিছুই ভালো লাগে না ওর। মেঘও আগের মতো রোজকে কষ্ট দেয় না। মেঘ চায় রোজকে শূণতার আগুনে পোড়াতে যেন প্রতিশোধের আগুন ওকে স্পর্শ করতে না পারে।

প্রতিদিনের মতো আজ বিকালেও আদ্রকে দেখতে রোজ আলিজার রুমে যায়। আর রুমের মধ্যে ৮-৯ জনকে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায়।। রোজ বেড়িয়ে আসার জন্য পা বাড়াতেই মেঘ রোজের হাত চেপে ধরে।

মেঘ : কোথায় যাচ্ছো.?
রোজ : রুমে।

আরাভ : আরে রোজ থাকো না প্লিজ। আমরা আজ আমাদের একটা বন্ধু + ছোট বোনের গল্প করবো তার সাহস,তার রূপ,তার লক্ষ্য,তার উদ্দেশ্য, তার এটিটিউড,, তার ভালোবাসা, সব নিয়ে গল্প করবো। তোমার ভালো লাগবে

রোজ : কে সে.? কি নাম তার.?
আয়াশ : সাদিয়া চৌধুরি রোজ। তোমার সাথে নামের মিল আছে কিন্তু। আর সব থেকে বড় ব্যাপার, সে মেঘ ভাইয়ার ভালোবাসা ছিলো আর আলিজা ভাবির ছোট বোন + দেখতেও অনেকটা তোমারই মতো…

রোজ : আমার মতো..? তো ও কোথায়.?
মেঘ : মারা গেছে।

রোজ : এজন্যই আমার পিছে পড়ছেন..?
মেঘ : তোমার আর আমার রোজের মাঝে অনেক পার্থক্য। ভেবেছিলাম তুমি আমার যোগ্য তাই বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সেদিনের পর বুঝলাম তুমি কখনোই রোজের মতো হতে পারবে না। তাই তোমাকে আবার আশ্রমে পাঠিয়ে দিবো।

রোজ : ওই রোজ কেমন ছিলো.? চলে যাবো তো তার আগে শুনে যাই। ( অপমান করলো আমাকে। জোর করে তুলে এনেছে, বিয়ে করেছে, টর্চার করেছে আর এখন অপমান করছে,, কে ওই চুন্নি যার জন্য কথা শুনতে হচ্ছে )

রোজের এমন উত্তরে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এতোক্ষন এটা শোনার জন্যই সবাই অপেক্ষা করছিলো। ১বছর ধরে যেটা সবাই লুকানোর চেষ্টা করেছে আজ সেটারই সত্যতা প্রমাণ করা হবে। রোজের সামনে রোজের জীবনী তুলে ধরবে সবাই।

#পর্ব_০৩

♠♠FlAshBaCk♠♠

কলেজ গেট দিয়ে কালো একটা বাইক ঢুকতেই সবাই অবাক হয়ে গেটের দিকে তাকালো। একটা মেয়ে এভাবে কলেজে এসেছে,, ব্যাপারটা ভাবার বিষয়।মেয়েটার পরনে ব্লাক জিন্স, ব্লাক টি-শার্ট এর ওপর জ্যাকেট, পায়ে ব্লাক বুটস। মাথায় ব্লাক হেলমেট। আর কোমরে গুজে রাখা গান। মুখে মাস্ক। হাতে ব্লাক গ্লোবস।

মেয়েটা বাইক স্টান্ড করিয়ে স্টাফরুমের দিকে এগোলো,, স্টাফ রুমে দাড়িয়ে ডক্টর সম্রাট একজন প্রফেসরে সাথে কথা বলছিলো,, মেয়েটা হাত উচু করে ইশারা করতেই সম্রাট প্রফেসরের কাছ থেকে সময় চেয়ে তাকে চলে যেতে বলে। মেয়েটা ধীরে ধীরে সম্রাটের দিকে এগিয়ে এসে সম্রাটের হাতে একটা ইনভিটেশন কার্ড ধরিয়ে দেয়।

সম্রাট : এই সামান্য একটা কারনে তোকে এভাবে ব্লাক ডেভিল কুইন সেজে ম্যাপ বের করে কলেজে আসতে হলো.? আমাকে বা আলিজাকে বললেই পারতিস। আলিজা তো আজই আসবে কলেজে,,

