এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ২৪+২৫+২৬

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৪.
#writerঃMousumi_Akter

“প্রিন্সেস ডায়নার একটা উক্তি এতদিন ধরে মনের মাঝে পুষে রেখেছিলাম আমি যাকে ভালবাসি সে আমি বাদে বিশ্বের সবাইকে ভালবাসে।”

মন খারাপ হয়েছে, ভেঙে পড়েছি,কেঁদেছি ওই কঠিন মানুষ টার জন্য।এতদিন যাকে হৃদয়হীন ভেবেছি সেই মানুষ টা ও কাঁদতে জানে এতটা আবেগপ্রবন ভাবে সেটা আগে জানা ছিলো না।দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি একপলকে তাকিয়ে রইলাম ওই প্রিয় মুখটার দিকে।দিন শেষে একটা জিনিস খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি আমি যাকে ভালবাসা যায় দিন শেষে তাকে ক্ষমা করতে বাধ্য হৃদয়। তার মলিন মুখ দেখলে কোনো রাগ অভিমান৷ পুষে রাখা যায় না।

হঠাত করে মামির খেয়াল হলো,আমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছি।মামি আমাকে বললেন,দিয়া এসছিস। মাথা নাড়িয়ে বললাম হ্যাঁ মামি এসছি। বিহান ভাই এর কি হয়েছে।মামি মন খারাপ করে বললেন,আমি আর পারছি না দিয়া।ছেলেকে সামলাতে গিয়ে আমি হাঁপিয়ে উঠছি।মানুষ এইজন্য বলে এক ছেলে ভাল নয়।দেখ না,জিদ ধরলে সেই জিদ আর কমে না।যেটা বলবে সেটাই ধরে রাখবে।এই অসময়ে কিভাবে জ্বর টা বাঁধালো বলতো।আমার অনেক স্বপ্ন দিয়া বিহান কে নিয়ে কিন্তু ও আর লেখাপড়া ই করবে না।ডাক্তারের কাছেও যাবে না, খাবার ও খাবে না।এভাবে থাকলে কি ও বাঁচবে।আল্লাহ কি দুনিয়ার সব জিদ আমার ছেলেটার মাঝেই দিয়েছেন।একবার যেটা না বলবে পৃথিবীর সব বিসর্জন দিলেও সেটা আর হ্যাঁ হবে না।জানিস আমার ছেলেটা রাগি হলেও অতটা খারাপ না।ওকে একটু বুঝে নিতে পারলে অতটাও খারাপ না।শুধু একটু বুঝলেই হয়।আমি বুঝতে পারছিলাম মামি আমাকে ডিরেক্ট লি কিছু বলতে পারছেন না।মামি যেটা বোঝাতে চেয়েছেন সেটা আমি বুঝেছি ভাল ভাবেই।

মামিকে বললাম,,আমি দেখছি মামি কিন্তু তোমার ছেলে কি আর আমার কথা শুনবে।দুই চার টা থাপ্পড় লাগিয়ে দিবে আমাকে। মামি বললেন কিছুই বলবে না দিয়া আমার ছেলে আমি তো চিনি মনের গতি।

ধীরে ধীরে উনার কাছে গেলাম।মাথার কাছে গিয়ে বসলাম।কপালে হাত রাখতেই আমার হাত শিউরে উঠলো।এতটা তাপ বিহান ভাই এর শরীরে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর।এতটা তাপ উনি কিভাবে সহ্য করছেন।মামিকে বললাম,মামি ডাক্তার দেখাতে হবে না এত টা জ্বর।মামি বললেন,তুই বিহান কে চিনিস না ডাক্তারের কাছে কিছুতেই যাবে না।আমি কিভাবে ডাক্তার দেখাবো বল তো।

মামিকে বললাম,তুমি তাহলে ডাক্তার কে বলে ওষুধ নিয়ে এসো আমি জলপট্টী দিতে থাকি।দেখি ওষুধ খাওয়ানো যায় কিনা চেষ্টা করে দেখি।মামি ওষুধ আনতে বেরিয়ে গেলেন।আর বলে গেলেন, দিয়া তেমন অসুবিধা মনে হলে আমাকে ফোন দিস।মাথা নেড়ে বললাম ঠিক আছে মামি।আমি মাথায় পানি দিয়েই যাচ্ছি।পানি দিতে দিতে মাথার পেছন দিয়ে বালিশ সহ উনার শার্ট ভিজে গেলো।

আলনা থেকে টাওয়াল টা এনে উনার মাথা টা আলতো ভাবে মুছিয়ে দিতে লাগলাম।মানুষ টা চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে।শার্ট এর বোতাম গুলো খুলছিলাম একটা একটা করে।শার্ট টাও চেঞ্জ করে দিতে হবে।শার্ট খোলার সময় উনার উন্মুক্ত ফর্সা বুকের দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনার বুকের বা পাশে যেখানে হৃদয় নামক বস্তু টা আছে সেখানে নিজের হাত রাখলাম আর অনুভব করার চেষ্টা করলাম কতটা কষ্ট জমে আছে ওখানে।

হটাত বিহান ভাই আমার হাত উনার বুকের সাথে চেপে ধরে প্রলাপ বকতে শুরু করলেন,,

“আমার প্রতি কখনো কারও মায়া জন্মায়নি,
শুধু আমার প্রেমে পড়েছিলো।
কেউ কখনো আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসেনি। আমাদের মাঝে শুধুই প্রেম হয়েছিলো।না হলে কেউ কাউকে এতটা ঘৃণা করতে পারে।তাকে হৃদয় নিংড়ে ভালবেসেছিলাম সে কেনো বুঝে নিতে পারলো না আমাকে।সে কি এতটাই পিচ্চি মনের কথা বোঝে না।তার অবহেলা আমার ভেতরে বিন্দু বিন্দু অসুখের জন্ম দিয়েছে।আমার ভেতরে তাকে দেখার অসুখ ক্রমশ বেড়েছে।এই অসুখে আমি উত্তপ্ত হয়ে বিনাশ হয়ে যেতে চায়।তাকে না পাওয়ার অসুখ আমার কখনোই সারবে না।পিচ্চিকে বিরক্ত করার অসুখ আমার ভেতরে বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে।আমার সারাজীবনের রাগ জিদ পিচ্চির একটা অবহেলায় দুমড়ে মুচরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।এই পিচ্চি ভালবাসিস না আমায় তাইনা।এই পিচ্চি আই নিড ইউ। ”

