ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ৪

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-০৪

পৃথী অয়নের বাড়ির গেইট অব্দি পোঁছে যায়।গেইট ভেতর থেকে লক করা।দারোয়ানকেও আশপাশে দেখতে পাচ্ছে না । এখন ঢুকবে কীভাবে!ভেবেই পৃথী উত্তেজনা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে গেইটের হাতলে শব্দ করে একটা নাড়া দেয়!এভাবে দুইবার,তিনবার…!তার এক মিনিট পরই কেউ একজন এসে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়।পৃথী লোকটিকে চিনতে পারে নি।তবে লোকটি পৃথীকে খুব ভালো করেই চিনতো পেরেছে!লোকটি ছিল করিম।সে তার পান খাওয়া সবগুলো দাঁত বের করে বলে উঠে,

“আরে আপা আপনি এখানে?”
“মিস্টার অয়ন বাসায় আছেন?”
“আপা,স্যার তো সেই সকালেই উনার অফিসে চলে গেছেন।”

কথাটা শুনে পৃথীর মুখে মুহূর্তে একটা মলীনতা ফুঁটে ওঠে।সে হয়তো এমনটা শুনতে আশা করে নি।আশা করেছে অয়নকে বাসায় পাবে।করিম তা বুঝে ফেলে।

“স্যারকে খুব বেশি ই কি প্রয়োজন, আপা?”
“জ্বী!”
“আচ্ছা দাঁড়ান আপনি। আমি স্যারকে কল দিতেছি…. !”
বলেই করিম তরহর করে পকেট থেকে ফোনটা বের করে অয়নের নাম্বারে কল দেয়।কয়েক বার রিং হতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হয়।

“হ্যালো,স্যার?”
“—————!”
“স্যার,পৃথী আপা আসছে আপনার সাথে দেখা করতে।”
“————–।”
“জ্বী,আচ্ছা।বলতেছি।রাখলাম তাহলে।”

করিম কলটা নামিয়ে পৃথীকে বলে,

“আপা,স্যার বলছে আপনি ভেতরে যেয়ে বসতেন। স্যার দশ মিনিটের মধ্যেই বাসায় আসতেছে।”

পৃথী করিমের কথায় সায় দিয়ে বাড়ির ভেতরের বসার ঘরটায় গিয়ে বসে।প্রায় পনের মিনিট পর অয়ন বাসায় আসে।অয়ন মেইন ডোর দিয়ে প্রবেশ করতেই পৃথী লজ্জা লজ্জা মুখে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়।অয়ন হেঁটে এসে পৃথীর সামনের সিঙ্গেল সোফাটায় এসে বসে যায়।তবে বসেই সরাসরি পৃথীর দিকে তার চোখ যায়নি।তার মনোযোগ এই মুহূর্তে ফোনালাপের ওপাশের ব্যক্তিটির কথোপকথনের দিকে!সে এখন ফোনে কারো সাথে কথা বলতেছে।হেসেহুসে ই কথা বলতেছে।কিছুক্ষণ এভাবে চলে।তারপর কথা শেষ হলে কান থেকে মোবাইলটা নামিয়ে ফোনের স্ক্রিনটা চোখের সামনে ধরে।ভ্রু যুগল কুঁচকে এনে মোবাইলে কিছু একটা টুকতে থাকে।পৃথী আর বসে নি।সেই যে দাড়িয়েছিল দাড়িয়েই।অয়ন তার দৃষ্টি স্ক্রিনে নিবদ্ধ রেখেই বলে,

“তো মিস পৃথী দাঁড়িয়ে কেন?বসুন!”
পৃথী নৈঃশব্দ্যে বসে।
“সাডেন কী মনে করে অয়নের আস্তানায়?আবার কোনো অপমাণ টপমাণ করতে এসেছেন নাকি?”