মেয়েটি : আমিও একসময় আসবো এখানে,, আজ দেখে গেলাম,, সমস্যা কি.? তাছাড়া আমার এখানে আসা বারন সেটা আগে জানলে এই এরিয়াতেও পা রাখতাম না।

সম্রাট :আহা রাগ করছিস কেন.? তোর দাভাই কি এখন তোকে কিছু বলতেও পারবে না। এভাবে ভুতনি সেজে এসেছিস। দেখ তোকে নিয়ে সারা কলেজে হইচই পড়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রিন্সিপাল সারও এসে উঁকি মেরে গেছেন।

মেয়েটি : সো হুয়াট। রোজ কখনো কাউকে ভয় পায় না । ভয়কে জয় কিভাবে করতে হয় সেটা রোজের খুব ভালো করেই জানা আছে। এখানে আসার আরেকটা কারন,, আমি ভেবেছি আজ থেকে আমার এই রূপ সবার অজানা থাকবে। আমি সিম্পল মেয়েদের মতো থাকবো,,

রোজের কথা শুনে সম্রাট কেশে উঠলো,, রোজ ভ্রু কুচকে তাকালো সম্রাটের দিকে। সম্রাট টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি উঠিয়ে রোজের দিকে ধরলো,, রোজ চোখ মোটা করতেই সম্রাট নিজে পানিটুকু খেয়ে ফেললো।

সম্রাট : তুই মেয়েদের মতো থাকবি.? না মানে আমাদের রোজ মেয়েদের মতো থাকবে এটা তো তখনই সম্ভব যখন আকাশে চাঁদ আর সূর্য একসাথে দেখা যাবে,,

রোজ : সাট আপ দাভাই,, না হলে গুলি করে খুলি উড়ায় দিবো। নিজের বোনকে এভাবে বলতে লজ্জা করে না.? তোমাকে দাভাই বলতে তো রীতিমত সন্দেহ হচ্ছে,,

সম্রাট : আচ্ছা আচ্ছা আমি চুপ। এবার বল কবে থেকে আসবি। তোর কথাটাও কি বলে যাবো.?

রোজ : তা বলতে পারো। বাট আমার পরিচয় কাওকে দিবা না। আমি চাইনা কেউ জানুক যে আমি চৌধুরি ফ্যামিলির মেয়ে। আমি নরমাল ভাবে সবার সাথে মিশতে চাই,, আরেকটা কথা,, আমার ফর্মে কোনো বাবার নাম দিবে না। আই হেটস দ্যাট ম্যান। হি ইজ নট মাই ফাদার। হি ইজ এ সেল্ফিস বিজনেস ম্যান,, & আপিলাস্ ফাদার।

সম্রাট : চাচ্চুকে নিয়ে প্রবলেম জানি। কিন্তু ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হবে তো বোন।

রোজ : যেখানে কুশান চৌধুরি থাকবে সেখানে রোজের কোনো জায়গা নেই।

সম্রাট : তোর বন্ধুরা.?
রোজ : ওদের এডমিশন হয়ে গেছে। ওদের নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার।



রাস্তার মাঝ দিয়ে রেসিং ড্রাইভ করছে আরাভ। পাশে বসে আছে মেঘ। পেছনে আয়াশ আর নীলাদ্রি। চারবন্ধু মিলে আজ ঘুরতে বেড়িয়েছে কারন আজ আয়াশ এসাছে ইন্ডিয়া থেকে,, বোডিং স্কুলে থেকে স্কুল লাইফ শেষ করে দেশে ফিরেছে ও,, মেঘ আর আরাভ এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে,,নীলাদ্রিও ওদের থেকে বড় তবে হাভভাব বাচ্চাদের মতো। গাড়ির স্পিড দেখে নীলাদ্রি মাঝে মাঝে ভয়ে চিল্লিয়ে উঠছে আর আরাভ ওকে ভয় দেখানোর জন্য গাড়ির স্পিড একবার বাড়াচ্ছে একবার কমাচ্ছে।

হঠাৎ ওদের গাড়ির সামনে চলে আছে একজন সবজি বিক্রেতার ভ্যান। ভ্যানের সাথে ধাক্কা লাগতেই ভ্যান উল্টে গিয়ে বিক্রেতার গায়ের ওপর পড়ে। এবার ভয়ে আরাভের গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে,, ও গাড়ি থামিয়ে ভ্যানওয়ালার দিকে এগিয়ে যায়। আয়াশ, নীলাদ্রিও ওর পিছু পিছু যায়। মেঘ গাড়ি থেকে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে গাড়ি লক করার জন্য বের হলো।

