এলি ম্যান পর্ব -০৯

#গল্প – #এলি_ম্যান (৯ম #পর্ব)

ডিএনএ- র ডাবল হেলিক্স মডেল চিত্রটা কম্পিউটার স্ক্রিনে ভাসছে। অসাভাবিক এই দৃশ্য দেখে হা করে তাকিয়ে থাকেন স্টিফেন সাহেব। এটাও সম্ভব হয় কি করে!
সাধারণ ডিএনএ-র ডাবল হেলিক্স মডেল চিত্রতে কেবল একটা রং থেকে থাকে। বিশেষ করে সাদা অথবা আকাশী রঙে প্রকাশিত হয় এই চিত্র। কিন্তু কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠা চিত্রের সাদা রঙেয়ের মাঝখানে গাঢ় সবুজ দেখা যাচ্ছে একটা বড় অংশ জুড়ে। এটা কি করে সম্ভব!

কেবল জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এর ফলে উৎপন্ন হওয়া প্রাণীর ডিএনএ চিত্রই এমন দুই ধাপের হতে পারে। স্টিফেন সাহেব জরুরি ভিত্তিতে সালাহউদ্দিনকে খবর দিল। সালাহউদ্দিনও দ্রুত চলে আসল ল্যাবরেটরিতে। এসে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে কম্পিউটার স্ক্রিনে। সালাহউদ্দিন সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেল স্ক্রিনে ডিএনএ চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। তার আর বুঝতে বাকি রইল না। সে সবার সামনে আর কিছু না বলে স্টিফেন সাহেবকে টেনে আলাদা রুমে নিয়ে গেল। তারপর গোপনীয়তার সহিত কানেকানে বলল,
‘ এই নিয়ে পরবর্তীতে সব বিস্তারিত বলব আমি। আজকে কিছুই বলা সম্ভব নয়। সব কিছু আগামীকাল বলব।’

স্টিফেন সাহেব মানতে নারাজ হলেন। তবে পরবর্তীতে আবার রাজি হয়ে গেলেন। কেননা সালাহউদ্দিন-এর উপরে ওনার অগাধ বিশ্বাস আছে যে সে কোন প্রতারণা করবে না।

সন্ধ্যার পরের ঘটনা,

ট্রাফিক পুলিশকে ডাক দিল ট্যাক্সির একজন যাত্রী। হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল। এটা পুলিশ প্রধান মিস্টার গ্রোনাড এর হাতে পৌঁছে দিন। ট্রাফিক পুলিশ আর লোকটির চেহারা দেখলেন না। তিনি সোজা কাগজটা নিয়ে গ্রোনাড সাহেবের কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হলেন। আবার কি মনে করে ঐ গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখলেন গাড়িটা বেশ জোরে টান দিল। আর পিছনের নাম্বার প্লেটটা বারবার পাল্টাতে লাগল।

পুলিশ বুঝে গেল এটা নকল নাম্বার ওয়ালা গাড়ি। সে নিজের গাড়ির নাম্বার কাউকে দেখাতে চায় না। সে অন্য পুলিশদের বিষয়টা বলার আগেই গাড়ির স্পিড কয়েক গুন বেড়ে গেল। প্রায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে লাগলো হলুদ রঙের ট্যাক্সিটা। মুহুর্তের মধ্যেই নজরের বাইরে চলে গেল ট্যাক্সিটা। ট্রাফিক পুলিশটি খুব দ্রুত কাগজটিকে পুলিশ হেক কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিল। গ্রোনাড সাহেবের কাছে কাগজটা পৌঁছাতেই দ্রুত পড়তে শুরু করলেন তিনি।
কাগজে থাকা লেখা গুলো হুবহু তুলে ধরছি আমি,

