‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৫৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
সিয়ারা ওদের দেখে হাসছিলো। ওদের কে থামাতে যাবে এমন সময় কেউ ওর মুখ চেপে নিয়ে বাইরে চলে আসে। এদিকে, দেবাংশু একটা সময় নিজে থেকে দিয়ারার কাছে ধরা দিয়ে দেয়। দিয়ারা দেবাংশুর বুকে বাহুতে মারতে মারতে বলে,
দিয়ারা: তুমি সব সময় আমাকে এত জ্বালাও কেন?
দেবাংশু: এখনও তো সারাজীবন পরে আছে। এখনই যদি রেগে যাও কীভাবে হবে?
দিয়ারা: হুহ! (মুখ ভেঙিয়ে) দি কোথায় গেলো?
দিয়ারা এগোতেই দেবাংশু পিছন থেকে দিয়ারাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
দেবাংশু: আমাদের প্রাইভেসি দিচ্ছে, এটুকু বোঝো না তুমি?
দিয়ারা: আব, এখন কাজের সময়। ছাড়ো আমায়। (নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে)
দেবাংশু মাথা নাড়িয়ে ছেড়ে দেয় দিয়ারাকে আর দিয়ারা অবাক হয় সাথে বিরক্ত হয়। মনে মনে বলে, “ছেড়ে দিতে বললাম আর ছেড়ে দিল?”
দেবাংশু: অন্য মডেলরা কোথায়? এখনও এলো না তো?
দিয়ারা: অর্জুন বারণ করেছিলো।
দেবাংশু: (অবাক হয়ে) কেন?
দিয়ারা: অংশু, আজকে অর্জুন আমাকে সেদিন তোমাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল সেগুলো জানালো। ও ক্লিয়ার করলো যে ও তোমাকে রাগিয়ে তুলেছিলো। এরপর আমি যেদিন শুনলাম এই চ্যালেঞ্জের বিষয়টা সেদিন তুমি যা যা বলেছো ও’কে সেগুলোও বলেছে আমাকে। সবশেষে এটাই বললো যে, তুমি আমাকে ভালোবাসো। আগে কখনো ও তোমাকে এভাবে দেখেনি।
দেবাংশু: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আবার “ও”?
দিয়ারা: (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) আব ইয়ে না মানে মাথায় ছিলো না। এরপর থেকে আর ভুল হবে না।
দেবাংশু: (হেসে দিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে) আমার অর্জুনের উপর না রাগ আছে আর না কোনো শত্রুতা। ছিলো তো শুধুই আফসোস, ভয়। তুমি সেই ভয়টা কাটিয়ে দিয়েছো তাই এখন কিছুই নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসার সাথে সাথে বিশ্বাস করি দিয়ু, আমি জানি যে আমাকে এতটা বুঝেছে, আমাকে আমার কষ্ট থেকে বার করে এনেছে সে কখনও এমন কিছু করবে না যাতে আমি আবার কষ্ট পাই।
দিয়ারা হেসে দেবাংশুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর কাশির আওয়াজে দুজন দুজনকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো। তাকিয়ে দেখলো আধভিক আর সিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে।
আধভিক: তোদের তো দেখছি যত প্রাইভেসি দিচ্ছি তত প্রাইভেসি চাইছিস। বাড়ি চলে যা, ফুল প্রাইভেসি পাবি। (টিজ করে)
দেবাংশু: (ভ্রু কুঁচকে) তুই কি করছিস এখানে? আমার প্রেমে ব্যগ্রা দেওয়ার স্বভাবটা তোর যাবে না তাই না? তাও যেখানে দরকার সেখানে তো দিস না।
আধভিক: তুই জানতে শান্তিতে থাকতে না পারিস সেই জন্যেই তো আমি এসব করি। একজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বেস্ট ফ্রেন্ডের ধর্ম পালন তো করতেই হবে তাই না?
দেবাংশু: প্লিজ বলিস না তানিশা এখানে আসছে।
আধভিক: এসে গেছে অলরেডি। উল্টি গিনতি শুরু কর। (মুখ টিপে হেসে)
দেবাংশু: ওহ গড! (চোখ বন্ধ করে মাথা উপরে তুলে)
__দেবববব!!
দেবাংশু: হ্যাঁ, তোর জন্য এইবার আমাকে দেবদাস হতে হবে দেব থেকে। এই এক মিনিট! আমার বউ কই? (বিড়বিড় করে)
তানিশা ছুটে এসে দেবাংশুকে জড়িয়ে ধরলে দেবাংশু এদিক ওদিক তাকিয়ে দিয়ারাকে খোঁজে। না পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে দিয়ারা আধভিক আর সিয়ারার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে আর হাসছে।
দেবাংশু: (চোখ বড়ো বড়ো করে দিয়ারার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে মনে মনে — এ কেমন গার্লফ্রেন্ড পেয়েছি আমি ভগবান? এই তো কিছুদিন আগে গাল ফোলাচ্ছিল আর আজকে দেখো? এই জন্যেই বলে অনুভূতি বুঝে গেলে গুরুত্ব কমে যায়। উফ! কি ঝামেলা!) বইন ছাড় আমায়।
তানিশা: বইন? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বইন দেব? আমি তোমার বোন হই?
দেবাংশু: আই মিন সব মেয়েই আমার বোন হয়। হেহে!