ওদিকে আয়াশের সাথে রোজের তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে,, রোজ আরাভকে শুধু এইটুকু বলেছিলো

রোজ : এই যে মিস্টার চোখ কি কপালে নিয়ে ঘোরেন..?? যদি অন্ধই হন তাহলে ড্রাইভ করছেন কেন..?? কালো চশমা তো পড়েই আছে,, একটা প্লেট নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকেন। চোখ ঠিক করার জন্য যত টাকা প্রয়োজন সবটাই পেয়ে যাবেন। যত্তসব।

আর আয়াশ বলেছে,
আয়াশ : আব সরি

রোজ : এখনকার মানুষগুলোও অদ্ভুদ। মানুষকেই মানুষ বলে মনে করে না। উফ আংকেল আপনি ঠিক আছেন.?

আয়াশ : তুমি মানুষ বুঝি.? প্রথমে পোশাক দেখে ভুত বা ডাইনি ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমার চোখ যে অন্য কথা বলে,,

নীলাদ্রি : কি বলছে.?
আয়াশ : বলছে এ এক অপরূপ সুন্দরি,, আর আমি তোমার প্রেমে মাতোয়ারা হতে চাই পরি।

রোজ : হুয়াটটটটটটটটট ??
আয়াশ : ভাই মাফ চেয়ে নে না। তোর জন্য আমি এই মেয়েটাকে হারাতে পারবো না

রোজ : আব্বে ওই হাল সে কাম রাখো,, নেহি তো,,
আয়াশ : কি করবা..? আর তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেন,, তোমাদের তো তেমন ড্যামেজ হয়নি।

রোজ : কথাটা ড্যামেজ হওয়া বা না হওয়ার না,, আমাদের জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো বা তার ড্যামেজ হতো,, ড্যামারেজ কে দিতো.? এভাবে গাড়ি চালানো বেআইনি সেটা জানেন.? আমি যদি এখন কমপ্লেইন করি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে,, তখন ?

আরাভ : আরে না না,, আংকেল সরি আংকেল প্লিজ মাফ করে দেন। আপু সরি মাফ করে দাও। আর কখনো এভাবে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাবো না।

রোজ : অকে। আংকেল এটা রাখুন। প্রয়োজন মতো খরচ করবেন।
সবজিওয়ালার হাতে ৫হাজার টাকা দিলো রোজ। সবাই চোখ বড় বড় করে ওদের দেখছে।

সবজিওয়ালা : নাহহ মামনি তোমার কাছ থেকে টাকা নিতে তোমার কাকি মানা করছে। প্রতি সপ্তাহে তুমি এভাবে টাকা দিয়ে যাও,, আমিও নেই। লজ্জা লাগে তো মামনি।

রোজ : লজ্জা লাগবে কেন.? আপনার ছেলে যদি দিতো তাহলে কি লজ্জা লাগতো.? আফসোসের বিষয় আপনার ছেলে মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে গেছে তাই আপনাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে। যাক সেসব কথা। আমি যখন বলেছি এটা নিতে হবে তখন নিতে হবেই।

সবজিওয়ালা : আচ্ছা দাও। মামনি তোমার জন্মদিন তো কাল। এটা তোমার কাকি পাঠিয়েছিলো ( একটা সাইড ব্যাগ দিলো যার পুরোটাই হাতে নকশা করা। )

রোজ : ওয়াও। ইট্স সো কিউট। কাকিকে থ্যাংকইউ দেওয়ার দরকার নাই। নিজের মেয়েকেই তো দিয়েছে। আচ্ছা টাটা আংকেল।

রোজ বাইক উঠিয়ে স্টার্ট দিতেই সবজিওয়ালা গান উঠিয়ে রোজের দিকে এগিয়ে দিলো। গান দেখা নীলাদ্রি লাফ দিয়ে আয়াশের পেছনে লুকালো। আরাভও ঢোক গিলে তাকালো।

