অদ্ভুত সুখানুভূতি পর্ব ১১

#অদ্ভুত_সুখানুভূতি
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_১১

মৃদুল আদ্র আর রিখিয়াকে নিয়ে পুরো বিছানা দখল করে ঘুমাচ্ছে রোজ। মেঘ গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। কিছুক্ষন পর আলিজা এসে আদ্রকে নিয়ে যায়।

মেঘ : বাকি দুজনকেও নিয়ে যাও। আমিও একটু ওর সাথে ঘুমাই…

কুহু : আমার রুমে গিয়ে ঘুমা। এখানে এখন আমি ঘুমাবো। রাজ আসবে না রাতে। আমি একা ঘুমাতে পারি না।

মেঘ : তা পারবা কেন.? ভাইকে তো বাপ ডাক শুনতে দিতে চাও না। থাকো তোমরা আমি বনবাসে চলে যাচ্ছি।

কুহু : ব্লাংকেট নিয়ে যা বাইরে ঠান্ডা।

মেঘ গাল ফুলিয়ে চলে গেলো। কুহু এসে রিখিয়ার পাশে শুয়ে পড়লো। মাঝরাতে রোজের মনে হতে লাগলো ও ভাসছে। রোজ চোখ মেলে তাকাতেই আবছা আলোয় দেখলো ওকে কেউ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

রোজ : আআআ
মেঘ : চুপ। চিৎকার দিলে ফেলে দিবো। তখন বুঝবা কোমর ভাঙলে কেমন লাগে।

রোজ ফিস ফিস করে বললো,,
রোজ : ভাঙবেন না আমি চুপ করে আছি। কিন্তু আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন.?

মেঘ : কুহু আপুর রুমে। আমার ঘুম পাচ্ছে চুপ করো তো।

রোজ : তো আপনার ঘুম পাচ্ছেন ঘুমান। আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কেন.? আমি কি আপনার মতো বুড়োকে ঘুম পাড়িয়ে দিবো.? নাকি গল্প শোনাবো.? গল্প তো দাদিরা শোনায় আমাকে কি দাদি মনে হয়.?

মেঘ : চুপ করতে বলেছি না। চুপ করে থাকো।
রোজ : আচ্ছা আপনি তখন বললেন আমি রোজ না। আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিবেন। তা কবে যাবো আমি আশ্রমে

মেঘ : তোমার যাওয়া বের করছি। আগে রুমে যেতে দাও তারপর এমন ব্যাবস্থা করবো যে চলে যাওয়ার কথা মাথাতেও আনতে সাহস পাবে না।

রোজ : আপনি আমাকে আবার মারবেন.? আমি নিজে থেকে যেতে চাইনি আপনি বলেছেন তাই জিজ্ঞেস করেছি। এবার মারলে আমিও মারবো।

মেঘ : তুমি আমাকে মারবে.? মেরে দেখাও।

রোজকে খাটের ওপর ফেলে দরজা লাগাতে গেলো মেঘ। রোজ উঠে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসলো। মেঘ এক এক করে শার্টের বোতাম খুলছে আর রোজের দিকে এগোচ্ছে। রোজ ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকালো।

রোজ : অন্ধকারে বডি সো করছেন নাকি.? লাইট জ্বালান।

মেঘ : লাইট জ্বালালে তুমি লজ্জা পাবা জান।

রোজ : ছি! ছি! কি বলেন এসব.? লজ্জা করে না একটা মেয়েকে দরজা আটকে একা পেয়ে জান ডাকতে।

মেঘ : একটা মেয়ে মানে.? তুমি মেয়ে নাকি.?

রোজ : তো আমি কি ছেলে.? আমাকে কোন এঙ্গেল দিয়ে ছেলে মনে হয়.? মাথা ঠিক আছে আপনার.? কোনটা মেয়ে কোনটা ছেলে চেনেন না.?