দিয়ারা: কি? সব মেয়ে তোমার বোন হয়? (রেগে)
দেবাংশু: হ্যাঁ! কেন? তুমি হও না? তুমি বোন না হলে তাহলে প্রতিবাদ করলে না কেন? (বাঁকা হেসে)
সিয়ারা: তোর চাল তোকেই ফেরত দিয়েছে বোন। সময় আছে সামলে নে নাহলে পেত্নী ঘাড়ে চেপে বসবে তোকে ঘর থেকে নামিয়ে।
দিয়ারা রাগী দৃষ্টিতে সিয়ারার দিকে তাকালে সিয়ারা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আধভিকের বুকের মাঝে চলে যায়। দিয়ারা দেবাশুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুচকি মুচকি হাসছে। দিয়ারা ওর কাছে গিয়ে বলে,
দিয়ারা: আমি তোমার বোন না, বউদি হতে পারি যদি তুমি চাও ত…
দেবাংশু: (একটু জোরে) হোয়াট রাবিশশ!!
দিয়ারা: তুমিই তো বললে সব মেয়ে তোমার বোন…
দেবাংশু: তুমি বাদে!!
দিয়ারা: তো আমি কে?
দেবাংশু: আমার গার্লফ্রেন্ড!!
দিয়ারা: (তানিশার দিকে তাকিয়ে হেসে) উত্তর পেয়ে গেছো তানিশা কেন তোমাকে ও “বইন” বলেছে? আমাকে কি কিছু বলতে হবে আর? (দেবাংশুর সামনে দাঁড়িয়ে) আমি বলি না, কাজে করে দেখাই। যেমনটা এখন দেখলাম। আমি বললে তুমি তো সেই ওর থেকে জানতে চাইতে এর সত্যতা প্রমাণের জন্য। তাই একবারেই তোমাকে প্রমাণ দিলাম। (দাঁতে দাঁত চিপে) নাও লিভ, ওর ত্রিসীমানায় জানো তোমাকে না দেখি। যদি দেখি তাহলে তুমি ত্রিসীমানায় থাকার মতো অবস্থায় থাকবে না।
আধভিক: (সিয়ারার কানের কাছে এসে) তোমার বোন কম তো দেখছি কম যায় না!! অবশ্য দেখতে হবে না কার শালী! (ভাও নিয়ে)
সিয়ারা: ওমনি ক্রেডিট নেওয়া শুরু! আমার বোন ও। হুহ!
আধভিক: তুমি এমন নাকি? বাহবা!! (ভেঙ্গিয়ে) না আমি তো এমনই বলছিলাম। হেহহে!
সিয়ারা আধভিকের দিকে গুরুগম্ভীর ভাবে তাকাতেই আধভিকের মুখের ভোল বদলে গেলো। সেই মুহুর্তে তানিশা বেরিয়ে গেলে দিয়ারা দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে তাকালো।
দেবাংশু: (কানে কানে) আমার বউদি হওয়ার খুব সখ জেগেছে বুঝি? আমারও খুব সখ জেগেছে শব্দ থেকে “দি” বাদ দেওয়ার।
দিয়ারা অবাক চোখে দেবাংশুর দিকে তাকালে দেবাংশু নিজের পকেটে হাত গুঁজতে গুঁজতে সামনে তাকিয়ে বললো,
তুই বললে এখনই দিতে পারি? জাস্ট কয়েকটা ফর্মালিটিস করতে হবে। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ তো আগেই হয়ে গেছে প্রি-প্রোডাকশন আর প্রোডাকশন বাকি!
দিয়ারা: চুপ! তানিশার সামনে তো কিছুই বলতে পারো না তুমি। আমার সামনে খালি ফটর ফটর!! (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে)
দেবাংশু: আমিই যদি বলতাম তাহলে আমার বউকে কি এই রূপে দেখতে পেতাম?
দিয়ারা আর কোনো উত্তর দেয় না। দিয়ারা বুঝতে পারে ওর কান গরম হয়ে যাচ্ছে উত্তেজনা, লজ্জায় দেবাংশুর মুখে বার বার বউ কথাটার উল্লেখে। দেবাংশু দিয়ারার অবস্থা দেখে হাসছে মিটিমিটি। এমন সময় সেখানে অর্জুন উপস্থিত হলো।
অর্জুন: আধভিক আমাদের তিন মাস পর যে ফ্যাশন কম্পিটিশন হওয়ার কথা ছিলো সেটার ডেট চেঞ্জ করে এগিয়ে আনা হয়েছে।
আধভিক: হম, আমিও কিছুক্ষণ আগেই জানলাম।
অর্জুন: তাই জন্যে আমি ঠিক করেছি আমার শোয়ের ডেট এগিয়ে আনবো।
আধভিক: তো তুমি রেডি তো? কোনো প্রবলেম হবে না তো এগোনোর ফলে?