রোজ : পড়ে গেছিলো। টিংকু মনে করে উঠিয়ে দেবার জন্য। টা টা।

মেঘের হাত থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিচে পড়ে গেলো। মেঘ সেটা তোলার জন্য নিচু হয়ে বসলো,, আর তখনই রোজ মেঘের সামনে দিয়ে বাইক নিয়ে পাস করলো। মেঘের বুকটা ক্ষনিকের জন্য ধুক ধুক করে উঠলো। রোজও অদ্ভুদ একটা অনুভূতি অনুভব করে বাইক থামালো। মেঘের নজর বাইকারের গ্লাসে থাকা একজোড়া মায়াবী চোখের দিকে। ঘন ঘন চোখের পাপড়ি পড়া চোখদুটো যেন ওকে আরো বেশি করে আকৃষ্ট করছে। রোজ পেছনে ঘাড় ঘোরাতে গিয়েও ঘোরালো না। বাইক নিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেলো।

মেঘ ফাস্টএইড বক্স তুলে সবজিওয়ালা আংকেলের কাছে গেলো। আরাভরা ততক্ষনে রোজের ব্যাপারে খোজ নেওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত।

মেঘ : আংকেল বসুন। আপনার কপালটা ছুলে গেছে। আমি স্যাভলন লাগিয়ে দিচ্ছি। আর তোরা, একটু চুপ থাকতে পারিস না.?

আয়াশ : আমরা তোমার মতো এতো চুপ কিভাবে থাকি ভাই,, আমরা তো আলাদা। আর তোমার মতো এমন গম্ভির গম্ভির ভাব নিয়ে থাকলে মেয়ে রা তো পটবে না। তারা চায় ড্যাসিং লুকিং

মেঘ : চুপ।
মেঘ কপালে ছোট একটা ব্যাথার টেপ লাগিয়ে আয়াশদের নিয়ে চলে আসলো। এবার মেঘ নিজে ড্রাইভ করেছে। বাড়ি এসে ওরা যে যার রুমে চলে গেলো। মেঘের চোখের সামনে বারবার সেই চোখ জোড়া ভেসে উঠছে,, অস্থির লাগছে ওর।

মেঘ : এমন হচ্ছে কেন.? আমার তো কখনো এমন লাগেনি। কে ও.? কেন ওর চোখজোড়া আমাকে এতো টানছে। কেন বারবার মনে পড়ছে।

আয়াশ : কি মেয়েরে বাবা। আচ্ছা ও নিজেকে এভাবে ঢেকে রেখেছিলো কেন.? অনেক সুন্দর সেজন্য.? কিন্তু এখন কার মেয়েরা তো সৌন্দর্য প্রদর্শন করাতে ব্যাস্ত থাকে। এমনকি এটা ওটা মেখে কৃত্রিম সৌন্দর্য ধরেও রাখে। তাহলে ও মাস্ক গ্লোবস আর টোটালি কালো জিনিস ইউজ করে কেন.?



এদিকে বাড়ি এসে সোজা শাওয়ার নিতে চলে গেলো রোজ। পড়ে গিয়ে ধুলোবালিতে অর্ধেক গোসল করেছে,, বাকিটা করতে হবে তো। রোজ বিছানার ওপর ফোনটা ছুড়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। আলিজা তখন রোজের খাবার নিয়ে ওর রুমে আসে।

আলিজা : দেখো মেয়ের কান্ড। ঘরটাকে কি বানিয়ে রেখেছে। একি বিছানার ওপর রক্ত কেন,, ফোনটাও রক্তে ভিজে গেছে মনে হচ্ছে। কি হয়েছে রোজের.??

আলিজা বাথরুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলো।

আলিজা : রোজ,, রোজ। বাইরে আয় বোন।
রোজ : আর ১০মিনিট আপিলা। তুমি ওয়েট করো। আর আমি কিছু খাবো না। খেয়ে এসেছি।

আলিজা : তাড়াতাড়ি বাইরে আয়।

রোজ শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বাইরে চলে আসলো।
রোজ : কি হয়েছে.?