শেষ বাক্যটা বলেই অয়ন এবার পৃথীর দিকে চোখ তুলে তাঁকায়।পৃথী কি বলবে বুঝতে পারছে না।খুব অপ্রস্তুত বোধ হচ্ছে তার।বুকের ভেতরটা হু হু ক করে উঠছে!গলায় কান্নার একেকটা ভাঁজ এসে জমা হচ্ছে!চোখ থেকে টপটপ পানি বেয়ে পড়তে চাইছে!কিন্ত পৃথী তার অসহায় মনের কোনো কিছুই অয়নকে বুঝতে দিল না!চোখমুখ শক্ত করে নিজেকে সংবরণ করে নিলো!খুব দৃঢ় এবং ক্ষীণ গলায় বললো,

“সেদিন না আমাকে অফার করেছিলেন একরাতের জন্যে একলাখ…আমাকে আজ যদি তা থেকে কমিয়ে পঞ্চাশ হাজারও দিতে চান আমি তাতেও রাজি!আর আপনার সাথে শুধু একরাত কাঁটাবো না।পঞ্চাশ দিলে চৌদ্দ রাত,আর একলাখ দিলে সাত রাত!কথা দিচ্ছি আপনাকে যথেষ্ট খুশি রাখার চেষ্টা করবো।তবে প্লিজ কেন সাডেন আপনার অফারটা একসেপ্ট করছি তার কারণ জিজ্ঞেস করবেন না!”

পৃথীর কথা শুনে অয়ন মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়।আর অবাক নয়নেই এক নজরে পৃথীকে একবার স্কিন করে নেয়।মেয়েটির গোলগাল মুখের গড়ন।চোখদুটো হরিণীর মতো টানা টানা।নাকটা চিকন।ঠোঁটদুটো পাতলা।কাঁচা হলদে গায়ের রং। চুলগুলো মাথার দু’পাশে বিণুনি করে ফেলে দেওয়া আর পড়নে হলদে পাটের একটা প্রিন্ট থ্রী-পিস!পায়ে চামড়ার জুতা।সবমিলিয়ে খুবই চমৎকার।
কিন্তু আজ মেয়েটির চেহারা কেনজানি খুব অচেনা অচেনা লাগছে।সেদিনের পৃথীর সাথে আজকের পৃথীর একদমই মিল নেই।।সেদিনের পৃথী কতই না শক্ত ছিল। মুখের উপর কতগুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। আর আজকের পৃথীর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে এবং নিবেদিত দেখাচ্ছে! এই মুহূর্তের অয়নের প্রাচীন দাম্ভিকতার একটা গৎবাধা কথা মনে পড়ে গেল,”মিডল ক্লাস মেয়েরা টাকা-পয়সার প্রতি লোভ কখনোই সামলাতে পারে না।এরা প্রথমে ধমকাধামকি করে দুই একটা কথা শুনায়। পরে অগাত্তা আবার সেই ধমক চেপে টাকার গন্ধ শুকতে ফিরে চায় !”ভেবেই মনে মনে খুব হাসলো অয়ন!না হাসারও উপায় নেই।কারণ পৃথী যে এভাবে তার কাছে আসবে এ অয়নের কোনো কালেই বিশ্বাস হয় নি।এবং এখনো হচ্ছে না!অয়ন তার হাতের ফোনটা টেবিলের উপর রাখে।একটু নড়োচড়ে বসে তারপর বলে,

“আপনি সিরিয়াসলি বলছেন ত, মিস পৃথী ? ”

পৃথী সাথে সাথে উত্তর করতে পারেনি। একটু হোঁচট খাওয়া অবস্থা হয় তার।কারণ অয়ন তাকে “আপনি” বলে সম্বোধন করেছে ।অথচ এর আগে তুই/তুমি বলেছে।আপনি ত মানুষ অপরিচিতদের বলে।তাহলে পৃথী আজ তার কাছে একজন অপরিচিত হয়ে গেল?ভাবনাটা শেষ করেই উত্তর দেয়,

“জ্বী,মিস্টার অয়ন আই’ম সিরিয়াস!”
অয়ন খানিক্ষন চুপ থাকে।ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে তারপর বলে,
“ওকে ফাইন!তা মোট কত টাকা প্রয়োজন আপনার?!”
“আপনার যা ইচ্ছে হয়।”
“আমার ইচ্ছে টিচ্ছে কিছু না!আপনি যেহেতু নিবেন আপনার চাহিদা কেমন তাতো আমি জানি না ”
“সাতলাখ!”
“ওকে!আমি তাহলে আপনাকে চেক কেঁটে দিচ্ছি আপনি টাকাটা নিয়ে যাবেন!”
“টাকাটা কবে পাবো?”

অয়ন হালকা হাসলো!তারপর বলে,
“আপনার আর্জেন্টলি কবে প্রয়োজন ?”
“যদি সম্ভব হয় আজকেই দিলে ভালো হত।…..! ”
“কিন্তু আমরা কাজ ত এখনো স্টার্ট করিনি তাই না?”
“আপনার যদি আমাকে অবিশ্বাস/সন্দেহ হয় তাহলে আমি আজ থেকে আপনার আস্তানায় থেকে যাবো!”