অর্জুন: না না খুব একটা প্রবলেম হবে না। ডিজাইনস অনুযায়ী ড্রেস তৈরি শুরু হয়ে গেছে আর মডেলদের রিহার্সালও প্রায় কমপ্লিট। ড্রেস আসলে ওদের জাস্ট একটু চেক করতে হবে।
আধভিক: ওকে একটা কাজ করো আমি আমার কনট্যাক্ট এর টেইলার্সদের বলে দিচ্ছি যাতে তোমাকে হেল্প করে। তাহলে কাজটা আরো আগে হবে।
অর্জুন: তাহলে তো তোমার টেইলার্সদের উপর চাপ পরে যাবে। এসবের দরকার নেই একদম।
আধভিক: না না ঠিক আছে আমি কম্পিটিশনের জন্য আগে থেকেই রেডি হয়ে আছি। ড্রেস তৈরী হয়ে গেছে আমার। তবে আমি পার্টিসিপেট করবো না বলেই ঠিক করেছি।
সিয়ারা: তুমি পার্টিসিপেট করছো না?
দিয়ারা: ভিকি দা তুমি তো এটা আগে বলনি আমাকে?
দেবাংশু: তুই তো আমাকে বলেছিলি তুইও পার্টিসিপেট করছিস।
আধভিক: কুল ডাউন, কুল ডাউন! আমি কিছুক্ষণ আগেই নিজের নামটা সরিয়ে এলাম। আর এটা বুদ্ধিমানের কাজ আমি করেছি বলে মনে হয়।
অর্জুন: মানে? এটা বুদ্ধিমানের কাজ?
আধভিক: অফকোর্স! ডিজাইনার, মডেল আর ফটোগ্রাফার সব বেস্ট মানুষদের নিয়ে তুমি বসে আছো। আমি খুব ভালো ভাবেই জানি তোমাকে এইবার কেউ হারাতে পারবে না। সো আমার পার্টিসিপেট করাটা বোকামি। আমি ওখানে তোমাকে চিয়ার করতে যাবো বলেই ভাবছি। (হেসে)
আধভিকের কথা শুনে সবাই হাসলো।
অর্জুন: (হেসে) চিন্তা করো না আমার ফ্যাশন শোয়ের পর ডিজাইনার, মডেল আর ফটোগ্রাফার সবাই আবার তোমার হয়েই কাজ করবে আমি সেভাবেই কনট্র্যাক্ট করেছি।
আধভিক: তুমি আমার প্রতি এতো সদয় হবে ভাবিনি আমি। আমি তোমার জায়গায় থাকলে ডিজাইনার আর মডেল দুজনকেই ধরে রাখতাম।
অর্জুন: সেটা করতে চাইলেও উপায় নেই। তাহলে দেখা যাবে কম্পিটিশনে যোগ দেওয়ার জন্য আমিই রইলাম না। আমি একা দুজনের সাথে লড়তে পারবো বলে মনে হয় না
অর্জুনের কথায় দেবাংশু অর্জুনের দিকে তাকালে অর্জুন দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে নিয়ে আধভিকের দিকে তাকিয়ে হাসে।
আধভিক: পয়েন্ট! এই নাহলে বিজনেসম্যান। নিজের লাভটা আগে দেখতে হয়।
অর্জুন: সে তো বুঝলাম কিন্তু তুমি এত তাড়াতাড়ি ড্রেস বানালে কীভাবে?
আধভিক: (সিয়ারাকে এক হাতে আগলে নিয়ে) আমাদের বেস্ট ডিজাইনার ঝড়ের গতিতে কাজ করে।
সিয়ারা: তার মানে তুমি আমাকে প্রথমে যেই ডিজাইন গুলো করতে দিয়েছিলে ওগুলো কম্পিটিশনের জন্য?
আধভিক: এক্সাক্টলি ডিজাইনার ম্যাডাম!
ফ্যাশন শো সম্পর্কে আরো কিছু কথা হওয়ার পর দেবাংশু দিয়ারাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো আর সিয়ারা আধভিকের গাড়িতে উঠে বসলো।
সিয়ারা: তুমি তো বলেছিলে মিটিংয়ে যাচ্ছো তাহলে এত তাড়াতাড়ি চলে এলে কীভাবে? (সিট বেল্ট পরতে পরতে)
আধভিক: যাওয়ার পথেই ক্লাইন্ট জানালো সে আজকে আসতে পারবে না তাই মিটিংটা পোস্টপন করছেন।
সিয়ারা: ক্লাইন্ট মিটিং পোস্টপন করেছেন নাকি আধভিক রায় চৌধুরী মিটিং পোস্টপন করেছে? কোনটা?
আধভিক: অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে আমাদের যাওয়া উচিত।
সিয়ারা শুধু মুখ টিপে হাসলো সেটা দেখে আধভিকও সামান্য হেসে গাড়ি স্টার্ট করল। ধীরে ধীরে আধভিকের মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো। সিয়ারা সেটা লক্ষ্য করে আধভিককে জিজ্ঞেস করলো,
সিয়ারা: কিছু হয়েছে আভি? আজকে এত চুপচাপ কেন তুমি? কিছুক্ষণ আগেও তো ঠিক ছিলে।
আধভিক: হম? না কিছু না। আব তুমি অর্জুনের সাথে একবার রাম্প ওয়াক প্র্যাকটিস করে নিও। ডিজাইনার হিসেবে ইন্ট্রোডিউস করানোর সময় এটার প্রয়োজন পরবে।
সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো আর কথা বাড়ালো না। আধভিক সিয়ারাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো।
দেখতে দেখতে ফ্যাশন শোয়ের দিন এসে উপস্থিত হলো। সিয়ারা চেয়েছিলো আধভিকের সাথে যেতে কিন্তু আধভিক বারণ করেছে যার কারণে সিয়ারার মন খারাপ।
দিয়ারা: দি, আজ তোকে দেখে ভিকিদার হুঁশ উড়ে যাবে।
সিয়ারা শুধু একটা মিথ্যে হাসি দিলে দিয়ারা সিয়ারার মুখটা তুলে বলে,
দিয়ারা: আমার মনে হয় ভিকিদা কোনো মিটিংয়ে গেছে আগে তাই তোকে নিয়ে আসেনি। আর ভিকি দা তো এখানকার গেস্ট আর তুই ডিজাইনার। একসাথে আসলে মিডিয়া ফেস করা টাফ হত। তুই মন খারাপ করিস না।
সিয়ারা: হু। আচ্ছা তুই রেডি তো?