আলিজা : এই রক্ত কিসের.? আবার মারপিট করেছিস.? কোথায় লেগেছে তোর.? তোকে কতবার বলেছি মারামারি করবি না। আমার কোনো কথা শুনিস না তুই।

রোজ : আরে মারপিট করিনি। এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমার হাত কেটে গেছে,, ফোন ধরেছিলাম তাই ফোনেও রক্ত লেগেছে আর সেটাই বিছানায়।

আলিজা : জানতাম। এসব কাটাকাটি ছাড়া তোর একটা দিনও যায়। কোনো না কোনো বাহানায় হাত পা কাটবেই।

রোজ : তবুও আমার দোষ.? আমি কি বলেছি ওই অবোধ বান্দাদের যে আসো আমার বাইকে তোমাদের গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দাও। আমাকে রাস্তায় ফেলে দাও।

আলিজা : সাবধানে থাকবি তো। যদি বড় কিছু হয়ে যেতো
রোজ : হলে তোমার বাবাই সব থেকে বেশি খুশি হতো। আফসোস যে কিছু হলো না।

আলিজা : রোজজজ।
রোজ : কাল কলেজ আছে তোমার যাও নিজেকে তৈরি করে রাখো। কলেজটা বেশি সুবিধার না। ১. প্রাইভেট কলেজ ২. কলেজের ওনারের ছেলে মেয়ে প্রচন্ড উগ্রপন্থি টাইপের। বর্তমানে Rag ক্রাইম হলেও ওনারের ছেলে মেয়ে বলে মাফ পেয়ে যায় ওরা। সবাই ভয় পেয়ে চলে ওদের। যদিও দাভাই তোমার কথা বলে এসেছে তাই তোমাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না। তবুও সাবধানে থেকো।

আলিজা : আর তুই.?
রোজ : রোজকে Rag করার সাহস দেখালে সে সাহসীর কি হাল করবো সেটা একমাত্র সময় জানে। আমার সাথে যে যেমন আমি তার সাথে ঠিক তেমন।

আলিজা : আমার সাথে যাবি না.?
রোজ : নিভি আর নীলয় যাবে আমার সাথে। তুমি দাভাই এর সাথে চলে যেও।



কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে সাথি,, সারা। কিছুক্ষন বাদে তাদের সাথে যোগ দিলো সাঞ্জানা।

সাঞ্জানা : হেই গাইস কি করছিস তোরা.?
সাথি : মুরগি খুজতেছি। Rag করবো সেজন্য। তুই কখন আসলি.?

সাঞ্জানা : মাত্রই। কিন্তু Rag করবি মানে.?
সারা : এমন ভাব করছিস যেন Rag কি সেটা জানিসই না। নাটক কম কর বেব।

[ “Rag “বাংলায় লিখলে শব্দটা ” র্যাগ ” এমন হয় বলে ইংরেজিতে দিয়েছি। ]

সাঞ্জানা : তোরাও না।।।
সাথি : আব ওই দেখ মানিক বিজোড়।

সাঞ্জানা : মানে.?
সারা : কানি সামনে তাকা ওই যে দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলে। মেয়ে দুটোকে সাইড করে ছেলেটাকে Rag করলে দারুন হবে। কেউ তো আমাদের নামে কিছু জানবে না,, জানলেও বলবে না। তাহলে সমস্যা কি.?

সাথি : এই রবিন ওদের ডেকে নিয়ে আয়। আর বোরকা পড়া মেয়েটাকে বল এসব পড়ে কলেজে আসা মানায় না। ও যেন ড্রেস চেঞ্জ করে আসে।

রবিন : আমি বললেই ওরা মানবে.? বোরকা না অন্যকিছু ভাব।
সারা : তোকে যা বলছি তাই কর।

সাঞ্জানা : ওয়ে হয়ে। বোরকাওয়ালি আগেই সাইড হয়ে গেছে। রবিন বাকিটাকে একটু ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে আন। আমরা ছেলেটাকে দেখছি। ওই ছেলে শোন,,

নীলয় দাড়িয়ে পড়লো সাঞ্জানার ডাক শুনে। নিভিও নীলয়ের দেখাদেখি দাড়িয়ে গেলো। নীলয় সাঞ্জানার দিকে তাকিয়ে বললো,,

নীলয় : আমাকে ডাকছেন.?
সাঞ্জানা : হ্যা এদিকে আসো। রবিন,,,

রবিন নিভিকে প্রিন্সিপালের নাম বলে কলেজের পেছনের দিকটায় নিয়ে গেলো। নীলয় চোখ ছোট করে তাকালো।

নীলয় : জি
সাঞ্জানা : নাম কি.? কোন ইয়ার.?

