কিচিরমিচির পর্ব -০৪

#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক

৪.

ঘুমের ভিতর টের পাচ্ছি কেউ তার বাজে আকাঙ্খা নিয়ে আমাকে খুব বাজে ভাবে ছুয়ে দিচ্ছে।ছোঁয়াগুলো গভীর হতেই আমি লাফ দিয়ে উঠে বসি তাড়াতাড়ি পাশের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলালাম।কিন্তু ঘরের কোণে কেউকে দেখতে পেলাম না দেখবোই বা কিভাবে কেউই তো নেয়।সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। কে হতে পারে?এতো রাতে আমার রুমে কে-ই বা আসবে?এসব ভাবতে ভাবতে জগ থেকে পানি ঢেলে খেয়ে নিলাম।

পর্বভাই আমাকে চেঞ্জ করতে বলে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসে। আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।আমি কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি আর পর্বভাই কখন এখান থেকে চলে গিয়েছে তার কিছুই জানি না আমি।

হঠাৎ ঘুমের মধ্যে অনাঙ্ক্ষিত ছোঁয়া ঘুম ভেঙে গেল।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। চার দেওয়ালের এই বন্দি ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসছে।নাহ্ আর থাকা যাবে না এই বদ্ধ জায়গায়। পায়ে জুতোটা গুঁজে দরজা খুলে বাইরে গেলাম।হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির কাছে যেতেই ছায়ার মতো কিছু একটা দেখলাম মনে হলো।আমি এক দৌড়ে পর্বভাইয়ে রুমের দিকে চলে গেলাম।

রুমের দরজা খোলা।বেলকনিতে আলো জ্বলছে দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে মোবাইল ফোনের আলো।তাহলে পর্বভাই বেলকনিতে বসে আছে।রুমের চারিদিকে তাকিয়ে ভাড়ি কিছু খোঁজার চেষ্টা করলাম। রুমের এক কোণে পর্বভাইয়ে ব্যাট দেখতে পাচ্ছি দৌড়ে গিয়ে ব্যাটটা হাতে নিলাম।তারপর আবার করিডোর দিয়ে সিঁড়ির কাছে এলাম।সিঁড়ি বেয়ে পা টিপে টিপে নিচে নামলাম।উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম লোকটা কে।লোকটা একটা হুডি পরে আছে টুপিটা মাথায় দেওয়া রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে। আমি আর এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে পা টিপে টিপে লোকটার একটু কাছে গিয়েই পর্বভািয়ের ব্যাটটা দিয়ে লোকটার পাছায় সজোরে একটা বাড়ি দিলাম।লোকটা ও বাবা গো বলে পাছা ঢলতে ঢলতে পিছনে তাকাতেই আমার হাত থেকে ব্যাটটা পরে গেল আমি নিচু স্বরে ফিসফিস করে বললাম,

“আবির তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?”

আবির কোনো কথা না বলে দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে আইস ব্যাগে ভরে বাথরুমে যেতে যেতে বললো,

“পানি খেতে এসেছিলাম মার খেতে হবে জানলে একবারে সকালেই পানি খেতাম এখন রাত দুপুরে আমার পিছনটা লাল করে দিলে.. উফ্ জ্বলছে!”

আবির চোখ মুখ খিঁচে রান্না ঘরের পাশের বাথরুমটায় ঢুকে গেল।আমি মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাসছি।ক্রিকেটটা আমি খুব ভালোই খেলতে পারি।আমি মনে মনে বললাম,

“ঠিক হয়েছে সন্ধ্যায় অনেক বাজে কথা বলছো তুমি আমাকে এবার বোঝো ঠেলা”

বলেই শব্দ ছাড়া হাসতে লাগলাম।বাথরুমের কাছে গিয়ে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

“আবির ঠিক আছো তুমি?”

বলেই মুখ ঠিপে হাসলাম। আবির করুণ স্বরে বললো,

“ধূর বাবা যাও তো তুমি রাত দুপুরে মার ধোর করে এখন বলছে ঠিক আছি কিনা উফ্ অনেক জ্বলছে!”

আমি আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারছিনা।তাও কোনো মতে হাসি আটকে বললাম,

“আরে আমি তো ভেবেছি চোর এসেছে।কিন্তু এতো বড় ডাকাত ধরা পরবে বুঝতে পারিনি সরি!”

আবির ভিতর থেকে রাগে তিরতির করতে করতে বললো,

“কিহ্ আমি ডাকাত?”