প্রচন্ড জ্বরে বিহান ভাই এর আবেগপ্রবন কথাগুলো ভীষণ কষ্ট দিচ্ছিলো আমাকে।আমার অজান্তেই আমার চোখের দু’ফোঁটা পানি উনার কপালে গিয়ে পড়লো।উনি চোখ মেলে তাকালেন,তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে পলকহীন ভাবে।জ্বরের তাপ টা কমেছে উনার বেশ খানিক।এতক্ষণে উনার বলা কথা গুলো মনের মাঝে চিন চিন ব্যাথা দিচ্ছিলো আমাকে।উনাকে এমন বাচ্চামো করতে দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না।উনার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম আমি।এই প্রথমবার উনাকে এভাবে চুমু দেওয়া আমার।এটা শুধুই চুমু ছিলো না উনার কষ্ট কমাতে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটালাম।বিহান ভাই চোখ বন্ধ করে অনুভব করলেন আমার মুখে না বলেও উনাকে নিরবে বোঝানো ভালবাসা।

আজ সারাদিন ই মেঘলা ছিলো আবহাওয়া।হঠাত হাওয়া দিচ্ছে জানালার পাল্লা গুলো বাড়ি খাচ্ছে পর্দা গুলো উড়ছে।বাইরে গাছপালা নড়ছে বাতাসে।এক নিমিষেই শুরু হলো বাইরে বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জানালার পাল্লা গুলো লাগিয়ে দিতে গিয়ে দেখলাম মেহু আপু আর শুভ ভাইয়া এক ছাতার নিচে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দুজন কপোত কপোতির মতো এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা যুগল হেঁটে যাচ্ছে।কারেন্ট ও চলে গেলো।রুমে গুমট অন্ধকার।ফোনের লাইট অন করে দিলাম।বিহান ভাই এতক্ষণে নিজের জ্ঞানে এসেছেন।উনার শার্ট আমি খুলে দিয়েছিলাম খালি গায়ে, জ্বর,আবার বৃষ্টিতে উনার হয়তো ঠান্ডা লাগছে।বিহান ভাই উঠলেন উঠে জানালা খুলে দাঁড়ালেন।উনার পাশে গিয়ে আমিও দাঁড়ালাম।কেউ কোনো কথা বলছি না।দুজনেই কিছু বলবো বাট কি বলবো বুঝতে পারছি না।বিহান ভাই এর মুখ ভীষন মলিন মুখে কোনো কথা নেই হাসি নেই।যেনো পৃথিবীর সব কষ্ট উনার মুখে ভর করেছে।

বুঝতে পারলাম উনার ঠান্ডা লাগছে,আলমারি খুলতেই কত গুলো ছবি পড়লো নিচে।যে ছবি গুলোতে শুধু আমি আর বিহান ভাই ই ছিলাম।ছবি গুলোতে উনার আর আমার দুষ্টুমিষ্টি কিছু মুহুর্ত। প্রতিটা ছবির পেছনে লেখা বউ।ছবি গুলো তুলে আবার যথা জায়গা রেখে দিলাম।একটা চাঁদর নিয়ে বিহান ভাই এর গায়ে জড়িয়ে দিলাম।উনি চাঁদর টা ভাল ভাবে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে।

বিহান ভাই এর মাথার মাঝে বোধ হয় চক্কর দিয়ে উঠেছে এক্ষুণি পড়ে যাবে যাবে ভাব।আমি উনার হাত ধরে ফেললাম।মানুষ টা ঠিক ভাবে কত দিন খাই নি তার ঠিক নেই।

“শান্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,আপনার শরীর অনেক উইক আসুন বিছানায় সুয়ে থাকবেন।আমি আপনার জন্য কিছু খাবার বানিয়ে আনছি।”

“কেনো? দিয়া।আমি তো খারাপ একজন মানুষ। আমার জন্য খাবার বানালে তোর পাপ হবে দিয়া।প্লিজ চলে যা।”

“কেনো নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন?কার জন্য বিহান ভাই।কেনো আপনি খাবার খান না কেনো লেখাপড়া ছেড়ে দিবেন।”

“আমাকে কোনো প্রশ্ন করিস না প্লিজ।আমি কোনো উত্তর দিতে পারবো না।”

“বিহান ভাই প্লিজ সরি।আপনি আর নিজেকে এভাবে কষ্ট দিবেন না প্লিজ।আমি সহ্য করতে পারছি না এভাবে।আমাকে বকুন মারুন যা ইচ্ছা করুন। ”

“কেনো কষ্ট দিবো না।”

“আমার জন্য। ”

বিহান ভাই আমার কথাটা শুনে করূণ দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।বেদনাভরা ক্রান্ত মন নিয়ে বললেন,,

