এক মুঠো প্রেম পর্ব -ধামাকা পর্ব

#এক_মুঠো_প্রেম
#Writer_Mahfuza_Akter
💖ধামাকা পর্ব💖

“নিজের বোনের বান্ধবীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত রকস্টার প্রণব মেহরাজ! নিজের বাড়ির ভেতরেই চলছে তাদের অবৈবাহিক জীবনযাপন। রাত-দিন বিভিন্ন প্রহরে তাদের একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। নিচের ছবি গুলোই তার প্রমাণ। অতএব, প্রণব মেহরাজ ও উল্লেখিত মেয়েটির মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে আমরা অনেকটাই নিশ্চিত।”

টিভির পর্দায় সাংবাদিকের বক্তব্যগুলো শুনে স্পৃহার পদতল শূন্য হয়ে যাচ্ছে যেন! ছবিগুলো দেখে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে উঠছে। সেগুলোতে তো কোনো অশ্লীলতা নেই। কিন্তু উপস্থাপন ও বক্তব্যের জন্য সবার দৃষ্টিতে খুবই বাজে ঠেকছে বিষয়টা। সেদিন রাতে রাস্তায় আটকে যাওয়ার পর যে ছোট দোকান স্পৃহা আর প্রণব ডিনার করেছিল, সেই সময়ের একটা ছবি সবচেয়ে বেশি হাইলাইট করা হয়েছে। আর বাকিগুলো গাড়িতে থাকাকালীন আর প্রণবের বাড়ির সামনে দাড়ানো অবস্থায় ও ভেতরে প্রবেশ করার সময় তোলা হয়েছে। তাদের দুজনকে অনেকদিন যাবৎ অনুসরণ করে ছবিগুলো তোলা হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

মিস্টার চৌধুরী পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে হতাশার নিঃশ্বাস ফেললেন। ছবিগুলো দেখে রাগত কন্ঠে বললেন,

-এই আজেবাজে নিউজ বানানোর সাহস কী করে হলো এদের? একসাথে দেখলেই কি সম্পর্ক হয়ে গেল নাকি?

মিসেস মেহরীন বিমর্ষ কন্ঠে বললেন,

-অনেকবার, অনেক জায়গায় ওদের একসাথে দেখেছে। সেজন্যই তো এতো সাজিয়ে গুছিয়ে খবর বানিয়েছে। এখন তো সারাদেশেই এটা প্রচার হয়ে গেছে! কী যে হবে এখন?

স্পৃহার চোখ পানিতে টলমল করছে। চরিত্রহীনার পরিচিতি পাওয়াটাই কি বাকি ছিল তাহলে? ভাবতেই নিজেকে সবদিক থেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছে। এ বাড়িতে থাকাটাই তার ভুল ছিল। এখানে না আসলে প্রণবের সাথে পরিচয় হতো না আর না আজ গোটা দেশ তার প্রতি আঙুল তুলে চরিত্রহীন বলে সম্বোধন করত!

-এই দিন দেখাটা-ই বাকি ছিল তাহলে! সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলাম। আজ তার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে!

স্পৃহার কান্নামাখা কথাগুলো শুনে সবাই ওর দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। প্রান্তি ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

-কাঁদিস না, ইয়ার! তুই তো এখানে একা নেই। বিষয়টার সাথে ভাইয়াও জড়িত। দেখিস, সব ঠিক হয়ে যাবে।

আনিলা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,

-কিন্তু প্রান্তি, আমরা যত যা-ই বলি না কেন! দোষটা সম্পূর্ণ স্পৃহার ওপর গিয়ে-ই পড়বে। তুমি তো জানো আমাদের সমাজ সম্পর্কে। আমাদের সমাজের দৃষ্টিতে মেয়েরা-ই সবসময় অপরাধী সাব্যস্ত হয়।

-সব মেয়ে আর আমার মিসেস নিস্তব্ধতা তো আর এক নয়, আনিলা। মানুষটা আমার। আর যা আমার, তা একান্তই আমার। আমার জিনিসকে অপরাধী সাব্যস্ত করা তো বহুদূর, চোখ তুলে তাকালেই এই প্রণব মেহরাজ চৌধুরীর অগ্নিরূপ দেখতে হবে।

