“কলেজের বড় আপু The Ending Part

0
1365

কলেজের বড় আপু
Sûmøñ Ãl-Fãrâbî
The Ending Part
.
খুব ইচ্ছে হচ্ছে নীলাদ্রির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। কিন্তু ও যদি জেগে যায়?
না থাক । কিছু কিছু ইচ্ছে অপূর্ণ রাখাই ভালো। কিন্তু মনটা কেন জানি কিছুতেই মানছে না।
তাই ধীরে ধীরে কোনো শব্দ না করে নীলাদ্রির পাশে গিয়ে বসলাম । বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম । ও তখন গভীর ঘুমে মগ্ন । অনেক কথা মনে আসছে । অনেক অনুতাপ হচ্ছে আমার কর্মের জন্য ।
নীলাদ্রি একটু নড়লো। মনে হয় জেগে যাবে । তাই আমি উঠে বেলকুনিতে গেলাম । আকাশের দিকে তাকিয়ে একা একাই কথা বলতে লাগলাম ।
যখন আমি কোনো কাজের জন্য অনুতপ্ত বোধ করি তখন আকাশের সাথে কথা বলি। নিজেই নিজেকে অনেক বকি।
– আমি কি মানুষের পর্যায়ে পড়ি ?
– হয়তো হ্যা। হয়তো বা না । তবে আমি তো ওকে ভালোবাসতাম
– না না বাসতাম না । এখনো বাসি। কিন্তু আমি ওর সাথে এমন বাজে ব্যবহার করলাম কেন?
– আচ্ছা আমি কি ওর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো?
– আমি কি পাগল ? ক্ষমা চাইলেই কি ও আমায় ক্ষমা করে দিবে ?
আকাশ টা কেন জানি আজ খুব ফাঁকা লাগছে । ওহহ আজ আকাশে চাঁদ নেই তাই । আকাশ টাকে আজ অপূর্ণ মনে হচ্ছে । কিন্তু তারা গুলো তো আছেই । তবুও চাঁদ ছাড়া আকাশ অপূর্ণ । হাজার তারার মাঝেও চাঁদকে দরকার আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ।
আচ্ছা আমি যদি আকাশ হই তাহলে আমার চাঁদ কে?
তাহলে আমার চাঁদ হচ্ছে নীলাদ্রি আর তারা হচ্ছে অধরা । যদি সেই চাঁদ টাই আমার কাছে না থাকে তবে তো তারা অসহায় হয়ে যাবে । শুধু তারা কেন? পুরো আকাশ টাই তো মরুভূমি হয়ে যাবে ।
নীলাদ্রি কে হারানো যাবে না । যে করেই হোক আমার ভুল আমাকে শোধরাতে হবে।
– এই নাও চা
হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ । চমকে গেলাম ।
– কে?
– আমি
– ওহহ তুমি
– ঘুমাওনি কেন ?
– এমনি । ঘুম আসছে না তাই । আর তুমি কখন ঘুম থেকে উঠলে ? আর কষ্ট করে চা বানাতে গেলে কেন?
– তুমি যখন আমার পাশে থেকে উঠে এলে তখন ঘুম থেকে উঠছি।
– ওহহ।।
– ঘুমাবে না।
– ঘুমা আসছে না । তুমি ঘুমাও।
– ওহহ। আমি শুইছি বলে তুমি শোবে না
– আরে তেমন কিছু না
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিচে গিয়ে ঘুমাচ্ছি।
নীলাদ্রি চলে যাওয়ার জন্য সামনে হাটতে ধরলো এমন সময় আমি ওর হাত ধরে ফেললাম । আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না কেন আর কিভাবে আমি ওর হাত ধরলাম ।
আমি হাত ধরার সাথেই নীলাদ্রি দাড়িয়ে পড়লো। আর সামনে যাওয়ার কোনো চেষ্টা করলো না।
– নীলাদ্রি
নীলাদ্রির মুখে কেন জানি হাসি ফুটেছে মনে হয় । মলিন মুখটাতে এক চিলতে হাসি নিয়ে পিছনে ঘুরলো
– হ্যা বলো
– একটা জিনিস চাইবো দিবে
– বলো
নীলাদ্রির সামনে হাটু ফেলে বসে হাত দুটো জোড় করে বললাম
– আমায় ক্ষমা করবে প্লিজ
– কি করছো তুমি এসব
– আমায় ক্ষমা করো
– তুমি কি পাগল হয়ে গেলে। এসব কেন করছো
– আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি । তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।
– আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি তুমি আমায় কষ্ট দিয়েছ শোধ হইছে । ইকুয়েল কাটাকাটি ।
– আমি তোমায় বেশি কষ্ট দিছি
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ।
– তুমি যা শাস্তি দিবে তাই মেনে নিবো
– সত্যি
– হুম
– তাহলে ওঠো
– আচ্ছা
– এবার আমায় জড়িয়ে ধরো
মেয়েটা আসলেই পাগলী । আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসলো
– ধরছি
– আরো শক্ত করে ধরো
– তাহলে দম বন্ধ করে মরে যাবে পাগলী
– তবুও শান্তি হবে তোমার বুকে মাথা রেখে মরতে পেরেছি ।
– এসব বলে না ।
মনে হচ্ছে পাগলী টা কাঁদছে ।
– কি হলো কাঁদছো কেন?
