কালো মেয়েটি পর্ব:০৩

0
1068

কালো মেয়েটি
পর্ব:০৩

লেখা: রাকিব মাহমুদ

ভাবনাগুলো পুড়ে পুড়ে খাচ্ছে আমায়। বুকের ভেতরটাও যেন কেমন কেমন করছে। একপ্রকার যন্ত্রনা হচ্ছে। বুকের ভেতর যেন পিঁপড়া হাটে।আমি আর ভাবতে চাচ্ছি না। তবুও ভাবনা আমার পিছু ছাড়ছে না। সুয়ে আছি এখনও। ফেইসবুকিং করছি আমি। নিউজফিড দেখছি কিছুখন পর অনামিকার একটি স্ট্যাটাস আমার সামনে আসলো। স্ট্যাটাসটি পড়তে শুরু করলাম। স্ট্যাটাসটি ছিল…

“জানিনা আমি সবার কি ক্ষতি করেছি আমি। সবাই কেন আমাকে ট্রল করে। আচ্ছা আমি কালো হয়ে জন্ম নিয়েছি এ’টা কি আমার দোষ? সৃষ্টিকর্তা তো একজনই। যারা সুন্দর/সুন্দরী তাদেরকে যে আল্লাহ সৃষ্টি করিয়াছেন আমাকেই তিনিই সৃষ্টি করেছেন।আচ্ছা আমার মনের কি কোন মূল্য নেই। এই জগতে কি রূপটাই আসল। আমাকে সবসময় অপমান করে কি লাভ আপনাদের আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা আমাকে যদি আপনাদের ভালো না লাগে তাহলে আমাকে এড়িয়ে চলুন। আমাকে ছোট করা কি খুব বেশি প্রয়োজন আপনাদের। যখন আমি থাকিনা, ভার্সিটিতে যাইনা তখন তো ট্রল করেন না তাতে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যায়। যেদিন আমি থাকবোনা সেদিন কাকে নিয়ে ট্রল করবেন? নতুন কোন কালো মেয়েকে খুঁজে নিবেন। না ভাই না আপনাদের যত ইচ্ছা আমাকে নিয়ে ট্রল করেন অন্যকাউকে নিয়ে ট্রল করবেন না। এই কষ্টটা অনেকে নিতে পারবে না এতে আত্যহত্যাও করতে পারে কেউ কেউ। আমি হেরে যাওয়ার মতো মেয়ে নই। মরে গেলাম তো হেরে গেলাম। জবাব সময় মতো দিবো এখন নয়”

অনামিকার স্ট্যাটাস পড়ে আমার ভেতরের যন্ত্রনাটা আরও বেড়ে গেল কিছু ভালো লাগছে না আমার। আমি বোধহয় অনেক বেশি ভুল করেছি। তবে আমি অনামিকাকে কিভাবে বুজাবো আমি অনামিকাকে নিয়ে ট্রল করার জন্য মেসেজ দেইনি। আমি চেয়েছিলাম অনামিকার কাছাকাছি যাওয়ার জন্য। তবে অনামিকা যে কালো সবাই যে অনামিকাকে অপছন্দ করে। আমার ভেতরে যা আছে তা শুধুই অনামিকার জন্য মায়া এর বেশি কিছু নয়।। এরপর কিছুদিন চলে যায় অনামিকার সাথে আমার কখনো চ্যাট হয়নি। এখন খুব একটা ভাবিও না অনামিকাকে নিয়ে।।

কিছুদিন পরের কথা। অনামিকার সাথে এখনও আমার কখনো সরাসরি কথা হয়নি। সেদিন আমি আর অনামিকা হেটে হেটে ভার্সিটি থেকে বাসার দিকে যাচ্ছি। পাশাপাশি হাটছি আমরা। কেউ কিছু বলছি না। মাঝে মাঝে অনামিকার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছি। অনামিকা মাথা নিচু করে হাটছে।। কিছু দূর যাওয়ার পর…
– আপনি একমাত্র ছেলে যে আজও আমাকে নিয়ে ট্রল করেন নি। (অনামিকা)
– আমাকে বলছেন? (আমি)
– হুম! আপনি ছাড়া কেউ নেই এখানে।
– হুম।।
– আপনাকে দেখে ভদ্রই মনে হয় তবে মাঝে মাঝে বারান্দায় আপনাকে ধোয়া উড়াতে দেখি!
– কি বলেন?
– হুম। আপনি ধুমপান কেন করেন?
– না মানে আসলে এমনি করি।।
– এটা ক্ষতি জানেন না?
– জানি তবে এটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
– ছেড়ে দেন তানাহলে বউ পিটাবে।।

