ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ৭

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-০৭

১০.
বৃষ্টি কমে গেছে।পৃথী চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে চারপাশটা স্বচ্ছ পরিষ্কার।প্রকৃতিতে একটা সজীবতা ভাব চলে এসেছে।বৃষ্টির পানিতে সব ধুয়েমুছে গাছপালা গুলোর মাঝে একটা সবুজাভ আভা ছড়িয়েছে।আকাশটাও তাই।সে তার রং বদল করে সাদা মেঘে হামাগুড়ি খাচ্ছে।সেই সাদা মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে সূয্যিমামা তার রোদ ছড়াতে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।পৃথী সেদিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল।তারপর ভেঁজা কাপড়চোপড় নিয়ে ঠোঁটে গান তুলে বাড়ির রাস্তা ধরে হাঁটা ধরলো,”পিরীতও শিখাইলো মোরে বৈরাগী..!আমি থাকতে না পারি,সইতে না পারি..!
থাকতে না পারি, সইতে না পারি।

বাড়িতে এসেই দেখে তার মা নতুন একটা প্রিন্ট শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে বসে বসে সাজুগুজু করছেন।পৃথী চমকে কাছে দাড়ায়।বলে,

“ব্যাপার কি মা,এইসময় তুমি সাজুগুজু করছো যে?কোথাও যাওয়া হচ্ছে নাকি?”

রহিমা সাজুগুজুর হাত চালিত রেখেই মেয়েকে জবাব দেন,
“হু!”
“কোথায়?”
“গ্যাংস্টার অয়নের বাড়ি।”

পৃথী এবার আরেক দফা চমক খায়।থমথমে গলায় বলে,
“সেখানে কেন যাবে!?”
“হাসপাতালে থাকা বস্থায় বললাম অয়নের সাথে একটু দেখা করবো।তাকে ধন্যবাদ জানাবো।আজ সাত সাতটা দিন পার হলো তুই এখনো পর্যন্ত ছেলেটার সাথে আমাকে একটু দেখা করাতে পারিস নি।তাই ডিসিশন নিলাম আমি নিজেই একা যাবো।তোর সঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে যুগ চলে যাবে..!তারপরও দেখা হবে না!”
“আহা মা তুমি এত অস্থির হচ্ছ কেন?তুমিতো এখনো ভালোমতো সুস্থ না।আরেকটু সুস্থ হও তারপর আমি নিজেই তোমাকে নিয়ে যাবো।”
“তোর আশা আর করি না।সর এখান থেকে!”

বলেই রহিমা আয়নার সামনে থেকে উঠে দাঁড়ান।তারপর হুলস্থূল করে মেয়েকে বলেন,
“আমার ব্যাগটা খুঁজে পাচ্ছি না। ব্যাগটা একটু খুঁজে দে ত..।”

পৃথী জানে তার মাকে এখন আঁটকানো বড় দায়।তিনি যেটা বলবেন সেটাই করবেন।তাকে এখন বুঝাবে তিনি কোনো বুঝই নিবেন না।এটা বলেছেন এখন করবেন মানে করবেন ই!কাজেই বাধ্য না হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু তাই বলে অসুস্থ মাকে ত আর রাস্তায় একা ছেড়ে দেওয়া যায় না।কখন কোন বিপদ হয়ে যায় কে জানে!চারটার দিকে তার নিজেরও একটা টিউশনি আছে।কিছুক্ষণ পর তারও বেরুতে হবে।মাকে তাহলে এরমাঝে অয়নের সাথে দেখা করিয়ে দিয়ে সে নাহয় একবারে টিউশনিটা করাতে যাবে।ভেবেই বললো,

“আমিও যাবো তোমার সাথে।”
“লাগবে না তোর যাওয়া!এতদিন বলেছি আর কানে নেস না।এখন আমি রেডি হয়েছি দেখে ঢং করতে আসছিস।আমি একাই যাবো।তোর আসতে হবে না!”

পৃথী তার মার কথা কানে নেয় না।সে জামাকাপড়ের বাক্সার দিকে হাঁটা ধরে।সে জানে তার মা কথাগুলো প্রচন্ড অভিমান করে তাকে বলেছে।মনে মনে ঠিকই বলছে “আয় আমার সাথে।আয়।আমার একা একা ভালো লাগে না “।পৃথী বাক্স থেকে একটা জামা বের করে বাথরুমে ঢুকে।তা পরিধান করে বাইরে এলেই রহিমা মেয়ের দিকে এগিয়ে উত্তেজিত গলায় বলে,