দিয়ারা: হ্যাঁ আমি তো রেডি আর বাকি মডেলরাও রেডি। তুই গ্রীন রুমে না থেকে বাইরেটা গিয়ে দেখে ভিকিদা এসেছে কি না। যা।
সিয়ারা: তুই এখানে একা থাকবি?
দিয়ারা: হ্যাঁ দি, শোজ টপারের গ্রীন রুম আলাদা করেছে অর্জুন। তাই এই রুমে অন্য মডেলরা নেই জানিসই তো। আমি একা থাকতে পারবো অসুবিধা নেই। তুই যা।
সিয়ারা: ঠিক আছে।
অন্যদিকে,
আধভিক সেন্টারে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের জীবনের নায়িকাকে খুঁজছে।
আধভিক: (মনে মনে — ওকে সাথে নিয়ে আসিনি বলে নিশ্চয় মন খারাপ করে কোথাও একটা বসে আছে। কলটাও রিসিভ করছে না। এখন আমি কীভাবে খুঁজব তোমায় সিয়ু। দেবকে একবার কল করি, সেটাই বেটার হবে। দিয়া মনে হয় রেডি হচ্ছে গ্রীন রুমে আছে।)
আধভিক নিজের ফোনটা বার করে দেবাংশুর নাম্বার ডায়াল করছে এমন সময় ওর হাতের উপর কেউ হাত রাখলো। আধভিক সেই হাতের দিকে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে রিনা দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। আধভিক নিজের ভ্রু কুঁচকে হাতটা নীচে নামিয়ে নিলো যার ফলে রিনা হাতটা সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো।
আধভিক: তুমি এখানে কি করছো রিনা?
রিনা: স্যার, দিয়া ম্যাডাম তো আজকে আমাদের ফ্যাশন হাউজের রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়ে থাকতে পারবে না তাই আভাস স্যার আমাকে বললেন আপনার সাথে থাকতে।
আধভিক: ওহ, ওকে।
রিনা: স্যার..বলছিলাম যে…
আধভিক চলে যাচ্ছিলো এমন সময় আবার রিনা ডেকে উঠলে আধভিক রিনার দিকে ফিরে তাকায় আর ওর চোখ স্থির হয়ে যায়।
রিনা: আমাকে, আমাকে কেমন লাগ..
আধভিক: বিউটিফুল!
রিনা হেসে মাথা উঁচু করতেই আধভিক ও’কে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো। রিনা তা দেখে পিছন ফিরতেই দেখলো সিয়ারা ওর দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে আর আধভিক ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আধভিক দাঁড়াতেই সিয়ারা সেদিকে ঘুরে আধভিকের দিকে তাকালো।
আধভিক: সিয়ু ইউ আর লুকিং টু গুড।
সিয়ারা: হম। (নীচের দিকে তাকিয়ে)
আধভিক সিয়ারার দুই বাহুতে হাত রেখে বললো,
আধভিক: আমি মিটিংয়ে গেছিলাম সিয়ু। সেদিন যেই মিটিংটা পোস্টপন হয়েছিলো সেটাই আজকে কমপ্লিট করলাম। তোমাকে ওখানে কীভাবে নিয়ে যেতাম বলো? আর এখানে আমি গেস্ট হয়ে এসেছি কিন্তু তুমি ডিজাইনার তাই তোমার আগে আগে আসতে হতো।
সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
সিয়ারা: ঠিক আছে। অর্জুন তোমাকে খুঁজছিলো।
আধভিক সিয়ারার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
আধভিক: এখনও রাগ করে আছো?
সিয়ারা: (হেসে) না। মিডিয়া আছে এখানে, ছাড়ো আমাকে।
আধভিক: তো আমি কি ভয় পাই নাকি মিডিয়াকে? এমনিতেও সবাইকে তো জানতে হবেই যে মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর ফাইনালি ম্যারেড হতে চলেছে।
সিয়ারা: (লাজুক হেসে) ঠিক আছে এখন যাও এখান থেকে।
সিয়ারা আধভিককে ঠেলে পিছনে সরিয়ে দিলে আধভিক চলে যায় অন্যদিকে। সিয়ারা পিছন থেকেই ব্ল্যাক আউটফিটে থাকা আধভিককে দেখে মনে মনে তারিফ করে তারপর নিজের বাঁদিকে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়।
রিনা এতক্ষন হাত মুঠ করে, দাঁতে দাঁত চেপে আধভিক আর সিয়ারাকে পর্যবেক্ষণ করছিলো। সিয়ারাকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখতেই ও নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। সিয়ারা আপাদমস্তক রিনাকে দেখে নিয়ে ওর সামনে হাত ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করলো,
সিয়ারা: তুমি এখানে কি করছো?