মেঘ : আল্লাহ গো এ কে.? আগের রোজই ভালো ছিলো। এ কোন মেয়েকে বিয়ে করলাম। লিসেন এখন আমরা

রোজ : দুর থেকে বলেন। আমি কানে পরিষ্কার শুনি। মুখের সামনে এসে বলার দরকার নাই।

মেঘ : আচ্ছা আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দাও চটপট। দেখি তুমি কতটা বোকা মানে স্মার্ট।

রোজ : আমি বোকা.? করুন প্রশ্ন আমি সব ঠিক ঠিক উত্তর দিবো।

মেঘ : বিয়ের পর তোমার নাম কি হবে.?
রোজ : সাদিয়া আহমেদ রোজ।

মেঘ : তোমার বিয়ে হয়েছে.?
রোজ : হ্যা।

মেঘ : কার সাথে.?
রোজ : আপনার সাথে। জোর করে বিয়ে করেছেন।হুহ

মেঘ : তুমি কার বউ.?
রোজ : আপনার। মেঘালয় আহমেদ রৌদ্রের।

মেঘ : তাহলে আমি তোমার কি হই.?
রোজ : বর। স্বামী। হাসবেন্ড।

মেঘ : তোমার কাছে বেবি কেমন লাগে।
রোজ : বেবি কেমন লাগে মানে.? মেয়ে জাতি অলঅয়েজ বেবি ভালোবাসে কারন তারা মায়ের জাতি। তাই অবশ্যই আমিও বেবিদের ভালোবাসি। এখন যদি বলে কেমন ভালোবাসি তাহলে বলবো নিজের চেয়ে অধিক।

মেঘ : তুমি আমার বউ হলে আমার বেবি তোমার কি হয়.?
রোজ : আপনার বেবি হবে কিভাবে। আপনি তো ছেলে। বেবি তো আমার হবে। আর আমার বেবি তো আপনারও বে বে বে

মেঘ : বে বে না বেবি। এতোক্ষন আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছি। বুঝেছো.?

রোজ লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে। আর মেঘ আরামসে শুয়ে ভাষন দিচ্ছে। রোজ জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা লেজার লাইটের লাল আলো টিপটিপ করছে। রোজ মেঘের বুকে হাত দিয়ে মেঘকে ডাকতে লাগলো।

রোজ : বাজে বকা বন্ধ করে ওইটা দেখেন। কেউ বোধ হয় শুট করার জন্য পজিশন দেখছে।

মেঘ : মানে.?

মেঘ জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই কেউ সড়ে গেলো। মেঘ পেছনে তাকিয়ে দেখে রোজ নেই।
এদিকে রোজ একজনের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। লোকটির হাতেও বন্ধুক।কিন্তু পুরো মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা। রোজ লোকটির হাত থেকে গান কেড়ে নিয়ে লোকটিকে লাথি দিতে দিতে বাড়ি নিয়ে আসলো।

মেঘ : কে ও.?

রোজ : জানি না। গান নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো আমি গিয়ে ধরে এনেছি। এবার এটাকে উপরে ঝুলান আমি বক্সিং প্রাকটিজ করবো। আগে আপনারা পিটাবেন.? আমি ধরে এনেছি তাহলে আগে আমি মারবো। কিন্তু মুখ খুলতে হবে। মুখ খুলুন।

মেঘ লোকটির মুখ থেকে মাস্ক খুলতেই চমকে যায়।

মেঘ : আয়াশ তুই.? তুই তো জেলে ছিলি।

রোজ : এটা দেখি বাচ্চা ছেলে। এটা কি সেই আয়াশ.?

আরাভ : হ্যা। একে তো আজ আমি শেষ করবো।

রোজ : আমি মারবো।আমি পেয়েছি। একে উল্টা ঝুলাও। বক্সিং গ্লোবস আনো। আমি একে ঘুসি দিবো। অনেক মারবো। এই ছেলে তুমি কি উনাকে ( মেঘকে ) মারতে এসেছো.?

আয়াশ : নাহহ।ওকে তো ভাই মারবে। আমি তোকে মারতে এসেছি। অনেক ভুগিয়েছিস তুই

রোজ : এই তুমি ম্যানার্স জানো না.? তুই তোকারি করছো কেন.? মেঘ। ওকে জোরে থাপ্পড় মারেন আমি একেবারে ঘুসি দিয়ে শুরু করবো। কি হলো মারেন… নাহলে কিন্তু আমি একটু আগে যা বলছিলেন তা দিবো না।

আয়াশ : এটা কে.? রোজ কোথায়.?