“দ্যাখ ত, শাড়িটা আমাকে মানিয়েছে কি না?”
“হুম।”
“শুধু হুম বলছিস কেন।ভালো করে বল।কারণ বড়লোকদের বাড়িতে যাচ্ছি।কত বড় বড় মানুষ থাকবে।তারা আমাদের দেখবে।যদি খেতমার্কায় যাই তাহলে কী ভাববে বল তো!”
“অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে। এক কথায় জোশ!”
“সাজগোজ?”
“ঠিক আছে।”
“বেশি সাজি নি।চোখের নিচে একটু লম্বা করে কালি দিছি।মুখে ফর্সা ক্রিম দিছি।কানে এ্যামিটি দুল দিছি।গলায় এ্যামিটি সীতাহার দিছি।ভাবলাম হাতে একটা ব্যাসলেটও লাগাবো কিন্তু তোর বাক্সটা থেকে কোনো বাসলেট খুঁজে পাই নি।হাতে একটা বেসলেট লাগালে খুব ভালো হতো ।হাতটা এখন কেমন বিদঘুটে বিদঘুটে দেখাচ্ছে।”
“বেসলেট দিতে হবে না।তোমার চুড়িতেই ঠিক আছে।”

রহিমা মুখটা গুমড়ে ফেলেন।আস্বস্ত হতে পারছেন না।উনার মনে হয় একটা বেসলেট লাগালে মন্দ হতো না।
“মা এবার চলো ত?”

রহিমা মেয়ের কথায় নড়লেন না।কিছু একটা ভেবে বলেন,
“আচ্ছা তুই এখানে এক মিনিট একটু দাড়া।আমি পাশের বাসার পারুলের কাছে যাই।ওর কাছে নিশ্চয়ই বেসলেট থাকবে।”
বলেই রহিমা দ্রুতপদে বেরিয়ে যান।তা দেখে পৃথীর খুব হাসি পায়।তার মার এমন বাচ্চাসুলভ আচরণগুলা তার মাঝে মাঝে খুব ভালো লাগে।তার হঠাৎ ই মনে হয় তার মা একজন বাচ্চা! কিন্তু আবার যখন তাকে কঠিন কঠিন আদেশ করে,উপদেশ দেয় এবং কড়া নিষেধ করে তখন পৃথীর মনে হয় তার মা আসলে একজন বাচ্চা না, একজন মা!পৃথীও তার মার কিছু স্বভাব পেয়েছে।যখন তখন বাচ্চামো স্বভাব করে বসে।এই যেমন অয়নের সামনে গেলে একদম বাচ্চা হয়ে যায়।এরমধ্যে রহিমা চলে আসেন।হাতে সবুজ সঙ্গের পুথির একটা বেসলেট লাগাতে লাগাতে বলেন,

“এবার চল।”

দুজনে হাঁটা ধরে।দুজনে অয়নের বাড়িতে এসে দেখে অয়ন নেই।অয়নের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেঁজে যাবে ।এখন বাঁজে চারটা বিশ মিনিট।তাদের পক্ষে এতসময় অপেক্ষা করা কি সম্ভব?সম্ভব না।রহিমার মনটা খারাপ হয়ে যায়।কত আশা করে এসেছে।এসেই যদি এরকমটা হবে তাহলে কেমন লাগে!মার মলীন মুখটার দিকে তাকিয়ে পৃথী বলে,

“মা?মন খারাপ করো না।ওই অয়ন একদিন তোমার সাথে দেখা করতে দেখো ঠিক তোমার বাসায়ই যাবে।”
“তুই সিউর কিভাবে ও আমাদের বাসায় আসবে?”
“আসতেও পারে। অসম্ভব বলে কিছু নেই।”

রহিমা এ’কথার পিঠে আর কিছু বললেন না।অন্য প্রসঙ্গ টেনে বলেন,
“আমি বাসায় যাবো এখন।আমাকে একটা রিক্সা ঠিক করে দে।”
পৃথী রহিমাকে একটা রিক্সা ঠিক করে দেয়।রহিমা রিক্সাতে চড়ে বাসায় ফিরে যায়।আর পৃথী তার টিউশনির দিকে হাঁটা ধরে।পৃথীর টিউশনি শেষ করতে করতে মাগরিবের আযান পড়ে যায়।আজ দেরী করে টিউশনি যাওয়ার কারণে এতটা দেরী হয়েছে।নাহলে সন্ধের আগেই বাসায় ফিরতে পারতো।পৃথী সুুনসান রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল।মনে তার ভয়।কারণ আশপাশে তেমন লোকজনকে দেখতে পাচ্ছে না।সে ঘড়ির দিকে তাকায় আর গলিটা কখন শেষ হবে সেই ভেবে ভেবে দ্রুত পা বাড়ায়।কিন্তু ভয়টা তার সেখানেই জেকে বসে।সামনেই তাকিয়ে দেখতে পায় দুইটা ছেলে সরু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের চোখমুখ লালসায় ভরা।তারা পৃথীর দিকে লালসা চোখে তাকিয়ে আছে।এরা যে পৃথীর উপর যে কোনো মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এতে পৃথী নিঃসন্দিহান।এখন শুধু তার নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা!সে পাশ ফিরে ভেতরের একটা গলির মধ্যে ঢুকে যায়।ছেলে দুটো তাদের শিকারীকে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না ভেবে পৃথীর পেছন পেছন দৌড় লাগাতে থাকে।পৃথীর পেঁটের ভেতর যত দোয়া-সূরা যা আছে সব টটস্থ-মুখস্ত করতে করতে সে তুখোড় দৌঁড়ে উপর থাকে।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতেও সে যেন পা পিছলে পড়ে যায়।এই বুঝি ছেলেগুলো তাকে ধরে ফেলবে।এই বুঝি সে শেষ হয়ে যাবে।মনে হাজারো ভয়,হাজারো সংশয়।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে অনেকগুলো মানুষের সামনে এসে পড়ে।মানুষ গুলো গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের মাঝখানে কোনে এক ব্যক্তির কথা শুনছে।কথা বলার প্রতিটি শব্দের ব্যক্তিকে পৃথীর খুব পরিচিত লেগে যায় । লোকগুলোর ভীড় ঢেলে দেখে অয়ন। অয়নকে দেখা মাত্রই পৃথীর মনের সব ভয়ডর এক মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়।সে এক সপাটে দৌড়ে অয়নের বুকের উপর যেয়ে পড়ে।কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,