রিনা: আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। আপনাকে কোনো প্রশ্নের উত্তর কেন দেবো আমি? আমি আপনাকে কেউ মনে করি না।
সিয়ারা: (হাসিমুখে) তুমি যাঁকে কিছু মনে করো সে আমাকে নিজের সব মনে করে। যদি তোমার সামনে, সবার সামনে এটা সে বলে, মেনে নিতে পারবে তো? মুখ দেখানোর মতো অবস্থায় থাকবে তো সমাজে? নিজের সন্মান নিয়ে একটুও ভাবো না তাই না?
রিনা: কি, কি বলতে চাইছেন আপনি?
সিয়ারা: এটাই যে আধভিক আমাকে ভালোবাসে আর আমি আধভিককে। ভুল করেও আমাদের মাঝে আসার চেষ্টা করো না। আমার জীবনের দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তাঁর চোখ তুলে নেবো আমি। নিজেও এটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও আর যার সাথে মিলে এসব করছো তাঁর মাথাতেও এটা খুব ভালো ভাবে ঢুকিয়ে দাও। প্রথমবার করেছো তাই ছেড়ে দিয়েছি এরপরে আর নিস্তার পাবে না। মাইন্ড ইট!
সিয়ারা ওখান থেকে চলে যায় গটগট করে। রিনা নিজের পা মাটিতে ঠুকে দাঁতে দাঁত চিপে বলে,
রিনা: রূপ দিয়েই আধভিককে ভুলিয়ে রেখেছো তাই না? তাছাড়া আর কি বা হবে? কি আছে আর তোমার? এইটাও আমি কেড়ে নেবো তোমার থেকে। এমন অবস্থা করবো যে সবার সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। সম্মান নিয়ে অনেক বড়াই তোমার তাই না? সব ঘুচিয়ে দেবো।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
ফাইনালি এক্সাম শেষ 😮💨❤️🩹😌’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৫৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
দিয়ারা গ্রীন রুমে বসে অনুভব করলো ওর ড্রেসটা আলগা হয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। সাথে সাথে ও পিঠে হাত দিলেই বোঝে ড্রেসের ফিতে আলগা হয়ে গেছে।
দিয়ারা: ইশ, দি যখন ছিলো তখন ও’কে বলতেই ভুলে গেলাম যে আমার ড্রেসের ফিতেটা একটু ঠিক করে বেঁধে দিতে। এখন কি করবো? আমি নিজে বেঁধেছি দেখে আলগা হয়ে যাচ্ছে আবারও আলগা হয়ে যাবে এখন বাঁধলে। নাহ, এইবার একটু টাইট করে বাঁধতে হবে।
দিয়ারা মাথা নীচু করে না তাকিয়েই দু হাত পিছনে করে ফিরে লাগানোর চেষ্টা করতে লাগে। ঠিক সেই সময় ওর পিঠে খুব চেনা পরিচিত স্পর্শ অনুভব করতেই ও মাথা তুলে আয়নায় তাকায় আর দেখতে পায় দেবাংশু ওর দিকে হেসে তাকিয়ে আছে। তবে ওর হাত যে থেমে নেই এটা ফিতেটা বাঁধা হয়ে যেতেই টের পায় দিয়ারা। দেবাংশুর চাহুনি দেখে দিয়ারা চোখ নীচে নামিয়ে বলে,
দিয়ারা: তু..তুমি এখানে কি করছো?
দেবাংশু দিয়ারাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। দিয়ারার বেশ অস্বস্তি লাগছে দেবাংশুর এমন চাহুনি দেখে তাই বাধ্য হয়ে বলে উঠলো,
দিয়ারা: কি, কি দেখছো এইভাবে?
দেবাংশু: (মুখ টিপে হেসে) এটাই যে ক কিলো ময়দা মেখেছিস যে বান্দরী থেকে সুন্দরী হয়ে গেছিস।
দিয়ারা একটু বিরক্ত হয়ে দেবাংশুর দিকে তাকালো যাতে দেবাংশু ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো তবে দিয়ারা আর কোনো রিয়্যাক্ট না করে অন্যদিকে তাকিয়ে আঙুল মোচড়াতে লাগলো। দেবাংশু জানে দিয়ারা একমাত্র নার্ভাস হলেই এমন হাবভাব করে তাই দিয়ারাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
দেবাংশু: নার্ভাস হচ্ছো কেন? এটা তো তোমার কাছে নতুন কিছু নয় দিয়ু।
দিয়ারা: অফকোর্স নতুন কিছু অংশু। এটা অর্জুনের ফ্যাশন শো, শহরের সব থেকে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারের ফ্যাশন শো। আমি সেই শোয়ের শোজ স্টপার, একটু কিছু ভুল…
দেবাংশু: শশ..কোনো ভুল হবে না। আমি যেমনটা বললাম, এটা তোমার কাছে নতুন কিছু না। জাস্ট ভাবো তুমি আগে যে শো করেছো এটা তেমনই, নতুন নয়। তাহলেই দেখবে নার্ভাস লাগছে না। বুঝলে?