অয়ন আবারো একফোঁড় চুপ থাকে।তারপর বলে,
“টাকাটা কখন পাঠাতে হবে?”
“যদি আধা ঘন্টা/এক ঘন্টা পর সম্ভব হয় তাহলে দিতে পারেন ।আর একটা কথা! আপনিই চেক কেঁটে টাকাটা একটা একাউন্ট নাম্বারে পাঠিয়ে দিয়েন।আমি আপনাকে একটা একাউন্ট নাম্বার দিচ্ছি!”

বলেই পৃথী তার ব্যাগ থেকে এক টুকরো কাগজ আর একটা পেন বের করে।সেখানে একটা একাউন্ট নাম্বার লিখে তা অয়নের হাতে দেয়।একাউন্ট নাম্বারটি ছিল পিয়ারা বেগমের!অয়ন কাগজটি ভালোমতো চেয়েটেয়ে বলে,

“ওকে আমি একঘন্টার মধ্যেই টাকাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি এই একাউন্ট নাম্বারে।”
“ধন্যবাদ,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”
“সাথে ফোন নিয়ে এসেছন?”
“জ্বী।”
“ফোনটা আমাকে দিন!কারণ আপনাকে আমার সাথে সাতদিন রাখবো।এই সাতদিনের আপনার বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ একদম বন্ধ!এটা শুধু আপনি না!যারা প্রতিরাতে আমার সাথে রুমডেট করতে আসে তাদেরও একই রুলস!নো ফোন এন্ড নো কমিউনিকেট!

পৃথী কাঁপা হাতে তার ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে হাত নেয়।অয়নকে হাতে দেওয়ার আগে বলে,

“আমি কি শেষবার এক জায়গায় একটু কল করতে পারি?”
“জ্বী,অবশ্যই!”

পৃথী অয়নের থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে পিয়ারা বেগমের নাম্বারে কল লাগায়।দুই তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে একটা হতাশজনিত চাপা কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

“হ্যালো পৃথী তুই এখন কোথায়?”

পৃথীর ভেতরটা তরতর করো কেঁপে উঠলো।সে জবাব সাথে সাথে দিতে পারলো না।কথা বলার চেষ্টা করেও পারলো না।কেন জানি মুখের উপরটায় কেউ পাথর চেপে দিল

“কী রে কথা বলছিস না কেন?কোথায় তুই এখন?তোর মার অবস্থা ভালো না। যেখানেই আছিস তাড়াতাড়ি আয়।”

পৃথী এবারো কিছু বলতে পারলো না।আশপাশে পানির সন্ধানে চোখ বুলালো।গলাটা খুব শুকিয়ে গেছে।একটু পানি খেতে পারলো ভালো হতো।তারপর সোফার টেবিলের উপরই একটা জগ এবং গ্লাস দেখতে পেল।সেখানে এগিয়ে তরতর করে জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে তা পুরোটা ঢকঢক করো সাবাড় করে বড় একটা দম ছাড়লো।তারপর ডান সাইডের কান থেকে বাম সাইডের কানে ফোনটা গুঁজে নিজেকে খুব স্বাভাবিক করে বললো,

“নানি আমি আছি এক জায়গায়!শুনো?তোমার ব্যাংক একাউন্টে একঘন্টা পর সাতলাখ টাকা যাবে।সেটা চারটার আগে গিয়েই তুলে নিয়ে আসবে।দেরী করবে না একদম।আর ডাক্তারকে বলবে অপারেশনটা করে ফেলতে।”
“তা বুঝলাম!কিন্তু হঠাৎ এতটাকা তুই কোথেকে পেলি!”
“সে অনেক কথা নানি।পরে এসে বলবো।”
“কখন আসবি তুই?”
“এখন বলতে পারছি না।তবে যাবো।তুমি চিন্তা করো না আমাকে নিয়ে।তাড়াতাড়ি করো..দেরী করবে না একদম!”
“আচ্ছা ঠিক আছে।রাখলাম আমি।এখনই বের হবো আনি হাসপাতাল থেকে।”
“আচ্ছা!”

পৃথী কল রাখলো।অয়ন এতক্ষণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পৃথীর সব কর্মকান্ড মোটমুটি দেখলো। তবে কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।পৃথী পেছন ঘুরে,

“এই যে ধরুন ফোন!”