গাম্ভীর্য পূর্ণ বাক্য স্রোত কানে ভেসে আসতেই সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। হাতে ঘড়ি লাগাতে লাগাতে প্রণব সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। চোখ মুখ আজ অস্বাভাবিক ভাবে রক্তিমা পূর্ণ। মুখশ্রীর দিকে তাকালেই কেমন যেন ভয়ংকর লাগছে ওকে। প্রণবের সম্পূর্ণ অবয়ব দৃষ্টিগোচর হতেই ওর বলা কথা গুলো সবার মস্তিষ্কে আর ধরা খেল না। ওর রাগী ভাবভঙ্গি দেখেই সবাই খানিকটা থমকে গেল। প্রান্তি কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো। প্রণবকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও ওর রাগ সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা আছে। আর আজকে যা ঘটেছে, এরপর প্রণব নিজের রাগকে একদম-ই নিয়ন্ত্রণে রাখবে না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত-ই বলা যায়।

প্রণব স্যুটের হাতাটা কনুইয়ের কিছুটা নিচ পর্যন্ত টেনে তুললো। হোয়াইট টি-শার্ট এর ওপর ব্ল্যাক স্যুট ও জিন্সের ফর্মাল লুকে ওকে সুন্দর দেখালেও চোখে মুখে গম্ভীর ভাবটা চোখে পড়ছে বেশি। স্পৃহা প্রণবের দিকে একবার তাকিয়ে বিরক্তিতে দৃষৃটি সরিয়ে নিলো। আজ এই ব্যক্তিটার জন্য-ই সবটা ঘটেছে। সবকিছুর জন্য প্রণবকেই দায়ী মনে হচ্ছে ওর। রাগে-দুঃখে কান্না গুলো অক্ষি ছাপিয়ে গালে ছড়িয়ে পড়তেই প্রণব এসে একদম ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। এক আঙুলে স্পৃহার গাল থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু কণা দখলে নিল। স্পৃহা অশ্রুসিক্ত চোখে একবার প্রণবের দিকে আর একবার ওর আঙুলে থাকা পানির দিকে অবাক চোখে তাকালো। প্রণব গাঢ় গলায় বললো,

-আমার জিনিসগুলো এতো ঠুনকো না যে, নিজের ইচ্ছে মতো অপচয় করবেন। আপনার কান্নার অধিকার খুব তাড়াতাড়ি হরণ হতে চলেছে, মিসেস নিস্তব্ধতা। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি হোয়াট’স গোন্না হ্যাপেন আফটার আ ফিউ মোমেন্টস!

বলেই বাঁকা হেসে আঙুলের অগ্রভাগে থাকা অশ্রু কণা ছিটকে মারলো। পরমুহূর্তেই বাইরে থেকে তুমুল হৈচৈ এর আওয়াজ ভেসে এলো। প্রণব থমথমে গলায় সবাইকে বললো,

-প্রেস-মিডিয়ার লোক চলে এসেছে। সবাই ভেতরে চলে যাও। কেউ বাইরে বের হবে না আমি বলার আগ পর্যন্ত।

সবাই মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে যেতে নিলে স্পৃহাও এলোমেলো পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। হুট করেই প্রণব ওর কবজি চেপে ধরলো। স্পৃহা চমকে পেছন ফিরে তাকাতেই প্রণব মন্থর কন্ঠে বললো,

-আপনাকে যেতে বলিনি আমি। যেহেতু বিষয়টাতে আপনি আর আমি দুজনেই জড়িত, সেহেতু আপনাকে প্রেজেন্ট থাকতেই হবে। চলুন।

বলেই প্রণব ওর হাত ধরে নিজের পাশে দাঁড় করালো। কিন্তু হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেই রাখলো। ওর গার্ড ও সিকিউরিটিদের ইশারা করলো সবাইকে ভেতরে ঢুকতে দিতে। সাথে সাথেই হুড়হুড় করে দলে দলে মিডিয়ার লোকজন পৃরবেশ করলো। ক্যামেরা প্রণব ও স্পৃহার ওপর তাক করতেই কোনো প্রশ্ন করার আগে প্রণব বললো,