“কেনো তোকে ছাড়া আমার কষ্ট হয় দিয়া।আমার মনে কি আছে দিয়া তোর জন্য।তুই তো মনের ব্যাপার ভালো বুঝিস।আমি তো এগুলা বুঝি না তাহলে আমার মনে কি আছে কেনো তুই বুঝিস না।কেনো তোকে বিরক্ত করার অভাবে আমি শূন্য হয়ে যাচ্ছি।কেনো তোকে আর বকতে পারি না।হুয়াই দিয়া।তোর চলে যাওয়ায় ভেতরের আমিকে হারিয়ে ফেলেছি দিয়া।কেনো আমাকে এই ভয়ানক মায়াতে জড়ালি দিয়া।কেনো এমন করলি কেনোই বা ফিরিয়ে দিলি আমায়।”

“পৃথিবীতে প্রিয়জনের চোখের পানির থেকে ভয়ংকর যন্ত্রণা বোধহয় আর অন্য কিছুতে নেই।বিহান ভাই এর চোখে পানি দেখে ছুটে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,, আপনাকে ভালবাসি আমি বিহান ভাই।নিজের সব ইগো সব মন অভিমান লজ্জা দূরে সরিয়ে উনার কপালে আরেকবার চুমু একে দিলাম।বাইরে বিদ্যুতের ডাক,ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এক প্রেমময় বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা।যে সন্ধ্যায় বিহান ভাই আমাকে আলিঙ্গন করেছিলেন উনার বাহুতে।এই বৃষ্টিময় ঝলমল সন্ধ্যায় বিহান ভাই এর ওষ্ট আমার ওষ্টে আলতো ভাবে নেমেছিল।বিহান ভাই আমাকে উনার বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,আজকের সন্ধ্যা তোমার নামে নেমেছে দিয়া।আজকের বৃষ্টি তোমার আগমনের জন্য ছিলো।তুমি বৃষ্টি বিলাসী বলেই এই বৃষ্টিতে তোমাকে পেলাম।আই লাভ ইউ দিয়া।এই প্রথমবার উনার মাঝে এমন কিছু দেখলাম।”

“কাঁদতে কাঁদতে বললাম কেনো নিজেকে এত কষ্ট দিয়েছেন আপনি?”

“তুমিও যে এতটায় কষ্ট পেয়েছো এতদিন।”

“কেনো বলেন নি ভালবাসেন আমায়।?”

“ভালবাসা কি বলে হয়।এটা হৃদয়তান্ত্রিকব্যাপার।আমি জানতাম তোমার মন আমার মনে আবদ্ধ হবেই।এটা তো হওয়ার ই ছিলো।”

“আপনি কি আজ প্রথম বার এটা বুঝলেন, যে আমাকে ভালবাসেন”

“এর আগেও এক বৃষ্টি স্নাত সন্ধ্যায় আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম।আমি তখন জানতাম বা প্রেম কি।তখন আমি বুঝতাম না কিভাবে হুট করেই একটা মানুষ আরেক টা মানুষের প্রেমে পড়তে পারে।সেটা প্রেম ছিলো কিনা জানিনা।তবে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম সেদিন আমি।এমন এক সন্ধ্যায় তুমি একটা কচু পাতা মাথায় দিয়ে ভিজতে ভিজতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলে।বৃষ্টিতে নাচছিলে খুব।বৃষ্টি কন্যার রূপে,ভেজা চুলে, চোখে মুখে পানির ফোটায় ভীষণ মুগ্ধ লাগছিলো তোমায়।ভীষণ জোরে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরেছিলে।তোমার ঠাঁই সেদিন আমার বুকে হয়েছিলো।হঠাত অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করেছিলো আমার মাঝে।
আমি তো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছি তোমার প্রেমে
গেলো বহুদিন বহুবছর বহুযুগ তবু সেই কি ভীষণ মোহমায়া তোমার প্রতি আমার না রইলো থেমে।ঢেউয়ের ন্যায় স্ফিত হয়ে অমাবস্যা পূর্ণিমা তিথি অসংখ্য পেরিয়ে সেই তো তোমার ই টান
হলোনা পাওয়া মুক্তি সে মরণদশা হতে যে সুক্ষ্ম মায়ায় তুমি তোমার প্রতিই আমায় ফেরালে বারবার।”

“দীর্ঘ সময় পরে বললাম,ছাড়ুন এবার মামি এসে দেখে ফেলবে।কি ভাববে বলুন তো ছিঃলজ্জার ব্যাপার।”

“আম্মু এমন প্রাইভেট টাইমে ঢুকবে না।বুঝবে ছেলে তার হবু বউমা কে নিয়ে বিজি আছে।”

“মামি এসে যদি বলে হঠাত জ্বর কমে গেলো কিভাবে কি বলবেন?”

“বলবো দিয়া চুমু দিয়েছিলো।বেষ্ট মেডিসিন ছিলো আম্মু।দিয়াকে বলো আরেকবার চুমু দিতে।”

‘মামি আমাকে এ বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিবে।”

“কেউ কিছু বললে সোজা বিয়ে করে ফেলবো।আম্মু জানে তার ছেলে যেটা বলবে ওইটায় করবে।”

“হয়েছে ছাড়ুন এবার।আপনাকে খাবার খেতে হবে এখন।আমি খাবার আনতে যচ্ছি।”

“খেতে পারি এক শর্তে। ”

“কি শর্ত।”

“এই কচি পুচকি হাতে খাইয়ে দিতে হবে” কিন্তু।

“মিষ্টি হেসে সম্মতি জানালাম।”

আমি রান্নাঘরের দিকে রওনা হতেই বিহান ভাই হাত টেনে ধরে বলেন এক মিনিট দিয়া,

উনার কথায় দাঁড়িয়ে গেলাম আমি।

আলমারি খুলে কি বের করছিলেন জানিনা।কিছু একটা খুজছিলেন।

“হঠাত সারপ্রাইজিং ভাবে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন।আমার হাত টা ধরে হাতে একটা চুমু দিয়ে বলেন,এই রাগী ছেলেটার বউ হবি।অন্যদের মতো সময় রোমান্টিক মুডে থাকতে পারবো না।খুব রাগাবো,খুব জ্বালাবি গ্রহন করবি আমায়।”

