#গল্প – #এলি_ম্যান (৭ম #পর্ব)
সালাহউদ্দিন-এর সারা শরীরে লেজার লাইটের লাল আলো পড়ছে। প্রায় ২০ টা পিস্তল তার দিকে তাক করে রাখা হয়েছে। একটু নড়চড়া করলেই হয়তো গুলিতে তার সারা শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যাবে। আমেরিকান পুলিশের নীতি এটাই। সালাহউদ্দিন নিজের পিস্তলটা প্যান্টের সামনে গুঁজে নিল। আস্তে আস্তে নিজের হাত উপরে তুলল। আত্মসমর্পণ এর ভঙ্গি করতেই কিছু পুলিশ পিস্তল নামিয়ে নিল।
সালাহউদ্দিন চিন্তা করে নিজের হুডির টুপি খুলে চেহারা দেখালে হয়তো সবাই পিস্তল নামিয়ে নিবে। তখন হয়তো একটা কিছু বুঝ দেওয়া যাবে। নয়তো তাকেই শত্রু ভেবে গুলি করে দিতে পারে। সালাহউদ্দিন নিজের চুপিটা মাথা থেকে ফেলে দিল। নিজের চেহারা দেখানোর জন্য পুলিশের দিকে ঘুরতে নিল সে। অমনি কয়েকটা ছোট ক্যান কোকের বোতল এসে পরল সেখানে। সালাহউদ্দিন দেখেই বুঝে গেল যে এগুলা কোক নয় বরং ‘মিস্ট ককটেল’ । মানে এগুলা থেকে কেবল ধুঁয়া বের হবে। নিজেকে প্রতিপক্ষের চোখের আড়াল করতেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে এখন এই গুলো এখানে ফেলল কে! এর বেশি ভাবতে পারে না সে। মুহুর্তের মধ্যেই ধুঁয়ায় পুরো জায়গাটা ঘোলাটে হয়ে যায়। সাদা ধোঁয়ার বুকে মাঝে কেবল লেজার লাইটের লাল আলো দেখা যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন এই সুযোগ নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই কেউ একজন এসে তার পেটে চেপে ধরে। একহাতে চেপে ধরেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে মুহুর্তের মধ্যেই দ্রুত গতিতে দৌড়াতে শুরু করে দেয়। কে এমনটা করছে কিছুই বুঝতে পারে না সে। তবে এটুকু বুঝতে পারে যে ব্যক্তি তাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে সে অনেক লম্বা। তার লম্বা পা এত দ্রুত দৌড়াতে সাহায্য করছে যা অন্য সাধারণ মানুষের দ্বিগুণ।
আশেপাশে আর কোন ধোঁয়ার কুন্ডলি নেই। চারপাশে কেবল গাছগাছালি। এমন একটা জায়গায় এনে সালাহউদ্দিনকে নামিয়ে দেয় লোকটি। সালাহউদ্দিন এতোক্ষণে লোকটির দিয়ে তাকানোর সুযোগ পায়। গভীর অন্ধকারের মধ্যেও তার চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করছে।
উজ্জ্বল সবুজাভ চোখ দু’টো চিনতে একটুও অসুবিধে হয় না সালাহউদ্দিন-এর। সে দ্রুত পিস্তল বের করে তাক করে লোকটির দিকে। মাত্র দুই ফুট দুরে থাকা লোকটা আর সালাহউদ্দিনকে গুলি চালানোর সুযোগ দিল না। লাথি মেরে পিস্তলটা হাত থেকে ফেলে দিয়েই বলতে লাগল,
‘ প্লিজ স্টপ দিস। আগে কথা শুনুন আমার।’
কথা শুনে সালাহউদ্দিন আস্থা পেল। নয়তো এখনই সেও লাফ দিয়ে উঠে লোকটার গলায় কয়েক ঘা মেরে দিত। কিন্তু এবার সে শান্ত হয়ে দাঁড়াল। সবুজ চোখের অদ্ভুত লোকটি বলতে লাগল এবার,
‘ আপনি আমাকে যা ভাবছেন আমি সে নই। তবে যাকে খুঁজছেন তার খোঁজ আমি দিতে পারি।’
সালাহউদ্দিন কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
‘ ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। বিস্তারিত বলুন। ‘
‘ দুই দিন ধরে আমি আপনাকে দেখছি। আপনি যে আমারই স্বজাতিকে খুঁজছেন তা আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আপনি পুলিশের লোক না হওয়ার স্বত্বেও এই কাজ কেন করছেন? আপনি তাদের সম্পর্কে কিভাবে জেনেছেন? ‘
সালাহউদ্দিন মুচকি হেসে উত্তর দেয়, ‘ এই কাজের জন্যই আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে। আমি প্রথম দিনেই শত্রুর দেখা পেয়ে যাই। সামান্য একটু সময়ের জন্য সে আমার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এবার সামনে পরলে আর রক্ষা নেই। ‘