আমি মুচকি হাসলাম কিছু বললাম না। তখনও পাশাপাশি হাটছি আমরা। বাসার কাছাকাছে চলে আসলাম। অনামিকা বললো আবার কখনও কথা হবে ভালো থাকবেন। আপনিও।।

আমি বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম আমার অনেক বেশি। অনেক ভালো লাগে ঘুমাতে। আমার সাথে ঘুমিয়ে কেউ পারবে না গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আমার মনে হয় যদি কখনো ঘুমের প্রতিযোগিতা হয় আর আমি যদি অংশগ্রহণ করি তাহলে প্রথম পুরুষ্কারটা আমিই পাবো। লম্বা একটা ঘুম দিলাম। বিকেল বেলা আম্মু এসে ডাকা শুরু করলো। ধ্যাত ভালোলাগে না। কেন ডাকতে হবে আমাকে? ঘুমুচ্ছি আমি তাহলে সমস্যা কোথায়। আম্মু ডেকে উঠালেন আমায়। আমি উঠে বসতেই আম্মু চলে গেলেন। কিছুখন পর চা নিয়ে এলেন। আম্মু চা দিয়ে চলে যেতেই আমি চা এবং একটা সিগারেট নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম।।

বিকেলটা উপভোগ করছি আর চা খাচ্ছি। চা শেষ করে সিগারেট জালিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখি অনামিকা আমাদের বাসার বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি না দেখার ভান করে অন্যদিকে ঘুরে সিগারেট টানসি। সিগারেট শেষ করে অনামিকাদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখি তখনও তাকিয়ে আছে অনামিকা।।

আজ অনামিকাকে খুব একটা কালো লাগছে না। চেহারাটা অনেক বেশি মায়াবী লাগছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে অনামিকা। চুল গুলো এলেমেল। দক্ষিনা বাতাস এসে অনামিকার চুল এসে অনামিকার মুখে পড়ছে। মাঝে মাঝে অনামিকা তার হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে কিন্তু পেরে উঠছেনা অনামিকা।

অনামিকার প্রতি হয়ে গিয়েছে ভিষন রকম মায়া। কেন জানি আমি পারলাম না বারান্দা থেকে চলে আসতে।অনামিকার চোখে চোখ রেখে যেন স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি। আর সে রাজ্যের রাজা ছিলাম আমি রানী ছিল অনামিকা। মন্দ লাগছে না অনামিকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে। সবার স্বপ্নের নায়িকা অসম্ভব সুন্দরী হয়। আমার স্বপ্নের নায়িকা না হয় কালোই হবে। অনামিকার চেহারায় রয়েছে যে মায়া তা অনেক সুন্দরী মেয়ের চেহারায়ও থাকেনা বোধহয়। আমার তো ইচ্ছে করে অনামিকার চেহারার দিকে তাকালে আমার তো ইচ্ছে করে হাজার বছর বাঁচতে।। আমারও ইচ্ছা করে অনামিকাকে নিয়ে কাব্য রচনা করতে। ইস আমি যদি কবি হতাম তাহলে অনামিকাকে নিয়ে একটি কাব্য রচনা করতে পারতাম। “তোমারই চোখে আমার চোখ তাকিয়ে আছি আমি অপলক দৃষ্টিতে, সাথে তাকিয়ে আছো তুমি চোখ রেখেছো আমারই চোখে”।।

ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আমি। বিকেল ঘনিয়ে সন্ধা হয়ে গিয়েছে সে দিকে নেই আমার খেয়াল। তখনও তাকিয়ে আছে অনামিকা রেখেছে চোখ আমারই চোখে আমিও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অনামিকার দিকে।
পশ্রিম আকাশে অস্ত যাচ্ছে সূর্য। পাশের মসজিদটিতে আজান হচ্ছে মাগরিবেন। অনামিকা আর তাকিয়ে রইলো না। চলে গেল অনামিকা। আমি তখনও বারান্দায় দাড়িয়ে উপভোগ করছি সন্ধ্যা।।