নীলয় : নীলয় রায়জাদা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার আপু।
সারা : তুই এই কলেজের রুলস জানিস.? যেদিন কলেজে স্টুডেন্টরা ফার্স্ট আসে সেদিন ওদের কিছু রুলস ফলো করতে হয়।

নীলয় : Rag ? শুনেছি। কিন্তু কি ওটা.?
সাঞ্জানা : আমরা মানে কলেজের সিনিওররা তোকে যা বলবো তোকে সেটাই করতে হবে। এটাকে Rag বলে। নে চটপট কান ধরে ২০বার উঠবস কর। তারপর ওখানে যতগুলো মেয়ে দেখছিস তাদের মধ্যে একজন কে প্রপোজ করবি।

সাথি : ২-৪টা চর থাপ্পড় খাবি কিন্তু ওটা বড় কোনো বিষয় না। বড় কলেজে পড়তে গেলে এমন ছোট ছোট কিছু পরীক্ষা দিতেই হয়।

নীলয় ওদের কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। পকেট থেকে কলম বের করে কলমের ছিপি খুলতে খুলতে বললো,,

নীলয় : কিন্তু আমি তো ডোনেশন দিয়ে কলেজে এসেছি। কমপ্লিটলি রাইট আছে আমার এই কলেজে পড়ার। এসব ছোটখাটো পরীক্ষা আমার জন্য না। এক কাজ করুন আমার সাথে আরেকটা মেয়ে এসেছে নাহহ.? ওকে Rag করুন। আমার থেকে ও আপনাদের বেশি এন্টারটেইন করতে পারবে।

সারা : ওভার স্মার্ট। ডাক ওকে। যদি আমাদের মুড ভালো করতে পারে তবে তোকে ছেড়ে দিবো। আর যদি না পারে তো আমাদের মিথ্যা বলার শাস্তি পাবি। কলেজে কিভাবে টিকিস আমরাও দেখবো।

নীলয় : রোজ,, এই রোজ এদিকে আয়। কলেজের রুলস মেনেছিস নে এবার ঠেলা সামলা।

রোজ : আব না মানে,, কি করতে হবে.?
সাঞ্জানা : এভাবে বোরকা পড়ে থাকলে আমাদের টাস্ক দিতে সমস্যা হবে। এটা কমন রুম থেকে খুলে আসো।

রোজ : সমস্যা নাই,, এখানেই খুলছি। এই নীলয় হিজাব পিন গুলো ধর।

রোজ হিজাব খুলে বোরকাও খুলে ফেললো,,লাল রং এর একটা থ্রিপিচ পড়া,, চুল বেণি করে দুপাশে ঝুলানো,, সামনে টেড়ি কাটা চুল।। স্নিগ্ধতায় ভরা একটা বাচ্চামুখ। রোজ নীলয়ের ব্যাগ থেকে ওরনা নিয়ে মাথায় কাপড় দিলো

রোজ : এবার বলুন কি করতে হবে।
সাঞ্জানা : এখানে থাকা যেকোনো একটা ছেলেকে থাপ্পড় মেরে,, তাকে কিস করতে হবে দেন তার পা ধরে মাফ চাইতে হবে।

রোজ এদিক ওদিক বোকার মতো তাকাতে লাগলো। ব্যাপারটা এঞ্জয় করছে ওরা তিনজন। নীলয় বোরকা হিজাব নিয়ে কিছুটা গিয়ে বসে নিভিকে ইশারায় ডাকলো। নিভিও রবিনকে গাধা বানিয়ে চলে আসলো।

রোজ চারদিকে তাকিয়ে ঠাসস করে সাথির গালে চর বসিয়ে দিলো,, সারা চোখ বড় বড় করে তাকাতেই সারার আঙ্গুলে কামড় দিলো,, আর সাঞ্জানার পায়ে পা লাগিয়ে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো। তিনজনের আতকে ওঠে গলা শুনে সবাই ছুটে আসে।রোজ সাঞ্জানাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে,,

রোজ : ইশ আপু পড়ে গেলে কিভাবে,, আহা রে ব্যাথা পেয়েছো নাকি। এই তোমরা আপুকে তোলো,, ( রোজের সাথে পাঙ্গা নিতে এসো না তোমরাই বিপদে পড়ে যাবে । আর কাউকে বলতে যেও না কিন্তু, Rag এর কথা। জানো তো Rag নামক শব্দটি ছোট ছোট থেকে বড় ক্রাইম হয়ে গেছে। অকাদ সামাঝ কে বাত অর কাম দোনো হি ঠিক সে কারনা, আন্ডারস্টান্ড.. ইউ বেটার আন্ডারস্টান্ড )

চলবে…??

[ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here