হেসে দিয়ে বললাম এই রাগি ছেলেকেই ভাল লাগে আমার।

“বিহান ভাই হাতে সাদা দুইটা চিকন গোল রুপার রিং পরিয়ে দিলেন।তোর না এইগুলা পছন্দ। অনেক দিন আগেই বানিয়েছিলাম দেওয়া হয় নি।এক গুচ্ছ কাঁচের চুড়ি এগিয়ে দিয়ে বলেন চুড়ি খুব ভালবাসিস তাইনা।পায়ে একটা পায়েল পরিয়ে বলেন, পায়েল ও খুব ভালবাসিস তাইনা।”

আমার সব ভাল লাগা গুলো জায়গা করে গিফট দিলেন আমাকে।আমি জাস্ট মুগ্ধ।

“হাসতে হাসতে বললেন আম্মুর বউমা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীকে আম্মুর ছেলের জীবনে ওয়েলকাম।!এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা সাক্ষী থাকলো আমাদের ভালবাসার পিচ্চি”

চলবে,,#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৫.
#WriterঃMousumi_Akter

“সন্ধ্যার রেশ কেটে খানিক টা রাত হয়েছে, বৃষ্টি এখনো কমে নি,বাইরে প্রবল বেগে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।জানালার পর্দা ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটা রুমের এসে প্রবেশ করছে।বিহান ভাই জানালার পর্দা সরিয়ে বৃষ্টির হাওয়া লাগাচ্ছেন গায়ে আর হালকা শীতে কাঁপছেন।”

“আমি রান্নাঘর থেকে খাবার এনে বিহান ভাই কে খাইয়ে দিলাম।লক্ষি ছেলের মতো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে খাবার খেয়ে নিলো।খাওয়ানোর সময় বললাম,,ডাক্তারী তো আর পড়ছেন না তাইনা।যাক ভালোই হবে বাড়িতে থাকবেন আর কাজিনকুলের সর্বনাশ করবেন।পই পই করে হিসাব রাখবেন কে কাকে কি কমেন্ট করছে, কে কাকে লাভ লেটার দিচ্ছে।”

“ডাক্তারি না পড়লে তোর হার্ট এর চিকিৎসা কিভাবে করবো শুনি।তোর হার্ট ঠিক রাখতে পড়তেই হবে।যে হার্টে বিহানের বসবাস সে হার্ট আমাকে দেখতে হবে।”

“কিছুক্ষণের মাঝেই মামি আর বিভোর ভাই ছাতা মাথায় দিয়ে ভিজতে ভিজতে প্রবেশ করলেন।মামি বিভোর ভাই কে বলেন,বিভোর শুনে দেখ তো ওষুধ খাবে কিনা।না খেলে আমি এক্ষুণি যেদিকে মন চাই চলে যাবো।বলেই আমি ওষুধ গুলো বিছানার উপর ফেলে কাপড় চেঞ্জ করতে গেলেন।”

“বিভোর ভাই এর প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত ভাজ করে রাখা, মনে হয় বৃষ্টি জন্যই।পরনে লাল গেঞ্জি।মাথা ভিজে গিয়েছে।টাওয়াল নিয়ে মুছতে মুছতে বলেন বিহান কাকি মনিকে আর প্রেসার দিস না।তুই এসব কি শুরু করেছিস। কাকিমনি আজ অনেক কেঁদেছে।”

“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,মেডিসিন কিছুক্ষণ আগেই খেয়েছি।কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন।কি দিয়া বিভোর কে বল তুই আমাকে মেডিসিন খাইয়েছিস না।না হলে আমি এতটা সুস্থ কিভাবে।”

“এই ফাজিল বেটার কথা শুনে লজ্জা যা লাগছে।না জানি বিভোর ভাই কিছু বুঝে যান কিনা।এমনি তেই ক বললে কলকাতা বুঝে যান।এখন কি ভাবছেন তা কি জানি।”

“বিভোর ভাই বলেন,সিরিয়াসলি দিয়া তোকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে আর তুই ভদ্র ছেলের মতো খেয়েছিস।দিয়ার গালে তোর হাতের আঙুলের দাগ দেখছি না যে ব্যপার টা কি?”

“থাপ্পড় দুই একটা মারতাম অন্য কেস হলে।বাট মেডিসিন খাওয়ার সময় অনেক ভাল লাগছিলো।বিভোর আমাদের দিয়া কিন্তু অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।মুরব্বি দের যত্ন করে মেডিসিন খাওয়ানো শিখে গিয়েছে।দিয়ার এবার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে বিভোর।”

“তুই তো দিয়ার ভাই তুই একটা ছেলে দেখ তাহলে দিয়ার জন্য।”

“সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলেন বিহান ভাই কোন জন্মের ভাই আমি।”

“ফুপ্পির জন্মের ভাই?”

“ও ফুপ্পির মেয়ে কেমনে চেহারার মিল নেই।ফুপ্পির মেয়ে হচ্ছিলো না বলে দত্তক নিয়েছিলো দিয়াকে।”

“দুঃখি দুঃখি মন নিয়ে বললাম, দেখেছেন বিভোর ভাই। আমাকে নাকি দত্তক নেওয়া।আপনি কিছু বলছেন না কেনো?”

