এলি ম্যান পর্ব -০৮

#গল্প – #এলি_ম্যান (৮ম #পর্ব)

দরজায় লাথির শব্দ পাওয়া গেল। সালাহউদ্দিন এলি-ম্যানকে তাগাদা দিতে লাগল উঠে আসার জন্য। কিন্তু সে কিছুতেই লাশ ছেড়ে উঠে আসতে রাজি নয়। সালাহউদ্দিন তাকে টেনে আনতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সে। আর সাথে সাথেই ভিতরে শব্দ পেয়ে পুলিশ বাহিনী সমানে গুলি করতে থাকে ঘরের দরজায়। এবার বুঝি আর তাদের রক্ষে নেই।

সালাহউদ্দিন একটা টেবিলে লাথি দিয়ে দরজা বরাবর সামনে দিল। দরজা ভেদ করে আসা গুলি গুলো সব টেবিলে লাগছে। টেবিলের কাঠের উপরে মনে হয় ধাতব পদার্থের প্রলেপ দেওয়া তাই গুলি লেগে এদিক ওদিক ছিঁটকে পরতে লাগল। একটা গুলি টেবলের সাথে ধাক্কা খেয়ে এলি-ম্যান এর শরীরে লাগল। এতেই রাগে ফেটে পড়ল এলি-ম্যান। লাশটা কোলে করে রান্নাঘরের টেবিলে উঠিয়ে রাখল। অতঃপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে জিনিসপত্র এলোমেলো করে সামনে এসে দাঁড়াল সে। অদ্ভুত পোশাকের পকেট থেকে দুইটা ‘মিস্ট ককটেল” বের করে দিল সালাহউদ্দিন-এর হাতে। আর নিজে একটা টেবিল আলগে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলল দরজার উপরে। স্টিলের টেবিলের ধাক্কায় গুলি লেগে দূর্বল হয়ে থাকা দরজাটা ভেঙে বাইরে গিয়ে পরল। সাথেই কয়েকজন পুলিশ দরজার নিচে পরে কাতরাতে লাগল। এলি-ম্যান আবারও আরেকটা টেবিল টেনে নিয়ে দুইহাতে উপরে তুলল পুলিশ গুলো এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করতেই সালাহউদ্দিন ককটেল ছুঁড়ে দিল। সাথে সাথেই গুলি বন্ধ হয়ে গেল। সালাহউদ্দিনও ধুঁয়ার ফলে কিছুই দেখতে পায় না। শুধু ধুপধাপ শব্দ আসে তার কানে। একটু পরে ধুঁয়া উড়ে যেতেই দেখতে পায় সব গুলো পুলিশ আহত হয়ে পরে আছে। আর এলি-ম্যান লাশটা কোল নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়েছে। সালাহউদ্দিন কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারল না। এলি-ম্যান লাশটাকে নিয়ে এক লাফে জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল। সালাহউদ্দিন জানালার কাছে গিয়ে নিচে তাকাতেই দেখতে পেল এলি-ম্যান লাশটা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। খুব দ্রুত লাশটা একজায়গায় রেখে লাফিয়ে বিল্ডিংয়ে উঠা শুরু করল। মাত্র ১০ সেকেন্ডেই সে চার তলাতে উঠে পরল। সালাহউদ্দিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কাঁধে তুলে নিল। আবারও এক লাফে বেরিয়ে গেল জানালা দিয়ে।

নিচে পরেই আবার দৌড়ে চলে গেল লাশটার কাছে। সালাহউদ্দিনকে নামিয়ে দিয়ে এবার লাশটা নিজের কাঁধে তুলে নিল। দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগল এক দিকে। সালাহউদ্দিনও চুপচাপ তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে লাগল। হাঁটছে বললে ভুল হবে। সাধারণ সালাহউদ্দিন ছোট থেকেই অনেক জোরে হাঁটে। তবে এলি-ম্যান এর সাথে সে কেবল হাঁটছে না। রীতিমতো দৌড়াতে হচ্ছে তাকে। কিছুদূর গিয়ে সালাহউদ্দিন প্রশ্ন করল,
– ‘ সেই কখন থেকে কিছুই বলছেন না। আর এই লাশটা-ই বা কার চেনা তো যাচ্ছে না। ‘

