#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০৮
#Mst_Liza
হৃদ ভাইয়া আমাকে ভুল বুঝলো।ভাবলো আমি তাকে ঠকাচ্ছি।কিন্তু আমি যদি আজ এমনটা না করতাম তাহলে পরিস্থিতি সামলাতে পারতাম না।আপু আর মেঘ স্যারের সংসারটা ভেঙে যেতো।আমি অনেক খুঁজলাম হৃদ ভাইয়াকে কিন্তু কোথাও পেলাম না।আমি কখনো এমনটা করতেই পারি না।কেন বুঝলো না হৃদ ভাইয়া আমাকে? এখন আমি কোথায় খুঁজবো তাকে?
হসপিটালের কোথাও হৃদ ভাইয়া নেই।বাড়িতে ফিরেও পেলাম না।আমার খুব কস্ট হচ্ছে। কাউকে বোঝাতে পারছি না।এদিকে মেঘ স্যার আর আপু এসে প্রিয়ার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে গিয়েছে।সাথে সায়ানের বাবা মাকে এনে আমার আর সায়ানের বিয়ের তারিখটাও ঠিক করে গিয়েছে।এই মুহূর্তে হৃদ ভাইয়াকে আমার যে খুব প্রয়োজন।আমি যেটা ভেবে এমনটা করেছি সেটাতো তাকে শুনতে হবে।
রাত অনেক হয়েছে আমার চোখে ঘুম নেই। হৃদ ভাইয়া এখনো বাড়ি ফেরে নি।খুব টেনশন হচ্ছে আমার।আমি বিছানা ছেড়ে উঠে হৃদ ভাইয়ার রুমে আসলাম।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেখানেই ঘুমিয়ে পরলাম।ঘুমের ঘোরে শুনতে পেলাম ওয়াশরুম থেকে কাতরানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি ছুটে গিয়ে দেখলাম হৃদ ভাইয়া ওয়াশরুমে গুটিশুটি হয়ে ভেজা শরীরে বসে আছে আর শীতে কাতরাচ্ছে।তার মানে সারাদিন হৃদ ভাইয়া এখানেই বসে ছিলো?
আমি এগিয়ে আসলাম।হৃদ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বুঝতে পারলাম গায়ে খুব জ্বর।আমার স্পর্শ পেয়ে হৃদ ভাইয়া কেঁদে উঠলো।আমাকে বলল,
—“তুই আমাকে ভালোবাসিস না ফুল? আমিতো তোকে খুব ভালোবাসি।”
আমি বললাম,
—“কে বলেছে আমি তোমায় ভালোবাসি না? তোমাকেই শুধু ভালোবেসে এসেছি সারা জীবন আমি।বুঝতে শিঁখেছি ধরে আমার মনে শুধু তুমি।আমার ভুলের জন্য নিজেকে কেন কস্ট দিচ্ছো? একটাবার আমাকে বোঝানোর সুযোগ দাও।ওঠো, রুমে চলো।”
হৃদ ভাইয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
—“না।আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না।প্রথমে নূর আর এখন তুই।তোকে আমি কেন বিয়ে করেছিলাম জানিস? কারণ তোকে আমি হারিয়ে ফেলতে চাই নি।নূর আর আমি দুজন দুজনকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবেসে এসেছি।নূরের জন্য কত মাইর খেয়েছি স্কুলে।ক্লাসে নূর যেদিন পড়া করতো না সেদিন আমি পড়া হলেও দাড়িয়ে ওর সাথে মাইর খেয়েছি।ওর কস্টটা অনুভব করতে।নূর যেদিন হোম ওয়ার্ক করতো না সেদিন ক্লাসে আমিও আমার অংক খাতাটা ব্যাগ থেকে বের করতাম না।কড়া রৌদ্দুরে ওর সাথে কান ধরে দাড়িয়েছি যেন ও নিজেকে একা ফিল না করে।যখন নূর আমাকে বলতো ভালোবাসি তখন ও যা চাইতো তাই এনে দিতাম।কিন্তু যখন মেঘকে চেয়ে বসলো আমি অনেক ভেঙে পরেছিলাম।