বিভোর ভাই বললেন,”আরে দিয়া শোন বিহান কে অভিশাপ দিলাম,ওয়েট দিচ্ছি অং পং সং চিচুম্মুরা ফুউউউ।মহা অভিশাপ দিলাম।। দত্তক নেওয়া কোনো মহিলা বিহানের বউ হবে।”

বিভোর ভাই এর মন্ত্র শুনে জোরে হেসে দিলাম।

“বিহান ভাই বললেন,এইভাবে মহিলাদের পটাচ্ছিস তাইনা বিভোর।ভন্ড বাবা সেজে মহিলাদের পটাচ্ছিস।কিছু মহিলার বাচ্চা কাচ্চা হচ্ছে না।আমার কাছে এইজন্য তাহলে জিজ্ঞেস করছিলো কবিরাজ মন্ত্র পড়ে ফু দেওয়া বিভোর বাবা কোথায়?আমি বললাম বিভোর কিসের কবিরাজ।একজন মহিলা বললেন,,তার বাড়ির পাশের চার জন মহিলার তোর মন্ত্র আর ফু নিয়ে বাচ্চা হয়েছে।এর সাক্ষি রিয়া বিলিভ না হলে রিয়াকে জিজ্ঞেস করতে পারিস।একচুয়ালি তোর চেম্বার টা কোথায়?ব্রিজের পাশে যে বকুল গাছ টা ওইখানে নাকি বিভোর।বলেই বিহান ভাই বাকা একটা হাসি দিলেন।”

“হ্যাঁ বিহান পুরুষদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়।মহিলাদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ হিসাবে পুরুষ জাতিও কিছুটা দায়ী।তাই ভাবছি আর কত কাল ফু দিবো। আসলে ট্রিটমেন্ট পুরুষ দের করা উচিত।”

“বিহান ভাই আবার ও ভ্রু কুচকে বললেন, আচ্ছা এইগুলা নিয়ে রিসার্চ শুরু করেছিস।আমার তো মনে হচ্ছে মারাত্মক সমস্যা তোর।নিজেই এই মহা রুগি তুই।এই জন্য যুব সমাজের সেবা করছিস।মহান তুই বিভোর।ইয়াং ছেলেদের ফিউচার নিয়ে ভাবছিস। নিজে যে ভুক্তভোগী তুই। আসলে চাইছিস না সব ছেলেরা এসব সমস্যা ফেস করুক।অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছিস। ”

“না বিহান আমার মনে হয় আমাদের কাজিন সব গুলার এই সমস্যা আছে?বিশেষ করে তুই? তুই এত বদমেজাজী খিটখিটে কি আর এমনি এমনি।তোর চিকিৎসা আগে করবো। ”

আমি বোকার মতো তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,’আচ্ছা কিসের কথা বলছেন বিভোর ভাই?’

“বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,তোর বিভোর ভাই কিসের কবিরাজ হয়েছে সেটা ওকে ডিরেক্ট বলতে পারছি না।দিয়া কুইক বাইরে যা তো।”

“না আমি যাবো না। যা বলার আমার সামনেই বলতে হবে। ”

“যাবি নাকি সেই গান শুনাবো?বিভোর কে বলে দিবো কি গান শুনিস তুই?”

“খানিক টা চোখ রাঙিয়ে বেরিয়ে গেলাম।মানুষ এতটাও অসভ্য হতে পারে জানা ছিলো না।সানি লিওনির পেজে একটা কমেন্ট করেছিলাম।সেদিন আমাকে অসভ্য কিছু সাজেস্ট করেছিলেন।আর সেখান থেকে বলেন আমি নাকি তার গান পছন্দ করি।কথায় কথায় ব্লাকমেইল করে আমি তার গান শুনবো কিনা?আজ বিভোর ভাই ছিলো বলে নইলে খবর ছিলো।এখন আর আমি ভয় পাই না।কারণ এখন উনি আমার বয়ফ্রেন্ড।কিন্তু কি নিয়ে গবেষনা করছেন আমাকে শুনতেই হবে ব্যাপার টা।”

বাইরে থেকে দরজায় কান লাগিয়ে রইলাম।কি নিয়ে দুজনে এত হাসছে জানিনা।শুধু হাসির আওয়াজ ই ভেষে আসছে।

“বিভোর ভাই বললেন,বিহান তুই তো আমার মান সম্মান কিছুই রাখবি না।তুই যে এত ফাজিল দিয়া জানলে হার্ট এট্যাক করবে।”

“দিয়া পিচ্চি মানুষ এগুলা বিশ্লেষণ করে বুঝালেও বুঝবে না।ওর বোঝার বয়স ই হয় নি।এনি ওয়ে দিয়ার কানে যেনো ভুলেও এগুলা যায় না।”

“দিয়া আমার বোন এ কারনে বেঁচে গেলি। নইলে রিয়া বা তোহা বা মেহু হলে না বলে ছাড়তাম না।”

এমন সময় দরজাটা টান দিলেন বিহান ভাই।হুমড়ি খেয়ে গিয়ে উনার গায়ের উপর পড়লাম আমি।ইস! কি লজ্জাটায় না পেলাম আমি।বিহান ভাই আর বিভোর ভাই কি ভাবছেন।বিহান ভাই এর শরীরের উপর থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম আমি। বিহান ভাই ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।বিভোর ভাই মিটমিট করে হাসছেন সিসুয়েশন টা দেখে।কি একটা অবস্থা কি করবো সেটাই বুঝতে পারছি না।

-বিহান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বলেন,”কিছু শুনেছিস।”

-দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললাম কি?

-কিছু শুনেছিস তুই।

-নাতো।

-ফুপ্পির কাছে নালিস না দিলে হচ্ছে না।উঁকি ঝুকি মারা অভ্যাস হয়েছে।এগুলা ভাল লক্ষণ না।

-দেখুন আমি এ রুমেই আসছিলাম আপনি তখন ই দরজা খুলেছেন আর আমি পড়ে গিয়েছি।

-৫ মিনিট আগে না তুই এখান থেকে বেরোলি।

-এমন সময় মামি প্রবেশ করলেন।মামি বললেন,দিয়া শুনে দেখ তো বিহানের সমস্যা কি?