এলি-ম্যান একরাশ হতাশা নিয়ে বলে,
‘ সালাহউদ্দিন তুমি এই জিনিসটা বুঝলে না! পৃথিবীতে কাকেই বা আমি এতো আপন করে নিব! আর ইভানার ঘরে আর কে-ই বা এসে পরে থাকবে।’

‘ এটা কি ইভানার লাশ! ‘

‘ হুম, আমার হাস্যজ্বল ইভানা রক্তাক্ত হয়ে আজ আমারই কাঁধে !’ কান্নার সুর আসতে থাকে এলি-ম্যান এর গলা থেকে।

সালাহউদ্দিন বুঝতে পারে এলি-ম্যান এর সাথে ইভানার খুব গভীর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে এটা ভেবে পায় না, একজন অতিমানব এর সাথে ইভানার সম্পর্ক হলো কিভাবে। এই ভাবনা মাথায় আসলেও সে আর বলতে পারে না। কেননা এলি-ম্যান এমনিই খুব ভেঙে পরেছে। এই কথা বললে নিশ্চয়ই রাগ করবে। তাই কোন কথা না বলে চুপচাপ এলি-ম্যানকে অনুসরণ করল সে।

একটা পরিত্যক্ত ভাঙা বাড়ির সামনে গিয়ে থামল তারা দু’জন। এলি-ম্যান ইশারায় সালাহউদ্দিনকে বলল কিছু জিনিস পরিষ্কার করে ভিতরে ঢুকতে। সে কথা মতোই সব পরিষ্কার করে ভিতরে ঢুকে গেল। ভাঙা বাড়ির নিচের তলা অনেকটাই পরিষ্কার। দেখেই বুঝা যায়, এখানে কেউ হয়তো থাকে। চাঁদের আলোতে এই সামান্যই বুঝা যাচ্ছে।

এলি-ম্যান ইভানার লাশটা একটা পরিষ্কার জায়গায় শুইয়ে দিল। তারপর নিজের শরীরের কাপড় দিয়ে বিভিন্ন জায়গার রক্ত গুলো মুছে দিল। মুখের উপরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত। রক্ত গুলো মুছে নিতেই বুঝা গেল এইসব রক্ত তার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে। এলি-ম্যান ইভানার মুখটা হা করাতে-ই দেখতে পেল ভিতরে জিহ্বা নেই। জিহ্বার পাশাপাশি আরো কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায় ইভানা। এলি-ম্যান রাগে ফুঁসছে। এই কাজটা যে তার স্বজাতি করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এবার নিশ্চয়ই বড় কোন ঝামেলা হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। ইভানার প্রতি এলি-ম্যান এর প্রচুর ভালোবাসা আছে। সে তার প্রেয়সীর খুনের বদলা না নিয়ে ক্ষান্ত হবে বলে মনে হয় না। এলি-ম্যান ইভানার মুখের ভিতর থেকে কিছু রক্ত বের করে নিল। লালা মিশ্রিত রক্ত গুলো একটা পরিষ্কার পাতায় রাখল। তারপর পায়ের কাছ থেকে কিছু রক্ত নিয়ে আরেকটা পরিষ্কার পাতায় রাখল। আঠালো হয়ে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত গুলো সহজেই পাতার উপরে আঁটকে রইল। এলি-ম্যান পাতা দুইটা সালাহউদ্দিন এর কাছে দিয়ে বলল।

‘ এগুলোর ডিএনএ টেস্ট করাও। পায়ের কাছ থেকে নেওয়া রক্তের ডিএনএ টেস্ট আগে করবে। তারপর মুখের ভেতরের। মুখের ভেতরের রক্তের ডিএনএ এর রিপোর্ট দুইটা আসতে পারে। তারমধ্যে যেটা পায়ের রক্তের সাথে মিলবে না সেটা যত্ন করে রেখে দিবে। সেটার সাথে মিলানোর জন্য নমুনা আমি পরে দিব। ঐ গুলো চেক করে ওটার সাথে মিলিয়ে দেখবে।’