অপরিচিত লোকটি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,
‘ আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। তাদের অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত করতে পারি। যদি আপনি আমার কথা মতো কাজ করেন, তবে খুব সহজেই তাদের হত্যা করতে পারবেন। আমি কোন সাধারণ মানুষ নই। এজন্য সরকারি কোন কর্মকর্তার কাছেই আমি সাহায্য চাইতে পারি না। এতে করে আমার নিজের জীবনই হুমকির মধ্যে পরতে পারে। আমার সারা শরিরের ব্যবচ্ছেদ হতে পারে। তাই আমি একজন উপযুক্ত ব্যক্তির সন্ধানে ছিলাম। FBI এর স্পেশাল টিমের প্রধান ইভানাকে আমি কিছুটা জানিয়েছি। আজকে রাতে বাকিটা জানিয়ে দিব। ইভানার সাথে দেখা করার সময়ে আপনিও আমার সাথে গেলে খুশি হবো। অবশেষে আমরা তিন জন মিলেই সিদ্ধান্ত নিব কিভাবে কি কি করতে হবে। ‘ একটানা বিশাল ভাষণ দিয়ে ক্ষ্যন্ত হয় অপরিচিত লোকটি।
লেখকের iD- #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik)
সালাহউদ্দিন একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে, ‘ হুম আমি সব কিছুই বুঝলাম। আপনাকে দেখেই ধারণা করতে পেরেছি যে আপনি সাধারণ মানুষ নন। অবশ্যই বর্তমানের এই বিজ্ঞানের সময়ে আপনার পরিচয় প্রকাশ পাওয়া মানেই শারীরিক ব্যবচ্ছেদ। আপনার সারা শরীর কেটে টুকরো টুকরো করে দেখবে আপনার ভেতরে কি আছে। আমিও বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী স্টিফেন সাহেবের বাসায় আছি। তিনিই আমাকে এই কাজ দিয়েছেন। আমার দ্বায়িত্ব ছিল আপনার মতো একজন অতিমানবকে ওনার হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু এখন আমি আর এই কাজ করব না। পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য যা যা প্রয়োজন সেই কাজই আমি করব। আশাকরি আপনার সর্বোচ্চ সহযোগীতা পাব। ‘
অপরিচিত লোকটি উত্তর দেয়,
‘ হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই। আমি সম্পূর্ণ সাহায্য করব। আমাদের এখন ইভানার বাসায় যাওয়ার সময় হয়েছে। ‘
‘ জ্বি অবশ্যই যাব। কিন্তু আপনার নামটা তো জানা হলো না। আর ইভানার বাসায় যাওয়াটা তো এতোটা সহজ কাজ নয়। কিভাবে যাব আমরা? ‘
‘ সেই দ্বায়িত্ব আমার উপরে ছেড়ে দিন। আর আমার কোন নাম নেই। আমার মাস্টার আমাকে এলি-ম্যান বলে পরিচয় করাতো। তবে আপনার আমার শত্রুরাও কিন্তু এই নামেই পরিচিত। সুতরাং আমার কোন নাম নেই। আপনার নাম? ‘
‘ ওহ্, তবে আমিও আপনাকে এলি-ম্যান বলেই ডাকি আপাদত। আর আমার নাম সালাহউদ্দিন। তবে কাজের সূত্রে যেখানে যেখানেই যাই সবখানে ডিটেক্টর বলে ডাকে। আপনি সালাহউদ্দিন বলতে পারেন। ‘
এলি-ম্যান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। নিজের জ্বলজ্বলে চোখের আলোতে অন্ধকারের মধ্যে থেকেই সালাহউদ্দিন-এর পিস্তলটা খুঁজে বের করে ফেলল। পিস্তলটা সালাহউদ্দিন-এর হাতে দিয়ে বলল। ‘ চলুন এবার যাওয়া যাক। ‘
সালাহউদ্দিন পিস্তলটা পিছনে প্যান্টের চিপায় গেঁথে নিল। নিজের কাপড় পরিপাটি করে রওনা দিল এলি-ম্যান এর সাথে। এখন তাদের উদ্দেশ্য ইভানার বাসা।
প্রায় পাঁচ মিনিট হাঁটার পরে শহরে প্রবেশ করল তারা দু’জন। রাত তখন দুইটা ছুঁইছুঁই। শহরের আলো প্রায় নিভে গেছে। এলি-ম্যান এর উজ্জ্বল চোখে অন্ধকার কোন সমস্যাই নয়। তাই সালাহউদ্দিন-এর ও তেমন কোন সমস্যাই হচ্ছে না। নির্দিধায় হেঁটে যাচ্ছে তারা দু’জন।