বিহান ভাই মামিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,থ্যাংক্স আম্মু।আর রাগ রাগ করো না প্লিজ।তুমি না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।তোমার ছেলের আপাতত আর কোনো সমস্যা নেই।প্লিজ রাগ করো না।মামি বললেন,থাক হয়েছে জ্বর তো আবার এসছে বিহান।

আম্মু এতটুক জ্বরে কিছুই হবে না চিন্তা করো নাতো।
________________________________

পরের দিন দুপুরে আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকছে।খাবো নাহ বলে জিদ ধরলাম।আমরা দুই ভাই বোন আম্মুকে যে পরিমান খাওয়া নিয়ে বিরক্ত করি আম্মু খুব ই বিরক্ত এটা নিয়ে।বাসায় আমার সাপোর্ট এ ভাইয়া আর বাবা।কোনো রকম ঝোল তরকারী, মাছ এগুলা আমি খায় না।ইলিশ মাছ আর চিংড়ি হইলে কথা নেই।আম্মু সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে খায় তবুও আলি ভাজি বা ডিম ভাজি নইলে মাংস।এর বাইরে কিছু হলে আমি খায় না।ভাইয়া আর রিয়া সব কিছুই খায়,ওরা খাচ্ছে আর আমি টিভি গে মটু পাতলু দেখছি।আম্মু বাজ খাই গলায় চেচামেচি করেই যাচ্ছে আমি কানে তুলা গুজে টিভি দেখছি।আম্মু এসে রিমোট দিয়ে টিভি টা অফ করে দিয়ে বললো,আজ থেকে আলু ভাজি আর ডিম ভাজি খাওয়া বন্ধ।এখন থেকে সব কিছু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে তোর।আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম সরি আম্মু সারাজীবন না খেয়ে থাকলেও আমি এগুলা খেতে পারবো না।এগুলা খেলে আমার বমি আসে ওয়াক।আম্মু রেগে গিয়ে বললো তোকে না কতদিন নিষেধ করেছি হুট হাট মাছ খেলে বমি আসে এগুলা বলবি না।মানুষ শুনলে কি ভাববে।

কি ভাববে আম্মু।

তোর জাতের কোনদিন বোধবুদ্ধি ছিল না আর৷হবেও না।মানুষ এর মুখ এ কিছু আটকায় নাকি ভাববে কোথায় কি অকাম করেছিস।

বুঝলাম না মানুষের কি খেয়ে কাজ নেই।এগুলা আজব ব্যাপার স্যাপার কিভাবে ভাবে।

এমন সময় ভাইয়া এসে বলে, আম্মু আমাদের জাত নিয়ে কিছুই বলবা না। আমরা হলাম খানদানী।জাতের একটা দাম আছে।

তুই আর তোর বোন জীবনেও বোধ বুদ্ধি হবে না।দিয়াকে বল,ওর আর ভাজিভুজি খাওয়া হবে না।এখন থেকে তরকারী খেতে হবে।

ভাইয়া আমাকে ফিস ফিস করে বললো,দিয়া আম্মু আজ এত ক্ষেপেছে কেনো?তুই না খেলে আমাদের টোটাল খাওয়া অফ করে দিবে।

ভাইয়া কে বললাম ভাইয়া চলো আমরা এতিম খানায় চলে যায়।দুই ভাই বোন হাসাহাসি করলাম।

________________________________

Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii RaaTh

Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii

ভাইয়ার বক্সে গান চালিয়ে কোকাকোলা হাতে নিয়ে উরাধুরা ডান্স করছি।এমন একটা ভাব নিয়ে আছি যেনো নেশাক্ত আমি।আসলে অভিনয় করে ডান্স করছিলাম।

যাবতীয় সব পিনিক এর এক্টিং মহা দুঃখে পরিনত হলো।

তাকিয়ে দেখি বিরক্তি নিয়ে দরজায় প্যান্টের পকেটে হাত গুজে ঠাই দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।কপালে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট তার।

বুঝলাম কপালে এখন কিছু আছে।হায়রে আমার আনন্দের ডান্স।এখন কি হবে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৬.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই কে দেখে রিতীমতো ভড়কে গেলাম আমি।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি রিয়া,তোহা আপু আর মেহু কেউ নেই।কোথায় ওরা?এক সাথেই তো নাচ গান করছিলাম।আমাকে এই রাক্ষস মানব এর সামনে রেখে কোথায় বেপাত্তা হয়ে গেলো ডায়নির দল।নিশ্চয়ই আগে থেকে ওরা বিহান ভাই কে দেখে পালিয়েছে।

বিহান ভাই এর পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখি,, কালো জিন্স পরা,কফি কালার এর শার্ট বরাবর যেমন থাকে উনার শার্টের হাতা গোটানো।উনার পায়ের নখ গুলো এত সুন্দর, ধবধবে সাদা, হাতের নখ গুলো ও যেনো বিধাতা নিজ হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে উনাকে তৈরি করেছেন।উনার এই বিক্ষিপ্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে দেখা দেখে মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।চোখ বড় বড় করে আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কোথাও কিছু নেই।না মানে আমার ওড়না খুজছিলাম।সেটা কোথায় রেখেছি তাই ই জানিনা আমি।বাসার মধ্য খুব একটা ওড়নার খোজ খবর রাখা হয় না আমার।তবে বাইরে গেলে ভদ্র ভাবে শিষ্টতার সাথেই যায়।এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও ওড়না খুজে পেলাম না আমি।ভাইয়ার রুম দ্রুত গিয়ে ভাইয়ার টাওয়াল আলনা থেকে নিয়ে কোনো রকম গায়ে পেচিয়ে বললাম,কি ব্যাপার কি বিহান ভাই?এভাবে হুট হাট মেয়েদের রুমে প্রবেশ করেন একটা কাশি দিয়ে আসবেন না।

“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন,এটা কি মহিলাদের রুম।আমি তো জানি এটা শুভর রুম।এখানে আসতে গেলেও কাশি দিয়ে আসতে হবে।আর কাশি দিয়ে আসবো কেনো?চৌদ্দ গুষ্টির মতো ধান্দাবাজ হয়েছিস তাইনা?”