রোজ : অন্ধ নাকি.? আমি রোজ,, চোখে দেখো না। মেঘ মারেন ওকে। ওর হাত ভেঙে দেন। ও আমাকে মারতে এসেছিলো।

মেঘ চুপ করে দাড়িয়ে রোজের কথা শুনছে। রোজ একবার আয়াশের চুলের মুঠি ধরে টানছে একবার গলা চেপে ধরছে একবার চিমটি দিচ্ছে একবার খামচি দিচ্ছে। আরাভ এসে আয়াশকে উল্টো ঝুলিয়ে দিলো। আর তখনই ঠাস করে আরাভের ফোন নিচে পড়ে যায়। আর ভিডিও কল ওপেন হয়ে যায়। নীলাদ্রি রিসিভ করতেই দেখে আয়াশ উল্টো ঝুলছে।

রোজ ফোনটা হাতে নিয়ে নীলাদ্রির দিকে তাকায়। আর রেগে ফোন ছুড়ে মারে।

রোজ : ওকে দেখে রাগ লাগছে। আমি এখন একে মারবো। এরা আমার বুবুনকে মেরেছে। আমি এদের মারবোই।

কুহু পপকর্ন এনে সোফায় বসলো। রোজ ইচ্ছামতো আয়াশকে মারছে। মেঘ এসে রোজকে সোফায় বসায়। তারপর ফোন চেক করে,,, নীলাদ্রির সব কনট্যাক্টই আছে ওখানে। কিন্তু ভুল করে ফোনের ভিডিও অপশনে টাচ লাগতেই একটা বাজে ভিডিও অন হয়ে যায়। রোজ তাড়াতাড়ি বন্ধ করে মেঘের হাতে ফোন দিতেই একটা চিৎকার শুনতে পায়। রোজ মেঘের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও অপেন করে। ইরা আর নীলাদ্রির অশ্লীল ভিডিও। মেঘ দ্রুত চোখ সড়িয়ে নেয়। রোজ ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সেন্সলেস হয়ে যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিলো রোজ। তারপর সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে চা বানালো। আরাভ মেঘ আর নিজের জন্য কফি। সবার রুমে রুমে গিয়ে চা কফি দিয়ে নিজের রুমে আসলো। মেঘ বালিশে মুখ গুজে উবু হয়ে ঘুমাচ্ছে। রোজ মেঘের পিঠে হাত দিয়ে ডাকলো। মেঘ তার প্রতিউত্তরে আরেকটা বালিশ পেটের তলে গুজে শুয়ে পড়লো। রোজ মেঘের নিয়ে গরম কফির মগে ডুবিয়ে দিতেই মেঘ লাফ দিয়ে উঠলো,,

মেঘ : এসব কি.? কি করছো সকাল সকাল উঠে।

রোজ : কফি খাও। আমি বানিয়েছি।

মেঘ : নতুন বউ, ভালো বউ হওয়ার চেষ্টা করছো.?

রোজ : ফার্স্ট অফ অল আমি নতুন বউ না। আমাদের বিয়ের তিনবছর ৭মাস হয়ে গেছে। আর সেকেন্ডলি আমি ভালো বউ হওয়ার চেষ্টা করছি না আমি অলরেডি ভালো বউই। আর একটা কথা আমার সব মনে পড়ে গেছে সো এবার টাচ করতে আসলেও এমন হাল করবো রা তিন দিন বিছানায় শুয়ে থাকবে। আমার পা কাটার শাস্তি এক মাস আমাকে টাচ করতে পারবে না।

মেঘ : সব মনে পড়ে গেছে.? তাহলে তুমি আমাকে সাড়ে তিন বছর কষ্ট দিয়েছো তার হিসাব.? এতোদিন আমাকে শাস্তি দেওয়াটা অমানবিকতার কাজ না..?? একটু কমাও

রোজ : ২৫ দিন।

মেঘ : এটা অন্যায়।

রোজ : অকে ২০ দিন।

মেঘ : আমাকে ভালোবাসো না তুমি।

রোজ : ১৫ দিনননন। আর একদিনও কমাবো না। বেশি চিল্লালে দিন বাড়িয়ে দিবো।

মেঘ : ১৫দিন..???সাড়ে তিন বছর একা ছিলাম। দুদিন বউ পেলাম এখন আবার সন্যাসী দশা.?