প্রিয় গ্রোনাড সাহেব…

জানি কালকে থেকেই আপনি অনেক টেনশনের মধ্যে আছেন। ইভানার মৃত্যুর পিছনের রহস্য অজানা। তার ডেড বডি কোথায় সেটাও অজানা। আশাকরি এখন আর সেই সমস্যা থাকবে না।
আমার পরিচয় আপনি জানেন না। আর জানতেও পারবেন না। তবে এতটুকু বলে রাখি। আপনারা যেই শত্রুর খোঁজ করছেন। সে আমারই স্বজাতি। কিন্তু আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। এই বিষয় গুলো ইভানার কাছে উল্লেখ করে দ্রুত তাদের আটক করাতে চেয়েছিলাম আমি। আর এরই মধ্যে ইভানা আর আমার মধ্যে একটা ভালো সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি আমার প্রিয় ইভানাকে হারিয়ে ফেললাম। কালকে সব কিছু বিস্তারিত বলতে ওর বাসায় গিয়েই দেখতে পাই সে খুন হয়ে গেছে। আর আপনার বাহিনী তার লাশ পাহারা দিচ্ছে। আমি তো আমার প্রেয়সীর খুনের বদলা নিব-ই। তাই আমি লাশ নিয়ে আসি আমার সাথে করে। এবং জানার চেষ্টা করি সেই খুনি কে। এতোক্ষণ আমি তার খোঁজ পেয়েও গেছি। সে আমারই স্বজাতি। এবার কেবল আমার প্রতিশোধ এর পালা। আমি ঐ খুনিকে অবশ্যই হত্যা করব। এবং আপনার শহরকে ঝামেলা মুক্ত করব। ইভানার লাশ তার রুমে রেখে এসেছি। তাকে যেন আর কাটা ছিঁড়া না করা হয়। আমি ফরেনসিক পরীক্ষার অন্যতম টেস্ট মানে ডিএনএ-র রিপোর্ট তৈরি করিয়ে খুনিকে চিন্তিত করেছি। সুতরাং আর কোন ময়নাতদন্তের প্রয়োজন নেই। ইভানাকে যথাযথ মর্যাদায় সমাহিত করুন। এরপরও যদি তাকে আর কাটা ছিঁড়া করা হয় তবে অবশ্যই আমি ঐ লোকদের শাস্তি দিব। আমার প্রেয়সীর গায়ে আর একটা সুচের দাগও আমি সহ্য করব না। অবশ্যই আমি প্রত্যেকটি আঘাতের বদলা নিব।
ধন্যবাদ।
.
লেখকের iD- #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik)
.
চিঠিটা পড়ে কি বলবেন তা ভেবে পায় না মিস্টার গ্রোনাড। উনি শুধু দ্রুত ইভানার লাশ উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন। আর চিঠিটা হাতে নিয়ে বারবার এপিঠ ওপিঠ করতে থাকেন। চিন্তা করতে থাকেন কে হতে পারে এই লোক। কে এইসব করেছে, এতো গুলো পুলিশের ভিতর থেকে ইভানার লাশ চুরি করে নিয়ে গেল। অথচ কেউ তাদের ঠিক মতো দেখলও না। লিফটের ভিতরেও তাদের কোন রেকর্ড নেই। একটা মানুষ লাশ নিয়ে ৪ তলার উপর থেকে কিভাবে হারিয়ে গেল!

এতো বেশি কিছু ওনার মাথায় আর ঢুকে না। স্পেশাল টিমের সবাইকে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বলা হয়। সবাই ইভানার চিন্তায় বিভোর। এমন অবস্থায় গ্রোনাড সাহেব ডাকতেই দ্রুত চলে আসেন সবাই। সবাইকে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন মিস্টার গ্রোনাড। ৪ জন মতামত দিল ময়নাতদন্ত করার ব্যাপারে। কিন্তু কয়েকজন তার বিরোধিতা করে বলল। যেই ব্যক্তি এতোকিছু করেছে। তার মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে এসব করা ঠিক হবে না। আর ডিএনএ রিপোর্ট এর চাইতে বড় কোন প্রমান নেই। সেটাই যেহেতু পাওয়া গেছে। তবে আর ময়নাতদন্তের প্রয়োজন নেই। বরং আমরা এখন এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে পারলেই হলো। ‘

আবার কেউ বলে,
‘ তবে আইনি ভাবে তো আমাদেরও একটা অবস্থান দরকার। খুনি যেই হোক বিচার বহির্ভূত সাজা হোক এটা তো আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমাদের উচিত খুনিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।’