দিয়ারা: হম।
দিয়ারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি তো জানালো কিন্তু দিয়ারার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে দিয়ারা এখনও নার্ভাস। দেবাংশু হেসে দিয়ারার মুখটা দু হাতে ধরে উপরে তুললো তারপর গভীর ভাবে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
দেবাংশু: বুঝলে?
দিয়ারা হেসে ফেললো দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে আর শক্ত করে দেবাংশুকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখলো। দেবাংশুও আগলে নিলো দিয়ারাকে বুকের মাঝে।
অন্যদিকে,
সিয়ারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা জায়গায়। আধভিক অর্জুনের সাথে কথা বলে সিয়ারার কাছে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু সিয়ারা ভ্রুক্ষেপ না করলে আধভিক সিয়ারার কানের কাছে বলে,
আধভিক: এখনও রেগে আছেন মহারানী?
সিয়ারা একটু চমকে উঠলো কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো,
সিয়ারা: না। নার্ভাস লাগছে একটু। সবার ডিজাইন পছন্দ হবে?
আধভিক: অবশ্যই পছন্দ হবে। কিন্তু কি লুকাচ্ছ আমার থেকে?
আধভিক খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা জিজ্ঞেস করলে সিয়ারা চুপ করে যায়। সে জানে আধভিকের কাছ থেকে লুকানো সম্ভব নয় কিন্তু ও কোনো মতেই এখন রিনার বিষয়টা আধভিককে জানাতে চাইছে না। আধভিক যদি রেগে গিয়ে রিনাকে ফায়ার করে দেয় তাহলে রিনার পিছনে যে আছে তাঁকে আর ধরতে পারা যাবে না।
সিয়ারা: আভি আমি…
আধভিক: করবো না রাগ। বলে ফেলো।
সিয়ারা: (মনে মনে — এইবার মনে হচ্ছে বলতেই হবে। তাছাড়া রাগ যখন করবে না বলছে তাহলে বলা যেতেই পারে। হয়তো ওই পারবে হেল্প করতে।) আসলে আভি দিয়া আমাকে জানিয়েছিল যে, আগের বার পার্টিতে তোমার নাম করে আমার কাছে যে শাড়িটা এসেছিলো সেটা রিনা পাঠিয়েছে।
আধভিক: হম, প্রেডিক্টেবল তারপর?
সিয়ারা: প্রেডিক্টেবল মানে?
আধভিক: সিয়া রিনা আমাদের ডিজাইনার। ওর ডিজাইন আমার ভালো লাগে তাই বেশির ভাগ সময় আমি ওকে ডিজাইন বানাতে বলি আর ড্রেসের কালার রেড হলে আমার বেশি পছন্দ হয়। তো ও জানতো যে আমার রেড কালার ফেভারিট। বাকি যাঁরা জানে তাঁরা এমন কিছু করবে না। সো, ইটস প্রেডিক্টেবল।
সিয়ারা: রিনা একা নয় আভি ওর সাথে নিশ্চই কেউ আছে।
আধভিক হেসে দিলো সিয়ারার কথায়। সিয়ারা অবাক হয়ে যাচ্ছে আধভিকের ব্যবহারে। সিয়ারাকে অবাক হতে দেখে আধভিক বললো,
আধভিক: এতো অবাক হচ্ছো কেন তুমি সিয়ু? রিনার পিছনে আর কেই বা হবে? আমার গুণধর ভাই ছাড়া?
সিয়ারা: আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই আভি।
আধভিক: আমি আগেও বলেছি তোমাকে আর এখনও বলছি। আমি প্রমাণের ধার ধারি না কারণ আমি আমার জীবনের অপরাধীকে নিজে শাস্তি দেওয়া পছন্দ করি। কে, কখন, কি শাস্তি দেবে তার অপেক্ষায় বসে থাকি না। আমি চুপ করে আছি তার কারণ ড্যাড! তবে এতদিন যা করে এসেছে তার জন্য ছাড় পেলেও এরপরে যদি ও আর একটা কিছু করে তার জন্য আর ছাড় পাবে না। তুমি এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না।
সিয়ারা: আভি অভ্র তোমার কোনো ক্ষতি করলে?
আধভিক: বললাম তো, ছাড় পাবে না। আর এতো সহজে আমার ক্ষতি করতে পারলে আমি এতদিন বেঁচে থাকতাম না।
সিয়ারা: আভি!!
সিয়ারাকে রেগে যেতে দেখে আধভিক সঙ্গে সঙ্গে ওকে বলে,
আধভিক: আচ্ছা বাবা স্যরি। ভুল হয়ে গেছে আর বলবো না। এইবার এটলিস্ট এইসব না ভেবে শো তে কনসার্নট্রেট করো?
সিয়ারা চুপ করে গেলে আধভিক এক হাতে সিয়ারাকে আগলে নিয়ে ওর মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ায়। সিয়ারা উপর উপর হাসলেও মনে মনে বলে,
সিয়ারা: (মনে মনে — আমি তোমাকে কীভাবে বোঝাই আমার কিছু ঠিক লাগছে না। সব কিছু কেমন জানো চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে আমায়। যতটা হালকা ভাবে তুমি নিচ্ছো বিষয়টা আমি নিতে পারছি না আভি। কিছুতেই পারছি না।) তোমার সত্যি মনে হচ্ছে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবার দরকার নেই?