– কে বললো আমি কাঁদছি ?
– এই তো আমি দেখছি ।
– আরে না আমি কাঁদছি না। আজ তো আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখী । আমি কেন কাঁদবো ?
– তাই । আজ তুমি সব থেকে সুখী ?
– হুম ।
– কেন?
– আজ আমি আমার স্বামীর বুকে জায়গা পেয়েছি তাই ।
– পাগলী একটা ।
– হুম ।
– আর কখনো তোমার চোখে পানি আসতে দিবো না । তোমার সব চাওয়া পুরন করবো কথা দিচ্ছি
– আমার চাওয়া শুধু একটাই
– কি বলো?
– সারাজীবন আমায় ভালোবাসবে ।
– শুধু এটাই ?
– হ্যা
– আর কিছু চাই না
– আর কি চাইবো
– মেয়ে মানুষ তো অনেক কিছু চায়। তাদের তো চাওয়ার শেষ নেই
– যেমন
– সোনা দানা । কাপড় ইত্যাদি
– তুমি তো সামান্য চাকরি করো এসব দিতে পারবে
– চেয়ে তো দেখো
– না থাক । শুধু তুমি থাকলে হব। তুমি আমার সব অলংকার ।
– তাই ।
– হু। এই তোমার তো চা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
– ওহহ হ্যা তো
– দাও আমি গরম করে আনছি।
– চলো আমিও যাবো
– কেন?
– আমি বানাবো
– না। তাহলে যেতে দিবো না।
– কেন
– আমি থাকতে আমার স্বামী রান্না করবে এটা হতে পারে না ।
– তাহলে আমি কি এখানে একা একা দারিয়ে থাকবো
– আমি কি তা বলেছি
– তাহলে কি করবো
– বলবো
– হুম ।
– আমার লজ্জা পাচ্ছে ।
– ওহহ।। আচ্ছা আমি তাহলে ঘুমাই গিয়ে ।
– এই শোনো না
– বলো
– আমি যখন চা বানাবো
– হুম । তারপর
– তুমি কি আমায় পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে থাকবে
কথা টা বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো। আমিও ওর হাত না সরিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম ।
ওতো অবাক হয়ে গেল ।
– আরে পরে যাবো তো
– আমায় বিশ্বাস করো
– করি বলেই তো এতো দিন অপেক্ষায় ছিলাম ।
– তাহলে ঠিক আছে । চলো।
এরপর ওকে নিয়ে রান্না ঘরে আসলাম। ও চা বানাচ্ছে আর আমি ওকে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আছি মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করছি ।
– আচ্ছা চা না খেলে হয় না
– নামে ।
– নীলাদ্রি আমার না ঘুম পাচ্ছে চলো ঘুমাবো ।
– আচ্ছা চলো।
আমি সামনে এগিয়ে গেলাম । কিন্তু নীলাদ্রি তো আসছে না ।
– কই আসো
– না আমি যাবো না ।
– কেন?
– আমি কি এখানে হেটে আসছি
– ওহহ আচ্ছা এই কথা ।
আবার ফিরে এসে ওকে কোলে তুলে নিলাম ।
– এবার ঠিক আছে মহারাণী।
– হুম ।
দুজনে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম ।
সকাল প্রায় নয়টা বাজে । এমন সময় কে যেন ডাকছে চোখ মেলে দেখি নীলাদ্রি
– এই ওঠো আর কতো ঘুমাবে
মেয়েটা আসলেই একটা পরী । কালো শাড়ি টাতে যা মানিয়েছে । তাতেই আবার আমার প্রিয় রং
– কাল মেয়ে ঘুম ভাঙ্গলো আর আজ মেয়ের আম্মু ।
– এখন থেকে মেয়ের আম্মুই ঘুম ভাঙ্গাবে
– তাই । মেয়ে কই?