আমি মুখ টিপে হেসে নিষ্পাপ কণ্ঠে বললাম,

“আরে না না মানে তুমি ধরা পরবে বুঝতে পারিনি তাই বলতে চেয়েছি আর কি”

হঠাৎ সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ শব্দে কারও নামার শব্দ পেতেই আমি বাথরুম থেকে একটু সরে দাঁড়ালাম।
পর্বভাই একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরা আর একটা হাতাকাটা গেঞ্জি পরা।হাতে বোতল আমাকে খাওয়ার টেবিলের এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাটা থামিয়ে ধীর পায়ে এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসলো ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

“ইশুপাখি তুই এতো রাতে এখানে? কোনো অসুবিধা হয়েছে কি?কিছু লাগবে তোর?”

পর্বভাই কথাগুলো বলতে বলতে আমার ডান গালে হাত দিলো আমি ড্যাব ড্যাব করে পর্বভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। পর্বভাইয়ের চুলগুলো এলোমেলো কপাল জরিয়ে আছে সব চুল চোখ দুটো ফোলা ফোলা আমার খুব ইচ্ছে করছে কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিই। আমি কিছু না বলে আমার ডান হাত উঠিয়ে যেই না পর্বভাইয়ের চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দেবো তখনই বাথরুমের দরজা খুলে আবির বেরিয়ে আসে।আমি তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিই।আবির আমাদের এমনভাবে দেখে এক ভ্রু উঁচু করে বাঁকা হাসে।পর্বভাই ভ্রু কুঁচকে একবার আমার দিক আর একবার আবিরের দিকে তাকায় তারপর আমার দিক তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

“কি হচ্ছিলো এখানে?তোমরা দুজন এতো রাতে এখানে একসাথে কি করছিলে?”

আবির বাঁকা হেসে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে।পর্বভাইয়ের বাহুতে হাত দিয়ে বলে,

“আরে এপিসোড ব্রো রিলাক্স এখনো তেমন কিছু হয়নি আমাদের মধ্যে..হ্যা সত্যি বলছি এতো রাতে একজোড়া প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক যুবতী যা করে তার কিছু হয়নি আমাদের মাঝে তাই না ইশু বেবি?”

পর্বভাইয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। চোখগুলো রক্ত লাল হয়ে গেল।আমার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে পর্বভাই আমি কড়া গলায় বললাম,

“এসব কি বলছো আবির? আমি বলেছি না আমার সাথে এভাবে কথা বলবে না…”

আবির আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে পর্বভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“লিসেন এপিসোড ব্রো আমি কোনো চোর না যে লুকিয়ে চুরিয়ে কোনো জিনিস নিবো আমি ডাকাত তোমার কপালে বন্দুক ধরে তোমার জিনিস কিভাবে নিজের করতে হয় তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে..সো বি কেয়ার ফুল…”

পর্বভাই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।আমার দিকে রক্ত চক্ষু করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার শরীর ভয়ে কাঁপছে।আমি নিচে দিকে তাকিয়ে আছি।আবির আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

“বাই বাই ইশু বেবি টেক কেয়ার এন্ড থ্যাংক ইউ এতো সুন্দর একটা রাত আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য…এমন হাজারো রাত চাই তোমার থেকে..বাই বেবি”

আমার মাথায় যেন আকায় ভেঙে পরলো।কি বলবো কিছু বুঝতে পারছিনা আবির নিজের ঠোঁটটা পাউট করে আমাকে দিকে চুমুর মতো দেখিয়ে চোখ মেরে বাঁকা হেসে ট্রাউজারের পকেটে হাত ডুকিয়ে শীস বাজাতে বাজাতে উপরে চলে গেল।

আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।আমি মুখ খুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই পর্বভাই আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি টাল সামলাতে না পেরে মুখে হাত দিয়ে নিচে বসে পরি।পর্বভাই তার হাতে থাকা বোতলটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারে তারপর চলে যায়।আমি ওখানে বসে বসে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি।কিছুক্ষণ পর চোখের সামনে একজোড়া পা দেখতেই দেখি পর্বভাই চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে আছে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ঝট করে আমাকে কলে তুলে নিলো।
আমি পর্বভাইয়ের গেঞ্জিটা একটু টেনে শব্দ করে নাক মুছে নিই।সাথে সাথে পর্বভাই চোখমুখ খিঁচে ফেলে।আমি গেঞ্জি ছেড়ে গিয়ে নাক টানতে টানতে বললাম,

“সরি গেঞ্জিটা অনেক নরম রুমাল ভেবে ভুল করে মুছে ফেলছি”

পর্বভাই কিছু না বলে সোজা আমার রুমে চলে গেল আমি পর্বভাইয়ের বুকে ছোট্ট বিড়াল ছানার মতো চুপটি করে আছি।পর্বভাই আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,

“তোকে কেন মেরেছি জানিস?”

