ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ৬

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#বোনাস পর্ব
রোকসানা আক্তার

৬.
রাত ঠিক দশটা বেঁজে চল্লিশ মিনিট।পৃথী বিছানার এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।চোখমুখে তার বিষন্নতা ভাব।সোফার টি-টেবিলের উপরে রাখা গরম খাবার থেকে সাদা সাদা ধোঁয়া উড়ছে।কিছুক্ষণ আগে হলো একটা মেয়ে ডিনার দিয়ে গেছে।পৃথীর তা খেতে ইছে করছে না।তার মনে এখন শুধু ভয় কাজ করছে।অয়ন কিছুক্ষণ পরে রুমে আসবে! রুমে এসেই তার থেকে অপ্রীতিকর স্পর্শ গুলো পেতে চাইবে।তখন তাকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা দিতে হবে।অয়ন তখন আনন্দ লুটে নিতে ব্যস্ত হয়ে যাবে আর সে চোখবুঁজে শুধু কাঁদবে!তালিকা হয়ে গেল” পতিতালয় নারী!”
ভেবেই পৃথী আবারো কেঁদে উঠে।এই রুমে ঢোকা পর্যন্ত সে কতবার যে কেঁদেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই!ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে শক্তপোক্ত করার খুব চেষ্টা করেও তাতে লাভ হয়নি।

এরইমাঝে এগোরটার কাঁটা টিকটিক করে। অয়নের আসার কথা বরাবর এগোরটায় ।পৃথী ঘড়ির দিকে একফোঁড় দিকে তাকিয়ে তরহর তার গাঁয়ের জামাকাপড় ঠিকঠাক করে নেয়।তারপর চেষ্টায় লাগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে !এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে অনেকটা সময় পার হয়!কিন্তু অয়ন এখনো আসছে না।অয়ন আসছে না দেখে পৃথী আবার ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকায়।১১ঃ৩৫!তাহলে অয়ন কেন এখনো আসছে না?!আবার রাগ টাগ করে আছে নাকি?রাগ করে থাকলে ত টাকাটা আর ব্যাংকে পাঠালো না!টাকার ব্যাপারটা কাকে জিজ্ঞেস করবো?পিয়ারা নানুর সাথে যদি একটু কথা বলতে পারতাম!তাহলে চিন্তামুক্ত হওয়া যাবে!তাহলল উপায়?

পৃথীর ভাবনার মাঝেই ঠিক তখন দরজা খোলার শব্দ কানে এলো।পৃথী এবার নড়ে উঠে।সে বুঝেছে নিশ্চয়ই অয়ন আসতেছে।তার ভাবনা সত্যিই হলো।অয়নই এসেছে।অয়ন এসেই স্থির চোখে পৃথীর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো!তারপর পাশ ফিরে ফ্রিজারের দিকে এগিয়ে গেল।ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল বের করলো।সেটা অর্ধাংশ শেষ করে বোতলটা আবার ফ্রিজারে রেখে দিল।তারপর লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসলো!ক্লান্তি মুখরে বললো,,

“কিছুক্ষণ আগে হলো সব ঝায় ঝামেলা শেষ করে মাত্র বাসায় ফিরলাম!দুঃখিত আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম।কষ্ট পেয়েছেন নিশ্চয়ই?”

পৃথী কিছু বললো না।আর কথা বলতেও তার এই মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে না।অয়ন বললো,

“জানেন লাইফে বহু মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়েছি।লাইফে অনেক মেয়েই রুমডেট অফার করেছে।কিন্তু আপনাক আমি নিজ থেকে করেছি।আপনি তখন রাজি হননি।আর আজ এতদিন পরে রাজি হলেন!তবে সেই আক্রোশটা এখন আর আমার নেই!আই’ম সরি!আমি আপনার সাথে রুমডেটে যাচ্ছি না!”

অয়নের কথা শুনে মুহূর্তে পৃথীর হৃদয়টা কেঁপে উঠলো।সে আহত চোখে তাকিয়ে বললো,

“আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি!?”

অয়ন ঠোঁটের কোণে একটা রহস্যজনক হাসি ঝুঁলিয়ে বলে,

“পছন্দ অপছন্দ কথা নয়।অনেক সময় প্রিয় পছন্দের জিনিসগুলোও কিছু ত্রুটির কারণে অপছন্দ হয়ে যায়।”
“কি ত্রুটি বলুন?আমি কোনো ভুল করেছি?”

অয়ন এ কথার পিঠে জবাব দিলো না।সে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দরজার দিকে পা বাড়ালো।ওমনি পৃথী টপ করে নিচে নেমে অয়নের সামনে এসে দাড়ায়।আকুতি ভরা গলায় বললো,

“প্লিজ,আপনি এমনটি করবেন না !বলুন আমাকে কি করলে আপনার পছন্দ হবে?ছোট্ট ড্রেস পড়লে?আপনার সামনে উলঙ্গ থাকলে??বলুন প্লিজ.. প্লিজ…!”