-স্টপ, গাইস! নিজেরা তো অনেক কিছুই শুনিয়েছেন আমাদের! এখন আর আপনাদের মুখ থেকে কিছু শুনতে চাই না আমি। আপনারা কী প্রশ্ন করবেন, তা আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে। সবটাই জানাবো আপনাদের। একটু আগে যেই মসলা মেশানো নিউজটা টেলিকাস্ট করেছেন, ঠিক সেভাবেই এখন আমার বলা কথা গুলো লাইভ টেলিকাস্ট করবেন।

সবাই সম্মতি দিতেই প্রণব ভরাট গলায় বললো,

-একটু আগে নিউজ চ্যানেলে ও পত্রিকায় কী যেন প্রচার করেছিলেন। ‘প্রণব মেহরাজ বোনের বান্ধবীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত’- রাইট? আবার তার সাথে বিভিন্ন ছবিও বিশ্রীভাবে উপস্থাপন করেছেন, যদিও ছবি গুলোতে একচুলও উচ্ছৃঙ্খলতা নেই। কিন্তু একবারও সবকিছুর প্রেক্ষাপট যাচাই করেছেন? আমার বাড়িতে আমার বোনের বান্ধবী থাকলেই কি তার সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক থাকবে? যুক্তিটা একটু বেশিই হাস্যকর হয়ে গেল না? এখন নিশ্চয়ই বলবেন, “রাতের আঁধারে আপনাদেরকে একসঙ্গে দেখা গেছে।” হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই সেদিন রাতে আমরা একসঙ্গে ডিনার করেছিলাম। আর সেটাকে সূত্র করেই আজকের এই ঘটনার পরিকল্পনা শুরু। আমার কোনো বিরোধিতাকারী ব্যক্তি-ই সবটা করেছে যেন আমার জনপ্রিয়তা-টা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সে তো আর জানে না, প্রণব মেহরাজ চৌধুরীর দিকে আঙুল তোলা এতো সহজ কাজ নয়। তবুও শুধু আমাকে কিছু বললে তেমন কোনো যায়-আসত না। কিন্তু এমন একজন মানবীকে এর সাথে জড়িয়েছে, যার অবস্থান আমার জীবনের পুরো অংশ জুড়ে।

স্পৃহা বিস্ময় নিয়ে তাকালো প্রণবের মুখের দিকে। কিন্তু প্রণব শক্ত চোখে সামনে তাকিয়ে আছে এখনো। মিডিয়ার ব্যক্তিদের চোখেও একরাশ বিস্ময়।

প্রণব তার পাশে দাঁড়ানো নিজের পিএ-এর দিকে হাত বাড়ালো। পিএ ওর হাতে কতোগুলো কাগজ এগিয়ে দিতেই ও সেগুলো হাতে নিয়ে সামনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। শক্ত কন্ঠে বললো,

-আর সেই মানবীটি-ই আমার স্ত্রী।

বলেই স্পৃহার হাত সজোরে টান দিয়ে নিজের কাছাকাছি এনে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

-ইয়েস, এই রাগিণী নারীটির অবস্থান-ই আমার সম্পূর্ণ সত্তা ও অস্তিত্ব জুড়ে। আর ইনিই আমার একমাত্র প্রেয়সী, প্রণয়িনী, অর্ধাঙ্গিনী ও স্ত্রী। আমার মিসেস নিস্তব্ধতা!!

স্পৃহা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো প্রণবের শুভ্রতা ঘেরা মুখশ্রীর পানে। প্রণব ওর চোখ জুড়ে বিচরণ করা কৌতূহল দেখে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসলো। ওর চোখের সামনে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারটা তুলে ধরলো যার শেষপ্রান্তে স্পৃহার স্বহস্তে করা সাইনটা জ্বলজ্বল করছে।

# চলবে……

✘কপি করা নিষেধ✘

[রিচেক হয়নি। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here