প্রায় ২০ মিনিট পরে তারা ইভানার বাসার কাছে পৌঁছে গেল। কাছাকাছি পৌছাতেই তারা অনেক গুলো পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি বেশ কিছু কালো গাড়িও দেখতে পেল। ইভানার বাড়ির কাছে এতো পুলিশ আর FBI এর লোক দেখে ভরকে গেল তারা। কোথাও ইভানার কিছু হয়নি তো! এলি-ম্যান এর মনে অপ্রত্যাশিত ভয় বাসা বেঁধে ফেলল। কি হয়েছে এটা তাকে জানতেই হবে। সে সালাহউদ্দিনকে বলল, ‘ ইভানার রুম ৪ তলাতে। আমি জানালা দিয়ে তার রুমে প্রবেশ করব। আপনি কি আমার সাথে যাবেন? নয়তো আমি একাই যাই। এখানের পরিস্থিতি আমার কাছে ভালো ঠেকছে না। ‘
সালাহউদ্দিন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল, ‘ একসাথে যেহেতু এসেছি। একসাথেই যাই। কোন সমস্যা হলে একসাথেই মোকাবিলা করতে পারব। ‘
এলি-ম্যান মুচকি হাসল। সালাহউদ্দিনকে আবারও একহাতে চেপে ধরে কাঁধে উঠিয়ে ফেলল। অন্ধকারের মধ্যেই দ্রুত গতিতে এক দৌড়ে ইভানার বাসার পিছনে চলে গেল। তারপর লাফিয়ে লাফিয়ে বিল্ডিংয়ে উঠা শুরু করল। এলি-ম্যান এর হাত যেন টিকটিকির মতো। যেখানে লাগাচ্ছে সেখানেই আটকে যাচ্ছে। একবারও পিছলে যাচ্ছে না। মুহুর্তের মধ্যে দু’জন চার তলায় উঠে পরল। ইভানার রুমে কেউ নেই। দরজা লাগানো জানালা খোলা অবস্থাতেই আছে। জানালা দিয়ে লাফিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল এলি-ম্যান। ভেতরে ঢুকেই সালাহউদ্দিনকে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিল। পুরো ঘরে দৃষ্টি দিয়েও ইভানার দেখা পাওয়া গেল না। কোথায় গেল তবে ইভানা!
এমন সময়ের ঘরের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল। হুরমুর করে ৪ জন পুলিশ অস্ত্র হাতে প্রবেশ করল সেই ঘরে। সালাহউদ্দিন দ্রুত নিজের পিস্তল বের করে ফেলল। এলি-ম্যান এর বিশাল দেহ দেখেই দুইজন পুলিশ পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল। আর বাকি দু’জন ভয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে লাগল। এলি-ম্যান সালাহউদ্দিন কে নিজের পিছনে নিয়ে নিল যাতে করে তার শরীরে গুলি না লাগে। সালাহউদ্দিন পিছন থেকে সুচ সহ বুলেট ছুড়ল পুলিশের দিকে। ৬ টা বুলেটের মধ্যে ৪ টা লক্ষে পৌঁছাল। চারজন পুলিশই অজ্ঞান হয়ে পরে গেল। এবার যেকোনো সময়েই নিচ থেকে পুলিশ উপরে চলে আসতে পারে। গুলির আওয়াজ অবশ্যই তাদের কানে পৌঁছে গেছে। দু’জন তাড়াতাড়ি রুম সার্চ করতে লাগল ইভানার খোঁজে। কিন্তু কোথাও ইভানার দেখা নেই। এমন সময়ে সালাহউদ্দিন-এর চোখ গেল কিচেনের ফ্লোরে। কাকে যেন সেখানে দেখা যাচ্ছে। সে দ্রুত ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে কিচেন রুমে চলে গেল। রক্তে ভেসে আছে পুরো রুম। থকথকে আঠালো রক্তের নদীর মাঝখানে দ্বীপের মতো পরে আছে রক্তাক্ত লাশ। এলি-ম্যান একটা চিৎকার দিয়েই রান্নাঘরে প্রবেশ করল। মাটিতে বসেই লাশের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে হা করে তাকিয়ে রইল মুখের দিকে।
এমন সময়েই দরজায় লাথির শব্দ পাওয়া গেল। সালাহউদ্দিন এলি-ম্যানকে তাগাদা দিতে লাগল উঠে আসার জন্য। কিন্তু সে কিছুতেই লাশ ছেড়ে উঠে আসতে রাজি নয়। সালাহউদ্দিন তাকে টেনে আনতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সে। আর সাথে সাথেই ভিতরে শব্দ পেয়ে পুলিশ বাহিনী সমানে গুলি করতে থাকে ঘরের দরজায়। এবার বুঝি আর তাদের রক্ষে নেই।
(চলবে ইনশা আল্লাহ) ( কপি করা নিষেধ )
এলি-ম্যান – (৭ম পর্ব)
© #লেখক – সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)
.
#