সালাহউদ্দিন পাতা দুইটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
‘ কিন্তু এখন আমি যাব কিভাবে? রাত্রি তো অনেক হয়েছে। আর আমি তো রাস্তাটা চিনতেও পারব না। ‘

‘ এখন যেতে হবে না। ঘুমিয়ে নাও এখানেই। কিছুক্ষণ পরেই তো সকাল হয়ে যাবে। তখন চলে যেতে পারবে।’

সালাহউদ্দিন সম্মতি জানাল। পাতা দুইটা এলি-ম্যান এর হাতে দিয়ে দিল। সে ঐগুলো নিজের কাছে রেখে দিল। আর সালাহউদ্দিনকে ঘুমানোর একটা জায়গা দেখিয়ে দিল। সারারাতের ক্লান্তি যেন নেমে এল সালাহউদ্দিন এর শরীরে। শক্ত ফ্লোরে কোন রকমে শুয়ে পরতেই ঘুমিয়ে গেল সে।
এলি-ম্যান দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসে রইল ইভানার দিকে তাকিয়ে। চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগল ইভানার কথা। কেমন হুট করেই তাকে ভালো লেগে গেল। কেমন করে মায়া তৈরি হয়ে গেল। আবার মুহুর্তের মতোই হারিয়ে গেল সে।

ইভানার মৃত্যুটা সে কোন ভাবেই মানতে পারছে না। যেখানে ইভানা তাকেও গুলি করেছে সেখানে তার স্বজাতি কিভাবে তাকে খুন করল! হয়তোবা ইভানা ভেবেছিল সেটা সে। আর তাই তার শত্রু স্বজাতিকে গুলি না করে উল্টো নিজের কাছে টেনে নিয়েছিল। এভাবেই ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে উল্টো বলি হয়ে গেল সে। এলি-ম্যান দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ মুছতে থাকে। পৃথিবীর বুকে আপন বলতে কেউ ছিল। সেও চলে গেল তাকে ছেড়ে।

লেখকের iD- #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik)
.

সকালের সূর্যের আলো মুখের উপরে পরতেই ঘুম ভাঙে সালাহউদ্দিন-এর। পাশাপাশি নাকে একটা উদ্ভট গন্ধ আসছে। আর শুয়ে থাকতে পারে না সে। উঠে পরে তাড়াতাড়ি । এলি-ম্যান তখনও ইভানার লাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। সালাহউদ্দিন উঠে দাঁড়াতেই তাকে শুভ সকাল বলে অভিনন্দন জানায়। তারপর আবার ইভানার রক্তের নমুনা গুলো সালাহউদ্দিনকে দিয়ে বলে,
‘ দুঃখীত যে আমার কাছে আপনাকে খেতে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। তাই এই সকাল বেলাতে আপনাকে খালি মুখেই বিদায় দিতে হচ্ছে। ‘

সালাহউদ্দিন কোন কথা বলে না। এই প্রথম সে সকালের উজ্জ্বল আলোতে এলি-ম্যান কে দেখেছে। তার বিশালাকৃতির শরীর দেখেই সে হতবাক। বর্তমান সময়ে এতো লম্বা মানুষ পাওয়া সত্যিই মুশকিল। দিনের বেলাতে তার চোখ দুটো বেশি মায়াবী নয়। একদম সাধারণই দেখা যাচ্ছে। বলতে গেলে একটু বিচ্ছিরিই বলা যায়। রাতের বেলাতে আলো বের হয় বলেই হয়তো এতোটা মায়াবী দেখায়। ইভানার লাশ থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। এখানে আর থাকা সম্ভব না। তাই সালাহউদ্দিন দ্রুত প্রস্থান করতে নিল। কিন্তু এলি-ম্যান তার হাত ধরে ফেলল। আবারও বলতে লাগল,

