এতো চাই তোকে পর্ব ১৪

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_১৪
#Mst_Liza

আবির চৌধুরীর কন্ঠ কানে আসতে সায়ান আমার হাতটা ছেড়ে দিলো।আমি ছুটে হৃদের কাছে আসলাম।হৃদকে অনেক ডাকলাম কিন্তু হৃদ উঠলো না।হৃদের মাথাটা উঠিয়ে আমার কোলের উপরে রেখে মেঘ স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“কিসের ইনজেকশন দিয়েছেন আমার হৃদকে আপনি?”

মেঘ স্যার নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কোনো উত্তর দিলো না।আবির চৌধুরী মেঘ স্যারের সামনে গিয়ে দাড়ালো।মেঘ স্যার কিছু বলতে যাবে এমন সময় আবির চৌধুরীর স্যারের গালে মারলো এক চড়।মেঘ স্যার গালে হাত রেখে মাথাটা নিচু করে আছে।পাশ থেকে প্রিয়া বলে উঠলো,

—“ভাইয়াকে কেন মারলে বাবা? ভাইয়া তো শুধু হৃদের স্মৃতি যেন ফিরে না আসে তার চেস্টা করছে।”

প্রিয়ার কথা শেষ না হতেই প্রিয়ার গালেও আবির চৌধুরীর হাতের চড় পরলো।প্রিয়া চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে।আবির চৌধুরী রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল,

—“তোমাদের দুই ভাই বোনকে আমি ডাক্তারি পড়িয়েছি পেশেন্টদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলার জন্য। ভুল চিকিৎসা করে পেশেন্টদের ক্ষতি করার জন্য না।ভেবেছিলাম অনেক হয়েছে।তোমাদের ভুলগুলো তোমরা বুঝতে পারবে।কিন্তু না।তোমরা এখনও একই রকম রয়ে গেছো।আমি তোমাদের আরাম আয়েশ দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি।আমার আগেই তোমাদের শাষণ করা উচিৎ ছিলো।তুমি বিয়ে করেছো নিজের ইচ্ছায়।হ্যাঁ আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না তোমাদের বিয়েতে।কিন্তু যখন তোমার বিয়ের আসল কারণটা আমি জানলাম তখন আমি চলে আসলাম বাড়িতে।ছিঃ মেঘ ছিঃ।নূরকে শুধুমাত্র বিয়ে করেছো তুমি ব্যাকমেইল করার জন্য? প্রিয়ার জীবনে হৃদকে এনে দেওয়ার জন্য?”

মেঘ স্যার আবির চৌধুরীর মুখের দিকে তাকালো।চোখে চোখ রেখে বলল,

—“এসব কথা তোমাকে কে বলেছে বাবা?”

পেছনের থেকে নূর আপু বলে উঠলো,

—“আমি বলেছি।”

মেঘ স্যার রাগি দৃষ্টিতে নূর আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।আপু বলতে শুরু করল,

—“তোমাকে আমি ভালো বেসেছিলাম মেঘ।তোমার অর্থ সম্পদকে কখনোই ভালোবাসিনি আমি।যখন জানলাম তোমার জীবনে অন্য কোনো মেয়ে আছে তখন আমি খুব ভেঙে পরেছিলাম। হৃদ শত অপমান সহ্য করেও আমাকে তোমার জীবনে আনার চেষ্টা করেছে।কারণ হৃদ তখন আমাকে ভালোবাসতো।আর তুমি সেই সুযোগটা নিয়েছো।নিজের বোনের আবদার পূরণ করতে হৃদের দূর্বলতা হিসেবে আমাকে ব্যাবহার করেছো।কিন্তু তুমি কখনোই মন থেকে আমাকে ভালোবাসো নি।বিয়ের প্রথম রাতে তুমি আমাকে অনেক অপমান অপদস্ত করেছো।আমাকে বলেছো এতোদিন শুধু ভালোবাসার নাটক করেছো আমার সাথে। আর তোমার বাবা আমাদের বিয়েটা মেনে না নিয়ে চলে গেছে বাড়ি ছেড়ে।তার জন্য দায়ী শুধু আমি।সেদিনই তুমি যদি আমাকে তোমার আসল উদ্দেশ্যের কথাটা বলতে আমি কিছুতেই ফুল আর হৃদের বিয়ে হতে দিতাম না।কিন্তু ওদের বিয়ের পরে তুমি আমাকে বললে প্রিয়ার জীবনে হৃদকে এনে দিতে বিয়ে করেছো আমায়।তখন আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার লোভে হৃদকে বোঝায় ফুলের জীবন থেকে দূরে সরে যেতে।কিন্তু আমি জানতাম না ফুলও হৃদকে ভালোবাসা।যদি জানতাম কখনো ওদের আলাদা করার কথা ভাবতাম না।আমি খুব ভালোবাসি আমার বোনকে।তোমার বোনের জন্য যদি তুমি আমাকে ব্যাবহার করতে পারো।তাহলে আমি আমার বোনের সুখের জন্য তোমাকে কেন ছাড়তে পারবো না? তুমি সেদিন আমাকে বলেছিলে না আমার সাথে সংসার করার কথা ভাববে? আজ আমি বলছি তুমি চাইলেও আর তোমার সাথে থাকবো না আমি।তুমি আমার বোনের সন্তানকে নষ্ট করতে যাচ্ছিলে? এতোটা নিচ তুমি? একটা কথা শুনে রাখো মেঘ।আমিও প্রেগনেন্ট।মন পরে সেই দিনটার কথা? যেদিন প্রিয়ার বিয়ের প্রস্তাব হৃদের জন্য নিয়ে গিয়েছিলে।আর প্রিয়ার বিয়ের জন্য খুশি হয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে কাছে টেনে ছিলে? তোমার ওই ভালোবাসাটা একদিনের জন্যই ছিলো।যখন জানলে হৃদ প্রিয়াকে বিয়ে করতে চাই না তখন আবার তুমি বদলে গেলে।তোমার মতো এতোটা কস্ট আমাকে কেউ কক্ষনো দেয় নি মেঘ।কেমন মানুষ তুমি? শুধু মাত্র বোনের একটা আবদার পূরণ করতে এতোটা খারাপ হতে পারলে? চলে যাচ্ছি আমি ফুল আর হৃদকে নিয়ে।তোমার বাবাকে সত্যিটা বলার দরকার মনে করেছিলাম তাই বলেছি।”

