এতো চাই তোকে পর্ব শেষ

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_১৬(শেষ)
#Mst_Liza

পুরো হসপিটালটা আজ অন্যরকম লাগছে।হৃদ আমাকে মাটিতে পা রাখতে পর্যন্ত দিচ্ছে না।সারাক্ষণ কোলে নিয়ে ঘুরছে।চলছি আমি কিন্তু পা দুটো ওর।সকলে কি ভাবছে জানি না।তবে ওর আমার প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে প্রিয়া নিশ্চয় বুঝে গেছে হৃদ কখনো আমাকে ছেড়ে ওর কাছে যাবে না।

মেঘ স্যারকে দেখতে পেলাম।আমি ডাকলাম হয়তো শুনলো না।অন্য মনুষ্ক হয়ে আপুর চেম্বারের দিকে গেলো।হৃদ ওয়াশরুমে যেতেই চুপিচুপি ওর চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসলাম আমি।আপুর চোম্বারের দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম স্যার কাঁদছে।তাও আপুর জন্য।আপুর নাম ধরে চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে বলছে,

—“করেছি আমি ভুল মানছি তো।কিন্তু এখন পারছি না তোমাকে ছাড়া থাকতে।কিভাবে বোঝাবো তোমায় আমি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে।আর একটাবার ফিরে এসো না নূর।আমি আর কোনো ভুল করবো না।তোমাকে আর কস্ট দেবো না।কারও সাথে কোনো অন্যায় করবো না।তুমি তো জানো আমি কেমন জেদি।কাউকে ছরি বলতে পারি না আমি।তুমি কেন বুঝছো না।নিজের থেকে একবার এসো না আমার কাছে।আমাদের সন্তানের জন্য অন্তত।”

বাইরে থেকে স্যারের কথা শুনছিলাম এমন সময় আমার কাঁধে কারও হাত পরতেই কেঁপে উঠলাম আমি।ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম হৃদ দাড়িয়ে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

—“এখানে কি করছিস? তোকে বলেছি না আমি? যেখানে যাবি আমাকে বলবি আমি তোকে নিয়ে যাবো! প্রিয়া বা মেঘ যদি তোর আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি করে দেয়।”

আমি হৃদকে ঘুরিয়ে ওর কাঁধে হাত বাঁধিয়ে সামনের দিকে ঠেলে চলতে চলতে বললাম,

—“তুমিও না হৃদ।কোথায় এতোদিন পর আসলাম সকলের সাথে আড্ডা দেবো তা’না সারাক্ষণ তোমার এই এক কথা।”

হৃদ আমাকে টেনে সামনে এনে বলল,

—“এতোদিন যতো যা করেছিস কিছুই বলিনি।কিন্তু এখন না।আমার সন্তানের কিছু হলে তোকে আমি ছাড়বো না।”

আমি হৃদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভ্রু কুচকে বললাম,

—“শুধু তোমার সন্তানের জন্য। তুমি আমায় ভালোবাসো না?”

হৃদ মুচকি হেসে আমার পেটে হাত রেখে বলল,

—“বাসিতো।কিন্তু এখন বেবিটাকে বাসবো।ওর যত্ন নিলে তুইও ভালো থাকবি।”

পাশ থেকে আবির চৌধুরী এসে বলে উঠলেন,

—“নূর আসে নি হসপিটালে?”

আমরা দু’জন উনার দিকে তাকালাম। হৃদ মাথা নাড়িয়ে না উত্তর দিলে উনি বললেন,

—“মেঘ কিন্তু অতোটা খারাপ ছিলো না আগে।ছোটবেলা থেকেই খুব জেদি ছিলো মেঘ।হঠাৎ একটা মেয়ে ওর জীবনে আসলো।মেয়েটা যাওয়ার পর থেকেই এমন পাগলের মতো আচারণ করছে।আমি তো আমার সেই ছেলেকে এখন আর খুঁজেই পাই না।মেঘ তো ওর বোনটাকে খুব ভালোবাসে।তারজন্য হয়তো বোনের সুখের কথা ভেবে হৃদকে বোনের জীবনে এনে দিতে চেয়েছিলো।তোমরা একটু বোঝাবে নূরকে? ভুল কার না হয়।আমি কাল থেকে যেন অন্য একটা মেঘকে দেখতে পাচ্ছি।কারও সাথে কথাও বলছে না।কিচ্ছু খাচ্ছেও না।এখন হসপিটালের কোথায় আছে কে জানে?”