আমি নিচের ঠোঁট উল্টিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়ালাম।পর্বভাই রুম থেকে বেরিয়ে আইস নিয়ে আসলো আমার পাশে বসে মুখে আইস দিতে দিতে বললো,

“মেরেছি কারণ আবির তোর সম্পর্কে এতোগুলো বাজে কথা বললো কিন্তু তুই প্রতিবাদ তো দূরে থাক একটু টু শব্দ পর্যন্ত করলি না তাই মেরেছি…!”

আমি পর্বভাইয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি। পর্বভাই আইস দেওয়া শেষ করে আমার ডান গালে শব্দ করে কয়েকটা চুমু খেলেন।বললেন,

“বুঝেছিস?এবার শুয়ে পর কেমন..”

বলে পর্বভাই উঠে চলে যেতে নিলে আমি পর্বভাইয়ের ডান হাত টান দিলাম পর্বভাই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো বললো,

“কি হলো ইশুপাখি কিছু বলবি?বল কি বলবি?মাথায় হাত বুলিয়ে দেবো?”

আমি কিছু না বলে বিছানার উপর উঠে দাঁড়ালাম পর্বভাই আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমি ডান হাত দিয়ে পর্বভাইয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে একসাইড করে দিলাম। সাথে সাথে পর্বভাই আমার কোমর জরিয়ে ধরলো।চোখ বন্ধ করে পর্বভাইয়ের কপালে একটা চুমু খেলাম।তারপর গলা জরিয়ে ধরলাম।বললাম,

“তুমি এতো ভালো কেন পর্বভাই অন্য কেউ হলে আমাকে ভুল বুঝতো কিন্তু তুমি আমাকেই বিশ্বাস করলে”

পর্বভাই আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে নিলেন তারপর উঁচ করে আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলেন।আমার চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে আদুরে কন্ঠে বললেন,

“ইশুপাখি তোকে অবিশ্বাস করবো?যাকে হতে দেখেছি তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করি।তার থেকেও বড় কথা তোকে অবিশ্বাস করার সাধ্য আমার নেই..”

আমি কিছু বললাম না পর্বভাইয়ের গলায় ঝুলছি আমি মাটি থেকে এক দুই ইঞ্চি আমার পা।পর্বভাই এবার সন্দিহান কন্ঠে বললেন,

“ইশুপাখি কি আমার প্রেমে পড়লো নাকি?হুম হুম..?”

আমি কিছু না বলে নামার চেষ্টা করলাম তা দেখে পর্বভাই আমাকে ছেড়ে দিলেন।নিচু হয়ে আমার গলায় একটা চুমু খেয়ে বললেন,

“শুয়ে পড় এখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে আমিও গেলাম..”

আমি ডান দিকে ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। পর্বভাই চলে গেল।আমিও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।হঠাৎই মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগে ঘুমের ঘোরে আমার গায়ে হাত দিয়েছিল কেউ পর্বভাইকে কথাটা বলা হয়নি।এসব ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে গেলাম তা সঠিক জানি না।

—————

“উফ্ আপু এতো অস্থির কেন হচ্ছিস বল তো তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই বিয়েতে না নিজের শ্রাদ্ধ খেতে যাচ্ছিস”

কথাটা বলতে বলতে আপু মাথায় ঘোমটাটা পিন করে দিচ্ছি আমার কথায় সায় দিয়ে দাদি বললো,

“তাই তো তাই তো আরে বিয়েতে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে।আমার বিয়েতে তো আমি নাচতে নাচতে চলে গিয়েছিলাম”

নাফিসা আপু বিরক্তি নিয়ে বললো,

“উফ্ দাদি তুমি চুপ করো তো জীবনের প্রথম বিয়ে করছি খুব ভয় করছে আমার উফ্ আল্লাহ্ আজকের দিনের কথা মনে থাকলে আর কোনোদিন বিয়ে করবো না আমি..”

আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম,

“বিয়ে এমন কি ব্যাপার টাস করে কবুল বলে বিয়ে করে ঠুস করে বাসর ঘরে ঢুকে পরবি ব্যাস কাহানি খতম..”

“চল তাহলে তোর কাহানিও খতম করে দিই কি বলিস ইশুপাখি?”

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here