অয়ন ফোনটা হাতে নিল।তারপর গলা ছেড়ে করিমকে ডাকতে থাকলো।করিম চলে এলো।
“জ্বী স্যার, বলুন!”
“উনার রুমটা দেখিয়ে দাও।”
“জ্বী,স্যার!চলুন আপা আমার সাথে..!”

পৃথী চললো করিমের সাথে!বিশাল পরিসরের বড় একটা রুমে নিয়ে এলো করিম পৃথীকে।সম্পূর্ণ রুমের দেয়াল থাই এ্যালুমিনিয়ামের!মাঝে ছোট্ট একটা জানলা।জানলা রয়েছে বাইরে থেকে আলো বাতাস আসার জন্যে।রুমে বড় একটা বিছানা!বিছানায় জাজিম,আর গোলাপ ফুলের বড় বড় পাপড়ির চাদর!সোফা আছে।সোফার সাথে লাগোয়া একটা এসট্রে আছে।এসট্রে টাতে অয়ন তার সিগারেটের ফুক ফেলে।এসট্রের এক ইঞ্চি পরেই একটা ফ্রিজার৷ আছে।সেখানে কোল্ড ডিংক টাইপ কিছু রাখা।
তারপর আছে আরো বড় বড় ফুলের টবের সমাহার!টবের ফুলগুলো থেকে খুব মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে!বলা যায় পুরো রুমটাতে একটা আভিজাত্য আভিজাত্য ভাব!
পৃথী সেদিকে কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে থেকে ভাবলো,ওই মেয়েগুলোও রাতে থাকতে এসে এই রুমটার সৌন্দর্য্য দেখে নিশ্চয়ই চমকে যায়…!

পৃথীর ভাবনার মাঝেই করিম বলে উঠলো,
“আপা?ওপাশে বাথরুম আর সাথে ছোট্ট একটা কিচেন আছে।কিচেনটা হলো আপনার যখন ইচ্ছে হয় নিজহাতে কফি অথবা চা বানিয়ে খেতে পারবেন।”

“ওহ।”
“তাহলে এখন আসলাম।আপনার খাবার দারের ব্যবস্থা করতে হবে ত!”

বলেই করিম আর দাড়ালে না।টুপ করে বেরিয়ে গেলো।পৃথী দরজাটা বন্ধ করলো। তারপর ফ্লোরের উপর ধপাস করে বসে পড়লো।এতক্ষণে চেপে রাখা চোখের পানিগুলো এবার উন্মুক্ত করে দিল। টপটপ করে বেয়ে পড়তে থাকলো গলদশ্রু !

“মা,ও মাগো ক্ষমা করো আমাকে!নানু নানু গো ক্ষমা করো আমাকে!আই’ম কম্পলড!আই’ম কম্পলড!”

চলবে…#ওই আকাশটা আমার ছিল
#বোনাস পর্ব
রোকসানা আক্তার

৬.
রাত ঠিক দশটা বেঁজে চল্লিশ মিনিট।পৃথী বিছানার এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।চোখমুখে তার বিষন্নতা ভাব।সোফার টি-টেবিলের উপরে রাখা গরম খাবার থেকে সাদা সাদা ধোঁয়া উড়ছে।কিছুক্ষণ আগে হলো একটা মেয়ে ডিনার দিয়ে গেছে।পৃথীর তা খেতে ইছে করছে না।তার মনে এখন শুধু ভয় কাজ করছে।অয়ন কিছুক্ষণ পরে রুমে আসবে! রুমে এসেই তার থেকে অপ্রীতিকর স্পর্শ গুলো পেতে চাইবে।তখন তাকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা দিতে হবে।অয়ন তখন আনন্দ লুটে নিতে ব্যস্ত হয়ে যাবে আর সে চোখবুঁজে শুধু কাঁদবে!তালিকা হয়ে গেল” পতিতালয় নারী!”
ভেবেই পৃথী আবারো কেঁদে উঠে।এই রুমে ঢোকা পর্যন্ত সে কতবার যে কেঁদেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই!ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে শক্তপোক্ত করার খুব চেষ্টা করেও তাতে লাভ হয়নি।