হৃদ কিছু বলতে যাবে আমি ওর হাতটা ধরে থামিয়ে দিলাম। আবির চৌধুরীকে বললাম,

—“মেঘ স্যার আপুর চেম্বারে।আপুর চেয়ারটার সাথে কথা বলছে।আপুকে ছরি বলছে।”

হৃদ আমাকে টেনে ধরে বলল,

—“কি বলছিস তুই?”

আমি বললাম,

—“ঠিকই বলছি।তোমার ভয়ে তো ভেতরে যেতে পারলাম না।নইতো স্যারকে বোঝাতাম কথাগুলো আপুর সামনে গিয়ে বলতে।”

আবির চৌধুরী আর দাড়িয়ে না থেকে আপুর চেম্বারের দিকে ছুটলো।আমি হৃদকে বোঝাচ্ছি মেঘ স্যার কতটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।এরই মধ্যে আবির চৌধুরীর চিৎকারের আওয়াজ পেলাম। হৃদ আর আমি একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম কি হলো? তারপর ওখানে গিয়ে দেখতে পেলাম। মেঘ স্যার আপুর চেয়ারটার দিকে মুখ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসছে।স্যারের মুখ থেকে রক্ত পরছে।খুব জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।আবির চৌধুরী স্যারকে ডাকছে কিন্তু সেই দিকে স্যার পাত্তা দিচ্ছে না।আমরা এগিয়ে এসে দাড়াতেই স্যারের মাথাটা নিচে ঢলে পরলো।হৃদ টেবিলের কোণায় রাখা বিষের শিশিটা উঠালো।আর চিৎকার দিয়ে হসপিটালের যতো ডাক্তার নার্স আছে।সবাইকে ডাকলো।সকলের সাথে প্রিয়াও এসে ভীর ঠেলে এমন একটা অবস্থা স্যারের দেখতে পেয়ে খানিকটা দূরে সরে গেলো।একদম থমকে হয়ে আছে প্রিয়া।

স্যারকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে।আপুকে ফোনে বলার সাথে এক মুহূর্ত দেরি না করে হসপিটালে ছুটে এসেছে।অপারেশন থিয়েটারের সামনের বেঞ্চটাতে বসে আছি আমি, প্রিয়া আর আবির চৌধুরী। পাশে দাড়িয়ে আছে মিনি, নিশি।আপু এসেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবে প্রিয়াকে দেখে থেমে গেলো।এগিয়ে এসে প্রিয়াকে ধরে দাড় করিয়ে ওর দু’গালে অনেকগুলো চড় বষিয়ে দিলো।প্রিয়ার মুখের উপর আঙুল উঁচিয়ে বলল,

—“তোমার জেদের জন্য, আবদারের জন্য আজ মেঘের এই অবস্থা। মেঘ আমার থেকে দূরে থাকলেও অতটা কস্ট হতো না যতোটা কস্ট ওর এই অবস্থার কথা শুনে হচ্ছে।মেঘের কিছু হলে তোমাকে আমি ছাড়বো না।”

প্রিয়া নিচে বসে পরলো।দু’হাত জোর করে সকলের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চাইলো।নূর আপুকে বলল,

—“হ্যাঁ আমার জন্য ভাইয়ার এই অবস্থা হয়েছে।তুমি তো ডাক্তার ভাবি। আমার ভাইয়াকে বাঁচাও।আমি আর কখনো কারও কাছে কিছু চাইবো না।কোনো আবদার করবো না।”

আপু আর কোনো কথা না বলে অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ঢুকে গেলো।প্রিয়াকে উঠিয়ে বেঞ্চে বসালাম আমি।মিনি, নিশি এগিয়ে আসলে ওদের কাছে আজ পর্যন্ত যতো খারাপ ব্যাবহার করেছে সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইলো।চার ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে আসলো হৃদ।আমরা সকলে এগিয়ে আসলে হৃদ বলল,