নূর আমাকে বলেছিলো মন থেকে কখনো ওভাবে ভালোবাসে নি।মেঘকে যেদিন দেখেছে সেদিন থেকেই ভালোবাসার আসল মানেটা বুঝতে শিঁখেছে। মেঘের জীবনে একটা অন্য মেয়ে ছিলো।নূর সবসময় মন মরা হয়ে থাকতে।ঠিক মতোন খেতো না।নিজের যত্ন নিতো না।কারও সাথে হাসি মুখে কথাও বলতো না।আমি মেঘের কাছে গিয়ে নূরের খুশি চাইলাম। মেঘ আমাকে অনেক অপমান করেছিলো।ওতো অন্য একটি মেয়েকে ভালোবাসতো।যখন আমি জানতে পারলাম মেয়েটি ভালো না।শুধু মাত্র টাকার লোভে মেঘের সাথে রিলেশন করছে।তখন আমি সব প্রমাণ জোগাড় করে মেঘের সামনে রাখলাম। মেঘ আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হলো।আমাকে বন্ধু মানলো।আমিই তখন মেঘ আর নূরকে এক করার চেস্টা করলাম।ওদের একসাথে দেখা করানো।দুজনকে দুজনের জন্য যোগ্য প্রমাণ করা সব কিছু আমি করেছি।প্রচন্ড হতাশায় থাকতাম আমি।একদিন বাড়িতে এসে তোর এই নিরীহ মুখটা দেখলাম। আমার প্রতি তোর এতো কেয়ারিং সেদিন প্রথম আমার ভালো লাগাতে পরিণত হলো। ধীরে ধীরে তোকে ভালোবাসতে চেস্টা করলাম যেন নূরকে ভুলতে পারি।আর আজ আমি তোকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি যে তোকে ছাড়া গোটা দুনিয়াটা আমার কাছে শূন্য লাগে।আমি মরে যাবো তোকে না পেলে ফুল।তুই যত ইচ্ছা কস্ট দে আমায়।শুধু আমার সাথে থাক।একটু ভালোবাস আমায়।প্লিজ ফুল কখনো বলিস না অন্য কাউকে ভালোবেসি।
কথা বলতে বলতে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো হৃদ ভাইয়ার।আমি হৃদ ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
—“আমি আপুর মতোন নই।তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা আর এখন আমার স্বামী। কোনোকিছুর বিনিময়ে তোমাকে আমি কস্ট দেবো না।”
হৃদ ভাইয়াকে ধরে উঠিয়ে ভেজা কাপড় খুলে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলাম।কম্বলটা টেনে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল মুছতে লাগলাম। হৃদ ভাইয়ার শীত যেন তীব্র হতে লাগলো।এতো জ্বর কি করবো বুঝতে পারছি না।উঠে আমার রুম থেকে কম্বল আনতে পা বাড়াতে হৃদ ভাইয়া পেছনের থেকে আমার হাতটা ধরে বসলো।আমাকে বলল,
—“আমায় ছেড়ে আর এক মুহূর্তের জন্য ও দূরে জাস না ফুল।”
আমি গেলাম না।কম্বলের ভেতরে এসে হৃদ ভাইয়াকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।জানতে চাইলাম,
—“তোমার কি খুব শীত করছে হৃদ ভাইয়া?”
হৃদ ভাইয়া আমাকে ঘুরিয়ে আমার উপরে এসে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ডুবিয়ে বলল,
—“আমাকে আর ভাইয়া বলিস না।নাম ধরেই ডাকিস।”
আমি চোখ বন্ধ করে বললাম,
—“আজ সত্যি মনে হচ্ছে আমি তোমার স্ত্রী।তুমি বিয়েটা ওভাবে না করলে এই ফিলটা আর আমার প্রতি তোমার এই পাগল করা ভালোবাসাটা আমি বুঝতাম না হৃদ।”
চলবে,,,,