রোজ : হুহ। নিচে আসো আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি ।

মেঘ : চলো।

রোজ : এভাবে খরগোশের মতো দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো.? ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হতে হয় যাও গিয়ে ফ্রেস হও নাহলে খাবার দিবো না।

মেঘ : এটা আমার বাড়ি

রোজ : তো.?

মেঘ : না মানে আমার বাড়িতে আমি খেতে পারবো না.? এটা কি ঠিক.?

রোজ : আমি যা বলবো সেটাই হবে। আমি যা করবো সেটাই ঠিক। বুঝতে পেরেছো.?

মেঘ : হ্যা। ( বিয়ে করেছি নাকি খুন করেছি.? এটা ঘর নাকি জেল.? এতো কঠিন নিয়ম.? জীবনটাই তো শেষ।আরাভ আর নীলয় রা ঠিকই বলেছে এখন বুঝতে পারছি বউ মানে কি.? এরা আসলেই প্যারা। )

রোজ : ক্যাবলার মতো দাড়িয়ে আছো কেন.? কি ভাবছো।

মেঘ : একটু দাড়ালেও দোষ.?

রোজ : অকারণে হাবলার মতো দাড়িয়ে হা করে তাকয়ে ভাবতে থাকা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ..?

মেঘ : যাচ্ছি।

মেঘ ওয়াসরুমে ঢুকতেই রোজ হেসে উঠলো। তারপর কিচেনে গিয়ে খাবার গোছাতে থাকে। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। রোজ ভয়ে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে। আজ প্রথম রান্না করেছে। কেমন লাগছে কে জানে?

রোজ : কেমন লেগেছে.?

মৃন্ময় : দারুন মামনি। অনেক দিন পর নতুন কিছু টেস্ট করলাম। একেবারে ফাটাফাটি।

মোহনা : অনেক সুন্দররর

মোহনা ভীষম খেলেই রোজ এসে পানি দিলো। সবার চোখ লাল হয়ে গেছে।

রোজ : ভীষম খেলে কিভাবে। দেখি গোশত কেমন হয়েছে.?

আলিজা : নাহহ….

রোজ : না মানে.? আমি খাবো।

রোজ এক পিস গোশত মুখে দিতেই কেঁপে উঠলো। পুরো তরকারি নুনে ভরা। রোজ কাঁশতে কাঁশতে মেঝেতে বসে পড়লো। আলিজা পানি এনে খাওয়ালো তাতেই হিচকি উঠছে।

আলিজা : বললাম খাস না। নুন সহ্য হয় না তোর। কোনো কথা শুনিস না। নে লেবু খা ঠিক হয়ে যাবি।

রোজ : কি বিশ্রি হয়েছে। তোমরা খাচ্ছিলে কিভাবে.? আমারই ভুল আমি চেক করি নি। আমি না হয় ভুল করেছি তোমরা খাচ্ছো কেন.?

মৃন্ময় : তুমি প্রথমবার ভালোবেসে আমাদের জন্য রান্না করেছো। আমরা খাবো না.? আমাদের তো ভালোই লেগেছে। আমরা নুন বেশি খাই।

রোজ : দিন দিন মিথ্যাবাদী হচ্ছো সবাই। শুধু আমাকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য বলছো।

মোহনা : নাহ মামনি। আমরা সত্যি বলছি। ভালো হয়েছে। আমি নিজে তোমাকে রান্না শেখাবো। আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে।

কুহু উপর থেকে রোজকে ডাক দিলো। আদ্রর কান্নার আওয়াজ আসছে। আলিজা ভাবছে মাত্রই তো খেলো এখন কাঁদছে কেন.? রোজ উপরে যেতেই কান্নার আওয়াজ থেমে যায়। আলিজা হা করে চেয়ে আছে আর তা দেখে সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো।

চলবে.?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here