‘ দ্রুত বাসায় চলে যাবেন। আর এই নমুনার রিপোর্ট বের করবেন। আজ রাতেই কিন্তু আমাদের ফাইনাল মিশন। বিষয়টি মাথায় রাখবেন। আর আমি ইভানার লাশ ওর বাড়িতেই রেখে আসব আজ সন্ধ্যায়। আর আপনার কাপড় চেক করে নিন কোন রক্তের দাগ আছে কি-না।’

সালাহউদ্দিন নিজের কাপড় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিল। তারপর রওনা দিল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। পাতার উপরে লেগে থাকা রক্ত সম্পূর্ণ শুঁকিয়ে গেছে। এবং পাতার সাথে আঁটকে গেছে। তাই সে দুইটা পাতা দুই পকেটে নিয়ে শহরের দিকে রওনা দিল। রাস্তায় থাকা পায়ের ছাপ অনুসরণ করে দ্রুত হেঁটে চলল সে। শহরে পৌঁছেই একটা ট্যাক্সি ডেকে নিল। স্টিফেন সাহেবের বাসার ঠিকানা বলে গাড়িতে উঠে পরল। পকেটে ভাড়ার পরিমান টাকাও নেই। তবুও গাড়িতে উঠে পরল। এক গাড়ি দিয়েই চলে গেল স্টিফেন সাহেবের বাসায় গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বলে বাসায় ঢুকে পরল সে। ঘর থেকে বাড়তি টাকা এনে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিল।
.
.
ভিতরে ঢুকতেই সামনে পরল মিকি। সালাহউদ্দিন-এর রাগ উঠে গেল তাকে দেখেই। খালি রোবট বলে মিকিকে কিছু করা বাকি রেখেছে সে। রাগ সামলে নিয়ে বলল তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আসার জন্য। কি কি আনতে হবে সব গুলোর নামও এক এক করে বলে দিতে হল।

মিকি অনুগত সন্তানের মতো সব কাজ শুরু করে দিল। সালাহউদ্দিনও দ্রুত ফ্রেস হয়ে এসে খাওয়া শেষ করল।

কিছুক্ষণ পরেই স্টিফেন সাহেব সালাহউদ্দিন-এর রুমে আসল। সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলতে শুরু করল,

‘ কি ব্যাপার ডিটেক্টর সারারাত কোথায় ছিলে? ‘

‘ কোন জায়গায় ছিলাম তা নিজেও জানি না। তা সকালের খবর দেখেছেন?’

‘ দেখলাম তো, FBI এর স্পেশাল টিমের প্রধান না-কি খুন হয়েছে। আবার তার লাশও গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।’

‘ হ্যাঁ, এইসব বিষয়ই জানি। আমি সেখানে ছিলাম, সব দেখেছি কি কি হয়েছে। এখন ল্যাবে চলুন। ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।’

‘ হঠাৎ ডিএনএ টেস্ট কিসের? ‘

‘ এতো কথার উত্তর এখন দেওয়া সম্ভব না। আগে টেস্ট তো শেষ করুন তারপর সব বলছি।’

সালাহউদ্দিন নমুনা গুলো স্টিফেন সাহেবের কাছে দিয়ে টেস্টের নিয়মটা বলে দিল। স্টিফেন সাহেব নমুনা দু’টো ল্যাবের ডাক্তারের হাতে তুলে দিল। আর অপেক্ষায় থাকলো রিপোর্ট তৈরি হওয়ার।
.
.
তাদের অপেক্ষার অবশান ঘটে বিকাল বেলাতে। ডাক্তার জরুরি তলব করে স্টিফেন সাহেবকে। ডিএনএ -এর ডাবল হেলিক্স মডেল চিত্রটা কম্পিউটার স্ক্রিনে ভাসছে। অসাভাবিক এই দৃশ্য দেখে হা করে তাকিয়ে থাকেন স্টিফেন সাহেব। এটাও সম্ভব হয় কি করে!

( চলবে ইনশা আল্লাহ্ ) (অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ )

এলি-ম্যান – (৮ম পর্ব)

© #লেখক – সালাহউদ্দিন তারিক ( জুনিয়র মুগলি)

.

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here