কথাগুলো বলে আপু হৃদ আর আমার কাছে আসলো।আপুর সাথে আমি হৃদকে ধরে উঠিয়ে চলে আসতে লাগলাম।আবির চৌধুরী পেছনের থেকে আপুকে ডেকে উঠলো।বলল দাড়াতে,,

আমরা দাড়িয়ে পরলে আবির চৌধুরী এগিয়ে এসে আপুর মাথায় হাত রেখে বলল,

—“আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও বৌ মা।আমি ভেবেছিলাম তুমি একটা লোভী মেয়ে। মেঘ প্রায় রাতে মদ খেয়ে বাড়িতে ফিরতো।যেই মেয়েটাকে ভালোবেসে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো আমি ভেবেছিলাম ওই মেয়েটা তুমি।যখন মেঘ বলল ওর ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করবে।আমি রেগে বলেছিলাম বিয়েটা হলে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।মেঘ শুনলো না।বিয়ে করলো তোমাকে অনেক ধুম ধাম করে। তাই এই বাড়ি ছেড়ে কিছুদিনের জন্য চলে গিয়েছিলাম আমি।কিন্তু আজ না।আমি যখন এসে গিয়েছি তখন আর কোনো অন্যায় করতে দেবো না ওদের।আমি ঠিক করেছি আমিও তোমাদের সাথে যাবো।আমি ভুলে যাবো আমার একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছিলো।এই বাড়িটা ওদের মায়ের নামে করেছিলাম।তাই ওদের বলতে পারবো না এখান থেকে চলে যেতে।কিন্তু আমার হসপিটালটা ওটা এখনো আমার নামেই আমি।আমি নূরেকে লিখে দিবো হসপিটালটা।নূর না চাইলে আমার হসপিটালের মধ্যে মেঘ আর প্রিয়া পা রাখবে না।”

প্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,

—“একটা বাইরের মেয়েকে তুমি হসপিটালটা দিয়ে দিবে বাবা? ওর অনুমতি নিয়ে হসপিটালে ঢুকতে হবে আমাদের?”

আবির চৌধুরী রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—“হ্যাঁ, ওর অনুমতি নিতে হবে। থাকার জন্য যে আশ্রয়টুকু পাচ্ছো এটাই তোমাদের জন্য অনেক বেশি।”

মেঘ স্যার চুপ হয়ে আছে।কি ভাবছে বোঝা যাচ্ছে না এখন।আপু বলে উঠলো,

—“কোনো কিছুর প্রতি লোভ আমার নেই।আর না আমি কারও থেকে তার বাবাকে কেড়ে নিতে চাই।আপনি ভাববেন না বাবা আমার সন্তানটা জন্ম নিলে আমি ঠিক আপনার কাছে দিয়ে যাবো।কিন্তু আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনার এই কথাটা আর রাখতে পারবো না।”

আপু আবির চৌধুরীর কথা না রেখে চলে আসলো আমার আর হৃদের সাথে।আবির চৌধুরী অনেক অনুরোধ করলো শুনলো না।

বাড়িতে এসে হৃদকে এনে রুমে শুইয়ে দিয়ে আপু ওর চেকাব করলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল আমায়,

—“ভয় নেই ফুল মেঘ হয়তো ইনজেকশন দিয়ে হৃদকে স্মৃতি ভুলিয়ে রাখতো।তিন চার ঘন্টার মধ্যে হৃদের জ্ঞান ফিরলে সব মনে পরে যাবে।আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি ওগুলো আনিয়ে নিস মাকে দিয়ে।হৃদের যত্ন নিস।আর নিজেরও খেয়াল রাখিস।”

কথা শেষ করে আপু আমাকে হৃদের রুমেই থাকতে বলে বেড়িয়ে গেলো। আমার রুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আমি হৃদকে রেখে একটু এগিয়ে এসে জানালা সামনে দাড়িয়ে দেখতে পেলাম আপু কাঁদছে। মাও এগিয়ে এসে দেখতে পেলো ব্যাপারটা।মা আপুকে ডাকতে চাইলো।আমি মায়ের মুখটা টিপে সেখান থেকে সরিয়ে আনলাম। মাকে বললাম আপুকে কাঁদতে দিতে।মেঘ স্যার যেটা করেছে।তারপরও মেঘ স্যারকে ভোলা আপুর জন্য সহজ হবে না।তাই আপুর কেঁদে মনটা হালকা করা প্রয়োজন।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here