ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ২৩

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-২৩

“কিছু না!আপনার কষ্টগুলো শুনবো।বুকটা কি আরেকটু আমার কানের কাছে আনবেন?”

অয়ন আনে নি।সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তবে পৃথী আর অয়নের অপেক্ষা করে নি। সে নিজে থেকেই অয়নের বুকের ভেতরে মিশে যায়।আর বলে,

“কষ্টগুলো বুকে চেপে রেখে ভেবেছেন খুব পার পেয়ে যাবেন?এই পৃথী তার কিছুই জানবে না?পৃথী এখন সব জেনে গেছে।আপনার পরিবার,পরিবেশ,অতীতের সব সব!আর আপনি কি না এতটা মাস তার থেকে সব লুকিয়ে রেখেছেন!তা পেরেছেন টা কীভাবে আপনি?একটিবারও তাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি।নাকি আপনার পার্সোনাল লাইফ ঘাটা তার অধিকার না,মিস্টার অয়ন!”

কথাগুলো বলতে বলতে পৃথীর গলার স্বরটা ভেঙ্গে আসতে থাকে।অয়ন আরো লক্ষ করে পৃথী এই ভাঙ্গা কন্ঠের মাঝে হাউমাউ করে এই বুঝি কেঁদে ফেলবে!আর কেঁদে ফেললে ত ! খুব কাঁদবে।চোখমুখ ফুলিয়ে কাঁদবে। তারপরও কান্না থামবে না।ঠিক তার মার মতন।প্রথম ত তার মার এই অভ্যেসটা পৃথীর মাঝে বুঝা যায় নি ।কিন্তু যেই দিনেক দিন অয়ন হালকা পাতলা বিপদ মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরতো-যেমন কেঁটে যেত।পাঁকা রাস্তার উপর পড়ে পা থেঁতলে যেত আবার অয়ন কিছু নিয়ে চিন্তা করতো।তখন অয়নের নিজের থেকেও পৃথীর মাঝে অস্থিরতা ভাব বেশি দেখা যেত।সে কাঁদতে কাঁদতে এদিকওদিক ছুট লাগাতো কী থেকে কী করবে,কীভাবে করবে হ্যানত্যান! অয়ন আর দেরী করলো না!ওমনি নিজের বাহুডোরে পৃথীকে খুব শক্ত করে চেপে ধরলো,

“একদম কাঁদবে না।একদমই না!আমার কোনো কষ্ট ছিল না।যেটুকু ছিল তা আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি।এখন আমি বড্ড সুখে আছি আমার বউ এবং আমার বউয়ের এই পেটের বাচ্চাটাকে নিয়ে।খামোখা মন খারাপ কেন করো!”

পৃথী এবার ফুঁপাতে ফুঁপাতে কেঁদে উঠে!

“আরেহ এই মেয়ে ত সত্যি সত্যি কাঁদছে!”
“সাত সাতটা বছর প্রিয়জনদের থেকে দূরে থেকেছিলেন।বুকে ছিলো কত দলা দলা কষ্টের যন্ত্রণা!এতটা যন্ত্রণা সহ্য করেও বলছেন কষ্টে ছিলেন না।খুব ভালো ছিলেন!কীভাবে পারেন মনকে এতটা শক্ত রাখতে? কীভাবে পারেন স্বাভাবিক থাকতে?আমি যে শুনেও তা সহে নিতে পারছি না।আমার ভেতরটা যে জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে…।”
“কোথায় জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। একটু দেখাও ত?দেখি ছাই বের হয়েছে কিনা ?”বলেই অয়ন বিভোর হাসিতে মগ্ন হয়ে উঠে!তা দেখে পৃথী এবার চোখজোড়া তীক্ষ্ণ করে ফেলে।মানুষটি সত্যিই হাসছে?নাকি ভালো থাকার অভিনয় করছে!হ্যাঁ অভিয়নই হবে।নাহলে এতটা মাস েন তাকে তার পার্সোনাল জীবনের কথা বলে নি?কেন এর এক ছিটেও তাকে বুঝতে দেয়নি?সে কি খুব কষ্ট পাবে ভেবে যেমনটি সে নিজেও ফিল করে এসেছিল।হয়তো তাই ই।তাহলে এখানে তা না বলার এমন কারণ দেখছে না পৃথী!ভেবেই পৃথী হা করে জোরে একটা শ্বাস টেনে কান্নার ভাঁজ থামায়।তারপর অয়নকে বলে,

” আপনিও পারেনও অয়ন!”

