এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব -০৫

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—-০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

—-আমরা আপনার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি।খুঁজে পেয়েছি বলা ঠিক হবে না,একটা লোক আপনাদের মেয়েকে চুরি করেছিলো।সেই চোর নিজেই এসে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আমাদের কাছে।সাথে আপনার মেয়েকেও নিয়েছে এসেছে সে।

লোকটার কথা শুনে হাত থেকে মোবাইলটা মেঝের ওপরে পড়ে গেলো আমান সাহেবের।স্ত্রী এই দৃশ্য দেখে ছুটে আসলো তার দিকে…

—একি,কি হলো তোমার আবার?

—আমি কিছু বুঝতে পারছি না রাত্রির মা,মাথা ঘুরছে আমার,

—কেন,কি হয়েছে,

—আমাদের মনে হয় কোথাও একটা মারাত্মক ভুল হচ্ছে,

—ভুল,কিসের ভুল?

—এইমাত্র একজন পুলিশ অফিসার ফোন দিয়ে কি বললো জানো,সে বলছে আমাদের মেয়েকে নাকি খুঁজে পাওয়া গেছে।

—-কিহ….আমাদের মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গেছে মানে?কে খুঁজে পেলো তাকে,আর কিভাবেই বা পেলো?(অবাক আর বিস্ময়ের ভঙ্গিতে প্রশ্ন)

—-আমি এতো কিছু তো জানি না,তবে সে বললো-যে লোকটা আমাদের মেয়েকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো সে নিজে থেকে নাকি ধরা দিয়েছে।

—-কি বলছো তুমি এগুলো,যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে রাত্রি কে,যাকে নিজেদের মেয়ে ভাবছি আমরা,

—আমি সত্যি কিছুই বুঝতে পারছি না,আমাদের মেয়ে যদি সত্যিকার অর্থে ফিরেই আসে তাহলে সেটা তো খুশির খবর।অন্যদিকে রাত্রি,ও যদি আমাদের মেয়ে না হয় তবে ছোটবেলার লকেট পাওয়া গেলো কিকরে ওর কাছে।

—আমি সেটাই ভাবছি।বৃদ্ধ লোকটা তো নিজের মুখে স্বীকার করলো লকেটটা সে নিজে রাত্রির থেকে পেয়েছে।যার ভেতরে এখনো আমাদের দুজনের ছবি জ্বলজ্বল করছে।

—শোনো,আমরা এগুলো নিয়ে পড়ে ভাবার অনেক সময় পাবো।এখন আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো ঐ পুলিশের কাছে যাওয়া যে আমাদের মেয়ের খোঁজ দিয়েছে,

—দেখো আমরা তাকে চিনি না জানি না,শুধু একটা ফোনকলের ভিত্তিতে এতোটা বিশ্বাস করা ঠিক হবে?

—বিশ্বাস পুরোপুরি আমিও করছি না এই মুহূর্তে।কিন্তু আমাদের তো একটি বার গিয়ে সত্যি মিথ্যেটা যাচাই করে আসা উচিত।তাতে তো আর সমস্যা নেই,

—যা ভালো বোঝো তুমি,তবে আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে খুব।

—এতো ভয় পাবার কিছু নেই রাত্রির মা।আমি এমন কিছু করবো না যা আমাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

—আচ্ছা,তাহলে যাও তুমি।গিয়ে দেখে আসো এতো বছর পরে পুলিশ অফিসার কেন ডাকলো তোমায়।তবে এতো সহজেও কিন্তু বিশ্বাস করো না কাউকে।

—হুমম,বুঝতে পেরেছি।তুমি আমাকে নিয়ে অযথা টেনশন করো না।

আজ রাতে যে ক্লাইন্ট আসার কথা ছিলো,তাকে তার পেমেন্ট ব্যাক করে দেয়া হয়েছে।আপাতত আজকের দিনের জন্য রাত্রি একটু প্রশান্তি পাবে।আজ আর তার খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশোনোর কোনো প্রয়োজন পড়ে নি।রাতে ঘুমের ঘোরে নিজেকে আঘাতে জর্জরিত হতেও অনুভব করছে না আজ রাত্রি।সবকিছু মিলিয়ে আজকের রাতটা তার জন্য পুরোপুরি অন্যরকম।ওর দিক থেকে বিচার করলে আজকে রাতটা একটু অস্বাভাবিক।কারণ অন্যান্য রাতে এতোগুলো দিন ধরে যেভাবে কেটে এসেছে আজ আর সেইভাবে কাটছে না।