রাতে ফেইসবুকিং করছি। ফেইক আইডি নয় আমার রিয়েল আইডি। ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এলো। আইডির নামটি খুবই পরিচিত। আইডির নামটি হলো “অনামিকা অনু”
এ যে অনামিকার আইডি। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। খুঁশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে এক প্রকার। রিকুয়েষ্ট এক্সেপট করতেই মেসেনজানের শব্দটি কানে ভেসে উঠলো।।
– হ্যালো নবাব সাহেব? (অনামিকা)
– জ্বী বলেন রাজরানী।। (আমি)
– আমি রাজ রানী নই আমি একটা কাইল্যা মেয়ে।
– আমিও নবাব নই। খবরদার নিজেকে কাইল্যা বলবা না তোমার চেহারায় একটা আকর্ষনীয় বিষয় রেয়েছে।।
– কি আকর্ষনীয় বিষয় শুনি নবাব সাহেব?
– অনেক মায়াবী তোমার ঐ মুখ। তাকালে তোমার ঐ মায়াবী মুখের দিকে তাকালে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে আলাদা কোন রাজ্যে যে রাজ্যের রাজা হবো আমি আর রানী হবে তুমি।আমি যদি হতাম কবি তাহলে আমার কাব্যে থাকতে শুধুই তুমি।।
– এর আগেও একজন মায়াবী বলে ট্রল করছে। আপনিও কি ট্রল করছেন?
– না সত্যি বলছি বিশ্বাস করেন আমাকে প্লিজ।।
– হুম করলাম আপনাকে অন্য সবার থেকে আলাদা মনে হয় তাই বিশ্বাস করলাম।।
– ধন্যবাদ
– আচ্ছা তুমি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম ছেলে এই পর্যন্ত কতগুলো প্রেম করেছি বলতো?
– সে সৌভাগ্য হয়নি আমার। আপনি কয়টা করছেন?
– তুমি এত হ্যান্ডসাম হয়েও যদি না করতে পারো তাহলে বলো আমি কাইল্যা হয়ে কিভাবে করবো।।
– আবার??
– সরি।
– তোমাকে তুমি করে বলছি তাই।।
– তুমি করে বলাটাই সুন্দর দেখায় তাছাড়া আমি আর আপনি একসাথেই পড়ি।।
– তাহলে তুমি আপনি বলছো কেন। তুমি করে বলবো।
– আচ্ছা বলবো।
– এখনি বলো।
– তুমি
– আচ্ছা ভালো থেকো পরে কথা হবে।
– আল্লাহ হাফেজ।।

এভাবে চলতে থাকে আমার আর অনামিকার কথা বলা। প্রথমে আপনি থেকে তুমি করে বলা। এরপর বন্ধুত্ব হয় আমাদের। তবে আমাদের বন্ধুত্ব অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকতো। ভার্সিটিতে অনামিকা কখনো আমার সামনে আসতো না। অনামিকার জন্য যেন কেউ আমাকে নিয়ে ট্রল না করে সেদিকে ছিল অনামিকার ব্যাপক খেয়াল। অনামিকার রিকুয়েষ্ট আমাদের বন্ধুদত্ব অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে এবং আমি আর অনামিকা ছাড়া কেউ জানবে না। আমাকেও রাখতে হলো অনামিকার কথা। এভাবে আমার বন্ধু চলে তিন মাসেরও বেশি সময়।।

সেদিন রাত্রি বেলা আমি পড়তে বসেছি এমন সময় আমাকে ফোন করলো অনামিকা।রিসিভ করতেই বলে উঠলো অনলাইনে আসো।।
– হ্যাঁ বলো দোস্ত (আমি)
– কি করতেছো (অনামিকা)
– পড়তেছিলাম দোস্ত তুমি?
– সুয়ে আছি.. ডিস্ট্রাব করলাম কি দোস্ত?
-না! কি বলো, বিরক্ত কেন করবা কি বলবা বলো।।
– কাল বিকেলে আমাকে সময় দিতে পারবা?
– হুম।
– আমরা এখনও একসাথে সময় কাটাইনি। কাল একটা রেস্টুরেন্টে চলো কফি খেতে খেতে আড্ডা দেই।।
– আচ্ছা কোথায় আসতে হবে?
– সাজ্জাত রেস্টুরেন্টে চলে এসো।।
– কয়টায়।।
-ভার্সিটির ক্লাস শেষ করেই।।
– আচ্ছা কাল দেখা হচ্ছে তাহলে।
-ওকে ভালো থেকো।
– আল্লাহ হাফেজ।।

আমি তারাতারি পড়া শেষ করে খেয়ে রুমে বসে ভাবছি অনামিকা কি আমাকে ভালোবাসে? আসলে মেয়েটা কালো হলেও অনেক গুন রয়েছে ওর মধ্যে। আমাকে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে বাধ্য করেছে। সিগারেটও ছাড়তে বলে তবুও রিকুয়েষ্ট করে দিনে তিনটা সিগারেট খাই। কেন যে অনামিকার কথা ফেলতে পারি না। বেশিখন না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল যে অনামিকার সাথে দেখা করার দিন।।
#চলবে

বিঃদ্রঃ আগের পর্বের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here