ব্যাস এই যে আবার শুরু হয়েছে তার গুষ্টিসহ উদ্ধার করা।

“কেনো বিহান ভাই ধান্দবাজির কি হলো।”

“আমাকে কাশি দিতে বলছিস যাতে সবাই কে বলতে পারিস আমি যক্ষা রুগি।তোর চাচাতো বোন মালিহা সহজ সরল ছেলেটা আমির এর সাথে যে ধান্দাবাজি টাই না করলো তোদের নামে তো মামলা দেওয়া উচিত। ”

এমন সময় সুর সুর করতে করতে মেহু,তোহা আপু আর রিয়ার আগমন ঘটলো।আমি ওদের দিকে ক্ষীপ্ত নয়নে তাকিয়ে বললাম,তোমরা কোথায় গিয়েছিলে।

“তোহা আপু বললো,ওয়াশ রুম ওয়াশ রুম গেছিলাম।”

“তিন জনে এক সাথে।”

“মেহু আপু বললো,হ্যাঁ এক সাথেই?”

রাগে আর ওদের কিছু বললাম না।মনে মনে বললাম পরে দেখে নিবো।

বিহান ভাই কে আবার প্রশ্ন করলাম,’বিহান ভাই কিসের মামলা দেওয়া উচিত শুনি।’

‘তোর বোন মালিহা তো বিশ্ব সেলিব্রিটিদের মাঝে একজন।সব খবর ই আমার কানে পৌছায়।আমির কে ভোলাভালা পেয়ে নিজে প্রপোজ দিয়ে রিলেশন করেছে।আর তোরা গুষ্টি সহ রেগুলার রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়েছিস।বংশেও খান খাওয়া ছাড়া কিছুই বুঝিস না।শুধু মাত্র খাওয়ার জন্য সাদাসিধা ছেলেদের সাথে ভোলায়ে ভালায়ে প্রেম করিস।ব্রেকাপের সময়ে মালিহা বলেছে আমির নাকি মৃগে রুগি।সিরিয়াসলি এটা কোনো কারণ হলো ব্রেকাপের।’

‘এর জন্য আপনি মামলা দিতে বলবেন?’

‘অবশ্যই তুই এখন ধন্দাবাজি করছিস আমাকে কাশি দিতে বলে।ব্রেকাপের বাহানা যক্ষা রুগি প্রমান করে তাইনা ধান্দাবাজ ভয়ংকর মহিলা।’

‘আপনি যেভাবে আমাকে ভয়ংকর ভয়ংকর করছেন মনে হচ্ছে আমার মুখ দেখতে পেত্নিদের মতো।’

‘যাক ফাইনালি একটা সত্য কথা বললি।’

মেহু আপু বললো,’ইয়ে বিহান ভাই দিয়া কি আপনার গফ যে যক্ষা রুগি প্রমান করে ব্রকাপ করবে।’

‘ওই মানে একই কথা আমার শ্বশুরের মেয়ের কথা বলছি আরকি?দেখা গেলো এই ধান্দাবাজি শ্বশুরের মেয়ে ও করলো।’

‘করলে কি করবেন তখন?’

‘দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে,এক পায়ে চার দিন দাঁড়িয়ে রেখে তারপর বিয়ে করবো।বিয়ে করে রোজ পা টেপাবো।’

‘বাহ বিহান ভাই এমন একটা জামাই দিয়ার জন্য খুজেন।দিয়া খুব ভাল পা টিপতে পারে।’

হেসে দিয়ে বললাম,’বিহান ভাই তোহা আপু আপনার পা টিপতে রাজি আছে।আপনি বরং তোহা আপুকেই দায়িত্ব টা দিন।’

‘ছিঃতোহা আমার সিনিয়র হয় হিসাব মেলাতে গেলে।তোহা কে আমার সম্মান করা উচিত।”

উনার কথার এই কঠিন মানে এরা তো কেউ বুঝবেই না।যা বুঝার আমি একাই বুঝছি।বিহান ভাই কে বললাম,সুর সুর করতে করতে রুমে প্রবেশ করেছেন কিছু দেখেন নি তো।

“বিহান ভাই মেহু আপু আর রিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন।উনার মনে হয় মারাত্মক প্রেজটিজে লেগেছে ব্যাপার টা।”

“দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আমাকে কি চরিত্রহীন ভাবিস।বেয়াদব মহিলা একটা।”

এর ই মাঝে রিয়া বললো,”বিহান ভাই আপনার পায়ে কার স্যান্ডেল।”

তাকিয়ে দেখি আমার অন লাইন থেকে অর্ডার করা শখের স্যান্ডেল উনার পায়ে।ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম,”আপনি আমার ঘরে পরা স্যান্ডেল পরেছেন।”

“কি করবো দেখে ভাল লাগলো,স্যান্ডেলে পুতুল টুতুল দেওয়া বাচ্চাদের খেলনা ভেবে পায়ে পরেছি।”

“খুলুন বলছি এক্ষুণি খুলুন।আমার পায়ে বড় হয়ে যাবে।”

“কেনো?এটা আয়রার খেলনা না।”

“খুলুন আগে।”

এটা তো খুলবোই না, ‘তোরা আসলে কি করছিলি? এই রুমে।’

‘পার্টি। ফিউচারে উনার সাথে এইভাবে ডান্স করতে চাই।তার ই প্রাকটিস চলছে’