পরেরদিন সকালবেলা,

স্ত্রী আর মেয়ের থেকে বিদায় নিয়ে আমান সাহেব অর্থাৎ রাত্রির বাবা বেরিযে পড়লেন।পুলিশ অফিসার যে ঠিকানা দিয়েছে সেটা তার বাসা থেকে বেশ অনেকটাই দূরে।যেতে যেতে প্রায় দুই ঘন্টার মতো লেগে গেলো তার।এখানে আসতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে।কারণ এই জায়গায় সে একেবারেই নতুন,আগে কখনো আসে নি।

অনেক খুঁজে বাড়িটা বের করলো আমান সাহেব।বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে অফিসারকে ফোন দিলো সে…

—-আমি পৌঁছে গেছি স্যার,এইতো আপনার বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।

—বাহহ,ভালো খবর।গেট দারোয়ানকে আমার কথা বলুন,সে নিজেই ভেতরে আসার পথ দেখিয়ে দেবে।

—আচ্ছা।

রাত্রির বাবার একটা বিষয়ে বেশ সন্দেহ হচ্ছে,কারণ লোকটা একজন পুলিশ অফিসার।তাহলে সে তাকে থানায় না ডেকে নিজের বাড়িতে ডাকলো কেন?এমনিতেই আইনের সংস্পর্শে যেতে ভীষণ ভীতি আমান সাহেব আর তার স্ত্রীর।আর সেটাই স্বাভাবিক।যারা সবার আড়ালে কুকর্ম করে বেড়ায় তাদের আইনকে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।নেহাত এই বিষয়টা তার নিজের মেয়েকে জড়িয়ে,তাই বাধ্য হয়ে এখানে ছুটে এসেছে জামান সাহেব।

ভেতরে ঢুকে ভয় আরো বেড়ে গেলো তার।এতো বড়ো বাড়ি,অথচ কোনো লোকজন নেই।বাড়ির প্রধান দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো সে।যতো ভেতরে যাচ্ছে তার ভয়ের মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।ঘরের ভেতরে বিশাল বড়ো এক ড্রয়িং রুম।তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালো আমান সাহেব।মাথার ওপরে এক মস্তবড়ো ঝাড়বাতি ঝুলছে তার।

—কেউ কি আছেন ভেতরে,আমি এসে গেছি…

আশপাশ থেকে তার প্রশ্নের কোনো সাড়াশব্দ এলো না।কোথায় সেই পুলিশ,কোথায় সেই চোর লোকটা,কোথায় তার মেয়ে।যতোদূর চোখ যাচ্ছে শুধু শুন্যতা ছাড়া কিছুই ধরা দিচ্ছে না আমান সাহেবের চোখে।এবার সে সত্যিই ঘাবড়ে গেলো।তখন স্ত্রীর কথা মনে পড়তে লাগলো তার, হয়তো সে তখন ঠিকই ধরেছিলো।এইভাবে কাউকে বিশ্বাস করা একদম ঠিক হয় নি।

—-কি হলো,কেউ কোনো কথা বলছেন না কেন?কোথায় সবাই?স্যার ,আমি এসে গেছি।

আমান সাহেব পকেট থেকে ফোনটা বের করে সেই পুলিশ অফিসারের নম্বরে ডায়াল করবে ঠিক তখনই ঘরের লাইট অফ হয়ে গেলো।চারপাশে পিনপতন নিরবতা।এর মাঝে সে বুঝতে পারলো কেউ পেছন থেকে এগিয়ে আসছে তার দিকে।তার পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।হঠাৎ সে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই আমান সাহেবের মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করলো।মূহুর্তে এক অস্ফুট চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে।তার মাথা গিয়ে উষ্ণ রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
ঠিক তখন আবার ঘরের লাইট অন হয়ে গেলো।নিচে মেঝেতে পড়ে আছে আমান সাহেব,আর তার মাথার কাছেই দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী,অর্থাৎ রাত্রির মা!!!!যার হাতে একটা লাঠি।আর সেই লাঠির আগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত মেঝের ওপরে পড়তে লাগলো….
স্বামীকে এই অবস্থায় দেখে সে ভীষণ খুশি, কারণ সে যা চেয়েছিলো ঠিক সেটাই হলো,

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here