সবশেষে মিস্টার গ্রোনাড সিদ্ধান্ত জানান,
‘ আমি আপনাদের সকলের কথাই শুনেছি। আপনাদের সকালের মতামতই নিজস্ব অবস্থান থেকে সঠিক বলে মনে হয়েছে। তাই আমি ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে, আপাদত ইভানার ময়নাতদন্ত করব না। তবে খুনি এবং চিঠি প্রদানকারী দু’জনকেই খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এখন আপনারা সবাই এখন আসতে পারেন। এবং কিভাবে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারি সেই সম্পর্কে ভাবতে থাকুন। ‘

সবাই নিজেদের ফাইল নিয়ে গোল টেবিল ত্যাগ করল। পুলিশ টিম ইভানার বাড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ঘরে তল্লাশি করে কোন ভাবেই কোন মানুষের ঘরে ঢুকার প্রমান পেল না। বেশ খানিকক্ষণ চেক করে অবশেষে লাশ নিয়ে ফিরে আসল তারা।
.
.
.
সালাহউদ্দিন কিছু খেয়ে দেয়ে বাইরে বের হয়ে গেল। ব্রিজের কাছে গিয়ে অন্ধকারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই এলি-ম্যানও সেখানে চলে আসল। সালাহউদ্দিন-এর সাথে করমর্দন করে নিল। তারপর একদিকে হাঁটা শুরু করল। হাঁটতে থাকা অবস্থাতেই নিজের প্ল্যানিং বুঝাতে লাগল। সালাহউদ্দিন কিছুটা শোনার পরেই বলল,
‘ আপনি যা ভাবছেন সেভাবেই হবে। কিন্তু তার আগে আমাদের অস্ত্র প্রস্তুত করতে হবে। কেননা তাদের ওখানে হয়তো আরো অনেক কিছুই থাকতে পারে। এমনই অত্যাধুনিক রোবটও থাকতে পারে। তখন আমরা কি করব? তাই আমাদের অস্ত্র প্রয়োজন। ‘

‘ আমি একাই দু’জনকে দেখতে পারব। কিন্তু আপনাকে নিয়েই তো টেনশন। তাদের ধারালো জিভে একবার আঁটকে গেলে টেনে ছিঁড়ে গিলে ফেলবে। ‘
একটু গম্ভীর গলায় বলল এলি-ম্যান।

‘ আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন না-কি! এভাবে বললে তো ভয় পেয়ে যাবো। আমার কাছে যেই পরিমাণ অস্ত্র আছে। তা দিয়ে হয়তো আপনার মতো ৭ জনকে হত্যা করা সম্ভব। তবে তার আগে আমার জানতে হবে আপনি কত ভোল্ট বিদ্যুৎ সহ্য করতে পারেন।’ জানার ইচ্ছে নিলে বলল সালাহউদ্দিন।

‘ ৩৬০ ভোল্ট সহ্য করার ক্ষমতা আছে আমার মধ্যে। তবে আমাদের দূর্বলতা হচ্ছে শব্দ। জেনেটিক ভাবেই আমরা এই দিক দিয়ে দূর্বল। উচ্চ কম্পাংকের শব্দ আমাকে অজ্ঞান করে দিতে পারে। ‘

‘ সমস্যা নেই, তবে আমি কমপক্ষে ৪ জনকে মেরে ফেলতে পারব। আর যদি তারা একে অপরের কাছে থাকে তবে আরো বেশি লোককে হত্যা করা সম্ভব।’

‘ কিন্তু সেটা কিভবে? গুলি? ‘

‘ না আমি গুলির ব্যবহার তেমন করি না। আমি তীরের ব্যবহার করি। ইলেকট্রনিক তীর। যা সর্বোচ্চ ২৪০ ভোল্ট বৈদ্যুতিক শক দিতে সক্ষম। আর গুলি হিসেবে এই সুই গুলো ব্যবহার করি। এটা কেবল অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহার হয়। উচ্চ মাত্রার কেমিক্যাল আছে এতে। ‘
কথাটা বলেই নিজের পিস্তল থেকে একটা বুলেট বের করে দেখাল।

এলি-ম্যান যেন ভরসা পেল। সে মনে মনে কেবল প্রতিশোধের অপেক্ষা করছে। কিন্তু নিজের মাথা যথাসম্ভব ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে।

এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সালাহউদ্দিনকে বলল,
‘ আচ্ছা ডিএনএ রিপোর্ট কি ঠিক মতো এসেছে? ‘

‘ হ্যাঁ ঠিকঠাক এসেছে। রিপোর্ট দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে। একটা মানুষের ডিএনএ কোন ভাবেই এমন হতে পারে না। আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে। কিন্তু আমি পরবর্তীতে জানাবো বলে এড়িয়ে গেছি। আমি স্টিফেন সাহেবের সাথে রাতে কথা বলব ভালো করে। উনি অত্যন্ত ভালো মানুষও বটে আশাকরা যায় আপনার কোন সমস্যা হবে না। ‘

এলি-ম্যান সামান্য ভরসা পেলেও তার মন পুরোপুরি সায় দিল না। কেননা বিজ্ঞানীদের সাথে কোন বিশ্বাস নেই। এরা নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য অনেক জঘন্য কাজেও হাত দিতে পারে। তাই সে এখন স্টিফেন সাহেবের সাথে দেখা করতে রাজি নয়। কিন্তু সালাহউদ্দিন-এর কথায় কিছুটা আস্থা পাওয়াতে বলে,
” তবে আর বেশি চিন্তা নেই। আপনি কথা বলে দেখতে পারেন। যদি আমার সাথে খারাপ কিছু করার ইচ্ছে উনি ত্যাগ করতে পারেন। তবে আমি ওনার সাথে অবশ্যই দেখা করব। এবং ওনার মনের ইচ্ছেও পূরণ করতে সাহায্য করব। ‘ হাস্যজ্বল মুখে উত্তর দেয় এলি-ম্যান।

সালাহউদ্দিনও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, ‘ বেশ তবে এই কথাই রইল। আমরা তবে আজ রাতেই রওনা হবো। আমি এখুনি গিয়ে স্টিফেন সাহেবের সাথে আলোচনা করি এবং অস্ত্র গুছিয়ে নিই।’

‘ আমরা পরে যোগাযোগ করব কিভাবে?’

‘ কেন এখানে এসেই। কিন্তু আমি কখন আসব সেটাই বা আপনি কিভাবে জানবেন? এইতো পরে গেলাম বড্ড ঝামেলায়। ‘

‘ তবে এখন কি করা যায়! আমি তো যোগাযোগের জন্য কিছুই ব্যবহার করি না।’

‘ তবে আপনি চাইলে এখুনি আমার সাথে চলে আসতে পারেন। আপনি না হয় আমার রুমে কোথাও লুকিয়ে থাকবেন। তারপর স্টিফেন সাহেবকে বুঝানো শেষ হলেই আপনি বের হবেন। ‘

‘ এটা অবশ্যই মন্দ বলেননি। কিন্তু আবার একটু রিস্কও হয়ে যায়। তবুও চলুন স্টিফেন সাহেব আমার সাথে উল্টা পাল্টা করার চেষ্টা করলে শেষে পুলিশ গুলোর মতো দশা হবে। ‘
এলি-ম্যান এর গলায় বীরত্বের বড়াই স্পষ্ট হয়ে যায়। আসলেই সে এমন কিছু করতে পারে।

দু’জন রওনা দিল স্টিফেন সাহেবের বাড়ির দিকে। মাথার টুপি ঠিক করে নিয়ে চেহারা ভালো করে ঢেকে নিল এলি-ম্যান। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পরেই তারা উপস্থিত হলো স্টিফেন সাহেবের বাসায়। ডাইনিং রুমে ঢুকতেই মিকির সামনে পরল তারা দু’জন। মিকি একবার সালাহউদ্দিন-এর তাকাল। আরেকবার তাকাল এলি-ম্যান এর দিকে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবেই মিকি তাদের দু’জনকে অবাক করে দিয়ে দু’হাতে দুই পিস্তল তাক করে ধরল এলি-ম্যান এর দিকে।

(চলবে ইনশা আল্লাহ, আগামী পর্বেই শেষ করব)

গল্প – এলি-ম্যান (৯ম পর্ব)

© #লেখক – সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)

#সালাহউদ্দিন_তারিক_মৃধা
#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here