এরইমাঝে এগোরটার কাঁটা টিকটিক করে। অয়নের আসার কথা বরাবর এগোরটায় ।পৃথী ঘড়ির দিকে একফোঁড় দিকে তাকিয়ে তরহর তার গাঁয়ের জামাকাপড় ঠিকঠাক করে নেয়।তারপর চেষ্টায় লাগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে !এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে অনেকটা সময় পার হয়!কিন্তু অয়ন এখনো আসছে না।অয়ন আসছে না দেখে পৃথী আবার ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকায়।১১ঃ৩৫!তাহলে অয়ন কেন এখনো আসছে না?!আবার রাগ টাগ করে আছে নাকি?রাগ করে থাকলে ত টাকাটা আর ব্যাংকে পাঠালো না!টাকার ব্যাপারটা কাকে জিজ্ঞেস করবো?পিয়ারা নানুর সাথে যদি একটু কথা বলতে পারতাম!তাহলে চিন্তামুক্ত হওয়া যাবে!তাহলল উপায়?

পৃথীর ভাবনার মাঝেই ঠিক তখন দরজা খোলার শব্দ কানে এলো।পৃথী এবার নড়ে উঠে।সে বুঝেছে নিশ্চয়ই অয়ন আসতেছে।তার ভাবনা সত্যিই হলো।অয়নই এসেছে।অয়ন এসেই স্থির চোখে পৃথীর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো!তারপর পাশ ফিরে ফ্রিজারের দিকে এগিয়ে গেল।ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল বের করলো।সেটা অর্ধাংশ শেষ করে বোতলটা আবার ফ্রিজারে রেখে দিল।তারপর লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসলো!ক্লান্তি মুখরে বললো,,

“কিছুক্ষণ আগে হলো সব ঝায় ঝামেলা শেষ করে মাত্র বাসায় ফিরলাম!দুঃখিত আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম।কষ্ট পেয়েছেন নিশ্চয়ই?”

পৃথী কিছু বললো না।আর কথা বলতেও তার এই মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে না।অয়ন বললো,

“জানেন লাইফে বহু মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়েছি।লাইফে অনেক মেয়েই রুমডেট অফার করেছে।কিন্তু আপনাক আমি নিজ থেকে করেছি।আপনি তখন রাজি হননি।আর আজ এতদিন পরে রাজি হলেন!তবে সেই আক্রোশটা এখন আর আমার নেই!আই’ম সরি!আমি আপনার সাথে রুমডেটে যাচ্ছি না!”

অয়নের কথা শুনে মুহূর্তে পৃথীর হৃদয়টা কেঁপে উঠলো।সে আহত চোখে তাকিয়ে বললো,

“আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি!?”

অয়ন ঠোঁটের কোণে একটা রহস্যজনক হাসি ঝুঁলিয়ে বলে,

“পছন্দ অপছন্দ কথা নয়।অনেক সময় প্রিয় পছন্দের জিনিসগুলোও কিছু ত্রুটির কারণে অপছন্দ হয়ে যায়।”
“কি ত্রুটি বলুন?আমি কোনো ভুল করেছি?”

অয়ন এ কথার পিঠে জবাব দিলো না।সে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দরজার দিকে পা বাড়ালো।ওমনি পৃথী টপ করে নিচে নেমে অয়নের সামনে এসে দাড়ায়।আকুতি ভরা গলায় বললো,

“প্লিজ,আপনি এমনটি করবেন না !বলুন আমাকে কি করলে আপনার পছন্দ হবে?ছোট্ট ড্রেস পড়লে?আপনার সামনে উলঙ্গ থাকলে??বলুন প্লিজ.. প্লিজ…!”

ওমনি ঠাস ঠাস করে পৃথীর গালে জড়োসড়ো কয়েকটা থাপ্পড় পড়ে।পৃথী গালে হাত রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে থাপ্পড়গুলো তাকে স্বয়ং অয়নই মেরেছে!কিন্তু কেন মারলো?কি অপরাধ করেছে সে?ভাবতেই দুইচোখ থেকে দুইটা মোটা ফোঁটা বেয়ে পড়লো।অয়ন তা উপেক্ষা করে এবার তার চরম রাগের কারণটা ব্যাখ্যা করে,

“টাকার প্রয়োজন;আন্টিকে অপারেশন করাবে তা আমাকে একবার বললেই ত হত!এত নাটক করে সত্যটা লু্কিয়ে আমার কাছে রুমডেট নিবেদন করতে একবারও তোমার বুকটা কাঁপে নি?আচ্ছা বুঝলাম ভয় কাজ করেনি।অন্তত ত লজ্জাটুকু থাকার উচিত ছিল!এতটা নীচক মানসিকতার পরিচয় দিলে,ছিঃ!কত ভালো ভেবেছি তোমাকে!”
“আমার কিছুই করার ছিল না।আমি নিরুপায়!”
“আমাকে তখন আন্টির অপারেশনের কথা খুলে বলেছিলে?!”
পৃথী মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।
“বলো নি!”

