#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০৯
#Mst_Liza
প্রচন্ড শীতের সকাল।হৃদ ভাইয়ার কম্পিত শরীর।ঘড়িতে টিক টক শব্দ।মাথাটা ভার ভার লাগছে আমার।শরীরে দূর্বলতা জানান দিচ্ছে।কোনো শক্তি নেই নড়াচড়া করবার।হৃদ ভাইয়ার মাথাটা আলতো করে আমার বাহুডোর থেকে সরাতে নিলে ঘুম ঘুম চোখে মুখটা তুলে চাইলো আমার মুখের দিকে।চোখদুটো ছোট্ট করে আমার গালে হাত রেখে বলল,
—“একি ফুল তুই আমার কাছে?”
হৃদ ভাইয়া ঝট করে আমার কপালে হাত রেখে বলে উঠলো,
—“তোর তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।কাল রাতে তুই আমার কাছে কেন ঘুমিয়েছিলি?”
আমি হৃদ ভাইয়ার বুকে হাত রেখে উঠে বসার চেস্টা করলাম।আমাকে টেনে তুলে পিঠে বালিশ ঠেকিয়ে কম্বলটা শরীরে টেনে দিলো।আমি দু’চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম।হৃদ ভাইয়া বলে উঠলো,
—“আমাকে ঠকিয়ে, আমার ভালোবাসাকে অপমান করে আবার আমার কাছে আসার মানে কি হয় তোর?”
আমি ভাবলাম এটা কি বলছে হৃদ ভাইয়া? মুখের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে বললাম,
—“এসব তুমি কি বলছো হৃদ? কাল রাতে তুমি আমায় ভালোবাসলে।আদর করলে।তোমার কি মনে নেই?”
হৃদ ভাইয়া আমার দু’ কাঁধে হাত শক্ত করে রেখে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল,
—“আমি তোকে আদর করেছি? কই মনে নেই আমার। আর যদি করেও থাকি জ্বরের ঘোরে করেছি।কিন্তু তুই যেটা করেছিস সজ্ঞানে।আমি তোকে তার জন্য কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।কস্ট দিয়েছিস আমায়।তোরা দুই বোন একদম এক।ভালোবাসা তোদের কাছে শুধুই খেলা। তোকে তো আমি ভিন্ন ভেবেছিলাম ফুল।তাহলে এমনটা কেন করলি আমার সাথে? ভরা হসপিটালের সকলের সামনে বলে ফেললি ওই ছেলেটাকে তুই ভালোবাসিস।ছেলেটাকে বিয়ে করবি।আর আমাদের বিয়েটা? ওটার কথা তোর তখন মনে ছিলো না? রাতে কেন আসলি আমার কাছে? আমি কিছুতেই কাল রাতে তোকে কাছে টানতাম না যদি আমি সুস্থ থাকতাম।”
আমি হৃদের হাতটা টেনে ধরলাম।অসহায় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—“এভাবে বলছো কেন আমায়? কস্ট দিচ্ছো আমায়?এই তুমি আমায় ভালোবাসো? দেখছো জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে।তারপরও এমন ভাবে কথা বলছো আমার সাথে?
—“জ্বরে তোর গা পুরলে আমি কি করবো? তোকে তো আমি বলিনি শরীরে শরীরে জ্বর বাঁধাতে।”
—“হৃদ তুমি কিন্তু অনেক বলছো।এবার কিন্তু সত্যি এই রুম থেকে চলে যাবো আমি।আর কক্ষনো আসবো না তোমার কাছে।”
হৃদ ভাইয়া গম্ভীর ভাবে মুখ করে পরে আছে।বাইরে থেকে মা আর কাকিমণি ফুল বলে চিৎকার করে চলেছে।কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে হৃদের রুমের দরজার কাছে এসে কাকিমণি বলে উঠলো,
—“হৃদ দরজা খোল।সকাল থেকে ফুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বাড়িতে কোথাও নেই।আমাদের টেনশন হচ্ছে খুব।”
কথাটা শুনতেই হৃদ উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।কাকিমণি হৃদকে আমার কথা বলতে বলতে রুমের মধ্যে তাকিয়ে দেখলো হৃদের বিছানায় আমি।কাকিমণি ভেতরে আসতেই আমি কম্বলটা শরীরে ভালোভাবে টেনে জড়িয়ে নিলাম। হৃদ কড়া শব্দে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
—“ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও মা।আর কখনো যেন ও আমার সামনে না আসে।”
কথাটা বলে হৃদ রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।কাকিমণি আটকালো হৃদকে। মাকে এগিয়ে আসতে দেখে রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে আমার কাছে আসলো।আমাকে জিজ্ঞেসা করলো,
—“এটা তোরা কি করেছিস ফুল? তোদের দুজনের বিয়ে ঠিক।তারপরও তোরা নিজেরা ছিঃ।
হৃদ কিছু বলতে নিলে কাকিমণি হৃদকে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো।কড়া শব্দে বলল,
—“লজ্জা করে না তোর? মেয়েটার সাথে সারা রাত কাটিয়ে মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলছিস আর কখনো তোর সামনে যেন না আসে?”
আমি কাকিমণির কথাটা শুনে কেঁদে উঠলাম। কাকিমণি এগিয়ে এসে আমায় ধরে দেখলো গায়ে খুব জ্বর।তাই নরম গলায় বললো,
—“আমার ভাবতে কস্ট হচ্ছে হৃদ আমার সন্তান।কিন্তু ফুল তুই? তোর মা জানলে কতোটা কস্ট পাবে বুঝতে পারছিস?”
হৃদ এগিয়ে এসে কাকিমণিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
—“মা বিশ্বাস করো আমি সত্যি এমন কিছু করতে চাই নি।ফুলই এসেছিলো রাতে আমার কাছে।আমার তো জ্বরে কোনো হুশ ছিলো না।যদি তোমার কাছে এটা অসম্মানের লাগে তাহলে বলবো ফুল আমার স্ত্রী।আমি ওকে বিয়ে করেছি।তাই এটা নিয়ে তুমি খারাপ কিছু ভাবতে পারো না।”
কাকিমণি একবার হৃদ আর একবার আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—“আমার অবাক লাগছে তোর কথা শুনে। তোরা বিয়েও করেছিস? এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিলি? আমরা কি কিচ্ছু না? আমাদের একটাবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না?”
এমন সময় মা এসে দরজার কাছে দাড়িয়ে হৃদকে আর কাকিমণিকে ডাকতে লাগলো।কাকিমণি কিছু একটা ভেবে হৃদকে কড়া শব্দে বললো আমাকে নিয়ে জানালা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে।আমায় নিয়ে রুমে রেখে আসতে।হৃদ না চাইতেও কাকিমণির কথায় বাধ্য হয়ে আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসলো।আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলে আমি হাতটা টেনে ধরে বললাম,
—“এই তোমার ভালোবাসা? এই ভালোবাসাটা হারানোর ভয়ে কাঁদছিলে কাল তুমি?”
চলবে,,,,,