ওমনি ঠাস ঠাস করে পৃথীর গালে জড়োসড়ো কয়েকটা থাপ্পড় পড়ে।পৃথী গালে হাত রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে থাপ্পড়গুলো তাকে স্বয়ং অয়নই মেরেছে!কিন্তু কেন মারলো?কি অপরাধ করেছে সে?ভাবতেই দুইচোখ থেকে দুইটা মোটা ফোঁটা বেয়ে পড়লো।অয়ন তা উপেক্ষা করে এবার তার চরম রাগের কারণটা ব্যাখ্যা করে,

“টাকার প্রয়োজন;আন্টিকে অপারেশন করাবে তা আমাকে একবার বললেই ত হত!এত নাটক করে সত্যটা লু্কিয়ে আমার কাছে রুমডেট নিবেদন করতে একবারও তোমার বুকটা কাঁপে নি?আচ্ছা বুঝলাম ভয় কাজ করেনি।অন্তত ত লজ্জাটুকু থাকার উচিত ছিল!এতটা নীচক মানসিকতার পরিচয় দিলে,ছিঃ!কত ভালো ভেবেছি তোমাকে!”
“আমার কিছুই করার ছিল না।আমি নিরুপায়!”
“আমাকে তখন আন্টির অপারেশনের কথা খুলে বলেছিলে?!”
পৃথী মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।
“বলো নি!”

পৃথী এবার জবাব তুলে,
“রুমডেটের কথা না বললে আপনিও টাকা দিতে রাজি হতেন না।কারণ আমার আত্মীয়রাই মার অপারেশনের কথা শুনে ছিটকে পড়েছে আর আপনি?আপনি তো একজন বাহিরের লোক!”
“আমাকে এতটা খারাপ ভাবলে তুমি!তোমার মার যদি অপারেশন নাও হতো না এই অয়ন তোমার সাথে কখনোই রুমডেটে যেতো না।কারণ অয়ন সব মেয়েদের সাথে রুমডেটে যায় না।যারা স্বচ্ছায় আসে তার কাছে সে তাদের মাঝেই সিলেক্ট কাউকে করে।তবে আমার লাইফে আমি এই প্রথম তোমাকে রুমডেট অফার করেছিলাম।পরে নিজে নিজেই বুঝতে পেরেছি তোমাকে অফারটা করা একদমই উচিত হয়নি!আচ্ছা ওসব বাদ!ওসব তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।তুমি বুঝবে না।কারণ ম্যাচুউর্ড বয়সী হলেও এখনো তোমার স্বভাব ইম্ম্যাচিউর্ডদের মতো।এবার আসল কথা বলি আমার আবার একটু রেস্ট নিতে হবে এমনিতেই ক্লান্ত!রাত ন’টার দিকে আন্টির অপারেশনটা সম্পূর্ণভাবে সাকসেস হয়েছে।”
“কি!মার অপারেশন হয়েছে!আপনি টাকা দিয়েছেন তাই না?”
“আগে আমার কথা শেষ করি…!”
“জ্বী,বলুন…..”
“আন্টির এখনো জ্ঞান ফিরেনি।আন্টি রেস্টে আছেন।
ডাক্তার বলেছে রাত একটা অথবা দুটার দিকে জ্ঞান ফিরতে পারে!তবে আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া অপারেশনে তেমন জটিলতা হয়নি।”
“আপনি এতক্ষণে হাসপাতালে ছিলেন!কত কষ্ট করেছেন আমাদের জন্যে!আপনার সাতলাখ টাকা আপনার খরচা হয়েছে.!ইসস আমিতো আপনার কাছে কত কত ঝণী হয়ে থাকলাম!দাঁড়ান আমি একটা জব করি তারপর আপনার সব টাকা আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিব।ঠিক আছে?”

অয়ন চোখজোড়া রাগে এবার প্রচন্ড তীক্ষ্ণ করে ফেলে!পৃথী সেই চোখের দিকে তাকিয়ে অপরাধ ভঙ্গিতে বলে,

“দেখুন সাতলাখ মুখের কথা না!”
“শাটআপ!খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুম দাও!কাল সকালে খাবার টেবিলে যেনো না দেখি!”

বলেই অয়ন পৃথীকে পাশ কেঁটে চলে যেতে নিলেই পৃথী আবারো বলে উঠে,

“প্লিজ আরেকটা কথা শুনুন…..।”

অয়ন দাঁড়িয়ে যায়।
“আপনি কীভাবে জানলেন আমার মার অপারেশন করাবো?”

অয়ন ঘাড় ঘুরে একটা বাঁকা হাসি টেনে বলে,
“কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।আর মিস্টার অয়নের ক্ষেত্রে তা মোটেও না!”

বলেই অয়ন চলে যায়!পৃথী খুশিতে নাচতে থাকে!আর বিড়বিড় করে বলে,

“আল্লাহ,ছেলেটা এত ভালো!উফস আমিতো তার প্রেমে পড়ে গেলাম!”

মার অপারেশন সাকসেস শুনে পৃথী মুহূর্তেই তার আগের সব দুঃখ কষ্টের কথা ভুলে গেল।সে যেন একটা প্রাণ ফিরে পেলো!

চলবে…
(বোনাস পর্ব দিয়ে দিলাম!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here