পৃথী এবার জবাব তুলে,
“রুমডেটের কথা না বললে আপনিও টাকা দিতে রাজি হতেন না।কারণ আমার আত্মীয়রাই মার অপারেশনের কথা শুনে ছিটকে পড়েছে আর আপনি?আপনি তো একজন বাহিরের লোক!”
“আমাকে এতটা খারাপ ভাবলে তুমি!তোমার মার যদি অপারেশন নাও হতো না এই অয়ন তোমার সাথে কখনোই রুমডেটে যেতো না।কারণ অয়ন সব মেয়েদের সাথে রুমডেটে যায় না।যারা স্বচ্ছায় আসে তার কাছে সে তাদের মাঝেই সিলেক্ট কাউকে করে।তবে আমার লাইফে আমি এই প্রথম তোমাকে রুমডেট অফার করেছিলাম।পরে নিজে নিজেই বুঝতে পেরেছি তোমাকে অফারটা করা একদমই উচিত হয়নি!আচ্ছা ওসব বাদ!ওসব তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।তুমি বুঝবে না।কারণ ম্যাচুউর্ড বয়সী হলেও এখনো তোমার স্বভাব ইম্ম্যাচিউর্ডদের মতো।এবার আসল কথা বলি আমার আবার একটু রেস্ট নিতে হবে এমনিতেই ক্লান্ত!রাত ন’টার দিকে আন্টির অপারেশনটা সম্পূর্ণভাবে সাকসেস হয়েছে।”
“কি!মার অপারেশন হয়েছে!আপনি টাকা দিয়েছেন তাই না?”
“আগে আমার কথা শেষ করি…!”
“জ্বী,বলুন…..”
“আন্টির এখনো জ্ঞান ফিরেনি।আন্টি রেস্টে আছেন।
ডাক্তার বলেছে রাত একটা অথবা দুটার দিকে জ্ঞান ফিরতে পারে!তবে আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া অপারেশনে তেমন জটিলতা হয়নি।”
“আপনি এতক্ষণে হাসপাতালে ছিলেন!কত কষ্ট করেছেন আমাদের জন্যে!আপনার সাতলাখ টাকা আপনার খরচা হয়েছে.!ইসস আমিতো আপনার কাছে কত কত ঝণী হয়ে থাকলাম!দাঁড়ান আমি একটা জব করি তারপর আপনার সব টাকা আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিব।ঠিক আছে?”

অয়ন চোখজোড়া রাগে এবার প্রচন্ড তীক্ষ্ণ করে ফেলে!পৃথী সেই চোখের দিকে তাকিয়ে অপরাধ ভঙ্গিতে বলে,

“দেখুন সাতলাখ মুখের কথা না!”
“শাটআপ!খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুম দাও!কাল সকালে খাবার টেবিলে যেনো না দেখি!”

বলেই অয়ন পৃথীকে পাশ কেঁটে চলে যেতে নিলেই পৃথী আবারো বলে উঠে,

“প্লিজ আরেকটা কথা শুনুন…..।”

অয়ন দাঁড়িয়ে যায়।
“আপনি কীভাবে জানলেন আমার মার অপারেশন করাবো?”

অয়ন ঘাড় ঘুরে একটা বাঁকা হাসি টেনে বলে,
“কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।আর মিস্টার অয়নের ক্ষেত্রে তা মোটেও না!”

বলেই অয়ন চলে যায়!পৃথী খুশিতে নাচতে থাকে!আর বিড়বিড় করে বলে,

“আল্লাহ,ছেলেটা এত ভালো!উফস আমিতো তার প্রেমে পড়ে গেলাম!”

মার অপারেশন সাকসেস শুনে পৃথী মুহূর্তেই তার আগের সব দুঃখ কষ্টের কথা ভুলে গেল।সে যেন একটা প্রাণ ফিরে পেলো!

চলবে…
(বোনাস পর্ব দিয়ে দিলাম!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here