– আম্মুর সাথে আম্মুর রুমে
– তাহলে তো একটু দুষ্টুমি করাই যায় ।
কথাটা বলে নীলাদ্রি কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই হাত টেনে আমার কাছে নিলাম।
– এই কি করছো?
– কেন?
– কেউ চলে আসবে তো
– কেউ আসবে না
– আর যদি আসে তো
– তো কি? আমার বউ।
– হুম। এখন ছাড়ো সবাইকে খাইতে দিতে হবে ।
– ওহহ আচ্ছা যাও।
– রাগ করলে?
– আমি কেন রাগ করবো । আজব তো ।
– উম্মাআআআআ। এটা তোমাকে ধার দিলাম । পরে এসে সুধে আসলে ফেরত নিবো। এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। সবাই মিলে খাবো।
– আচ্ছা ।
আমি উঠে ফ্রেশ হলাম। তারপর নিচে নামছি
– কি হলো রে মা খাবার দে
– দাড়াও না আব্বু ও আসুক
– কে আসবে
– অধরার বাপি
– ও কি আসবে
– হ্যা। ও এলে একসাথে খাবো। ঐ তো এসে গেছে ।
আমি এসে আব্বুর পাশে দাড়ালাম ।
– কিছু বলবি
এবার হাটু নিচু করে বসলাম
– আব্বু আমায় ক্ষমা করা যায় না
– কিসের জন্য
– সব কিছুর জন্য ।
– দোষ তো তুই আমাদের কাছে করিস নি। যার কাছে করছিস তাকে বল
– কাকে নীলাদ্রি কে
– হুম ।
– আমায় বলা লাগবে না ।
– তাহলে তো হয়েই গেল ।
রুম থেকে আম্মু আসলো। এরপর সবাই মিলে খেতে বসলাম ।
– আজ দুপুরে রান্না হবে না ।
– কেন?
– কারণ দুপুরের খাবার বিকেলে খেতে হবে ।
– কেন?
– কারণ আমার একজন গ্যেষ্ট আসবে
– কে?
– আসলেই দেখতে পারবে ।
– বিকেলে রান্না কিন্তু তাহলে তুই করবি
– আমি
– হ্যা।
– আম্মু আমি করে দেই
– স্বামীর প্রতি দরদ উতলাচ্ছে তাই না । হবে না।
– একজন সহকারী তো লাগবেই তাই না
– হ্যা। আমি আর ও মিলে রান্না করবো
– আচ্ছা ।
এরপর খাওয়া শেষ করে আমি আর অধরা রুমে আসলাম । একটু পরে নীলাদ্রি আসলো। তখন আমি আর অধরা গল্প করছি ।
– আম্মু কি করো?
– বাপিল থাতে গল্প করি
– তোমার দাদু ডাকে । যাও
অধরা চলে গেল । । অধরা যাওয়ার পর নীলাদ্রী গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো
– দরজা বন্ধ করলে কেন ?
– তখন যে ধার দিলাম তার পাওনা বাকি আছে যে
আমায় আর কথা বলার সুযোগই দিলো না তার আগেই ঠোঁট বন্ধ ।
– এই শোনো না
– হুম বলো
– আমাদের তো একটা মেয়ে আছে
– হুম ।
– আমার না ছেলে বাচ্চা খুব পছন্দ
– তো
– তো আবার কি?
– সেটাই তো বলছি তো কি
– আমার একটা ছোট সুমন লাগবে
– মানে
– কিছু না ।
লজ্জা পেয়ে মুখ লুকাচ্ছে আমার বুকে । এমন সময় ফোন
– হ্যালো
– আমি তো আসছি কই তুই
– তুমি কোথায়
– বাসার সামনে
– কার বাসার সামনে
– হারামজাদা তোর বাসার সামনে
– ওকে আমি আসছি
– কে আসছে
– আসো বলছি
এরপর নিচে গিয়ে সবাইকে ডাকলাম । সবাই আসলো। সবাই মিলে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
তারপর আব্বু আর বাবার পরিচয় করিয়ে দিলাম আর এটাও জানিয়ে দিলাম আমি কি করি ।
এখন পরিবারের সবাই একসাথে । বাবাও হয়ে গেল আমাদের পরিবারের একজন । সুখ যেন আর ধরে না।
সুখে থাক আমার পরিবার । শুধু আমার নয় সবার পরিবার ।

$$$$$$$$$
$$$$$$$$
$$$$$$$
$$$$$$
$$$$$
$$$$
$$$
$$
$
The end

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here