“প্লিজ আমাকে বাঁচান!প্লিজ,ওদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান।

একটা মেয়েকে অয়নের বুকের উপর এভাবে পড়তে দেখে সেখানের উপস্থিত থাকা সবগুলো লোকই খুব অবাক হয়ে।তারা বড় বড় চোখ করে পৃথীর দিকে তাকিয়ে থাকে।অয়ন সবার দিকে চোখ নাড়িয়ে তাকাতেই সবাই মুহূর্তে মাথাটা নিচু করে ফেলে।তারপর অয়ন ভীড় অতিক্রম করে একদম পেছনের দিকে তাকায়।লম্বা মতন কালো দুইটা ছেলে ভয়ভয় মনে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।তারাই যে পৃথীকে ধরতে চেয়েছে অয়ন তা বুঝতে পারে।সে তার একটা লোককে ইশারা করতেই তার লোক ছেলেদুটোকে সুড়ুৎ করে ধরে ফেলে।শুরু করে মার!গালে থাপড়াতে থাকে।কান মুচড়ে দিতে থাকে।পিঠে-পাঁচায় কিল,ঘুঁষি, লাথি আরো কত কি।শেষবার একেবারে নাঁক ফাঁটিয়ে দেয়।ছেলে দুটো কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“ভাইজান,আর কখনো এরকম করবো না।আমাদের ক্ষমা করে দেন।দয়া করে ক্ষমে করে দেন।আপনার কাছে হাতজোড় করছি!”

অয়ন পৃথীকে তার থেকে আলতো ছাড়িয়ে নেয়।তারপর ছেলেদুটির দিকে এগিয়ে তাদের গেন্জির কলার খামচে ধরে।তারপর বজ্র কন্ঠে বলে,
“তোদের আমি পরে দেখবো।মাত্র ত একটু মাইর দিলাম এতেই কাহিল?।বাকি মাইর ত এখন শুরু হবে!”

বলেই অয়ন তার শার্টের নিচ থেকে একটা গুলি বের করে তা ছেলেদুটির পেটে তাক করতেই ছেলেদুটো রক্তে রন্জিত হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে।আর ওমনি শ্বাস বদ্ধ হয়ে মারা যায়।তা দেখে পৃথী খুব ভয় পেয়ে যায়।সে অয়নের এমন হিংস্র মুখ এর আগে কখনোই দেখে নি।অয়ন এতটা ভয়ংকর হতে পারে তা পৃথী কোনোকালেই ভাবে নি।সে যেন এটা একটা স্বপ্ন দেখলো।খুবই বাঁজে একটা স্বপ্ন!তার চোখমুখ আন্ধার হয়ে যায়।চারপাশে সে ঝাপসা দেখতে থাকে।সে যেন এখুনি নিচে পড়ে যাবে।এখুনি জ্ঞান হারাবে।এখুনি মারা যাবে।টলতে টলতে নিচে পড়ে যেতে নিলেই অয়ন দৌড়ে এসে পৃথীকে একহাতে আঁকড়ে নেয়।

চলবে…

(নাইস/নেক্সট এ হলো আপনাদের কমেন্টস।কোনো যুক্তিমূলক কমেন্টস পাচ্ছি না আপনাদের।গল্পটা কিভাবে এগুচ্ছে যদি আপনাদের যুক্তিমূলক কমেন্টস না পাই তাহলে আমি এগুবো কিভাবে বলুন ত?!আর আজ একটা বোনাস পর্ব পাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here