“বাহ!নাইস তো।তা জিন্স পরে।এইজন্য প্যান্টের দাম এত বেড়েছে।প্যান্টের দাম তো এত হওয়ার কথা নয়।তোরা মেয়েরা জিন্স কিনে কিনে জিন্সের দাম বাড়াইয়া ফেলছিস।পায়ে কালো সুতা গায়ে টি শার্ট।এখন জিন্স পরতেই লজ্জা লাগে মেয়েদের জন্য।”

“দেখুন এগুলা লেডিস জিন্স,টি-শার্ট ও লেডিস।সো এগুলা মেয়েদের ড্রেস।”

“পুরুষ জাতীয় প্লাজু,গাউন,লেগিন্স এগুলা তো আজ ও দেখলাম নাহ।সব জায়গা নারীরা সুবিধা পাচ্ছে বেশী করে।”

ভাইয়ার ড্রেসিন টেবিলের উপরে রাখা ডায়রির মাঝে একটা চিঠি খুজে পেলো বিহান ভাই।

প্রিয় শুভ ভাইয়া,
জান,পরাণ,বাবু,বেবি টা চিঠিটা পড়া শুনেই বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে পড়লাম আমরা।বিহান ভাই এতটুকু পড়েই থেমে গিয়ে বললেন,হাতের লেখা টা চেনা চেনা লাগছে। মেহু দেখো তো চিনো কিনা?রিয়া বললো দেখি বিহান ভাই কে চিঠি লিখেছে বাকিটা পড়ি।মেহু আপু রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ ভাইয়ের চিঠি আমাদের না দেখায় ঠিক হবে তাইনা বিহান ভাই।বিহান ভাই মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ কে দেখি প্রায় কার ছাতার নিচ দিয়ে যেনো যায়।প্রুভ আছে আমার কাছে।মেহু আপু বললো,বিহান ভাই শুভ ভাই কি তাহলে অশুভ হয়ে গিয়েছে।আজকাল এগুলা করছে।বিহান ভাই খুব ই সন্দিহান ভাবে বললো,আসলেই মেহু তুমি তো এগুলা জানো না তাইনা?..তোহা আপু আড়মোড়া ভেঙে বললো একজন ডাক্তারের সাথে প্রেম করার ইচ্ছা আজ ও পূরণ হলো না আমার।এদিকে সবাই প্রেম করে আমি শুধু দেখি।বিহান ভাই তোহা আপুকে বললেন,টিকটক থেকে একজন নায়ক কে খুজে নাও তোহা।ডাক্তার এর থেকে ওরাই বেটার হবে টিকটক করতে করতে পাগল হয়ে গেলে তখন ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট নিও।তোহা আপুর মুখ টা চুপসে গেলো কারণ তার ক্রাশ বয় বিহান ভাই।

বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,আমার যে গেঞ্জি গুলা পুড়িয়ে ফেলছিস ওগুলার টাকা দিবি কবে।হয় টাকা দিবি নইলে দশ মিনিট পা টিপে দিবি।

ওহ মাই গড!উনি গেঞ্জির সেই পোড়া গুলা কখন দেখলেন।বিরক্ত হয়ে বললাম আপনি এখন যান পা একদিন টিপে দিবো।

বিহান ভাই যাওয়ার সময় একটা মেসেজ করলেন।ফোনে মেসেজের সাইন্ড হতেই ফোনের দিকে দেখি উনার মেসেজ,,

Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii RaaTh

Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii.

পিচ্চি তোমার সাথে একদিন এভাবেই সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটাতে চাই।তোমার এই লুকে তোমাকে এতটাই সুন্দর লাগতে হলো কেনো?আমি জাস্ট চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।এইজন্য ইনিয়ে বিনিয়ে তোমাকে দেখার বাহানায় কত কথা বললাম দেখলে।এই আমি এখানে মন তোমার ওখানে।কেউ জিন্স পরলেও এত সুন্দর লাগে বুঝি।আমাকে সর্বনাশের দিকে নেওয়ার বাহানা সব তাইনা।

মেসেজ টা পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে উনার কথায় ভাবতে শুরু করলাম আমি।

_________________________

পরের দিন আমাদের শহর থেকে দূরে একটু গ্রাম্য এলাকায় বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছি আমরা। কাজিন রা সবাই মিলে একটা টেবিলে বসেছি গোল হয়ে।খাবার সার্ফ করার সময় একটা ছেলে বার বার আমার সাথেই ভাব নিচ্ছিলো।ব্যাপার টা বিহান ভাই এর ভাল লাগছিলো না।ইচ্ছাকৃত অনেক মাংশ দিচ্ছিলো আমার প্লেটে।বিহান ভাই বিভোর ভাই তিয়াস ভাই শুভ মিলে কি প্লান করলো তা জানিনা।হুট করেই প্রচুর খাওয়া শুরু করলো তারা।এত পরিমান খাচ্ছিলো দিয়েই পারছিলো না।বিহান ভাই এক পিস মাংশের বেশী খায় না।সেখানে এত খাচ্ছেন।খেতে খেতে এক সময় সার্ফ করা ছেলেটি ক্লান্ত।মানুষ এত খায় কেমনে।জীবনে কি এদের আর দাওয়াত দিবে।

হাত ধোয়ার জন্য টিউবয়েল এ গেলাম।ভীড় দেখে অন্য রাস্তা দেখলাম।পাশেই একটা পুকুর দেখে পুকুরে হাত ধুতে গেলাম
হাত ধুতে গেলেই পানিতে পড়ে গেলাম।

বিহান ভাই আমার দিকে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন।এর মানে তুই পুকুরে এসছিস কেনো?চারদিকের মানুষ কি বিশ্রি ভাবে তাকিয়ে হাসছিলো।ইজ্জত যা ছিলো সব শেষ।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here