—“টেনশনের কোনো কারণ নেই মেঘ এখন বিপদ মুক্ত। কিন্তু কিছুদিন কথা বলতে কস্ট হতে পারে। নূর এখন কথা বলছে মেঘের সাথে। ওর কথা বলা শেষ হলে কেবিনে শিফট করে দেবো তখন তোমরা দেখা করে নিও।”

আমি একটু এগিয়ে এসে দেখলাম মেঘ স্যার আপুর হাতটা টেনে ধরে আছে আর কাঁদতে কাঁদতে বলছে,

—“আমি চলে যাবো ছাড়ো তোমার সাথে থাকবো না।একটা ভীতু, কাপুরুষের মতো বউকে ভালোবাসি বলতে পারে না আবার বিষ খাই।ইগো দেখাই।কিভাবে খেলে তুমি বিষ? একবারের জন্যও আমার কথা ভাবলে না।আমাদের সন্তানের কথা ভাবলে না? তোমার বাবা, বোন যাদের তুমি এতো ভালোবাসো।যেই বোনের সুখের জন্য এতো অপরাধ করলে।একবারও ভাবলে না কতো কস্ট পাবে সবাই?”

মেঘ স্যারের কথা বলতে কস্ট হচ্ছে তাই চুপ করে শুধু শুনছে।কিন্তু আপুকে ছাড়ছে না।এটা দেখে আনন্দে আমার গাল বেয়ে দু’ফোটা পানি বেড়িয়ে আসলো।হৃদ পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

—“ভালোবাসাটা এমনই কেউ বলতে পারি #এতো_চাই_তোকে আবার কেউ বলতে পারে না।অথচ দেখ মেঘও নূরকে ভালোবাসে এটা আমরা কেউ জানতাম না।মেঘ যদি এই কান্ডটা না করতো তাহলে হয়তো ওর ভালোবাসাটা আমরা বুঝতাম না।আবার ইগোর বষে মেঘ কখনো স্বীকার করতো না। ওর জীবনও চলে যেতে পারতো।

হৃদের কথাটা বুঝলাম। আমার কাঁধ থেকে ওর হাত নামিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

—“তুমি খুব ভালো হৃদ।আমি কোনো ভুল করলে অবশ্যই বলবা।আমায় শাস্তি দিবা।এমন কাজ কখনো করবা না।তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।মেঘ স্যার বোকা তাই এমন করেছে।যখন তোমার আমাকে বলতে ইচ্ছে করবে তখনই বলবা ভালোবাসি।”

হৃদ আমার পিঠে হাত রেখে বলল,

—“তাতো বলিই আমি।আমার মতো এতোটা ভালো কেউ বাসতে পারবে তোকে? আমি #এতো_চাই_তোকে যতটা কেউ কাউকে চাইতে পারবে না।”

হৃদের কথা শুনে আমার খুব ভালো লাগছে।ওর কথা শুনে আরও ভালোবাসতে মন চাইছে আমার।আই ইউস হৃদ আমাকে সারাটা জীবন এতোটাই ভালোবাসুক।আপু আর মেঘ স্যারও এইভাবে সবসময় সাথে থাকুক।প্রিয়া এবার নিজেকে শুধরে নিক।আবির চৌধুরী নিজের বাড়িতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে সুখে থাকুক।আর মা আপু আর আমার টেনশন বাদ দিয়ে নাতি নাতনিদের কথা ভাবুক।কিছুদিন পরই তো ওরা আসবে।না জানি কার মতো হয়।তবে আমাদের বেবিটা যেন আমার মতোই হয়।হৃদ যা তেড়া।ও ঠিক পারবে শাষণ দিয়ে আদর দিয়ে পেলে নেলে বড় করতে।আর আপুর বেবিটা মেঘ স্যারের মতোন হোক।আপুর অনেক অভিজ্ঞতা আছে মেঘ স্যারকে সামলানোর।নইলে কিনা মেঘ স্যারের মতো একটা মানুষ আপুকে এতোটা ভালোবাসে?

।।।।সমাপ্ত।।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here