আধভিক: তোমার এমন মনে হচ্ছে না কেন?
সিয়ারা: জানি না আভি। আমার কেমন জানো কিছু ঠিক লাগছে না। আমার মনে হচ্ছে আমরা যেটা দেখছি, যতটা দেখছি ততটা সঠিক নয় এবং সহজ নয়। হয়তো কেউ আমাদেরকে ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থের জন্য। আমাদের আলাদা করাতে হয়তো তাঁদের কোনো স্বার্থ আছে। আমি…
সিয়ারা কথা বলার মাঝ খানেই হোস্ট অ্যানাউন্সমেন্ট শুরু করলো শোয়ের। সেটা শুনে আধভিক সিয়ারাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
আধভিক: এখন এসব ভাবার সময় না জান। আজ তুমি প্রথম অ্যাস আ ডিজাইনার সবার সামনে আসবে। সো এই মুহূর্তটাকে নিয়ে ভাবো।
সিয়ারা: তুমি কোথায় যাচ্ছো? কি হয়েছে বলো তো তোমার? সুযোগ পেলেই খালি দূরে সরে যাচ্ছো আমার থেকে। ভালো লাগছে না নাকি এখন আমাকে?
আধভিক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ সিয়ারার মুখে দিকে তারপর বলে,
আধভিক: আমি কেন তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে যাবো সিয়ু। আমি এখানকার গেস্ট, আমাকে অর্জুনের পাশে গিয়ে বসতে হবে। তুমি দিয়ার কাছে যাও ওকেই?
আধভিক সিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলে সেটা মিডিয়া ক্যাপচার করে। সিয়ারা হেসে ভিতরে চলে যায় আর আধভিক গিয়ে অর্জুনের পাশে দাঁড়ায়। শো শুরু হলে অর্জুন আর আধভিক বসে কিন্তু মাঝেই অর্জুনের ফোনে ফোন আসতেই অর্জুনের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়। অর্জুন ফোন রিসিভ না করে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় যেটা আধভিকের চোখ এড়ায় না। কিন্তু বার বার ফোন আসলে অর্জুন বিরক্ত হয়ে আধভিককে “একটু আসছি” বলে উঠে যায়। শো শেষ হওয়ার আগেই অর্জুন চলে আসে।
আধভিক: ইজ এভরিথিং অলরাইট অর্জুন?
অর্জুন: ইয়াহ এভরিথিং ইজ অলরাইট।
আধভিক: আমার মনে হয় তোমার এখন স্টেজে ওঠা উচিত। গো!
আধভিক উৎসাহ দিতেই অর্জুন হেসে এগিয়ে যায়। স্টেজে উঠে প্রথমে ডিজাইনার অর্থাৎ সিয়ারাকে সে ডেকে নেয় এবং তারপরে শোজ টপার অর্থাৎ দিয়ারাকে ডেকে নেয়। রামপ ওয়াক শেষে নেমে আসতেই মিডিয়া অর্জুনসহ সিয়ারা আর দিয়ারাকে ছেঁকে ধরলো। অর্জুন কিছুক্ষণ কথা বলার পর সাইড হয়ে গেলো। দিয়ারা আর সিয়ারা দুজন জানালো যে তাঁরা বোন হয় এবং দিয়ারার ঠিক কি অনুভূতি অর্জুনের সাথে কাজ করে। এরপরেই দিয়ারাও সেখান থেকে সরে যায় কারণ রিপোর্টাররা সিয়ারার একার ইন্টারভিউ নিতে চায়। সিয়ারা এতে একটু নার্ভাস হয়ে পরে। আশে পাশে তাকিয়ে আধভিককে খুঁজতে থাকে কিন্তু পায় না। সেসময়ই ও একটা রিপোর্টারকে প্রশ্ন করতে শোনে ওর পিছনের দিকে তাকিয়ে,
__এভিআর! আপনি তো এই শোয়ের গেস্ট। আপনার কেমন লাগছে এই শোয়ের প্রেজেন্টেশন?
আধভিক: খুবই ভালো। অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্যাশন শো কখনও খারাপ হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তার উপর এইবার এতো ভালো একজন ডিজাইনার, টপ মডেলকে শোজ টপার হিসেবে হায়ার করেছে। ভালো তো হওয়ারই কথা।
রিপোর্টার: মিস সিয়ারা, আপনি পরবর্তী কাজটা কার সাথে করতে চান? কিছু ভেবেছেন? নাকি অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্যাশন হাউজের হয়েই কাজ করবেন?
সিয়ারা: পরবর্তী কাজটা আমি এভিআর-এর হয়ে করতে চাই যদি উনি রাজি থাকেন তো। কারণ অর্জুনের সাথে আমার এই ফ্যাশন শো অবধিই কনট্র্যাক্ট ছিলো।
রিপোর্টার: এভিআর, আপনি কি বলবেন এই প্রসঙ্গে? আপনি কি নতুন কোনো ডিজাইনার হায়ার করবেন আগামী ফ্যাশন কম্পিটিশনের জন্য?