অয়ন ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলে।না বুঝার মতন ভাণ করে বলে,
“কী পারি?”
পৃথী চুপ করে থাকে। খানিক্ষন এভাবে থাকার পর তারপর বলে,

“কিছু না!
এটুকু বলেই অয়নকে পাশ কেঁটে চলে আসতে উদ্ধত হয়।ঘুরে বাম পা ফেলে চলে যেতে নিলেই অয়ন ধপ করে পৃথীর বাম হাতটা ধরে ফেলে।তরহর তারদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,

” আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে বউ?”
“তাহলে পানি খেয়ে নিন?”
“এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে না।অন্যকিছু খেতে ইচ্ছে করছে!”
“কী?”
বলতেই অয়ন পৃথীর ঠোঁটের ভেতর তার ঠোঁটজোড়া ডুবিয়ে দেয়!!অয়নের আকস্মিক এমন কান্ডে পৃথী কিছুই বলে নি বা অয়নকে বাঁধা প্রদান করতে একটুও প্রয়োজন বোধ করে নি।সেও যেন চায় অয়ন তার কাছে আসুক। আরো কাছে!অয়ন ঠোঁট চোপড়াতে চোপড়াতে পৃথীর একদম কাছে চলে আসে।এসেই পৃথীকে আরো জড়িয়ে ধরে।অয়নের স্পর্শতায় পৃথীর ভেতরটা ধক করে উঠে।এই ছেলেটার মনে কত কষ্ট,কত দুঃখ,কত বেদনা। সে কি পারবে না এই ছেলেটির আগের সব বিষাক্তময় স্মৃতি গুলো ভুলিয়ে দিতে?পারবে।অবশ্যই পারবে।তার ভালোবাসা,কেয়ার এবং সর্বোচ্চ দিয়ে হলেও । তার শাশুড়ী মাকে আজ সে তাই ই কথা দিয়েছে।পৃথীর মনের হাজারো ভাবনার মাঝেই অয়ন পৃথীকে ছেড়ে দেয়।পৃথী সাথে সাথে ভাবনা থেকে বেরিয়ে ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলে। বলে,

“কী ব্যাপার?ছেড়ে দিলেন যে?আরেকটু ভালোবাসুন না?”

অয়ন মুহূর্তে মাথা তুলে খিলখিল করে হেসে উঠে।পৃথী সেই হাসির দিকে তৃপ্তি ভরা চোখে তাকায়”হ্যাঁ অয়ন,হ্যাঁ আমি আপনার এই হাসিটুকুই দেখতে চাই।আর তা সবসময়!” পৃথীর ভাবনার মাঝেই অয়ন হাসি থামায়।

“এখন তোমাকে ভালোবাসার টাইম না!আমার প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে তাই তোমার ঠোঁট খেলাম।আর পেটে প্রচন্ড খিদেও লেগেছে।খিদের জন্যে এবার ভাত দাও!”
“তৃষ্ণার জন্যে ঠোঁট আর পেটের খিদার জন্যে ভাত!হোয়াট আ লজিক?”
“লজিকটার বিশ্লেষনে আর যাচ্ছি না।আশা করি তুমি বুঝেতে পেরেছো!কী বুঝো নি?!”
বলেই অয়ন ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি টানে।তা দেখে পৃথীর পিত্তি জ্বলে উঠে।।
“ব্যাটা লুচু!তৃষ্ণার জন্যে ঠোঁট?আরেহ আপনাদের ছেলেদেরই ত আদি একটা বাণী”মেয়েদের ঠোঁট রসগোল্লার চাইতেও মিষ্টি।আর সেই মিষ্টি ঠোঁট তৃষ্ণা মিটায় কীভাবে?”
অবশ্য প্রশ্নটা পৃথীর মনের কোণায়ই থেকে গেলো।অয়নকে আর প্রকাশিত মুখে কথাটার জবাব দেয় না।দিলেও ব্যাটা এখন কথায় প্যাঁচ লাগাবে।রাবারের মতন লম্বা করে। এর কথার সাথে পরে আর পেরিয়ে উঠা যাবে না।তারচে সোঁজা কথায় আসাই ভালো।এবার পৃথী সোঁজাসাপ্টা কথায় যায়,

“আচ্ছা,নিচেন চলুন!আমারও খুব খিদে পেয়েছে!”
“চলো লক্ষীটি… ”

৩১.