আধভিক: অবশ্যই। উনি যদি রাজি থাকেন আমি অবশ্যই হায়ার করতে চাইবো।
রিপোর্টার: ম্যাম, আপনি এতদূর এসে পৌঁছালেন কীভাবে? মানে আপনার জার্নি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
রিপোর্টার এর প্রশ্ন শুনে আধভিক হাল্কা হেসে ধীরে ধীরে পিছিয়ে গিয়ে চলে যেতে নিলেই আধভিকের হাতে টান পরে। হাতের দিকে তাকাতেই দেখে সিয়ারার হাত শক্ত করে তাঁর হাত ধরে আছে। আধভিক সিয়ারার দিকে তাকালে সিয়ারা ইশারায় ওকে যেতে না করে আর আধভিক হেসে ফেলে।
আধভিক আর সিয়ারাকে এভাবে দেখে রিপোর্টাররা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। আধভিক সিয়ারার পাশে এসে আবার দাঁড়াতেই সিয়ারা ছোটো করে নিজের জার্নি সম্পর্কে বলে কিন্তু আধভিকের নাম নেয় না। সিয়ারার বক্তব্য শেষ হলে আধভিক বলে ওঠে,
আধভিক: ওয়েল, আমার নামটা হাইড করে রাখার দরকার ছিলো না সিয়ু। আমি অলয়েজ তোমার পাশে আছি।
রিপোর্টার: এভিআর, আপনাদের মধ্যে কি আগে থেকে কোনো সম্পর্ক আছে?
আধভিক: হ্যাঁ, শি ইজ মাই উড বি ওয়াইফ। ও আগেও আমার ফ্যাশন হাউজের হয়ে ড্রেস ডিজাইন করেছে বাট ওর নাম তখন হাইড রাখা হয়েছিলো কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ের জন্য।
রিপোর্টার: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে দুবছর আগে একটা খবর ছড়িয়ে ছিলো যে, আপনার বিয়ে ভেঙে গেছে। তাহলে আগে কি আপনার জীবনে অন্য কেউ…
আধভিক: একদমই না। আমার জীবনে প্রথম থেকেই একজন ছিলো, আছে এবং থাকবে। তখন আমাদের সম্পর্কের বেশি সময় হয়নি তাই আমরা ঠিক করেছিলাম আরেকটু সময় যাক তারপর বিয়ে করবো। সেটাকেই বাড়িয়ে বলা হয়েছে হয়তো।
রিপোর্টার: ম্যাম আপনার জীবনেও কি এভিআর প্রথম?
সিয়ারা: নিঃসন্দেহে! ও আসার আগে আমার কাওর সাথে সম্পর্ক ছিল না আর ও আসার পর ও’কে ছাড়া আমি অন্য কাওকে নিজের জীবনে ভাবতেও পারিনা।
আধভিক: আই থিঙ্ক আপনাদের প্রশ্ন করা শেষ। সো প্লিজ এক্সকিউজ আস!
আধভিক সিয়ারার হাত ধরে ওখান থেকে সরে গেলো। অন্যদিকে, দিয়ারা একজন প্রোডিউসারের সাথে কথা বলছে। প্রোডিউসারটি দিয়ারার ভীষণ পরিমাণ প্রশংসা করায় দিয়ারা লজ্জিত বোধ করে।
__আমি চাই তুমি আমার নেক্সট সিরিয়ালের হিরোইন হও। আশা করবো তুমি না করবে না।
দিয়ারা: আব, আমি আসলে মডেলিংটাকে বেশি প্রায়োরিটি দি। অভিনয় বলতে অ্যাডভারটাইজিং-এ যতটুকু দরকার পরে ততটুকুই করি। আমি অভিনয় করতে আগ্রহী নই বাট থ্যাংক ইউ সো মাচ ফর দ্যা অফার। আই অ্যাম রিয়েলি গ্ল্যাডফুল ফর দ্যাট।
__তুমি সত্যিই অফারটা অ্যাকসেপ্ট করবে না?
দিয়ারা: নো স্যার, প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। এক্সকিউজ মি।
দিয়ারা ওখান থেকে সরে আসতে না আসতেই আরও একজন ওর সামনে এসে দাঁড়ালো আর বাধ্যগত ও’কে তাঁর সাথেও কথা বলতে শুরু করতে হলো। কথা বলার মাঝেই দিয়ারার চোখ গেলো দেবাংশুর দিকে যে একমনে ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। সেদিন থেকে চোখ ফিরিয়ে দিয়ারা কথা বলতে থাকে। কিছুক্ষণ কথা বলার পরে দিয়ারা আবার তাকাতেই দেখে দেবাংশু ওখান থেকে সরে গেলো। দিয়ারা সাথে সাথে ব্যক্তিটিকে বললো,
দিয়ারা: এক্সকিউজ মি স্যার, আই হ্যাভ টু গো নাও। আই উইল টক টু ইউ লেটার। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড!
__নো নো ইটস ফাইন।
দিয়ারা দ্রুত পায়ে দেবাংশু যেদিকে গেছে সেদিকে চলে যায় একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে। কিছুদূর যেতেই দেখে দেবাংশু বার সাইডে হাতে ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে বসে আছে। দিয়ারা দেখেছে চলে আসার সময় দেবাংশুর মুখের অভিব্যক্তি। চোখ মুখ সহ্য হয়ে লাল হয়ে গিয়েছিলো ওর। চোখটা ছলছল করছিলো। দিয়ারা থাকতে পারেনি ওভাবে দেবাংশুকে দেখার পর, একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে চলে এসেছে।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]