অয়ন এবং পৃথী দুজনে পাশাপাশি বসে খাচ্ছে।রহিমা,ফুলমতি টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে খাবার পানি বেড়ে দিচ্ছে।রহিমা স্পেশালি পৃথীর জন্যে আজ আলাদা অন্যকিছু রান্না করেছে।তা হলো কাতল মাছের ছড়ছড়ি!তা পৃথীর প্লেটে ফুঁড়ে দিতেই পৃথী “ওয়াক ওয়াক” করে শব্দ কীে উঠে।তৎক্ষনাৎ রহিমা পৃথীর দিকে এগিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

“কি হয়েছে পৃথী মা?”
“প্লিজ খালা,কাতল মাছটা প্লেটের উপর থেকে সরান!আমি এখুনি বমি করলাম!”
“কিন্তু এটা ত ভালো ।তুমি খেতে পারবে মা!”
“নাহ প্লিজ সহ্য করতে পারছি না!”
“আরেহ এরকম হবেই।একটু কষ্ট করে খেতে হবে মা।নাহলে পেটের বাচ্চা অপুষ্ট হবে।”

অয়ন পাশ থেকে বলে উঠে,
“ও যেহেতু চাচ্ছে না আপনি সরিয়ে নিন!!”

রহিমা সাথে সাথে প্লেট থেকে মাছটা তুলে নেয়।আর তা অন্য পাতিলে রাখে।তারপর পৃথীকে বলে,

“এখন গন্ধ লাগছে মা?”
পৃথী দু’পাশে মাথা নাড়ে।রহিমা তৃপ্তির হাসি হাসে।হাসিয়ে থামিয়ে বলে,

“মা রে মা হওয়া খুব কষ্ট!মা হতে গেলে কত কিছু সহ্য করা লাগে।মা রা এটা খেতে পারে না।ওটা খেতে পারে না।শুধু গন্ধ আর গন্ধ!বলা য..

রহিমার কথার মাঝেই অয়নের মোবাইল ফোন বেঁজে উঠে!অয়ন হাত বাড়িয়ে রহিমাকে হাত ইশারা করে চুপ করতে।রহিমা চুপ হয়ে যায়। অয়ন কলটা রিসিভ করে!”

“হ্যাঁ রিফাত বলো?”
“ভাই জলদি একটু ইনবক্সটা চেক করুন!জলদি!”

অয়ন কল কেঁটে ইনবক্সে যায়।ইনবক্স চেক করে দেখে একটা ফটো পাঠিয়েছে রিফাত।ফটোটি একটা লোকের।আর নিচে লোকটির পরিচয় বিবরণ!লোকটিকে দেখামাত্রই অয়নের চোখমুখে একটা চমৎকার হাসি ফুঁটে ওঠে।এমনভাবে ফুঁটে উঠে এতদিন যেন সে এই লোকটিকে দেখারই অপেক্ষায় ছিল!সে তরহর করে পৃথীর দিকে মোবাইলের স্ক্রিনটা তাক করে বলে,

“এই দ্যাখো,পৃথী?এতদিন যেই শালা আমার বিজনেসের উপর হামলা করার চেষ্টা করেছে। তার লোকদের দিয়ে অফিসে ঝামেলা করিয়েছে সেই শালাকে খুঁজে পেয়েছি!এই সেই গুন্ডা শালা!দ্যাখো?”

পৃথীও অয়নের মতন হাসি হাসি মুখে স্ক্রিনের দিকে তাকায়!তাকাতেই তার চোখমুখ কুঁচকে আসে তার!ভরাট সন্দিহান গলায় বলে উঠে,

“এই লোকটি কেনজানি আমার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে….!”
“চেনা চেনা মনে হচ্ছে? ”
“হ্যাঁ!”

অয়ন এবার তার হাতের ফোনটা নিচে রেখে অন্যদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে!খুবই গভীর মনোযোগ সহকারে ভাবতে থাকতে।ভাবতে ভাবতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বলে উঠে,

“এ সেই না ত যে তোমাকে কিডন্যাপ করেছে!”
“ইয়েস,ইয়েস!সেই ই এ!আমি নিশ্চিত! ”

চলবে…

(আমি এতটাই বিরক্ত!মন চায় কোনোরকমে টেনেটুনে গল্পটা শেষ করে দিতে!মোবাইলটা এখনো দিচ্ছে না!বলছে আগামী কাল দিবে!যদি কালও না দেয় এবার সত্যি লোকটাকে কড়া দোলাই করব!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here